দিল্লী এনসিআর এলাকায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব, বিশেষত মানুষজনের ওপর এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে লেখার আগে, নিজের পরিচয়টা একটু দিয়ে রাখা দরকার। পরিচয়টা শুধুমাত্র কাজ আর পেশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই, কারণ সেটুকুই প্রাসঙ্গিক। আমি ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিক রিসার্চ সংস্থার মধ্যস্থিত ন্যাশানাল ডেটা ইনোভেশান সেন্টারে কাজ করি। আমাদের সেন্টারের কাজের ধরণটা অধিকাংশ থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের থেকে একটু আলাদা। আমাদের মূল লক্ষ্যটা হল কিভাবে ভালো মানের ডেটা সংগ্রহ করা যায়, যে ডেটা কিনা রিসার্চের কাজে এবং অনেক সময় পলিসি নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় বা হওয়া উচিত। ডেটা বা তথ্যর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আজকাল অনেকেই ওয়াকিবহাল, কিন্তু ডেটার গুনগত মান নিয়ে ততটা নয়। ভালো মানের ডেটা সংগ্রহ করার জন্য যে বিশেষ দিকগুলোর দিকে নজর দেওয়া দরকার এবং যে প্রচেষ্টার দরকার, সেটা কখনোই সেরকম গুরুত্ব পায় না। ভালো মানের ডেটা পাওয়ার জন্য অনেকগুলি বিষয় জরুরি- সেটা ভাল প্রশ্নোত্তর ডিজাইনের মাধ্যমে হতে পারে, ডেটা সংগ্রহের প্রযুক্তি-ভিত্তিক পদ্ধতিগুলি ব্যবহারের মাধ্যমে হতে পারে, আবার রিয়েল-টাইম সার্ভে ডেটা এবং সার্ভে প্রশেস ডেটা (প্যারাডেটা) ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের ক্রিয়াকলাপের রিমোট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে। সাথে প্রোবাবিলিটি স্যামপ্লিং টেকনিকের সঠিক প্রয়োগ, স্যাম্পেল এর সাইজ এবং প্রতিনিধিত্বশীলতা- এই ব্যাপারগুলো তো রয়েইছে। মোদ্দা কথা হোল, ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতিটা যে একটা বিজ্ঞান যেটা স্যাম্পেল এর উপর ভিত্তি করে পুরো পপুলেশান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে- এই ব্যাপারে সচেতনতার যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালেও তথ্যর গুণগত মানের ব্যাপারটা ঘুরে ফিরে এসেছে, এবং সরকারের নানান স্তরে অস্বস্তিকর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
গত মার্চ মাসে আমাদের সেন্টারের ডেটা কালেকশন সম্পর্কিত গবেষণা এবং নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দিল্লী এবং তার আশেপাশের এলাকায় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছিলো। পনেরোই মার্চের পর করোনাভাইরাসের কারণে তথ্য সংগ্রহ মাঝপথে বন্ধ করতে হয়। একদিকে আমাদের সমীক্ষার দলটি আকারে বেশ বড়ই (চল্লিশ জনের মত)- তাদের সকলের কর্মসংস্থানের চিন্তা, অন্যদিকে বহুজনের বহু প্রচেষ্ঠায় এতদিন ধরে ট্রেনিং দিয়ে ঘষামাজা করে দলটাকে তৈরী করা হয়েছে। তখনো এই মহামারীর প্রকোপ সম্পর্কে সম্যক ধারণা আমাদের কারোরই তৈরী হয়নি। আমাদের পূর্ব-পরিকল্পিত তথ্য সংগ্রহের কাজ আবার কবে শুরু হবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না- কিন্তু আমরা সমীক্ষার দলটিকে ছেড়ে দিতে চাইছিলাম না। দ্রুত টিমের মধ্যে আলোচনা করে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত টেলিফোন সার্ভের সিদ্ধান্ত হয়। পরিস্থিতির বিচারে এটার দরকার ছিলো, আবার ইন্টারভিউয়ারদের বাড়ি থেকে কাজ করতে কোনো অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, যেহেতু টেলিফোন সার্ভে। সবারই স্মার্টফোন এবং সাথে ইন্টারনেট ডেটার সুবিধে আছে, আমাদের শুধু রিচার্জ করতে হবে।
গত এপ্রিল মাসে, টিমের সকলের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ইন্টারভিউয়ারদের অদম্য উৎসাহ আর দায়বদ্ধতার সৌজন্যে আমরা টেলিফোন সার্ভের দুটো রাউন্ড শেষ করতে পেরেছি। এই টেলিফোন সার্ভের পোষাকি নাম “দিল্লী এনসিআর করোনাভাইরাস টেলিফোন সার্ভে (ডিসিভিটিএস)”। সবার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি যে, দিল্লী এনসিআর শুধুমাত্র দিল্লী নয়, দিল্লীর আশেপাশের অনেক জেলাই এই ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে- হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান এবং দিল্লী মিলিয়ে মোট ৩১ টি জেলা (এটা ২০১৬-১৭ র রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন আরও বিস্তৃত হয়েছে)। প্রাসঙ্গিক তথ্যটি হোল যে আমাদের স্যাম্পেলে প্রায় সমান অনুপাতে শহুরে এবং গ্রামীণ পরিবার উভয়ই অন্তর্ভুক্ত, যদিও নামটা শুনে অনেকেই এটাকে একটা আর্বান সার্ভে বলে ভুল করতে পারেন। ডিসিভিটিএসের প্রথম রাউন্ডটি ৩-৬ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হয়েছিল; আর দ্বিতীয় রাউন্ড পরিচালিত হয়েছিল এপ্রিলের ২৩-২৬ এর মধ্যে। এভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল যাতে সার্ভে দুটি লকডাউন শেষ হওয়ার পূর্ব ঘোষিত দিনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে শেষ হয় এবং সার্ভে থেকে সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণ করে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট অন্তত প্রকাশ করা যায় লকডাউন শেষ হওয়ার আগে। দুটি সার্ভের স্যাম্পেল সাইজ কমবেশি ১৮০০ র কাছাকাছি। সার্ভের পদ্ধতিগত বিস্তারিত বিবরণ আমাদের ওয়েবসাইটে আছে, এখানে এই সমীক্ষার কিছু ফলাফল এবং তার প্রভাবের ওপর জোর দিতে চাই।
কোভিড-১৯ মহামারীর সামগ্রিক প্রভাব বুঝতে গেলে, শুধুমাত্র কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, এই রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা, কোভিড-১৯ কেস সনাক্ত করতে পরীক্ষার সংখ্যা- এই সূচকগুলোর ওপর জোর দিলে হবে না। এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলোর পূর্বাভাসও একটি অসম্পূর্ণ চিত্রই প্রকাশ করে, কারণ মডেলগুলো বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন বয়েসের এবং পেশার মানুষ- মহিলা ও পুরুষ- কিভাবে সামাজিক ভাবে মেলামেশা করে সেই জটিল ব্যাপারটাকে একত্রিত করতে পারে না কারণ ডেটা নেই। আবার মহামারীটির প্রভাবের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে মডেলগুলো শুধুমাত্র উপরোক্ত সূচকের কথাই বিবেচনা করে- ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলো বলে যে দু-সপ্তাহ লকডাউনের থেকে চার-সপ্তাহ লকডাউন ভালো, চারের থেকে আট ভালো ইত্যাদি। কিন্তু সার্বিক বিচারে সেটা ঠিক নাও হতে পারে, দেখা যাক আমাদের সার্ভে কি বলে।
প্রথমে দেখা যাক লকডাউনের প্রভাব দিল্লী এবং তার আশেপাশের এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের ওপর কিরকম। ডিসিভিটিএস-২ সার্ভের বেশিরভাগ উত্তরদাতা (৮২ শতাংশ) জানিয়েছিলেন যে তাঁদের পরিবারের আয় কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সমীক্ষার আগের দু'সপ্তাহে। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দৈনিক মজুরি কর্মী এবং ছোটো ব্যবসায়ী পরিবার, ডিসিভিটিএস-১ এর ফলাফলও প্রায় একই কথা বলে। গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলের পরিবারগুলিতে আয় হ্রাসের তীব্রতা অনেক বেশি। শহরে প্রায় ৫৪ শতাংশ পরিবার জানিয়েছিলেন যে তাঁদের আয় ও মজুরি অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে (রিডিউসড ভেরি মাচ), গ্রামের দিকে এই সংখ্যাটা ৪৬ শতাংশ।
ডিসিভিটিএস-২ সার্ভের ফলাফল অনুযায়ী প্রায় ৭২ শতাংশ দৈনিক মজুরি কর্মী বা ঠিকা শ্রমিক জানিয়েছিলেন যে তাঁদের আয় ও মজুরি অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, নিয়মিত বেতনভোগী কর্মী (৪১ শতাংশ) এবং কৃষকদের (৩৪ শতাংশ) ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির মাত্রা অনেকটা কম ছিল। দৈনিক মজুরি কর্মী, কৃষক, এবং ব্যবসায়ের সাথে জড়িত লোকেদের মত বেতনভোগী কর্মীদের পক্ষে মাসের মাঝামাঝি আয়ের হিসেব করা সহজ নয়। সুতরাং বেতনভোগী কর্মীদের জন্য আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম লকডাউনের সময় তাঁরা মার্চ মাসের বেতন পেয়েছিলেন কিনা। প্রায় ৬২ শতাংশ বেতনভোগী কর্মীরা সম্পূর্ণ বেতন প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন, আর বাকি ৩৮ শতাংশ হয় কোনোও বেতন পাননি, আংশিক বেতন পেয়েছেন বা লকডাউনের দরুণ চাকরি হারিয়েছেন। এপ্রিল মাসের বেতনের ক্ষেত্রে শতাংশের এই বিন্যাস বদলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। এই পরিসংখ্যানগুলো নিয়মিত বেতনের কাজ- যা কিনা তথাকথিত সুরক্ষিত কাজ হিসেবে ভাবা হয়- তার মধ্যেও যে বিপুল বৈচিত্র বিরাজমান এবং বেতনভোগী কর্মীরাও মহামারীর সময় কতটা অসহায় এবং আর্থিকভাবে নিরাপত্তাহীন সেদিকে আলোকপাত করে। কৃষক এবং তাঁদের পরিবারের আয় এখনো পর্যন্ত সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি- এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে। অনেক জায়গাতে এখনো রবি ফসল কাটার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি (সার্ভের সময়)। কিছু ক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য লকডাউনের নিয়মের ব্যতিক্রম রয়েছে। তবে যদি পরিস্থিতির বদল না হয়, অগ্রবর্তী সময়ে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব কৃষিপণ্য বিক্রি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘ লকডাউনের প্রেক্ষিতে ক্রমহ্রাসমান আয় এবং জীবিকার অনিশ্চয়তার মুখে সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা এবং সঠিক টার্গেটিং খুব জরুরি। ত্রাণ যাঁদের দরকার, তাঁরা যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন, সেক্ষেত্রে কিছুলোক দরকার ছাড়া পেলেও ক্ষতি নেই। ডিসিভিটিএস-২ সার্ভে, স্যাম্পেলের পরিবারগুলোর কাছে সরকারি ত্রাণের প্রাপ্তি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছিল। সার্ভের আগের ৩০ দিনের মধ্যে দিল্লী এনসিআরের ৪৭ শতাংশ পরিবার অতিরিক্ত রেশন (চাল, গম, ডাল ইত্যাদি) পেয়েছিল, যদিও গ্রাম (৫২ শতাংশ) এবং শহরের (৪২ শতাংশ) পরিবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় ২৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছিলেন যে সরকারের থেকে অতিরিক্ত নগদ, সার্ভের আগের ৩০ দিনের মধ্যে, তাঁদের পরিবারের কারোর না কারোর ব্যাঙ্ক একাউন্টে জমা পড়েছে। এখানেও গ্রাম এবং শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিরাজমান, যেখানে গ্রামীণ পরিবারগুলোর মিডিয়ান অর্থ প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ১০০০ টাকা, শহুরে পরিবারগুলো পেয়েছে ৫০০ টাকা (মিডিয়ান)। মিডিয়ান প্রাপ্তির মানে হলে যে পঞ্চাশ শতাংশ পরিবার ওই পরিমাণ অর্থ বা তার থেকে কম পেয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য রেখাকে (নূন্যতম প্রয়োজনীয়তা জনপ্রতি প্রতিদিন $ ১.৯০) যদি মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে যে একটা পুরো পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ছিল যৎসামান্য- যেখানে পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা পাঁচের সামান্য বেশি। মাত্র ১৯ শতাংশ পরিবার অতিরিক্ত রেশন এবং অতিরিক্ত নগদ দুইয়েরই সুবিধা পেয়েছে, গ্রামীণ (২৫ শতাংশ) এবং শহুরে পরিবারের (১২ শতাংশ) মধ্যে বিশাল পার্থক্য লক্ষণীয়। এখানে একটা ব্যাপার মাথায় রাথতে হবে যে, আমরা লকডাউনের দরুণ পাওয়া অতিরিক্ত ত্রাণের ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, যেটা তাঁরা অন্য সময় সরকারের পান- সে রেশনই হোক (পিডিএস দোকান থেকে প্রত্যেক মাসে যা পান) বা নগদই হোক (বার্ধক্য ভাতা, বিধবা পেনশন ইত্যাদি)- সেটা বাদ দিয়ে। সরকারি কর্মসূচীর বাইরেও বহু মানুষ এবং বহু সংস্থা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বণ্টনের কাজে হাত লাগিয়েছেন, বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অনেক সময় নিজেদের সংক্রমণের তোয়াক্কা না করে। আমাদের সার্ভেতে সেইধরণের ত্রাণ প্রাপ্তির পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়নি- শুধুমাত্র সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা এবং ব্যাপ্তি ধরার চেষ্ঠা হয়েছে।
এবার টার্গেটিং এর কথায় আসি। যাঁদের ত্রাণ পাওয়া সবথেকে প্রয়োজন- যাঁরা লকডাউনের কারণে আর্থিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন- অর্থাৎ দিনমজুর/ ঠিকা শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবার মোটামোটিভাবে ত্রাণ পেয়েছেন। এই ধরণের পরিবারের মধ্যে ৬৮ শতাংশ বাড়তি রেশন পেয়েছিল (সব পরিবারের মধ্যে যেখানে ৪৭ শতাংশ), প্রায় ৪১ শতাংশ নগদ আর্থিক সাহায্য পেয়েছিল (সমস্ত পরিবারের মধ্যে ২৯ শতাংশ) এবং ৩২ শতাংশ দুধরণেরই সাহায্য লাভ করেছিল (সকলের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ)। তবে প্রায় ৩০ শতাংশ দিনমজুর জানিয়েছিলেন যে তাঁরা প্রয়োজন থাকা স্বত্ত্বেও অতিরিক্ত রেশন পাননি। ত্রাণ পাওয়ার এই পরিসংখ্যানগুলো দিল্লী এনসিআর এলাকার বাইরে, দেশের অন্যান্য প্রান্তে, তুলনামূলকভাবে আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি (অবশ্যই কিছু রাজ্য ব্যতিক্রম- যেমন কেরালা)।
ত্রাণ বণ্টনের ব্যাপারে শহুরে পরিবারগুলোকে যেভাবে অনেকাংশে ত্রাণের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষিতে তা বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। করোনাভাইরাসের প্রভাব তুলনামূলক ভাবে শহরে বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় সংক্রমণের হার গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি। সরকারের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক নীতি আয়োগ ইতিমধ্যে দিল্লী, মুম্বই এবং আহমেদাবাদের মতো বড় শহরগুলিকে "হাই কেস লোড" শহর হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আমাদের সার্ভে থেকে দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলের পরিবারের আয় হ্রাসের তীব্রতা অনেক বেশি। শহরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সামনের দিনগুলিতে আরও তীব্র হতে পারে, উচ্চ সংক্রমণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত শহুরে "রেড জোনে" লকডাউনের বিধিনিষেধ কতটা কঠোর বা শিথিল হয় তার ওপর নির্ভর করবে, বিভিন্ন ধরণের এলাকার মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিরকম নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য থাকে তার ওপরও।
জরুরি পরিস্থিতিতে একটি পরিবারের সরকারি ত্রাণ পাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে সেই পরিবারের কেউ অতীতে কোনো আর্থিক সুরক্ষা প্রদানকারী কর্মসূচীতে নথিভুক্ত ছিলেন কিনা। যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে ভারতে দারিদ্র্যের বিস্তৃতি শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে বেশি, অধিকাংশ সরকারি কল্যাণমূলক কর্মসূচী তাই গ্রাম কেন্দ্রিক। সরাসরি নগদ টাকা জমা দেওয়ার প্রচলিত সরকারি মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হোল এমজিনারেগা, প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি ইত্যাদি। রেশন পাওয়ার জন্য পিডিএস এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রকল্প যথা জন ধন যোজনার ব্যাপ্তিও গ্রামের দিকে বেশি। এই সব সরকারি যোজনাতে নথিভুক্ত পরিবারের সংখ্যা শহরে অনেক কম। বর্তমান লকডাউনের সময় রেশন কার্ড না থাকলেও উত্তর প্রদেশের গ্রামে এমজিনারেগা কার্ডধারীরা পিডিএস এর মাধ্যমে রেশন তুলতে পারছেন। মহিলাদের জন ধন অ্যাকাউন্টে সরাসরি অতিরিক্ত নগদ অর্থ জমা হচ্ছে। তাই গ্রামীণ পরিবারগুলো অনেক বেশি মাত্রায় ত্রাণ পেতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামে অতিরিক্ত নগদ অর্থ কিছুটা হলেও বেশি পাওয়ার আর একটা কারণ হতে পারে বৃহত্তর পরিবার- ফলে একটি পরিবারের মধ্যে একাধিক মহিলা জন ধন অ্যাকাউন্টধারীর উপস্থিতি। এই আর্থিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে শহরের অসচ্ছল পরিবারগুলোকে ত্রাণের ভাগীদারী করতে দিল্লী সরকার কিছু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে- রেশন কার্ড না থাকলে আধার কার্ডের মাধ্যমে রেশন পাওয়া যাবে, কোনো পরিচয়পত্র না থাকলেও ত্রাণ পাওয়া যাবে ই-কুপনের মাধ্যমে যা কিনা সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির থেকে জোগাড় করতে হবে। আমাদের সার্ভেতেও দিল্লীর পরিবারগুলোর ত্রাণ পাওয়ার ঘটনা সামান্য হলেও বেশি ধরা পড়েছে- যেখানে দিল্লীতে সার্ভের আগের ৩০ দিনের মধ্যে ৪৫ শতাংশ পরিবার অতিরিক্ত রেশন পেয়েছিল, সেখানে হরিয়ানা, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশের শহুরে পরিবারগুলোর ৪০ শতাংশ তা পেয়েছিল (যদিও এটা উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নয়)। ছোটো শহরগুলোতে ত্রাণ বণ্টনের ক্ষেত্রে এধরণের নমনীয়তা বেশি দরকারি। সামনের দিনগুলোতে লকডাউন চলুক বা নাই চলুক, আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সুরক্ষার জন্য সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থা আগামী কয়েক মাসের জন্য অব্যাহত রাখা এবং তার প্রসার অবশ্যই দরকার।
খুবই জরুরি তথ্য। সবাই বুঝতে পারছে সার্বিক ত্রাণ কতটা জরুরি, শুধু সরকার চাল ডালের বেশি ভাবতে পারছে না। আর সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা। বিচার বিভাগের ভুমিকা নিয়ে আমরা গর্ব করতাম।
সত্যি আর্থিক ভাবে কিছু লোক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের জন্য ত্রাণ কার্য খুবই জরুরি।
খুব দরকারি আর তথ্যবহুল লেখা। আমি খুব উপকৃত হয়েছি।