এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • মহাভারত - চতুর্দশ পর্ব

    শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ১৮ জুলাই ২০১২ | ২২৬৩ বার পঠিত
  • জরাসন্ধের এই অভ্যুত্থানকে রাজন্যবর্গ এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে অনেকেই বেশ সন্দেহের চোখে দেখছেন। এর পিছনে অন্য কারণও রয়েছে। জরাসন্ধ নামটিই এর দিশারী।  জরা সন্ধি করেছে যার এই অর্থে নামটি প্রদত্ত।  এই প্রৌঢ় রাজার জন্মকালেই একটি শস্ত্রোপচার করতে হয় এর শরীরে। সেই কাজ করেন জরা গোষ্ঠীর সর্বশ্রেষ্ঠ শল্যচিকিৎসক। শল্য চিকিৎসা ব্রাহ্মণ সমাজে দূষিত কর্ম। এমনকি অথর্ববেদও এর বিপুল অনুধ্যানকে বাইরে রেখেই তৈরী হয়েছে। ব্যাসের পিতা পরাশর ছিলেন মহর্ষি চ্যবনের মতই বৃক্ষাদিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু ভেষজ এবং বনস্পতি নিয়ে চ্যবনের কার্য যেভাবে দানব এবং অসুর গোষ্ঠীতে প্রাচীনকালে ছড়িয়েছে তা অতুলনীয়। দেবগোষ্ঠীতে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের প্রতিষ্ঠা চ্যবনকে দিয়েই হয়েছে। নইলে অমর দেবকূলের কল্পনায় এই দুই চিকিৎসক দেবের স্থান ছিল না। চ্যবনই বাকী ব্রাহ্মণ এবং রাজবিরোধকে অবজ্ঞা করে এই দেবদ্বয়ের পূজোর সূচনা করেন এবং এঁদের সমুদ্রমন্থনে ওঠা অমৃতের ভাগীদার বলে আখ্যায়িত করেন।  লোকজ সমাজে চ্যবন গোষ্ঠীই মূলত চিকিৎসক।  অন্যদিকে পরাশর তাঁর সকল জ্ঞান নিয়েও জনচিকিৎসায় প্রবৃত্ত হলেন না।  তাই চ্যবনদের প্রভাব বেড়েছে এবং পরাশরের স্বীকৃতি শুধু শাস্ত্রবিদ হিসেবে।

    ব্রাহ্মণদের শল্য চিকিৎসা বিরোধ জাতীয় কর্মকে চ্যবন গোষ্ঠী গোপনে বিদ্রুপ করেই থাকে।  তারা মনেও করে ব্রাহ্মণরা এক মান্ধাতার আমলের সংস্কার বহন করে চলেছে এবং জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের আচার সর্বস্বতা তাদের অন্ধত্বের পরিচায়ক।  অথবা এও বলা যায় যে নতুন বিদ্যা অধ্যয়নে তাদের অপারগতার কারণেই তারা জ্ঞানচর্চার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এত।  এই মনোভাব সম্পর্কে ব্রাহ্মণরাও জ্ঞাত।  তাই ঋক্‌ ও সামপন্থীদের মতই ভিতরে ভিতরে চ্যবন ও ব্রাহ্মণদের বিরোধ চলছেই।  এই দুই গোষ্ঠীর লড়াইতে সুবিধা হয়েছে জরা বলে খ্যাত আরেকটি স্থানীয় চিকিৎসক গোষ্ঠীর। এরা এখানকার আরো পুরোনো অধিবাসী। মূলত কৃষ্ণবর্ণের এবং কম উচ্চতার এই অব্রাহ্মণ মানুষগুলিকে ব্রাহ্মণেরা কখনোই মূল স্রোতধারায় আসতে দিতে চায়নি। এদের জ্ঞানভান্ডার ঈর্ষণীয় এবং এটি বংশানুক্রমিক। এদের জায়গা দিলে রাজসভায় এবং তার সূত্রে আসা ধনের বাঁটোয়ারা করতে হত। এই জরা গোষ্ঠীর সেই অর্থে রাজানুগৃহীত হওয়া কিন্তু আরো প্রাচীন কালে। তবে সে সব রাজারা ছিল এদেশীয় বানর,  ভল্লুক পূজক রাজা। রামায়ণে উল্লিখিত এক কাল্পনিক রাজা বালির রাজত্বে যেমন এই জরা গোষ্ঠীর এককালে ছিল একাধিপত্য চিকিৎসায়।

