সকাল থেকে সুদীপ্ত রায় ফোন করেছে বার চারেক। সল্ট লেকে তুলিদের বাড়িতে গতকাল থেকে আছে জয়ি। সেই যে তুলির সাথে এসেছিলো তুলি যখন শেষ এসেছিলো জয়ির জরুরি তলবে, তার পর থেকেই কলকাতায় এলে এই বাড়িতেই থাকতে হয় তাকে। কাকু-কাকিমা বলেই দিয়েছেন মনে রাখিস, তুইও আমাদের একটা মেয়ে, এটা তোর নিজের বাড়ি, কলকাতায় এলে এখানে ছাড়া আর কোথাও থাকার কথা ভাববিই না। কিন্তু সুদীপ্তর এই বারবার ফোন করাটা একটু অস্বস্তিতে ফেলে ওকে, ফোনটা কাকুদের শোওয়ার ঘরে !
সুদীপ্তরা খুশিঝোরা থেকে ফিরে যাওয়ার মাসখানেক পর একটা পত্রিকা এসে পৌঁছোয় জয়ির কাছে, পোস্ট অফিস মারফত। শিল্প-সাহিত্য-সমাজ বিষয়ক লিট্ল্ ম্যাগাজিন ঝলক, জয়ি কখনো সখনো এক-আধ কপি দেখে থাকতেও পারে, মনে করতে পারে না। এই সংখ্যা সুদীপ্ত রায়ের একটা প্রবন্ধ গোছের লেখা প্রকাশ করেছে, নাম মানুষের বর্জ্য গাছেদের ভোজ্য। চিত্রশিল্পী জয়মালিকা সেন পুরুলিয়ার এক প্রান্তে আদিবাসীদের শিল্প-সংস্কৃতি প্রসারের যে বিপুল কাজ করছেন তাঁর খুশিঝোরা সমিতির মাধ্যমে, তা যে শুধুমাত্র একজন ব্যতিক্রমী সৃষ্টিশীল মানুষের পক্ষেই সম্ভব এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছে সুদীপ্ত। সৃষ্টির প্রেরণায় এ যেন এক মাধ্যম থেকে আর এক মাধ্যমে স্বচ্ছন্দ পদচারণা, শিল্পীর সৃষ্টিশীলতা আর জনজাতিশিশুর বিকাশের সৃষ্টিশীলতা যেন একই কল্পনার দুটি ফসল। পরিশেষে বনসৃজন কোরে জয়মালিকা যেভাবে শুষ্ক-অনুর্বর কাঁকুড়ে জমির চরিত্র বদলানোর চেষ্টা করছেন সে বিষয়ে আলোচনা করেছে সুদীপ্ত এবং জয়মালিকা-সৃষ্ট অসাধারণ “মানুষের বর্জ্য গাছেদের ভোজ্য” শ্লোগানের প্রচারের মাধ্যমে জনমত সৃষ্টির শুভ প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়ে তার প্রবন্ধ শেষ করেছে।
পত্রিকাটা পড়লো জয়ি, কিন্তু সুদীপ্তর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলো না তখন। মাসদুয়েক পর একদিন এক ভদ্রলোক হাজির, একটা ছাপানো ফর্ম তাঁর সাথে। ভদ্রলোক বললেন তিনি আসছেন বান্দোয়ান থেকে, বি-এস-এন-এলের অফিসে কাজ করেন তিনি। এই ফর্মটা ভর্তি কোরে রাখতে হবে জয়মালিকা সেনের অফিশিয়াল শীলমোহরের সাথে সই-টই করে, তিনি এসে দুদিন পর নিয়ে যাবেন ফর্মটা। জয়ি বসায় ভদ্রলোককে, চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করে, জানতে চায় ফর্মটা কী ব্যাপারে, কে দিলো।
কাজল ব্যানার্জি নামে একজন জেনারাল ম্যানেজারের চেষ্টায় বান্দোয়ান থেকে গালুডির রাস্তা ধরে সাতঘুরুং পর্যন্ত টেলিফোনের কেব্ল্ টানা হয়েছে। এই অঞ্চলে যদি কেউ টেলিফোনের লাইন নিতে চায় তার পক্ষে এখন লাইনটা পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। ব্যানার্জি সাহেব বলে দিয়েছেন এই সপ্তাহের মধ্যেই যেন খুশিঝোরার লাইনটা লেগে যায়। তাই ফর্মটা উনি নিয়েই এসেছেন, ওটা জমা পড়লে কিছু টাকা জমা দিতে হবে, তার ডিটেলটা উনি জানিয়ে দেবেন, আশা করা যায় এই সপ্তাহের মধ্যেই টেলিফোনটা এসে যাবে।
টেলিফোনটা লেগে যাওয়ার পরের দিনই কাজলের ফোন, আমি আমার কথা রেখেছি ম্যাডাম।
ও, থ্যাঙ্ক য়্যু সো মাচ, জবাব দেয় জয়ি, আর একবার যে আপনাকে আসার জন্যে ইনভাইট করবো, তারও উপায় নেই, আমাদের একটা স্কুল বাড়ি তৈরি হচ্ছে, গেস্ট হাউজ ভর্তি লোকজন, সেটা শেষ হলেই একটা সিনেমার শূটিং, মার্চ-এপ্রিলের আগে কাউকে যে এখানে কয়েকদিনের জন্যে ঘুরে যেতে বলবো তারও উপায় নেই। তবে এবার কলকাতা গেলে আপনাকে ফোন কোরেই যাবো, আপনার সাথে দেখা করবো কলকাতায়।
সে আপনি করলে আই উইল বী মাচ ওবলাইজড, কিন্তু আপনার ওখানে কী কী কর্মকাণ্ড চলছে সবই আমরা জানি, এখনই ওখানে গিয়ে পড়ে বিপদে ফেলবো না আপনাকে। সে সব মিটে গেলে আপনি না ডাকলেও যাবো আমরা, আমরা তো নিজেদের খুশিঝোরার পার্ট বলে মনে করতে শুরু করেছি অলরেডি।
সুদীপ্তও ফোন করে কয়েকদিন পর, ওর পাঠানো পত্রিকাটা জয়ি পেয়েছিলো কিনা খোঁজ নেয়।
এই সুদীপ্তই ফোন করে সবচেয়ে বেশি, আর এখন তো তুলিদের বাড়ির ফোন নম্বরও জেনে নিয়েছে সে।
শূটিং শেষ কোরে বাপনদারা চলে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন 'কনেক্ট বাংলা' টিভি চ্যানেলের থেকে ফোন। 'কনেক্ট বাংলা' চ্যানেলের 'আমাকেও চ্যালেঞ্জ!' কুইজ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান।
বাপনদার কাছ থেকে 'জনজাতির জননী জয়মালিকা সেন' নামে যে পাঁচ মিনিটের ছবিটা ওরা পেয়েছে সেটা দেখে ওরা শুধু মুগ্ধ নয়, উদ্বুদ্ধও। ওদের প্রবল জনপ্রিয় 'আমাকেও চ্যালেঞ্জ!' কুইজ প্রোগ্রামের একটা বিশেষ অধিবেশনে ওরা ছবিটা দেখাতে চায়। কিন্তু শুধু ছবি দেখানো নয়, এই প্রোগ্রামে কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন
কবিতা-সঙ্গীত-অভিনয়-খেলাধুলো-চিকিৎসা-রাজনীতি-বাণিজ্য জগতের সাতজন দিকপাল প্রতিনিধি। জয়মালিকা সেনকে তারা অনুরোধ করছে চিত্রশিল্প ও সমাজসেবা জগতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্যে।
প্রতিযোগিতা? – অস্বস্তি বোধ করে জয়ি।
ম্যাডাম, প্রতিযোগিতাটা আসলে কিছু নয়। প্রোগ্রামটা শুরু হবে আপনার ওপরে যে ছবিটা সেটা দেখিয়ে। তারপর আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। তারপর মামুলি একটা কুইজ প্রতিযোগিতা, ও কিছু নয় !
কবে হবে?
রেকর্ড করা হবে সামনের মাসে ফার্স্ট উইকে। রেকর্ড হয়ে গেলেই আমরা প্রচার শুরু করবো। সেটা চলবে মাসখানেক। তারপর টেলিকাস্ট। আপনি বাড়িতে বসেই আপনার প্রোগ্রাম দেখতে পারবেন। আপনাকে আমরা একটা এগ্রিমেন্ট ফর্ম পাঠিয়ে দিচ্ছি ক্যূরিয়ারে। সেটা সই কোরে পাঠিয়ে দেবেন প্লীজ।
বিকেলে বাপনদার ফোন আসে। কী, জয়মালিকা, 'কনেক্ট বাংলা'র ফোন পেয়েছিলে?
পেয়েছিলাম তো বাপনদা, ওরা অনেক কোরে বললো, আমিও রাজি হয়ে গেলাম। কে জানে ঠিক করলাম কিনা।
ঠিক করলে কি-না ! একদম ঠিক করেছো ! টেলিকাস্টের পর দেখো, কী দাঁড়ায় ব্যাপারটা !
ছবিটা ডাইরেক্ট করেছে সুধীর কার্লেকর নামেই, সমস্তটাই আসলে বাপনদার আইডিয়া। এমনকি নামটাও বাপনদার দেওয়া। জয়িকে দিয়ে গাছ পুঁতিয়েছে জমি খুঁড়িয়ে, গাছের চারায় জল ঢালিয়েছে ওকে দিয়ে, বাচ্চাদের কোলে বসিয়ে পড়াচ্ছে আর ছবি আঁকা শেখাচ্ছে সেই ছবিও তোলা হয়েছে, বালতি থেকে খিচুড়ি ঢেলে খাওয়াচ্ছে বাচ্চাদের, আদিবাসী মেয়েদের সাথে বসে কাজ করছে বাবই ঘাস আর খেজুর পাতা দিয়ে। মাসে একদিন আসে সুকান্তদা, দাতব্য চিকিৎসালয়ে একটি মেয়েকে শুইয়ে পরীক্ষা করছে সে, পাশে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে টুকিটাকি এগিয়ে দিচ্ছে জয়ি, বাইরে অপেক্ষারত রোগীর দল, সবই আছে ছবিতে। মাসের ঐ দিনটায় জলধর আসেই, রোগীদের বুঝিয়ে দেয় ডাক্তারের নির্দেশ, কীভাবে ওষুধ খেতে হবে, পথ্য কী ইত্যাদি; ওকে বলাও হয়েছিলো আগে থেকে, কিন্তু শূটিঙের দিন আসেনি ও। সেটা খানিকটা ম্যানেজ করতে হয়েছে উৎপলকে দিয়ে। ফলত ছবিতে উৎপলকেও দেখা যায় এক পলকের জন্যে। উৎপল রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় আছে কবে 'আমাকেও চ্যালেঞ্জ!' প্রোগ্রামে টিভিতে দেখা যাবে ওকেও !
জয়ির ছবির এগজিবিশনের সময় বাচ্চাদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা আর মূল এগজিবিশনে জয়ির ছবির পাশাপাশি তাদের ছবিরও স্থিরচিত্র কিছু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ডকুমেন্টারীতে ! মোটের ওপর, এ ছবি যে দেখবে জয়িকে জনজাতির জননী ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারবে না সে !
'কনেক্ট বাংলা'র স্টুডিওতে যেদিন রেকর্ডিং হলো সেদিনই বাপনদার কথা কতোটা সত্যি বুঝতে পারলো জয়ি। রেকর্ডিঙের পর ওকে ঘিরেই সবায়ের আলোচনা। মঞ্চ অভিনেতা যে ভদ্রলোক ছিলেন, বিকাশ বসু, তিনি বললেন, নিখিলেশদার কাছে আপনার কথা শুনেছি আমি। আপনার যখন অনেক কম বয়েস তখন শক্তিদা আপনার সাথে নিখিলেশদার পরিচয় করিয়ে দিয়ে আপনার ছবি আঁকার ট্যালেন্টের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, সারাণ্ডার জঙ্গল থেকে তুলে এনেছি মেয়েটাকে, ও একদিন মহীরুহ হবে। সেই আপনি শিল্পীর কেরিয়ার বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র আদিবাসী উন্নয়নেই মনের শান্তি পেলেন ! ভাবা যায় !
দুদিন পরেই সুদীপ্তর ফোন। 'কনেক্ট বাংলা'র 'আমাকেও চ্যালেঞ্জ!' কুইজ প্রোগ্রামে ব্রেকের সময় আপনার একটা ক্লিপিং দেখাচ্ছে। সামনের বেস্পতিবারের পরের বেস্পতিবার আপনি যেটায় আছেন সেই প্রোগ্রামটা টেলিকাস্ট হবে। তার পরের রোববার আমাদের ঝলক পত্রিকা আপনাকে একটা সম্বর্ধনা দিতে চায়, জীবনানন্দ সভাঘরে। না বলবেন না, প্লীজ।
না বলেনি জয়মালিকা সেন।
কুইজ প্রোগ্রামটা টেলিকাস্ট হওয়ার আধ ঘন্টা পরেই টেলিফোনটা বেজে ওঠে।
আমি কাজল বলছি, কাজল ব্যানার্জি, চিনতে পারছেন?
আরে, কাজল ব্যানার্জিকে চিনতে পারবো না? আপনার প্রসাদেই তো এই টেলিফোন।
আপনার প্রোগ্রামটা দেখলাম। কনেক্ট বাংলায়। মানে, কী বলবো জানিনা, কীভাবে নিজেকে যে এক্সপ্রেস করবো...মানে, আপনার ওপর আমার শ্রদ্ধা হাজার গুণ বেড়ে গেলো ম্যাডাম। এতো ইমোশন আপনার ! আদিবাসী বাচ্চাদের কথা বলতে গিয়ে সবায়ের মধ্যে এমন ভাবে কেঁদে ফেললেন আপনি !
সো সরি কাজল, ওটা আমার একটা অসুখের মতো। নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারিনা। ঐ বাচ্চাগুলোর কথা উঠলেই কান্নাটা কেমন ঠেলে ওঠে আমার বুকের থেকে ! জানি, এটা সভ্য জগতে চলে না। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা ভাই !
শেষের দিকে গলাটা ভারী হয়ে আসে জয়ির। টেলিফোনের অন্য দিক থেকেও কাজলের কান ধরতে পারে সেটা।
আমি সরি জয়িদি, বলে কাজল, আপনাকে আবার কাঁদাচ্ছি।
কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা, তারপর আবার কথা বলে কাজল, লাইনটা ছাড়ছি জয়িদি, সরি আপনার মন ভার করে দিলাম। রোববার দেখা হবে জীবনানন্দ সভাঘরে।
শনিবার সকালের স্টীল এক্সপ্রেসে কলকাতা এসেছে জয়ি, হাওড়া স্টেশন থেকে সোজা সল্ট লেক। কাকিমা ওকে দেখে উচ্ছ্বসিত, কাকু শুধু একবার বললেন, ছবি আঁকা ছেড়ে দিলি নাকি, জয়ি?
ছাড়বো কেন, ছবিও তো আঁকি।
বেস্পতিবার 'কনেক্ট বাংলা'র কুইজ প্রোগ্রামটা দেখেছেন ওঁরাও, দেখে কাকিমা চোখ মুছতে মুছতে বললেন, এখনো কতো ছেলেমানুষ আছে ! প্রোগ্রামে সবায়ের মধ্যেই আদিবাসী বাচ্চাদের ট্যালেন্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে একেবারে সাড়া ! এদিকে আবার খুবই খুশি কাকিমা, কাকুকে বলেছেন, আমাদের সেই জয়ির এতো নামডাক, ভাবতে পারো !
নামডাক ভাবতে পারি, বলেছেন কাকু, তবে ঠিক বুঝতে পারছি না, যে জন্যে নামডাক হওয়া উচিত ছিলো, ঠিক সেই জন্যেই হচ্ছে কিনা। চিত্রশিল্পী-টিল্পীই বলছে বটে ওরা, কিন্তু কাজ যা দেখাচ্ছে, সেগুলো তো ছবি নয়, অন্য কিছু !
জয়ি বললো, ছবি আঁকা ছাড়া আর কী জানি বলো কাকু, ছবিই আঁকবো। তবে সেটা সব সময়েই ফাইন-আর্টের পর্যায়ে পৌঁছোবে কিনা জানিনা। এই তো, গত মাসেও একটা ম্যাগাজিনের কভার করেছি, রবিবারের সাময়িকীতেও ইলাস্ট্রেশন করেছি একটা গল্পের।
এ নিয়ে আর কথা হয়না, কিছুক্ষণ পর সুদীপ্তর ফোন আসে।
ফোনে কথা বলে জয়ি, তারপর কাকুকে বলে, কাল আমাকে সম্বর্ধনা দিচ্ছে ঝলক নামের একটা পত্রিকা জীবনানন্দ সভাঘরে, তোমরা যাবে?
সম্বর্ধনা দিচ্ছে? যাবো না? যাবোই তো, আমাদের সাথেই যাবি তুই।
সভায় অনেক বক্তৃতা-টক্তৃতা হলো। যে কথা সুদীপ্ত লিখেছিলো ঝলক পত্রিকায়, প্রায় সেই কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেলো একজন কবির গলায়, ক্রিয়েটিভ জয়মালিকা সেনের ক্রিয়েটিভিটি যেন মুক্তধারার মতো নতুন খাতে বইছে জঙ্গলমহলের এই শিশুদের প্রতিপালন করতে গিয়ে, অনুর্বর শুষ্ক জমিতে বর্ষাসৃষ্টির প্রেরণাও তাঁর এই ক্রিয়েটিভিটির ফসল, তাই এক হাতে তিনি প্রতিপালন করেন সাঁওতাল শিশু, আর এক হাতে স্বরোপিত শালমহুলের চারা।
আদিবাসী বিকাশ মন্ত্রী যিনি সভাপতিত্ব করছিলেন বললেন জয়মালিকা স্বেচ্ছায় এক বিশাল দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর কাঁধে, তাঁকে মনে রাখতে হবে কীভাবে পঞ্চাশের দশকে পুরুলিয়ার মানুষ লড়াই করে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বাংলার মাটিতে তাঁদের ফিরে আসার অধিকার। আজ জয়মালিকা সেনের মতো জনপ্রেমী ভাবাবেগী কর্মীদের ভাবতে হবে কীভাবে ঘটানো যাবে এই ভূমির আদিবাসীদের সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠের সুষম মিলন।
শাল, পুষ্পস্তবক এবং সন্দেশ উপহার দেওয়া হলো জয়মালিকাকে, সঙ্গে একটি মানপত্র।
সল্ট লেকের বাড়িতে ফিরে ফুলগুলো জয়ি রেখে দিলো কাকু-কাকিমার শোওয়ার ঘরের ফুলদানিতে, ফুলদানিতে জল ঢেলে, খানিকটা ছিটিয়ে দিলো ফুলের পাপড়িগুলোয়। কাকিমার গায়ে জড়িয়ে দিলো শালখানা। কাকিমা আপত্তি করায় জয়ির চোখে জল। কাকু বললেন, জয়ি দিচ্ছে, তুমি নেবে না ! রাত্তিরে খাওয়া হলো সন্দেশ, মানপত্রটা স্যুটকেসে ভরে পরের দিন সকালে জয়ি রওনা দিলো ট্রেন ধরতে।
অসাধারণ