এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপার বাংলা

  • বডোল্যান্ডের জনগোষ্ঠীগত সংঘাত সম্পর্কে

    সুশান্ত কর লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ৩১ জুলাই ২০১২ | ১১২২ বার পঠিত
  • আসামে যা ঘটে গেল তা আমাদের কাছে কেমন এক হঠাৎ হিংসার মতো চমক নিয়ে এলো। আদতে শুধু আসাম নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত সম্পর্কেই দেশের বাকি অংশ বড়ো কম জানে, জানতে চায়। সাম্প্রতিক হিংসার প্রেক্ষাপটে অপার বাংলার এই অংশটি নিয়ে এবারের বুলবুলভাজায় রইল এক গুচ্ছ লেখা।


    গেল বারো বছরে অসমে সরকারী হিসেবে ৪২৪ জন লোক মারা গেছেন, ৫০,৭০০০ লোক গৃহহারা হয়েছেন। গোষ্ঠীগত সংঘর্ষে। এদের সিংহভাগ মুসলমান। মুসলমান মরলেই বলা হয়, এসব অনুপ্রবেশকারীর কাণ্ড। তাই যদি হয় তবে কি এটা ভালো নয়, তারা আসুন দলে দলে বাংলাদেশ থেকে আর স্বধর্মীয়-স্বজাতীয়দের মেরে কেটে তাড়িয়ে দিন, সংখ্যা কমে যাবে অনুপ্রবেশকারীর? এক কালে অসমের সমস্ত উগ্রপন্থী দলগুলো সম্পর্কে জনপ্রিয় অভিযোগ ছিল এরা আই এস আই-র সহযোগী। এখন যখন এরা আত্মসমর্পণ করে আলোচনার টেবিলে এসছেন, সব্বাই হিন্দুত্ববাদীদের বন্ধু হয়ে গেছেন। একজন গান ধরলে অন্যজন দোহার দিচ্ছেন। আর সেই সব মুসলমান উগ্রপন্থীর দল গেল কোথায়! যাদের কথা, এই সেদিনও ঘন ঘন শোনা যেত? তারা যে কেউ আত্মসমর্পণ করল না, ধরাও পড়ল না আলোচনার টেবিলেও এলেন না। অথচ , কৈ বিএলটি, এন ডি এফ বি, আলফা কেউতো বলে না আমাদের ধরে এনেছো, মুসলমান উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দিলে যে! বাংলাদেশ সরকার এদের ধরিয়ে দিলে বলে কাগজে কাগজে কত প্রশংসা প্রশস্তি! কিন্তু কেউতো জিজ্ঞেস করেনা, ও মেডাম হাসিনা, আপনি দেখি মুসলমান উগ্রপন্থীদের বেশ লুকিয়ে রেখেছেন! বলবে কি, বলবার মুরোদ থাকলে তবে তো! ঝুলির বেড়াল যে বেরিয়ে যাচ্ছে। এবারে তাই কেউ মুসলমান উগ্রপন্থীর নাম না নেয়াটাই নিরাপদ ভাবছেন। পারেও বটে হিন্দুত্ববাদীরা। এমনি হয়, এদের আখ্যান নির্মাণ!

    লেখার শুরুতেই একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চাই। অসমের বডোল্যান্ডের বর্তমান সংঘাতটা মোটেও হিন্দু মুসলমান লড়াই নয়। বডো পক্ষে হিন্দু-খৃষ্টান দুইই আছেন। কিন্তু গোটা পূর্বোত্তরেই জনজাতিআধিপত্যের রাজনীতি যারা করেন তাদের অন্য অনেক লক্ষ্য থাকলেও মুসলমান এক প্রিয় টার্গেট। বন্ধুদের মনে থাকবে বছর কয় আগে অরুণাচল থেকে প্রবল বাংলাদেশীবিতাড়ন শুরু হয়েছিল। পরে অসম সরকার-ই বলেছে, এরা সবাই ভাটি অসমের মুসলমানশ্রমিক। বডোল্যান্ডে আপাতত দৃশ্যত এটা বডো-মুসলমান এই দুই পরিচিতির সংঘাত। এতে কোনো পক্ষেই ধর্মবিশ্বাসের কিছু করবার নেই। এটা হয়তো অনেকেই জানেন নাযে প্রাক্তন বি এল টি হচ্ছে হিন্দু (ব্রহ্ম) পক্ষ, আর এন ডি এফ বি হচ্ছে মোটা দাগে খৃষ্টান পক্ষ। ২০০৮এর উদালগুড়ি দাঙ্গাতেও দেখা গেছিল, একদিকে মুসলমান-অন্যদিকে সমস্ত হিন্দু। যদিও অন্তর্বস্তুতে সেটিও ছিল বডো শাসকের তরফে নির্জাতিকরণের কৌশল। কিন্তু তখন বিটিএডি হয়েছে মাত্র । রাজ্য দাবির লড়াই থাকলেও আজকের মতো জোরালো হয় নি। ওদিকে কিছুদিন আগেই উজান অসমে আরেকবার ‘অনুপ্রবেশ’-এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অসম আন্দোলন শুরু করেছিল কিছু জাতীয় ছাত্র সংগঠন। সুতরাং এক তরফা মুসলমান বিরোধী (এভাবে অবশ্য এরা বলেন না, বলেন ‘অনুপ্রবেশকারী মুসলমান’) একটা আবেগ তৈরির প্রয়াস রাজ্য জুড়েই সফল হয়েছিল। তাতে বাঙালি হিন্দু পক্ষও যোগ দিয়েছিলেন।

    কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরো আলাদা। এখন বাকি সমস্ত হিন্দু নীরব। বিজেপি ছাড়া।  হ্যা, তাঁরা শান্তি শান্তি করছেন। এটাতো করতেই হবে। কিন্তু সেগুলো আমসুর (মুসলমান) মতো সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে। বাদ দিয়ে নয়।উদালগুড়ি দাঙ্গার সময় আমসু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। এখন আবসুর মতো সংগঠনও আমসুকেই বেশি কাছে টানছে। এই দাঙ্গার উত্তেজনা মোটেও বাকি অসমে ছড়ায় নি।শিবসাগরে মানুষ উত্তেজিত রেকিবুদ্দীন হত্যা এবং সেনার হাতে দুই ছাত্রীর অপমান নিয়ে। সেখানে হিন্দু মুসলমান একজোট হয়ে বিশাল লড়াই লড়ছেন। এটা কেন হচ্ছে? সোজা কথা হচ্ছে, এখন বাকি হিন্দুরা দেখছেন এই মুসলমানেরাই বডোল্যান্ড আটকাবেন। বাঙালি হিন্দু সংগঠনগুলোও। আমসুর সঙ্গে এরাও আছেন অনাবডো মঞ্চে। অসমিয়ারাও। আর ঠিক তাই তরুণ গগৈ যখন বলছেন এই দাঙ্গাতে বাংলাদেশীদের মদত নেই তখন মূল স্রোতের অসমীয়া কাগজ সমালোচনা করছে, এটা তেমন দেখিনি। এই সব কথা যদি কারো তাত্ত্বিক মনে হয় আমার কিছু করবার নেই।

    মুসলমান তবে মার খাচ্ছে কেন?  বা কারো কারো যেমন দাবি মুসলমানেরাও পালটা মারছেন, এটা হচ্ছে কেন? আমি মনে করিয়ে দিই, ৯০ দশকেসাঁওতালেরাও মার খেয়েছিলেন। খেয়ে কোবরা মিলিটেণ্ট ইত্যাদি সংগঠন গড়ে পালটা জবাব দিয়েছিলেন। তাই ওদের গায়ে সরাসরি হাত তোলবার সাহস আর হয় না। কোচেরাও মার খেতে পারতেন, কিন্তু তাঁরাও পৃথক কামতাপুরের দাবিতে পশ্চিম বাংলা অব্দিসংগঠন গড়ে তোলেছেন। তৃতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠীটি হচ্ছেন মুসলমান যারা সোজা অসমেরঅখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়িয়ে অনাবডো আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মুসলমানের এইভূমিকা যদি একবার ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় তবে যে রাজ্যদাবীর লড়াই দুর্বল হবে তাই নয়, অসম তথা পূর্বোত্তরের রাজনীতির অনেক কিছুই পাল্টেযাবে। তাই এদেরকে শিক্ষা দেবার আয়োজন। মুসলমান জনতার মনে ভীতি ঢুকিয়ে দেওয়া।ভাবা গেছিল এতে আগের মতোই দেশজোড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিক এবং প্রচারমাধ্যমের সমর্থন পাওয়া যাবে। তা গেছেও,অনেকটা। কিন্তু খেলা বিগড়ে গেছেঅসমেই। আপাতত, এই সংঘাত থেমে যাবে। কিন্তু মনে হয় না, অসমের রাজনীতি আরআগের মতো থাকবে। এবারে সেণ্টার স্টেজে মুসলমান! হয় মেনে নাও, নতুবাবডোল্যান্ড হারিয়ে বসো। যা হবে অসমীয়াদের পক্ষে এক মরণ আঘাত।

    এবারে এই বডো, কোচ, সাঁওতাল, বাঙালি হিন্দু ( সাধারণভাবে বর্ণহিন্দু বাদ, কেননা তারা কলকাতায় ফ্লাট কিনে রেখেছেন অনেকেই) সবাই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর লোক।তবে তারা এই মারামারি করছেন এটা কি ভালো হচ্ছে? নিশ্চয়ই হচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে বডোল্যান্ড লড়াইকে সমর্থন দেবেন না অন্যেরা, এটাওতো স্পষ্ট।কামতাপুরে্র পক্ষেও দাঁড়ানো মুস্কিল। কারণ জায়গা প্রায় একই। ওদিকে বাকিদের ভোটের রাজনীতিতে সামান্য প্রভাব থাকলেও, বডোদের আকাঙ্খাকে অনেকটাই স্বীকৃতি দিয়ে যে শাসক শ্রেণির ছোট সহযোগী করে ফেলা হয়েছে এটাতো স্পষ্ট। তবে বাকিদের তুষ্ট করবার উপায় কী? না করলেতো লড়াই চলবেই। হিন্দু বাঙালিরাও যতটা নিরাপদে গুয়াহাটি থাকতে পারেন তত নিরাপদে নেই বডোল্যান্ডে। নিশ্চয় সেগুলো দীর্ঘদিনের বডোদের প্রতি বাঙালি বর্ণহিন্দুদের করা অবজ্ঞার প্রতিক্রিয়া।কিন্তু সে প্রতিক্রিয়া বড়ো সুখের নয়। নিত্যদিন দাবী ধমকি হুমকির মুখে থাকতে হচ্ছে। যদিও বাঙালি হিন্দু ছোট জনগোষ্ঠী বলে এখনই সম্প্রদায় হিসেবে আক্রান্ত নন। তেমনি অবস্থা অসমিয়া মধ্যবিত্তদের-ও। অসমিয়া ভাষা আক্রান্ত হচ্ছে । অসম সাহিত্য সভা নীরব থাকছে। শান্তি শান্তি আর মিলন মিলন বলে কোনো স্থায়ী সমাধান বেরুবে না। বডোল্যান্ড মেঘালয় নয়। মেঘালয়ে গারো খাসি সংখ্যাগুরু ছিলেন। বডোল্যান্ডে অবস্থা অন্যরকম। এখানে অনাবডোরাই সংখ্যাতে বেশি। সুতরাং সংঘাত রাজ্য হলেও থামবে এটা অনাবডোরা মেনে নিতে পারছেন না।তাই গড়ে উঠেছে অনাবডো সুরক্ষা মঞ্চ। রাজ্য দাবীর একতরফা বিরোধিতার মধ্যেও এর সমাধান নেই। সমাধান করতে গেলে সব জনগোষ্ঠীকে একটা সমঝোতাতে আসতে হবে, সেই সমঝোতা হলো মুখের কথাতে নয়, সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব সহ সমস্ত কিছুতে ছোট বড় সমস্ত জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং আকাঙ্খাকেমর্যাদা দিতে হবে। তার জন্যে গ্রাম অব্দি আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন, সংরক্ষণ, কোচেদের আর আদিবাসীদের জনজাতির মর্যাদাকে স্বীকার করে নিতে হবে। আর সেটিযদি সত্যি করাই যায় তবে আর অসম থেকে বেরিয়ে যাবারো দরকার থাকবে না কারো।হ্যাঁ, অনুপ্রবেশ সমস্যারও চিরদিনের জন্যে সমাধানের জন্যে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে, একে বাহানাবাজির জন্যে ব্যবহার চিরতরে বন্ধ করতে হবে। আজই দেখলাম, বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার স্বার্থে বাংলাদেশও এই নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে রাজী হয়ে গেছে। এখনি সবার মুখোশ খসে পড়বে এই নিয়ে।

    অনেকেই বলছেন, অনুপ্রবেশ একটা সমস্যা।কিন্তু ১৯৮৫তে অসম চুক্তির পরেও এতো বছরে এইসমস্যাটা টিকে আছে কেন জবাব দিলে পারেন। মাঝে কিন্তু ক্ষমতাতে অগপ-বিজেপি ছিল। কংগ্রেস নিজেই সেই চুক্তি করেছিল। আসলে ওটা এক বাহানা, টিকিয়ে রেখে বাহানাবাজি করতে সব্বাই ভালোবাসে। মুসলমানেরাই এখন দাবী করেন বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করো, নাগরিক পঞ্জী চালু করো, কে শোনে কার কথা।

    গেল কয়েক সপ্তাহের অসমের যেকোন কাগজ খুললেই দেখা যেত বডোল্যান্ডে রাজ্যদাবি এবং তার বিরোধীদের মধ্যে ছোট খাটো সংঘাত হয়েই চলেছে। এগুলো এরই ধারাবাহিকতা। এবারে,  অনেকে বলছেন , এহচ্ছে জি এস রোড কাণ্ড থেকে চোখ ঘুরিয়ে দেবার ফন্দি। যদি মেনেও নেই, তাহলেও প্রশ্ন এতো বড়ো সংঘাতকে অসমিয়া মধ্যবিত্ত যে এই ঘুরিয়ে দেবার ফন্দি হিসেবে দেখছেন বা তরুণ গগৈ আর হেমন্ত বিশ্বের রাজনৈতিক সংঘাত হিসেবে এই আশ্চর্য ঘটনাও গেল কয়েক দশকের অসমের রাজনীতিতে ঘটে নি। মুসলমান তথা বাংলাদেশি গালি দেবার এতো সুবর্ণ সুযোগ প্রচার মাধ্যম বা হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি এর আগেএভাবে ছেড়ে দেয় নি! এমনকি ৩০ অক্টোবর, ২০০৮ এ যখন রঞ্জন দৈমারীর এন ডি এফবি তিন শহরে বোমা ফাটিয়ে প্রচুর লোক মেরেছিল তখনও গোটা অসমে প্রতিবাদের ঢেউউঠেছিল প্রথমে এই বিশ্বাস থেকে যে কাজগুলো বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদীদের কাজ।পরে যখন ধরা পড়ল যে এটা এন ডি এফ বির কাজ তখন সবাই চুপ। হ্যাঁ, রঞ্জনদৈমারিকে তাই আত্মসমপর্ণের পর এখনো সরকার অরবিন্দ রাজখোয়াদের মতো খোলা হাওয়াতে ঘুরে বেড়াবার অনুমতি দেয় নি। কারণ দিলে অসমিয়া মধ্যবিত্ত এটা মেনেনেবে না।

    যদি কারো কারো এই দাবি মেনেও নিই  যে মুসলমানেরাও সমানে মারছেন, তারপরেও তর্ক আছে, প্রশাসনিক নীরবতা, যার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবও বলেছেন সেই নীরবতা বা ব্যর্থতা কার পক্ষে কাজ করেছে? কার হাতে আছে? মুসলমান পক্ষে? বিটিএডিপ্রশাসনের ভূমিকা কী? তারা কি প্রশাসনে প্রভাব খাটাতে ব্যর্থ? প্রাক্তন বিএলটি আর এনডি এফ বি কি অস্ত্রগুলো জমা দিয়ে দিয়েছে? তাহলে সমানে সমানে লড়াই হলো কী করে? আপনাদের কি মনে হচ্ছে আমি এক পেশে কথা বলছি? না , নানা দিক থেকে সত্যকে বের করে আনবার প্রয়াস করছি? হ্যাঁ, মুসলমানেরা প্রতিরোধ করেছেন, এটা সত্য। সাম্প্রতিক ছোট খুনোখুনি নিয়ে আমসুর অসম বন্ধের ডাক আগুনে ঘি দিয়েছিল। কিন্তু পালিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। যত শরণার্থী শিবির হয়েছে তার অধিকাংশই মুসলমান।

    আরেকটি মজার তথ্য দিই, পূর্বোত্তরে যেহেতু সামন্তীয় সমাজ জাঁকিয়ে বসবার আগেই আধুনিকপুঁজিবাদী সমাজ চেপে বসেছে, জনজাতিরা  কৃষি জমি থেকে বেরুলেই আরকায়িক শ্রম করতে চান না। এদের মধ্যে ধোপা,নাপিত, মুটে, মিস্ত্রি এগুলো নেই।এই কাজগুলো করেন হয় এই সব মুসলমান, নতুবা ঝাড়খণ্ডী আদিবাসি, নতুবা বিহারি হরিজন। আর এই প্রত্যেকটা জনগোষ্ঠীই অত্যন্ত সস্তা দরে শ্রম দেন। শ্রমের জন্যে এদের ডাক পড়ে, আবার সময় হলে মেরেকেটে তাড়িয়েও দেয়া হয়।কেন তাড়ানো হয় কেন? দুটো কারণ, তাতে এইসব শ্রমিকদের দর কষাকষির ক্ষমতা কমে যায়। এতো ভয়ে ভয়ে থাকে যে ৫০০ টাকার কাজ করিয়ে আপনি ১০০ টাকাও কখনো বা ধরিয়ে দিতে পারেন। রিক্সাওয়ালাকে, 'যা বেটা! বাংলাদেশী!' বলে আপনি টাকা না দিয়েও চলে যেতে পারেন। আর দুই হলো, এঁরা স্থায়ী হয়ে গেলে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে দেবেন এবং আধিপত্যকামী জনগোষ্ঠীর স্বার্থব্যহত করবেন এই ভয় লেগেই থাকে। এহলো অর্থনীতি আর রাজনীতির সংঘাত। বিশ্বহিন্দু পরিষদের মন্দিরগুলো তৈরি করতেও তথাকথিত বাংলাদেশী শ্রমিকেরই ডাক পড়ে - এই হলো মজা! বডোল্যান্ড থেকে প্রচুর মুসলমান আগকার দাঙ্গাগুলোর সময়ে চলে গেছিলেন। অসমের অন্যত্র। কয়েক হাজার এখনো শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন।কিন্তু বডোল্যান্ড টেরিটরিয়েল এরিয়া হবার পর অনেক পরিকাঠামোর কাজ হচ্ছে।তাতে বডো যুবকেরা মাঠ ছেড়ে ঠিকাদারিতে হাত দিচ্ছেন। শ্রমিক হিসেবে মুসলমানফিরে আসছেন।মুসলমান আরো আসছেন এদের ফাঁকা ধানের মাঠে চাষাবাদ করতে। সঞ্জীব বরুয়ার একটা বই পড়েছিলাম অনেক আগে। তিনি লিখেছিলেন এই 'অনুপ্রবেশকারী' চাষারা গোটা পূর্বোত্তরে এক নতুন কৃষি বিপ্লব নিয়ে এসছেন। পাহাড়েও ঝুমচাষের জায়গাতে এরাই গিয়ে ভূমি শ্রমিক হয়ে স্থায়ী চাষাবাদের প্রচলন করছেন।সুতরাং একাংশ বডো রাজনীতিবিদ এই মুসলমানকেতাড়ালেন বটে, অন্য অংশ দু'দিন পরেই আবার এদের ডেকেও আনবেন। মুসলমানের হাতথেকে অসমের গ্রামীণ অর্থনীতির, এমনকি, আধুনিক উন্নয়ন কামী অর্থনীতিরও কোনো সহজ মুক্তি নেই। কারণ শ্রমের এরাই মূলত মালিক। কোনো ভট্টাচার্য, চক্রবর্তী, কর, ধর, বরঠাকুর, গগৈ, ব্রহ্ম, বসুমাতারি কায়িক শ্রম করে না তেমন!হ্যাঁ, করতেন, ধান চাষ ছাড়াও কিছু কিছু তাঁত শিল্পের কাজতো ছিলই । কিন্তু সেগুলোও এখন কলের কাপড় নিয়ে গেছে। আর ছিল পুরোনো ধরণের ঘর বানাবার শ্রম।আজকাল আর সি সি-র যুগে আসাম টাইপ ঘর-ই উড়ে গেছে, অন্য জনজাতীয় ঘরবাড়ির আর কি বা কথা! আর সি সি পাকা ঘর? মুসলমান ছাড়া কে বানাবে? আমি জানি না।

    ২৭ জুলাইর আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়তে পড়লাম প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব ‎"পিল্লাইয়ের কথায়, “স্বশাসিত পরিষদে বড়ো-রাই বিশেষ সুবিধা, রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করে। তবে ওঁরা সকলকে নিয়েই চলার চেষ্টা করেন। কারণ ওঁরা জানেন যে, ওঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নন। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪০% বড়ো জনগোষ্ঠীভুক্ত।বড়ো-রা ছাড়া ওখানে বাঙালি, নেপালি, সাঁওতাল, ছোট ছোট আদিবাসী গোষ্ঠীও রয়েছে।”

    "পিল্লাইএর এই বক্তব্যের মধ্যে সত্যও আছে ফাঁকিও আছে।( আনন্দবাজার সম্পাদকীয়ঃ) ৪০%বডো এটা সত্য। এরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করেন এটাও সত্য। 'তবে ওরা সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেন' এটা মিথ্যে। মিলিয়ে চলা মানে -ধমকে ঠাণ্ডা রেখে। আর নতুবা এরকম নৃতাত্ত্বিক সাফাই অভিযান চালিয়ে।

    বাংলাদেশে যে বাঙালি মুসলমান শাসনে আছেন তাদেরই সবচে’ দরিদ্র অংশটি এক কালে অসমে এসছিলেন ময়মনসিংহ থেকে চাষাবাদের জন্যে। তখন অবশ্যি গোটা বাংলাদেশেই মুসলমান মূলত কৃষক ছিলেন। সেই থেকেই এরা এখানে কেবল কৃষকই থেকে যান নি, এদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের রোহিঙিয়ার মতো প্রচার দিয়ে সবচে অস্পৃশ্য এক শ্রেণি করে রাখা হয়েছে।দেশভাগের আগে থেকেই একাংশ প্রচার চালাচ্ছিলেন এরা থাকতে অসমীয়ার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ৭৯ থেকে ৮৫ অসম আন্দোলনেরও মূল বিষয় ছিল এই। বলা হয়, এরাপ্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে আসছেন। এরা ইসলামীস্তান বানাবেন ইত্যাদি হাজারো অপপ্রচার আছে। আজ অব্দি যত বাংলাদেশি আইনত বের করা গেছে তার সংখ্যা ১০০০ ছাড়াবে না। খরচ কিন্তু কয়েক হাজার কোটি টাকা।মোদ্দা কথা এই সব প্রচার দিয়ে এদের সস্তা শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার খুব সহজ হয়। আইনত এদের ভোটাধিকার থাকলেও সামাজিক অধিকার এদের প্রায় শূন্য। বাংলাদেশের আদিবাসিদের মতোই। কেবল রাষ্ট্র নয় বর্ণহিন্দু অপপ্রচার এবং সেই প্রচারে প্রভাবিত জনজাতিদেরকেও ভয় করে বাস করতে হয় এদের।

    জনজাতিদের অবস্থাও যে খুব ভালো তা নয়। এরাও অতিদরিদ্র। ইতিহাসের দীর্ঘ পর্যায় জুড়ে এরা যেমন বাংলাদেশে, উত্তরবাংলাতে তেমনি অসমে বা পূর্বোত্তরেও নানা ভাবে বঞ্চিত। কিন্তু এখানে ‘কিন্তু’ আছে। এখানে হাজার রকমের জনজাতি বাস করেন। এদেরই মধ্যে আপাত সংখ্যাতেবেশি যারা তাদের সঙ্গে আপোস করে শাসনের সহযোগী করে নেবার চাল চিরদিনই চালিয়ে গেছে ভারতীয় বা স্থানীয় বর্ণহিন্দু শাসক শ্রেণি। তাই ইতিমধ্যে গড়েউঠা বহু জনজাতীয় রাজ্যেই ছোট জনজাতীয়দের দাবিয়ে রাখার কাজ বড়ো জনজাতীয়রাই করেন। যেমন কোচেদের জনজাতি বলে কোনো স্বীকৃতি নেই। এই দাবী জানালে বডোরাই এর বিরোধিতা করেন। বডোদের স্বশাসন দিয়ে তাদের শাসনের সহযোগী করে ফেলা হয়েছে। যেমন গোর্খাল্যাণ্ডে গোর্খাদের সহযোগী করে লেপচা ভুটিয়াদের দাবিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত জনজাতীয় এবং সংখ্যালঘু ঐক্য যাতে না গড়ে উঠে এটা ভারতীয় শাসক শ্রেণি সুকৌশলে সুনিশ্চিত করে। বাঙালি-বিহারি-মারাঠি-গুজরাটি-অসমিয়া বর্ণহিন্দু শ্রেণিটি এই সুকৌশল খুবপছন্দ করেন। গোটা পূর্বোত্তরে প্রায় সমস্ত জাতি জনজাতিদের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ছিল বা আছে। ব্যতিক্রম কেবল বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। কিন্তু মুসলমানের বিরুদ্ধে টানা প্রচার আছে এরা আই এস আই-এর হয়ে কাজ করে, উগ্রপন্থীদের মদত দেয় ইত্যাদি। এগুলো মিথ্যাচারীদের প্রচার মাত্র। মাঝে মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাও এই সব প্রচারে তথ্য যোগায়। কিন্তু আজ অব্দি এদের বডো ডিমাছা মণিপুরি নাগা উগ্রপন্থীদের মতো সংগঠিত রূপে দেখা যায় নি। গেলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য অনেক সংগঠনকে যখন ভারত সরকার আলোচনার টেবিলে নিয়ে এলো তাদেরও আনতে পারত। আর পারে নি বলে বাংলাদশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো অভিযোগ জানিয়েছে বলেও জানা যায় নি। অথচ ওদিকে ওদেশের সঙ্গে ঘনঘনই তো ভারত এবং অসম সরকারের কথা হচ্ছে।  মুসলমানেরা যাদের থেকে মার খান তাদের কেন মদত দিতে যাবেন? কিন্তু কেবল বিজেপি নয়, বহু বামেরাও এই প্রচারে সিদ্ধহস্ত। প্রচার মাধ্যমের কথা তো বলেই লাভ নেই। অসমেআলফা এন ডি এফ বি- যখন গোলাগুলি ইত্যাদি করত তখন বহু হিন্দু বাঙালি 'ভদ্রলোক'ও বলে বেড়াতো এগুলো মুসলমানের কাজ। অথচ এই সব অমুসলমান উগ্রপন্থীদের হাতেকিছু বাঙালি হিন্দু কেন অসমিয়া সহ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর অনেকেও মারা গেছেন বাযান। এন ডি এফ বি আর বি এল টি নিজেদের মধ্যেও প্রচুর মারামারি করেছে। তবুআমাদের কিছু বন্ধু শেষ অব্দি মুসলমানের দোষ দেখবেন ই! এতে তো বোঝাযায় এরা সমস্যার গভীরে যেতে মোটেও আগ্রহী নয়। মুসলমান এদের প্রচারকে পুষ্টকরে গেলেই এরা তাত্ত্বিক সন্তুষ্টি লাভ করেন। এই ভাবেই দৃশ্যত সংঘাত থেমে গেলেও সংঘাতের কারকগুলো টিকেই থাকে। শান্তির আলাপ যখন চলে আড়ালে তখন পরবর্তী সংঘাতের মশাল তখন তৈরি হতেই থাকে।

    অসমীয়াদের মধ্যেও অনেক বিবেকবান বুদ্ধিজীবি আছেন, যারা সত্য উচ্চারণ করছেন। আনন্দবাজার উপরের সম্পাদকীয়তে তেমনি এক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে, “সেন্টার ফর নর্থ-ইস্ট স্টাডিজ অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ-এর প্রধানসঞ্জয়হাজরিকার যুক্তি, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে যাঁদের দিকে আঙুল তোলাহচ্ছে, তাঁরা অনেক দিন ধরেই ওখানে বসবাস করছেন।তাঁদের এখন অনুপ্রবেশকারী বলে দেওয়াটা আসলে বিষয়টাকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা।” এটাই সত্য কথা।

    কিছু অতি বুদ্ধিমান বাঙালি হিন্দু, যারা স্বপ্ন দেখেন,  দ্বিজাতিতত্ত্বের আধারে দেশ ভাগ হয়েছে তাই কোনো মুসলমানের অধিকার নেই ভারতে থাকবার। বিজেপির অনুপ্রবেশকারী বিরোধী আওয়াজে সঙ্গ দিলেই এরা চলে যাবেন অসম ছেড়ে আর হিন্দু বাঙালিরা সুখে  স্বর্গবাস করবেন তাদের সে স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন মাত্র। অসমিয়ারা কোনদিনই চাইবেন না, সমস্ত পূর্ববঙ্গমূলের মুসলমান অসম ছেড়ে চলে যান। কারণ, তারা নিজেদের মাতৃভাষা অসমিয়া বলে সেই ষাটের দশকে লিখিয়ে অসমিয়াকে সংখ্যাতে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছেন। কোনো বুদ্ধিমান অসমিয়া চাইবেন না, তাঁরা চলে গিয়ে অসমিয়া সংখ্যাটা কমিয়ে আনুন। তাই আসুর মতো সংগঠন যারা লড়াইটা শুরু করেছিল, ১৯৫১কে ভিত্তি বর্ষ করে অসম থেকে বিদেশি তাড়াতে হবে, তারাও চুক্তি করবার সময় ১৯৭১এর ১৬ মার্চ যেদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় সেই দিনটিকে ভিত্তি বর্ষ হিসেবে মেনে নেয়। তার আগেকার মুসলমানদের আসুও স্বদেশী বলে আইনত স্বীকার করে নিয়েছে। তার পরের অনুপ্রবেশকারীরা অসম ছেড়ে চলে যাক এটা আজ সব্বাই দাবি করে, বাংলাদেশ সীমান্ত সীল করবার দাবিও পুরোনো কিছু নয়।  কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি এর পরের ২৫ বছরেও। কেন হয় নি জিজ্ঞেস করলে এরা বলবে, কেন , কংগ্রেসের মুসলমান তোষণ নীতির জন্যে। ভোটব্যাঙ্করাজনীতির জন্যে। অথচ দু’বার অগপ, এবং কেন্দ্রে বিজেপি একবার সরকারে ছিল কিন্তু। কিচ্ছুটি করতে পারে নি।

    কেন? এতোদিন এরা বলতেন, আই এম ডি টি আইন আছে বলে। সেই আইন বাতিলও হলো আজ অনেক বছর হলো। তার পরেও যে কাজের কাজ কিছু হয় নি। হবে বলেও মনে হয় না। কারণ হলে রাজনীতির এই রং চিরদিনের জন্যে বিদায় নেবে। অনেকেই আছেন, অসমের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন। তাই মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয়, অসমের মাটিতে অনুপ্রবেশকারী সত্যি সত্যি আছেন তো?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপার বাংলা | ৩১ জুলাই ২০১২ | ১১২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shovon | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১২ ০২:৩৭90369
  • আসামের মাটিতে অনুপ্রবেশকারী সত্যি আছেন তো? হুম! হাসবো না কাঁদবো না নেচে উঠব, বুঝতে পারছি না! ১৯৫১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আসামের জনসংখ্যার অনুপাত দেখলেই বোঝা যায় যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে কি না, আর কোন স্কেলে হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তের জেলাগুলোর ডেমোগ্রাফিক প্রফাইল কিভাবে বদলে যাচ্ছে সেটা খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন এবং বলেন যে এসবই মিথ্যা, অপপ্রচার, তাহলে কিচ্ছু বলার নেই!
  • শুদ্ধ | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১২ ০৫:১৪90370
  • অনুপ্রবেশকারী? যাঁরা এই তকমাটা গোটা পৃথিবীর নানান ক্ষেত্রের মানুষদের জন্য ব্যবহার করেন তাঁদের নৈতিক ভিত্তি কি শব্দটি বলার? সব মানুষের সব জাতিগোষ্ঠীই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী। জমি কার ছিল এই পৃথিবীর? কে কোন অধিকারে অন্যকে চিহ্নিত করে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে? শুধুমাত্র সামরিক শক্তিতে দখলে রাখা ভূখন্ডগুলোর এত্ত বড় নৈতিক জোর যে অনুপ্রবেশকারী শব্দটাই রাজনীতিতে অসামান্য বৈধতা পেয়ে গেল?

    মানুষ খেতে পাবার জন্য যেখানে পারে সেখানে যায়, আজ নয়, আদিকাল থেকে। আজকে রাষ্ট্রের কাঁটাতার বসিয়ে তাকে অনুপ্রবেশকারী করে দিলেই হল? এবং কোন রাষ্ট্রে কথাটা হচ্ছে, কোন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কথাটা হচ্ছে, না যে সব রাষ্ট্রকে জনগণ তৈরী করেননি, করেছে শাসকরা। এই ভারতবর্ষকে কিভাবে তৈরী করা হবে তা আমার পূর্বজরা ঠিক করেননি, করেছে কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আর তাদের ততোধিক লোভী নেতারা। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রান্তের প্রত্যেকটি দাঙ্গা বুঝিয়ে দিয়ে যায়, ট্র্যান্সফার অব পাওয়ারের মাধ্যমে অনর্জিত স্বাধীনতা, অসমাপ্ত স্বাধীনতার যুদ্ধ কত বড় সার্বিক কলঙ্ক আমাদের!!! মানুষ মরে চলে আর আমরা কে ভেতরের কে বাইরের, কে অমুক আর কে তমুক নিয়ে তর্জা করি!!!!
  • সুশান্ত কর | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১২ ০৫:৩২90371
  • শোভন, নাও আমরা নাহয় চোখ খোললাম। এবারে তুমি পথ বাৎলাও কে কবে কী ভাবে,, অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে এদের আটকাতে যাচ্ছেন। তুমি কি কোনো নতুন পথ বাৎলাবে? তোমার ভয়ে তো আমরা তোমার তত্ব মানছি না। অবশ্যি, নরেন্দ্র মোডী যদি প্রধানমন্ত্রী হয়, আর জেলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে , বল ওদের অনুপ্রবেশকারী বলে মেনে নিতে রাজি কিনা, তবে অন্য কথা। ভয়ে গ্যালিলিওও মিথ্যে বলে দিয়েছিলেন, আমরা কা কথা!
  • শোভন | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১২ ০৫:৪৬90372
  • মহান দেশের সুমহান নাগরিক!! ব্রাভো!
  • শোভন | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১২ ০৫:৫০90373
  • গোয়েবলসের মৃত্যুর পরে যে বা যারা গোয়েবলসিয় মিথ্যের তত্ত্বকে প্র্যাকটিকালি সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করেছেন, তাদের ৯৯ শতাংশই নিজেদের কমিউনিস্ট বলে চিহ্ণিত করে থাকেন।
    কিন্তু প্রথম লাইনটার পর আরো তিনটে লাইন আছে, সেগুলোও একটু পড়ে দেখবেন!
  • দিব্যেন্দু | ***:*** | ২৪ আগস্ট ২০১২ ০৫:০২90374
  • অতি সুপাঠ্য লেখা, শুরুতেই লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
    এখানে 'শোভন' নামের একজন বলে গেলেন যে বাংলাদেশের সাথে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ডেমোগ্রাফিক প্রোফাইল পাল্টে যাচ্ছে, ১৯৫১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আসামের জনসংখ্যার অনুপাতের অসমত্ব বেড়েই চলেছে এবং এই সব কিছুর নিরিখে অবধারিতভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসামে অনুপ্রবেশ ঘটছে যারা সব কিছুর জন্য দায়ী!!
    বাহ বেশ বেশ, একেবারে খাঁটি বিজেপিয় বজ্রকন্ঠ!! নয়তো, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কোন পাতি নেতার সশঙ্ক দম্ভোক্তি!! তো শোভন দাদা, আপনাকে কি আসামের ইতিহাস শেখাতে হবে? ১৯৫১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আসামের জনসংখ্যার অনুপাত নিয়ে প্রভাষণ দিলেন, অথচ ১৯৫১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আসামের মানচিত্র যে সময়ে সময়ে পাল্টেছে সেটা বলতে ভুলে গেলেন কোন আক্কেলে? ভুলে না গেলে বরং বিজেপি'র মুখে কষে একখানা চড় পড়তো, সেই আশঙ্কায় কি?
    বর্তমান আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে গঠিত এক সময়কার বৃহত্তর আসামকে ভেঙে ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড, ১৯৭২ সালে মেঘালয়, ১৯৮৭ সালে মিজোরাম এবং ১৯৮৭ সালে অরুণাচল প্রদেশ গঠন করে আসামের আয়তন ও আয়তনগত জনসংখ্যায় যে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে সেটা সম্পর্কে কি আপনার কোন ধারণা নেই? বৃহত্তর আসামের যে অংশগুলো নিয়ে নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়েছে সে অংশগুলো ছিলো একেবারেই মুসলিম-শূন্য অঞ্চল, যেটা এটাই প্রমাণ করে যে কোন অনুপ্রবেশ ব্যতিরেকেই কেবলমাত্র আসামের আয়তন ও জনসংখ্যা পরিবর্তনের হেতু আসামে মুসলিম পার্সেন্টেজ বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, আসামে ১৯৫১ সালে ১০০ জনের মধ্যে ২৫ জন মুসলিম ও ৭৫ জন অমুসলিম ছিলো। ১৯৯১ তে এসে এই দেখা গেলো নতুন প্রদেশ সৃষ্টির জন্য এই ৭৫ জন অমুসলিমের মধ্যে ২০ জনই অন্য প্রদেশে চলে গেছে, কাজেই অমুসলিম রইলো মোটে আর ৫৫ জন। আগেকার ২৫:৭৫ অনুপাত থেকে ২৫:৫৫ অনুপাতের কারণে আসামের মুসলিম পার্সেন্টেজ যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যেতে বাধ্য সেটা কি আপনার বোধগম্যতার বাইরে? এই শুভঙ্করের ফাঁকিকে পূঁজি করে জনমনে রাষ্ট্র-বিরোধী সশঙ্ক বিষকে উস্কে দিয়ে অতঃপর নিজেরা বসে বসে মৌজ করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার এমন মহানব্রত কেবলমাত্র আপনাদের মতো ধর্মাশ্রয়ী ফেরিওয়ালাদের মানসিকতাতেই মানায়।
    আর কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে বিজেপি'র আরোপন করা 'ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি' নিয়ে কিছু বলবো কি? আসামের বর্তমানের প্রায় ৩১% মুসলিমের পুরোটাই কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সমর্থক, কেননা সংখ্যালঘু-নিপীড়ক বিজেপি যে কখনোই তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে না সেটা আপনি না বুঝলেও ওরা ভালো মতোই বোঝে। আর ওরা বোঝে বলেই ভোটের ৩১% শুরুতেই কংগ্রেসের ঝুলিতে জমা হয়ে থাকে, বাদবাকি ৬৯% ভোটের ১৯% ও যদি কংগ্রেস পায় তাহলে নিদেনপক্ষে ৫০% ভোট নিশ্চিত হয়ে গিয়ে কংগ্রেসের সব ল্যাটা চুকে যায়। সেই কারণেই আসামে বিজেপি কখনোই সুবিধা করতে পারে নি, আর বিজেপি সুবিধা করতে পারে নি বলেই আজ পর্যন্ত আসামের ১৩ জন ভিন্ন ভিন্ন মুখ্যমন্ত্রীর ১০ জনই হচ্ছেন কংগ্রেসের। ভোটের ক্ষেত্রে আসামের ৩১% বাঙ্গালী মুসলিম সব সময়েই একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর এবং যে ফ্যাক্টরটার জন্য বিজেপি সব সময়েই কংগ্রেসের কাছে আসামে হেরে এসেছে। এই প্রতিশোধপরায়ণতা থেকে বিজেপি আসামের বাঙ্গালী মুসলিমদের উপর "বাংলাদেশী" ট্যাগিং ঝুলিয়ে কংগ্রেসের উপর "বাংলাদেশী ভোট-ব্যাঙ্ক" নামক একটা শুভঙ্করের অভিযোগ এনে ভোট রাজিনীতির কৌশলে প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে ঘায়েল করতে চাইছে, যেটা আপনি নিজেরা নিজেরা ভালো মতো বুঝলেও অন্যদেরকে কখনোই জানতে বা বুঝতে দিতে চান না।
  • RCA | ***:*** | ০৪ মে ২০১৪ ০২:৪৪90376
  • http://mobiletoi.timesofindia.com/mobile.aspx?article=yes&pageid=13§id=edid=&edlabel=TOIKM&mydateHid=03-05-2014&pubname=Times+of+India+-+Kolkata&edname=&articleid=Ar01300&publabel=TOI

    বোরো উপজাতি জঙ্গি গোষ্ঠীর এই হত্যালীলা কিন্তু আজকের নয় সেই আশির দশকে শুরু । ST তকমা পেলেও অঞ্চলের আদি বসবাসকারী বোরো দের কথা কেউ ভাবে নি স্বাধীনতার পরেও -শিক্ষায় রয়ে গেছে পশ্চাত্পর জমির অধিকার পায় নি উন্নয়ন হয় নি ,তারা তাদের জন্মভূমিতেই তে ক্রমশ পিছু হঠতে থাকে সাঁওতাল ও বাংলাদেশী দের ক্রমাগত আগমনের ফলে , সংখ্যার শতাংশের হিসেবেও তারা নিজের এলাকায় কমে দাড়ায় 30%,তাদের মনে ভয় আর অনুন্নয়ন এর ক্ষোভ বাড়তে থাকে । আর আসে তাদের উচ্চাকান্খি নেতা রা যারা এলাকায় আধিপত্য কায়েম করতে চায় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ পেতে চায় ।
    এর কিছু লেখা আছে এই লেখা তেই
    http://www.firstpost.com/india/assam-riots-what-leaves-bodos-angry-and-frustrated-391119.html
    দশকের পর দশক সরকার চুপ করে দেখতে থাকে । এরপর শুরু হয় বোরো জঙ্গি দের আক্রমন এবং তার ফলশ্রুতি তে দাঙ্গা - শুধু মুসলিম না সাঁওতাল দের সঙ্গেও দাঙ্গায় জড়ায় বোরো রা । শুরু হয় একের পর এক দাঙ্গা ১৯৯৩,১৯৯৪ ,১৯৯৬ ,১৯৯৮ ,২০০৩,২০০৮,২০১২
    সেই রকম ই এক পুরনো রিপোর্ট নিউসপেপার (৯৪)থেকে -
    http://indiatoday.intoday.in/story/as-bodo-militants-lash-out-peace-accord-appears-increasingly-fragile/1/293556.html

    ২০ বছর বাদের এখনকার রিপোর্ট এর থেকে কোনো ফারাক নেই ।সেই চক্র সমানে চলছে । ওই অঞ্চলে আর কোনো রাজনৈতিক দলের শক্তি নেই শুধু কং আর বোরো পিপল ফ্রন্ট - বরপেটা (বনগায়গাঁও
    ) তে কং বছররের পর জিতে আসছে , আর ককরাঝারে জিতছে বোরো জন মোর্চার প্রার্থী ।
    দশকের বেশি রাজত্ব করা সরকারের এরপর হাত ধুয়ে ফেলা কি মানায় ?
  • b | ***:*** | ০৪ মে ২০১৪ ০৪:১৭90377
  • খবরে প্রকাশ, বি পি এফ নেত্রী প্রমীলা রাণী ব্রহ্ম বেশ গরম গরম স্পীচ দিছিলেন নির্বাচনের পরেই। মুসলমানরা আমাদের ভোট দেয় নি। ইত্যাদি।

    দোষ দেখছি শুধু মুসলমান আর কংগ্রেসের। জঙ্গীদের মত দুদু ভাতু মানুষের পক্ষে , এ কে ফর্টি সেভেন চালিয়ে নিরাপরাধ মানুষ মারাতে যে কি কষ্ট, বুক ফাটে তবু চোখ ফাটে না, তা তো আহা কেউ বুঝলো না।
  • nb | ***:*** | ০৪ মে ২০১৪ ১০:২৩90378
  • কং জোটসঙ্গী বিপিয়েফ এই নেত্রী র ভূমিকা সম্পর্কে আরো খবর -
    http://www.telegraphindia.com/1140504/jsp/northeast/story_18305190.jsp
    বড়ো জঙ্গি দের সমস্যার মূল সেই উন্নয়নের আলোক বঞ্চিত মানুষ কে শিকড় থেকে উপড়ে নেওয়ার ভয়। মাওবাদের উত্স সন্ধানে যারা ছত্তিস গড়ে মূলবাসী দের নিজ ভূমে পরবাসী করা ,অন্যায় ভাবে জমি কেড়ে নেওয়া নিয়ে সরব তারা গরিব বড়ো জনজাতি র নিজ ভূমে কোনঠাসা হয়ে যাওয়া ,তাদের পূর্বপুরুষের বসবাসের জমি বেদখল নিয়ে সোচ্চার হন না কেন ?উদ্বাস্তু দের পুনর্বাসনের দায়ভার শুধু কি তাদের?
  • b | ***:*** | ০৫ মে ২০১৪ ০৪:১০90379
  • উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের দায় একমাত্র তাদের হবে কেন? জানেন তো,আসাম ছাড়াও উদ্বাস্তুরা গেছে পশ্চিমবঙ্গে, দন্ডকারণ্যে, কর্ণাটকে, উত্তরাখন্ডে, আন্দামানে।

    আর বোড়োদের স্বভূমে পরবাসী হবার পিছনের পলিটিক্সের নিন্দার সাথে সাথে নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের ওপরে এ কে ৪৭-এর গুলিবৃষ্টি-র নিন্দা করুন। জোর গলায়। দেখি কেমন পারেন।
  • সৌভিক ঘোষাল | ***:*** | ১৪ মে ২০১৪ ০৭:০৮90380
  • জাতিদাঙ্গা বিধ্বস্ত আসাম খুঁজছে শান্তির আশ্রয়। সেখানে প্রায়শই আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগীরণের মতো বেরিয়ে আসে পারস্পরিক বিদ্বেষের বিষবাস্প। বোড়ো ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর দাঙ্গায় সেখানে বহুবার বেদনাদায়ক প্রাণিহানির ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিককালে এবং অতীতেও। এই লোকসভা ভোট চলাকালীন এরকম ঘটনা ঘটার পর অনেকেই ভোট চলাকালীন উশকানিমূলক বিভিন্ন মন্তব্যকে এর জন্য দায়ী করেছিলেন। উশকানি থাকে, ছিল এটা স্বীকার করেও বলতে হয় বেশ কয়েক দশক ধরে বারবার ঘটা জাতিদাঙ্গা নেহাৎ উশকানি তত্ত্বের চেয়ে ঘটনার গভীরতর বিশ্লেষণ দাবি করে, দাবি করে এ অঞ্চলের ইতিহাস পর্যালোচনার। সেদিকে এগনোর চেষ্টা করা যাক।

    আসামের কোকরাঝার এলাকা ও সংলগ্ন অঞ্চলে উদ্বেগজনক জাতিদাঙ্গার ঘটনায় ২০১৩ র জুন জুলাই মাসে প্রায় ৬০ জন মারা যান, গৃহহারা হন ৪ লক্ষেরও বেশি। ১৯ জুলাই থেকেই দীর্ঘদিন ধরে তিরতির করে বয়ে চলা উত্তেজনা জাতিদাঙ্গার চেহারা নিতে শুরু করে। এর আগেই অবশ্য কোকরাঝার এলাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছিল, যখন জুলাইয়ের প্রথম দিকে দুজন বাঙালি মুসলমান ওই এলাকায় খুন হন। ১৯ জুলাই আরো দুজন মারা যান। ২০ জুলাই বোড়ো লিবারেশন টাইগার এর চার প্রাক্তন সদস্য খুন হন। এর প্রতিক্রিয়ায় বোড়োরা বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় প্রত্যাঘাত করলে দাঙ্গা শুরু হয়।
    ১৯৭১ সালের আগে, বাংলাদেশ গঠনের আগেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান থেকে আসা বাঙালি মুসলিম অভিবাসীদের সঙ্গে বোড়ো আদিবাসীদের এই সংঘর্ষর প্রাথমিক কারণ জমি ও জীবিকার অধিকার নিয়ে বিরোধ। বোড়োদের পক্ষ থেকে প্রচারে বলা হয় ৯০ এর দশক পর্যন্ত কোকরাঝার এবং চিরাং এ বোড়ো আদিবাসীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিন্তু গত দুদশকে এখানে অভিবাসী মুসলিমদের সংখ্যা বেড়েছে, যারা মূলত ক্ষেতমজুর এবং দিনমজুর। বিশেষত গোঁসাইগাঁও মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে অভিবাসী মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় বোড়োরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। ধীরে ধীরে কোকরাঝার শহর এলাকাতেও অভিবাসী মুসলিমদের একাংশের প্রবেশ ঘটেছে। অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়ায় এখানকার জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে’ – এই জনপ্রিয় প্রচারের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন জানিয়েছেন ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দের পর থেকেই তারা এখানে আসা শুরু করেন। বস্তুতপক্ষে ব্রিটিশদের আগ্রহেই ব্রক্ষ্মপুত্রের তীর বরাবর অভিবাসনের এই প্রক্রিয়াটি চলে। ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকার জমি অত্যন্ত উর্বর, কিন্তু বন্যার জন্য সে জমিতে চাষাবাদের জন্য বিশেষ দক্ষতা দরকার ছিল। জলের মধ্যে চাষের প্রযুক্তি ময়মনসিংহ অঞ্চলের চাষিদের আয়ত্তে ছিল। ব্রিটিশ শাসকরা ওই এলাকাকে রাজস্ব আদায়ের যোগ্য করে তোলার জন্য ময়মনসিংহ ও অন্যান্য জেলা থেকে মুসলমান চাষিদের নিয়ে আসে। বিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে এই অভিবাসনের মাত্রা আরও বাড়ে। আজকের অসমে ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকায় কৃষি-সমৃদ্ধির পেছনে এই মুসলমান চাষিদের অবদান অসামান্য।এদেরই একটা অংশকে আবার বন্যার কারণে উত্তরে-দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় সরে যেতেও হয়েছে। ফলে রেল লাইনের উত্তরেও কিছু মুসলমান বসতি গড়ে উঠেছে।এটা নিয়ে বোড়োরা আপত্তি জানিয়েছেন।
    এই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক বোড়োরাজ্যের দাবী নিয়ে বোড়ো লিবারেশন টাইগার নামক বোড়োদের জঙ্গী সংগঠনের নেতৃত্বে চলা বোড়ো আন্দোলনের সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমঝোতা সূত্র হিসেবে ২০০৩ সালে বোড়োল্যাণ্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল (বিটিসি) তৈরি হয়। আসামের চারটি জেলা, কোকরাঝার, চিরাং, বকসা এবং উদালগুরু এর অন্তর্ভূক্ত হয়। সে সময়েই সংশ্লিষ্ট এলাকার অ-বোড়ো মানুষজন বিটিসি তৈরির বিরোধিতা করে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিল এর ফলে এই এলাকায় অবোড়োদের নানা সমস্যর মুখোমুখি হতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ওই এলাকায় বোড়ো ও অন্যান্য তফসিলি উপজাতির কিছু মানুষ মিলিয়ে উপজাতিদের মোট সংখ্যা ছিল ১৮ শতাংশ। বাকি ৮২ শতাংশ মানুষের মধ্যে ছিলেন বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলিম ও ভালো সংখ্যক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ।
    বিটিসি তৈরির পর বোড়ো লিবারেশন টাইগার তাদের কার্যকলাপ গুটিয়ে নেয়। কিন্তু তাদের একদা প্রধান হাগ্রামা মাহিলারি একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেন এবং বোড়োকাউন্সিলের নির্বাচনে বিজয়ী হন। অ-বোড়োদের অভিযোগ কাউন্সিল তাদের প্রতি উদাসীন। অন্যদিকে বিটিসি তৈরির পরেও এই বিটিসি এলাকায় মুসলিম অনুপ্রবেশের সূত্রে বোড়োদের জমির অধিকার কমে যাওয়া এবং গোঁসাইগাঁও মহকুমার মতো অনেক জায়গায় তাদের তুলনায় বোড়োদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়া তাদের মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে। দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণই সাম্প্রতিক জুলাই দাঙ্গার মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এর আগেও এই অঞ্চল মারাত্মক কিছু জাতি দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছিল। ১৯৮৩র ১৮ ফেব্রুয়ারী সংগঠিত নেল্লি গণহত্যায় ছয় ঘন্টার মধ্যেই দুহাজারের বেশি মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ও চাপা উত্তেজনা এখানকার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
    মনে রাখা দরকার জমি ও জীবিকার অপ্রতুলতার ক্রমবর্ধমান সমস্যাই এই জটিলতাকে প্রতিদিন বাড়িয়ে তুলছে, আর সেটাই আরো নানা বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পারস্পরিক জাতিবিদ্বেষের আকারে এখানে আছড়ে পড়ছে। শুধু বোড়োল্যাণ্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠন করে যে সমস্যার মৌলিক কোন সমাধান করা যাবে না, সাম্প্রতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট হচ্ছে। দাঙ্গা প্রতিরোধে আশু সমস্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ভিত্তিতে সমস্ত পক্ষের জীবন জীবিকার মৌলিক সমাধান ও পারস্পরিক সৌহার্দের সংস্কৃতি নির্মাণ করাই অশান্ত এই এলাকায় শান্তি স্থাপনের প্রকৃত রাস্তা হতে পারে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন