এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • আমি সেই ম্যারাকাস বাদক

    অনির্বাণ মাইতি লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ জুলাই ২০১২ | ১০১৮ বার পঠিত
  • গণনাট্য সঙ্ঘের সাথে আমার সম্পর্ক, আমার জন্মের ঠিক ৬ মাস আগে। না না মস্করা করছি না, তারিখ দিনক্ষণ আমার মনে নেই, থাকার কথাও না। তবে জায়গাটা ছিল তাহেরপুর, সাম্প্রতিক শাখার "তিতুমীর" নাটক অভিনীত হবে। আমার গর্ভধারিণী ৬ মাসের আমি-কে গর্ভে নিয়ে, মঞ্চে ওঠার ঠিক আগে, প্রথমবারের জন্য সাড়া দিয়েছিলাম আমি। খুশীতে পাগল হয়ে মা অভিনয়ে কোনও বাড়তি প্রেরণা পেয়েছিল কিনা জানি না,তবে আজও এই গল্পটা আমায় ভারি তৃপ্তি দেয় । আমায় বলে আমি তো ওদেরই একজন, যারা একসময়ে গ্রামবাংলা কাঁপিয়ে বেড়াতো, যারা আজও ঢেউয়ে ঢেউয়ে তুফান তোলে ...

    জন্মের পর থেকে বাবা মায়ের সাথে... না বাবা মা বলব না গণনাট্য সঙ্ঘের সাথে সারা বাঙলা ঘুরে বেড়িয়েছি । হ্যাঁ ততদিনে আমার একটা অধিকার বোধ জন্মেছে । কারণ তখন আমার ভূমিকা এক ম্যারাকাস বাদকের, গানের দলের এক পাশে দাঁড়িয়ে ম্যারাকাস বাজাতাম, বিশেষ পাত্তাতো দূরের কথা একটা মাইকও জুটত না আমার। তাতে আমি থোরাই কেয়ার করি, নিজেই বাজাতাম নিজেই মুগ্ধ হতাম। আবারও একটা তৃপ্তি মনে বাসা বাঁধত , আমিও তো ওদেরই একজন।
    একবার মনে আছে বাঁকুড়ার মাঝদায় মুক্তধারা শাখার "ক্রীতদাস"-এর শো , আমার সারা শরীর পোড়া নারেঙ্গায় আক্রান্ত, যন্ত্রণায় ককাচ্ছি, মা আমাকে সহকর্মীদের কোলে দিয়ে মঞ্চে উঠছেন আর নেমে এসে আবার কোলে নিয়ে ভোলাচ্ছেন। এই ভাবেও অভিনয় করা যায় !!! হয়তো শুধু গণনাট্য সঙ্ঘের শিল্পীরাই পারেন। ধুলোতে আমার সারা শরীর বিষিয়ে গেছিলো, ডাক্তারের কাছে জোর বকুনি খেয়েছিলো আমার বাবা মা, তাতে কি? ওদের মনের আগ্নেয়গিরির হদিশ পাওয়া ডাক্তারের কাজ না...

    হ্যাঁ আবারও বলছি গণনাট্য সঙ্ঘের কর্মীরাই পারে এমন সব অসাধ্য সাধন করতে, তার প্রতিদানগুলোও ছিলো ভারি অদ্ভুত। কোনও এক প্রত্যন্ত গাঁয়ে সবাই মিলে ডাব খাওয়া হলো, ডাবওয়ালা নিজে হাতে ডাব কেটে সবার মুখে তুলে দিয়ে পয়সা নেবার বেলা একদম মুখপালটি "তুমাদের থিকে পইসা লুবো নি, তুমরা কমরেড না?" কান্নায় গলা বুজে আসে না? সত্যিই তো আমরা কমরেড তোমাদের সাচ্চা কমরেড। এরকম ছোট ছোট কত ঘটনা, টুকরো স্মৃতি আবছা মণে আসে। কমরেড এসেছে শুনে শুধু সাদা ভাত আর আলুসিদ্ধ নিয়ে গ্রামের মানুষ হাজির , পরম তৃপ্তিতে খাওয়াবে আপনজনকে।

    আর একটা ঘটনার কথা না বললেই নয়, আমার বোনের জন্মের সময়, সদ্যোজাত বোনকে একবার চোখের দেখা দেখে আমাকে নিয়ে বাবা সটান চলে এলেন কলকাতার শিশির মঞ্চের অনুষ্ঠানে। গোটা অনুষ্ঠানটা বাবার ধুতির খুট ধরে দাঁড়িয়েছিলাম। মনটা খারাপ ছিলো, নতুন অতিথিকে ভালো করে দেখাও হয়নি যে।

    শুধুমাত্র পরিবারের কথা বলে যাচ্ছি কারণ এদেরকে কাছ থেকে দেখেছি। এরকম কত পরিবার আছে, কত মানুষ আছে যারা ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে আম আদমির কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এদেরকে আমরা বিদ্বজ্জন বলে মানি না, সম্মান করিনা। কারণ এরা প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের কাছে আসেন, আমাদের কথা বলেন, গানে, নাটকে, কবিতায়। নিজের চক্ষে সেদিনগুলো প্রত্যক্ষ করেছি, লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন মঙ্গলকাব্য, গম্ভীরা, মহাভারতের যুদ্ধ, সূর্যশিকার, ক্রীতদাস, গণনাট্যের এক একেকটা প্রযোজনা যখন আছড়ে পড়ছিল, শাসকের বুকে শেলএর মত বিঁধছিল, সেদিন আমি সাক্ষী ছিলাম। সাক্ষী ছিলাম ভোগবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘাড় সোজা করে লড়ে যাওয়া মানুষগুলোর লড়াইয়ের। তাই আজও হুজুগে শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের থেকে ওদেরকেই বেশি আপন মনে হয়। আমার কমরেড।

    একটা ভারি মজার কথা মনে পড়লো, বীরভূম-এর কোন প্রত্যন্ত গ্রামে নির্বাচনী তরজা গানের আসর বসেছিল। যুযুধান দুই পক্ষ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস । বামফ্রন্টের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন কমঃ শুভেন্দু মাইতি আর কংগ্রেস এর হয়ে জবাব দিচ্ছিলেন কমঃ মন্টু দে । প্রচুর লোক সমাগম ছিলো, বামফ্রন্ট এর চাঁচাছোলা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে মন্টুকাকু বলে উঠলেন। "আমার লাঠিটা কোথায় রে ব্যাটাকে মেরেই ফেলবো" সাথে সাথে দর্শকাসন থেকে একটা ইঁট উড়ে এলো মন্টু কাকুর বুকে। হতভম্ব সবাই, মন্টুকাকু কিছুটা সন্ত্রস্ত, দর্শকাসন থেকে চীৎকারের রোল "শালা কমরেডকে মারবে? মেরেই দেবো শালাকে" ... এক বৃদ্ধ রাগে কাঁপছিলেন, আশে পাশে অনেকেই উত্তেজিত। সব কমরেডরা এগিয়ে এলেন আড়াল করলেন মন্টু দেকে । বোঝাতে লাগলেন দর্শক দের উনি আমাদের লোক, শুধুমাত্র অভিনয় করছেন, কে শোনে কার কথা ? লোকে এই মারে কি সেই মারে। এবার ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন কমঃ মন্টু দে, তার দুচোখে অঝোর জলের ধারা , কাঁপা কাঁপা হাত তুলে বললেন "আমার জীবনের সেরা পুরস্কার নিয়ে যাব আজ এই গ্রাম থেকে, লাল সালাম"। রাগে ফুঁসতে থাকা মানুষ গুলোর চোখ নরম হয়ে গেল এক নিমেষে, পেশিবহুল হাতগুলো সমস্বরে জবাব দিলো "লাল সালাম"। কী অদ্ভুত জাদু-মাখা দুটি শব্দ। মন্টু দের শেষ যাত্রার শরিক ছিলাম। বড় অনাদরে চলে গেল লোকটা, একটা লাল শালুও জুটলো না। শেষ দিন অবধি বামপন্থার প্রতি বিশ্বাসে অটুট ছিলেন।

    এবার কিছু অপ্রিয় সত্যের দিকে দেখা যাক। হঠাৎ করে সব হিসেব ওলট পালট হতে লাগল, সালটা ১৯৮৬, হোপ ৮৬ নামে একটি অনুষ্ঠান হয় যুবভারতী ময়দানে, সংস্কৃতির নামে বেলেল্লাপনার বোধহয় সেই শুরু। সাম্রাজ্যবাদ তার দুই প্রধান অস্ত্র পুঁজি আর সংস্কৃতিকে আগে পাঠায় আগ্রাসনে। পিছনে পিছনে নিজে আসে , দুই ফেউ এর আঘাতে ভেঙে পড়া জাতিকে দখল করতে সুবিধা বেশি হয়। নিছকই রণকৌশল। প্রসঙ্গে ফেরা যাক, এরপর থেকে দ্বিতীয় অস্তরটি তার কাজ শুরু করে দেয় এবং তা করলো একটি বামপন্থী দলের একাংশের তত্ত্বাবধানে। ঠিক এর পরপর সব জেলাগুলোতে, সি পি আই (এম) নেতৃত্বের একাংশের ইচ্ছায় এই সংস্কৃতি প্রসার লাভ করতে লাগল। এরা একটা গালভরা নাম ও দিলেন 'পপুলার কালচার' অর্থাৎ মানুষ কে দিশা দেখানো না, মানুষ যা চায় তার সাথে চলো। সেই পথ ধরে মানুষ যেদিন পরিবর্তন চেয়ে বসলেন, তখন অবশ্যই এরা আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু তখন একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো। সে কথা থাক, পপুলার কালচার প্রসারিত হলো। বিভিন্ন উৎসব হতে থাকল, তাতে দালাল সমাজ পুষ্ট হলো, সলিল চৌধুরীর নামাঙ্কিত মঞ্চে দালের মেহেন্দির প্রলয় নৃত্য হলো, বাপি লাহিড়ি, মিঠুনদা থেকে শুরু করে হালফিলের দেব-কোয়েল সবাই আছেন সেখানে, নেই শুধু আমাদের সেই কমরেডরা, আলোর রোশনাইতে ওরা একটু ফিকে দেখান যে। পপুলার কালচার পুড়িয়ে মারলো গণনাট্য সংঘকে , এটাই উদ্দেশ্য ছিলো।

    আজ এত বছর পরে সেই পুরনো মানুষগুলোর সাথে দেখা হলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। আজও কোনো অমোঘ বিশ্বাসে পতাকা টা আঁকড়ে ধরে আছেন, আমার বাবা মাও তাদের একজন। শেষদিন অবধি থাকবেন হয়তো। কিন্তু সবকিছু কি শেষ হয়ে গেছে ? তা তো হওয়ার নয়, মানুষের শ্রম নিঃসৃত সুর তো হারানোর নয়। সেই সুর সংগ্রহের কাজে আপনার হাতটা বাড়াবেন? পুঁজির সূর্য এখন মধ্যগগনে, আঁধার নামার আগে অনেকটা পথ পেরোতে হবে, জোরসে পা চালান কমরেড।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৪ জুলাই ২০১২ | ১০১৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গান্ধী | ***:*** | ২৪ জুলাই ২০১২ ০৫:৪৮90478
  • লেখাটা আগেও পড়েছিলাম। ভালো লাগলো খুব আবার পড়ে।

    গণনাট্য সংঘকে আমাদের প্রজন্ম দেখতে পায়নি।। এটা আমাদের বিরাট ক্ষতি।।। কিছু কিছু তখনকার গান যখন কোনো পুরনো কারোর মুখে শুনি। অদ্ভুত একটা ভালো লাগে।। তাই এই লেখাটা আরো ভালো লাগলো।।

    তবে হোপ-৮৬ থেকেই কি এর পিছনের সারিতে যাওয়া শুরু ??? মানে হয়না। সেটা আরো আগে থেকেই শুরু হয়েছে বোধহয়। তুমি আমার থেকে ভালো জানবে। এইটুকুতে কি মন ভরে ? আরো বেশি করে লেখো।
  • aranya | ***:*** | ২৪ জুলাই ২০১২ ০৯:৩৩90479
  • ভাল লাগল।

    একটা প্রশ্ন:

    ' সাম্রাজ্যবাদ তার দুই প্রধান অস্ত্র পুঁজি আর সংস্কৃতিকে আগে পাঠায় আগ্রাসনে। পিছনে পিছনে নিজে আসে , দুই ফেউ এর আঘাতে ভেঙে পড়া জাতিকে দখল করতে সুবিধা বেশি হয়। নিছকই রণকৌশল ' -

    এটা একটা কনস্পিরেসি থিয়োরীর মত লাগছে। এমন-ও তো হতে পারে যে সিপিএমের একাংশ ভেবেছিল পপুলার কালচার-কে ব্যাক করলে লোক টানা যাবে বেশি, ফলতঃ ভোট বেশি জুটবে, পাতি ভোটের অঙ্ক কাজ করেছে, সাম্রাজ্যবাদ-টাদ অত কিছু ফ্যাকটর না ?
  • anirban | ***:*** | ২৪ জুলাই ২০১২ ০৯:৫৯90480
  • কিন্তু আব ক্যা হোগা? রাজ্যপাট তো গেছে। আন্দোলনের পথে ফিরবেন? রিস্ক নেবেন? না পার্টির ইনার্শিয়ামাফিক চলবেন?
  • ranjan roy | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৩:১১90482
  • লেখাটা একটা পুরনো ঘা'কে খুঁচিয়ে তুললো। সেই সব দিন! গণনাট্য সংঘের " রাহুমুক্ত" যাত্রা। সেন্ট্রাল স্কোয়াডের " লং মার্চ", "হারানের নাতজামাই"-- পরিচালনায় জ্ঞানেশ মুখার্জী। কলাকার শাখার এবং কোতরং শাখার "কিমলিস"-- সমরেশ বসুর গল্প নিয়ে।
    কোথায় সেই সব দল, লোকজন, আজকের দিনের কথা বলা তেমন নাটক?
    বাংলার বাইরে বরং কিছু কিছু প্রচেষ্টা দেখি। ছত্তিশগড়ের রায়গড়, রায়পুর ও ভিলাইয়ে এঁদের নাট্যচর্চা অব্যাহত। কোলকাতা তিলোত্তমা হবার যাত্রায় এদের কোন খবর নেই।
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৩:৩৮90483
  • হারানের নাতজামাই কলাকার শাখাও করতো। আমাদের পাড়ায় একবার দূর্গাপূজোয় হয়েছিলো। আমাদেরই পাড়ার দাদা জয়ীদা নাতজামায়ের পার্ট করতো।
    জয়ীদার সাথে বাবার খুব বন্ধুত্ব। দুজনেই সিপিএম। আমি ৭২-এ কলকাতা ফেরার পর দেখি জয়ীদা পাড়া ছাড়া। ৭৭এ ফিরে এলেন। তখন তো আমরাও সিপিএমএর সাথে একসাথে লাড়াইয়ের স্বপ্ন দেখছি। জয়ীদা দেখা হলেই পিছনে লাগতো - কি কমরেড, বিপ্লব কদ্দুর? আমি যথারীতি লজ্জা লজ্জা করে পাশ কাটাতাম। একদিন ক্ষার খেয়ে পাল্টা বলেছি - বিপ্লব কি আদৌ হবে? জয়ীদা কেমন কেমন ম্রিয়মান হয়ে বল্লেন - আগে ভাবতাম আমি দেখে যাবো, এখন মনে হয় আমার জীবনে বোধ হয় হবে না। জয়ীদা প্রায় ২৫ বছর হলো অসময়ে চলে গেলেন। আজও কথাটা কানে বাজে - আমার জীবনে বোধ হয় হবে না।
  • Anirban | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৩:৪৩90484
  • ধন্যবাদ সকলকে , একটা অভিজ্ঞতা share করতে চেয়েছি শুধু , কল্লোল দার সাথে একমত , এই নিয়ে আগেও কথা হয়েছে , এটা নিয়ে আরো বিশদে লেখা উচিত যে ক্ষমতাহয়তো আমার এখন হবে না, বাবাকে বলব চেষ্টা করতে ।

    আর একজন বললেন রাজ্যপাট গেছে ইত্যাদি , তার সাথে এই লেখাটার যোগ নেই , লেখাটা শুরু করেছিলাম অনেকদিন আগেই , আর আমি অনেক দিন প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে যুক্ত নেই সুতরাং এই প্রশ্ন আমায় করে আর লাভ নেই ।
  • anirban maity | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৩:৪৮90485
  • অরণ্য
    দুটো পাশাপাশি চলতেই পারে কোনো দ্বিধা নেই তো।।।
  • গান্ধী | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৩:৪৮90486
  • অনিদা

    আর একটু বড় লেখো। আমাদের মত কমবয়েসিদের জানার জন্যঃ) - সৈকত
  • Anirban maity | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৩:৫৬90487
  • কল্লোল দা হারানের নাত জামাই কিছুদিন আগে সাম্প্রতিক শাখাও করেছে দমদম এর , এছাড়া দক্ষিন ২৪ পরগনার কিছু কর্মী মিলে নিজে দের উদ্যোগে হারানের নত জামাই তা চিত্ররূপ দিয়েছেন , আমি দেখে বেশ চমকেছিলাম , চেস্টা চলছে নিজেদের মত করে , আর এটাকে প্রধান অস্ত্র বলে কেউ ভাবছে না হয়ত ।
  • ডিডি | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৪:১৫90488
  • অদ্ভুত লাগে এটাও।

    এই আবেগে থরোথরো ইতিহাস, গাঁয়ের মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসা, খেটে খাওয়া লোকেদের সহজ আত্মীয়তাবোধ, কুশলীদের প্রানভরা নিষ্ঠা - এই সব, এই সবই এক ফুৎকারে উড়ে যায় ডালের মেহেন্দির নাচে ? এতোদিনের নিষ্ঠা, উৎসাহ, ভালোবাসার ব্যাপারটা ?

    গোড়াতেই একটা প্রচন্ড গলদ আছে কোথাও।
  • Anirban maity | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৫:০০90489
  • ডিডি

    একটু সরলীকরণ হয়ে গেল , ভাবনাতেই গলদ থেকে গেল যে
  • rajdeep | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৬:৩৪90490
  • অনির্বাণ - আরও ডিটেলে লিখুন ... লিখতে থাকুন
  • শুদ্ধ | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৭:২৩90491
  • "হঠাৎ করে সব হিসেব ওলট পালট হতে লাগল, সালটা ১৯৮৬, হোপ ৮৬ নামে একটি অনুষ্ঠান হয় যুবভারতী ময়দানে, সংস্কৃতির নামে বেলেল্লাপনার বোধহয় সেই শুরু। "

    এই লাইনটায় চোখ আটকালো। হঠাৎ? তা কি হয়? নাকি ভেতরে ভেতরে ক্ষয় হচ্ছিল অনেক অনেক দিন ধরেই? গণনাট্যের কথা লিখতে গেলে তো অনেক কথা চলে আসবে অনির্বাণবাবু। দেশের সেরা সেরা সাংস্কৃতিক কর্মীদের কারা ধরে রাখতে পারলো না? কারা নাটককে মৌরসীপাট্টা ভেবে বসলো? কারা ভেবে বসলো সংস্কৃতি শুধু বক্তৃতার আগে লোক জমাতে লাগে? কারা বলতে শুরু করলো শিল্পী আবার রাজনীতির কি বোঝে, বোঝে শুধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী? কোন সে এক মজুমদার মহাশয় যিনি অজিতেশ বন্দো-কে কি নাট্য করিতে হইবে শেখাচ্ছিলেন? কারা যেন 'On the cultural front'-এর লেখককে মদখোর, চরিত্রহীন ইত্যাদি বলে তাড়িয়ে দিল। কারা যেন নতুন নাটকের পুরোধা পুরুষ বিজন ভট্টাচার্য্যকে কত কি সব বলে-টলে ভাগিয়ে দিল। কারা যেন সলিলকে বুর্জোয়া করে দিল গানের জন্য! তারা কারা? তারা কমিউনিষ্ট মুভমেন্টে কি অবদান রাখেন? কিছু অনুগত স্তাবক বানানো আর জায়গায় জায়গায় লোক বসানো ছাড়া কি কন্ট্রিবিউশন তাদের?

    নাট্য অ্যাকাডেমি হালের বিষয় প্রায়- ছেড়ে দিন। কিন্তু কাদের অঙ্গুলিহেলনে- কে গ্র্যান্ট পাবে, কে হল এ সব ঠিক হত? কারা ঠিক করে দিত সোস্যাইটি অ্যাক্টে বিধিবদ্ধ দলকেও গ্রুপ থিয়েটারের তকমা দেওয়া হবে কি হবে না? সেই চার্ট তৈরী কোন কমরেডের হাতে থাকতো যিনি সরকারী ব্যবস্থাপনায় গ্রুপ সি স্টাফ হবেন-টবেন, অথচ তথ্য সচিবও তাঁকে না জিজ্ঞেস করে কাজ করতো না? কারা বলে দিত যে পকেট থেকে পয়সা দিয়ে নাটক করার জন্য সরকারী ট্যাক্সের খরচটুকুও বাঁচাতে দেওয়া হবে কি না দলগুলোকে? ভোটের আগে নাটক না করলে পার্টির, তারা জায়গা/ছাড় কিছুই পাবে না? তারা কারা? এই রাষ্ট্রীয় সহায়তাগুলো কি দলের বা ব্যাক্তির সম্পত্তি ছিল নাকি? নাকি যারা নাটক করে তারা সব ভিখিরি যে চাইতে হবে? তারা তাদের জীবনের কম কিছু ঢেলে, জীবনের তথাকথিত উন্নতিকে কম নষ্ট করে কাজ করেছে, যে ভিক্ষা চাইতে হবে?

    অনেকদিন আগে আইপিটিএ থেকেই কিছু মানুষ উদ্যোগ নিয়েছিল সিনেমার মতন শিল্পকে পার্টির মতাদর্শগত কাজে লাগানোর। সে কাজে যাঁরা উদ্যোগী তাঁদেরই কোন গণনাট্য সম্পাদক যেন প্রায় বালখিল্য বলে উড়িয়ে দিয়েছিল সিনে সেন্ট্রালের সভায়? যাকে উড়িয়ে দিয়েছিল সেই লোকটা তখন মরে গিয়েছে, কিন্তু তার ভাঁড়ারে ছিল যুক্তি তক্ক আর গপ্পো। সেই লোকটাকেই আবার অনেক অনেক আগে এই লোকটাই কাঠি দিতে গেছিলো। এক গায়ক কমরেড তাকে সিনেমা বানাতে টাকা দিচ্ছেন বলে সেই কমরেডকে দল বেঁধে অনুরোধ করে এসেছিল না দিতে টাকা। ওই যুক্তি তক্কের লোকটাই আবার জ্বালা,সেতু এসব নাট্য করেছিল এককালে। এই আইপিটিএ-র বাংলা শাখাই তার পুরস্কারও নিয়ে এসেছিল মহারাষ্ট্রের সন্মেলন থেকে। আজীবন ভেবে গ্যাছে এ সব নিয়ে। তাকে গলায় পা? এই সব কি হঠাৎ?

    একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যশিক্ষার কোর্সে নাট্যচর্চার জন্য যে ন্যূনতম পরিকাঠামো তা কারা হতে দেয়নি। লাইট থেকে ক্যামেরা সব নিজেদের সম্পত্তি ভেবে ছেলেমেয়েদের ব্যবহার করতে দেয়নি দিনের পরে দিন। কারা বলে যেত ভর্তি হতে গেলেও তাদের লোক হতে হবে? ইউনিয়ন রুমে বসতে হবে? কারা ওখানে দিনের পরে দিন অতি অযোগ্য হয়েও শিক্ষক, পার্শ্ব শিক্ষক হয়ে যেত? কোন ছাত্রকর্মীকে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হবার সুবাদে স্বর্নপদক পাইয়ে দেওয়া হত, যে ছাত্র কি না পারকার্সনিস্ট আর একটি তাল-ও ঠিক করে বাজাতে পারে না? কারা পুষতো সেই অধ্যাপককে, যিনি পাশ্চাত্য থিয়েটার পড়াতে গিয়ে উচ্চারণও করতে পারেন না দাঁতের দোষ থাকায়? আর পড়াতে পারেন না অতি কম পড়াশোনা নামে মগজের দোষ থাকায়? এঁদের যোগ্যতা একমাত্র বিশেষ ছাত্রদলের কর্মী হবার? দিনের পরে দিন ছাত্ররা ইউনিয়ন রুমে বসে থেকেই পরীক্ষা দেবার সুযোগ পেয়ে যেত, আর যে ছাত্রকে তার উপার্জন করে পড়তে হত, তাকে স্রেফ নিজেদের দলীয় অনুগামী ইয়েস স্যার নয় বলে, প্রথম বর্ষে সবচেয়ে বেশী নাম্বার থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে দিত না কক উপস্থিতি থাকায়? কারা তারা?
    কি হত উপস্থিতিতে? একটি কোর্স যা পড়াবার যোগ্যতা আদ্ধেকের বেশী শিক্ষকের নেই, একটি ব্যবস্থা যা নাট্য চর্চাকে শুধু পঙ্গু করছে, বড় নাট্য পরিচালকরা সেখানে শিক্ষক হয়ে গেলে, তাদের ধরে তাদের দলে গেলে তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কিছু হলেও হতে পারে। দাদা আর দিদি নির্ভর সংস্কৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি। চাবুক নাট্যকর্মী, ভাবুক নাট্যকর্মী বানানোর ফোরামে কারা সব আগাছা চাষ করলো? গণনাট্যর সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিল?

    হঠাৎ কি আর হয় অনির্বাণবাবু, হঠাৎ শুধু নজরে আসে অমনোযোগী চোখের। ওই যে বলে অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? প্রগাঢ় ভালবাসা থেকে লিখছেন যখন তখন আরো লিখুন, খতিয়ে লিখুন কমরেড। দলগত না, ভালবাসাগত কমরেডশিপ আমার আপনার সঙ্গে। লিখুন, ক্ষত আমাদের কতোটা গভীরে! গণ ছিল, নাট্যও ছিল। শুধু একদিন গণ, নাট্য থেকে হাঁটা দিয়েছিল, সে তো সাধ করে শুধু না। কল্লোলদা যেমন বল্লেন ওই ৬০-৯০ এর গেঁজে যাবার গল্পটা কেউ লেখে না। আপনি লিখলে উপকার হবে।

    We had lost the fight when it was about to begin!
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৮:১৭90492
  • আমার মনে হয় গণনাট্যের(IPTA) মোটা দাগে তিনটে যুগ আছে।
    প্রথম অবশ্যই ৩০ ও ৪০এর দশক। সম্ভবতঃ সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়। আমি প্রগতি লেখক শিল্পী সংঘকেও ধরছি।
    দ্বিতীয়, ৬০ থেকে ৭৭ খুব কঠিন সময়। ভাগাভাগি, রাষ্ট্রের দমন, উত্তাল গণ আন্দোলন আবারও ভাগ এবং অঘোষিত ও ঘোষিত জরুরী অবস্থা।
    তৃতীয়, ৭৭ থেকে ৯০। নতুন উদ্যম ও স্বপ্ন, হোপ ৮৬, পার্টির দম্ভ ও ক্ষমতার সাথে ওঠাবসা।
    এর পাশাপাশি ৬৭র নকশাল হয়ে যাওয়া অংশটির সাংষ্কৃতিক কার্যকলাপো উল্লেখযোগ্য। অবশ্য এরা ৬৭ থেকে ৭০ এরা বিপ্লবে ব্যাস্ত ছিলো। ৭০এর পর ভাবতে বসে - এ কী হলো। তারপর অনেকেই সামলে উঠে গান-নাটক-কবিতা-গল্প ইত্যাদি। এই পর্যায়টাও বেশ সৃষ্টিশীল। এটার নিয়েও লেখার/লেখানোর ইচ্ছে আছে।

    সাংষ্কৃতিক সংগঠনের ওপর পার্টি আমলাতান্ত্রিকতা চিরকাল ছিলো। চিরকালই নেতারা, সে যোশী সায়েব থেকে শুরু করে প্রমোদবাবু থেকে চারু-অসীম তারা ছড়ি ঘুরিয়েছে। তাতে যা ক্ষতি হবার হয়েছে। কিন্তু পার্টি ও রাষ্ট্রের প্রতিকূলতা পেরিয়ে বহু অমর সৃষ্টি উঠে এসেছে।
    সে সব উঠে আসুক - এটাই কামনা।
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ০৮:৫৫90493
  • শুভেন্দুদা(মাইতি)র সাথে কথা হলো। শুভেন্দুদা লিখতে রাজি। সামনে কয়েকটা মাস, একটু ব্যস্ত।
    এরপর গুরুচণ্ডা৯ ও অনির্বাণের দায়িত্ব। আমিও আছি।
    কিন্তু অনির্বাণ, তুমিও লেখো। তোমার দেখাটা আরেকটা দেখা। যে গণনাট্যের সাথে আছে কারন সে গণনাট্যের মধ্যে জন্মেছে। আমি একমাত্র শাবানার কথা জনি, যে বেড়ে উঠেছে বম্বে ইপ্টার কমিউনে। এই দেখাটার একটা আলাদা মূল্য আছে। ভিতরে বসে বাইরে থেকে দেখা।
    লেখো অনির্বাণ।
  • কা | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ১০:০৫90494
  • বিজন ভট্টাচার্য পার্টি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন একটি সুনির্দিষ্ট কারণে। নোয়াখালিতে দাঙ্গার সময় গণনাট্যের ট্রুপ নিয়ে গান্ধীর সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। পার্টি অনুমতি না দেওয়ায় বিজন ভট্টাচার্য ইস্তফা দেন। পার্টি সেই ইস্তফা কোনোদিন গ্রহণ করে নি।
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১২ ১২:৪৫90481
  • এই লেখাটা, একটা অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ লেখার ধরতাই মাত্র।
    অনির্বানের কাছে সেই বড় লেখাটা দাবী করছি।
    ৪০এর আইপিটিএ নিয়ে অজস্র কাজ হয়ছে। খুব ভলো কাজ আছে, এমনকি তখনকার আইপিটিএর কুশীলবদের নিয়ে আলাদা করেও। কিন্তু ৬০ থেকে ৯০ নিয়ে কোথাও কোন লেখা পাই না।
    সত্যি কথা বলতে কি, এই লেখাটার অধিকারী মানুষ অনির্বান ও শুভেন্দুদা।
    আমি শুভেন্দুদাকে বলবো। আমার প্রস্তাব গুরুচন্ডালীও কথা বলুক শুভেন্দুদার সাথে। উনি এখানে লিখলে, সেটা খুব বড়ো কজ হবে।
  • Anirban Maity | ***:*** | ২৬ জুলাই ২০১২ ০৪:৪৪90495
  • শুদ্ধ দা হ্যা প্রতিটা অভিযোগ সত্য সে তো সবাই জানে । আসলে গণনাট্য কে এত সহজে ব্যাখ্যাও করা যায় না । আমার বয়েসে পুরো ব্যাপারটাই আমারকাছে হঠাত থেকে ছিল । আমার তখন বড়জোর ৬/৭ বছর বয়েস , কিসের এত বিশ্লেষন করব ? তখন হিন্দী গান লুকিয়ে শুনতে হত আমাদের , একদিন দেখলাম সেই হিন্দী সব অবগুন্ঠন ঝেড়ে হঠাত আমার সামনে । এগুলো আচমকাই ছিল সব
  • কা | ***:*** | ২৬ জুলাই ২০১২ ০৮:৩২90497
  • বিজন ভট্টাচার্য গণনাট্য থেকে সরে আসেন ১৯৪৭-৪৮ সাল নাগাদ। তার আগের নাটক ছিল আগুন, জবানবন্দী, নবান্ন ইত্যাদি। মরাচাঁদ, দেবীগর্জন, গর্ভবতী জননী ইত্যাদি ক্যালকাটা থিয়েটার পর্যায়ের নাটক, অর্থাৎ ১৯৫০ সালের পরে। সাড়ে চুয়াত্তর ১৯৫৩ সালে। কাজেই যদি অভিযোগ করা হয়েও থাকে, তবে সেই অভিযোগ বিজনবাবু গণনাট্য থেকে বেরিয়ে আসার পরে।
  • শুদ্ধ | ***:*** | ২৬ জুলাই ২০১২ ০৯:০৫90496
  • এখন হোক অনির্বাণ, এখন হোক। এখন আপনার বয়স বেড়েছে, এখন দেখুন- লিখুন। অভিযোগ সত্য বলে সকলেই জানেন সেটাই তো আরো দূরবস্থা। শুধু অভিযোগ সত্য থেকে গেল, বিচার হল না।

    বিজনবাবু দল ছেড়েছিলেন (পার্টির মত অনুযায়ী ছাড়েননি) যে কারণে সেটার কথা বলা হয়, তার সঙ্গে এটাও তো লাগবে, বিজনের নাটক মা মা ভাবাক্রান্ত, বিজনের বড় ধর্ম ধর্ম ভাব, বিজনের ভাববাদ খুব বেশী। বিজন বখে গিয়েছে, সাড়ে চুয়াত্তর লেখে। এ সব কি আর বিজনের গায়ে লাগে না? এ সব কি বিজনকে সন্মান করে? প্রগতি লেখক সঙ্ঘ আর গণনাট্যের অন্যতম হোতা সরে গেলেন কেন? পার্টি কেন তাঁকে শিল্পীদের নেতৃত্বে আনতে পারলো না, এ সব বিচার না হলে যে হবে না। যে কোনো ক্ষেত্রেই মতাদর্শগত সংগ্রাম জরুরী। সেটা জে এন ইউ-এর চারটে চিঠি দিয়ে হবে না।

    আপনি যে পরিবারে আছেন সে পরিবারের অনেক অবদান আছে। অনেক কথা তাঁরা শুধু জানেন না, কাছ থেকে দেখেছেন। আপনিও হয়তো। তাই আপনার কাছেই দাবী করেছি। অবশ্য এ শুধু আমার দাবী মাত্র। আমার কাছে আজকেও নাট্য বা সিনেমা যা তা তো গণনাট্য না হলে হতেই পারতো না বোধহয়। :)
  • maximin | ***:*** | ২৬ জুলাই ২০১২ ০৯:২৫90498
  • আমার তো খুব ভালো লাগল।
  • কল্লোল | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১২ ০৫:১০90499
  • বিজন-ঋত্বিকের বেরিয়ে আসা বা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া বিষয়টা ঠিক ওরকম নয়।
    বহুদিন ধরেই এঁরা দুই কার্ল, ইয়ুং ও মার্ক্স মেলানোর প্রকল্পে। ইয়ুংএর সামুহিক অবচেতন ও আর্কেটাইপ নিয়ে এঁদের দুর্বলতা অতিকথায় পরিণত। ওঁরা মার্ক্সের শ্রেণী সচেতনতার পরিপূরক হিসাবে সামূহিক অবচেতনকে তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন। এঁরা ঠিক না ভুল তা নিয়ে কোন মতামত দেওয়া আমার পক্ষে ধৃষ্টতা। কারণ, মার্কসবাদ যাওবা কিছুটা পড়েছি, অনুশীলন করেছি, ইয়ুং একেবারেই খামচে পড়া, তাও ঋত্বিক-বিজনের লেখা পড়ে বুঝতে চাওয়া। ইয়ুংএর কোন লেখাই আমি পড়িনি।
    সে যাই হোক। এ বিষয়টি তখনকার সাংষ্কৃতিক নেতাদের পছন্দ হয় নি। সুধী প্রধানের লেখায় এর উল্টো দিকটা আছে। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে, এঁদের সাথে তাত্ত্বিক বিতর্কে যাবার সাহস তখন কারোরই ছিলো না। তাই ঋত্বিক মাতাল ও মা-মা, বিজন মা-মা টাইপ বলে বিদ্রুপ করা হতো। এই তথ্যগুলোর কোন সূত্র দিতে পারলাম না। কারন, এগুলো ভুক্তভোগী দুজনের মুখেই শোনা। তাতে নিশ্চই বায়াস আছে। তাই সুধী প্রধানের লেখাও দেখতে বললাম।
  • শুদ্ধ | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১২ ০৬:৪৭90500
  • কা, খেয়াল করছেন কি যে আপনিই বললেন পার্টির মতে বিজনবাবু পার্টি ছাড়েননি? তাহলে গণনাট্য ছাড়া আর পার্টি ছাড়া এক না নিশ্চই? আমি কোথাও বলিনি যে গণনাট্য করার সময়েই 'মা মা' অভিযোগ ইত্যাদি এসেছে। যে অভিযোগ এসেছে সেটার কথাও লিখি। মানে আমার যা জানা। গান্ধীর নোয়াখালি যাত্রার সঙ্গী হওয়া নিয়ে অভিযোগ এসেছে যে বিজন চিরকালই গান্ধীভক্ত, আনন্দবাজারের আগে তো কংগ্রেসই করতো। তাই তাঁর শ্রেণীসংগ্রামে আস্থা নেই। দোলাচলচিত্ত কমরেড বিজন। পার্টির ক্যুইট ইন্ডিয়া বয়কট বিজন মানতে পারেননি বলেও শুনেছি। সে নিয়েও সমস্যা ছিল। তখনো অভিযোগ বিজন কংগ্রেসপ্রেমী। কিন্তু মোদ্দা অসুবিধে হচ্ছে এর লিখিত কোনো প্রমাণ নেই। শোনার কথার উপরে কথা বলতে হয়। এগুলো তো পরিস্কার হওয়া চাই।

    বিজনবাবু তো কংগ্রেস করতে চলে যাননি। তা কল্লোলদা যেমন লিখলেন ইয়ুং-মার্ক্স বা আমি আরো লিখি পিসি-র লাইনে কালচারাল ফ্রন্ট এইসব ঠিক কি না সে নিয়ে বিতর্ক না করে কেন এই সব কথা বলা? যাঁরা বলছেন তাঁরা ডিবেট করলেন কোথায়? গণনাট্য ছাড়ার পরেও সবটা নিয়েই ডিবেট করলে তো এমন হতেও পারতো যে বিজন আবার ফিরলেন? আমি সে সবই বলতে চেয়েছি। তবে লেখাটা একটানে বলে আগের বারে খুব পরিস্কার যে তার ব্যাখ্যা হয়েছে তাও না।
  • Anirban maity | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১২ ০৭:০৩90501
  • বামপন্থীদের কিছু সংকীর্ণ মানসিকতা এই দুর্ভাগ্য গুলোর কারণ , এরকম অনেক হয়েছে , আরও হবে , আসলে সংস্কৃতি নিয়ে কোনো সুস্থ দিকনির্দেশ কখনই ছিল না , আমাদের রাজনীতিক রা ভাবেন এটা একটা বাড়তি বোঝা , ও মিটিং এর আগে লোক জোগার করার জন্য গণনাট্য আছে, থাকবে , আর এই ধারনাটাই অসহ্য, কেউ বোঝার এ চেষ্টা করে না সনস্কৃতি ঠিকই কত বড় অস্ত্র । বোধ হয় বোঝার জন্য যে মেধা দরকার সেটা নেই , কল্লোলদার বইটাতে এরকম কিছু আক্ষেপ এর কথা পড়েছি, মেধাহীনতা সব অঘটনের মূলে
  • কল্লোল | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১২ ০২:৩৮90502
  • সংষ্কৃতি নিয়ে কিছু কাজ হয়েছিলো পি সি যোশীর আমলে। কিন্তু পিসির ভাবনা চিন্তায় র‌্যাশনালিটির অভাব ছিলো। হেমাঙ্গদার কাছে শুনেছি, কমিউনিষ্ট পার্টির বাইরের শিল্পীদের সৃষ্টিছাড়া গুরুত্ব দিতেন।
    একবার, বোধ হয় ইপ্টার বম্বে কনফারেন্সে রবিশংকরকে নিয়ে এলেন কমিউনে। সেখানে হেমাঙ্গদা, সলিল চৌ, ওমর শেখ, মকদুম মহীউদ্দিনদের বলেছিলেন, তোমরা এঁর পায়ের কাছে বসে সঙ্গীত শেখো।
    সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবে রবিশংকর পৃথিবীর অন্যতম সেরাদের একজন, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু যাঁরা আন্দোলনের সাথে থেকে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঐ মাপের শিল্প সৃষ্টি করছেন, তাঁদের সৃষ্টিকে এভাবে উপেক্ষা করার অধিকার পিসির কেন কারোরই নেই।
  • Anirban maity | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১২ ০৩:৫৪90503
  • একদম সহমত কল্লোলদা , এটাই হয়ে এসেছে , যেহেতু সংস্কৃতি নিয়ে কোনো ধারনায় নেই এই মানুষগুলোর এরা তুলনামূলকভাবে পরিচিত মুখগুলো কেই গুরুত্ব দিয়ে বসেন , বোঝেন না শিল্পীর ও শ্রেণীভেদ থাকে , তাদের থাকে শ্রেনীর লড়াই ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন