এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • বাজি-বেত্তান্ত

    তাপস দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ৩৪৪১ বার পঠিত
  • দিওয়ালি কাকে বলে জানা ছিল না। দীপাবলি শব্দটাও ছাত্রবন্ধু তেই পড়া ছিল শুধু। পুজো বলতে বয়রা কালী।

    সত্তর সালের শেষাশেষি ধরাধামে আসা, জন্মের পরপর ই চলে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গে। কালিয়াগঞ্জ জায়গাটা তখন ছিলো পশ্চিম দিনাজপুরে। এখন যেটা দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর। নিকটবর্তী শহর বলতে রায়গঞ্জ (নামেই মালুম, সেটাও গঞ্জ বিশেষ) আর বালুরঘাট। ছোট একটা জনপদ বাঘন নামে, কালিয়াগঞ্জ থেকে বেশ কিছু মাইল দূরে, সেখানেই বাবার অফিস। সাইকেলে যাতায়াত করতো। পরিবেশবান্ধব মানুষ ছিলো বলে সাইকেল, এরকম কিছু নয়। যাতায়াতের খরচ বাঁচানোর জন্য। নাগাড়ে বহু কিলোমিটার সাইকেল মেরে যে পয়সাটা বাঁচতো তা দিয়ে সপ্তাহান্তে দুই ছেলের জন্য আঁশ টা ফল টা।

    কালিয়াগঞ্জের একটা প্রান্ত দিয়ে গিয়েছিলো বড়ো বাস রাস্তা। ওই রাস্তায় দৈত্যের মতো ছুটতো দূরপাল্লার বাস আর লরি। কলকাতার সাথে শিলিগুড়ির সংযোগ রক্ষাকারী প্রধান সড়ক । সেখান দিয়ে যেত রকেট বাস! এসপ্ল্যানেড থেকে ছেড়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার দ্রুততম বাস। মাথায় নীল আলো জ্বলতো তার, গদির সিট, সে বাসের ঠাটঠমকই আলাদা। কলকাতা থেকে কালিয়াগঞ্জ আসতাম দার্জিলিং মেলে, প্রায়শই আনরিসার্ভড কামরায়, ক্বচিৎ স্লিপারে। গদিওয়ালা যানবাহনে বসি ই নি কখনো! অহংকারী রকেট দেখতে বাবার সাথে গিয়ে ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। হুশ করে বিদ্যুতের মতো বেরিয়ে যেত চোখের সামনে দিয়ে।

    `বাবা একবার রকেট বাস চড়াবে?'

    লোকটা বেচারা মন রাখা মিথ্যে বলতে পারতো না কোনোদিন। চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতো। তারপর তার সাইকেলের রডে বসে বাড়ির দিকে রওনা দিতাম। স্কুলপাড়ায় বাড়ি ছিলো, ভুশুন্ডির মাঠের শেষপ্রান্তের মাটির বাড়িটা। খড়ের চাল। পাশে তিনঘর স্কুল কোয়ার্টার।

    সেই বাসরাস্তা থেকে একটু ঢুকে কালীমন্দির। নাকি ভীষণ জাগ্রত দেবী। বয়রা কালী। ভীষণদর্শনা। বয়রা মানে কালা, বধির। কালাই যদি হলেন তাহলে ভক্তদের প্রার্থনাই বা শুনতেন কি করে, আর না শুনলে পূরণ ই বা করতেন কি করে? তা'লে জাগ্রত হলেন কি করে রে বাবা! ইত্যাকার প্রশ্ন মনে ঘুরতো, কালীবাড়ির এক পুরোহিত কে জিগেস করায় তিনি বলেন মা'র তো ওটাই মাহাত্ম! ভক্তের অন্তরের চাহিদা বুঝতে পারেন, শোনার দরকার পড়ে না। ক্লেয়ারভয়েন্স, টেলিপ্যাথি এসব শব্দ শুনি নি তখনো, মাদাম ব্লাভাৎস্কির নাম ও না। শুনলে জানতে পারতাম যে একই গল্প ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন দেশ সমাজ ও কালে, ভক্তদের মস্তকধৌতির জন্য এইসব সিদ্ধাই এর প্রচার বড়ো প্রয়োজন।

    তবে সেই করালবদনী মূর্তি দেখে ভয় পেতাম। মন্দিরের সামনে হাড়িকাঠ। একের পর এক বলি হতো। পাঁঠাবলির পর বলির রক্ত গায়ে মাখতো দুধসাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা `বিশেষ' ভক্তরা। তারা সেভাবেই নকশাল তরুণদের রক্ত ও গায়ে মেখেছিলো। যদিও বাবা রাজনৈতিক ভাবে অন্য বামদলের কর্মী ছিলো, সেই তরুণদের অনেকে বাবার ভাইয়ের মতোই ছিলো। ফলে তাদের রক্তের ঋণ বাবাও মিটিয়েছিলো কিছু সত্তরের দশকে - সেই বিশেষ কালী ভক্তরা বাবাকে যথেষ্ট সমঝে চলতো তাই। যদিও কাটে কাটে লেগে গেলে কে কার মাথা আগে নাবাবে তা বলা অত সহজ ছিলো না। থাক সে সব রক্তাক্ত অধ্যায়। এখনকার পলিটিক্যালি কারেক্ট দুধেভাতে জনগণের সেইসব ঝোড়ো দিনের মানে বোঝার ক্ষমতা নেই। ফলে সে আলোচনায় না যাওয়াই ভালো।

    পাঁঠা বলি ছাড়াও পাখি বলি হতো। মুরগী। সেইসব বিশেষ ভক্তরা মদের ঘোরে লাল চোখ, অনেক সময় হাতেই বলি দিতো। হাত দিয়ে পেঁচিয়ে মুরগির মাথা ছিঁড়ে এনে রক্তটা ঢালতো গায়ে মাথায়। তার সাথে মা মা রবে হুঙ্কার।

    কালীপুজোয় জ্বালানোর বাজি ফুলঝুরি, ফাটানোর বাজি ক্যাপ - এই ছিলো Das Capital - অর্থাৎ বিনয় দাসের বাজেট। ক্বচিৎ বিনয়ের ব্যাটার কপালে দু একটা রংমশাল জুটে যেত - সেই বছর গুলোতে যে কি আনন্দ! বিনয়ের ব্যাটা তাপস আনন্দে ডিগবাজি খেত তখন।

    ফুলঝুরি বলতে সাধারণ ফুলঝুরি ই। রঙিন বা ইলেকট্রিক ফুলঝুরি তখনো বাজারে আসেনি। ক্যাপ ছিল দুরকম - পাতা ক্যাপ (বা রোল/রিল ক্যাপ) যেটা এখন পাওয়া যায়, আর টিপ ক্যাপ - অর্থাৎ আলাদা আলাদা ক্যাপ একেকটা। বারুদের দানাটা কপালে পরার টিপের মতো গোল লাল দুটো কাগজের মাঝে লাগানো থাকতো, তাই ওই নাম। বন্দুকে ফাটালে একটা একটা করে টিপ ক্যাপ লাগিয়ে ফাটাতে হতো। রোল ক্যাপ এর দাম অনেক বেশি ছিলো। ক্যাপ ফাটানো হতো বিভিন্ন ভাবে। নখ দিয়ে টিপ ক্যাপের একটা কোনা ধরে নখের ওপর ক্যাপের টিপটা নিয়ে দেওয়ালে নখ ঘসে ফাটানো টা ছিল যাকে বলে ফ্রী-হ্যান্ড ফাটানো - অর্থাৎ কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট লাগতো না। ইনস্ট্রুমেন্ট বলতে ক্যাপ ফাটানোর বন্দুক ছাড়াও আরেকটা জিনিস বিক্রি হতো - আমরা সেটাকে ক্যাপ-বল্টু বলতাম। নাট বল্টুই প্রকৃত প্রস্তাবে। সেখানে নাট আর বোল্টের মাথার মাঝখানে টিপ ক্যাপ রেখে মাপমতো টাইট করে (বেশি টাইট মারলে চাপে ফেটে যাবে) দেওয়ালে বা মেঝেতে ছুঁড়ে মারলে ক্যাপ টা ফাটতো। ক্যাপ-বল্টুর পেছনে অনেক সময় প্ল্যাস্টিকের তৈরী, ওই তীরের পিছনে যেমন পালক থাকে, সেরকম নীল রঙের লাগানো থাকতো, বা সবুজ।

    ফুলঝুরি আর ক্যাপ ফুরিয়ে গেলে প্যাঁকাটি গুলোই জ্বালাতে থাকতাম, আর ফুলঝুরির বাক্স গুলো ও, যতক্ষন না মা কান পেঁচিয়ে দুটো থাবড়া মেরে ঘরে তুলে নিয়ে যেত হিম পড়ছে বলে।

    কলকাতায়, অর্থাৎ আড়িয়াদহ এসে থাকতে শুরু করি ঊনআশি সাল থেকে। সেই বিখ্যাত ১ নং হরিচরণ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি, যার গল্প কখনো শেষ হবে না। সেখানে এসে একটু ডাঁটো হওয়ার পর, এই মাধ্যমিক দেওয়ার আগে আগে যতদূর মনে পড়ে, নাকি ক্লাশ এইট হবে, বাজি বানাতে শুরু করলাম বাবার গাইডেন্সে। প্রথম প্রথম বাবাই বানাতো, আমি আর ভাই দেখতাম, পরে একসাথে তিনজনে। প্রধানতঃ বসন তুবড়ি, এক ছটাক আর আধ ছটাক খোলের। বার কয়েক রংমশাল। উড়োন তুবড়ির তীব্র বিরোধী ছিল বাবা, কখনো বানাতে দেয়নি, লোভীর মতো পাড়ার দাদাদের উড়োন তুবড়ি ছাড়া দেখতাম - ওঃ! সে এক শিল্প বটে! সিকি ছটাক বা তারচেয়েও ছোট খোলের উড়োন তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে উল্টো করে ধরা, অর্থাৎ আগুন লাগানোর ফুটোটা নিচের দিকে। সেই ফুটোয় প্রেমিকের চুম্বনের মতো আলতো করে জ্বলন্ত ধূপকাঠি ছোঁয়ালেই ছির ছির করে রুপোলি-সাদা রঙের (উড়োনে প্রধানতঃ এলুমিনিয়াম চুর দেওয়া হয়, তাই সাদা আলো) হালকা আগুন বেরোতে শুরু করবে - তখন দু আঙুলে ধরা উড়োন কে বার আড়াই সমান্তরাল ঝাঁকিয়ে, আগুনের ফোর্স হিসহিস করে বেরিয়ে এলে হাত এক পাক বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে তুবড়ি টা ছেড়ে দিতে হবে। ওই হাত ঘোরানোটার মধ্যেই আসল ওস্তাদি। অতি সামান্য এয়ারোডিনামিক্যাল ভুলচুকেই উড়োন হয় মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে ঘাড় নড়বড় করতে করতে এর লুঙ্গি ওর শাড়ির তলায় ঢুকে অসভ্যতার চেষ্টা করবে, অথবা ভসভস করে আওয়াজ তুলে খুব সামান্য উচ্চতায় উঠে কয়েকটা বড়ো বড়ো কিন্তু অসম ব্যাসার্ধের ভাঙা বৃত্তে ঘুরে জ্বলে শেষ হয়ে যাবে। ওস্তাদের হাতের তুবড়ি সোজাআআ উঠে যাবে ওপরে রুপোলি - সাদা আলোর লেজ নাড়াতে নাড়াতে।

    উড়োন তুবড়ি ছাড়তে স্কিল লাগে।

    তবে উড়োন বেশ বিপজ্জনক ও বটে। ভীমবেগে নেবে আসা আংরা হয়ে যাওয়া খোল মাথায় পড়লে পিতার নাম তৎক্ষণাৎ পরিবর্তিত হয়ে খগেন্দ্রনাথ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, এভিডেভিট ছাড়াই। ফলে কালক্রমে উড়োন তুবড়ি কে বেআইনি করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে বেশ কিছু বছর উড়ন তুবড়ি বিক্রি হতো না, যারা ছাড়তো তারাই বানিয়ে নিতো। পরে আস্তে আস্তে তাও বন্ধ হয়ে যায়। উড়োন তুবড়ি বর্তমানে, আরো অনেক বাজিরই মতো, ম্লেচ্ছ ভাষায় , যাকে বলে এক্সটিংক্ট।

    কিন্তু ছুঁচো কোয়াসি-এক্সটিংক্ট গ্ৰুপে পড়ে। ছুঁচোবাজি কে তাবৎ বাঙালি চেনে, টেনিদার ঝাউবাঙলোর রহস্য তাকে অমর করে রেখেছে। ফলে ছুঁচোর বিস্তৃত বিবরণ দেওয়ার মানে হয়না এখানে। ছুঁচোবাজি তে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে, সম্ভবতঃ উড়োন তুবড়ির থেকেও বেশি। এবং ছুঁচো বানানো যেত সবথেকে সস্তায়, একমাত্র মশলা ছাড়া আর কিছুরই প্রয়োজন পড়তো না সে অর্থে, সে মশলার কম্পোনেন্টের সংখ্যাও যৎসামান্য। ফলে ছুঁচো প্রকৃতই প্রলেতারিয়েতের বাজি ছিলো। তাকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে অনেকদিন আগেই। কিন্তু বিপ্লবের মতো (আমরা ত্রিপুরার রাজ পরিবারকে নিয়ে আলোচনা করছি না এখানে) ছুঁচোবাজিরও মৃত্যু নেই! বাজারে হাজারটা বাজি আছে যেগুলো প্রকৃত প্রস্তাবে ছুঁচো বাজি ই। ছুঁচোর মশলার প্রধান বৈশিষ্ট হলো তা কেওটিক মোশনের ট্রাজেক্টরি (অনির্দিষ্ট/বে-আন্দাজি গতিপথ) তৈরী করে। সুতরাং যে সমস্ত ফ্যান্সি বাজি আমরা দেখি যার পলতেয় আগুন দিলে এদিক ওদিক যায়, সেগুলো আসলে ছুঁচোর মশলা দিয়েই তৈরী, মশলার কম্পোনেন্টের ভাগে সামান্য রকমফের থাকে - এই মাত্র।

    বিলুপ্ত অথবা লুপ্তপ্রায় প্ৰজাতির বাজির কথাই যখন উঠলো, তখন কিছু সেই ধরণের বাজির উল্লেখ করা যাক, আমার বসন তুবড়ি বা বসা তুবড়ি বানানোর গল্প তার পরে আসবে। ট্রেন বলে একধরণের বাজি ছিল। চতুস্কোণ মোটা কাগজের খাপের মধ্যে বাজির মশলা ভর্তি চোঙাকৃতি দুটো প্রকোষ্ঠ থাকতো। সলতের একদিক একটা প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে অন্য প্রকোষ্ঠে ঢুকে যেতো। সলতের অন্যমুখ বেরিয়ে থাকতো ওপরের প্রকোষ্ঠ থেকে, তাতে আগুন দিতে হতো। আরেকটি ফাঁকা প্রকোষ্ঠ সিলিন্ড্রিক্যাল, সেলাইয়ের সুতোর রিলের মতো, বারুদ ভর্তি দুটো প্রকোষ্ঠের ওপরে থাকতো। অর্থাৎ তিনটে সিলিন্ড্রিক্যাল চেম্বার, সবার ওপরের টা ফাঁপা আর নিচের দুটো মশলা ভর্তি, পরপর একটার ওপরে আরেকটা রেখে সেট করা থাকতো রেকট্যাংগুলার প্যারালেলপিপেড একটা কাগজের বাক্স তে, সাইজে যা কিং সাইজ সিগারেটের প্যাকেটের অর্ধেক। এই বাজি পোড়ানোর জন্য বিস্তৃত জায়গা চাই - মাঠে কাপড় শুকোনোর দড়ি টাঙানোর বাঁশ পোঁতা থাকতো অনেক বাড়ির সামনের খোলা জমিতে, সেই বাঁশদুটো আদর্শ এ ক্ষেত্রে। একটা সুতো ট্রেনবাজির ফাঁপা সিলিন্ডারের মধ্যে দিয়ে গলিয়ে দুদিকের বাঁশে বেঁধে দিতে হবে। পলতেয় আগুন দিলে শোঁওও করে আওয়াজ করে ট্রেন দৌড়োতে শুরু করবে সুতোর ট্র্যাক বরাবর। একটা মশলার প্রকোষ্ঠ পুরোটা পুড়ে গেলে সলতে দিয়ে আগুন চলে যাবে অন্য প্রকোষ্ঠে, আবার উল্টোবাগে শোঁ করে ফিরে র আসবে সুতোর ট্র্যাক বরাবর। আমার দারুন লাগতো এটা। তবে সুতো বেঁকে গেলে বা ঢিলে হয়ে ঝুলে গেলে সলতের আগুন সুতোয় লেগে সুতো পুড়ে যাবে, এবং ট্রেন বাবাজি সুতো খুলে মাটিতে অবতরণ করে ইতঃস্তত বিচরণ শুরু করবেন। দর্শকগণ তখন লুঙ্গি বা শাড়ির ঘের সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন।

    তারপর সাইরেন। ছোট্ট চোঙ্গাকার টিনের কৌটোয় মশলা থাকতো। বাইরে যথারীতি রাংতার মোড়ক। পলতেয় আগুন দিলে বাজিটা উর্ধমুখী প্যাঁচানো পথে (আপওয়ার্ডলি ডাইরেক্টেড স্পাইরাল ট্র্যাজেক্টরি) উড়ে যেত তীব্র আওয়াজ করে। কি মশলা থাকতো খোদায় মালুম, আওয়াজ বেরোতো অবিশ্বাস্য রকমের তীক্ষ্ণ - তাই নাম সাইরেন। এটা বহুকাল হলো উঠে গেছে।

    লঙ্কাপট্কা/কালিপটকার ছোট ভাই ছিলো ধানি পটকা, আড়ে দীঘে লঙ্কাপটকার অর্ধেক মাপের, বেগুনি রঙের কাগজে মোড়ানো থাকতো, ধানী লঙ্কার রঙের। তাই এই নাম। ছিল চকোলেট বোমের ছোটভাই আলুবোম, রাংতার বদলে বেগুনি রঙের ঘুড়ির কাগজে মোড়া। ভুঁইপটকা ছিল দেওয়ালে বা মেঝেয় ছুঁড়ে মারার জন্য - জোর আওয়াজ। কম্বাশন বাই প্রেশার, অর্থাৎ ভুঁইপটকা আর পেটোর মশলায় তফাৎ ছিলো না কোনো, পুলিশ তাই বেআইনি করে দেয়। এবছরে, আশ্চর্য, আবার সেগুলিকে বাজারে দেখছি, তা প্রায় তিরিশ বছর বাদে। চপেরই মতো, পেটো ইন্ডাস্ট্রিও কি কুটির শিল্প হিসাবে সরকারি তকমা পেলো তাহলে?

    পরে বাজারে আসে দুলালের চকলেট বোম, কিন্তু বুড়িমার পেডিগ্রিই ছিলো আলাদা। খুব সম্ভব তিন রকম সাইজের (সুতরাং আওয়াজের) হতো। চকলেট বোম হাতে ধরে ফাটানোর একটা কায়দা আছে (খবরদার ভুলেও কেউ আমার লেখা পড়ে এ কাজ করতে যাবেন না!), পলতের ঠিক বিপরীত দিকটা তর্জনী এবং মধ্যমার নখ দিয়ে চেপে ধরে হাতটা দূরে বাড়িয়ে আগুন দিতাম। মশলার বার্স্ট সামনের অর্থাৎ পলতের দিকে হতো, রাংতা, সুতলির বাঁধন সমস্ত উড়ে ছেৎরে ফাঁক হয়ে যেত, কিন্তু বিস্ফোরণের ইম্প্যাক্ট পলতের উল্টোদিকের অংশে ততটা পড়তো না, সেই দিকটা অক্ষতই থাকতো। ফাটা চকোলেট বোমের অবশেষ যদি হাতে তুলে কখনো খুঁটিয়ে দেখেন (সেভাবে দেখেই হাতে ধরে বোমা ফাটানোর স্ট্র্যাটেজি মাথায় এসেছিলো আমার), তাহলে কি বোঝাতে চাইছি সেটা পরিষ্কার হবে আরো। একই ভাবে দোদোমাও আঙুলে ফাটানো যায় (উঁহু, একদম সে চেষ্টা করবেন না!), নলটার নিচের ফুটোয় কড়ে আঙুল ঢুকিয়ে সলতেয় আগুন দিলে প্রথম আওয়াজ তার পরেই টানের চোটে আঙ্গুল থেকে ছিটকে ওপরে উঠে যাবে, তারপর দ্বিতীয়বার ফাটবে আকাশে।

    চকোলেট বোম দোদোমা এঁরা স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু বিলুপ্ত হয়েছেন এনাদের বড়দা বড়দি - বোতল বোম আর নারকেল বোম। নামেই মালুম তাদের দুজনকে দেখতে কেমন ছিলো। বিশাল আকার, বিকট আওয়াজ। বোতল বোম একবারে একটাই ফাটানো হতো। কিন্তু বেলুড়ের দিকে কোথাও একটা, খুব সম্ভবতঃ দোলমঞ্চে, নারকেল বোম একটার সাথে একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে বেঁধে এমনভাবে, যাতে একটা ফাটলে সেই আগুনে পরেরটার পলতে জ্বলে ওঠে, সেভাবে সাজিয়ে ফাটানো হতো। গঙ্গার এপারে বসে আমরা রাত্রে মুহুর্মুহু কামান গর্জনের আওয়াজ পেতাম।

    এই কামান গর্জন নিয়ে এক কিস্যা আছে। ১ নং হরিচরণ চ্যাটার্জির বাড়ির সামনে বেশ বড়ো মাঠ ছিলো। বাড়ির বাইরে একটা পাড় বাঁধানো পাতকুয়া। পাতকোর মুখ ঢাকা থাকতো কাঠের তক্তা দিয়ে, যাতে জলে নোংরা না পড়ে। এক কালীপুজোর রাত্রে, পাড়ার সবাই যখন বাজি ফাটিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকে গেছে, পরীক্ষামূলক ভাবে আমি পাতকোর ভেতরে চকোলেট বোম ফেলেছিলাম, ফেলেই দ্রুত তক্তা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। সলতেটা কেটে ছোট করে নিয়েছিলাম যাতে জল ছোঁয়ার আগেই আগুন মশলায় পৌঁছোয়। কুয়োর বায়ুস্তম্ভের অনুরণন (যাঁরা উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন তাঁরা ওপেন পাইপ ক্লোজ্ড পাইপের একুস্টিক ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন) দলমাদল আর জাহানকোষা বা বোধহয় একদম দার্দানেলিস ক্যাননেরই মতো গর্জন করে উঠেছিলো বোমটা ফাটায় - সারা পাড়ার লোক বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো - ভেবেছিলো বোধহয় আবার স্পুতনিক ভেঙে পড়লো - এবং আমি তৎক্ষণাৎ পাঁচিল টপকে পিসির বাড়ি (পাশাপাশি বাড়ি ছিলো) লম্বা দি। ধরতে পারলে আমার ছফুটিয়া পিতৃদেব আমার রক্তে হোলি খেলতেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিলো না। পরের দিন বাড়ি ঢুকেছিলাম বাবা অফিস বেরিয়ে গেলে।

    তুবড়ি প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। মশলা বলতে সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট), গন্ধক আর কাঠকয়লা। আদর্শ কাঠকয়লা হবে, ফারসীতে যাকে বলে, নিম-তর্-নিম-খুশক, অর্থাৎ পুরো ভিজেও না (গুঁড়ো হবে না) পুরো শুকনো ও না (গুঁড়ো অর্ধেক উড়ে চলে যাবে), এরকম। সোরা প্রচন্ড হাইগ্রোস্কোপিক, সাবধানে রাখতে হতো ময়েশ্চার বাঁচিয়ে। গন্ধক নিয়ে কোন সমস্যা নেই। মালমশলা কিনতে পাওয়া যেতো আড়িয়াদহ সখের বাজারে দশকর্ম ভাণ্ডারে (দোকানটা, কি আশ্চর্য, এখনো টিকে আছে এবং ভালোই বিক্রিবাটা হয় আধুনিক মল মূত্রের প্রতিযোগিতার চাপ সামলেও), কিনে তারপর হামানদিস্তার গুঁড়ানো (আমার ঠাকুমার ছোট বোনের, মিউনিসিপ্যালিটি ইস্কুলের দুঁদে বড়দিমনি ছিলেন যিনি, তাঁর পান ছেঁচার হামানদিস্তয় কাঠকয়লা গুঁড়ো করেছিলাম একবার। তারপর কি হইয়াছিলো তাহা শ্যামলাল জানে...) এবং মিহিস্য মিহি করে ছাঁকার পালা। কাঠকয়লা গুঁড়ো করতে ভূত হয়ে যেতাম। গুঁড়ো হলে তার সাথে যাবে লোহাগুঁড়ো (হলদেটে রঙের ফুলকি হবে) আর এলুমিনিয়াম গুঁড়ো (সাদা সাদা ফুল হবে)। পয়সা থাকলে (আমাদের ছিলো না) তার সাথে যাবে স্ট্রনশিয়াম (লাল আলো) আর ব্যারাইটা (সবুজ আলো)। এবারে মেশানোর পালা, কোনটা কি ভাবে মেশানো হবে কোন রেশিও প্রপোরশনে, সেটা খুব সাবধানে ছোট্ট দাঁড়িপাল্লায় (এক পরিচিতর থেকে গয়নার দোকানের দাঁড়িপাল্লা ধার করে আনতাম) মেপে মেপে করতে হতো - ভাগ ভুল হয়ে গেলে মশলা তীব্র বিস্ফোরক হয়ে যাবে। প্রতিবার তুবড়ি বানানোর পর প্রথমটা বাবা জ্বালাতো আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়ে, যাতে ফাটলে নিজে মরে (এক ছটাকের মোটা মাটির খোল মশলা শুদ্ধ ফাটলে সেটার এক্সপ্লোসিভ ইমপ্যাক্ট পেটোর চেয়ে বেশি তো কম নয়), সন্তানের কোনো ক্ষতি না হয়। মশলা ভাগ হয়ে গেলে এবারে ঠাসার পালা। মাটির খোল গুলো একটা গোটা দিন জলে ভিজিয়ে দেখে দেওয়া হতো, তারপরে শুকিয়ে নেওয়া হতো। সামনের ছিদ্র (যেখানে আগুন দেওয়া হয়) রঙিন কাগজ দিয়ে আটকে পেছন থেকে মশলা ঠাসা হতো - বুড়ো আঙুলে ফোস্কা পড়ে যেত চেপে চেপে মশলা ঠাসতে - ঠাসা যত বেশি টাইট হবে ততো বেশি ফোর্স আর ছড়িয়ে ঝাড় হবে আলোর। ঠাসা হয়ে গেলে খোলের পেছনের ছিদ্র এঁটেল মাটি দিয়ে বন্ধ করে আর একদফা রোদ খাইয়ে নেওয়া হতো তুবড়িগুলোকে।

    তুবড়ির ভাগ কখনো কেউ কাউকে বলতো না, গুপ্তধনের ম্যাপের মতো করে সযত্নে নিজের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করতো সবাই। কারণটা হলো তুবড়ি প্রতিযোগিতা - যে ব্যাপারটা এখন উঠে গেছে - অনেকদিন ই। প্রতিবছর কালীপুজোর রাতে এই প্রতিযোগিতা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মরণপণ রেষারেষি। একটা আখাম্বা লম্বা বাঁশ পোঁতা হতো মাঠে। তার গায়ে বিভিন্ন উচ্চতায় টিকিট মারা থাকতো বিভিন্ন রঙের কাগজের। বাঁশের নিচে তুবড়ি জ্বালানো হতো, তার ঝর্ণা কোন টিকিট অবধি পৌঁছলো সেটা দেখে নোট করা হতো। সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় যার তুবড়ির স্পার্কল পৌঁছতো সে হতো বিজয়ী। ছোটোখাটো দুর্ঘটনা যে একেবারেই হতো না তা নয় - আলোর ফোয়ারা অনেক দূর যাতে ওঠে তারজন্য প্রতিযোগীরা অনেক সময় প্রাণপনে গেদে গেদে মশলা ঢোকাতো খোলে - অতিরিক্ত ঠাস মশলা হলে তুবড়ি ফাটতো একটু জ্বলার পরই।

    অল্পবয়েসে, বেশ একটু, যাকে বলে আতাক্যালানে, তাই ছিলাম (এখনো যে নই সে কথা খুব কিছু কনফিডেন্স নিয়ে বলতে পারি না)। একপুজোয় বাজি পোড়ানোর পর ঠিক করলাম আধপোড়া সব বাজির বারুদ বার করে বাজি বানাবো। সাতপোড়া চরকি, ছিন্নভিন্ন চকোলেট বোম, রংমশালের বালিভর্তি অংশ, সব কিছু থেকে খুঁটে খুঁটে মশলা বার করে একজায়গায় করলাম - করে একটা কাগজে মুড়লাম - তারপর দাঁত বার করে তাতে আগুন দেওয়ার জন্য যেই দেশলাই মেরেছি ডান হাতের পাঞ্জাটা মশালের মতো জ্বলে উঠলো! ওই মশলা বার করতে গিয়ে সারা হাতেই বারুদ মাখিয়ে ফেলেছিলাম। আগুনে পোড়ার, বিশেষতঃ বারুদের আগুনে পোড়ার কি তীব্র জ্বালা - যেন শত্রুরও এ অভিজ্ঞতা না হয়। হাত সারতে বহুদিন লেগেছিলো।

    মেয়েকে এইসব গল্প করছি, ভুরু তুলে বললো - 'এতো ঝামেলা করে লাভের লাভ কি হতো? অকারণ সময় নষ্ট। তুবড়ি দোকান থেকে কিনে নিলেই পারতে।'

    ভাবলাম দি ঠেসে এক থাবড়া! তারপর মায়া হলো। আহা বেচারা আজকালকার ছেলেমেয়েরা তো অশ্বত্থামাই প্রকৃত প্রস্তাবে। পিটুলি গোলা খাচ্ছে সেটুকুই শুধু যা বুঝতে পারে না।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ৩৪৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০২83961
  • বাঃ বাঃ। খুব ভালো লাগলো ।

    হ্যাঁ, তুবড়ী প্রতিযোগিতা হতো রীতিমতন। আর প্রত্যেক পরিবারেই অন্তত একজন বাজী উস্তাদ ছিলেন , যাদের তুবড়ীর মসলার প্রোপরশন নিয়ে একটা ভয়ানক নাক উঁচু ভাব থাকতো। তাদের অনেকেরি বানানো তুবড়ী কিন্তু নিতান্ত আতাক্যালানে হতো - এটাও সর্বজনবিদিত ছিলো।

    আরেকটা বাজী ছিলো চটপটি। খুবই নিরীহ বাজি। মেঝেতে ঘষলে চিড়বিড়ে একটু আওয়াজ হতো - এই পর্যন্ত্য। কিন্তু দেখতে বেশ ন্যাবেঞ্চুষের মতন হওয়ায় বাচ্চারা খেয়ে ফেলতো। উটি ব্যন হয় আমারও ছোটোব্যালায়।

    সব থেকে কুচ্ছিত বাজিটা কোনটা জানেন তো? খুবই সেফ। নাম সাপবাজী। কালো একটা ছোট্টো চ্যাপটা মতন ট্যাবলেট। আগুন লাগালে ভ্যাসভ্যাসে ধোঁয়া বেরোতো আর হড়হড় করে কালো ছাইএর কুন্ডুলি - ম্যাগো। ঠিক মনে হতো কোনো নেড়ীর বিপুল ডায়ারিয়া হয়েছে। ইইস। তবে আমার খুব ফেবারিট ছিলো।
  • স্বাতী রায় | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১২83966
  • বন্দুক টন্দুক জোটে নি কোন দিন - নাট বল্টুই ছিল সম্বল। তবে সে তো দুর্গা পুজোর বাজি! কালি পুজোর সময় তো ফুলঝুড়ি দিয়ে শুরু।

    তবে নিজে হাতে না বানালেও বাজী বানানোর শাগরেদি করেছি খানিক, তাই সে বাবদে আমিও তাপসবাবুর কন্যার সঙ্গে এক মত। বড্ড ঝামেলা! আর তার উপর কোথায় কোথায় কি হবে আর বাবা-মার ঠ্যাঙ্গানি খেয়ে প্রাণ যাবে - সবার তো আর বাড়ির পাশে প্রাণ বাঁচান পিসির বাড়ী থাকে না :D
  • b | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৪83967
  • বাজি তো বাহ্য, তাপসের চোখ দিয়ে বিনয়বাবুকে চিনে নিলাম।
  • de | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৪৫83962
  • খুব ভালো লেখা -

    সাপবাজী বাবা কিছুতেই কিনে দিতে চাইতো না - ওই ধোঁয়াটা নাকি খুব খারাপ - কিন্তু আমার খুবই পছন্দ ছিলো - আর রঙিন দেশলাই -
  • Kaju | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:১০83963
  • সাপবাজি আমিও প্রচুর জ্বালিয়েছি। ওটার মুশকিল হল, মেঝেতে একটা চিরকালের মত গোল দাগ হয়ে যেত। আমার বারান্দায় ওরকম ৩টে দাগ পরপর ছিল আগের বাড়িতে। সেটা ১৯৮৯ সালের। সে দাগ শেষদিন অব্দি ছিল যেদিন বাড়ি বদলে চলে গেছিলাম। মনে করিয়ে দিত কোনো এক চার বছরের ছেলের কালিপুজোর রাত্তিরের কথা। এখন হয়ত ওই বাড়িতে অন্য কেউ বাস করে, রেল কোয়ার্টার তো, সে-ও কিন্তু ওই দাগ মুছতে পারেনি নিশ্চিত, ও দাগ কিছুতে ওঠে না, যা দিয়েই মোছো না কেন। এখনো ওই বারান্দায় আমি আছি, ১৯৮৯ সালে আটকে।
  • b | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩১83964
  • আছাড়ি পটকা। শক্ত জায়গায় আছাড় দিলেই দুম। ব্যান করে দেয়, কারণ না ফাটা পটকা হামা দেওয়া বাচ্চারা মুখে দিলে কেস ছিরিয়াচ।

    সবচেয়ে সেফ বাজি হল রঙীন দেশলাই।
  • | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩৩83965
  • 'নেড়ীর বিপুল ডায়রিয়া হয়েছে" -- :-))))) উফ্ফ লেখা পড়ার আগেই কমেন্ট পড়ে হাসি থামাতে পারছি না।
  • aranya | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:৫৯83969
  • দারুণ
  • Tim | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১৪83970
  • প্রথমতঃ, লেখাটা তুখোড় হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ, বাজি বানানোর ব্যাপারটা নিয়ে দুয়েক কথা বলে যেতে ইচ্ছে হলো এই লেখাটা পড়ে।

    আমাদের বাড়িতে বাজি বানানোর দুরকম ব্যাপার ছিলো। বাবা বানাতো বসন তুবড়ি, আর জেঠতুতো দাদা এবং বড়োকাকু মিলে উড়ন। দাদা একা ছুঁচো। আমি সবেতেই জোগাড়ে। তো, শ্রেণীচেতনা খুব প্রখর ছিলো, মানে ধরেন বাবা কিছুতেই উড়ন বানাবেনা, বা বড়োকাকু কিছুতেই রংমশাল বানাবেনা। দাদা অবশ্য উড়ন আর ছুঁচো করে সময় থাকলেই বসনে হেল্প করতো। বসন হলো মোটের ওপর সেফ, এর ওর বাড়িতে ঢুকে পড়েনা, তবে খোল ফেটে গেলে স্লাইট চাপ হতে পারে। বসন হলো একটা রয়াল ব্যাপার, লোকে ভিড় করে দেখতে আসে রং বেরঙের ফুলকি, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে, কারণ ব্যান নাই। অন্যদিকে উড়ন হলো নিশিদ্ধ বস্তু, অনেকটা গাঁজা খাওয়ার মত করে রাত গভীর হলে মাঠে বা পাশের বাড়ির ছাদে উঠে সেসব ওড়ানো হতো। ছুঁচো তো আরো খারাপ, নিরিবিলি জায়গা তখন অল্পস্বল্প থাকায় সেসব ওড়ানোর স্থানাভাব হয়নি, তবে কারো বাড়িতে ঢুকে থাকলেও তখন লোকে এত প্যারানয়েড ছিলোনা। ধরেন অমুকবাবুর জানলা দিয়ে ছুঁচোবাজি ঢুকেছে। অমুকবাবু যদি ভাড়াটে হন তাহলে আগে দেখবেন আগুন লাগার চান্স কতটা ছিলো। যদি নেগলিজিবল হয় তাহলে অ কিসুনা মোডে চলে যাবেন। যদি অমুকবাবু বাড়ির মালিক হন তো দুইখান কথা আছে। এক, উনি কি ছোকরাদের ঘাঁটান? যদি না হয় তো চুকেই গেল। যদি হ্যাঁ হয় তয় আরো দুইখান... এই করে করে শেষে দেখা যাবে অপরাধীর বাবা আর বাড়িয়ালা তাসের আড্ডায় পার্টনার। যাই হোক কাজের (মানে বাজির) কথায় আসি।

    বাজির নির্মাণে শ্রেণীচেতনা থাকলেও পোড়ানোর সময় সবাই সমান। রাত দশটার পরে সব আপিস আড্ডা ইত্যাদি থেকে ফিরে এলে শুরু হতো। প্রথমে ছুঁচো, তারপর উড়ন, শেষে দুটো বসন।

    উড়ন ছাড়ার ব্যাপারটা খুবই সাটল, তাপসবাবু যেমন বলেছেন। আমাদের ক্রিকেটীয় মানসিকতায় খালি ইচ্ছে করতো একটু বেশি স্পিন করে দিই, কিন্তু ওরকম কিছু করলেই চিত্তির। উল্কার মত উঠে যাওয়ার বদলে সে উড়ন্ত চরকি হবে। আর সে খুবই বিপজ্জনক (সাধে কি আর ব্যান করেছিলো?)। যে হামান দিস্তা ও শিলে কচু ও মশলা বাটা হতো, সেই শিলেই বাজির মশলাও বাটা হতো, স্বচক্ষে দেখা। হ্যাঁ ভালো করে ধুয়ে টুয়ে ইত্যাদি। তা দেখুন কেউ মরিনি, এমনকি অসুখবিসুখও না। এখন সন্দেহ হয়, এত সাবধানে থেকে থেকে কি মানুষ ইমিউনিটিটাই বিক্রি করে দিলো ওষুধ কোম্পানির কাছে?

    উড়নের আরেকটা ব্যাপার হলো সে নেমে আসবে একসময়। ফ্রি ফল, উইথ অ পিঞ্চ অফ জ্বলন্ত বারুদের অবশেষ। সেই অবাধে পতনশীল উড়নে কারো কেন মাথায় চোট লাগেনি তা জানতে হলে শিখতে হবে প্রিসাইজ লঞ্চিং। স্লাইট অ্যাঙ্গলে ছাড়লে কীভাবে সেই মাল লোকালয়ের দিকে না বেঁকে মেট্রো গল্ফ ক্লাবের দিকে বা টালিনালার দিকে বা মাঠের দিকে যাবে সেই প্র্যাক্টিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বছরে একটা দুটো করে উড়ন ছেড়ে হাত মকশো করে তবে যথেচ্ছ অনুমতি পেয়েছিলাম। অনায়াসে ডিপ্লোমা ইন উড়ন টেকনোলজি বলাই যায় এই প্রোগ্রামকে। কতসব সাতসতেরো মনে পড়ে যাচ্ছে। লেখককে ধন্যবাদ। এমনি আরো হোক, আর বিনয়বাবুর কথাও।
  • সুমন | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৩০83968
  • ভালো লেখা।মন খারাপ হয়ে যায় ছোটবেলা ভেবে।আমাদের ছিলো কালিমার দো দোমা,রেল গাড়ী, সাপ বাজি।
  • ভোলা ময়রা | ***:*** | ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩১83971
  • পড়ে বেশ ভালো লাগলো , অবশ্য বাজি বিষয়ক যে কোনো লেখাই আমার পড়তে ভালো লাগে। আমি নিজে বাজি তৈরী করি , প্রথম বানিয়েছিলাম আট বছর বয়সে তারপর পরবর্তী তিন দশক ধরে ও বিষয়ে আগ্রহ দিনে দিনে আরো বেড়েছে । স্বপনকুমারের লেখা বাজি তৈরির বই দিয়ে এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলাম , তারপরে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পড়া অ্যালেন ব্রকের হিস্ট্রি অফ ফায়ারওয়ার্কস থেকে বর্তমানে জার্নাল অফ পাইরোটেকনিক্স এ গিয়ে ঠেকেছি ।
    বাকি সবাইকার মতো ছুঁচো দিয়েই শুরু করেছিলাম প্রথমদিকে , সোভিয়েত দেশ পত্রিকার তখন খুব চল ছিল, তার কাগজ দিয়েই বানানো হতো ছুঁচোর খোল , তারপর ধীরে ধীরে বসানো তুবড়ি, উড়োন, রংমশাল , হাউই , থেকে হালে ক্র্যাকল, বিভিন্ন ধরণের গ্লিটার ইত্যাদি ।ওই ভুঁই পটকা বা আছাড়ে পটকা যা পেটোর সুপুরি সাইজের সংস্করণ তা পটাসিয়াম ক্লোরেট এবং মনছাল(এন্টিমনি সালফাইড ) দিয়ে তৈরী করা হয়, চলতি ভাষায় যাকে লাল-সাদা মশলা বলা হয় , মূলতঃ সত্তরের দশকের উত্তাল আন্দোলনের কারণে পটাসিয়াম ক্লোরেট এবং মনছাল সাধারনজনের ব্যবহারের পক্ষে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হয়, এবং বাজি তৈরীর জন্য সেটা ছিল একটা খুব বড় সেটব্যাক , কারণ রঙিন আলোর বাজিতে বিশেষতঃ উড়োন তুবড়িতে পটাসিয়াম ক্লোরেট বা চলতি ভাষায় কলেরা-পটাস এর ব্যবহার অত্যাবশ্যক ছিল । সিটি বাজিতে আগে পটাস ক্লোরেট -গ্যালিক অ্যাসিড ব্যবহার হতো , পরে তা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হুইসেল বাজি ,পারক্লোরেট/বেনজোয়েট বা স্যালিসিলেট দিয়ে রিপ্লেসড হয় । চটপটি আমি কোনোদিন দেখিনি , আমার জন্মের আগেই তা তা নিষিদ্ধ হয়েছিল , তবে শুনেছি লাল ফসফরাস দিয়ে তৈরী হতো, ফলে জ্বলন্ত অবস্থায় কখনো কখনো চামড়ায় আটকে যেত, আর ভুল করে বাচ্চারা খেয়ে ফেললে বিষক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট, সেকারণে নিষিদ্ধ হয় । এছাড়া আরো কিছু বাজির নাম শুনেছি মাত্র দেখিনি কখনো , যেমন জুঁই তুবড়ি, ইলেকট্রিক তার (ম্যাগনেসিয়াম রিবন), সাদা রঙের সাপ বাজি ( মারকিউরিক সালফোসায়ানেট দিয়ে প্রস্তূত , সে কারণে নিষিদ্ধ হয়)। বর্তমানে ব্যবহৃত সাপ বাজি সেরকম কিছু বিষাক্ত বলে শুনিনি , ন্যাপথোল পিচ দিয়ে তৈরী হয় বলে জানি , তবে পুরোনো ফর্মুলাটা বিষাক্ত ছিল নিঃসন্দেহে ।

    দেশ বিদেশে আতসবাজির কালচার নিয়ে ( কারিগরি ব্যাপার বাদ দিয়ে) একটা দারুন সাম্প্রতিক ডকুমেন্টারী আছে "পাসফায়ার" নামে, যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তাদের বেশ কয়য়েকজনকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, ফেইসবুক বা অন্য সূত্রে ।মার্কিন মুলুক , কানাডা , মক্সিকো, ব্রাজিল, মালটা, আফ্রিকা , ভারত , ফিলিপিন্স , জাপানের বাজিগররা (মহিলা , এমনকি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলাও আছেন তাদের মধ্যে ) তাদের কথা জানিয়েছেন, বিশেষত আতশবাজি সম্মন্ধে তাদের অন্তরের অনুভূতির কথা । ডকুমেন্টারিটা আমাজন-প্রাইম এ আছে এবং কিছুদিন আগে ইউটিউব এ দেওয়া হয়েছে , এ ব্যাপারে যাদের সামান্যতম আগ্রহও আছে তাদেরকেও আমি দেখতে অনুরোধ করবো। লক্ষণীয় যে পাসফায়ারের লোগো একটি মালায়ালম প্রবাদের ভাষান্তর , এরবেশি স্পয়লার আর দিলাম না, লিংক নিচে পাবেন , ধন্যবাদ:

  • i | ***:*** | ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:২০83972
  • ছোটোবেলায় আমারা বলতাম হরেকরকমবা জিবারুদেরকার খানা। লিখে বলতাম-বলত কি? তারপর কালিপুজোর দুপুরে আমরা বাজিগুলি রোদে দিতাম; ঠাকুমার ঘরে দুইখানি খুব ভারি আয়তক্ষেত্রাকার পিঁড়ি ছিল-আমাদের বাড়ির সব বিয়ে ঐ পিঁড়িতে হয়েছিল-সেই সব পিঁড়িতে অতীতের বিয়ের কিছু স্মৃতি লেগে থাকত-হয়ত গঁদের আঠায় সেঁটে থাকা রঙীন কাগজ বা প্রায় মুছে যাওয়া আলপনা-সেই পিঁড়ি রোদে এনে তার ওপর বাজি সাজাতাম-রং মশাল, ফুলঝুড়ি তুবড়ি চরকি ইলেক্ট্রিক তার সাপবাজি রকেট-একবার দুটি নধরকান্তি বাচ্চার ছবিওলা কালিপটকার প্যাকেট এনেছিলাম মনে পড়ে-ঐ একবারই। রোদ সরে সরে যেত, আমরাও সেইমত পিঁড়ি সরাতাম। হেমন্তের বিকেলে কালি পুজোর প্যান্ডেলে সন্ন্যাসী রাজার গান আর ডায়ালগ শুনতে পাচ্ছি-যে বাড়িতেই যাওনা সখি.. তার্পর সুপ্রিয়া দেবী ভারি গলায় কি সব বলছেন, এদিকে রোদ পড়ে আসছে, হাওয়ায় হিম টের পাওয়া যায়, বাজিতে তখনও রোদের গন্ধ। অন্ধকার হলেই বাজি পোড়ানো আর একবার শুরু হলেই মুহূর্তে শেষ তারপর আর কিছু নেই-দুদিন পরে স্কুল খুলবে-অ্যানুআল পরীক্ষা -সব মিলিয়ে সেই সময়্টায় ভারি একটা বিষাদ জন্ম নিত।
    স্কুলের শেষের দিকে ঐ বিষাদ একটা আলোর ময়ূরে বদলে গিয়েছিল-'অন্ধকার আকাশের তলায় দেখতে দেখতে একটি আলোর ময়ূর ফুটে উঠল। আলোর ফুলকিগুলো যেন ভাসছিল... ময়ূরটির আকার যতই বাড়ছিল তার প্রত্যঙ্গগুলি ততই গলে যাচ্ছিল-' অথবা জোনাকি-'চোখের পলকে, মাটির অন্ধকার এ একটি আলো দপ করে জ্বলে উঠল .. উঠল তো উঠলই, গাছের মাথা সমান উঁচু হয়ে রংমশালের তারার মতন তুবড়ির ফুলের মতন ফরফর করে পুড়তে লাগল..দেখতে দেখতে চারপাশে যেন জোনাকির মেলা বসে গেল... মনে হচ্চিল একদল লোক যেন অন্ধকারে জোনাকির পিচকিরি ছুঁড়ে মারছে আর পলকে অন্ধকারের বসনে জোনাকি ধরে যাচ্ছে।'[বিমল কর, খড়কুটো]
    এই আলোর ময়ূর, জোনাকির দল দেখি নাই- তবে ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে ফোর্থ জুলাই আকাশে একখানি আলোকবিন্দু উঠতে দেখেছিলাম, সেই একখানি বিন্দু থেকে সহস্র বিন্দু আলো-এত লোক বাজি পোড়ানো দেখতে আসে জানতামই না। তার পরে সিডনি হারবার ব্রিজের ওপরে দেখলাম সিংহের কেশর কখনও বিরাট অগ্নিপুষ্প। সোনার পরাগরেণু যেই ছাই হয়ে ঝরে পড়ছিল-আকাশ অন্ধকার- বাজি দেখে লোকজন বাড়ির পথ ধরেছে, হারবারের দিক থেকে জোলো হাওয়া, হিম, বারুদের গন্ধ- হুবহু ছোটোবেলার মত-সেম টু সেম। চোখ তুলে দেখলাম মাথার ওপরে কালপুরুষ আর দমদমের বাড়ির উঠোনে মা কোমরে আঁচল জড়িয়ে তুবড়িতে আলো দিচ্ছে, আমরা ফুলঝুরি রং মশাল জ্বালাচ্ছি-মোমবাতির সামনে ফুলঝুরি ধরতে প্রথম স্ফুলিঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছি মুখ, অন্য হাতে রং মশাল জ্বালাচ্ছি-লাল বেগুনী ধোঁয়া তারপর ঝুপ করে অন্ধকার-অথচ সোনালী রাংতায় ঢাকা আরো কতখানি অংশ বাকি রয়ে গেল-তারপর উল্টো করে ধরতে ঝুরঝুর করে বালি-শুধু বালি-জেঠু বলছে, ভ্যাজাল ভ্যাজাল সব কিছুতে ভ্যাজাল।
  • আশীষ বোস | 2409:4060:e80:a699:4a93:87ef:3a53:***:*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০৩525670
  • অপূর্ব এক লেখা। কিছুটা বর্ণণাত্মক কিছুটা surreal।
  • Kanan Roy | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৩৫525671
  • মচৎকার লেখা। 
  • Kuntala | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৪525675
  • আর সাপ বাজি?!! সেটার কথা লিখলেন না? 
    খুব ভাল লাগল, সব পুরনো কথা মনে পড়ে গেল।
  • সঞ্জয় চৌধুরী। | 202.8.***.*** | ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ২০:১৪538889
  • আহাঃ, কি লেখা! ছোটবেলা আবার বিমুর্ত হয়ে উঠলো। এরকম বাবা আমরা আর হতে পারলাম না। ছ'ফুটের বিনয় বাবু পাঠকের কাছে আরও অনেক বড়ো হয়ে উঠলো। ভালো থাকুন তাপস বাবু। বাল্য বেলার স্মৃতি লেখায় তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন