এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • হারবার্ট

    ইশান, অক্ষ, সোমনাথ ও ইন্দ্র
    আলোচনা | সিনেমা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ১১৪৬ বার পঠিত
  • ইশান:

    দৃশ্য এক। বেলুনের সাজানো সংসার।

    সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের U/A সার্টিফিকেটের পরেই স্ক্রিন জুড়ে দেখা যায় বোর্ডে বাঁধা সারিসারি বেলুন। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ এবং অরেঞ্জ। সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধ। হরাইজেন্টাল সুতো দিয়ে নয়, আসলে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে যুক্তি ও ব্যাকরণের অর্ডারে। অচিরেই ফট করে একটি আওয়াজ হবে, এবং ব্রেনে শব্দটি রেজিস্টার হবার আগেই প্রথম সারির ষষ্ঠ বেলুনটি দুমফটাস। আরও এক সেকেন্ড অপেক্ষার পরেই ফেটে যাবে ঠিক তার নিচের সবুজ বেলুনটি। ক্যামেরা প্যান করবে, বেলুনের বোর্ডকে ফোকাসে রেখে ব্যাকগ্রাউন্ডে পর্দার বাঁদিকে দেখা যাবে আউট অফ ফোকাস, ঝাপসা অস্পষ্ট শহর কলকাতা। একটি হলুদ ট্যাক্সি। একটি সাদা অ্যাম্বাসাডার। একজন ভ্রাম্যমান পথচারী। ক্রমে আরও গাড়ি। অরও পথচারী। এবং বোঝা যাবে, এটি আসলে কোনো এক ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালার বেলুনের বোর্ড। পয়সা দিয়ে শহরের অপেশাদার বন্দুকবাজরা বেলুনগুলোর উপর টিপ প্র্যাকটিস করছেন। বন্দুকবাজদের মুখ এখানে ইম্পর্ট্যান্ট নয়, অতএব দেখা যাবেনা। ইতিমধ্যে বাঁদিকে আউট অফ ফোকাস শহর কলকাতাকে পিছনে রেখে শুরু হয়ে গেছে নামের বন্যা, টাইটেল ও ক্রেডিট ... আর ডানদিকে কোনো এক অদৃশ্য বন্দুকবাজের হাতে একটা একটা করে ফেটে যাচ্ছে বেলুন -- ভেঙে যাচ্ছে জ্যামিতি ও সিমেট্রি ডিকটেটেড বেলুনের যুক্তির সংসার। কোন বেলুন কখন ফাটবে জানা নেই, বন্দুকবাজ কে তাও অজানা, কিন্তু যেকোনো মূহুর্তে ফেটে যেতে পারে যেকোনো বেলুন, এই মেসেজ নিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে আরও একটি সিনেমা, যার নাম হারবার্ট।

    দৃশ্য দুই। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ।

    গরাদ দেওয়া ছোট্টো জানালা। জানলা দিয়ে দেখা যায় মান্ধাতার আমলের পুরোনো কলকাতা, সরু গলির এক ঝলক। আর স্পষ্ট দেখা যায় একটি চুনকাম করা জীর্ণ দেয়াল। সেখানে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা আঁকা। নিচে লেখা ভোট দিন। সিনেমায় নেই, কিন্তু অনুমান করা যায়, এই দেয়ালেই আগে লেখা ছিল "মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান' । আর "আত্মার সঙ্গে কথোপকথনকারী' জনৈক বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়ে, সেই চিহ্নের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কয়েকপিস যুক্তিবাদী সমিতির মেম্বার। টুকরো-টাকরা তীক্ষ্ণ ডায়ালগ শোনা যায়। কয়েকটি রাসপুটিন সংক্রান্ত। কিছু বুজরুকি সংক্রান্ত। যুক্তিবাদীরা হোহো করে হাসছেন, যুক্তি ও বিজ্ঞানের ফলায় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে মৃত মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের মিথ। এসব দেখা যাচ্ছে ঐ ছোট্টো গরাদ দেওয়া জানালার মধ্য দিয়ে, যে জানার পিছনে বসে আছে অপ্রকৃতস্থ হারবার্ট সরকার। সে শাপশাপান্ত করছে, ফেঁড়ে চিল্লাচ্ছে, উন্মত্তের মতো দেয়ালে মাথা ঠুকছে। জানলার ওদিকে আলোকোঙ্কÄল যুক্তি ও মার্কসবাদ, আর এপাশে স্কিজোফ্রেনিক হারবার্ট, আহা এই অনিন্দসুন্দর কম্পোজিশনটি বাঁধা পড়ছে একই ফ্রেমে, শুরু হয়ে যাচ্ছে আরও একটি ফিল্ম, যার নাম হারবার্ট।

    সিন বাই সিন মানেবই লেখার আর প্রয়োজন নেই। দাবার প্রথম দুটো চালই যেমন বাকি খেলাটাকে নির্ধারিত করে দেয়, এই দুখানা দৃশ্যই বেঁধে দিয়েছে ফিল্মটির থিমসংকে। সেই থিমসঙের দুটিই কলি:

    এক। র‌্যাশনালিটি হল যাদুদন্ড,অঙ্কের নিয়মে সুজ্জো-চন্দোকে ওঠায় বসায়,আর স্কিজোফ্রেনিয়া হল একটি ব্যধি, অতএ বর্জনীয়, এই ফিল্ম সেরকম মনে করেনা -- এদেরকে গোটা সিনেমা জুড়ে হরবখত একই ফ্রেমে দেখা যাবে। পাশাপাশি। হরেক মাল পাঁচসিকে। র‌্যাশানালিটি এবং রিয়েলিজম যাকে সাপ্রেস করে তার নাম রিয়েলিটি, এমন মার মারে, যে সে বেচারার নামই হয়ে যায় অচেতনতা।নির্জ্ঞান। এবং স্কিজোফ্রেনিয়া সেই গুমখুন হওয়া রিয়েলিটিকে কিয়ৎপরিমানে বাইরে বের করে আনে, যাকে ইংরিজিতে বলে সিম্পটম। অতএব পাগলামি হল বিদ্রোহ, আর র‌্যাশানালিটি হল সাপ্রেশন। অতএব মুড়ি-মুড়কির এক দর বললেও মরালি এ ফিলিম স্কিজোফ্রেনিয়ার দিকেই একটু হেলে থাকবে শেষ পর্যন্ত। নৈতিক সমর্থন যোগাবে টোগাবে। এমনকি অমন যে যুক্তি ও গণিতের হিসেবে বাঁধা বেলুনের বোর্ড, তার পিছনেও শেষ দৃশ্যে দেখা যাবে, লেখা আছে "মৃতের সহিত কথোপথন'।

    দুই। যুক্তির মধ্যের এই স্কিজোফ্রেনিক সিম্পটম কখন কোথায় ফেটে পড়বে কেউ জানেনা। প্রেমিকের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকা আহ্লাদী মেয়েটি যেকোনো মূহুর্তে হয়ে উঠতে পারে বিষকন্যা, বুকে আমূল বসিয়ে দিতে পারে ছুরি। যেকোনো বেলুন যখন খুশি ফেটে যেতে পারে, কিন্তু কোন বেলুন কখন ফাটবে কেউ জানেনা। যুক্তিকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে যেকোনো মূহুর্তে যেকোনো মানববোমা ফেটে যেতে পারে বাঁশবেড়ে টিমবাকটু বা ম্যানহাটানে। সভ্যজগত এই ফেটে যাওয়াকে চিনবে একটি ব্যধি হিসাবে যার নাম উন্মত্ততা, কিন্তু মেডিক্যাল সায়েন্স এর থই পাবেনা। অত:পর তদন্ত কমিটি, খানাতল্লশি এবং সভ্যতার সংকট। মাথার উপর ঝুলে আছে একশখানা তরবারী, কোনোটাই পড়ছেনা, কিন্তু যেকোনোটা যেকোনোদিন খুলে পড়তে পারে। এই যখন অবস্থা, তখন আতঙ্কগ্রস্ত সভ্যতার পাশে দাঁড়িয়ে ফিলিমের পরিচালক তখন দাঁত কেলিয়ে বলছেন, খুব তো সভ্যতা আর র‌্যাশানালিটি মারাচ্ছিলি রে এখন দ্যাখ ক্যামন লাগে।

    এই হল থিমসং। বাকিটুকু বিস্তার। কম্পোজিশান বানানো। ক্লাইম্যাক্স বানানো ইত্যাদি। এই অদ্ভুতুড়ে থিমসংটিকে চিত্রভাষায় ট্রান্সলেট করা বড়ো সহজ জিনিস না। সহজ না হলেও সুমন সে জিনিস করেছেন, এবং দিব্য করেছেন। লেখার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রুত, তাই এই মূহুর্তেই এই ট্রান্সলেশনের তিন চারটি বৈশিষ্ট ঝপাঝপ নেড়ে চেড়ে দেখা যাক।

    এক। গঠন। ফিল্মটি যুক্তি ও তার সীমান্তকে নিয়ে ডিল করে। অতএব, সোজা বাংলায় গপ্পো বললে এর চলবেনা, বোঝাই যাচ্ছে। অতএব, ফিল্মটি কাহিনীকে ভাঙবে, পপুলার ভাষায় যাকে নন-ন্যারেটিভ বলা হবে। কিন্তু আদতে ন্যারেটিভ আর নন-ন্যারেটিভ বলে আলাদা কিছু হয়না। সেই একই টাইম-স্পেসের খেলা, সেই একই ক্লাইম্যাক্স তৈরি ইত্যাদি। আসলে নন-ন্যারেটিভ শিল্পপ্রচেষ্টার মধ্যে ন্যারেটিভ শিল্পের সমস্ত গুণই থাকে, শুধু একটু কায়দা করে দেখানো হয় দেখো বাপু আমি কিন্তু গপ্পো বলছিনা। কেয়ারলেস, কিন্তু কেয়ারফুলি কেয়ারলেস।

    এই ফিল্মও তার ব্যতিক্রম না। তিনটি ন্যারেটিভ সুতো আছে। ক। কোনো এক অজ্ঞাত বিষয়ে তদন্ত। খ। হারবার্টের জীবনকাহিনী। গ। হারবার্টের বাবা-মা গপ্পের বাইরে থেকে এসে ফিলমটির চিত্রগ্রহণ করছেন, এবং এই মূহুর্তে ঘটে যাওয়া দৃশ্যবলীর সমালোচনা করছেন। এই তিন নম্বর সুতোটিকে খুব কায়দা করে ম্যানিপুলেট করা হয়েছে, যাতে মনে হয় ফিল্মটি নন-ন্যারেটিভ। কেয়ারফুলি কেয়ারলেস।

    বাকি গঠনটি সাদামাটা। দুটো সুতো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে, এবং কাহিনীর বিস্তার হচ্ছে। হারবার্টের জীবনে কি হল, আর তদন্তের ফলাফল কি হল এই নিয়ে দুটো সুতোতেই আলাদা করে তৈরি হচ্ছে টেনশন। অত:পর ক্লাইম্যাক্স এবং দুম ফটাস। হরেক গোয়েন্দা গল্পে এই টেকনিকটির ব্যবহার হয়েছে, অতএব বিশেষ কিছু বলার নেই। শুধু মুন্সিয়ানা দেখা গেছে টাইম-এবং স্পেসকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে, কারণ দুটি ন্যারেটিভের টাইম ডাইমেনশান একেবারে আলাদা। একটি মহাকাব্যিক জীবনকাহিনী, অন্যতি ছোট্টো দুদিনের তদন্ত। এটাতে আমি পরে আরেকটা পয়েন্টে ফিরে আসছি।

    দুই। কম্পোজিশন। বোঝাই যাচ্ছে, যে কলকাতা শহরের একজন আধপাগল প্রেতবিশেষজ্ঞ, যার নাকি আবার অতীতে নকশালপন্থী কানেকশন ছিল, তাকে নিয়ে ডিল করতে হলে প্রথাগত কম্পোজিশনে চলবেনা। কম্পোজিশন বলতে এখানে মূলত: ফ্রেমের কম্পোজিশনই বোঝাচ্ছি। ফিলিম বানানোর কম্পোজিশানগত কিছু বাঁধা গত আছে, যার বাইরের সমস্যাগুলিকে সমাধান করার কোনো প্রচেষ্টা সাধারণভাবে জনতার মধ্যে দেখা যায়না। যেমন ধরুন, লোকাল ট্রেনের অফিস টাইমের ভিড়। এটাকে ফিল্মে দেখাবেন কিকরে? চোখের হাইটে ক্যামেরা রাখলে ভিড়ের ডেফথ বোঝা যাবেনা। হাই অ্যাঙ্গল শট নিলে বোঝা যাবেনা ভিড়ের ঘনত্ব, বোঝা যাবেনা গরম, দমবন্ধ করা ঘামের গন্ধ। এই প্রবলেমটিকে সিনেমাটিক্যালি সলভ করার চেষ্টা করেছেন, এরকম বুকের পাটাওয়ালা লোক আমি দেখিনি। না: সুমনও করেননি, তবে অনেকগুলি অন্য কঠিন সমস্যার সমাধান করেছেন। ফিল্মএর কারণেই করতে হয়েছে। যেমন সরু গলির দৃশ্য এর আগে অনেক অনেক সিনেমায় বিভিন্ন কায়দায় ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু উত্তর কলকাতার সরু গলি, গায়ে গায়ে ঘেষা বাড়ি আর ঘিঞ্জি নোংরামিকে একসাথে কেউ দেখাননি। দেখাবেন কিকরে? গলি মানেই দুদিকে উঁচু দেওয়াল -- আর দেয়াল ফুঁড়ে ক্যামেরার দৃষ্টি চলেনা। ফলে গলি দেখালে বাড়ি বাদ, আর বাড়ি দেখালে গলি। সর্বোপরি নোংরা এবং আবর্জনা। ফিল্ম সতত:ই রিয়েলিটির তীক্ষ্ণ খোঁচগুলিকে মোলায়েম করে দেয়, অতএব গা ঘিনঘিন করা নোংরা দেখানো সহজ জিনিস না। সুমন এই সমস্যার সমাধান করেছেন। কিকরে? জানতে গেলে সিনেমাটি দেখুন, অন্য কোনো শর্টকাট নেই বোঝানোর।

    এছাড়াও কালার স্কিম, আলো, এবং বিশেষ করে উচ্চতা ও গভীরতার ভাঙচুর খুব ভালো। শট-বাই-শট উদাহরণ দিলে ভালো হত, কিন্তু অত্তো রিল এখানে খচ্চা করা যাবেনা।

    তিন। টাইম এবং স্পেস। সিনেমাটি, আগেই বলেছি, অসমসত্ব একটি টাইম স্পেসকে নিয়ে ডিল করে। একদিকে মহাভারতীয় আখ্যান -- হারবার্টের জীবনকাহিনী, অন্যদিকে দুদিনের সস্তা গোয়েন্দাগপ্পো। এর সঙ্গে আবার ন্যারেটিহের সুতো ছিঁড়ে দিতে মাঝে মাঝেই মুভি-ক্যামেরা নিয়ে চিত্রগ্রহণ করতে হাজির হচ্ছেন হারবার্টের বাবা-মা। এই তিনটি সুতোকে, যাদের প্রত্যেকের টাইম ডাইমেনশন আলাদা, সামলানো সোজা নয়। কিন্তু এহ বাহ্য। আমরা এখানে রিয়েলিটির টাইম-অ্যান্ড-স্পেস নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিনা, মাথা ঘামাচ্ছি, সিনেমার স্থান ও সময়ের মাত্রা নিয়ে। অর্থাৎ কোন শটটি কতক্ষণ এবং কোন সুতোটি কতটা লম্বা। এই জিনিসটি নির্ধারণ করা, বিশেষ করে বাংলা নন-ন্যারেটিভ সিনেমায় ভীষণ কঠিন। কারণ, প্রথমত: হাতে কোনো গাইডবুক নেই। দ্বিতীয়ত: স্ক্রিপ্টরাইটার থেকে শুরু করে পরিচালক হয়ে এডিটার পর্যন্ত সক্কলেই জানেন, যে তাঁরা একটি "অন্যরকম' জিনিস বানাচ্ছেন। অতএব খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যেকটা দৃশ্যের প্রত্যেকটা ডায়ালগ কম্পোজ করার সময় মাথায় আসতে থাকে, জিনিসটা যথেষ্ট স্মার্ট হল তো? লোকে বলবেনা তো মেলো হয়ে যাচ্ছে? এটা মাথায় রাখতে গিয়ে ফিলমের বেসিক জিনিসটাই মাথা থেকে হাওয়া হয়ে যায়। যে, শিল্প মানে চাট্টি স্মার্ট জিনিসের যোগফল নয়। যে, স্মার্টনেসের অভিঘাত বাড়ানোর জন্যই দুটি স্মার্ট তরঙ্গের মধ্যে কিছুটা নি:শ্বাস ফেলার অবকাশ দরকার। নচেৎ, স্লোগানের মতই, বহুব্যবহারে জীর্ণ হয়ে স্মার্টনেসও হারিয়ে ফেলে তার তীক্ষ্ণতা। আঘাত করার বদলে বিরক্তি উৎপাদন করে।

    টাইম-স্পেসের দিক থেকে এই ফিলিমটি এই স্মার্টনেস-সিকনেসকে জয় করেছে। বেশ কয়েকটি জিনিস আছে, দৃশ্য আছে, যা প্রথম দর্শনে বেশ ভোঁতা মনে হয়। জনৈক ফিল্ম বাফ বন্ধু অনুযোগও করেছেন, যে এগুলো বাদ দিলে ভালো হত। কিন্তু আসলে এরা পার্ট অফ দা গ্র্যান্ড ডিজাইন। এদেরকে বাদ দিলে দুটি তরঙ্গের মধ্যে যে ব্রিদিং স্পেস দরকার সেটা আমরা পেতামনা। এবং সিনেমাটি ঝুলে যেত।

    পরিচালক, এডিটার এবং চিত্রনাট্যকারকে অভিনন্দন, যে স্মার্ট হয়ে ওঠার জন্য যে প্রবল চাপ, এক্সটার্নাল এবং ইন্টারনাল, তাকে তাঁরা ইগনোর করেছেন। এবং এই ইগনোরেন্সের মধ্যে দিয়ে ফুটে বেরিয়েছে যে চরিত্রঐশিষ্ট্য, যার নাম সাহস। যার নাম আত্মবিশ্বাস। এই গ্লোবাল বাজারের লোকাল একজন বাঙালী ফিলমওয়ালার কাছ থেকে কতো কতো কতো দিন পরে একটুকরো আত্মবিশ্বাস পাওয়া গেল, আসুন, আপাতত: সেটুকুকেই সেলিব্রেট করার যাক। চিয়ার্স। আপাতত: এই সেলিব্রেশানটুকুতেই শেষ হোক, মুখে একটু মিষ্টি স্বাদ লেগে থাক, আরও কিছু মনে পড়লে পরে লেখা যাবে।

    অক্ষ:

    আরেহ জিও এই তো নেমেছে। শুধু নেমেছে না রাপচিক নেমেছে। শুধু রাপচিক নামেনি, তর্ক করার এতোগুলো সুতো জলে ছেড়ে নেমেছে এত ভালো ভালো কথা, এবার আমি একটু নিন্দে করি।
    প্রথম প্রশ্ন, আমার খুব জানার ইচ্ছে যাঁরা বইটা পড়ে সিনেমা দেখেছেন ভার্সাস যাঁরা বইটা পড়েন নি (যেমন আমি) তাঁদের এই সিনেমা সম্বন্ধে বক্তব্য।
    দ্বিতীয় কোশ্চেন - ঈশান, আধা স্বপ্ন, আধা জাগরণের ঐ সিকোয়েন্স গুলোতে ইউরোপিয়ান ইনফ্লুয়েন্স নিয়ে কোনো বক্তব্য?
    তৃতীয়, এবং ক্যাঁইমাই করে উঠোনা, শুভাশিসের অভিনয় কোথাও কোথাও অতিনাটকীয়, ইন ফ্যক্ট excessive
    বলে মনে হয়নি? এবং এই প্রসঙ্গে, সুমনের নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড কতটা দায়ী? স্টেজের ভাষা আর সিনেমার ভাষার তফাৎ কি মানবো আমরা?
    চতুর্থ, ঐ র‌্যাশনালিটি বনাম স্কিজোফ্রেনিয়া, ঐটা যদি খেতেই হয়, তাহলে লাস্ট সিন'এ ডিরেক্টর একটি obvious ঘটনা, অর্থাত, গ্রেনেড কোত্থেকে তোষোকে আমদানি হয়েছে, সেট explain করা with bold underline খুব কি জরুরী ছিল? ঐ পুরো সিকোয়েন্স, সাথে সব্যসাচীর গম্ভীর মুখ করে বলা, কখন কোথায় কি ফেটে যেতে পারে তা বোঝা মুশকিল, এই দুটো সিন সিনেমাটাকে আমার মতে অনেকটাই খেলো করেছে।
    এবার সবচেয়ে petty কিন্তু বেশ বিরক্তিকর, কিছু ডায়লগ, ফ্যান তোলার সময় জোর করে উ: আ: আওয়াজ, তোষোক টানার সময়, "হ্যাঁ এদিকটা ধর, টান" আবার "উ: আ:" বড্ড অ্যামেচারিস।
    কিন্তু হক কথা, অনেকদিন পর কোনো বাংলা সিনেমা দেখে মনে হল, অন্যরকম কিছু হল একটা, প্রথম সুমনের গান শোনার পর যেমন হয়েছিল।

    ও: আরো দুইখান কথা কত্তা! একেবারেই নন-ন্যারেটিভ কোনো এলিমেন্ট সেরকম ভাবে এই সিনেমাতে আছে বলে মনে হয়নি আমার। আর কলকাতা? কলকাতার কথা বল্লেনা? যেভাবে ওতোপ্রোত ভাবে সারা সিনেমা জুড়ে লেপের মত?

    ইশান:

    হ্যাঁ, যে কথা হচ্ছিল। থিয়েটারের প্রভাব।

    তিস্তাপারের বৃত্তান্তের প্রথম দৃশ্য মনে পড়ে? অনেক লোক এক সাথে দাঁড়িয়ে ছিল স্টেজের উপরে? প্রকৃত পক্ষে অনেক লোক মোটেও ছিলনা স্টেজে। স্টেজের উচ্চতা এবং গভীরতাকে ব্যবহার করা হয়েছিল অনেক লোকের ইল্যুশন তৈরির জন্য। উচ্চতা এবং গভীরতাকে ভাঙ্‌চুর করার এই প্রবণতা, মনে হয় সুমন থিয়েটার থেকেই পেয়েছেন, হারবার্টে প্রায়শ:ই ফ্রেমগুলোতে এর ব্যবহার পাই। বিভিন্ন হাইট, অসমসত্ব টেক্সচারের ব্যবহার ... উত্তর কলকাতার পুরোনো পাড়ার অন্তরঙ্গ এবং বহিরঙ্গের সঙ্গে একদম মিলে মিশে গেছে, যাকে বলে খাপে খাপ পঞ্চার বাপ।

    থিয়েটারের দ্বিতীয় প্রভাব দেখা গেছে নাটকীয়তা তৈরির পদ্ধতিতে। আগেই বলেছি, যে ক্লাইম্যাক্স এবং স্মার্টনেস, এদেরকে দুমদাম করে সর্বত্র গুঁজে দেওয়া যায়না। কিছু আপাত: নন-স্মার্ট, ভোঁতা দৃশ্য/ডায়ালগ না থাকলে ক্লাইম্যাক্সকে ক্লাইম্যাক্স বলে, নাটকীয়তাকে নাটকীয়তা বলে, স্মার্টনেসকে স্মার্টনেস বলে চেনা যাবেনা। সুমন এই জিনিসটা দিব্য জানেন। অতএব অবশ্যই কিছু ভোঁতা মাল আছে, ডায়ালগ আছে, দৃশ্য আছে, কিন্তু পুরো কম্পোজিশনের গ্র্যান্ড ডিজাইনে এদেরকে ছাড়া চলত না।

    হ্যাঁ, এখানে স্বীকার করে নেওয়া ভালো, এই দিয়ে অক্ষর চার নম্বর পয়েন্টটা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছেনা। ঐ পয়েন্টটায় আমি এক্কেবারে ফ্ল্যাট। তোষোকে গ্রেনেড কোথা থেকে এলো, এটা বড্ডো চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। মূল বইয়েও এই ব্যাপারটা ছিল, সেটা এখানে কোনো যুক্তিই হতে পারেনা। আসলে এটাও ঐ থিয়েটারের ব্যাকগ্রাউন্ডেই লুকিয়ে আছে মনে হয়। জনতা মারবেননা, কিন্তু থিয়েটারের কম্পোজিশান এবং অভিনয়, দুইই ফিল্মের চেয়ে একটু মোটা দাগের হয়ে থাকে। অন্য কোনো কারণে নয়, থিয়েটারে ব্রেক নেবার সুযোগ কম, এক্সপ্রেশনে ক্লোজ আপ দেখানো যায়না, ইত্যাদি ইত্যাদি কিছু সঙ্গত কারণ আছে এর পিছনে। যাত্রা যেমন নাটকের চেয়ে লাউড, নাটকও সিনেমার চেয়ে একটু বেশি লাউড। তো, এই সিনেমাটি, একটি সিনেমার পক্ষে একতু বেশিই লাউড। নি:সন্দেহে। জায়গায় জায়গায়।

    কিন্তু কথা হল, সিনেমাকে সিনেমা হয়ে উঠতেই হবে, সেরকম মাথার দিব্বি কে দিয়েছে? লাউড হয়েও যদি দেখতে দিব্য লাগে, সেটাকে তো সিনেমার নতুন ঘরাণা বলেও চালানো যায়। যায় নাকি?

    সোমনাথ:

    একটা ছোট্টো কথা

    নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখালেখি সাধারণত: একটি মাত্র স্পটলাইটের মুখাপেক্ষী নয়। কোনো ফোকাসড বিষয় ছাড়াও তাঁর শব্দ ছুটে ছুটে আঘাত করে নানাবিধ পারিপার্শ্বিক। আমি মানছি না সুমন মুখোপাধ্যায় সিনেমা বানাচ্ছেন বলেই এই বহুবর্ণ হীরকদ্যুতি কাটছাট করে মনোক্রোমাটিক স্পটলাইটের আমদানি করবেন, যার নাম দেওয়া হল, আমরা দিলাম, যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।

    '৭০ এর ছাত্র আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। সেই সময়সারণীর কোনো লুকোনো বিস্ফোরক আজও, আগামীতেও, যে কোনো দিন নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে, করবে। সব চেতনা নিভে যায় না, যেতে পারে না। এটা একটা মেসেজ। যেমন একটা মেসেজ যুক্তিবাদেরও নিষ্ঠুর মৌলবাদী হয়ে ওঠার পোটেনশিয়াল আছে। এই কথাটা "যুদ্ধপরিস্থিতি"তেও ছিল। একজন সেই যুগে কিছু অস্ত্র পুঁতে রেখেছিল মাটির তলায়। যদিও সেখানে একটা আলতো হতাশা ছিল, যে, সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর হাইরাইজ উঠে গেছে।
    কাঙাল মালসাট-এ আরো স্পষ্ট হয়ে এসেছে এই মেসেজ। মাটি খুঁড়ে পাওয়া যাচ্ছিল পুরোনো চাকু, সোর্ড, পর্তুগিজ বেবিকামান ইত্যাদি। ইতিহাসের সমস্ত গণঅভ্যুত্থানের যন্ত্রণা আর শিক্ষা মাটির বুকে মাটি হয়ে আছে। চাই চোখ, চাই খুঁজে নেওয়ার তাগিদ, উদ্যম। হারবার্টে কথাটা আরো কঠিন। তুমি চাও বা না চাও, তুমি খোঁজো বা না খোঁজো সমস্ত সিস্টেমকে চমকে হতচকিত করে যে কোনো সময় আমাদের ইতিহাস জ্বলে উঠতে পারে। আমাদের বিবর্ণ বেঁচে থাকায়, মৃত্যুতে আগুন লেগে যেতে পারে।

    আমি অন্তত: মনে করি, শুধু মাত্র যুক্তিবাদকে আঘাত করার তাগিদ এই কথাটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়ার পথে এসে দাঁড়াতে পারে না। সিনেমাতেও নয়।

    ইন্দ্র:

    ১। যদি তক্কের খাতিরে ধরেই নেওয়া হয় মনোক্রোমাটিক ইত্যাদি, তাতে অসুবিধা কি হল? সুমনের সিনেমা সুমন বানিয়েছে, যেভাবে খুশি, তাতে সোমনাথের কি ! পাঁচু তেলি অথবা নবারুণ ভট্টাজেরই বা কি! সিনেমা ভালো হলেই হল। হার্বার্ট নামক সিনেমাকে হার্বার্ট নামক উপন্যাসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার মানে বুঝলাম না।
    ২। ওরকম মনোক্রোমাটিক-টোমাটিক বলে কিছু হয় না। সারপ্লাস মিনিং-এর বই খোলো। এটা অবিশ্যি সোমনাথো জানে। জোশের মাথায় বলে ফেলেছে আর কি।
    ৩। " '৭০-এর ছাত্র আন্দোলন .... ''
    ছাত্র আন্দোলন? শুধুই ছাত্র? ৭০ নিয়ে এই রোমান্স কি এখনো চলবে- আহা, কতগুলো ছাত্র, কি ভালো ছাত্র সব ....
    যেন একটাও চাষা, একটাও কলের মিস্তিরি , একটাও ফুটপাথের ফিরিওলা '৭০-এ ঘর ছাড়েনি। যেন মধ্য-উচ্চবিত্ত ঘরের সোনার টুকরো ছেলেরা রাস্তায় না নামলে '৭০-এর তেমন মান-ইজ্জত হত না। ভাগ্যিস প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরের ছেলেমেয়েরা ছিল !

    সোমনাথ:

    কথাটা খুব সোজা।
    এই থ্রেডে এর আগের লেখালেখির যা নির্যাস তা থেকে এই ধারণা গড়িয়ে আসছিল - অন্তত: আমার কাছে - যে, হারবার্ট সিনেমাটির যে "থিম সং" ("স্পটলাইট" - আমার ভাষায়) এর কথা ঈশান বলেছে তার একটি, অর্থাৎ "র‌্যাশনালিটি বনাম সিজোফ্রেনিয়া" "ঐটা যদি খেতেই হয় তাহলে" "লাস্ট সীনে গ্রেণেড কোত্থেকে তোষকে আমদানি হয়েছে" দেখানো জরুরি ছিল না।

    আমার এইটুকুই বলার - আমি মানছিনা যে সিনেমাটি উপরে কচলানো "যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ" নামক কোনো থিম সং বা স্পটলাইট মুখাপেক্ষী। সেখানে অনেক কিছুই দেখানো হয়েছে - বর্ষণমুখর চিলছাতে কিশোর হারবার্টের হস্তমৈথুন ও পছন্দের মেয়েটিকে চিঠি দিয়ে ধরা পড়ে বন্ধুর আত্মহত্যা থেকে শুরু করে হারবার্টের উপরে তার দাদার নাজায়েজ জুলুমবাজী, ঠকানো কিংবা নকশালপন্থী প্রেসিডেন্সী পড়ুয়া খুড়তুতো ভাইয়ের কার্যকলাপের ডিটেলস মায় পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ (কবীর সুমন কৃত, যে অংশের ডায়লগ লাইন বাই লাইন "যুদ্ধপরিস্থিতি" উপন্যাস থেকে নেওয়া)। অর্থাৎ যৌন-অবদমনের বিপ্রতীপে একক বিদ্রোহগুলি, একটি প্রান্তিক মানুষের উপর ঘটে চলা মেইনস্ট্রীম শোষণগুলি, শাসনতান্ত্রিক এসট্যাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া শেষতম ওয়ারফেয়ারটির হ্যালোজেন নজির এবং ইত্যাদি প্রভৃতি আরো অনেকানেক বর্ণবাহুল্য যার একটি অবশ্যই, আমার মতে, ইতিহাসের দধিচিহাড় চিনিয়ে দেওয়া আজকের বজ্রসন্ধানীদের - যা আগের লেখায় বলেছি।

    তো, র‌্যাশনালিটির বিরুদ্ধে চাবুক চালানো হচ্ছে বলে এমনকি ঘটে যাওয়া একটি ধামাকার পিছনের কারণটি দেখিয়ে দিলেই মেসেজটি মোটাদাগের গজাল-ঠোকা ধ্যাস্টামো হয়ে গিয়ে সিনেমাটির স্পটলাইট থিমসং কে ক¾ট্রাডিক্ট করল এইটেই আমি মানলাম না।
    অর্থাৎ
    ১। পুরো "স্পেকট্রাম"টাই মোটামুটি তোলা হয়েছে সিনেমাতে, যেখানে যতটুকু "হাইলাইট" দরকার সব মিলিয়েই।
    ২। সিনেমাটি মোনোক্রোমাটিক নয়। আগের পোস্ট এর বক্তব্য ঠিক তাই ছিল। অর্থাৎ শুধুমাত্র যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সিনেমাটির স্পটলাইট নয়।
    ৩। ছাত্র আন্দোলন। এইটে আমার টার্মিনোলজী। যেমন কৃষক বিদ্রোহ, নৌ বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ ইতিহাসের টার্মিনোলজী। সেসব ক্ষেত্রে উল্লিখিত জনতা ব্যতীত কারা কারা ছিল তা নিয়ে বিশেষ গবেষণা হয় না। তবে কারা ব্যপারটা শুরু করেছিল নামকরণে অন্তত সেই গুরুত্বটুকু দেওয়া হয়। এটা আমার ব্যবহৃত নাম এবং সেটা সঠিক না ও হতে পারে। সকলের পছন্দসই না ও হতে পারে।

    সারপ্লাস মিনিং নিয়ে কিৎসু বলার আর রইল না তাহলে। ঠিক কিনা?

    অক্ষ:

    পরিষ্কার লেখা "সুমন মুখোপাধ্যায় সিনেমা বানাচ্ছেন বলেই ..... মোনোক্রোমাটিক আমদানি করবেন ... " বানাচ্ছেন বলে"ই" মানে কি তাহলে?
    দ্বিতীয়ত, কথার পাশে কথা চাপালেই হল নাকি? ছাদের ওপর বৃষ্টিতে হস্তমৈথুন এর বিপ্রতীপে একক বিদ্রোহ? কেন ঘুড়ি ওড়ানোর বিপ্রতীপে নয় কেন? শুনতে তেমন কেতাদুরস্ত হয়না বলে? ঘটে যাওয়া ধামাকার পেছনে কারণটা দেখালো বলেই, প্রশ্ন কারণটা দেখানোর প্রয়োজন কেন অনুভব করল। কেন করল? কি জন্যে দেখানো তাহলে? সবই হাওয়ায়ে উড়িয়ে দুটো ফেনোমেনোলজিকাল বাজারে ছেড়ে দিলেই হল? এই বলা হল স্পট্‌লাইট থিম সং বলে কিছু নেই, আবার তারপরেই বক্তব্য - দেখানো হল মানেই ক¾ট্রাডিক্ট হলনা। থিম সং নাই থাকলে আর তার ক¾ট্রাডিক্‌শন নিয়ে কচলানি কেন তাহলে?

    ইন্দ্র:

    বহুত কিছু বলার আছে। কিন্তু সময় অল্প তাই কম কম।
    সারপ্লাস মিনিং ভালো, কিন্তু অদীক্ষিতের হাতে না। "ঘোড়ায় ঘাস খায়' এই বাক্যবন্ধের নানাবিধ মানে থাকতে পারে, এমনকি যে জম্মেও কোনোদিন ঘোড়া এবং ঘাস দেখে নি, গুগলেও না,-তার কাছেও হয়তো একটা মানে আছে। থাকুক। কিন্তু সেই মানে সে জবরদস্তি বাজারে চালাবার চেষ্টা করলে ঘোড়া ঘাসটাস খাওয়া ভুলে ফ্যাক করে হেসে ফেলতে পারে।
    উদ্ধৃত করা যাক : " তবে কারা ব্যাপারটা শুরু করেছিল, নামকরণে অন্তত সেই গুরুত্বটুকু দেওয়া হয়।'
    কারা ব্যাপারটা শুরু করেছিল, সোমনাথ? ১৯৬৭ সালের মে মাসে, নকশালবাড়ি গ্রামে?
    একটা বড়সড় আন্দোলনে সমাজের নানাশ্রেণীর লোক থাকে এবং তাদের নিজস্ব নানা অ্যাজেন্ডাও থাকে, নইলে আর তারা বিদ্রোহ করবেই বা কেন। কিন্তু সেই সঙ্গে এক/ একাধিক মূল লক্ষ্যও থাকে-নানাবিধ চুলের মধ্যে যেমন গোঁপ- যা দিয়ে সেই আন্দোলনকে যায় চেনা। নকশাল বাড়িও, মাইরি বলছি, কুৎসিত গোদা বাংলায় বললে- দিনের শেষে সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে কৃষক অভ্যুত্থান-ই ছিল। (কি ভয়ানক সরলীকরণ ! ডিডিদা রাগী হলে আমায় বেঁধে পেটাত।)
    এখন যদি বলিস, মূল লক্ষ্য আর মূল থাকল কৈ, ছেরাদ্দ তো সেই গড়াতে গড়াতে কলকেতার কালেজে-কালেজে, অলিতে-গলিতে এসে ঠেকল-তাহলে অবিশ্যি খানিক ঢোঁকটোক গিলে মেনে নিলেও নিতে পারি।
    কিন্তু তার বদলে এমন লোপ্পা ক্যাচ? সোমনাথ?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ১১৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন