‘এখন ট্রেন বন্ধ, খদ্দের আসেনা। বাধ্য হয়ে দিল্লি রোডে পেশা করতে যাই, বুঝি পুলিশ-গুণ্ডাদের দৌরাত্ম কি জিনিস। একটা সময় যা ছিল সহ্যের বাইরে। কত কি যে সহ্য করতে হতো! এখন সেই উপদ্রব অনেকটা কম।’
‘কেন?’
‘আমরা এখন অনেক বেশি সংগঠিত। আমাদের সংগঠনের অফিস আছে না? কিছু ঘটলে দৌড়ে যাই, সবাই মিলে প্রতিবাদ করি প্রশাসনের কাছে।’
‘আগে কি রকম ছিলো?’
‘সে অনেক কথা। আমাদের পেশাকে সমাজ তো ভালো চোখে দেখে না। গুণ্ডারা এসে পরিষেবা নিতো বিনা পয়সায়। খুন জখম করতো। পুলিশ আমাদের কোন কথা শুনতো না। উল্টে আমাদের, খদ্দেরদের তুলে নিয়ে যেত।’
কথা হচ্ছিল ২০২০ সালের জুনে, মধ্য দুপুরে। খাঁ খাঁ করছে চারিদিক। মানুষজন নেই রাস্তায়। তাঁদের সংগঠনের অফিস থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছিলো। রোজগারহীন, হাস্য-লাস্যহীন, প্রসাধনবিহীন যৌনকর্মীদের সুদীর্ঘ লাইন। বছর ত্রিশের সবিতা রাই(নাম পরিবর্তিত), সুদূর নেপাল থেকে আসা একটি মেয়ে। এখন শেওড়াফুলির রেড লাইট এলাকার একজন যৌনকর্মী, তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁর আকুতি। তাঁর মতো অনেক সবিতা আছেন, দীর্ঘ সেই তালিকা। আমরা তাঁদের কত জনকে আর জানি? কেউ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত কোন এক গ্রাম থেকে আসা তো কেউ মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির কোন এক চর থেকে আসা। আমরা জানি তাঁদের সেই সংগঠনের নাম দুর্বার।
আমরা জানি যে মানুষটির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যৌনকর্মীদের আন্দোলন তথা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি এক পরিচিত নাম, তিনি হলেন ডাঃ স্মরজিৎ জানা।
সম্ভবত ২০০৭ সালের কথা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ব বিভাগের একটি স্নাতকোত্তর বিদ্যার ক্লাসে প্রথম আলাপ। তত্ত্ব ও ফলিত বিদ্যায় তাঁর অনায়াস বিচরণ মুগ্ধ করেছিল আমাদের সকলকে। সেই প্রথম ‘সোনাগাছি মডেল’-এর কথা শুনি। একদিন ক্লাসে যৌনকর্মীদের সম্পর্কে ট্যাবু নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন কিছু কথা, সমাজের তথাকথিত প্রগতিশীল অংশের ছুৎমার্গ কি পর্যায়ের তা নিয়ে।
"জানো, আগমার্কা বিপ্লবীরা যৌনকর্মী সংগঠনের অফিসে আসতে পর্যন্ত কুণ্ঠা বোধ করেন। পাছে যদি তাঁরা অশুচি হয়ে যান। মুশকিল হলো এদের আবার গঙ্গাজলে বা গোবরে ভক্তি নেই, তাই শোধন করবেন কি করে? এমনকি কোনো যৌথ মিছিলে দুর্বার সংগঠনের ব্যানারের ছায়া যাতে না মাড়াতে হয়, সে ব্যাপারে এই সব বামপন্থীরা খুব খুব সচেতন। এঁদের অনেকেই ইউরোপ-আমেরিকার খ্রিস্টান নারীবাদীদের লেখাপত্র পড়ে মাঝেমধ্যে এমন সব চোঁয়াঢেকুর তোলেন, যে কি বলবো? না এর বেশি আর বলছি না।"
মনে পড়ে ২০১২ সালের কথা। যৌনকর্মীদের সম্মেলন হচ্ছে কলকাতায়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় ১৯৯৭ সালে কলকাতায় সর্বভারতীয় যৌনকর্মী সম্মেলন করার ঘটনা। প্রথমেই বাধা আসে কিছু সমাজকর্মী এবং ‘দেশপ্রেমী’ মানুষের পক্ষ থেকে। তাঁদের বক্তব্য, যৌনকর্মীদের যেভাবেই হোক মূল স্রোতে মিশিয়ে দিতে হবে, কিন্তু তা বলে মূল স্রোতের মানুষের মতো তারা সম্মেলন করবে, মিছিল করবে? না কখনও না। দলবেঁধে দিল্লিতে দরবার করা হলো। খবরের কাগজে বিবৃতি দেওয়া হলো, যৌনকর্মীদের সম্মেলন করতে দিলে তাদের পেশাকে নাকি তোল্লাই দেওয়া হবে। তাঁদের কথা শুনে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও প্রশাসনও বেঁকে বসলো। সল্টলেক স্টেডিয়ামে সম্মেলন শুরু করার আগের দিন পর্যন্ত অনুমতি দিলো না সরকার। তবে ২০১২ তে সরকারের কাছ থেকে কোনো বাধা আসেনি। বরং তারা সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। এবার অন্য খেলা, কিছু সমাজসেবী ও ‘বিপ্লবী’ আর তাঁদের হাতেগোনা কয়েকটি সদস্য মিছিল করে তেড়ে এসেছিলেন সম্মেলনের জায়গায়।
অনেক বাধাবিপত্তি পার হয়ে আজকে যখন যৌনকর্মীরা মিছিল করেন কলকাতার বুকে, তখন মনে পড়ে ২০১২ সালের কথা। এই তো কয়েকমাস আগে সোনাগাছি থেকে ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তি পর্যন্ত সুদীর্ঘ মিছিল হলো। উত্তরপ্রদেশের হাতরাসে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে। তার আগে বিভিন্ন নারী সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে মিছিল হলো মৌলালী থেকে কলকাতা কর্পোরেশান পর্যন্ত। দুর্বার এখন প্রতিবাদের অন্য নাম।
ছাত্র হিসেবে তাঁকে স্যার বলতাম প্রথম আলাপ থেকেই। তারপর ‘সোনি সোরি’র জন্য লড়াইয়ের উদ্যোগ হোক বা ‘দশ থেকে দশ হাজার’-এর মিছিল, বারবার দেখা, পথ চলা। তখন কখন যেন স্যার থেকে স্মরজিৎদা হয়ে গেছিলেন তিনি, খেয়াল করিনি। তারপর কখনও স্যার, কখনও স্মরজিৎদা।
কোনদিনই ঈশ্বরে বিশ্বাস ছিল না তাঁর। বিজ্ঞানের পাটাতনে যুক্তির বুনিয়াদে গঠিত ছিল তাঁর ‘মন-কাঠামো’। একসময় 'উৎস মানুষ' পত্রিকায় তাঁর লেখা ছিল পত্রিকাটির প্রতি আগ্রহের অন্যতম কারণ। তাঁর প্রতি আগ্রহের্ শুরুও সেখান থেকেই। বইমেলা যখন পার্কস্ট্রিটে হতো তখন কয়েকটি সংগ্রহ করেছিলাম। আজ দেখলাম 'উৎস মানুষ' তার পাতায় লিখেছে :
"১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬, 'উৎস মানুষ'-এর পাতায় 'প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয়' সিরিজের বেশীরভাগ লেখাই লিখেছিলেন স্মরজিৎ। ঐ নামের সংকলনটির রূপকারও ছিলেন তিনি। প্রাক-মোবাইল ও ইন্টারনেট জমানাতেও বিজ্ঞাপনের আপাত মধুর ফাঁদে পড়ে প্রাত্যহিক চাহিদা মেটাতে মানুষ নতুন নতুন উপশমের জিনিস - চামড়ার ক্রিম, যন্ত্রণার মলম, কাশির সিরাপ, অম্রুতাঞ্জন, বজ্রদন্তী, চ্যবনপ্রাস, হজমির ওষুধ, হরলিকস,কমপ্লান, বেবিফুড ইত্যাদি গাদাগাদা পয়সা দিয়ে কিনতো। তাছাড়া নানান খাবার নিয়ে যেমন - ঠান্ডা খাবার গরম খাবার, দুধ কতটা পুষ্টিকর, গরুর মাংস কতটা গরম এসব সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা কাটাতে স্মরজিৎ একের পর এক লিখতে থাকেন। 'উৎস মানুষ' জনপ্রিয়করণের ক্ষেত্রে স্মরজিৎ জানার অবদান অনস্বীকার্য। স্মরজিতের পপ্যুলার লেখার ধারাটি অনেক নতুন লেখককে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে কিছু ডাক্তারি পড়ুয়াকে যাঁরা পরবর্তীতে সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যান। লেখাগুলি 'উৎস মানুষ' পাঠকের মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয়। সেগুলি নিয়ে একাধিক সংকলনও প্রকাশিত হয়।"
আর একাডেমিক বিদ্যায় যথেষ্ট উচ্চতায় পৌঁছেও, পদে বা পদাধিকারে উচ্চকোটিতে স্থান থাকলেও ‘পা ছিলো যথার্থ অর্থে মাটিতেই’। মিশে যেতেন অনায়াসে। বিজ্ঞানের মানুষ ছিলেন তিনি। কিন্তু বিজ্ঞানকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন জনগোষ্ঠীর মধ্যে খুব সহজ অথচ বুদ্ধিদীপ্তভাবে। খুব সহজেই তিনি নীতি, পদ্ধতি ও বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতেন জনগোষ্ঠীর কাছে, তাঁদের বুঝতে অসুবিধা হত না।
তবে অন্য বাস্তবতা আছে, তা হল তাঁর যুক্তিবোধ, যা কোন অচলায়তনের জন্ম দেয়নি। সমাজকে বুঝতে কখনও তাঁর অসুবিধা হয়নি। তাই ‘সোনাগাছিতে দুর্গাপুজো’র আয়োজন তাঁর কাছে নিছক আর একটা পূজা ছিলো না। ছিলো দ্রোহ। ছিলো অধিকারের জন্য লড়াই। চিরাচরিত প্রথায় ‘বেশ্যাবাড়ির মাটি’ ছাড়া মা দুর্গার পূজা সম্পূর্ণ হয় না, কিন্তু সেই ‘বেশ্যা’দের পূজা করার অধিকার? না না রসাতলে যাবে যে সমাজ! চারিদিকে ভ্রুকুটি এবং সর্বোপরি বাধা। পুলিশি বাধা। তবে সত্যি কথা বলতে কি যৌনকর্মীদের পূজা করার বিপক্ষে রাজনৈতিক নেতা বা মন্ত্রীরা ছিলেন তা কিন্তু নয়। বরং তাঁদের কাছে অনুরোধ নিয়ে পৌঁছনো মাত্র দ্রুত দুর্বারের চিঠিতে সই করে বলেছিলেন নিয়মমাফিক থানায় জমা দিতে। বাধা আসে পুলিশের কাছ থেকেই। দুর্বার দুর্গোৎসব, ১৪২০-র স্মারকপত্রে সম্পাদকীয় কলমে স্মরজিৎ জানার এই বিষয়ে আলোকপাত:
"সম্প্রতি যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি যৌনপল্লীতে দুর্গাপূজা করার ‘আব্দার’ নিয়ে থানায় দরবার করলে বেঁকে বসেন স্থানীয় পুলিশ থানা, যদিও ওই একই জায়গায় সাত দিন ধরে রমরমিয়ে গনেশ পূজা হয়েছিলো পুলিশের পরোক্ষ সহযোগিতায়। যৌনকর্মীদের কাছে এইধরণের বিমাতৃসুলভ আচরণ যা তাঁরা আরও বহু ক্ষেত্রেই এই সমাজ তথা পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন তা নতুন নয়। শেষমেশ দুর্বার হাইকোর্টের দারস্থ হলে পুজো করার অনুমতি পায়, অনেক জলঘোলা হওয়ার পর।...
দুর্বারের দুর্গাপুজোয় বাধা কেন এসেছে পুলিশের কাছ থেকে সে হিসেবটা অনেকেই হয়তো বোঝেন না। পুজোর ওই পাঁচটা দিন যৌনপল্লীতে কাস্টমারের যে ঢল নামে সে বিষয়ে অনেকেই খোঁজখবর রাখেন না। যৌনকর্মী এবং বিশেষত কাস্টমারদের কাছ থেকে ওই থানার পুলিশ, দারোগারা ওই সময় কত টাকা তোলেন তার হিসেব পাওয়া শক্ত। তবে বাজারের ফড়েরা বলে থাকেন, ওই পুজোর পাঁচদিনের উপরি রোজগারের যোগফল নাকি ছ-সাত অঙ্কের হিসেবে গুনতে হয়। সেখানে রাস্তার মোড়ে দুর্বারকে দুর্গাপূজা করার অনুমতি দিলে ঝকঝকে আলোয় হাজার হাজার দর্শনার্থীদের সামনে ওই কাজটা করা কি খুব সহজ বা শোভনীয় হবে? খামোকা পুজোর অনুমতি দিয়ে কেউ কি নিজের বাড়াভাতে ছাই ফেলতে চায়?"
যে জনসমাজের জন্য দুর্বার তা যাতে তাঁরাই দেখভাল করতে পারেন, অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর দ্বারাই পরিচালিত হয় তাঁদের সংগঠন সে বিষয়ে প্রথম থেকেই ছিলেন তৎপর। এখন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দ্বারা যৌনকর্মীরা তাঁদের মধ্য থেকে সচিব, সভাপতি ইত্যাদি নির্বাচিত করেন। ভোট হয় সেখানে, যৌনকর্মীদের নিজস্ব ভোট। পৃথিবীর ইতিহাসে যা যথেষ্ট ব্যতিক্রমি বলা যায়। যৌনকর্মীদের অর্জিত অর্থ যাতে সঞ্চিত থাকে, সুরক্ষিত থাকে তার জন্য সমবায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আর এক ইতিহাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্নাতক এবং গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মানুষ হয়েও ডাঃ জানা এবিষয়ে তৎপর হন। যৌনকর্মীদের সমবায় ব্যাঙ্ক আদৌ হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তুমুল বিতর্ক হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০-এর মাঝামাঝি আইনের কিছু অংশের পরিবর্তন করতে হয়। দুর্বার অনুমতি পায়।
বুদ্ধদেব কর্মকার বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত প্যানেলের সদস্য হন তিনি। ২০১৬ সালে যার রিপোর্টে রেশন কার্ড এবং ভোটার কার্ড ইস্যু করে যৌনকর্মীদের আইনি স্বীকৃতির সুপারিশ থাকে। থাকে ইমরটাল ট্রাফিক (প্রিভেনশান)অ্যাক্ট-এর অধীনে যৌনকাজকে নিরপরাধিকরণের সুপারিশ। খুব সম্প্রতি যখন লকডাউনের বিভীষিকায় রোজগারহীন যৌনকর্মীরা সরকারি রেশনলাভে বঞ্চিত থাকছে, দুর্বারের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক নির্দেশ জারি করে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় যাতে যৌনকর্মীদের বিনাপয়সায় রেশন দেওয়া হয়।
টুকরো টুকরো এই রকম হাজারো অর্জন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ করতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে সমগ্র স্মরজিৎ। অসমাপ্ত স্মরজিৎ। খুব অকালে এই স্মরণিকা লিখতে হল। মহামারী কালে মহা অসময়ে। আমার থেকে অনেক অনেক বেশি তাঁকে চেনেন, যাদের জন্য তিনি কাজ করেছেন। তাঁরা হয়তো গুছিয়ে দুকথা লিখতে বা বলতে পারেন না। কিন্তু তাঁদের আকুতি, তাঁদের হাহাকার এইসব লেখার তুলনায় অনেক বেশি নিখাদ। অনেক বেশি হৃদয়ের কাছাকাছি। দুর্বারের পুরনো কর্মী, প্রাক্তন যৌনকর্মী কোহিনূরদির কথা বা কথা নয় শুধু অস্ফুট কিছু শব্দ দিয়ে শেষ করছি। গতকাল দুপুরে তাঁর সঙ্গে দেখা। ১২/৫ নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে।
"স্যার ওসব মানতেন না জানি। আমি মুসলমান তো কি হয়েছে? তবু শেতলা মায়ের থানে কিছু বাচ্চাদের খাওয়াবো, জানিস। আমার হাতে রান্না কতোবার খেয়েছেন আমাদের স্যার। বলতেন, কোহিনূর, আজ কি রেঁধেছ? আমি বলতাম কি আর রাঁধবো স্যার? বলতেন, তাই খাবো, চলো। আমি কিছুই তো জানিনা বল, ওসব, শ্রাদ্ধ-শান্তি! শুধু বাচ্চাদের খাওয়াবো......
শেষ সময়ে স্যারের মুখ দেখতে আমরা দৌড়ে গেছিলাম। শালারা মেরেই ফেলল আমার স্যারকে। করোনার ডেডবডি। হাজারো বাধা। পুলিশে পুলিশে ভর্তি। সোনাগাছি, শেঠবাগান, বউবাজার থেকে আমরা এসেছি। আমরা, অনেক অনেক আমরা। আমি এক ফাঁকে লুকিয়ে ঢুকে পড়লাম যেখানে ওনাকে রাখা হয়েছে। সামনেই ইলেকট্রিক চুল্লি। সারা শরীর মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কোথায় আমার স্যার? কোথায়? আমি খুঁজছি। ওই তো, ওই তো স্যার। ওই তো আমার বাবা।" .........
ওঁর সঙ্গে পরিচয় ছিলনা। কিন্তু লেখা পড়েছি। দুর্বারের অফিসে গিয়ে কাজের পদ্ধতি দেখে বুঝেছি 'ওদের অনেক টাকা আসে' এই প্রচারটি ঠিক নয়। যা আসে তা দরকারের তুলনায় অপ্রতুল। আর ওনাদের কাজের জায়গায় গিয়ে দেখেছি বাচ্চাদের গান, নাচ, মুকাভিনয় শেখানোর জন্যে ব্যবস্থা, সবচেয়ে ওপরের তলার একটি আলো হাওয়া সম্পন্ন বড় হলঘরে।
এমন সময় চলে যাবেন ভাবি নি। বাঁধাপথের বাইরে পা ফেলার সাহস এবং স্পষ্ট চিন্তার জন্যে আমার বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র উনি।
আশা রাখি তাঁর সহকর্মী এবং উত্তরসূরিরা এই আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে রাখবেন , দূর্বার-এর গতি অব্যাহত থাকবে। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো এই আলোর পথযাত্রীর প্রতি।