এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • মহাভারত - চতুর্থ পর্ব

    শুদ্ধসত্ব ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ০৫ জুন ২০১১ | ১২০৪ বার পঠিত


  • রাত্রে রথচালনা খুব কঠিন কাজ। সাধারণত রাত্রে অশ্বসঞ্চালনের ঝুঁকি কেউই নিতে চায় না। অন্ধকারের অরণ্যের মধ্যবর্তী রাস্তায় বিপদের প্রভূত সম্ভাবনা,কিন্তু উপায় নেই। গতিশীল রথে মশাল জ্বালিয়ে রাখা যায় না। হাওয়ায় নিভে যায়। তাই আজকের এই রাত্রে আকাশের আলোয় পথ চলতে হচ্ছে তাঁদের। সদ্য পূর্ণিমা গেছে এটাই যা একমাত্র ভরসা। আকাশে মেঘের চিহ্নও নেই তেমন। অরণ্যের মধ্য দিয়ে কিছুটা এসে নদীর পাশ দিয়ে চলতে লাগলো রথ। এই অরণ্যের প্রান্তসীমায় এই নদীর পাশ দিয়ে চলেছে পথ। কাঠের জন্য যারা এই অরণ্যে আসে তারা এখান অবধি কাঠের বোঝা নিয়ে আসে। তারপরে নদীতে ভাসিয়ে দেয় সেই কাঠ, আকারে বড় বা পরিমাণে বেশী হলে। অনেকটা ভাঁটিতে গিয়ে আবার সেই কাঠ তারা সংগ্রহ করে নেয়। অরণ্যের অধিবাসী শবর, পুলিন্দ, নিষাদ বা কিরাতেরা মূলত। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝেই বিরোধ বাধে এই কাঠের ব্যবসায়ীদের। প্রশাসন খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ নেয়। ফলত রাজার বাহিনী এখানে প্রবেশ করে। কিছুদিন আগেই এই অরণ্যের একটা অংশ কৌরবরা রাজার নিজস্ব অধিকারে নিয়ে নেয়। সেখানে ছিল কয়েকটি নিষাদ গ্রাম। সেই গ্রাম উচ্ছিন্ন করে রাজকীয় অরণ্যের এই প্রয়াস এরা ভাল ভাবে নেয়নি। সেই বিরোধ গড়িয়েছিল অনেকদূর। এরা বিদ্রোহ করেছিল। সেই বিদ্রোহ দমন করতে হস্তিনাপুর থেকে বিশেষ বাহিনী আসে। রণহস্তিযূথকে সামনে রেখে অরণ্যের অনেকটা অংশ গুঁড়িয়ে দিয়ে এদের গ্রামে পৌঁছয় সে বাহিনী। গ্রাম ভেঙে মাঠ করে দেওয়া হয়। অনেকগুলো প্রাণ যাবার পরে অরণ্যচর ঋষিদের একাংশের মধ্যস্থতায় শেষে সে বিরোধ থামে। প্রমোদকানন তৈরী হয় এখানে।

    সে ছিল পান্ডুর আমল। তার মৃগয়ার লোভ সুবিদিত। আসলে হস্তিনাপুর নগরে প্রজাপুঞ্জের সামনে আড়ম্বরে ভোগের একটা সীমা ছিল। বাড়বাড়ি করলে কৌরব গণের সভা সমালোচনা করতে পারত। গণের শক্তি তখনো খর্ব হয়নি ততটা। কিন্তু এই নির্ঝঞ্ঝাট অরণ্যভোগ আরো রোমাঞ্চের উপকরণ যোগাতো। শবর, পুলিন্দ, কিরাত রমণীরা শারীরিকভাবে বেশ আকর্ষণীয়। সংস্কৃতভাষী সমাজের মধ্যে রমণীর রমণীয়তা যত আছে ততটা বন্যতা নেই। এখানে আছে। এরা বাঘিনীর মত। আসলে নারী-পুরুষের বিভাজন এখানে ততটা প্রভাব ফেলেনি বলেই সম্ভবত এরা অনেক বেশী স্বছন্দ কামকলাতে। নগরে কিম্বা গ্রামে সংস্কৃতভাষী সমাজে নারীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়। তার আচরণ সর্বদাই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। কাজেই তার মধ্যে জড়তা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এখানে সেই জড়তাহীনতার টানেই আসত পান্ডু। কৌরবদের দখলে যতগুলো অরণ্য আছে সবেতেই তার প্রমোদকানন ছিল।

    এর অর্থ ব্যাস বুঝতে পারেন অবশ্যই। তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও একই সাক্ষ্য দেয়। পান্ডু তাঁরই সন্তান। তাঁর মনোভাবের কিছু অংশ অবশ্যই থাকার কথা তার মধ্যে। তিনি এই সত্যটা জেনেছিলেন মহাবিপাকে পড়ে। মাতা সত্যবতীর কাছে তিনি সত্যবদ্ধ। তিনি স্মরণ করলেই তাঁকে যেতে হবে মাতার কাছে। সেবারেও গেছিলেন। কৌরব বংশধারা বিপর্যস্ত। সত্যবতী এবং শান্তনুর প্রথম সন্তান চিত্রাঙ্গদের মৃত্যু হয়েছিল যুদ্ধে। বিচিত্রবীর্য্যের মৃত্যু হয়েছে রোগে, নি:সন্তান অবস্থায়। মহারাজ শান্তনুর এই সন্তানটির একমাত্র বিবাহ রয়েছে। গাঙ্গেয় দেবব্রত সত্যবদ্ধ সত্যবতীর কাছে,তিনি আজন্ম কুমার থাকবেন। ভ্রাতার জন্য তিনিই নিজে নিয়ে এসেছিলেন তিনকন্যাকে। অম্বা, অম্বিকা আর অম্বালিকাকে। তার মধ্যে অম্বা বিবাহে অসন্মত হওয়ায় তাঁকে মুক্তি দেন ভীষ্ম,কিন্তু অম্বার প্রণয়ী অপহৃতাকে নিতে সন্মত না হওয়ায় অম্বা আত্মহত্যা করেন। সেই আত্মহত্যা ঘটেছিল বাকী দুই বোনের চোখের সামনে। তার প্রভাব এঁদের উপরে ছিলই। তার সঙ্গেই ছিল বিচিত্রবীর্য্যের সন্তান জন্ম দিতে অক্ষমতা। মহারাজ শান্তনুর ভোগলিপ্সু স্বভাব প্রবল ভাবেই প্রভাব ফেলেছিল বিচিত্রবীর্য্যের উপরে। কুমার বয়সে প্রভূত ভোগ তাকে যৌনরোগবিশিষ্ট করে তোলে। মাতা সত্যবতী সেদিন ব্যাসকে ডেকেছিলেন বংশরক্ষার খাতিরে। গাঙ্গেয় তাঁর শপথ বজায় রাখার জন্য নিজেকে নিয়োগে রাজী হননি। কিন্তু তিনিই পরামর্শ দিয়েছেন মাতাকে সেদিন ব্যাসকে আহ্বান করার জন্য। ব্যাস এসেছিলেন। এর আগে তাঁর নারী সংসর্গের অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ব্রহ্মচর্য্য পালন করেছেন চিরকাল। কিন্তু মাতৃআজ্ঞা পালন করতে বাধ্য তিনি। তখন তিনি জেনেছিলেন সংস্কৃতভাষী সমাজের নারীর অবস্থা। দুই কন্যাই তাদের চরিত্র এবং সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা একদিকে,অন্যদিকে কৌরব বংশের কঠিন শাসনে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে রমণে,কিন্তু সে অবশ্যই স্বচ্ছন্দ ছিল না। তাদের দুর্ভাগ্য এই যে তাদের সন্তান ধৃতরাষ্ট্র এবং পান্ডুর জন্মকালীন অসুস্থতা তাদের কলঙ্কিত করেছে। কিন্তু এ তাদের অপরাধ নয়। ব্যাস পরে অনেক ভেবে দেখেছেন এ হতে পারে একমাত্র বিচিত্রবীর্য্যের থেকে রোগ সংক্রমণের কারণে। কিন্তু মাতা একথা জানতেন কিনা তা তিনি এখনো বোঝেন নি। তবে সন্তানদ্বয়ের জন্মের পরে তিনি মহর্ষি চ্যবনের গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়েছিলেন আত্মচিকিৎসায়। সংক্রমণ তাঁকে বয়ে যেতে যেন না হয় এই কারণে। কিন্তু হস্তিনাপুরের প্রতাপ এমনই যে এই সন্তানদ্বয়ের অক্ষমতার দোষ গিয়ে পরলো ওই রাজকন্যাদ্বয়ের স্কন্ধে। সত্যি, কী মহিমা প্রচারের! তবে তিনি সেই কালে একবারই প্রকৃত সঙ্গমের স্বাদ পেয়েছিলেন এক দাসীর কাছ থেকে, যার গর্ভে জন্মেছে তাঁর সেই সন্তান যাঁকে নিয়ে তিনি কিছুটা গর্ব বোধ করতেই পারেন। বিদুর তাঁর মন কেড়েছে গুণে-বিনয়ে-স্বভাবে।

    তাছাড়া, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন জানেন এই বংশের ইতিহাস। বারবারে এই একই সমস্যায় ব্যাতিব্যস্ত হয়েছে ভরতেরা। দুষ্মন্ত এবং শকুন্তলার পুত্র, রাজচক্রবর্তী রাজা ভরতেরও এই বংশধারার সঙ্কট হয়েছিল। তাঁর তিন রাণী নয় পুত্রের জন্ম দিয়েছিল ঠিকই,কিন্তু ভরতের সন্দেহ ছিল এরা তাঁরই সন্তান কিনা তা নিয়ে। যেমন সন্দেহ ছিল রাজা দুষ্মন্তের একদিন, যখন তাঁর সভায় হঠাৎই শকুন্তলা উপস্থিত হয়েছিলেন গর্ভিণী দশায়। সন্তান কি দুষ্মন্তের নাকি অন্য কারোর। এমনকি সেই নারীর সঙ্গে সঙ্গমের কথাও তিনি মনে করতে পারেন নি। ভরতের তেমন সন্দেহ না থাকলেও তাঁর ঔরসে উৎপাদিত পুত্রদের সঙ্গে আকৃতিগত সাদৃশ্য ছিল না তাঁর বলেই মনে হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই তিন রাণী সকল সন্তানকে হত্যা করে। রাজা ভরত দত্তক নিয়েছিলেন ঋষি ভরদ্বাজকে। এই সন্তানটি অজ্ঞাতকুলশীল। নদীর ধারে তাকে পড়ে থাকতে দেখে মরুতেরা তাকে প্রতিপালন করার জন্য নিয়ে যান। সেই মরুতসোম যজ্ঞের পরে মরুতেরা তাকে সমর্পণ করেন ভরতের হাতে। ব্রাহ্মণ কিনা তা জানার কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু মরুতেরা তাকে শাস্ত্র শিক্ষা দিয়ে শিক্ষিত করেন,আর ভরত দিয়েছিলেন শস্ত্র শিক্ষা। একই অঙ্গে তিনি ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়। সেই কারণেই পরবর্তী কালে ভরদ্বাজ ভৃগুর সঙ্গে ঘোর তর্কে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বর্ণাশ্রমের শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করে। তাঁর বক্তব্য ছিল কোনো বর্ণের মানুষের আলাদা করে কোনো শারীরিক বৈশিষ্ট্য নেই। সকলেই মূলগতভাবে এক। এই ভরদ্বাজই আবার পরবর্তীকালে আরেকটি যজ্ঞ করে ভরতকে আরেকটি পুত্র দিয়েছিলেন। সেই সন্তান হল ভূমন্যু। ভরতের রাজ্য এই সন্তানই শাসন করেন।

    ব্যাস, বর্ণসঙ্কর ব্যাস, এ সব জানেন। এও জানেন পিতা পরাশর বশিষ্ঠ্যবংশীয় বলে তাঁকে জায়গা দিতে বাধ্য হয়েছে ঋষিসমাজ। নইলে তাঁরও বেশ সমস্যা ছিল। বর্ণ ব্যবস্থা,যা ক্রমশ চেপে বসেছে মনুর অনুশাসনের ফলে তা ধীরে ধীরে জগদ্দল পাথর হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে তাঁর বা তাঁদের মত বর্ণসঙ্কর অথচ ক্ষমতাবানদের ভারী সমস্যা হবে। ক্রমশ ক্ষমতাকে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের গ্রাসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অনেককাল ধরেই চলছে। তিনি নিজে জানেন বশিষ্ঠ্যের বংশধারার পরিচয় শুধুমাত্র, আগামী দিনে আর নিরাপদ হবেনা। সেই কবেকার কাল থেকে বশিষ্ঠ আর বিশ্বামিত্রের যে বিরোধ চলে আসছে তা আসলে ক্ষমতাদখলের জন্য দুটি গোষ্ঠীর লড়াই। জ্ঞান শুধুমাত্র ব্রাহ্মণের দখলে থাকবে এ ইচ্ছে বশিষ্ঠ্যের চিরকালই ছিল। যুদ্ধবাজেরা সমাজ এবং রাজ্য শাসনের সূক্ষ্মতা জানে না। কাজেই তাদের চেয়ে অনেক ভাল রাজা যদি ঋষি নিজে হয়। বিশ্বামিত্র তাই হয়েছিলেন, কিন্তু উলটো পথে। সেই রাজর্ষির জন্ম যুদ্ধবাজ ক্ষত্রিয়ের ঘরে আর জীবন বশিষ্ঠের বিরোধে কেটেছে।

    পিতা পরাশরকে তিনি অনেকটা এই কারণেই অনুরোধ করেছিলেন একটি সংহিতা রচনা করতে, যা অনুশাসন হিসেবে গণ্য হবে। অনেক অনেক লড়াই তাঁকে করে যেতে হচ্ছে সেই জন্মকাল থেকে। পরাশর, পুত্রের অনুরোধে বৃক্ষাদিগূণ অধ্যয়ন থেকে কিছুকাল বিরত হয়ে রচনা করেন তাঁর সংহিতা। পিতার মত বহুমুখী জ্ঞান চর্চা ব্যাসের থাকলেও আদত উৎসাহ তাঁর সমাজকে ঘিরে। সামাজিক অনুশাসনকে সুনিশ্চিত করতে সব কিছু করতে তিনি প্রস্তুত। বেদ নিয়ে দীর্ঘ্যকাল সমস্যা হচ্ছিল গোত্রধারী ঋষিদের মধ্যে। তিনি বেদ বিভাজন করেছেন তাঁর কিছু পূর্বজদের মতই। পিতা পরাশরের প্রভাবে সেই বিভাজন মেনে নিয়েছেন বৃহত্তর ব্রাহ্মণ সমাজ। আজ তিনি বেদব্যাস। বেদ বিভাজক বলে ব্যাস তাঁর উপাধি। কিন্তু এ দিয়ে চলবে না। এ সমাজব্যবস্থা ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। দেশজুড়ে ঘরে ঘরে অনাচার প্রশ্রয় পাচ্ছে। পিতা পরাশরের সংহিতাও এর সমাধান করতে পারেনি। অনেক গোষ্ঠীই এর সমূহ বিরোধ সম্মুখে না করলেও একে মেনেও নেয়নি। মাতা সত্যবতীর কল্যাণে এই ভূখন্ডের একটি বৃহৎ রাজ শক্তির সঙ্গে তাঁদের সখ্য, বশিষ্ঠের বংশ সব মিলিয়েও পুরো কাজ হয়নি। অথচ লোকসমাজ ক্রমশ নিম্নগামী রুচির শিকার হচ্ছে। তারা আর বেদ ধর্ম মানে না। ওই সূর্যপূজা, অগ্নিপূজা তাদের বোধের পক্ষে অনেক বেশী উচ্চভাব সম্পন্ন। বিশেষ করে তাঁর বংশের অগ্নিপূজা বা সোমপূজা আজকাল লোকে করতে চায়না। পিতা নিজে যখন ছিলেন তখনই ক্রমশ কমছিল গার্হস্থ্য আশ্রমে শিষ্যর সংখ্যা। কমছিল আর্থিক এবং অন্যান্য নিরাপত্তাও। এমনিতেও অরণ্য নিরাপদ বা নি:শঙ্কুল আশ্রয় নয় কখনোই। মত্ত হস্তী থেকে নরখাদক অরণ্যচর সকলেই এই বৃহৎ অরণ্যের অংশ। তারা তাদের ধর্ম অনুযায়ী কাজ করে। ঋষি জৈমিনিকে পদদলিত করে হত্যা করেছিল এক মদমত্ত বন্যহস্তী। আবার পরাশরের পিতা শক্তিমুনির মৃত্যুর কারণ একটি নরখাদক কল্মষপাদ। সে এক অরণ্যচর রাজা। তারই আদেশে হত্যা করা হয় শক্তি মুনিকে। পরাশর এই নিয়ে ক্রুদ্ধ ছিলেন,কিন্তু তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা একা এর প্রতিকার করা। এমনকি পরাশরের পিতামহ বশিষ্ঠও তাঁকে এর প্রতিকারের থেকে বিরত রাখতেই চেষ্টা করেছেন। অরণ্যে বা সংলগ্ন অঞ্চলে বাস করতে হলে চাই নিরাপত্তা। সেই নিরাপত্তা দিতে পারে অস্ত্র। কিন্তু বেশীরভাগ মুনি বা ঋষিরাই বা আশ্রমিকেরা অস্ত্র শিক্ষা করলেও তাদের অস্ত্রের ভাঁড়ার বিপুল নয়। শিষ্যদের দানের অর্থে, বা গুরুদক্ষিণার অর্থে শুধুমাত্র অস্ত্র ক্রয় করা যায় না। সেই কারণেই দরকার হয় রাষ্ট্রক্ষমতার আশ্রয়। রাজার সংরক্ষিত অরণ্য হলে অনেক নিরাপদ হয় আশ্রম। পিতাকে সেকথা বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন ব্যাস। কিন্তু পিতা প্রাচীনপন্থী। তিনি জীবনযাত্রায় রাষ্ট্রের বেশী হস্তক্ষেপ পছন্দ করেননি কখনো। সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে চিরকালই তিনি স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চেয়েছেন। তাঁর যুক্তি ছিল এই সমাজকে পরিত্যাগ করেই তাঁরা আসেন। তাহলে তাকে বা তার শাসককে এখানে টেনে নিয়ে আসার অর্থ হল মূলগত দর্শনটির বিরোধ করা। এই না বোঝার দাম তাঁকেও দিতে হয়েছে। বৃদ্ধাবস্থায় অরণ্যে নেকড়ের আক্রমণে মৃত্যু ঘটে তাঁর। বলা হয় মহান ঋষিরা তাঁদের মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে প্রকৃতির বিভিন্ন রূপের সঙ্গে মিশে যান। কিন্তু সে তো আখ্যান। সে তো সত্য নয়! ব্যাস জানেন লোক সমাজের নিম্নরুচি থেকে এই আশ্রমজীবনে নিরাপত্তার অভাব এ সবের একটাই প্রতিকার আছে, তা হল রাষ্ট্রকে পরিচালন করার পরোক্ষ ক্ষমতা রাখা। তিনি সেই পথেই চলেছেন। এই নদীতীর শেষ হয়ে যে রাস্তা পড়ল, এই সেই রাস্তা। এ রাস্তাই তাঁকে নিয়ে যেতে পারে সেই ভবিষ্যৎএ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৫ জুন ২০১১ | ১২০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন