শাসককুল? আচ্ছা, এ নিয়ে তাঁর কেন মাথাব্যথা হবে? তিনি কে? তিনি তো সামান্য রাজভৃত্য মাত্র! মাতা সত্যবতী যখন যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন কি তাঁকে বলেছেন যাওয়া উচিত হবে কিনা? তাঁকে ডেকে শুধু যাবার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে মাত্র। ব্যাস! তাহলে? তিনি এবং প্রাসাদের কঞ্চুকী প্রধানের মধ্যে পার্থক্য কি? ক্লান্ত, শ্রান্ত একজন মানুষ তিনি। লোকে বলে এই প্রাসাদের প্রতি তাঁর অপরিসীম আনুগত্য। না। এটা লোকের ভুল ধারণা। তাঁর আনুগত্য তাঁর শপথের কাছে। এই বংশকে তিনি অনেককাল আগেই ছেড়ে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তাঁর বোধ তাঁকে বাধা দিয়েছে। একের পর এক বিপর্যয় সঙ্গী হয়েছে কুরুবংশের। কোনো সময়েই শাসনকে স্থায়ী এবং বিপর্যয়মুক্ত দেখেননি তিনি। চলে যেতেই পারতেন! কিন্তু মন বলেছে এভাবে চলে গেলে লোকে বলবে দেবব্রত রাজ্য শাসন করার সুযোগ পায়নি বলে চলে গেল। পিতার জন্য স্বার্থত্যাগ করা থেকে যে ফাঁদ শুরু হয়েছে সেই ফাঁদেই তিনি বন্দী হয়ে পড়েছেন। কোনোদিন ভাবতেই পারেননি কি এই লোকসমাজ? কী ভূমিকা আছে এর? তাঁর জীবন কেমন করে চলবে তা এ নির্ধারণ করার সাহস পায় কোথা থেকে? এসব কিছুই তিনি কখনো ভেবে উঠতেই পারেননি। অথচ তিনি যেমন শান্তনুর সন্তান তেমনই তিনি তো গঙ্গারও সন্তান। তাহলে মায়ের চরিত্রের স্বাধীনতা বোধ কেন তাঁর এল না? এ প্রশ্ন আজ এতবছর পরে এসেছে তাঁর মনে! আবারও যখন ব্যাস তাঁর সাহয্য চাইছেন কুরুবংশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তখন তিনি ভাবতে বসেছেন।
এ প্রাসাদে তাঁর থাকার একটি মাত্র আকর্ষণ বাকী ছিল। মাতা সত্যবতী। মাতা? পিতার দ্বিতীয়া স্ত্রী হিসেবে মাতা বলাই সমীচিন। একবার মাত্র ভাল করে দেখেছিলেন। দেখেছিলেন কিছুটা অবাক হয়েই। কে এই রমণী যার জন্য পিতা উন্মাদ প্রায়? জেলেরাজের ঘরে দেখেছিলেন তাঁকে। অন্য যে কোনো দিনের মতই সত্যবতী সেদিনও নৌকা টেনে ফিরছিলেন তখন। শান্তনু সটান তাকিয়ে ছিলেন তাঁর এই হবু মাতার দিকে। সুঠাম, ঋজু, ব্যাক্তিত্বশালিনী এই কন্যার দিকে। কতই বা বয়স? তাঁর চেয়ে একটুই বড় হবেন বোধহয়! সর্বাঙ্গে একটা মুক্ত প্রবাহ খেলা করে যাচ্ছে। অনম্র স্তন, ক্ষীণ কটি, ভারাক্রান্ত জঘন ও নিতম্ব। মুখের মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য নাসিকা। তাঁদের মত খাড়া নয়, কিন্তু উচ্চ ভাব আছে। তার সঙ্গেই আছে ধারালো অস্ত্রের মত ভাব। চোখদুটি টানা টানা। আঁখিপল্লবে ভারাক্রান্ত যেন। ভাস্করের হাতে তৈরী কন্যা। কন্যাও সপাটে তাকিয়ে ছিলেন তাঁর দিকে। দৃষ্টিতে কিছুটা কৌতুহল, আর কিছুটা ঔদ্ধত্য। কে হে ছোকরা আমাকে দেখ? শান্তনুর পুত্র এই পরিচয় দেবার আগেই গাঙ্গেয় নত করেছিলেন দৃষ্টি। অশোভন এর বেশী দেখা। খুব আশ্চর্য্য হয়েছিলেন একটি বিষয়েই। তাঁর মায়ের সঙ্গে আচরণের, এমনকি দর্শনেরও বিস্তর সাদৃশ্য আছে। এই সাদৃশ্যই পিতাকে আকর্ষণ করেছে। অমোঘ এই আকর্ষণ। দেবব্রত জানেন সে কথা। তাই চিরকাল এই বিমাতা সন্দর্শনে চোখ নীচুই রেখেছেন। চোখে ছায়া পড়ে, তিনি জানেন।
ঠিক এমনই অস্বস্তিতে তাঁকে আরো দুজন ফেলেছে এই বংশের বধূদের মধ্যে। অবশ্য দুজনেই বধূ নয়, একজন ছিল সম্ভাব্য। অম্বার দৃপ্ত ভঙ্গীমা তাঁর নজর এড়ায়নি স্বয়ংবর সভায়। কিন্তু তার পরে যা হল তাতে তিনি অসহায়। যদি তাঁর এই শপথ না থাকতো তাহলে? জানেন না ভীষ্ম। এই শপথের জন্য তীব্র বিরাগ থাকার কথা ছিল তাঁর সত্যবতীর উপরে! কিন্তু আসেনি তা! অম্বার প্রতি আত্মহত্যার জন্য ক্রোধ থাকার কথা, হয়নি। বারেবারে নিজেকে এঁদের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন তাঁরাও আসলে তাঁরই মত দুর্বিপাকে পড়া মানুষ। সত্যবতীর ক্ষেত্রে তাঁর আর সত্যবতীর পরস্পরের জীবনে করা ক্ষতির দায় সমান সমান। অম্বার ক্ষেত্রে তো নিজেকে চিরকালই দায়ী করেন তিনি। শুধু বেঁচে গিয়েছেন কুন্তীর বেলায়। ভীষ্ম নিজে গিয়ে বেছে আনলে তিনি কুন্তীকে আনতেন কিনা সন্দেহ আছে তাঁর নিজেরই। সত্যবতী এবং অম্বার পরে তিনি নিজে কখনো তাঁর ভ্রাতা বা ভ্রাতুষ্পুত্রদের জন্য এমন স্বতন্ত্রচিত্ত বধূ আনতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু দেশাচারের জন্য কুন্তীর স্বয়ংবরে তাঁকে পাঠাতেই হয়েছিল পাণ্ডুকে। মাদ্রী, গান্ধারী কেউ-ই কুন্তীর মত নয়। এঁদের তিনি বেছেই এনেছেন। এঁরা শুধু অম্বিকা বা অম্বালিকার মতই সন্তানের জন্ম দেবে, এই তাদের জন্য নির্ধারিত কাজ। চিরকুমার ভীষ্ম নারীচরিত্র বোঝেন না একথা ভ্রান্ত। সত্যবতীর কষ্ট তিনি বুঝেছেন। তা নিয়ে সান্ত্বনা বা স্তোকবাক্যের আশাও যেমন সত্যবতী করেননি, তেমন তিনিও সাড়া দেবার কথা ভাবতেও পারেননি। একই প্রাসাদের ছাদের নীচে দুটি বঞ্চিত মানুষ বাসা বেঁধে ছিল এতকাল। আজ একজনের মুক্তি হয়ে যাচ্ছে, আরেক বন্দীকে সময় বলছে আরো দায়িত্ব নিতে হবে। কি কৌতুক সময়ের!
বেদব্যাস অপেক্ষা করে ছিলেন। রথ থামতেই তিনি এগিয়ে অভ্যর্থনা করলেন গাঙ্গেয়র। কুতুহল-শালার বাইরে এখন সন্ধ্যাকাল। নগরের দিন শেষ হয়ে রাত্রি মুখরিত হয়ে উঠছে প্রমোদকুঞ্জগুলোতে। গাঙ্গেয় আসার সময়ে দেখছিলেন মাধ্বীর ভান্ড হাতে পথে গুঞ্জন তুলে চলেছে নাগরিকেরা। সুরসিকার দল অপেক্ষায় রয়েছে তাদের। নানান রঙের পাগড়ি আর বড় বড় জোব্বায় ঢাকা কবি, গায়ক, বাদক এবং চাটুকারের দলের ভীড় সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে। সব জায়গাতেই আলোচনা কালকের সভা নিয়ে। মধ্যে মধ্যে রয়েছে খাটো জামা পরা প্রহরীদের একাংশ। এদের কাজ নগরের নিরাপত্তা বিধান করা। নগরপালের অধীন এই বাহিনী আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে লেগে থাকে সম্বৎসর। বড় বড় জোব্বা যেমন গান্ধারের প্রভাব এই নগরে, তেমনই এই আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সামরিক প্রকল্প থেকে আলাদা করাটাও তাদের থেকেই নেওয়া। সংস্কৃতভাষীরা এ অঞ্চলে আসার আগে যারা উত্তর-পশ্চিমের প্রবেশ দুয়ারে বাস করতো সেই প্রাচীন সরস্বতীবাসীরাও নগরের বাসিন্দা ছিল। সরস্বতী শুকিয়ে যাবার পর তার মূলধারা অন্তঃসলিলা ফল্গু হয়ে যায়। সিন্ধুর বন্যা, খরা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রভাবে তারা সে অঞ্চল ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে। সঙ্গে নিয়ে যায় তাদের নগরজীবনের কিছু কিছু অংশ। কিন্তু তাকে বিস্তারিত গড়ে তোলার আগেই বারেবারে আক্রান্ত হতে থাকে ওই প্রবেশ দুয়ার। দেবখণ্ডের বা উত্তরখণ্ডের অভ্যন্তরেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছে অনেকবারই। তারাই এই পদ্ধতির প্রচলন করে। নিয়মিত বাহিনীকে আলাদা করাটা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরী ছিল। তাছাড়া সবচেয়ে সমস্যা ছিল উত্তর-পশ্চিম অংশে বহু বণিকের আগমন ঘটে। অনেক দূর দূর দেশ থেকে। সে সব দেশের অবস্থান আরো পশ্চিমে।
কথিত আছে এককালে দেবাসুর সেই দেশগুলোতে একত্রে বাস করতো। তারপরে উভয়েই সেখান থেকে চলে আসে এই অঞ্চলে। এবারে যে বণিকেরা আসে তারা বাণিজ্যের পাশাপাশি গুপ্তচরের কাজও করে। পশ্চিমের বিস্তির্ণ অংশে থাকে যাযাবর দস্যুদের দল। তারাই অনেক সময় এই বণিকদের কাজে লাগায় নগরের সম্পদ থেকে নিরাপত্তা সব সম্পর্কে তথ্য জোগাড়ের। সেই তথ্য নিয়ে আক্রমণ করে একদিন। কখনো লুট করে চলে যায়, কখনো কিছুকাল স্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। লুট যখন করে তখন স্বর্ণ-রৌপ্য থেকে মুদ্রা সকলই নেয়, নর-নারীকেও বেঁধে নিয়ে চলে যায়। তাদের বিক্রি করে আরো দূর দূর দেশের দাসের বাজারে। আর থাকলে পরে ধীরে ধীরে ধর্ষণ, খুন-জখম এসব পেরিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে এই সব নগরের সঙ্গে। গান্ধারে এসব বারেবারে হয় বলেই এদের যাবনিক বলা হয়। আর সেই কারণেই গান্ধারে সম্প্রতি বণিক এবং রাজন্যরা মিলে এই ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছেন। গাঙ্গেয় এই নিরাপত্তার আয়োজন বিশদে জেনেছেন। তিনিও এই আভ্যন্তরীণ বাহিনী এবং গুপ্তপুরুষের ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছেন এই হস্তিনাপুরে। অন্যদিকে একই কাজ করেছেন জরাসন্ধও। তাই আজ গাঙ্গেয় বিশেষ সতর্কতা নিয়ে এসেছেন বেদব্যাসের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। কুতুহল শালায় তিনি এবং ব্যাস ছাড়া কেউই আজ থাকবেনা। বাইরে থাকবে তাঁর নিজের হাতে গড়া প্রহরীর দল। যে আলোচনা আজ হবে তা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এ যদি তিনি অনুধাবন না করে থাকেন তাহলে বৃথাই তাঁর রাজ্যশাসন সাধনা। আজকে, এমনকি ব্যাসের প্রিয়তম পুত্র বিদুরও আমন্ত্রিত নয় এখানে। কিন্তু এসব কিছুর পরেও তাঁর ভিতরে জেগে আছে এক শূন্যতা বোধ। কি হবে এসবে? তাঁর কী?
কুতুহলশালার প্রধান কক্ষে বসে পানপাত্র হাতে নিয়ে তিনি নিশ্চুপ। ফলের রস দিয়ে অভ্যর্থনা হয়েছে তাঁর। ব্যাসের হাতে সুরাপাত্র। বেদব্যাস তাঁর দেখা শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান পুরুষ। কি অবলীলায় পড়ে ফেলেছেন তাঁর মনের কথা! কোনো ভূমিকা ছাড়াই আলোচনা শুরু করেছেন ব্যাস।
-গাঙ্গেয়, একমাত্র কর্মে মানুষের অধিকার আছে, তার ফলে নয়। একথা আপনাকে স্মরণ করানোর কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আমি বাধ্য হলাম আরেকবার এই প্রসঙ্গ আনতে। ব্রহ্মবাদীরা সকলেই জানেন এ কথা। আপনি ক্ষত্রিয় হলেও জ্ঞানে ব্রাহ্মণোত্তম। তবু আজ আমি যে কথা আপনাকে বলতে চাই তার মূলে থাকা কথাটি আগে বলে নিলাম।
এই তো! এই কথাই তো তিনি ভাবছিলেন। গাঙ্গেয় এতকাল নিজেকে প্রবোধ দিয়েছেন এই ভাবনা দিয়েই তো!
‘ফলে আমার অধিকার নেই’।
নেই? কেন নেই? আমার সাধন তবে কি কাজে লাগবে? কার কাজে লাগবে? অন্যের? তাতে আমার কি?
-কিন্তু কাজে লাগতে হবে!
সে কি! ব্রহ্মিষ্ঠ তো তাঁর কথাই বলছেন।
-না হলে কিছু কাজ কখনো সম্পূর্ণ হয় না। মানুষ, অতি বুদ্ধিমান হলেও অভীপ্স লক্ষে পৌঁছতে চায়। আমার এত বছরের অভিজ্ঞতা বলে সে সুযোগ না থাকলে তার মন সরে যায় কর্মের বিষয় থেকে। সাধনেরও একটি লক্ষ থাকে। অন্যথায় সে সাধন শুধুমাত্র কালক্ষেপ। এই যে কপিল কার্মিক প্রকৃতি আর অকর্মক পুরুষে বিভাজন করেছিলেন, সেই পুরুষের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। সে যদি অকর্মকই হবে তাহলে বীজ দেবে কে? ব্রহ্মবাদীরাও এর থেকে দূরে যাননি কখনো। আমার আপত্তি আছে এতে। এমনকি স্রষ্টাও নিঃসঙ্গতা বোধ করেই সৃষ্টি করেছেন বলেই এঁদের দ্বারা কথিত। সেই নিঃসঙ্গতা কি অভীপ্সা নয়? সান্নিধ্য আকাঙ্খা নয়? সৃষ্টির যদি কারণই না থাকবে তাহলে স্রষ্টার নিঃসঙ্গতা কিসের? কি আকাঙ্খা তাঁর সৃষ্টি থেকে? এমন বিস্তর প্রশ্নের কোনো মীমাংসা হয়নি। ফল, জ্ঞানবাদ ধোঁয়াশা তৈরী করছে শুধু।
ভীষ্ম কোনোদিনই এই জাতীয় আলোচনায় আলাদা করে অংশগ্রহণ করেন না। এর কোনো শেষ নেই। অন্তত তাঁর জানা নেই। প্রশ্ন-প্রতিপ্রশ্ন ইত্যাদি সব শেষে জন্ম দেয় যাজ্ঞ্যবল্ক কথিত অতি-প্রশ্নের। তাকেও থামিয়ে দিতে হয় ওই ধোঁয়াশা বজায় রাখতে। তাহলে কী লাভ? কিন্তু ব্যাস যখন বলছেন তখন নিশ্চই কারণ কিছু আছেই। সেটা না জেনে কথা বলাটা অপ্রয়োজনীয়।
-আমার মনে হয় কালকের গণের সভা নিয়ে আপনি বিচলিত। সম্ভবত তাই এই প্রসঙ্গের অবতারণা! কিন্তু কী ভাবনা আপনার তার তল পাওয়া আমার মত সামান্যের পক্ষে কতটা সম্ভব ঋষি?
-আপনি যত বড় জ্ঞানী তত বড় বিনয়ী গাঙ্গেয়। এমন পুরুষ আমি এই ভূখন্ডে দেখিনি বললেও কম বলা হবে।
-আমাকে লজ্জা দেবেন না মুনেঃ। আমি জানি আমি অকিঞ্চন।
-এর এতটুকু শিক্ষাও যদি আমার দুই পুত্রের থাকতো, তাহলে আমাকে আজ চিন্তায় পড়তে হত না এত। পাণ্ডু, শাসনকে নিজেকে অতিক্রম করে দেখতে শেখেনি। তার বল-বীর্য্য বৃথা গিয়েছে তাই। নিজের স্বভাবকেই অতিক্রম করতে পারল না সে। ধৃতরাষ্ট্র তার প্রকৃত ভ্রাতাই বটে! ক্ষোভের, মাৎসর্য্যের বিষ তার সমস্ত সত্তাকেই বিষিয়ে দিয়েছে। এক পুত্র শাসনকে শুধু নিজের খেলার সামগ্রী ছাড়া কিছুই ভাবেনি বলে আত্মসমালোচনা করেনি কখনো। নিজের মাপের চেয়ে বড় হতে চেয়েছে ক্রমাগত, যা আসলেই ছোট করেছে তাকে। আত্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করেনি। অন্য পুত্র শাসনকে হাতে পাওয়ার জন্য হা-হুতাশ করেই দিন শেষ করে দিল। শাসনকে যে ষড়যন্ত্রের চেয়ে পৃথক হতে হয় তাই শিখলো না।
এই কি বেদব্যাস? ঋষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ? নাকি এক আর্ত পিতা?
-কিন্তু এমন হবেনা। এমন হতে পারেনা। আমার পুত্রাদি না, কুরুকূল না, সমগ্র ভূখন্ডের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে এখানে।
কিছুক্ষণ থামেন ব্যাস। বলেন আবার,
-গাঙ্গেয়, ভদ্র, কাল অশ্বল এসেছিলেন।
এমনটা কি গাঙ্গেয় নিজেও আশা করেননি? সত্তার ভবিষ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে। এখনই তো সকলেই ঝাঁপাবে!
হাসেন স্বল্প গাঙ্গেয়। বলেন,
- স্বাভাবিক।
-এ শুধু সত্তার দখল নয় ভীষ্ম, এ আমাদের ভবিষ্যৎ-এর দিকে চাওয়া!
সেই অব্যর্থ পাঠ!
-ঠিক বুঝলাম না মুনেঃ!
-জরাসন্ধ যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তা আমি একদিক থেকে মনে করি সঠিক। এই ভূখন্ড বহুধা বিভক্ত! যত বিভাজন, তত দুর্বলতা। আর্য, বিগত কিছুকাল সমাজ ধর্মে এই দুর্বলতার প্রভাব হয়েছে চরম। এই যে সুধন্যকে নিয়ে আপনি চিন্তিত, এর মূল কারণ কি? সুধন্য কোনো বলশালী যোদ্ধা নয়, সেনানায়ক নয়, এমনকি তার অধীত কোনো জ্ঞান মানুষকে আকৃষ্ট করে এই হস্তিনাপুর রাজ্যের সকল গ্রাস করে নিতে উদ্যত হতে পারবেনা। তবু, আপনি তাকে চোখে চোখে রাখেন, তার প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করেন। কেন আর্য?
-তার হাতে রয়েছে এক নতুন অস্ত্র মহর্ষি, যার প্রয়োগ কৌশল আমাদের সকল জ্ঞানের বাইরে।
-ঠিক তাই। আমিও লক্ষ্য করেছি। অর্থ! আজ সকলেই তার মূল্য বুঝছে। রাজা থেকে ব্রাহ্মণ। যার হাতে এই সম্পদ তার দিকেই হেলে আছে রাজশাসন। এমনকি আপনার বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ধৃতরাষ্ট্র সুধন্যকে নিজের মন্ত্রণাসভার সদস্যপদ থেকে সরাতে আগ্রহী নয়। কেন? ধৃতরাষ্ট্র জানে কাল যদি পাণ্ডুবিহীন এই রাজ্য তাকে দখল করতে হয় তাহলে তার লাগবে সৈন্যবাহিনী। রাজা জরাসন্ধ তাকে সৈন্যবাহিনী দিলে তার বিনিময়ে তাকেও করদ রাজা হয়ে যেতে হবে। তাতে সে রাজী না। সে চায় স্বাধীন শাসন। তার পন্থা তাকে দিয়েছে সুধন্য। আরো আরো পশ্চিম থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে দস্যু, যোদ্ধা, যাযাবর আক্রমণ করেছে ধৃতরাষ্ট্রের শ্বশুরকূলের শাসন। তাদেরই কেউ কেউ ব্যবসা সুবাদে ঘনিষ্ঠ এই সুধন্য বা তার মত আরো কিছু বণিকের। তারা লড়তে পারে ধৃতরাষ্ট্রের হয়ে। আপনাকে এবারে সে যদি পক্ষে পায় তাহলে নিশ্চিহ্ন করে দেবে পাণ্ডুর বংশ।
-তা নাও তো হতে পারে মহর্ষি। এমনও তো হতে পারে কাল গণসভায় পাণ্ডুপুত্র হিসেবে এই পঞ্চবালক স্বীকৃতি পেলে সেও মেনে নেবে।
-এমনিতে? না গাঙ্গেয়! আমার এই জ্যেষ্ঠপুত্রটিকে আপনি আরো দেখুন। সে অনেক ভেবেই এ কাজে হাত দিয়েছে। বল বা বীর্য্য কোনোটাই তার পাণ্ডুর থেকে কোনো অংশে কম না। প্রথা তাকে বঞ্চিত করেছে রাজ্যাধিকারে। নইলে সে কোনো অংশেই কম শাসন ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল না। আমি তার এই জ্বালা বুঝি, আমি তো পিতা গাঙ্গেয়! যে বুদ্ধি সুশাসন করতে পারতো আজ সে বুদ্ধি বিঘ্ন ঘটাতে সদা তৎপর। সে বুদ্ধি তাকে বলেছে এ কাজে তাকে সুধন্যর মতই সাহায্য করতে পারে ব্রাহ্মণের প্রথাবিরোধীরা। যে প্রথা তাকে বঞ্চিত করেছে সেই প্রথাকে সে আঘাত করার সুযোগ চাইছে আর্য।
-আপনি অদ্ভুত পিতা ব্যাস, আমি বলতে বাধ্য হলাম। আত্মজকে এমন করে বিশ্লেষণ করা আমার সাধ্যাতীত ছিল হয় তো!
-কিন্তু মাননীয় এ শুধু আমার বিশ্লেষণের প্রশ্ন না, এটা হস্তিনাপুরের নিরাপত্তার প্রশ্ন!
নিমেষে তৎপর হলেন গাঙ্গেয়।
-না মহর্ষি। হস্তিনাপুরের নিরাপত্তার প্রশ্নে শুধুমাত্র অশ্বল বা সুধন্যই জড়িত না। আরো অনেকে জড়িয়ে আছে। আপনি বলতে পারেন এই রাজবংশের পাণ্ডু শিবিরের এটি নিরাপত্তার প্রশ্ন।
-গাঙ্গেয় যদি আমাকে একটু বুঝিয়ে দিতে পারেন-
-আমি সহজেই আপনাকে বলতে পারি ঋষি! আপনি সামান্য শুনলেই আশা করি বুঝে যাবেন।
-বলুন।
-পাণ্ডু পুত্রদের পিতা কারা?
-কুন্তীর বক্তব্য এবং ঋষিদের সাক্ষ্য অনুযায়ী ধর্ম থেকে ইন্দ্রাদি দেবগণ রয়েছেন এর পিছনে।
-আপনি নিজে কী মনে করেন মুনেঃ? আপনি জানেনই লোকসমাজ এ জাতীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী, কিন্তু তা বলে রাজশাসনের এ কাজ নিশ্চই নয়, যে সে দেবকূলের অলৌকিকতায় বিশ্বাসী হবে?
-না।
-তাহলে আপনার অভিমত কী?
এই বিষয়টাই ব্যাস ভাবছিলেন। এই একটা খোঁচা থেকেই যাবে।
-লোকের মনেও কিন্তু সন্দেহ ঘনীভূত!
বিদুর তাঁকে জানিয়েছেন সবটাই। নগরপালিকার বিশেষ তথ্য অবশ্যই থাকবে গাঙ্গেয়র কাছে। এই প্রশ্নটা আসাই স্বাভাবিক। তিনি নিশ্বাস নিলেন। অবশেষে, সময় এলো তাহলে!
-গাঙ্গেয়, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিমত ব্যাক্ত করা বেশ সমস্যাজনক। তবে যা হয়েছে তা পাণ্ডুর অনুমতিক্রমেই ঘটেছে এমন অনুমান করাই সঙ্গত। কারণ যুধিষ্ঠিরের জন্মের খবর এই হস্তিনাপুরে এসেছিল পাণ্ডুর জীবদ্দশাতেই।
-সমস্যা হচ্ছে মহর্ষি, আমার কন্যাসমা কুন্তী প্রসঙ্গে এ আলোচনা নিতান্তই অশোভন, কিন্তু রাজকার্য্য অতিশয় জটিল। প্রজাপুঞ্জের মনোভাব জানা রাজার পক্ষে অতীব জরুরী। তার বিপরীতে যাওয়া বিশেষ ক্ষেত্র হলেই একমাত্র সঙ্গত।
-তাহলে সাধারণভাবে হস্তিনাপুর কুন্তীর বিপক্ষে?
-অন্তত গণের মনোভাব তাই-ই বলে। আপনার দূতেরা আপনাকে এ বিষয়ে কী জানিয়েছে?
ব্যাস ভাবলেন, এটা দেবব্রত জানবেন এতে আর আশ্চর্য্য কি!
-তারা আমাকে জানিয়েছিল পরিস্থিতি তার অনুকূল।
-আমার আশঙ্কা তারা পরিস্থিতির মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে পারেনি।
-কেন এমন ধারণা আপনার দেবব্রত?
-সদাশয়, এই সদস্যরা সকলেই হয় জমি নয় বাণিজ্যের নয় কারিগর সঙ্ঘের প্রতিনিধি। তাদের স্বার্থ অনেক বেশী করে জড়িয়ে সুধন্যর স্বার্থের সঙ্গে। তাছাড়া পাণ্ডুর শাসনকালে সে আমারও পরামর্শ উপেক্ষা করে বারেবারে এই গণের সদস্যদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। কখনো বাণিজ্যে রাজার অংশ নিয়ে তো কখনো জমিতে কার অধিকার সেই বিষয় নিয়ে। আপনি জানেন যে অন্যান্য অঞ্চলে যেখানে সরাসরি গণের শাসন প্রচলিত সেখানে এখনো মনে করা হয় জমির অধিকার কারোর একক নয়। জমির জন্য এখনো সেখানে যে কর দেওয়া হয় তাতে জনকল্যাণের কাজ চলে। তাছাড়া বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাই নিয়ম। কিন্তু পাণ্ডু এখানে সে সকল নিয়মকেই অগ্রাহ্য করেছে। অমিতব্যায়ীতা, ভোগ এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণতা তার সঙ্গী হয়েছিল তার জীবিতাবস্থায়। রাজার সকল কিছুতে নিঃসপত্ন অধিকার এমনই ছিল তার দর্শন। তার ফল বাড়তি কর ব্যবস্থা। বহু যুদ্ধে হস্তিনাপুর লিপ্ত হয়েছে যে সকল যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রয়োজন শুধু লুটতরাজ মাত্র। ফলে অঙ্গ রাজারা, বন্ধু রাজারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমারই চোখের সামনে হস্তিনাপুরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে তার বিলাসবহুল প্রাসাদ। অরণ্যে অরণ্যে তার ব্যাক্তিগত প্রমোদশালা। বিচিত্রবীর্য্য কিম্বা মহারাজ শান্তনুও অমিতব্যায়ী ছিলেন, তবু এই পরিমাণে না। আজ গণসভার সদস্যরা দেখছেন সেই তুলনায় ধৃতরাষ্ট্রকে বশে রাখা তাদের পক্ষে অনেক সহজ। কাজেই সমর্থন কোন দিকে যেতে পারে তা আপনি নিশ্চই অনুমান করতে পারছেন?
কথাগুলো অত্যন্ত যথাযথ। পাণ্ডু শাসনকাজে অনেক বেশী অমনোযোগী ছিল। তার এই সকল কাজ প্রজাপুঞ্জ সামগ্রিকভাবে খুব ভাল ভাবে নেয়নি। দাস, কৃষকদের বা কারিগরদের এই হিসেব থেকে বাদ দেওয়া যায়। তাদের মতামত কোনোভাবেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ব্যাসের কাজটা সত্যি কঠিন হচ্ছে ক্রমশঃ। কিন্তু তাতে ব্যাস থেমে গেলে ভবিষ্যৎ অন্য রকম হবে।
-এককালে মগধ ছিল শক্তিশালী গণরাজ্য। তার প্রতিবেশী গঙ্গারাষ্ট্রের কথা আপনিও জানেন। আপনার মাতৃকূলের অনেকের বসবাস সেখানেই। এই সকল রাজ্যগুলো সব আজকে রাজশাসিত। কেন?
-প্রধান কারণ দুর্নীতি! তাছাড়া শাসনের আলাদা আলাদা কেন্দ্র তৈরী হয়ে যাওয়া।
-গাঙ্গেয় এর মূলে কি আসলেই সম্পদের অধিকার সংক্রান্ত লড়াই নেই?
-একদিক থেকে বলতে গেলে আছে। কিন্তু এই কি প্রধান?
-আমার মতে এটিই মূল বিভেদ। শাসনের বহুকেন্দ্র ততক্ষণই সুফল দেয় যতক্ষণ সম্পদ সীমিত থাকে। দুটি অঞ্চলই খেয়াল করে দেখুন গঙ্গাপ্রবাহের ফলে অতুলনীয় কৃষিসম্পদের অধিকারী। এই যে সম্পদ জমা হয়েছে এ কার? প্রত্যেক গণসদস্য তাঁর নিজের অঞ্চলের উন্নতি আকাঙ্খা করেন, কারণ তাঁর নিজের সম্পদের স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত। প্রথমত বিপুল ভূ-সম্পত্তির অধিকারী এই অঞ্চলের গণসদস্যদের একটি বড় অংশ। অন্যদিকে রয়েছে কারিগর সঙ্ঘ বা বণিক সঙ্ঘের মানুষ। তাদের কিন্তু এতটা সম্পদ নেই। তাদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়েছে ভূ-স্বামীদের স্বল্পাংশের ইচ্ছের উপর। এই নিয়েই বিরোধ বেড়েছে দিনে দিনে। বণিক বা স্বার্থবাহরা, কারিগররা অনেক সময়েই পার্শ্ববর্তী রাজ্যের বাজারে তাদের অংশগ্রহণ এবং স্বার্থসংরক্ষণের বিনিময়ে গণরাজ্যগুলোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাতেও প্রবৃত্ত হয়েছেন। গণরাজ্যগুলোর প্রভাবশালী ভূস্বামীদের জবাব দেওয়ার এটাই সহজ রাস্তা ছিল তাদের কাছে। অন্যদিকে উত্তর-পশ্চিমের গিরিরাজের সানুদেশের গণরাজ্যগুলোতে বিপরীত চিত্র থেকেছে। কৃষির সুযোগ কম এবং বণিকেরা প্রধান বলেই এখানে গণরাজ্যগুলো রাজশাসনের অধীন হতে খুব উদ্গ্রীব হয়নি। একমাত্র যখন মগধ বা হস্তিনাপুরের মত কোনো শক্তি তাদের স্বাতন্ত্র্যকে স্থান দিয়েই তাদের করদ করেছে তখন তারাও সে শাসন সহ্য করেছে। এই জম্বুদ্বীপে গণরাজ্য এবং রাজ শাসিত রাজ্যর এই লড়াই ক্রমশ তার ছায়া দীর্ঘ্যায়িত করছে। এককেন্দ্রিক শাসনে রাজশাসিত রাজ্যগুলো সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকেই তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার পূর্বশর্ত বলে জানে। খুব স্বাভাবিক কারণেই তারা যত সহজে এই হস্তিনাপুরের মত যুদ্ধে লিপ্ত হয় কোশল বা বৃজ্জি তত সহজে এ কাজে যেতে চায়না। মগধ সম্রাট জরাসন্ধ-ও আমার মতই এই অবস্থা খুব ভাল অনুধাবন করেছেন। তাই জরাসন্ধের ক্রমশ সীমান্ত বিস্তার ঘটছে। হস্তিনাপুরের নাগরিক এই জটিলতার স্বরূপ না বুঝলেও তার গণকে তো বুঝতেই হবে। না বুঝলে তার কী দশা হতে পারে? যেভাবে জরাসন্ধ রাজ্য জয়, বা মৈত্রী চুক্তি বা বিবাহের মাধ্যমে নিজের মিত্র বাড়াচ্ছে, হস্তিনাপুরকে ঘিরে ফেলছে এর কী হবে?
ভুল কিছু বলেননি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন। রাজনীতির মূল হল পরিস্থিতির সম্যক মূল্যায়ন। এর থেকে ভাল মূল্যায়ন তিনি নিজেও করে উঠতে পারতেন না গাঙ্গেয় জানেন।
-সাধারণ্যে প্রচলিত ধারণা হল মুনি, ঋষি বা ব্রাহ্মণেরা রাজাদের দানে পুষ্ট বলে তাদের পক্ষপাতী হয়। ঠিক-ই! বৃহদাংশ এই কারণেই রাজানুগ্রীহিত হতে পছন্দ করে। বণিক বা কারিগর সঙ্ঘ তাদের ততটা গুরুত্ব দেয়না। কিন্তু আমাদের মত বশিষ্ঠ্য বংশীয়দের যে সম্পদ তাতে এই পক্ষপাত আমাদের কর্ম নয় আর। এই ভূখন্ডের অন্যতম প্রাচীন বংশ আমরা। আমরা জানি এটাই শুধুমাত্র কারণ না। আমাদের এবং আমাদের মতন ঋষি বংশের সর্বপ্রধান কর্ম হল জ্ঞান সাধনা। দেশে মাৎসন্যায় চললে সে কাজ বিঘ্নিত হয়। তাই আমরা সকল সময় সবল ও নিয়ন্ত্রণক্ষম শাসনের পক্ষে। সে কাজ একমাত্র করতে পারেন ক্ষত্রিয়রা। বণিক তার স্বার্থবাহ নামটিকেই স্বার্থক করে চলে মাত্র। তার বাণিজ্যের স্বার্থে সে দেশকেও শত্রুর হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করেনা। সে যখন দেশপ্রেমিক হয় তখন জানবেন তার নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক স্বার্থের পালেই এই দেশপ্রেম হাওয়া দিচ্ছে। তাই সে দেশপ্রেমিক হয়েছে। এমন শাসন কি কৌরব-গণ হস্তিনাপুরে চাইবে?
কালকের সভায় এই কথা কী পরিমাণ উত্তেজনা সৃষ্টি করবে তা দেবব্রত অনুমাণ করতে পারছেন। এর পরে সুধন্য কি বলতে পারে? তাছাড়া কথাটা বলছেন এমন একজন মানুষ যাঁর জ্ঞানসাধনা ছাড়াও অর্থনৈতিক সামর্থ্য যে কোনো রাজাকেই লজ্জা দিতে পারে। বশিষ্ঠের বংশের সম্পদ বিশ্বামিত্র এবং তৎপরে অন্যান্য কিছু রাজাদের শত্রুতা সত্ত্বেও ঈর্ষণীয়। তাছাড়া এ কথা বলার পরিস্থিতি আজ বর্তমান এ বিষয়ে তাঁর নিজের অন্তত কোনো সন্দেহ নেই।