আজ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আমরা ঠিক করি যে আমরা এনআরসি, এনপিআর, সিএএ বিরোধী পোস্টার হাতে নিয়ে বিজেপির স্টলের উল্টোদিকে স্লোগান দেবো। আমরা বেশ কয়েকজন ব্যানার হাতে পৌঁছে যাই। বিজেপির স্টল থেকে কয়েকজন বেরিয়ে এসে গালাগালি করতে শুরু করে, লাথি মারতে শুরু করে আমাদের মহিলা সাথীদের। আমাদের আরও সাথীরা এসে জড়ো হয়। পুলিশ আমাদের ধাক্কা মারতে শুরু করে। সঙ্গে যোগ দেয় বিজেপির স্টল থেকে বেরিয়ে আসা লোকজন। আমাকে ধরে একটা স্টলের মধ্যে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারে পুলিশ। গলা টিপে ধরে মারা হয়। সঙ্গে পেটে লাথি, মুখে পরের পর ঘুঁষি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে ঊর্মিদি, সুদর্শনরা আহত হয়। সেই অবস্থায় আমাকে মারতে মারতে স্টল থেকে বের করে আনা হয়। মেরে চশমা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কয়েক মুহূর্তের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই রাস্তায়। সেই অবস্থায় আমাকে এবং আরও কয়েকজনকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর পুলিশের স্টলে। লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বলা হয়," চেয়ারে বসবি না, মাটিতে বস।" মাথা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে তখন; এক টুকরো বরফ মেলেনি। কৃপা করে দুটো জলের পাউচ দেন। ফোন কেড়ে নিয়েছে ততক্ষণে; ফলে কাউকে কল করার সুযোগ নেই ততক্ষণে ওখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন আমাদের সাথীরা। আমাদের চুপিচুপি ওখান থেকে বের করে বিধাননগর নর্থ থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে আটক করে রাখা হয়। পরে আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। ওখানে শুনলাম আমাদের এক মহিলারা সাথী শ্লীলতাহানির স্বীকার হয়ে রিপোর্ট লেখাতে আসেন। সেখানে তাঁকে তুমুল হেনস্থা করা হয় এবং যারা প্রতিবাদ করে; তাদের মারতে মারতে গ্রেপ্তার করা হয়। গিল্ডের সামনে থেকেও বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। আগেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে আমার। কিন্তু এহেন ব্যবহার কখনও পাইনি। এক কাপ চা অবধি দেওয়া হয়নি। বারবার করে বলা হয় যে অনেকের ক্ষিদে পেয়েছে; পুলিশ পাত্তা দেয়নি। সাড়ে দশটা নাগাদ আস্তে আস্তে আমাদের ছাড়া শুরু হয়। বহু মানুষ গুরুতরভাবে আহত। আমি বাঁ কানে একটু কম শুনছি, বাঁ চোয়ালে ভয়ানক ব্যাথা। সঙ্গে বুকে, পেটে লাথি মারার কারণে ব্যাথা তো আছেই।
রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন যে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর বিরোধী কোনও আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতন হবে না। আজকের ঘটনা ঠিক তার উল্টো প্রমাণ রেখে গেলো। সর্বোপরি; বিজেপির স্টল থেকে বেরিয়ে এসে হামলা করা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যতো গ্রেপ্তারি হয়েছে আমাদের দিকে। যারা এনআরসি, সিএএ, এনপিআর বিরোধী জনমত তৈরি করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে; তাদের ওপর এহেন পুলিশি অত্যাচার নামিযে এনে আপনার কোন লাভ হলো মাননীয়া? জানা নেই। আপনি এই পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা; তাও জানা নেই। শুধু একটা বিষয়ই অপরিবর্তিত থাকবে। সেটা আন্দোলন, প্রতিবাদ। যতক্ষণ আমরা বেঁচে আছি; আমাদের সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বিরোধী আন্দোলন চলবে; ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন চলবে। পুলিশ, গুন্ডা; কোনওকিছু লেলিয়ে দিয়েই কোনও লাভ হবে না। আজকের এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বইমেলায় জমায়েত; দুপুর তিনটেয়। আমরা আবার রাস্তায় নামবো; আবার প্রতিবাদ করবো; দরকারে প্রতিরোধ করবো। আমরা ভয় পাচ্ছি না।