    বানর বা ভল্লুক পুজকদের চিকিৎসা যে বেশ উন্নত তাও বাল্মিকীর রচনায় পাওয়া যায়।  রাম এবং লক্ষণের জন্য আনা বিশল্যকরণীর জ্ঞান এদের ছিল। কিন্তু বালিকে বিশ্বাসঘাতকতা করে সুগ্রীবের সাহায্যে রাম হত্যা করার পর থেকে সুগ্রীব শাসনের জন্য নিজেদের চিকিৎসক এই জরা গোষ্ঠীকে দমন করে।  রাজা বালির অনুরাগী ছিল এই গোষ্ঠী।  সেই জন্যই 'রামায়ণ' কাহিনী নির্মাণের সময়েও মহাকবি বাল্মিকীকে খেয়াল রাখতে হয় যে হনুমান চিনবে না বিশল্যকরণী।  বহু গাছ-পাতা তুলে আনতে হয় হিমালয় থেকে রাম-লক্ষণের চিকিৎসায়।  চারটি বিশেষ বৃক্ষ ছিল।  মৃত-সঞ্জীবনী,  বিশল্যকরণী,  সুবর্ণকরণী ও সন্ধানী।  মৃত সঞ্জীবনী মৃতকে প্রাণ দিতে পারে।  বিশল্যকরণী পারে অস্ত্রের ঘা সারিয়ে তুলতে।  সুবর্ণকরণীর পক্ষে সম্ভব অসুস্থতায় রং পাল্টে যাওয়া শরীরের রং ফেরানো।  আর কাটা অঙ্গ জোড়া বা ভাঙা হাড় জোড়ার কাজ করে সন্ধানী।  সে বৃক্ষের সন্ধান শুধু জানা ছিল হিমালয়নিবাসী রিক্ষরাজ জাম্বোবানের।  কথিত যে দেবতাদের থেকে অমৃত-মন্থনের সময় জাম্বোবান জেনেছিলেন এই বিশল্যকরণীর কথা।  সেই মন্থনে ছিল রাজা বালিও,  যাকে রাম সুগ্রীবের বন্ধুত্বের বিনিময়ে হত্যা করবে পিছন থেকে।

    এই প্রাচীন গোষ্ঠীগুলির একটি বৃহদাংশ,  যারা কৃষিকাজে অনিচ্ছুক,  অথচ ঔষধ থেকে শুরু করে চর্মজ শিল্পে দক্ষ তাদের ক্রমশঃ সরে সরে যেতে হয়েছে দক্ষিণের দিকে।  নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে,  অরণ্য নির্ভরতা ত্যাগ না করার বা কৃষিকার্যে অনীহার জন্য জম্বুদ্বীপের জাম্বোবানকে দক্ষিণের দিকে যেতে হয়েছে উত্তরে বেদবাদীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ফলে।  বেদবাদীরা মূলত কৃষিজীবি সংস্কৃতভাষী সমাজের মাথা।  এককালে ক্ষত্রিয়,  আরেককালে ব্রাহ্মণ,  সমাজনিয়ন্ত্রক হয়েছে বেদ-বেদান্তের বা স্মৃতিগ্রন্থণের মাধ্যমে।  কখনো আবার এই প্রাচীনদের সঙ্গে গো-পালকদের সমস্যা হয়েছে গো সম্পদ নিয়ে।  গো-হত্যা বা গো-চর্ম নিয়ে কাজ ব্রাহ্মণদের মতে পাপ এবং নিকৃষ্ট।  অন্যদিকে এরা আদি বেদের মতনই গো-হত্যা থেকে গো মাংস ভক্ষণ বা গো-চর্মে দ্রব্য প্রস্তুত কোনোটাতেই পেছ-পা ছিল না।  এই দ্বন্দ্বের ফলেই এদের দক্ষিণ গমন।  ব্যাস শুনেছেন দক্ষিণের লোকায়ত সমাজে প্রচলিত আছে কামধেনু হত্যার কাহিনী।  তাদের কাহিনীতে শিব-পার্বতীর এক পুত্র চেন্নাইয়া কামধেনু হত্যার করেছিল।  স্বয়ং জম্বুবান,  যিনি নাকি ওই লোকায়ত পুরাণ অনুসারে ত্রি-দেবেরও পিতাম্‌ যিনি সৃষ্টির ছয় মাস আগে থেকে আছেন,  তিনি সেই চামড়া  ছাড়ানোর কাজ করেন দেবতাদের আদেশে।  পতিত হন চণ্ডাল রূপে।  এ সকল কাহিনিতে কিছু কিছু সমাজ-ঐতিহাসিক চিত্র রক্ষিত তাও জানেন ব্যাস।

