এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • বৃত্তরৈখিক (১২)

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২০ নভেম্বর ২০২০ | ৩১৯৮ বার পঠিত
  • ~১২~

    উনিশশো পঞ্চাশে প্রথম উপন্যাস প্রকাশের পরেই খ্যাতির প্রায় চূড়ায় পৌঁছে গেছিলেন যিনি, এই উনিশশো ছেষট্টিতে তাঁর নাম আর শোনাই যায় না। হাওড়ার ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরীতে একটু মোটাসোটা বেঁটেখাটো কালো মোটা ফ্রেমের চশমা আর পায়জামা পাঞ্জাবি পরা একটি ছেলে যখন সেই বরেন বসুর বইয়ের খোঁজ নিচ্ছিল, খানিকটা কৌতূহলী হয়েই তার দিকে তাকালো সোমেশ্বর। লাইব্রেরিয়ান ভদ্রলোক বরেন বসুর নাম শুনেছেন বলে মনে হল না,বললেন, কত বই-ই তো আছে, আমাদের তো ওপ্‌ন্‌ অ্যাক্সেস, তা ছাড়াও কার্ড ক্যাটালগিং সিস্টেম, খুঁজে দেখুন না।

    দেখলাম তো ক্যাটালগে, যে বইটা খুঁজছি সেটা ক্যাটালগে আছে, দু-তিন মাস ধরে শেল্‌ফে না পেয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি।

    একটা শেল্‌ফে বই ঘাঁটাঘাঁটি করছিল সোমেশ্বর, শুনতে পেয়ে বললো, রংরূট খুঁজছেন?

    সোমেশ্বরের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে ছেলেটা বলে, কী করে বুঝলেন?

    পাচ্ছেন না তাই বুঝলুম। বইটা আমার কাছ আছে। আমার কাছে মানে আমার এক বন্ধুর কাছে। আমিই কয়েকবার রিনিউ করেছি। অনেককে পড়াচ্ছি বইটা। ডিউ স্লিপ দেখে বুঝলুম কেনার পর থেকে পড়েই ছিল, আমিই প্রথম নিলুম। তাই অকুতোভয়ে রিনিউ করেছি এতদিন। আপনি পড়তে চাইছেন যখন, সামনের সপ্তাহেই ফেরত দিয়ে দেব। যদি যোগাযোগ করার কোন উপায় থাকে জানিয়েও দেব আপনাকে।

    এই লাইব্রেরীতে প্রায় রোজই আসি, আপনি ফেরত দিলেই জেনে যাব।

    অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জমে গেল দুজনের।

    কিঙ্কর চক্রবর্তী কাছেই থাকে, নীলমণি মল্লিক লেনে। দেশভাগের পর পূব বাংলা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা ওদের পরিবার নীলমণি মল্লিক লেনের একটা দোতলা বাড়ির নীচের তলায় একটা ঘর ভাড়া নিয়ে নতুন দেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হয়। যখন এসেছিল, কিঙ্কর তখন শিশু, আজ ওদের পাঁচ ভাইবোন-বাবা-মায়ের সংসারে কিঙ্কর জ্যেষ্ঠ সন্তান। ওর ছোট ভাই থাকে কলকাতায়, মামাবাড়িতে। মামারা কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত, তাঁদের অনেকেই ভালো চাকরি বাকরি করেন, অল্পবিস্তর সাহায্যও করেন বোনের সংসারকে।

    কথায় কথায় কিঙ্কর বলে, আমি তো মহৎ সঙ্ঘ ক্লাবের ছেলে।

    মহৎ সংঘ? কংগ্রেসি ময়দার ক্লাব?

    কংগ্রেসিটা বূঝলাম, সেটা ঠিকই, কিন্তু ময়দা মানে?

    হেসে ফেলে সোমেশ্বর । ওর বড়দার সহপাঠী স্নেহময় সরকারকে যদিও ওর চেনার কথা নয় কিন্তু স্কুলের বার্ষিক প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্র রিইউনিয়নের দৌলতে অনেক পুরোনো ছাত্রদেরও চেনে ওরা। তাদের সঙ্গে পরিচয় হলে তাদের দাদা বলে সম্বোধন করাটাই রীতি। সোমেশ্বর যখন ক্লাস টেন-এ পড়ে, প্রাক্তন বর্তমান ছাত্রদের যৌথ প্রযোজনার একটা নাটকে অভিনয় করেছিল। সেই সময় আলাপ হয় স্নেহময়ের সঙ্গে। কথায় কথায় একদিন তাঁকে স্নেহময়দা নামে ডেকে ফেলায় ভদ্রলোক রেগে আগুন, বললেন, তোমার বড়দার ক্লাসমেট আমি, ইয়ার্কি হচ্ছে?

    ইয়ার্কিটা বুঝতে পারেনি সোমেশ্বর, বাড়ি গিয়ে বড়দাকে বলায় রহস্যটা বুঝতে পারল। স্কুলে পড়ার সময় দু-এক ক্লাস নীচে পড়া ছেলেরা যারা সাধারণত দুয়েক বছরের সীনিয়রদের দাদা সম্বোধন করতেই চায়না, তারাই স্নেহময়কে স্নেহময়দা সম্বোধন করতে ভালবাসতো। স্নেহময় নামের শেষ দুটি অক্ষরের সঙ্গে দাদার সংক্ষিপ্ত রূপটা মিলিয়ে একটা ছেলেমানুষী রসিকতার সুযোগ ছাড়তো না তারা!

    সেই স্নেহময় সরকার মহৎ সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এই অঞ্চলে একজন ছোটখাটো কংগ্রেসি নেতাও বটে!

    মধ্য হাওড়ার এই অঞ্চলটিতে এক কামরার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অনেক। বেশির ভাগই কিঙ্করদের মতো দেশভাগতাড়িত, কিন্তু কিছু কিছু এমন পরিবারও আছে যারা হাওড়া-হুগলি-মেদনিপুরের গ্রাম থেকে আসা। এদের অল্প-স্বল্প জমিজমা আছে, এক সময় হয়তো বেশিই ছিল, কমতে কমতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে জমির আয়ে সংসার এখন আর চলবার মতো নয়। গ্রামের এই নিম্নবিত্ত ভদ্রলোকশ্রেণীর মানুষরা এখন শহরে ছোটখাটো চাকরি-বাকরি করে, তাদের আর্থিক সামর্থে ছোট কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ বাড়ি বা অধুনা গজিয়ে-ওঠা কোন ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া চলে না, অতএব বাঙাল-রিফিউজিদের সঙ্গে ঝগড়া-সমঝোতা করে ভদ্রলোকদের জন্যে চিহ্ণিত নাগরিক দোতলা-তিনতলা পাকাবস্তিই এদেরও আবাসস্থল। এই সব বাড়ির ছেলেমেয়েরাও, ‘বাঙাল’দের ছেলেমেয়েদের মতোই স্কুলে যায়, ব্যক্তিগত মেধা এবং বাপমায়ের ইচ্ছাশক্তি অনুযায়ী স্কুলের পরীক্ষায় ফল করে, এবং বিকেলে খেলাধুলোও!

    বিকেলের খেলাধুলো! কোথায়!

    স্বাধীনতার আগে বাংলার সম্পন্ন গ্রাম ও শহরাঞ্চলে স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতেই গড়ে ওঠে বেশ কিছু ব্যায়ামাগার এবং কুস্তির আখড়া। স্থানীয় হিন্দু ভদ্রলোকদের পুরুষ সন্তানরাই এদের সভ্য এবং পরিচালক। সাতচল্লিশের পর ব্যায়াম বা কুস্তি আর সরকার তাড়ানোর হাতিয়ার নয়, এগুলো এখন এক ধরণের খেলাধুলোর মধ্যেই গণ্য, বিশেষ করে সুন্দর দেহসৌষ্ঠবের অন্য আকর্ষণ আছে, অতএব ব্যায়ামারগুলো পাড়ায় পাড়ায় কমবয়েসী ছেলেদের এখনো আকর্ষণ করে। স্বাধীনতার আগে যারা এই ক্লাব বা সমিতিগুলোর সভ্য ছিল, তাদের নিজেদের বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাড়িতে বৈঠকখানা নামের একটা ঘর থাকত, সেখানে তাস-পাশা-আড্ডা চলতে পারত নিয়মিত; যারা ফুটবল বা ক্রিকেটের মতো ময়দানী খেলায় আগ্রহী, তাদের জন্যেও মাঠ-ময়দানের অভাব ছিল না। দেশ ভাগের পর বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তু পরিবার হঠাৎ এসে পড়ায় বিকেলে দৌড়োদৌড়ি অথবা খেলেধুলোয় আগ্রহী শিশু-কিশোর-যুবকের সংখ্যাও যেমন বাড়লো, কলকাতা এবং তার কাছাকাছি শহর-মফস্বলে জমির টানও পড়লো ততটাই। কাজেই নানা নাগরিক অভাবের মধ্যে খেলার জায়গার অভাবও দেখা দিলো প্রকটভাবে। পাড়ায় পাড়ায় তখন গজিয়ে উঠলো অজস্র ক্লাব-সংঘ-সমিতি, যাদের এক চিলতে জমিতে কখনো হুটোপাটির সুযোগ মিলতো বাচ্চাদের, কখনো কখনো পাড়ার অবস্থাপন্ন এবং সমিতিরও কর্তাব্যক্তি কারো বাড়ির বাইরের দিকের একটা ঘরে সুযোগ মিলে যেত নানারকমের সাংস্কৃতিক বৈঠক, সাহিত্যসভা বা নিছক আড্ডার। নিম্নবিত্ত ভদ্র বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাঁফ ছাড়বার জায়গা হয়ে উঠলো এই ক্লাবগুলো। এগুলোর নেতৃত্ব যাঁরা দিতেন, বাড়ির বাইরে এঁরাই হয়ে উঠতেন পাড়ার ছেলেমেয়েদের অভিভাবক। নিজের নিজের পাড়ায় বা স্কুলে অথবা খেলার মাঠে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক পরিচয় হয়ে দাঁড়ালো এই ক্লাবগুলো। সেই সূত্রে কিঙ্করের আইডেন্টিটি মহৎ সঙ্ঘ “ক্লাব!”

    সোমেশ্বরের স্কুলের অনেক সহপাঠীও এরকম ক্লাবের পরিচয়ে পরিচিত, যদিও ও নিজে তেমন কোন ক্লাবের নয়। ওকে ধরলে হাওড়ায় ওদের তিনপুরুষের বাস, ওর বাবা-কাকারও জন্ম হাওড়ায়। বাইরে-থেকে-দেখতে-মোটামুটি-বড়সড় কিন্তু আসলে-তেমন-কিছু-নয় যে বাড়িটায় ওরা থাকে সেটা ওর ঠাকুর্দার নিজের বাড়ি, বাবা-কাকাদের সবায়ের সন্তানদের মিলিয়ে ওদের যৌথ পরিবার। নিজেদের জাঠতুতো-খুড়তুতো ভাইবোনদের মধ্যে নানান খেলাধুলো, গান-বাজনা-তর্কাতর্কি মিলিয়ে জমজমাট ওদের বাড়ি, ফলে কোন বিশেষ ক্লাবের পরিচয়ে ওদের পরিচিত হবার দরকার পড়েনি কখনও।

    অথচ কিছুদিন ধরেই সোমেশ্বরের মনে হচ্ছিল, এটা একটা অভাব। কলেজের সূত্রে যে রাজনীতিতে ও জড়িয়ে পড়েছে, সে রাজনীতিতে ওর ক্রিয়াকলাপ গঙ্গার ওপারে, কলকাতায়। হাওড়া একটা এতদিনের পুরোনো শহর, সমস্ত শহরটা জুড়েই ছোট-বড় কল-কারখানা, বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে কারখানায় কাজ করতে আসা কুলি পরিবারগুলোর বসবাসের অজস্র বস্তি, দেশ ভাগের পর উদ্বাস্তু হয়ে চলে-আসা মানুষের ঢল, আর তাছাড়া গ্রাম থেকে জীবিকার সন্ধানে আসা নিম্নবিত্ত হাজার হাজার মানুষ শহরে – সব মিলিয়ে-মিশিয়ে হাওড়াই তো ওর কাজের আদর্শ জায়গা হতে পারতো। অথচ স্কুলের বন্ধুবান্ধব ছাড়া আর কাউকে ও প্রায় চেনেই না হাওড়ায়! কিঙ্করের সঙ্গে আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা এই অভাবটা অনেকটাই মেটালো ওর। মধ্য হাওড়ার প্রধান রাস্তা পঞ্চাননতলা রোড যেখানে হাওড়া ময়দানের সামনে জি-টি রোডের সঙ্গে মিলেছে, ঠিক সেই মোড়েই মা কালী কেবিন নামের এক চায়ের দোকানে কিঙ্করের কিছু বন্ধুবান্ধবের আড্ডা। বন্ধুরা আসলে কিঙ্করের পাড়ার বন্ধু – স্কুল কলেজের নয় – তারাও মহৎ সঙ্ঘ “ক্লাবের” সভ্য। অনেকেই এরা মহৎ সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক স্নেহময় সরকারের ভাই মমতাময় সরকারের অনুগামী।

    হাওড়ার কোন একটা পলিটেকনিক থেকে ইঞ্জীনিয়ারিঙে ডিপ্লোমা পাশ করে একটা কারখানায় চাকরি করতো মমতাময়। তারপর নিজের চেষ্টায় যাদবপুরে সন্ধ্যেবেলায় পার্ট-টাইম ইঞ্জীনিয়ারিং ডিগ্রী কোর্সে ভর্তি হয়ে চার বছর পর সে এখন পুরোপুরি ইঞ্জীনিয়র। নীলমণি মল্লিক লেন-সুহৃদ বিশ্বাস লেন মিলিয়ে ওদের যে পাড়া, সেই পাড়ায় ও এখন ছোটদের সামনে রীতিমত একটা দৃষ্টান্ত, পাড়ার বড়োরা ছোটদের ডেকে বলে, মমতাকে দেখে শেখ। পাড়ার মান বাড়িয়েছে মমতা।

    সেই মমতা কিছুদিন পর পাড়ার লাল ঝাণ্ডা অফিসে যাতায়াত শুরু করলো। প্রমাদ গণলেন ওর আত্মীয়রা। কিন্তু মমতার আচরণ বদলালো না বিশেষ। সোমের সঙ্গে মমতার আলাপ হল যখন, তখন মধ্য হাওড়ার ওই অঞ্চলে মমতা একজন প্রধান যুবনেতা। পুরোনো পার্টি-নেতৃত্বের বিষয়ে ওর আর সোমের চিন্তাভাবনা একই রকমের। এমনকি কিঙ্কর আর তার বন্ধুদের অনেকেই এখন একই রকমের ভাবতে শুরু করেছে। এই বন্ধুদের মধ্যে একজন মনুয়া। মনুয়া স্কুল-কলেজে পড়েনি। জন্মসূত্রে আদিবাসী বিহারী, থাকে মা কালী কেবিনের উল্টোদিকের এক বস্তিতে, যেখানে প্রধানত বিহারী আর অ্যাংলো ইণ্ডিয়ানদের বাস। হাওড়া স্টেশনের রেলিঙের গায়ে একটা অস্থায়ী স্টল আছে তার, সেখান থেকে সে বিক্রি করে নানা রকমের পত্রপত্রিকা, আর অতি অল্প মূল্যে সংগ্রহ করা মার্ক্সীয় ও নানা বিপ্লবী পুস্তিকা। কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রায়ই হাওড়া স্টেশনে মনুয়ার স্টলে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আসে সোম, কিঙ্করও আসে সেখানে। খবরের কাগজ থেকে নানা খবর আর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা রাজনৈতিক প্রবন্ধ নিয়ে আড্ডা হয়। কয়েকদিন পর আশ্চর্য আর পুলকিত হয়ে সোম লক্ষ্য করে, বিকেলের আড্ডায় ভালোভাবে অংশ নেবার জন্যে অনেক লেখাই মনুয়া পড়ে রেখেছে দুপুরবেলায়। এমনকী ইংরিজি খবরের কাগজ পড়েও সে দিব্যি বোঝে এখন!

    খাদ্যসঙ্কট নিয়ে পুরো দেশ উত্তাল, ছেষট্টির গোড়াতেই শুরু হল খাদ্য আন্দোলন, সে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লো সবায়ের সঙ্গে সোমেশ্বরও, এবং বিশেষ করে হাওড়ায়। পার্টি নেতৃত্বের খুব উৎসাহ এই আন্দোলনে, সামনের বছর সাধারণ নির্বাচন, এই সব গণ আন্দোলনে সাধারণ মানুষের উত্তেজনা বাড়ে, বাড়ে সরকারবিরোধী ভাবনা, ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলনও হয়। ভোটের বাক্সেই, তার বেশি অবিশ্যি কিছুই নয়। ছাত্ররাও জানে এ সবই, কিন্তু সে জন্যে তো গণ-আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকা যায় না। এর মধ্যে পার্টির নেতৃত্বের নয়া-সংশোধনবাদী ঝোঁক নিয়ে লেখা-টেখাও শুরু হয়ে গেছে, কলকাতা আর আশপাশে ছোটখাটো লিটারেচার,প্যাম্ফলেট আর পত্রপত্রিকাও ছড়িয়ে পড়ছে কিছু কিছু, এমনকি শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং জেলা কমিটির কোন কোন সদস্য যোগাযোগও করছেন।

    এদিকে খাদ্য আন্দোলন চলে একদিকে আর একদিকে চলে কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতা। কংগ্রেস দলটাই ভেঙে যায়, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা তৈরি করেন বাংলা কংগ্রেস। নানা বামপন্থী দল আর বাংলা কংগ্রেস মিলে তৈরি হবে যুক্তফ্রন্ট। খাদ্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেও অদ্ভুত একটা অস্বস্তিতে ভোগে সোম। খাদ্য সমস্যার সমাধান যে এই আন্দোলন করতে পারবে না সে তো জানা কথাই, কিন্তু সমস্যাটার মূল কারণ মানুষকে বোঝানো, আর সত্যিকারের মুক্তির রাস্তা তাদের চিনিয়ে দেওয়াই এই আন্দোলনে যোগ দেবার উদ্দেশ্য। অথচ যুক্তফ্রন্টের মিলমিশ সরকার যে একটা তৈরি হবে তা বোঝাই যাচ্ছে, এবং এই আন্দোলনকে সেই সরকার গঠনের একটা ধাপ হিসেবেই যে ব্যবহার করা হবে তাও তো স্পষ্ট। সোমেশ্বর মনুয়া আর কিঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোন অংশ নেবে না তারা।

    অথচ ইলেকশন কী মোহময়! চিন্তার দিক থেকে যাদের মনে হয়েছিল একই গোত্রের, তারা প্রায় সবাই, এমনকি মমতা আর তার অনুগামীরাও পার্টি-শৃংখলার যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে শরীরপাত করলো।

    খাদ্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে হাওড়ায় এখন পরিচিতি বেড়েছে সোমেশ্বরের। মিছিল-মিটিঙে নানা জায়গা থেকে ডাক পড়ে তার। সমমনস্ক সমবয়স্ক অনেককেই পেয়ে যায় সে। ধীরে ধীরে সে গড়ে তুলতে থাকে পাঠচক্র নানান জায়গায়। মনুয়ার উন্নতি থেকে উৎসাহ পায় সে। সোমেশ্বর আর তার বন্ধুদের পাঠচক্রে কিন্তু পার্টির রাজনীতি বা পার্টি-প্যাম্ফলেট পড়ানো হয়না। ওদের পাঠচক্রে আসে গরীব মানুষের ছেলেমেয়েরা। তাদের ইংরিজি-বাংলা-অঙ্ক-ইতিহাস-ভুগোল-বিজ্ঞান পড়ানো হয়। আর আলোচনা হয় কেন মানুষের মধ্যে এত বৈষম্য। ছাত্রদের বয়েস অনুযায়ী বৈষম্য ঘোচাবার রাস্তা নিয়েও আলোচনা হয়। কম্যুনিস্ট নেতারা মাঝে মাঝে ঠাট্টাও করেন। মমতাও একদিন বললো ওকে, মধ্যবিত্ত ভ্যানিটি পুষে রেখেছ নিজের মধ্যে! নিজের সুড়সুড়িতে নিজেরই আরাম!

    সাতষট্টিতে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর যা ভাবা গিয়েছিল তা-ই হল। প্রেসিডেন্সী কলেজের আন্দোলনকে তখনকার মতো প্রায় শেষই করে দেওয়া হল। উত্তরবঙ্গে নকশালবাড়ি এবং আশপাশের জঙ্গী আন্দোলন মন্ত্রীসভার কম্যুনিস্ট নেতাদের কাছ থেকে কোন সাহায্যই পেলো না। আট মাসে এমনকি ভেঙেই গেল যুক্তফ্রন্ট, প্রফুল্ল ঘোষের জোড়াতালিতে আরও মাস চারেক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার পর এক বছরের মাথায় রাষ্ট্রপতির শাসন চালু হল পশ্চিম বাংলায়। মনুমেন্ট ময়দানে চারু মজুমদারের জনসভায় ছাত্রদের বিশাল উপস্থিতি বুঝিয়ে দিল, নির্বাচন আর ছাত্র-যুবদের ততটা উত্তেজিত করতে পারবে না। প্রেসিডেন্সী কনসোলিডেশনেও ফাটল। এখনই বিপ্লবের সময় আসেনি মনে করে যেমন কেউ কেউ, ফুটবলের রেফারির বাঁশি বাজিয়ে কবে বিপ্লব শুরু হবে তার জন্যে অপেক্ষা করতে রাজিও নয় অনেকে। কনসোলিডেশনে একজোট হওয়া ছাত্রদের একদল সোজাসুজি বিপ্লব সংগঠিত করতে যেতে শুরু করলো গ্রামে, ডেবরা আর গোপিবল্লভপুর থেকে প্রথমে শুরু করে তারপর আরও প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত।

    আটান্ন-উনষাটের খাদ্য আন্দোলনে হাওড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত বার্ণ কোম্পানীর এক শ্রমিকের স্মৃতিতে যে শহীদ নিতাই ভবন তৈরি করা হয়েছিল তার পরিচালকরা খবরই রাখতো না নিতাইয়ের একমাত্র জীবিত আত্মীয়র। নিতাইয়ের দিদিমা এক বৃদ্ধা মহিলা থাকতেন ওই ভবনেরই কাছাকছি এক বস্তিতে। বস্তির সামনে খানিকটা খোলা জায়গায় ছিল সোমের একটা পাঠচক্র। ওই বস্তির ছেলেমেয়েরা ছাড়াও আশপাশের দুয়েকজন আসতো পড়তে। পাড়ায় থাকতেন পার্টির অধ্যাপক সেলের একজন নেতা, রাজেনদা। ইদানিং রাজেনদাও মনে করেন বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত, ছেলেমেয়েদের পড়ানো এবং ভালো কাজ করবার মধ্যবিত্ত মোহ ত্যাগ করে সোমেশ্বরের মতো যুবকদের ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করবার জন্যে। সোম তর্ক করে না, হাসে। ওর পাঠচক্রের একজন ছাত্র এ বছর সায়েন্স নিয়ে হায়ার সেকেণ্ডারী পাশ করেছে। তার কোন আত্মীয় থাকেন রানিগঞ্জে, কয়লা খনিতে কজ করেন। ধরাধরি-টরি করে ছেলেটির জন্যে তিনি খনিতে একটা কাজ জোগাড় করে দিয়েছেন, দিনের বেলায় কাজ, আর সন্ধ্যেবেলায় ওখানকার মাইনিং ইনস্টিট্যুটে পড়া। সোম খুব খুশি। রাজেনদা শুনে বলেন, আর একটি পেটি বুর্জোয়া তৈরি করলে তো!

    পেটি বুর্জোয়া তো আপনি-আমি সবাই, রাজেনদা, সচেতন শিক্ষিত ছেলেরা শেষ পর্যন্ত বিপ্লবের পথেই থাকবে!

    যুক্তফ্রন্টকে ক্ষমতায় আনবার জন্যে নির্বাচনী লড়াইয়ে শরীরপাত করেছিল যারা তাদের মধ্যেও কয়েকজনের মোহভঙ্গ হল বোধ হয়। আর নির্বাচন নয়, গ্রামে গ্রামে গিয়ে এবার বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার, চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, পার্লামেন্ট হল শুয়োরের খোঁয়ার, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরো, ভারতের প্রকৃত অবস্থা শুনতে পিকিং রেডিও শুনুন! তেরো-চোদ্দ-পনের বছরের ছেলেদের বলা হল ভোঁতা কাটারি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে শ্রেণীশত্রু হত্যা করায় শ্রেণীঘৃণার চরম প্রকাশ! নানা রকমের কমিটি তৈরি হতে শুরু হলো নানা দিকে, প্রতিটি কমিটিই নিজস্ব চিন্তায় বিপ্লবের স্ট্র্যাটেজী তৈরি করেছে! গত নির্বাচনে বামপন্থী ভোটপ্রার্থীদের পক্ষে পোস্টার সেঁটে বামপন্থী রাজনীতির কাছাকাছি সদ্য আসা কয়েকজন কিশোরকে গ্রামে পাঠিয়ে দিল মমতা, বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে, পার্টিশৃঙ্খলা এখন আর কোন বাধা নয়! এদের মধ্যে দুজন কিশোর ছিল সোমেশ্বরের পাঠচক্রের শিক্ষার্থী, যাবার সময় তারা বলে গেল তাদের শিক্ষা শেষ হবার জন্যে বিপ্লব বসে থাকবে না!

    খানিকটা একাই কি হয়ে গেল সোমেশ্বর? উত্তরবঙ্গে অনেকদিন ধরে একটু একটু করে সংগঠন তৈরি করে জঙ্গল সাঁওতালরা লড়াইয়ের যে পটভূমি তৈরি করেছিলেন, দক্ষিণ বঙ্গের গ্রামে সে প্রস্তুতি কোথায়? কলেজের ছেলেরা গিয়ে বিপ্লব করবে? এখানে একটা ওখানে একটা শ্রেণীশত্রু খতমে বিপ্লব আসবে? শ্রেণীঘৃণার চরম প্রকাশ ভোঁতা কাটারি দিয়ে তথাকথিত শ্রেণীশত্রুর গলা কাটায়? কোন প্রস্তুতি ছাড়া ম্যাজিকের মতো বিপ্লব? কী হল এতদিনের আলোচনার ফল? আমাদের না কথা ছিল প্রস্তুতির? মানুষের কাছে গিয়ে তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়? তারপর সেই অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ? বিপ্লব কি রপ্তানী করবো আমরা, না শ্রমিক-কৃষকের বিপ্লবে তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করবো? পড়তে হবে না সবাই মিলে একসাথে? ভাগ করে নিতে হবে না কৃষকের আজীবনসঞ্চিত অভিজ্ঞতা?

    এক বছরের মাথায় রাষ্ট্রপতির শাসন চালু হল পশ্চিম বাংলায়। ছাত্রদের এক মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হল সোমেশ্বর। দমদম জেল যেন বিপ্লবী ছাত্রদের এক সারাদিনের বিতর্ক সভা। খোলা মনে নিজের কথা বলে সোমেশ্বর। সকালে পিকিং রেডিও শুনে সারাদিনের বিপ্লবী প্রোগ্রাম তৈরি করাকে সে পাগলামি মনে করে, বন্দুক চালাতে যে শেখেনি ছিনতাই করা বন্দুক তার কাজে লাগবে না, এ কথা স্পষ্ট করেই বলে সোমেশ্বর। আলোচনা, তর্ক চলতেই থাকে। তারপর একদিন ছাড়া পায় সে। বেরিয়ে বুঝতে পারে নেতৃত্বের যে সমালোচনা খোলা মনে সে করেছে জেলের ভেতরের তর্কে, সেগুলো জমে জমে এখন অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে, এ নাকি তার শ্রেণীচরিত্র, জেলের ভাত পেটে পড়লেই আসল শ্রেণীচরিত্র নাকি বেরিয়ে পড়ে, সে এখন চিহ্ণিত শ্রেণীশত্রু!


    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২০ নভেম্বর ২০২০ | ৩১৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৩ নভেম্বর ২০২০ ২০:৫১100579
  • "মুভমেন্ট ময়দানে চারু মজুমদারের  জনসভায়"?


    কানু সান্যালের নয়?


    আমার  ভুল হতে পারে।

  • Moulik Majumder | ২৬ নভেম্বর ২০২০ ২২:১৩100684
  • দারুণ 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন