আবাহন বললো, কফি হাউজে যাবি?
কফি হাউজে গিয়েও যদি আড্ডাটা তোর আর আমারই হয়, তাহলে গিয়ে কী লাভ?
তা হবে কেন, পেয়ে যাবি আরও দুচারজনকে। আমি মাঝে মাঝেই শনিবারে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই, কাউকে-না-কাউকে পেয়েই যাই।
শনিবারে কফি হাউজে যাওয়াটা কর্পোরেট ফ্রীডমের আওতায় পড়ে না, বুঝলি?
তার মানে? তোরা কী শনিবারেও সারা দিন কাজ করিস?
সারা দিন এবং যতক্ষণ না ক্যালেণ্ডারে তারিখটা বদলে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত, রাত্তিরে। পার্টিতে যাই, স্যাটারডে ককটেল।
পার্টিতে? প্রত্যেক শনিবার? ভালো লাগে তোর?
প্রত্যেক শনিবার কেন, একদিনও ভালো লাগে না, এক মুহূর্তও ভালো লাগে না, তবু যেতে হয়। চাকরি !
এটা তোর বাড়াবাড়ি। এক মুহূর্তের জন্যেও ভালো লাগে না কেন? মদ খেতে হয় বলে? মদের ব্যাপারে সংস্কারটা তুই আজও কাটিয়ে উঠতে পারলি না। এক-আধদিন খেলে হয়েছেটা কী?
কিছুই হয়নি। কিন্তু সেটা কথা নয়, কথা হচ্ছে চাকরির চাপে পড়ে খেতে বাধ্য হবো কেন? আমি চাকরি করি, আমার শ্রম এবং এক্সপার্টাইজ বিক্রী করি। তুমি এমপ্লয়ার, তোমার কী রাইট আছে আমি কী খাবো, কিসে এনটার্টেণ্ড হবো সেটা ঠিক করার?
তাহলে তুই কী করিস?
শুনবি? চাকরিতে জয়েন করলাম একটা সোমবার। প্রথম দিন রিপোর্ট করার পর আমার বস আমাকে একটা টাইপ করা কাগজ ধরিয়ে দিলো, ইনডাকশন প্রোগ্রাম। সোম থেকে শুক্কুরবার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যাওয়া, কথা বলা, তাদের কাজ বোঝা, এবং যেটা ইমপর্ট্যান্ট মনে হবে সেটাকে নোট করা। শনিবার রিভিউ, বসের সাথে বসে। তো, সে সব হয়ে গেলো, রিভিউ-টিভিউ শেষ হলে আমার বস বললো আমরা একসাথে লাঞ্চ করবো। সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়, অফিসের ঠিক উল্টোদিকে একটা রেস্টোর্যান্ট আছে, আমরা খেতে গেলাম সেখানে। খেতে খেতে বস বললো, সন্ধ্যে ছটায় গড়িয়াহাটের মোড় থেকে সে তুলে নেবে আমাকে। জিজ্ঞেস করলুম, কেন? বললো পার্টি আছে। প্রত্যেক শনিবার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের ফ্ল্যাটে ককটেল হয়, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কোন কারণে না থাকলে ডেপুটি ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের ফ্ল্যাটে। জিজ্ঞেস করলুম যাওয়াটা কী কম্পালসারী? বললো সর্ট অফ। কেউ যদি বিশেষ কারণে না যেতে পারে কখনো, তাহলে সে জানিয়ে দেয় ইন অ্যাডভান্স। তবে সেটা যতদূর সম্ভব কম হওয়াই ভালো। তার মানে কী সন্ধ্যেবেলা আবার টাই-ফাই পরতে হবে? হেসে ফেললো বস। বললো, না না, কোন ড্রেস কোড নেই, প্রায় সবাই
টী-শার্ট জীন্স্ পরে যায়। তোমার যা ইচ্ছে পরে যেতে পারো। আমি কী করলাম জানিস? ধুতি-পাঞ্জাবি পরে গেলাম, সেই থেকে প্রতিটি পার্টিতেই সে ভাবেই যাচ্ছি। প্রোটেস্টটা রেজিস্টার করেছে, আমাকে বিশেষ কেউ ঘাঁটায় না।
চিনেবাজারে মার্কেট সার্ভে করতে এসেছিলো সোমেশ্বর, দেড়টা নাগাদ কাজ শেষ হয়ে গেলে রাইটার্স বিল্ডিঙে আবাহনের অফিসে একটু আড্ডা দিতে এসেছিলো, এসে এত কথা।
আবাহন বললো, এত দিন পর দেখা হলো তোর সাথে, চল্ না সন্ধ্যেবেলার কফি হাউজটা এক্সপ্লোর করি একটু, কাউকে পেয়ে যাই ভালো, না হলে দেখা যাবে।
ঠিক আছে, চল্, কিন্তু তার আগে খাওয়া কিছু, লাঞ্চ হয়নি, খিদে পেয়ে গেছে।
তুই তো আবার লাঞ্চ-টাঞ্চ করিস আজকাল, আমাদের রাইটার্সের নিম্ন-মধ্যবিত্ত টিফিন রুচবে তোর মুখে?
ইয়ার্কি মারিস না, কী খাওয়াবি বল্।
সেক্রেটারিয়েট লাইব্রেরীর পাশে এক্স-ফ্রীডম ফাইটার এক বয়স্ক ভদ্রলোকের ক্যান্টিন আছে একটা, ভালো লিভার কারি পাওয়া যায়, খাবি?
লিভার কারি আর পাঁউরুটির টিফিন সেরে হাঁটতে হাঁটতে কফি হাউজ। ঢোকবার মুখে ইসমাইলের দোকান থেকে সিগারেট কিনছে যখন, দেখা হয়ে গেলো পবিত্রর সাথে, ও বেরিয়ে আসছিলো।
চলে যাচ্ছিস নাকি? – জিজ্ঞেস করলো সোমেশ্বর।
যাচ্ছিলাম, আর যাবো না, তোদের সাথে দেখা হয়েই গেলো যখন, চল্ ওপরে যাই।
ঢুকেই, ডান দিকে স্ক্রীনটার পাশে একটা টেবিল ফাঁকা পাওয়া গেলো। বসতে বসতে পবিত্রকে জিজ্ঞেস করে সোমেশ্বর, তুই কী একাই বসেছিলি নাকি এতক্ষণ, তোর সাথে আর যারা ছিলো তারা কোথায়?
আমার সাথে একজনই ছিলো, তার কাজ হয়ে গেছে, সে চলে গেছে।
ও, তাই? – বলে সোমেশ্বর, একটু বুঝি আগে, দাঁড়া, তুই এখন কোন্ গ্রূপ?
হেসে ফেলে আবাহন, তুই যেসব গ্রূপের কথা ভাবছিস, সে ধরণের কোন ফ্যাকশনেই নেই ও। তোর-আমার মতো
ও-ও এখন রিটায়ার্ড রেভল্যুশনারী !
রিটায়ার্ড রেভল্যুশনারী ! টায়ার্ডও বটে, বলে পবিত্র, আপাতত ধর্মতলায় একটা সিল্ক স্ক্রীন ইউনিট খুলেছি, যার সাথে কথা বলছিলাম এতক্ষণ, সে আমার পার্টনার হবে বলছে, কিছু টাকা ঢালবে, একটা ফুল-ফ্লেজেড প্রিন্টিং য়্যুনিট খোলার চেষ্টা করছি। তোর কী খবর?
চাকরি করছি তো।
চাকরি? পেলি?
হ্যাঁ, পেলুম তো শেষ পর্যন্ত।
গূড। দাঁড়া দাঁড়া কফি বল্, থাকিস কোথায়? এখনো হাওড়াতেই?
না, গড়িয়াহাটের কাছে, নন্দী স্ট্রীটে।
আস্তে আস্তে আরও কয়েকজন এসে যোগ দেয় ওদের টেবিলে; কেউ পরিচিত, অর্ধ-পরিচিত কেউ বা। আবাহন আর সোমেশ্বর ছাড়া ওদের মধ্যে কারো চাকরি নেই। বিপ্লব নিয়ে কথা হয় না, সবাই নিজের নিজের সমস্যার কথা বলে; চাকরি, কিছু একটা আয় করার ব্যবস্থা, এ সবই চেষ্টা করছে প্রায় সবাই। কে কোথায় আছে বেশির ভাগই জানে না সে সব; কেউ জেলে, কেউ আণ্ডারগ্রাউণ্ড, বিদেশে গেছে দুয়েকজন, অন্য শহরে আছে কেউ কেউ, সরকারি চাকরির কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতির কথাও শোনা গেলো কারো কারো গলায়।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবে সোমেশ্বর। সব হিসেবেরই কী গণ্ডগোল হয়ে গেলো? উনসত্তর সালে চারু মজুমদার নতুন পার্টির নাম ঘোষণা করলেন, সি-পি-আই (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। কিন্তু পার্টি তৈরি হবার আগেই তো পার্টি ভেঙে গেছে ! আগের পাঁচ বছর ধরে ইঁটের ওপর ইঁট গেঁথে গেঁথে যে মন্দির তৈরি করছিলেন চারু মজুমদার, সে মন্দিরে মাথা নীচু করে ঢুকতে চাইলো না যারা, যারা মার্কসবাদকে সর্বশক্তিমান বলে প্রণাম করতে রাজি হলো না, পিকিং রেডিও ঘোষিত রোজনামচার সাথে যারা নিজেদের রোজনামচাকে মেলাতে পারলো না, একেকটি 'খতম' থেকে আশ্চর্য অলৌকিক উপায়ে একেকটি মুক্তাঞ্চল গঠনের ম্যাজিকে যারা বিশ্বাস করতে পারলো না, কমরেড চারু মজুমদারের লাইনই একমাত্র সরলরেখা, এই মন্ত্রকে যাদের মনে হলো আজগুবি, তারা তো আগেই শ্রেণীশত্রু ঘোষিত হয়ে গেছে ! তারপর তো রাস্তাঘাটে-অলিতে গলিতে শুধুই মৃত্যুর মিছিল ! মৃতদের বয়েস পনের থেকে পঁয়ষট্টি ! আর তাদের কে বিপ্লবী, কে প্রতিবিপ্লবী, কে প্রতিক্রিয়ার মুখ, কে শোধনবাদী আর কে-ই বা পুলিশের চর কে জানে ! আর এখান থেকে স্বয়ং চারু মজুমদারের গ্রেপ্তার আর মৃত্যু তো মাত্র দু-আড়াই বছরের দূরত্ব ! বিপ্লবের সৈনিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো এরই মধ্যে ! এখন শুধুই ব্যক্তিগত বেঁচে থাকার লড়াই !
রোববার সকাল থেকেই সোমেশ্বরের আস্তানায় জনসমাগম। কফি হাউজের সে আড্ডা থেকে খবর পেয়ে গেছে অনেকেই, সোমেশ্বর এখন ভালো চাকরি করে, বিয়ে করেছে, নন্দী স্ট্রীটে সংসার পেতেছে।
হ্যাঁ, বিয়ে করেছে সোমেশ্বর। পরীক্ষা-টরীক্ষা পাশের পর নিজের খরচ চালাবার জন্যে ট্যুইশন শুরু করেছিলো সে, অন্তত নিজের চা-সিগারেট-গাড়ি ভাড়ার খরচটাও তো তোলা দরকার। নিজের চেয়ে বয়েসে বেশ খানিকটা ছোট একটা মেয়েকে পড়াতে পড়াতে সে তার প্রেমে পড়ে গেল। ক্ষয়িষ্ণু বনেদী বাড়ির কম-বয়েসে-বিধবা-হওয়া মায়ের প্রথম সন্তান সম্ভৃতা। লেখাপড়ায় ভালো, মায়ের আশা পাশ-টাশ করে চাকরি-বাকরি পেয়ে সে দাঁড়াবে মায়ের পাশে। সব গোলমাল হয়ে গেলো, তার মা সোমেশ্বরকে তাঁদের বাড়িতে আসতে বারণ করলেন। মেয়ে অবাধ্য হলো, তাকে আটকিয়ে রাখা মুশকিল হলো মায়ের পক্ষে। সোমেশ্বরকে ডেকে তিনি বললেন যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মেয়েকে বিয়ে কোরে নিয়ে যেতে। না যদি পারে, কোন সম্পর্ক যেন সে না রাখে তাঁর মেয়ের সাথে। চাকরির চেষ্টা করছিলোই সোমেশ্বর, পেয়েও গেলো একটা। অব্রাহ্মণ কন্যার সাথে বিয়ে ! যদুগোপাল ন্যায়রত্নের পুত্র তাঁর পিতার কাছে করা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলেন না এবারও। আলাদা সংসার পাততে হলো সম্পূর্ণ সংসারানভিজ্ঞ সোমেশ্বরকে তার প্রায়-কিশোরী বধূকে নিয়ে।
কিন্তু প্রাক্তন বিপ্লবীদের তো দাবি আছে। তাদের চাকরি নেই, সোমেশ্বরের আছে। অতএব নতুন কোরে আড্ডা বসে তার বাড়িতে। নিছক আড্ডাই, আর পুরোনো কথার চর্বিতচর্বন। আর তার সাথে অবশ্যই খাওয়াদাওয়া। কী করবে বেচারারা, যাবে কোথায় ! সম্ভৃতাকে বোঝায় সোমেশ্বর, আর নীরবে এদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে সম্ভৃতা তার অপটু হাতে। অপটু হাত, মাঝে মাঝে তার আপ্যায়নের ত্রুটির সমালোচনা হবে বৈকি !
সোমেশ্বর বদলি হয়ে গেলো এরপর। কম্পানী বদলিয়ে, শিলিগুড়ি-পাটনা-মুজঃফরপুর হয়ে, ওষুধ কম্পানীর বড়োসড়ো দায়িত্ব নিয়ে, আবার কলকাতায় আসতে আসতে প্রায় বছর দশেক। নন্দী স্ট্রীটের আড্ডার বন্ধুদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই আর, যে যার নিজের নিজের মতো ব্যবস্থা করে নিয়েছে; কে একজন বলছিলো পবিত্র নাকি চলে গেছে সুইডেন, ওখানে পি-এচ-ডি করে পড়াচ্ছে ওখানকার কোন য়্যুনিভার্সিটিতে।
বহুজাতিক যে কম্পানীতে কাজ করে সোমেশ্বর, তাদের হিসেবে সে ভালোই কাজ করে নিশ্চয়ই, এখন সে পুরো পূর্বভারতের ব্যবসার প্রধান দায়িত্বে, কম্পানী তাকে থাকতে দিয়েছে যেখানে সেটা ম্যাণ্ডেভিল গার্ডেনসের এক বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, কম্পানীই গাড়ি দিয়েছে তাকে। মৌবী, তার মেয়ে, মুজঃফরপুরের মিশনারি স্কুলে পড়তো, সে লেখাপড়া করে মন দিয়ে, তাকে লা মার্টিনিয়রে ভর্তি করতেও অসুবিধে হয়নি বিশেষ। এমন একটা কাণ্ড ঘটলো এমন সময়, যার ফলে সহকর্মীদের মধ্যে ওকে নিয়ে শুরু হয়ে গেলো বিশেষ গুঞ্জন।
যে বৃটিশ বহুজাতিকে কাজ করতো ও তার হাতবদল হলো, নতুন মালিক হলো বিখ্যাত এক জর্মন কেমিক্যাল কনগ্লোমারেট। তাদের ম্যানেজমেন্টের কর্তারা এলো বম্বেতে এখানকার ম্যানেজমেন্টের সাথে আলাপ-পরিচয় করতে, কলকাতা থেকে গেলো সোমেশ্বরও। তাজ হোটেলে প্রথম দিন মীটিং, নতুন একটা প্লান্ট হয়েছে পুনেতে, সেটা দেখে এলো সবাই মিলে দ্বিতীয় দিনে, তৃতীয় দিনে ফাইনাল রিভিয়্যু। লাঞ্চ ব্রেকের পর জর্মন দলের যিনি নেতা তিনি প্রথম কথা বললেন। এই জর্মন প্রতিষ্ঠান প্রথম ইণ্ডিয়াতে আসছে, ইণ্ডিয়াতে তাদের প্রতিষ্ঠা পেতে হবে। তারা এমন একটা কিছু করতে চায় যাতে তাদের কর্পোরেট পাবলিসিটি হবে একটা। সাধারণ ইণ্ডিয়ানরাও যাতে বোঝে যে প্রফিট ইজ নট দেয়ার ওনলি অবজেক্টিভ। উপস্থিত ম্যানেজারদের কাছ থেকে তিনি প্রস্তাব আহ্বান করছেন। এ ধরণের আহ্বানে যা সাধারণত হয়, তা-ই হলো প্রথমে। সবাই জানে প্রস্তাব একটা ভাবাই আছে, প্ল্যান কোরেই আসা হয়েছে, এবং এখানকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সে প্ল্যান আগে থেকেই জানেন। সবাই চুপ কোরে থাকবে, কেউ কিছু বলবে না, তারপর ঐ জর্মন দলের কেউ, অথবা এখানকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রস্তাবটা দেবেন, সবাই হাততালি দেবে, আর সন্ধ্যেবেলা যখন পার্টি হবে, এক এক কোরে সবাই প্রস্তাবককে অভিনন্দন জানাবে এমন ওরিজিনাল চিন্তার জন্যে।
সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সোমেশ্বর উঠে দাঁড়ালো, ও একটা কিছু বলতে চায়।
কী বললো সোমেশ্বর? এই যে বিশাল জর্মন কেমিকাল সংস্থা, এরা ইণ্ডিয়াতে প্রথমেই যে কাজে নামছে সেটা হেল্থ্ কেয়ারের কাজ। নতুন প্লান্ট হয়েছে পুনের একটা প্রান্তে। এটা আসলে একটা গ্রাম। এই গ্রামটা, আর তার সন্নিহিত আরও দুয়েকটা গ্রামকে তারা অ্যাডপ্ট করতে পারে, গ্রামগুলোর সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্ত ব্যাপারের দায়িত্ব নিতে পারে কম্পানী। একটা হাসপাতাল খোলা যায়, সেখানকার আউটডোর ডিপার্টমেন্ট থেকে ছোটখাটো চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে পারে কম্পানী, দাতব্য ফার্মেসী তৈরি করা যায়, এ সব জায়গায় ধীরে ধীরে চাকরি দেওয়া যায় স্থানীয় লোকদের, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আর গর্ভবতীদের জন্যে দুধ এবং অন্যান্য নিউট্রিশনের ব্যবস্থা করা যায়, এবং স্থানীয় লোকদের সঙ্গে নিয়ে একটা স্কুলও তৈরি করা যায় হয়তো। এত বড়ো কম্পানীর কাছে এটা এমন কিছু ব্যয়সাপেক্ষ নয়, কিন্তু কাজের মতো কাজ এটা। সবাই যখন জানবে, কম্পানীর যথেষ্ট ভালো ইমেজও তৈরি হবে তাতে।
সোমেশ্বরের প্রস্তাব শুনলো সবাই, এবং তারপর নিশ্ছিদ্র নীরবতা কয়েক মুহূর্তের জন্যে। কিছুক্ষণ পর ক্ষীণ হাততালির শব্দ পাওয়া গেলো একটু। জর্মন দলের সদস্যরা হাততালি দিচ্ছেন।
সন্ধ্যের পার্টিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর একটু রসিকতা করলেন সোমেশ্বরের সাথে। তোমার প্রস্তাবের শেষ অংশটা বললে না কেন সোম? সব কিছুর পর পুনের প্লান্টটাও ঐ গ্রামের লোকদের দিয়ে দেবো আমরা, দেওয়াই তো উচিত!
বেশ জমেছে।
ভাল লাগছে, এই উপন্যাস
দারুণ