    কিন্তু জানলেও কিছু করার নেই।  তাঁকে তাঁর কাজ করতেই হবে।  কে প্রাচীন এ দিয়ে জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না।  হলেও তা ভাল হয় না।  দুর্বলের অধিকারে জমি গেলে রক্ষা করবে কে?  রাজত্বও তেমন।  জরা গোষ্ঠীর অধিকারকে খর্ব করেছে বালি হত্যা।  তাই তারা রাম বিদ্বেষী।  আবার রাজা রামের অবতারত্ব প্রচারক হল বৈষ্ণবরা।  সেই সূত্রে বৈষ্ণব ও বৈষ্ণবদের সহায়কদের প্রতিও তাদের বিপুল বিদ্বেষ।  এদিকে বশিষ্ঠ্যের আমল থেকে ব্যাসের বংশ রামের নামের সঙ্গে যুক্ত।  সুতরাং ব্যাসগোষ্ঠীকেও তারা বিষ্ণু পূজক বলে মনে করে।  এত কথা ব্যাসকে জানতে হয়েছে যেহেতু তিনি নতুন ধর্মের কথা ভাবছেন এখন।  ইন্দ্রাদি দেব,  সূর্য্যপূজক থেকে শাক্ত-শৈব সকলেই এখন সকলের সঙ্গেই বিরোধে মত্ত।  পিতার আদেশে বেদ বিভাজন করার কাজে হাত দিয়ে বুঝেছিলেন এককালে,  যে এই প্রাচীন সমাজের মধ্যেও রয়েছে বিপুল অনৈক্য ও সংঘাত।  তাহলে এই ভূখন্ডের একীকরণের জন্য যে ধর্ম সে দেবে কে?  একমাত্র সমস্ত ধর্মের সংযোজনই পারে সে কাজ করতে।  সেই সংযোজন করার কাজে হাত দিয়েছেন।  সাংখ্য,  যোগ থেকে শুরু করে বেদাদির দর্শন,  নানা বিরোধীভাবাপন্নকেও তিনি সংশ্লেষণ করার ভাবনায় আছেন।

    বেদ বিভাজনের সময়েই ভাবনাটা এসেছিল তাঁর।  বেদ,  আজকের সময়ে কিছু আচরণের সমষ্টি হয়ে রয়ে গিয়েছে জনসমাজে।  প্রতিটি বেদ যা তিনি তৈরী করলেন বিভাজন করে সেও নানারকম অসঙ্গতিতে পূর্ণ।  একদিকে ব্রাহ্মণের ব্রহ্মকে সামনে রেখে ধন লাভের আকাঙ্খা,  অন্যদিকে সমাজে সেই লোভের প্রতি বিদ্বেষ।  এই দুই-এর মাঝখানে দাঁড়িয়েছিল একসময়ে কপিল ঋষির ভাবনা।  সাংখ্য নামে পরিচিত এই দর্শন।  ঈশ্বর এখানে অপ্রমাণিত বলে বিবর্জিত।  এমনকি বেদের যেখানে যেখানে সর্বজ্ঞানীর কথাও আছে সেখানেও সাংখ্য বলছে এই সর্বজ্ঞানী হলেন ঈশ্বরকল্প কিছু যোগী।  যোগসাধনে যাঁদের মুক্তি ঘটেছে।  পুরুষ,  প্রকৃতি নিয়েই বিশ্ব।  পুরুষ চেতনা।  প্রকৃতি জড় বস্তুসমূহ।  চেতনার সংস্পর্শেই তা একমাত্র ক্রিয়াশীল।  কিন্তু সেই ক্রিয়া জন্ম দেয় চিত্তের।  চিত্ত থেকে আসে বৃত্তি।  চিত্ত মায়াবী।  সে অহংকারের প্রকাশক ভুল।  তাকে অতিক্রম করতে হয় সাধনে।  সেই সাধন,  সেই যোগেই মুক্তি।

    শ্বেত যজুর্বেদে ছিল 'যো আসৌ আদিত্য পুরুষ সো আসৌ অহম'।

    'যে সেই আদিত্য পুরুষ সেই আমি'।

    সূর্য পূজক বংশে জন্ম যাঁর সেই ব্যাস জানেন এ আসলে প্রকৃতিতে যা দৃশ্যমান,  যা প্রমাণিত তাকে ধরেই সৃষ্টির কল্পনা।  তাই সাংখ্য অস্বীকার করে ঈশ্বরকে।  কিন্তু সাধারণের কাছে এ বড় কঠিন।  সে দেখছে এক বিপুল ব্রহ্মান্ড,  নিঁখুত নিয়মে কর্ম করে চলেছে।  এ কি এমনি এমনি?  জন্ম-মৃত্যুর চক্র চলছে।  বায়ু বইছে,  বৃষ্টি পড়ছে,  ফুল ফুটছে।  এ সব তবে কে চালায়?  কেউ না?  তাহলে এই এক বিপুল ব্রহ্মান্ডে সে একা?  এই একাকীত্বের ভয়,  এই অজ্ঞানতার ভয় তাকে ভীত করে।  তার ঈশ্বর চাই-ই চাই।  সে ঈশ্বর তাকে দেবে নিশ্চয়তা।  ব্যাস বুঝেছেন এই চাহিদা।  একদিকে চিত্ত অন্যদিকে বুদ্ধি।  সাধারণ মানুষ চিত্তের দাস,  বুদ্ধি তাকে ভয়ভীত করে।  বুদ্ধির সাধনা তার নয়।  তাই সাংখ্যের যে পরিবর্তন এসেছে আত্রেয়দের হাত ধরে তাকে তিনিও স্বাগত জানান।  পাতঞ্জলীর নামে পরিচিত যোগসূত্রটির তিনি ভাষ্যও রচনা করেছেন।  সেই সূত্রে সাংখ্যের সমস্ত কিছুর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে ঈশ্বরও।  তাই দুই সাংখ্য এখন।  এক,  নিরিশ্বর,  কপিলের সাংখ্য,  অন্যটি ঈশ্বরবাদী পাতঞ্জলী সাংখ্য।

    অবশ্য তাঁর ভাবনার মূলে ছিল অদ্ভূত রামায়ণের কাহিনি।  বাল্মিকীর রামায়ণ নিয়ে চর্চার সময়ে এক মাগধী শ্রমণ তাঁকে সে কাহিনি বর্ণনা করে শোনান।  এ কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়নি এখনো।  সে কাহিনীর মূলে আছে সীতার প্রতিষ্ঠা।  লঙ্কেশ্বর রাবণকে হত্যা করে সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এসে যখন রাম গর্বিত,  সাধুসন্তরা সীতার দুঃখ এবং রামের বীরত্বের কথা ব্যাখ্যান করছেন ও দুঃখ প্রকাশ করছেন তখনই সীতা আরেক রাবণের কথা বলেন।  সে রাবণ দশ মাথার নয়,  সে রাবণ সহস্রমাথার।  পুষ্কর তার রাজত্ব।  সম্পর্কে লঙ্কেশ্বর রাবণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইনি।  রাম তখন বাহিনী সজ্জিত করে যুদ্ধে চললেন রাবণের সঙ্গে।  সে যুদ্ধে রাবণের হাতে তাঁর সমগ্র বাহিনীর পরাজয় ঘটে।  শুধু তাই না,  রাবণের প্রতাপে সমস্ত বানর সেনা কিষ্কিন্ধ্যায়,  রাক্ষস সেনা লঙ্কায়,  আর রামের সেনা অযোধ্যায় পৌঁছে যায়।  রাম নিজে রাবণের বাণে বিদ্ধ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকেন মৃত।  তখন সীতা, যিনি পরমা প্রকৃতি,  সর্ভকরণ করণম,  তিনি তখন মহাকালী মূর্তি ধারণ করেন।  রাবণের সমস্ত মুন্ড এক কোপে ছিন্ন করে শুরু করেন সেই সব মুন্ড নিয়ে গেন্ডুয়া খেলা।  সহস্র 'মাতা' তাঁর শরীরের সমস্ত রন্ধ্র থেকে নির্গত হয়ে সেই খেলায় যোগ দিয়েছিলেন।  তখন দেবতারা কোনোক্রমে রামের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে সীতার ক্রোধ প্রশমন করেন।  এই কাহিনি ভাবিয়েছিল ব্যাসকে।  বৈষ্ণবদের অবতারবাদের বিরুদ্ধে শাক্ত অবতারবাদ।  রামের বিরুদ্ধে সীতা।  ঋষি ভরদ্বাজের কথায় সূত্রপাত এ কাহিনির।  বাল্মিকীর যে রামায়ণ মর্ত্যলোকে প্রচলিত এই অদ্ভূত রামায়ণ তার অপ্রচলিত অংশ বলে প্রচার।  অর্থাৎ বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় অতি কম।  সাংখ্যের মধ্যেই যদি বিরোধ নিষ্পন্ন না হয় তাহলে সামগ্রিক সমাজে কী করে তা হতে পারে?

    এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যাস মন দিয়ে অধ্যয়ন করেছেন লৌকিক নানা কাহিনি সমূহ।  দেব-দেবী সম্বলিত নানা মতবাদকে জেনেছেন।  সম্পূর্ণভাবে নিজের অধীন গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়েছেন এই অধ্যয়নের কাজে।  সেই কাজেই জেনেছেন জাম্বুবান পুরাণের কথা।  জাম্বুবানের লৌকিক কাহিনি থেকে যা পাওয়া যায় তাতে চর্মজ দ্রব্যের কাজে এদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত।  সেই কাজের জন্য নিয়মিত পশুদের কাটা-ছেঁড়া করে চলতে হয় এদের।  তার সঙ্গেই আছে সেলাই-ফোঁড়াই।  সে বিদ্যেও ভালমতন রপ্ত হয়েছে এদের।  এই দুটি কাজই সাহায্য করে অস্ত্রোপচারের কাজে।  এমনিতে অস্ত্রোপচার খুব উন্নত কিছু না এখনো।  মূলতঃ ব্রাহ্মণ্য-বিরোধের ফলে অস্ত্রোপচার নিষিদ্ধ কাজ বেদবাদী বা সংস্কৃতভাষী সমাজে।  কাজেই সে জ্ঞান থেকে তারা বঞ্চিত।  জরাদের এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।  বানর রাজার চিকিৎসক ও আস্থাভাজন হিসেবে তারা ব্রাহ্মণব্রাত্য চন্ডালদের এই অংশের সঙ্গে থেকে দিব্য রপ্ত করেছে কৌশল।  শল্য চিকিৎসায় তারা পারঙ্গম।  উদ্ভিদ-বিদ্যার জ্ঞান তারা আহরণ করেছে পরাশরদের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী চ্যবনদের থেকে।  সুতরাং চিকিৎসক হিসেবে তারা উচ্চমানের।  জরাসন্ধের অস্ত্রোপচার তাদের পক্ষে করা খুব অসম্ভব না।  জরা রাক্ষসী,  জরা গোষ্ঠীর গোষ্ঠীকত্রী।  তিনিই করেছেন এ কাজ।  বিনিময়ে মগধ রাজ বৃহদ্রথ তাঁর নামে উৎসব চালু করেছেন মগধে।  জরাসন্ধও সে উৎসবকে চিরকালই মর্যাদার সঙ্গে পালন করে চলেছেন।

    সে যাই হোক,  বালির পর থেকে এই গোষ্ঠী পরিব্রাজক হিসেবে বহুকাল কাটিয়েছে। এদের সমস্ত সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। যেখানে গিয়েছে সেখানেই ব্রাহ্মণদের ক্রোধ এদের পিছু নিয়েছে। স্থানীয় শাসনের সাহায্যে এদেরকে দীর্ঘ্যকাল পর্যুদস্ত করে রাখা গিয়েছিল।  এদের গবেষণা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদের পিছনে কোনো রকম রাজনৈতিক সাহায্য না থাকায়। বানর, ভল্লুক, সর্প-পূজক গোষ্ঠীরা হয় আজকে প্রান্তিক এবং করদ রাজা, নইলে তাদের রাজ্যের কোনো অস্তিত্বই নেই আর। জরাসন্ধের এই শল্যচিকিৎসা এদের আবার বহুকাল পরে এনে দিয়েছে সুস্থির অবস্থায়। বেদাদির দেবতার সম্পর্কে জরাসন্ধের বিদ্বেষ এবং ব্রাহ্মণ্য প্রথা নিয়ে আপাত শ্রদ্ধার আড়ালে তাচ্ছিল্যের একটি বড় কারণ হল এই জরাগোষ্ঠীর প্রভাব তার উপরে রয়েছে। এ জন্যও ব্রাহ্মণরা জরাসন্ধের উপরে অখুশী। ব্যাসের তবু নিজের সন্তানদের ক্ষমতা রক্ষার প্রশ্ন আছে, সঙ্গে আছে চ্যবনশিষ্যদের সঙ্গে এই জরাগোষ্ঠীর সন্ধিকে ভাঙার কাজ; বাকীদের তা না থাকা সত্ত্বেও তারা জানেন এই গোষ্ঠী ক্রমশঃ চার্বাক থেকে সাংখ্যবাদী উভয়ের মধ্যেই বন্ধু শিবির তৈরী করছে। জরাসন্ধ যদি সমগ্র ভূখন্ডের সম্রাট সত্যি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ব্রাহ্মণ এবং ব্রহ্মবাদের অবস্থা বেদ-উপনিষদ সমূহ সমেত বেশ খারাপই হবে। তাই তাঁদের ধনসম্পদ থেকে যজন-যাজন নিরাপদ রাখতে এঁরা সচেষ্ট এখন।  জরাসন্ধ উপরে উপরে ব্রাহ্মণদের আপ্যায়ণ করলেও সে শৈব।  বারাণসী তার মাতৃকূল।  মাতৃকূলের প্রভাব আছে তার উপরে।  তার শপথ হল শত রাজাকে বন্দী করার পরে তাদের শিবের কাছে বলি দেওয়া।  সুতরাং বৈষ্ণব ও ব্রাহ্মণদের সে সাধারণ শত্রু।

    - হস্তিনাপুরকে এখন তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হতে হবে।  সামনের পথের সঙ্গে সঙ্গে দূরের দিকেও তাকিয়ে পা ফেলাই কূটনীতিতে বাঞ্ছনীয়।  এ কথা আপনি নিশ্চয় জানেন,  আমার বলা বাহুল্যমাত্র,  তবু পরিস্থিতি আমাকে সে কথা আবার মনে করিয়ে দিতে বাধ্য করছে।

    বেদব্যাস বললেন।  গাঙ্গেয় অবশ্যই জানেন এ কথা।  তাই ভাবছেন তাঁর কর্তব্য।  তিনি জানেন হস্তিনাপুরের কোনো নির্দিষ্ট রাজধর্ম নেই।  কৌরবদের মধ্যে কেউই ধর্ম নিয়ে খুব মাথা ঘামাবার সময় পায়নি।  কিন্তু গাঙ্গেয় এও জানেন একটি বৃহৎ সমাজ ধর্ম ছাড়া চলতে পারে না।  তাঁর মাতৃকূলে এককালে নানা দেবতার পূজা প্রচলিত ছিল।  এমনকি শিবের পূজাও ছিল।  কিন্তু তিনি পরশুরামের কথা জানেন।  অম্বার জন্য পরশুরামের সঙ্গে যুদ্ধেও তাঁকে লিপ্ত হতে হয়েছে।  তাঁকে পরাস্ত করেছেন যুদ্ধে।  পরশুরাম নিজে শৈব ছিলেন।  কিন্তু তাঁর অনুগামীরা ধীরে ধীরে বৈষ্ণব হয়েছেন।  শৈব ও ব্রাহ্মণ্য বিরোধে সমাজ যখন পর্যুদস্ত তখন ক্ষত্রিয়নাশক পরশুরামের অনুগামীরা বৈষ্ণব হচ্ছেন কেন এ ভাবার বিষয়!  ব্রাহ্মণদের দ্বারা বেদের অপব্যবহার,  বেদপাঠের উপরে নিষেধাজ্ঞা- যাকে সাধারণ সমাজ ব্যাখ্যা করে বেদকে কুক্ষিগত রেখে ব্রাহ্মণদের সম্পদ বাড়ানোর ব্যবস্থা হিসেবে- সেই কারণেই ক্রমশ বৈষ্ণবদের প্রতিপত্তি বেড়েছে।  সহজ ধর্মাচরণে আকৃষ্ট হয়েছে লোকসমাজ।  শৈবদের তন্ত্রাচার,  নানাবিধ কঠিন যোগাচার এই ধর্মকে সাধারণ সমাজে আদৃত করতে পারেনি।  তারই সঙ্গে আছে এও ভূখন্ডের পূর্ব আর পশ্চিমের বিরোধ।  জরাসন্ধাদি রাজা পূর্ব অঞ্চলের রাজা।  অন্যদিকে পশ্চিমে এই মুহুর্তে কৌরন ছাড়া বড় শক্তি তেমন কেউ নেই।  ব্রাহ্মণ্যবাদ পশ্চিমকে আশ্রয় করেই টিকে আছে।  এই অবস্থায় বৈষ্ণবরাও পূর্বে স্থান করে নিতে পারছে না।  পূর্বের এবং পশ্চিমের বৈষ্ণবদের মধ্যেও বিরোধের বীজ বোনা আছে।  'বাসুদেব' উপাধি কে পাবে তা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছে এর মধ্যেই।  'বাসুদেব' এককালে ছিল বৈষ্ণবদের প্রধান দেব।  এখন বাসুদেব অবতারাংশ।  সেই 'বাসুদেব' হবার স্বপ্নে পূর্বের যে বৈষ্ণবরা মশগুল তাদেরও আবার চাই জরাসন্ধের সমর্থন।  অতি জটিল পরিস্থিতি।  এই পরিস্থিতিতে সমস্ত কিছু নির্ধারিত হবে শক্তি দিয়েই।  যে দিকে চলেছে ব্যবস্থা তাতে রাজনৈতিক যুদ্ধে যারা জিতবে তাদের প্রাধান্যই প্রতিষ্ঠিত হবে সমস্ত ভূখন্ডে।  ধর্ম এখানে আসবে পরে।  রাজনৈতিক প্রাধান্যের এই লড়াইতে ধর্ম শুধু পণ মাত্র।  আর এ লড়াই থেকে হস্তিনাপুরেরও পরিত্রাণ আছে ভাবার কোনো মানে হয় না।  যাদবরা,  যারা চিরকাল বেদের পরিসরের বাইরেই থেকেছে তাদের মধ্যেই এখন শৈব ও বৈষ্ণব বিরোধ আছে।  কংস,  মথুরাতে,  শৈব যাদবদের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র জরাসন্ধের জোরেই শাসন চালাচ্ছে এ কথা ভাবা বাতুলতা।  এখন শৈব যারা তারা জরাসন্ধের ও কংসের অনুগ্রহ পেতে শৈব না কি ইচ্ছেতেই শৈব সে তো সময় বলবে!  আপাতত এ হল কুশলী পাশার চাল।  কাজেই হস্তিনাপুরের ক্ষমতার দাবীদারের সংখ্যা বাড়লে এই জাতীয় বিভেদও বাড়বে।  সুতরাং এখন সতর্ক পা ফেলার সময়। 

     

    যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে যোদ্ধার পক্ষ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা।  সে সময় এখনো আসেনি।  তবে দুপক্ষকেই সময় দিতে হবে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য।  জরাসন্ধের অভ্যুত্থানকে আটকাতে হলে নিঃশংসয় শাসন ধৃতরাষ্ট্রের হলে কতটা হবে কাজ তা নিয়ে তিনি নিঃশংসয় হতে পারছেন না।  পারলেও কুন্তীর দাবীকে তিনি অস্বীকার করতে পারবেন না।  বংশপরম্পরা শুধুমাত্র বীর্য্য দিয়ে এই রাজ্যে এতদিন যখন নির্ধারিত হয়নি তখন আজকেই বা সে ধুয়ো তোলা যায় কি ভাবে?  পাণ্ডবপুত্র হিসেবে এই হস্তিনাপুরে কুন্তীর সঙ্গে আগত বালকদের স্বীকৃতি সত্যি এখন সব চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তারপরে সময় বলবে কোনদিকে চলবে ঘটনাপ্রবাহ।  কে জয়ী হবে, কে পরাজিত এর মীমাংসা নির্ভর করবে আগামী এক দীর্ঘ্যস্থায়ী যুদ্ধের উপরে।  তিনি,  দেবব্রত ভীষ্ম,  এই বংশের প্রতিপালক।  তাঁর একমাত্র আনুগত্য হস্তিনাপুরের রাজসিংহাসনের প্রতি।  যে যোগ্য সেই ওখানে আসীন হোক এ তাঁর একান্ত কাম্য।  বহু বছর হস্তিনাপুর প্রকৃত শাসকের অভাবে ভুগছে।  এভাবে অনন্তকাল তিনি তাকে রক্ষা করতে পারবেন না।  রাজ শাসনের কাজ রাজার নিজের করাই বিধেয়।  নতুবা সে কাজ একসময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।  আজ তাঁকে ধৃতরাষ্ট্র ও অন্যান্য কৌরবরা মেনে চলছেন,  কিন্তু চিরকাল মানবেন কি?  ধৃতরাষ্ট্রের মতন তিনিও হস্তিনাপুরের প্রকৃত শাসকের অছি মাত্র।  এখনই তো ধৃতরাষ্ট্র তাঁর পিঠ-পিছে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে পিছ পা নয়।  কাল সে জাল বোনায় শুধু থামবে তার কি মানে আছে?  আপাতত কৌরবদের ঘরের মধ্যে তার প্রভাবকে উৎপাটন করাটা সবচেয়ে আগে করার কাজ।  জরাসন্ধের হাত যে বণিক তাকে দুর্বল করতেই হবে।  তারপরে হস্তিনাপুরের নিজস্ব বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়েই সমাধান করতে হবে তার সমস্যার।  কোনো বহিরাগতের প্রভাবে সমাধান তাঁর অন্তত কাঙ্খিত নয়।

    -সুধন্যকে আমি নিজে জানাবো যে তার নিজস্ব মুদ্রার আবেদন গৃহীত হতে পারে একটি মাত্র শর্তে।

    ব্যাসও ভাবছিলেন কিছু। সেই ভাবনার জাল কাটলো গাঙ্গেয়র কথায়। তিনি তাকালেন গাঙ্গেয়র দিকে।

    -মহামতি ব্যাস,  আমি রাজনীতিতে আপনার ছাত্রসম। কিন্তু আপনার মতন জ্ঞানীদের থেকে শিক্ষালাভের সুবাদে আমিও কিছু কার্য সাধন করতে সক্ষম। আমি জানি সুধন্যর এই মুহূর্তে চাই নিজের মুদ্রা। এমন এক মুদ্রা যার মান নিয়ে হস্তিনাপুর বা মগধের মধ্যে কোনো বিবাদ থাকবেনা। বর্তমানে এই ভূখন্ডের এই দুটি শক্তিশালী কেন্দ্র যদি একটি মুদ্রার নির্দিষ্ট মান মেনে নেয় তাহলে তার অন্যথা কেউই করতে সাহস করবেনা। তার মিত্ররাজ জরাসন্ধের মত আমরাও তাকে আপাতত কিছু কার্ষপণের সুবিধা দেব। হস্তিনাপুরের মুদ্রার থেকেও তার মুদ্রার মূল্যমান বেশীই থাকবে। এর ফলে বাণিজ্যের যে সুবিধা সে পাবে তা হারাতে চাইবে এত অবোধও সে নয়। পাণ্ডুপুত্রদের স্বীকৃতিতে তার এরপরে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

    -যদি সে আপনার প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই ধৃতরাষ্ট্রের থেকে এর বেশি সুবিধা চায়? সে ব্যবসায়ী গাঙ্গেয়!

    -আমার গূঢ়পুরুষরা খবর এনেছে সম্প্রতি সে একটি দাসীকন্যাকে বলাৎকার করেছে এবং সেই কন্যার গর্ভে তার সন্তান রয়েছে এখন। সেই কন্যাকে এবং তার মাতাকে অর্থের বিনিময়ে মুখ বন্ধ করিয়ে রেখেছে। তারা কোথায় আছে তাও আমার জানা মহামতি। ধৃতরাষ্ট্র রাজার সন্তান।  বৈশ্য দাসীকে বলাৎকার করলে যে প্রথম বর্গের দন্ড প্রাপ্য তা সে পায়নি,  তাছাড়া সে কন্যা অভিযোগও করেনি,  কিন্তু সুধন্যর মত একজন বণিকের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর অপরাধ।  সুধন্যকে অন্য কারণে দন্ড দিলে বা বহিস্কার করলে জরাসন্ধের ক্ষুব্ধ হবার কারণ থাকতো। কারণ থাকতো হস্তিনাপুরের বিরুদ্ধে তার প্রচারকে বাড়াবার। কিন্তু ধর্ষক নিন্দনীয় শুধু না, তার সঙ্গ করে যে সেও নিন্দনীয়, একথা সেও জানে। সেই কন্যাকে আমার লোকেরা নিয়ে আসবে আমার আশ্রয়ে, আমি সুধন্যর সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার আগেই।  ধর্ষণের ফলে সে কন্যার মৃত্যু ঘটলে সেই পাপাত্মাকে কে রক্ষা করবে?  এ কথা না বোঝার মতন লোক সুধন্য নয়।  এরপরে আশা করি সুধন্য এই সময়ে আমাদের পরিকল্পনার বিরোধ করার সাহস করবে না!

    -ভবিষ্যৎ-এ?

    -সে ভাবনা আমার মাথাতেও আছে দ্বিজোত্তম। দেখা যাক!

    -গাঙ্গেয়, আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই হস্তিনাপুরের বড় দুর্ভাগ্য যে সে আপনাকে তার শাসক হিসেবে পেলনা কখনো।

    দেবব্রত ভীষ্ম এমন কথার উত্তরে কখনোই প্রগলভ হবেন না। এটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য। তিনি নমস্কার করে উঠতে উদ্যত হলেন।

    -এখন অনুমতি করুন মুনেঃ, সকল ব্যবস্থায় উদ্যত হতে হবে কালক্ষেপ ছাড়াই।

    দীর্ঘ্য শরীরটি চলে গেল দ্বার অতিক্রম করে। হস্তিনাপুর সাম-দান-দন্ড-ভেদের অতিকুশলী এক শাসককে এই ভাবেই যেতে দিয়েছে। কি কৌতুক জীবনের! এই প্রথমবার ব্যাসের নিজেকে কিছুটা খর্ব লাগছে ওই দীর্ঘ্য দেহের তুলনায়।  তিনি যাই করুন, যতই করুন, হস্তিনাপুরের শাসকরা তাঁর রক্তপ্রবাহ বলেই পরিচিত।  তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থাকবেই।  কিন্তু দেবব্রত একমাত্র হস্তিনাপুরের কাছেই দায়বদ্ধ।  দীর্ঘ্যনিঃশ্বাস ফেললেন ব্যাস।  কৃষ্ণদ্বৈপায়ন অনেক কীর্তির অধীশ্বর হবেন হয়তো,  কিন্তু তিনি দেবব্রত ভীষ্ম হবেন না। এই সত্য! এই অমোঘ সত্য।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৮ জুলাই ২০১২ | ২২৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • S. Sarkar | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১২ ০৮:০৩90465
  • অদ্ভুত সুন্দর। প্রচুর শিখছি।মহাভারত কে এই আলোতে দেখানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। যদি রেফারেন্স গুলো জানান তাহলে আরও ভালো লাগবে।
  • jhumjhumi | ***:*** | ২১ জুলাই ২০১২ ০৬:২৪90467
  • মহাভারত আমার খুবই প্রিয়, কিন্তু এমনভাবে কখনো ভাবিনি। অসাধারণ লাগছে বললেও কম বলা হবে। একদম অন্য আঙ্গিকে নতুন ভাবে দেখছি। পরের পর্বের জন্য উন্মুখ হয়ে রইলাম।
  • শুদ্ধ | ***:*** | ২১ জুলাই ২০১২ ০৬:২৭90466
  • ধন্যবাদ আপনাকেও। :)
    রেফারেন্সের সংখ্যা আসলে অনেক। আপাতত শুধু গল্প হিসেবেই চলতে চাইছি। রেফারেন্স দিয়ে অযথা ভারী করতে চাইছি না। তবে মনে রাখবো আপনার কথাটা। শেষ হয়ে গেলে না হয় এক সঙ্গে দিয়ে দেব?
  • শুদ্ধ | ***:*** | ২৩ জুলাই ২০১২ ০৪:৫১90468
  • আপনাদের এই দেখার অভিজ্ঞতাটাই আমাকে লেখার প্ররোচনা দিচ্ছে। যদি এই দেখা কোথাও নিয়ে যেতে পারি তাহলেই কিছু হল বলে জানবো। ধন্যবাদ আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন