এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপার বাংলা

  • ছেড়ে আসা গ্রাম

    সোমেন্দ্র নাথ দাশগুপ্ত
    অপার বাংলা | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১৭২৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে পৈতৃক ভিটে আমি চোখে দেখিনি। কিন্তু শৈশবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি সেদেশের ভিটে ছেড়ে আসা ছিন্নমূল মানুষের যন্ত্রণা। কর্মসূত্রে বাবা তখন এপার বাংলার পশ্চিম দিনাজপুরে সেই হেমতাবাদ ব্লকের দায়িত্বে যেখানে হয়েছিল রাজ্যের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির -- মালন আর নওদা। দুটি শিবির মিলিয়ে শরণার্থীর সংখ্যা দেড় লক্ষ। সরকারি কাজের দায়িত্বে ছাড়াও সেসব দিনগুলোতে বাবার চোখে দেখেছি এক অন্যরকম সহানুভূতি। পরে বুঝেছি বুকের মধ্যে এক গভীর আত্মিক টান অনুভব না করলে যা আসতে পারে না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় একদিন এদেরই মতো একবস্ত্রে দেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন বাবা এবং আমাদের পরিবারের আরও অনেকেই। ১৯৭১ সালে শরণার্থী পুনর্বাসনের তদারকিতে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে যেতে হয়েছিল বাবাকে। কিন্তু ব্যস্ততার মধ্যে আর ফিরে দেখে আসা হয়নি ছেড়ে আসা গ্রামের নিজের পরিত্যক্ত জন্মভিটে খানি। ভারত স্বাধীন হবার পর ১৯৫০ সালে নিজের শিকড় ছেঁড়ার সেই কাহিনী লিখেছিলেন বাবা। বহুকাল পরে খুঁজে পাওয়া সেই লেখাটি আজকের অস্থির সময় এবং পারস্পরিক অবিশ্বাসের আবহে খুবই প্রাসঙ্গিক। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ১৭ বছর আগে। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বাবার লেখা সেই স্মৃতিকথাটি ভাগ করে নিতে চাই 'গুরুচন্ডা৯'র পাঠকদের সঙ্গে। -- দীপঙ্কর দাশগুপ্ত



    পঞ্চক্রোশী। নদী নয়, গ্রামের নাম। আমার নিজের গ্রাম। নামের হয়ত ইতিহাস আছে। সবটা আজ মনেও নেই, থাকবার কথাও নয়। তবু পাবনা জেলার উপান্তে সিরাজগঞ্জ থেকে পাঁচ ক্রোশ দূরের এই গ্রামে আমার জন্ম। নামের ইতিহাস যাই হোক, গ্রামটি যে এককালে নেহাত ছোট ছিল না তার প্রমাণের অভাব নেই। তার পুরনো আভিজাত্যের পরিচয় পাওয়া যায় নানা কাহিনী বিজড়িত কতকগুলো পরিত্যক্ত ভিটে থেকে, আর পাওয়া যায় হৃত-গৌরব জমিদারবাড়ির চুনকাম খসা, নোনাধরা ইঁটের তিন তলা দালানের চোরা কুঠরির গহবর থেকে -- যেখানে এখন চামচিকে আর লক্ষ্মীপেঁচার তত্ত্বাবধানে পড়ে রয়েছে রৌপ্য-নির্মিত আসা-সোঁটা, বল্লম, বিরাট আকারের ছাতি, চিত্র-বিচিত্র করা ভাঙা একটি রাজকীয় পালকি আর বস্তাপচা অজস্র শামিয়ানা, তাঁবু আর শতরঞ্চি। জীবনের যে সময়টা রূপকথা শোনবার বয়স সে সময়ে এমন কোন সন্ধ্যা বাদ যায় নি যেদিন ঠাকুমার মুখ থেকে শুনতে পেতাম না আমাদের গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির নানা অপরূপ কাহিনী।

    গ্রামের পূব দিকে মাঠের মধ্যে ওই যে একটা ভিটে আছে যেখানে এখন রয়েছে ঘন সন্নিবিষ্ট আম গাছ আর বাঁশের ঝাড়, ওইখানে ছিল মনমোহন দাশের বাড়ি। মনমোহন দাশের ঐতিহ্যের খ্যাতি ছিল প্রচুর, বদান্যতার খ্যাতি ছিল প্রচুরতর। সেকালের রাজর্ষি জনক রাজা হয়েও নিজহাতে হলকর্ষণ করতেন, আর একালের মনমোহন দাশ সোনার খড়ম পায়ে দিয়ে নাকি নিজে গরু দিয়ে ধান মাড়াতেন। হয়ত এ নিছক কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়, কিন্তু ঠাকুমার মুখে সেদিন এসব শুনে আমাদের মনে যে অভূতপূর্ব ভাবের সঞ্চার হত সে তো আজও ভুলবার নয়! এমন আরও কত টুকরো টুকরো কাহিনী -- ! তারপর জমিদার বাড়ির কথা -- যে বাড়ি একদিন ছিল আত্মীয়, অনাত্মীয়, চাকর- চাকরাণীর কলরবে মুখরিত, আজ সে বাড়ির নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে দাঁড়কাকের কর্কশ কণ্ঠস্বর। এখনও কত নৈশ নিস্তব্ধতার অবকাশে ঠাকুমার মুখে শোনা জমিদার বাড়ির কাহিনী চলচ্চিত্রের মতো একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে।

    জমিদার দীননাথ দাশগুপ্ত তাঁর দিনাজপুরের বাড়ি থেকে বৎসরান্তে একবার দুর্গাপুজো উপলক্ষে পঞ্চক্রোশীর বাড়িতে ফিরে আসছেন। সাতদিন আগেই বাড়িতে খবর পৌঁছে গেছে। নায়েব গোমস্তা থেকে আরম্ভ করে পেয়াদা চাকর চাকরাণীদের এক মুহূর্ত বিশ্রাম নেই। ঘর-দোর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার জন্যে সকলেই অতিমাত্রায় ব্যতিব্যস্ত -- তদারকরত নায়েব প্রসন্ন ভট্টাচার্য মশাই তাঁর সুপুষ্ট উদর নিয়ে দোতলা-একতলা ছুটোছুটি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন, আর অযথা চেঁচিয়ে সারা বাড়িটা তোলপাড় করে তুলেছেন। বাইরের মণ্ডপে চার-পাঁচ জন কুমোর অক্লান্ত পরিশ্রমে সুবিশাল দেবীপ্রতিমা সমাপ্ত করবার জন্যে ব্যস্ত। সকলেই জানে তাদের সবার জন্যে আসছে নানা রকমের উপহার। এদিকে জমিদার দিনাজপুর থেকে জলপথে গ্রামের সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন, খবর আসতেই তাঁকে অভ্যর্থনা করে আনবার জন্যে দলে দলে ছুটে চলেছে হিন্দু-মুসলমান প্রজার দল। প্রত্যেকের কাঁধে একটা করে লাল ব্যাজ -- আর হাতে লাল নিশান। পেয়াদা বরকন্দাজরাও চলেছে। কাঁধে তাদের রুপোর আসা-সোঁটা, হাতে তাদের রুপোর বল্লম, আর অপরূপ সাজে সজ্জিত বেহারার দল নিয়ে চলেছে বহু-বর্ণে খচিত মখমলের জাজিম-বিছানো পালকি। পুজোর কয়েকদিন কারও বাড়িতে হাঁড়ি চড়তো না, হিন্দু-মুসলমান সকলেরই সে'কদিন জমিদারবাড়িতে নিমন্ত্রণ। কল্পনার চোখে দেখতে পাই -- বাইরের প্রাঙ্গনে সারি-সারি, পাশাপাশি বসে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে নিমন্ত্রিত প্রজার দল -- গরদ-বসন পরিহিত, নগ্নপদ জমিদার দীননাথ নিজে উপস্থিত থেকে তদারক করছেন তাদের আহারের। আজ ভাবি সেদিন কোথায় ছিল দুই জাতি তত্ত্ব, কোথায়ই বা ছিল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ! পরিপূর্ণ প্রীতির সম্পর্ক ছিল হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে; চাচা, ভাই সম্বোধনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছিল একটা নিকট মধুর সম্পর্ক। ঝগড়া-বিবাদ হত, মারামারি হত -- দুই পক্ষই ছুটে আসত জমিদারের কাছারিতে, গ্রামের মোড়ল নিয়ে বসত মিটিং, হত বিচার। কমিটি যে রায় দিত, দুই পক্ষই তা মাথা পেতে মেনে নিত। হিন্দু সেদিন মুসলমানের কাছে অপরাধ স্বীকার করতে সঙ্কোচ বোধ করত না, মুসলমানও হিন্দুর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে দ্বিধা করত না।

    এই তো সেদিনের কথা। মধ্যাহ্ণে জমিদারবাড়ির কুল-বিগ্রহের ভোগশেষে যখন কাঁসর বাজত, দেখতাম দলে দলে উল্লসিত কণ্ঠে চিৎকার করতে করতে থালা হাতে ছুটে আসছে হিন্দু-মুসলমান ছেলেমেয়ে -- সকলেই প্রসাদপ্রার্থী। আবার সন্ধ্যারতির কাঁসর-ঘন্টা বেজে উঠতেই আসত বহু মুসলমান স্ত্রী-পুরুষ। কারও বা মাথাধরা, কারও বা চোখওঠা, কারও বা পেটকামড়ানি, কারও বা মেয়েকে ভুতে পেয়েছে -- সকলেই আসত একটু 'ঠাকুর-ধোয়া পানি'-র জন্যে। চরণামৃতকে তারা বলত ঠাকুর-ধোয়া পানি। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আচ্ছা মতির মা, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাদের হিন্দুর দেবতাকে বিশ্বাস করলে তোমাদের ইসলাম বিপন্ন হয় না?" মতির মা উত্তর করেছিল, "অতশত বুঝিনা বাপু, যাতে কইরা আমাগো উপগার হয়, আমরা তাই করি। তাছাড়া আপনাগো ঘরে দ্যাবতা, আর আমাগো ঘরে আল্লা তো আর পেরথক না, আপনারা কন ভগমান আর আমরা কই খোদা!" সেদিন দেশের অধিকাংশ জনসাধারণই ছিল বোধহয় আমাদের এই মতির মায়ের মতো মানুষ। সরল অকপট বিশ্বাস নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে তাই তারা হয়ে উঠতে পেরেছিল একাত্ম।

    আজ মনে পড়ে সেই নাজির ভাইয়ের কথা। শৈশব থেকে আরম্ভ করে কৈশোর পর্যন্ত প্রতিটি দিনের সে ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। সামাজিক মর্যাদা, বয়সের পার্থক্য, শিক্ষার স্তর ভেদ কিছুই তার ও আমার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। খেলার মাঠ থেকে আরম্ভ করে পড়ার ঘর পর্যন্ত তার সং ছিল আমাদের অপরিহার্য। মনে পড়ে আমির ভাই, ফজু ভাই, জোমসের আলী, আব্দুল সরকারের কথা। সন্ধ্যাবেলা মামার ডিসপেন্সারি ঘরে কড়া শাসনে তিন-চারজনে মিলে আমরা যখন সুর করে স্কুলের পড়া তৈরি করতাম, সময় সময় মামাকে কেন্দ্র করেই আমাদের আড্ডাও জমে উঠত প্রবলভাবে! সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত এগারোটা অবধি কোন কোনদিন একটানা আড্ডা চলত। খাবার তাগিদ দিতে দিতে বাড়ির সবাই বিরক্ত হয়ে উঠত, তবু আমাদের আসর চলত পুরোদমে।

    মনে পড়ে সেই সব বাল্যবন্ধু রশিদ, শওকত রউফদের কথা। নিজেদের গ্রামে হাইস্কুল ছিল না। পড়তে যেতাম দু মাইল দূরে সলপ স্কুলে। স্কুলে যাবার পথে আমাদের বাড়ি ছিল সেন্টার। দক্ষিণ পাড়া থেকে আসত রশিদের দল, আর পাশের গ্রাম রায়দৌলতপুর থেকে আসত সুনীলদা, কার্তিকদা, শান্তি। একসঙ্গে স্কুলে যেতাম আর একসঙ্গে ফিরতাম। গল্প গুজবে আর হাস্য পরিহাসে দু মাইল রাস্তা কখন ফুরিয়ে যেত টেরও পেতাম না। বৈশাখের খর রোদ আর আষাঢ়ের মুষলধারায় বৃষ্টি আমাদের কোনদিন নিরানন্দ করতে পারে নি। চৈত্র মাসের বারুণী স্নানের দিন থেকে আরম্ভ হত আমাদের মর্নিং স্কুল। সূর্য ওঠার অনেক আগেই রওনা দিতাম স্কুলে। শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে, প্রাণ-জুড়ানো ঝিরঝিরে শীতল হাওয়ায় খোলা মাঠের মধ্যে দিয়ে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়ার যে কি আনন্দ ভাষার মাপকাঠি দিয়ে তার গভীরতা নির্ণয় করা চলে না। মাঠ জুড়ে সবুজের মেলার মধ্যে দেখতাম প্রকৃতির অবর্ণনীয় দৃশ্য সম্ভারের আয়োজন। স্কুল থেকে ফেরার পথে পরের গাছ থেকে ঢিল ছুঁড়ে আমি পাড়ার প্রতিযোগিতা ছিল আমাদের নিত্যকার আনন্দ। বাড়ি থেকে কিছু দূরে থাকতেই একেকদিন শুনতে পেতাম, ঢোল, কাড়া এবং কাঁসরের ঝুমুর তালের বাজনা। বুঝতাম লাঠি খেলার দল এসেছে। দৌড়ে বাড়ি পৌঁছেই কোনমতে বই-খাতা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই বাইরে এসে দাঁড়াতাম। গ্রামের বউ-ছেলেমেয়েতে ভর্তি হয়ে গেছে বাইরের আঙিনা। একপাশে লাঠি এবং সড়কির বোঝা, আর মাঝখানে গোল হয়ে তালে তালে পা ফেলে নেচে চলেছে আদুড় গা, কাছাটে করে লুঙ্গি পরা হাতে লাঠি আট-দশজন লোক। লাঠির নানারকম কসরত আর ফটাফট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তারা একেকবার গলা ফাটিয়ে সাবাস বলে চেঁচিয়ে উঠছে আর ওদিকে ঢোল আর কাড়া নিয়ে পা বেঁকিয়ে কোমর দুলিয়ে প্রাণপণ চেষ্টায় বাজিয়ে চলেছে রসিক, কানাই, সুটু এবং উমেশ মালি। একটু তাল কতবার জো নেই, ভুল হলেই চোখ রাঙিয়ে তেড়ে আসবে দলের সর্দার। লাঠি আর সড়কি খেলার পরে খেলা দেখতে নামত কাজিপাড়ার ময়েজউদ্দিন তার প্রকান্ড বড় ধার-চকচকে একটা রাম-দা নিয়ে। রুদ্ধনিঃশ্বাসে সকলেই এই খেলাটার জন্যে অপেক্ষা করত। বিরাট রাম-দা খানা মাথার ওপর তুলে বোঁ-বোঁ করে ঘোরাতে ঘোরাতে নিজেও উঠোনের চারদিকে একটা করে পাক ঘুরত আর মাঝে মাঝে টপ করে বসে এক খামচা মাটি তুলে নিয়ে বিড় বিড় করে কীসব মন্ত্র পড়ে সারা শরীরে মেখে নিত। তারপর এক সময়ে দুজন লোক এগিয়ে এসে খাঁড়ার দুদিক ধরে দাঁড়াতেই ময়েজউদ্দিন তার পেটটা খাঁড়ার ঘাড়ের ওপর রেখে হাত-পা শূন্যে তুলে দিত। কয়েক মুহূর্ত ওই অবস্থায় থাকার পর নেমে এসে চারদিক ঘুরে সকলকে পেট দেখাত যে একটুও কোথাও কেটে যায় নি। ঘন ঘন হাততালিতে চারদিক ফেটে পড়ত। মনে মনে বড় হয়ে ময়েজউদ্দিন হবার কল্পনা করতাম।

    আমাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরে ছিল বলরামপুরের নদী। ধান-পাট কাটা শেষ হবার আগেই যাতে জল এসে সমস্ত ডুবিয়ে না দেয় সে জন্যে প্রতি বছরই নদীর মুখে তৈরি করা হয় প্রকান্ড একটা বাঁধ। সময়মত বাঁধ কেটে দিতেই পুকুর ডোবা খাল বিল মাঠ ঘাট সব জলে ডুবিয়ে দিত। জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই আমরা দিন গুনতাম কবে বাঁধ কেটে দেওয়া হবে আর কবে আমাদের পুকুরে জল পড়বে। পুকুরে বিপুল স্রোতে জল আসত। তা ছিল আমাদের একটা বড় আকর্ষণ। হঠাৎ একদিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই হয়ত শুনতে পেতাম জলস্রোতের একটানা কল্লোল, বুঝতাম পুকুরে জল পড়ছে।

    কোথায় থাকত ভোরবেলার সুখনিদ্রা, কোথায় থাকত পড়াশুনা। একছুটে পড়ি কি মরি করে চলে যেতাম পুকুর ধারে। দেখতাম পুকুরের পূব দিকের নালা দিয়ে ভীষণ বেগে জল এসে পড়ছে আমাদের পুকুরে। আশপাশের সমস্ত মাঠ ঘাট জলে ডুবে গেছে আর সেই জলের সঙ্গে পুকুরে ঢুকছে নানারকমের মাছ -- ছোট বড়। মাঝে মাঝে মাছগুলো যখন লাফিয়ে উঠছে -- আর প্রথম রোদের কিরণে যখন তাদের রুপোলি শরীরগুলি ঝিলিক দিয়ে উঠছে -- আমাদের আনন্দ তখন বাঁধ মানত না। গুনতাম ওইটা রুই, ওইটা কাতলা, ওইটা সরপুঁটি, ওইটা ফ্লুই, ওইটা বোয়াল! দেখতাম আমাদের অনেক আগেই পুকুরের পাড়ে পৌঁছে গেছে মাখন, কেষ্ট আর লালুর দল। হিড়িক পড়ে গেছে মাছ ধরার। সেদিন মাছ খেয়ে আমরা শেষ করতে পারতাম না। জেলেরা স্রোতের মুখে বড় বড় 'খরা' তৈরি করত মাছের জন্যে। মাছ ধরার সে কৌশলটি একমাত্র পূব-বাংলাতেই দেখেছি।

    স্কুলে বর্ষার ক'মাস যেতে হত নৌকায়। আমাদের বাড়ির পিছনেই ছিল মস্ত বড় বিল। বিলের ঘাটে বাঁধা থাকত তিন-চার খানা নৌকা এবং বাবার মহালে যাবার বজরা। ওর মধ্যে একখানা নৌকা আমাদের স্কুলে যাবার জন্যে বরাদ্দ। আমাদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট বৈঠা ছিল। এপাড়া ওপাড়া আর পাশের গ্রাম থেকে বৈঠা হাতে স্কুলযাত্রীর দল এসে জুটলে নৌকা ছাড়া হত। পিছনে হালে বসা নিয়ে প্রতিদিন ঝড়ুদা আর আনন্দদার মধ্যে ঝগড়া একটা বাঁধা নিয়ম ছিল। মাঝে মাঝে ঝগড়া এমন তীব্র হত যে দুজনকেই বাদ দিয়ে কার্তিকদাকে হাল ধরার দায়িত্ব দেওয়া হত। আর দুই পাশে আমরা জনা ছয়েক মিলে বৈঠা টানতাম। একেকদিন হত আমাদের বাইচ প্রতিযোগিতা ভদ্রকোল গ্রামের আজিজুলদের সঙ্গে। কোনদিন বৈঠার জল ছিটে বা কোনদিন নৌকা ডুবে আমাদের সকলের জামাপ্যান্ট, বই খাতা সব ভিজে যেত। স্কুলে পৌঁছে মাস্টারমশাইদের কাছে "আমাদের দিকটায় কী বৃষ্টি" এইসব কিছু বলে ছুটি আদায় করে নিতাম। আসার পথে রোদ্দুরে সব কিছু শুকিয়ে বাড়ি ফিরতাম।

    আমার গ্রামের চাষিদের কী সুন্দর সরল জীবনযাত্রা। ভোরবেলা যখন দেখতাম কাঁধে হাল আর কোঁচড়ে মুড়ি নিয়ে চাষির দল এগিয়ে চলেছে তখন কতদিন মনে ইচ্ছা জাগত অমনি করে ওদের সঙ্গে মাঠে যেতে। মাঠের আল ধরে কোথাও যেতে যেতে যখন দেখতাম নিড়ানি হাতে গান করতে করতে ক্ষেতের মধ্যে ওরা কাজ করে চলেছে -- মন যেত তখন উন্মনা হয়ে আর নিজের অজ্ঞাতেই যেন পা দুটি দাঁড়িয়ে যেত। যে কোন ঘটনাকে উপলক্ষ করে নিজেরাই মুখে মুখে ওরা রচনা করত গান -- আর সেই গান তারা উন্মুক্ত প্রান্তরে দল বেঁধে গলা ছেড়ে গাইত প্রচন্ড রোদে চাষের কাজ করতে করতে। গ্রামের দিগন্ত প্রসারী সবুজ মাঠের কথা মনে পড়লে আজও কানে বাজে সেই সুর। মনে হয় এখনও যেন সেই সুরেই ওরা গেয়ে চলেছে --

    "শুনেন সবে ভক্তিভাবে কাহিনী আমার --
    শিবনাথপুরের কুমুদবাবু ছিলেন জমিদার।
        ছিল সে ডাঙ্গাদার,
    ছিল সে ডাঙ্গাদার, নাম তার ছিল জগৎজুড়ে,
    জ্যৈষ্ঠ মাসের ১২ তারিখ ঘটনা মঙ্গলবারে!
        ম'লো সে অপঘাতে,
    ম'লো সে অপঘাতে, গেল সাথে দুনিয়ার বাহার --
    তারপরে শুনেন বাবুর বাড়ির সমাচার!
        বাবু যখন যাত্রা করে,
    বাবু যখন যাত্রা করে গাড়িত চড়ে রওনা হতে যায়
    টিকটিকির কত বাধা পড়ে ডাইনে আর বাঁয়!
        তা' শুনে ঠাইগরানি কয়,
    তা' শুনে ঠাইগরানি কয়, বলি তোমায়
        গঞ্জে যেও না,
    ঘটতে পারে আপদ বিপদ পথে দুর্ঘটনা।
    স্বপ্নের কথা বুড়ি করিল বর্ণনা।
    বাবু কয় ক্রুদ্ধ হয়ে, যাত্রাকালে কেন কর মানা,
    আজকে মানা করলে আমি কিছু শুনব না,
        হল সে মতি ছাড়া,
    হল সে মতি ছাড়া, পারশ করা অন্ন ফেলে যায়... "

    এমনি মস্ত বড় সেই গান, আজ সব মনে নেই। কিন্তু এটুকু মনে আছে, গঞ্জে যাওয়ার পথেই সেদিন জমিদারবাবু আততায়ীদের হাতে নিষ্ঠুর ভাবে নিহত হন। গানের ভাষা এবং কথাগুলো মনে নেই, কিন্তু সেই মেঠো সুর আজও যেন কানে বাজে। নিহত সেই কুমুদ পাঠকের কী গুন ছিল জানিনা কিন্তু অখ্যাত চাষির গানের ভিতর তিনি আজও বেঁচে রয়েছেন।

    দেশে যখন দিকে দিকে জ্বলে উঠেছিল হিংসার দাবানল, তখনও দেখেছি আমাদের গ্রামের শান্তরূপ। অটুট ছিল হিন্দু-মুসলমানের প্রীতির সম্পর্ক। রাজনৈতিক হলাহল সেদিনও বিষাক্ত করে তুলতে পারে নি সরল গ্রামবাসীদের মন। পরিচয় তার পেয়েছি সেবার দুর্গাপুজোর সময়। প্রতিমা ভেঙে দেবার ভয়ে আশপাশের যে সব হিন্দু বাড়ি নিয়মিত শারদীয় পুজো করে থাকেন, তাঁরাও যখন পুজো বন্ধ করে দেওয়া স্থির করেছিলেন, আমাদের বাড়িতেও সেবার পুজোর আশা বিসর্জন দিয়ে নানা আশঙ্কায় কাঁপছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে এল গ্রামের বড় বড় মুসলমান মাতব্বরের দল। জোর করে সম্পূর্ণ করাল কাঠামো নির্মাণ। পুজো আরম্ভ হল। আনন্দ করার নাম করে নিজেরা উপস্থিত থেকে সারারাত জেগে আমাদের পাহারার ব্যবস্থা করল। নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল পুজো। গ্রাম ছেড়ে চলে এসে আজ ফিরে ফিরে মনে পড়ছে তাদেরই কথা।

    সব কথা অবশ্য আজ আর মনে নেই। বিপর্যস্ত জীবনযাত্রায় স্মৃতিও হয়ে আসছে ধূসর। তবু জানি আজও গ্রামের সাধারণ মানুষের দল তেমনি আত্মীয়তায় আমার কথা মনে রেখেছে। মনে রেখেছে আমায় সেই রশিদ, শওকতের দল। মনে রেখেছে, আজিজুল, জেলহেজ ভাই। তবু নাকি সে গ্রাম আর আমার নয়! আমি আজ শরণার্থী।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপার বাংলা | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১৭২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিদিশা দাশ | 2401:4900:110a:40e2:0:69:8cde:***:*** | ১৬ আগস্ট ২০২২ ১২:২৩511069
  • তবে কেন, তবে কেন মিছে এ দেশহারানো
  • Amit | 121.2.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০২২ ০৭:০৭511096
  • তবে একটা বেসুরো কথা আমার মনে হয়: এই সব জমিদারদের আমলে কাছারিতে সব বিচার টিচার - সবার গলাগলি- ভাবাভাবি এগুলো যতই এখন রোমান্টিক লাগুক - আদতে তখনকার সমাজে ওয়েলথ ইনইকোয়ালিটি বা এক্সপ্লয়টেশন খুবই বেশি ছিল। ম্যাংগো লোকের পড়াশোনা বেশি ছিলনা বা বাকি দুনিয়া বেশি দেখেনি। তাই নিজের এক্সপ্লয়টেশন কে নিজের আগের জন্মের পাপের ফল ভেবে কপাল চাপড়ে বসে থাকতো। আমার দুদিকের ​​​​​​​ফ্যামিলিই ​​​​​​​উদ্বাস্তু। ​​​​​​​নিজের ​​​​​​​দাদুদের ​​​​​​​থেকেই ​​​​​​​গল্প ​​​​​​​শুনেছি ​​​​​​​তখন মুসলমান ভাগ চাষিরা বাড়িতে ​​​​​​​এলে ​​​​​​​মাটিতে ​​​​​​​বা ​​​​​​​মাদুরে ​​​​​​​বসতে ​​​​​​​দেওয়া ​​​​​​​হতো- ঘরে ঢোকার অধিকার ছিলনা। ​​​​​​​আলাদা ​​​​​​​গ্লাসে ​​​​​​​জল ​​​​​​​দেওয়া হতো। ​​​​​​​ঠাকুমা বেশ গর্বভরে বলতেন কেও ঢুকলে তিনি নাকি ঝেঁটিয়ে বের করে দিতেন। শুনে ​​​​​​​সেই ​​​​​​​ছোটবেলা ​​​​​​​তেও আমার খুব ​​​​​​​বিরক্তিই ​​​​​​​লেগেছিলো -তেনার ​​​​​​​গর্ব ​​​​​​​ঠিক ​​​​​​​কিসে ​​​​​​​কোনোদিনই ​​​​​​​বুঝতে ​​​​​​​পারিনি। ​​​​​​​
     
     
    এক সময় না এক সময় এই জমে থাকা ক্ষোভ কোনোভাবে ফেটে পরতই। চিরকাল ওসব রোমান্টিসিজম নিযে লোকে অন্ধ হয়ে বসে থাকে না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ,দেশভাগ ওয়ার্ল্ড ওয়ার সবকিছু জাস্ট সেসবের সাথে কোইন্সিডেন্স করে গেছে। গোটা দুনিয়ার প্রেক্ষিতে পুরো ৪০-৫০ সময়টাই একটা মেজর আপহিভিল কে সময়। 
  • Swati Ray | 117.194.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০২২ ১১:৩৫511100
  • লেখাটা সুন্দর লাগল। স্মৃতির মেদুরতা মাখা। 
     
    অমিতের সঙ্গে সহমত। বাবার মুখে শুনেছি বাবার মুসলমান বন্ধুরা কোনদিন বাড়ির ভিতর ঢোকেন। বাবা তাঁদের বাড়ি গেলেও। মুসলমানের আলাদা হুঁকো তো ছিলই । এমন হওয়ারই ছিল।  
  • Sara Man | ১৭ আগস্ট ২০২২ ১১:৫৯511103
  • লেখাটা খুব সুন্দর। দেশটা কেন যে ভাগ হল। 
  • ডা রুমী আলম, মিরপুর, ঢাকা | 2400:c600:3324:78fb:f0c0:4174:6250:***:*** | ২০ আগস্ট ২০২২ ০০:০১511192
  • একদম নির্ভেজাল স্মৃতি চারণা। কোন খাদ নেই। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন