গরমের ছুটি শেষ হয়ে যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেই আগস্টে ওরা আসবে ঠিক হলো। আগস্টের প্রথম শনিবার। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে জয়মালিকার ফোন, মাষ্টারমশাই – সোমেশ্বররা খুশিঝোরায় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে ওদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যেদিন, সেদিন থেকেই জয়মালিকার ওরা মাষ্টারমশাই আর বৌদি; সম্ভৃতার নাম উচ্চারণ করা বড়ই কঠিন, তাই আর সবায়ের কাছে সোমদা আর সোমদি – আমাদের ছেলেমেয়েদের নাটক আছে শুক্কুরবার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের হলে, বিকেল পাঁচটায়, চলে আসুন।
যাবো তো নিশ্চয়ই, কী নাটক?
ডাকঘর, রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর।
পরের দিন আমাদের যাওয়ার প্রোগ্রামটা ঠিক আছে তো?
হ্যাঁ, সেটা বদলাবে কেন, শনিবার সকালে তো।
আর আপনি?
হ্যাঁ, আমিও ফিরবো। আপনারা আসছেন, আমি না থাকলে চলবে কী করে? আপনারা গাড়ি নিয়ে আসছেন তো, আপনাদের সাথেই আসবো।
সাড়ে চারটের সময় ওরা পৌঁছিয়ে যায় অ্যাকাডেমিতে। বড়ো ব্যানার টাঙানো বাইরে, খুশিঝোরা উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর। তারপর ইংরিজিতে লেখা, স্পনসর্ড বাই, আর তার নীচেই এক বহুজাতিকের নাম, সাবান-টূথপেস্ট-সৌন্দর্য উপাদান, যা-ই ভাবুন, তার পয়লা নম্বর উৎপাদক ! টিকিট কাউন্টারে ভালোই ভীড়, লাইনে দাঁড়িয়ে দুখানা টিকিট সংগ্রহ করে সোমেশ্বর। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে কালো একটা মার্সিডিজ ঢুকে আসে অ্যাকাডেমির ভিতরে, এক ভদ্রলোক আর জয়মালিকা। ভদ্রলোক, বোঝা যায়, স্পনসর কোম্পানির কেষ্টবিষ্টু কেউ হবেন। জয়মালিকার পরনে সাদা শাড়ি, মেটে পাড়। চোখাচোখি হতে টিকিট দুটো তুলে ধরে হাত নাড়ে সোমেশ্বর।
এ নাটক যে ভালো হবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহই ছিলো না ওদের। ছেলেমেয়েদের রবীন্দ্রসঙ্গীত ওরা শুনেছে আগেই। বিকাশ বসুর মতো প্রতিভাবান পরিচালক নিয়মিত মাসে দুবার কোরে খুশিঝোরায় গিয়ে ওদের তৈরি করছিলেন। কিন্তু এতো ভালো ! সম্পূর্ণ অসম্পাদিত ডাকঘর পুরুলিয়ার মিশ্র উচ্চারণে ! হাততালিতে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহ ! অভিনয় শেষে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় করিয়ে দিতে ওঠেন বিকাশ। বলেন, যে বালকবালিকারা আজকের নাটকে অংশগ্রহণ করলো, তাদের উচ্চারণ আর কথ্যভঙ্গীর সংস্কার না-করাটা একটা সচেতন সিদ্ধান্ত ছিলো। ডাকঘরের বক্তব্য যে তাতে পরিস্ফুটিত হয়ে অন্য মাত্রা পেলো এ খুশিঝোরা আশ্রমের বাধাহীন স্বচ্ছন্দ জীবনযাত্রারই ফসল।
আশ্রম শব্দটির খুশিঝোরার সাথে যুক্ত উচ্চারণ এর আগে শোনেনি সোমেশ্বর।
বহুজাতিক যে সংস্থা এই অনুষ্ঠানের স্পনসর, নাটকের শেষে তাঁরা জয়মালিকা সেনকে সম্বর্ধনা দিলেন। বেশি কথা বলতে পারলেন না জয়মালিকা, তাঁর অনর্গল অশ্রুপাতই বোধ হয় কণ্ঠরোধ করে আনে তাঁর। শেষ বাক্যটি মনে রাখে সোমেশ্বর, আমার বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে হেমব্রমরাই ! আবার হাততালিতে ফেটে পড়ে অ্যাকাডেমীর
প্রেক্ষাগৃহ !
হেমব্রমরা বাঁচাবে বাংলা ভাষাকে ! খুশিঝোরায় যতবার গেছে ওরা প্রায় প্রতি সন্ধ্যাতেই শুনেছে ছেলেমেয়েদের গান বাজনা আবৃত্তি। রবীন্দ্রনাথের গান, সুকুমার রায়ের ছড়া, এমনকী সলিল চৌধুরির সুরে শুনেছে জনপ্রিয় আধুনিক বাংলা গানও কয়েকটা। শুনেছে আর অবাক হয়েছে। ঝাড়খণ্ডী উচ্চারণভঙ্গীতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গানে, সুকুমার রায়ের ছড়ায় ! অসাধারণ ! কিন্তু ওদের নিজেদের গান? সাঁওতালি সঙ্গীত শুধু একটাই ! প্রথম বার যেটা শুনেছিলো। প্রতুল বাবুর কাছে শুনেছে ঐ একটি মাত্র সাঁওতালি গান শেখানোর সময় পেয়েছিলো জলধর প্রথম দিকের ছাত্রছাত্রীদের। তারপর বড়োদের কাছ থেকে ছোটরা। সেই ছোটরা যখন বড়ো হলো তখন তাদের ছোটরা। এই ভাবেই ছেলেমেয়েরা গানটি শিখছে আর গাইছে বছরের পর বছর। নতুন করে সাঁওতালি গান শেখাবার কেউ আর নেই খুশিঝোরায়। কাজেই এখানকার হেমব্রমরা এখন আর তাদের নিজেদের ভাষা শেখে না, জানেই না কী সঙ্গীতসম্পদে তাদের উত্তরাধিকার ! একুশে ফেব্রুয়ারীর উত্তরাধিকার যে বাংলাভাষীর, সারা পৃথিবীর মানুষকে মাতৃভাষা দিবস উপহার দিয়েছে বাংলা-বলা যে মানুষ, সে-ই হেমব্রমের বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর উদ্ধত ঘোষণা শুনে ফেটে পড়ে আনন্দে ! শোষণ আর সাম্রাজ্যবাদের কতো যে রূপ ! সে সাম্রাজ্যবাদ ভূগোলেরই হোক অথবা অর্থনীতির বা ভাষার ! আর কী তার মাদকতা !
কিন্তু সোমেশ্বর কথা বলবে না। খুশিঝোরায় পাকাপাকিভাবে থাকবার সিদ্ধান্ত যখন সে জানালো জয়মালিকাকে, তখন সে তার অবস্থান স্পষ্ট করেই বলেছে। তার এবং সম্ভৃতার একটিই উদ্দেশ্য। ওরা পড়াবে। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। ওদের নিজেদের সাধ্য ছিলো না খুশিঝোরার মতো একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার। জঙ্গলমহলের এই সর্বস্বান্ত মানুষদের সন্তানদের একটা স্কুল উপহার দেওয়ার সাধ্য ছিলো না ওদের। জয়মালিকার কাছে ওরা কৃতজ্ঞ ওদের এই সুযোগ দেওয়ার জন্যে। কিন্তু এর বাইরে আর কিছু নয়।
পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। সকালে বেরোতে দেরি হয়ে গেছিলো একটু। ঝাড়গ্রামের পর থেকে জঙ্গলমহলের রাস্তা তো একেবারেই বেহাল। এতক্ষণ গাড়ি চালিয়ে খানিকটা ক্লান্তই সোমেশ্বর। পুরোনো গেস্ট হাউজের দু নম্বর ঘরে ওদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ে ওরা।
ভোরে ঘুম ভাঙে সোমেশ্বরের। বারান্দায় বেরিয়ে সামনেই যে গাছটা সেটার দিকে অবাক হয়ে তাকায় সে। ডাল থেকে ঝুলন্ত লাঠির মতো এ গাছ বাঁদর-লাঠি না? কোথায় যেন পড়েছিলো এই গাছই মেঘদূতের কুরুবক, ঝাড়খণ্ডের মানুষ যাকে সোনালী গাছ নামেও ডাকে। এ গাছের পাতা মুড়িয়ে বাঁশি বাজালে নাকি অনাবৃষ্টি হয়। বারান্দা থেকে নেমে শুরকির রাস্তাটা ধরে হাঁটতে শুরু করে সোমেশ্বর। রকমারি রঙের নানা ফুলের গাছ রাস্তার দুধারে। গেট পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে দেখে গেটটা বন্ধ, বাইরে বেরোবার উপায় নেই। অগত্যা ফিরতেই হয়, আবার উল্টো দিকে। ফেরার সময় দেখা হয় জয়মালিকার সাথে, মাটি থেকে ছোট ছোট রঙীন কিছু কুড়িয়ে হাতের প্লাস্টিকের একটা ছোট ব্যাগে ভরছে জয়মালিকা, ব্যাগটা নানা রঙে ভর্তি হয়ে এসেছে প্রায়। ফুল কুড়োচ্ছেন নাকি? – জিজ্ঞেস করে সোমেশ্বর।
ফুলই বটে, হেসে বলে জয়মালিকা, এই দেখুন না। হাতে ধরে থাকা রঙীন জিনিসটা দেখায় সে সোমেশ্বরকে, ফয়েলের র্যাপার, চকোলেট মোড়া হয় যাতে। কাল একটা ফ্যামিলি এসেছে, বাচ্চা-টাচ্চা আছে বোধ হয় সঙ্গে।
হ্যাঁ, সারা পৃথিবীই ভদ্রলোকদের ওয়েস্ট-বিন, বলে সোমেশ্বর, আর তারপর জয়মালিকার সাথে লেগে যায় সে-ও।
ভাবছি ছেলেমেয়েদের বইপত্তরগুলো দেখবো আজ, কিছুক্ষণ পর বলে সোমেশ্বর, ওরা ছুটির দিনে বাড়ি যায় না তো?
না নাঃ, বাড়ি-টাড়ি যায় না, আপনি তৈরি হয়ে আসুন না।
সকাল নটা নাগাদ জলখাবার। চানটান করে তৈরি হয়ে ডাইনিং হলের দিকে যেতে গিয়ে জয়মালিকাকে দেখতে পায় সোমেশ্বর আর সম্ভৃতা, নিজের ঘরের বাইরের বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে সে। গূড মর্ণিং, বলে সম্ভৃতা এগিয়ে যায়, তার পেছনেই সোমেশ্বর। জয়মালিকার ঘরের পাশের ঘরটায় একটা জানলা আছে, যেটা খোলে বারান্দাটায়। সেই জানলার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্কুলের বড়ো ছেলেমেয়েরা, হোস্টেলে যারা থাকে, সবাই। ছেলেমেয়েরা ওদের চেনে, আগে কয়েকবার আসায় দেখা হয়েছে ওদের সাথে। দেখা হতেই বলে, গূড মর্ণিং স্যর, গূড মর্ণিং ম্যাডাম। কী ব্যাপার, লাইন কিসের? – জিজ্ঞেস করে সোমেশ্বর।
কাজ নিব, বলে ওদের মধ্যে একজন।
কাজ নিব মানে?
হাত তুলে থামিয়ে দেয় জয়মালিকা ছেলেমেয়েদের। বোঝা যায় জবাবটা ও-ই দেবে। তারপর বলে সোমেশ্বরকে, উৎপলের বোধ হয় কাজ আছে কিছু, তাই ছেলেমেয়েদের ডেকেছে ও। আপনারা ডাইনিং হলে যান, খেয়ে টেয়ে নিন, আমি ওদের পাঠিয়ে দিচ্ছি।
বিনা বাক্যব্যয়ে ডাইনিং হলের দিকে এগিয়ে যায় সোমেশ্বররা, যাওয়ার পথে দেখা হয় সুনীলের সাথে, সে বলে হেসে, আপনারা বসুন, রুটি রেডি।
ওরা খেতে খেতেই আসে জয়মালিকা। মাষ্টারমশাই, আজ আর ছেলেমেয়েরা আসতে পারবে বলে মনে হয় না। উৎপল একটু ঝাড়াঝুড়ি-গোছগাছের কাজ করছে। একা পেরে উঠবে না, ছেলেমেয়েদের হেল্প দরকার হবে ওর। আপনারা চলুন, আমার সাথে বেরোবেন। আমি কী কী কাজ করি দেখবেন একটু। যতই আপত্তি করুন স্কুলের বাইরেও কিছু কিছু কাজ করাবো আপনাকে দিয়ে। ভাববেন না, হেসে বলে জয়মালিকা, আপনার আদর্শের বিরোধী কোন কাজ নয় !
স্কুলের বাসটা বাইরে বের করাই ছিলো, ওরা তিনজন উঠে বসে বাসে। বাস পৌঁছোয় বান্দোয়ান শহরে, সেখানে বিল্ডিং মেটিরিয়ালের দোকান থেকে কেনা হয় লোহার রড, সিমেন্ট, আরও কতো কিছু। মুদিখানার দোকান থেকে চাল-ডালের বস্তা আর তেল মশলা ওঠে গাড়িতে, বাজারে গিয়ে কেনা হয় আলু পটোল করলা ঢ্যাঁড়স। মাছের বাজারে গিয়ে তুমুল হৈ হৈ কোরে দরাদরি কোরে মাছ কেনে জয়মালিকা। দোকানী চেনে তাকে, বলে, আর কমাবেন না দিদি মরে যাবো ! জয়মালিকা হেসে বলে তুমি মরো তাতে কার কী ক্ষতি, আমার এতগুলো ছেলেমেয়ে তো বাঁচবে ! এ জয়মালিকার অন্য রূপ ! বাংলা ভাষা কে বাঁচাবে তাতে এ জয়মালিকার কিছু আসে যায় না !
ফেরবার সময় জয়মালিকা বলে, পুজোর সময় হয়তো য়্যোরোপ যেতে পারি, তখন আপনিই এখানকার হেড অব দ্য ফামিলি। বাজার-টাজার চিনিয়ে দিলাম, কী ভাবে দরদস্তুর কোরে জিনিসের দাম কমাই তা-ও দেখলেন। দোকানীরাও সব চিনে নিলো আপনাকে। সোমেশ্বর এ ব্যাপারে কিছু বলে না, খোঁজ নেয় এতো বিল্ডিং মেটিরিয়াল কেন।
কেন, আপনি খেয়াল করেননি! – অবাক জয়মালিকা, আমাদের নতুন গেস্ট হাউজে আরও একটা তলা বাড়ানো
হচ্ছে ! তাছাড়া আমরা যেদিকে থাকি সেখানেও দোতলা হবে। অ্যাকোমোডেশন না বাড়ালে গেস্টদের জায়গা দিতে পারিনা। গেস্টরাই তো আমাদের লক্ষ্মী। টাকাপয়সা ছাড়া চলবে কী করে? একটা লাইব্রেরি তৈরি করতে চাই, হাসপাতাল একটা, কোথা থেকে করবো এসব?
সম্ভৃতা বলে, এতো দোতলা-তিনতলা উঠলে খুশিঝোরার সৌন্দর্য নষ্ট হবে, আপনাদের তো জায়গার অভাব নেই !
জায়গার অভাব আছে বৌদি, বলে জয়মালিকা, জায়গার অভাব সব সময়ই থাকে। যেখানে একটা বাড়ি হবে সেখানকার মাটিটা তো রইলো না আর। আমি ধরণীর পুজো করি, যতটা পারি খোলা জায়গা রাখতে চাই। একটা বাড়ি যদি খাড়া দাঁড়িয়ে উঁচু হয়ে জায়গাটাকে দেখতে খারাপ করে দেয়, বাড়িটার পাশেই একটা লম্বা গাছ লাগিয়ে দেবো, দেখবেন দুয়ে মিলে চেহারা কেমন পালটে যায়।
ফেরবার পথে নানান কথায় খুশিঝোরার প্রথম দিকের কথা ওঠে। সোমেশ্বর বলে, এখানে আপনার প্রথম এগজিবিশনের কথা শুনেছি অনেকের কাছে, একটা এগজিবিশনই নাকি খুশিঝোরাকে বিখ্যাত করে দিয়েছিলো।
শুধু যে বিখ্যাত কোরে দিয়েছিলো তা-ই নয়, বলে জয়মালিকা, খুশিঝোরা যে সত্যি সত্যিই আজকের খুশিঝোরার মতো একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে, সে বোধ তৈরি কোরে দিয়েছিলো আমাদের, অন্তত আমার, মধ্যে। না হলে চাকরিবাকরি ছেড়ে শুধু খুশিঝোরাকে নিয়েই খুশি থাকবো, এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম কেমন কোরে !
ফেরার পর নিজের ঘরে ডাকে ওদের জয়মালিকা, বলে, আসুন, অনেক পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলেন, আপনাদের কিছু ছবি দেখাই।
পাহাড়ি খাড়িয়া: অ্যান আর্টিস্টস ইমপ্রেশন লেখা একটা ব্যানার, সেটাকে মালার মতো ঘিরে আছে রঙবেরঙের অনেকগুলো বেলুন, আর দুপাশে উড়ছে ঝাণ্ডা। অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে দেখার পর ওরা বুঝতে পারে এটাই খুশিঝোরার মেন গেট, যার একেবারে ওপরে এখন স্টীলের অক্ষর বসিয়ে খুশিঝোরা লেখা। ফটোটা তোলা হয়েছে বাইরে থেকে। খুশিঝোরার ভেতরের বাগানের ছবি, তার পাশে সাদা চাদরে ঢাকা একটা টেবিলে নানারকমের খাবার; লোকজন খাবার নিচ্ছে, কেউ কেউ খাচ্ছেও। লম্বা হলঘরে সারি সারি ছবি সাজানো, দর্শকদের ভীড়। মঞ্চের মতো একটা জায়গায় প্রদীপ জ্বালছেন একজন বিখ্যাত লোক, এঁকে চিনতে পারে সোমেশ্বর, বিখ্যাত শিল্পী শুভেন্দু মৈত্র। পেছনে পর্দার ওপর নানারকমের ফুল গেঁথে লেখা পাহাড়ি খাড়িয়া: অ্যান আর্টিস্টস ইমপ্রেশন। আরও অনেক ছবি। জয়মালিকা নিজে অনেক ছবিতেই উপস্থিত, একাধিক যুবককে এবং যুবতীকেও দেখা যায় বহু ছবিতে, মাঝে মাঝে এক একটা নাম বলে জয়মালিকা: সুকান্তদা, অনলাভদা, সুজয়, জুঁইদি, অরুণিমা ইত্যাদি। আদিবাসী চেহারার এক যুবক আর এক প্রৌঢ়কেও দেখা যায় অনেক ছবিতে। শেষ ফটোটিতে দশখানা হাতে আঁকা ছবি, বোঝা যায় শিশুদের আঁকা।
জয়ি হেসে বলে, এই খুশিঝোরার ইতিহাসের প্রথম চ্যাপ্টার। এই চ্যাপ্টারে আমার অনেক বন্ধুকে দেখলেন, যাদের এখন আর বিশেষ দেখা যায় না। নানা কারণে এরা সবাই আর সময় দিতে পারে না, তাই নিয়মিত যোগাযোগ থাকে না। কিন্তু মাঝে মধ্যে আসে প্রায় সবাই। একসাথে নয়, আলাদা আলাদা। বছর তিনেক আগেও সুকান্তদা আমাদের স্কুলের একটা বাচ্চার হার্ট অপারেশন করিয়ে দিয়েছেন। সুকান্তদা নিজে হার্ট সার্জেন, আমাদের স্টীল প্লান্টের হাসপাতালের সুপারিন্টেণ্ডেন্ট। এবং খুশিঝোরার প্রেসিডেন্টও। কাজেই ভাববেন না আমরা কারো সাথে ঝগড়াঝাটি করেছি। সবাই বন্ধু আছে, সবাই বন্ধু থাকবে। খুশিঝোরায় খুশি ছাড়া আর কিছু ঝরে না। খুশিঝোরায় আপনাদের স্বাগত।