বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে ভোটের উৎসব মিটল। কিন্তু "মুক্ত'ই বলুন, বা "নিষিদ্ধ', মাওবাদী অধ্যুষিত সেইসব এলাকায় বদলাবে কি কিছুই? যুদ্ধাক্রান্ত সেইসব অঞ্চলের কিছু সাম্প্রতিক খবরাখবর, এবারের খবর্নয়? তে।
যে বিচারের বাণী নীরব
এখনো। দু বছর বাদেও। ১৪ই মে, ২০০৭ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ডা বিনায়ক সেন। প্রথিতযশা ডাক্তার, সমাজসেবী ও People's Union for Civil Liberties (PUCL) ভাইস প্রেসিডেন্ট। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে "ষড়যন্ত্রের' অভিযোগে, যা কিনা এখনো প্রমাণের অপেক্ষায়।
কোনো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোয় বিনায়ক সেনের সুবিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয় নি, সম্ভবত: "রাষ্ট্রদ্রোহিতা"-র আঠেরো ঘার ভয়ে। কিন্তু পার্টিরা না বললেও মানুষজন বলেছেন। গত সপ্তাহে, ১৪ই মে দেশে বিদেশে প্রতিবাদের ঢল নামলো।
রায়পুর
---------
নেতাজী সুভাষ হকি স্টেডিয়ামে কারাবরণ করলেন ৯০জন মহিলা সহ ২২৫ জন সত্যাগ্রহী। গত আট মাস ধরে এঁরা আন্দোলন করেছেন প্রশাসন ও সহনাগরিকদের নিদ্রাভঙ্গ করতে। সকালে বুড়া তালাওয়ে একটি জনসভা আয়োজিত হয়। সেখান থেকে প্রায় ৬০০ মানুষের একটি মিছিল বের হয় শহরের পথে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রচারমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
দিল্লি
---------
রবীন্দ্রভবনের প্রতিবাদসভায় হাজির ছিলেন প্রায় ৪৫০ ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, চিত্রপরিচালক, শিল্পীরা। কবিতা গানে প্রতিবাদের ফাঁকে বক্তব্য রাখলেন ইলিনা সেন, অরুন্ধতি রায় ও বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার।
মুম্বই
---------
একইরকম দৃশ্য দেখা গেল মুম্বই-এর দাদরের একটি জনসভায়। এখানে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিলে পা মেলালেন বামপন্থী থেকে গান্ধীবাদি, সমস্ত রাজনৈতিক আদর্শের মানুষ। বক্তব্য রাখলেন পরিচালক,অ্যাকটিভিÙট অনন্ত পটবর্ধন, শোনালেন বিনায়ক সেনের ট্রায়ালের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা।
কলকাতা
---------
প্রতিবাদসভা আয়োজিত হল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তিরুবনন্থপুরম
---------
সরকারি প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার ডাকে জড়ো হওয়া বেশ কয়েকশো মানুষ। আয়োজন করা হয় একটি মেডিকেল ক্যাম্পের।
চেন্নাই
---------
কলেজের ছাত্ররা একটি সাইকেল র্যালির আয়োজন করে প্যাম্ফলেট বিতরণ করলেন শহরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রগুলিতে।
এছাড়াও
---------
জয়পুরের রাম নিবাস উদ্যানে, পুণের আপ্পা বলোয়ান্তচকেও আয়োজিত হল প্রতিবাদসভা।
হায়দ্রাবাদ, ম্যাঙ্গালোর, আমেদাবাদ, এর্ণাকূলম্, আনাকাপল্লী--পিইউসিএল-এর পক্ষ থেকে সারা দেশজুড়ে দেখা গেল একাধিক প্রতিবাদ মিছিল ।
চোখ রাখা যাক দেশের বাইরে ।
লন্ডন
---------
ভারতীয় দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদে জড়ো হলেন শিক্ষক, চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা। বিনায়ক সেনের মুক্তির ব্যাপারে গৃহমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবী করে আবেদনপত্র তুলে দেওয়া হল দূতাবাসের হাতে।
এডিনবার্গ
---------
রাস্তায় ডাক্তারের পোশাকে সজ্জিত ৩০ জন আন্দোলনকারী হেঁটে গেলেন হাতে হাতকড়া পড়ে, সমবেতভাবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়।
বার্লিন
---------
এমনেস্টি ইন্টার্ন্যাশানালের উদ্যোগে দেখা গেল প্রতিবাদী জমায়েত।
বস্টন
---------
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হল বিশাল জমায়েত, বিক্ষোভ।
এর আগেও বিনায়ক সেনের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ২২ জন নোবেল লরিয়েট। সওয়ালই উঠেছে বৃটিশ সংসদে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। দুবছর পরেও দেশের সন্দেহাতীতভাবে শ্রেষ্ঠ একজন নাগরিকের সম্বন্ধে এই প্রশ্নগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের রক্ষকদের একটুও লজ্জায় ফেলবে কি ?
http://www.binayaksen.net/
যে আইন এখনো ভক্ষক
চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক ছত্তিস্গড় বিশেষ জন-সুরক্ষা আইন' বা CSPSA । হ্যাঁ, যে আইনের কবলে আটক ডা: সেন। যা দিয়ে চেপে ধরা হচ্ছে একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের মুখ এবং সবেতেই দেখান হচ্ছে সেই নক্সাল জুজু। এর সাম্প্রতিকতম শিকার হলেন দম্পতি ভোলা বাঘ ও রুচি ভার্মা। কোন এক ধৃত নক্সাল মহিলার জবানবন্দীতে তাঁর আশ্রয়দাতা হিসেবে নাকি উঠে এসেছে এঁনাদের নাম। তাই ৯ই ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ১১টায় স্বামী ও শিশু পুত্র সহ রুচিকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ এবং তাঁদের কোর্টে তোলা হয় আরো আট দিন পরে। দু-মাস অতিক্রান্ত তাঁদের পুলিশি হেফাজতের, অথচ চার্জশীট ফাইল হয়নি আজ ও। যে কোন আইনেই জেনে এবং না জেনে করা অপরাধের মধ্যে পার্থক্য করা হয়ে থাকে। TADA - তে এই গাফিলতি থাকার কারণে তার বেশ কিছু ধারা অ-সাংবিধানিক বলে রায় দেয় সুপ্রীম কোর্ট। CSPSA যে শুধু সেই দোষে দুষ্ট তাই নয়, এতে 'বে-আইনি কাজকর্ম' বলতে কোন নির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। এমনকি, কোন নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য সংগঠন ত্যাগ করলেও তা এই আইনে মানা হয় না।
কিন্তু ভোলা ও রুচির গ্রেপ্তারের কারণ বোধহয় তাদের শ্রমিক আন্দোলনের সাথে নিবিড় যোগ। ভোলা বাঘ নিজে ঠিকা শ্রমিক কুমারমঙ্গলম বিড়লার আÒট্রাটেক সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে। এই কারখনায় সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ, ন্যূনতম মজুরি না দেওয়া, প্ল্যান্টের জন্য আশেপাশের চারটি গ্রামের যেসব কৃষকের জমি গেছে, তাদের চাকরি না দেওয়া ইত্যাদির প্রতিবাদ করে শ্রমিক কৃষকদের সংগঠিত করা নিয়ে এই দম্পতি মালিকের বিশেষ বিরাগভাজন হন। হবার কথাও। বিশেষত, স্থায়ী শ্রমিকের মজুরি, পি এফ বাবদ পাওনার মাত্র এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করলেই ঠিকা শ্রমিক পাওয়া যায় যেখানে।
অতএব কর্পোরেট কোপের রাষ্ট্রীয় রোষানল রূপেণ প্রকাশ ইত্যাদি। অন্তত সেই রকম ই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিনায়ক সেন ও অজয় ত্যাগীর বহুচর্চিত কেসগুলির আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, এই লেখাটিতে।
http://www.binayaksen.net/2009/05/cspsa-strikes-again/#more-989
মাওবাদী আন্দোলন, সালওয়া জুড়ুম : কিছু তথ্য, কিছু মিথ, কিছু প্রস্তাবনা
ছত্তিশগড়ে মাওবাদী ও সরকারের যুদ্ধের গত দু বছরের শহীদ তালিকা। সেখানে পুলিশ আর সালোয়া জুডুম বাহিনীর আক্রমণে ধর্ষিত নিহত কমরেড সুক্কি,কুরসম ও যেমন আছেন, রয়েছেন রানী বদলি থানা দখলের হানায় নিহত পঞ্চাশ জন পুলিশ ও। মোট ১৪২ জন মাওবাদী ও ২৩১ জন পুলিশ। আর প্রাণ গেছে ৫৭৮ জন উলুখাগড়ার । যাঁদের মাওবাদী কিম্বা তাদের প্রতি 'সহানুভূতিশীল' সন্দেহে ধরে নিয়ে যায় সালওয়া জুডুম বাহিনী, বাড়ি পুড়িয়ে দেয়, 'ফেক এনকাউন্টার' করে মারে পুলিশ। পুলিশের চর সন্দেহে মারে মাওবাদীরা কিম্বা বাধ্য করে তাদের হয়ে কাজ করতে। কখনো স্বত:স্ফূর্ত, কখনো বা হুমকির জেরে ভোট বয়কট। আবার তার জেরে সালওয়া জুডুম বাহিনীর কোপে পড়ে মৃত্যু। সেই মৃত্যুর বদলা নিতে আবার নাম লেখান কেউ মাওবাদীদের খাতায় । চলতেই থাকে।
http://www.guardian.co.uk/world/2009/mar/29/india-election-naxals
একটু কাটা ছেঁড়া করা যাক এই সালওয়া জুড়ুম ব্যাপারটি®কে, যার প্রণয়ন ও প্রচার করা হয়েছিল নকশাল সমস্যার মোকাবিলা করার "একমাত্র উপায়' বলে, "ছত্তিশগড় ও ভারত সরকারের একটি উন্নয়নমূলক সফল উদ্যোগ' বলে।
মিথ ১
"সালওয়া জুড়ুম নকশালপন্থীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের স্বত:স্ফূর্ত আন্দোলন' মাত্র।
বাস্তবে,
সালওয়া জুড়ুমের একজন নেতাও আদিবাসী নন। প্রধানত ছত্তিশগড়ের শিল্পপতিদের সংগঠন, আছেন স্থানীয় ঠিকাদারেরা, আর এস এস এবং অবশ্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
মিথ ২
সালওয়া জুড়ুম আসলে শান্তিপূর্ণ গান্ধীবাদী আন্দোলন।
বাস্তব চিত্র,
সালওয়া জুড়ুমের মিছিলে যেতে অস্বীকার করায় দান্তেওয়াড়া-র একজন গ্রামবাসীকে শুক্রাশয়ে গুলি খেতে হয়। নকশাল "সাজিয়ে' ধর্ষণ করা হয় ভেচাপাল গ্রামের দুজন মহিলাকে।
সারা দান্তেওয়াড়া জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এরকম বহু উদাহরণ। ২০০৭ এর ৩১ শে মার্চ, পঞ্জের ও সন্তোষপুর গ্রামে ১২ জন খুন হন স্পেশাল পুলিশ অফিসার-দের হাতে। জগদলপুর জেলের একজন মহিলা বন্দীর সম্বন্ধে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিটিজেন্স ইনিশিয়েটিভ ( ICI ) এর রিপোর্ট জানাচ্ছে যে ভাইয়ের সঙ্গে সাইকেলে করে যাওয়ার সময় তাঁদের ধরা হয়। তাঁর সামনেই ভাইকে গুলি করে মেরে তাঁকে গণধর্ষণ করে CRPF , তার পর তাঁকে লোকাল থানায় আটকে রেখে টানা ১০ দিনে ধরে আবার চলে গনধর্ষণ। আর সরকারী ভাবে অস্ত্রসাহায্য দেওয়ার কথা বার বার ঘুরে ফিরে আসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ এর রিপোর্টে।
মিথ ৩
১৩৫০ এর মধ্যে ৬৪৪ টি গ্রাম স্বত:স্ফূর্ত ভাবে এতে অংশ নিয়েছে সালওয়াজ জুডুমে। রিলিফ ক্যাম্পে তাঁরা অনেক ভালো আছেন,গ্রামের থেকে।
তথ্য বলছে,
ক্যাম্পে আছেন সাড়ে তিনলাখ গ্রামবাসীর মধ্যে মাত্র ৫০,০০০ জন। বাকিরা ?
বলাবাহুল্য, ক্যাম্পগুলিতে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থার দৈন্য নজরে পড়ার মত।
মিথ ৪
সালওয়া জুড়ুম সফল
বাস্তব তথ্য,
রাজ্য ডিজিপি র হিসেব মত ই, মাওবাদীরা যেখানে এই সালওয়া জুড়ুমের ফলে তাদের ৫০০ জনের হত্যার খবর স্বীকার করে নিয়েছে, সেখানেই কিন্তু এও জানা গেছে, এটি চালু হবার পর মাওবাদীদের রিক্রুটমেন্ট ও ছাড়িয়েছে আগের সব হিসেব। অতএব ...
আর, একটি "গান্ধীবাদী' , "শান্তিকামী' প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান কজন নক্সালকে হত্যা করা গেল তাই দিয়ে হয় ?
http://www.countercurrents.org/saha140907.htm
আশ্চর্য নয়, এটি বন্ধ করা নিয়ে জোরদার দাবী উঠে এসেছে বিভিন্ন স্তর থেকে। আর এই অঞ্চলের সমস্যার সমাধানের জন্য উঠে এসেছে বিকল্প প্রস্তাব ও।
মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে উন্নয়ন সমস্যা নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন প্ল্যানিং কমিশন গঠিত একটি বিশেষ দল। প্রাক্তন আমলা, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর, মানবাধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে রচিত এই টিম কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন তাদের রিপোর্টে। অঞ্চলগুলিতে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ,অথচ তার সুফল ভূমিপুত্রদের আওতার বাইরে। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বঞ্চনার ক্ষতর উপর বিষফোঁড়া, সামাজিক ভেদাভেদ। ওদিকে সরকারী অকর্মণ্যতার জবাবে নকশাল রা বিকল্প কর্মসূচী নিলে ,তার সাথে প্রয়োগ হতে থাকে দমনমূলক আইন কানুন।
সরকারের ভ্রান্ত জমি আধিগ্রহণ নীতি কে সরাসরি দায়ী করে ভূমি সংস্কারের দাবীর উল্লেখ করা হয়। দলিত ও আদিবাসী দের উন্নত আইনী সুরক্ষার ব্যবস্থা্, বিভিন্ন উন্নয়ন যোজনা কে আরও সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করা দলিত অঞ্চলে পঞ্চায়েত রাজের প্রসার এর প্রস্তাব রাখার সাথে সাথে নকশাল দমনের নামে প্রশাসন থেকে অস্ত্রসাহায্য নিয়ে তৈরী এই সালওয়া জুডুম ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করা হয় রিপোর্টে।
http://www.indiatogether.org/2008/sep/pce-umha.htm
http://sanhati.com/articles/8
বিচারের বাণী যখন আশার পারানি
সালওয়া জুড়ুম বাহিনীর কাজকর্মের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের (NHRC) রিপোর্টেও। প্রফেসর নলিনী সুন্দর, ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ ও প্রাক্তন আমলা ই এস রায় এর তৈরি এই তদন্ত মূলক ১০০ পাতার রিপোর্টে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার উল্লেখ আছে। রয়েছে পুড়িয়ে মেরে ফেলা বা হত্যার বেশ কিছু উল্লেখ,আশ্চর্যজনক ভাবে যাদের নিয়ে কোনো FIR নেই।
NHRC র পরামর্শে ছত্রিশগড় সরকারকে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট ( ATR ) জমা দি®তে হয়েছিল কোর্টে।
এই ভিত্তিতে সুপ্রীম কোর্ট আগেই ছত্তিশগড় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল NHRC র কিছু প্রস্তাব কার্যকরী করতে।
অবশেষে, গত ৫ ই ফেব্রুয়ারী সুপ্রীম কোর্ট জারি করল এই ঐতিহাসিক রায়, যে সলওয়া জুড়ুমের নামে ছত্রিশগড়ের সাধারণ লোকের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া যাবে না, সাধারণ লোকের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার ফল হতে পারে ভয়ংকর এবং সুদূরপ্রসারী । We do not underestimate the enormity of the problem (naxalism). But state should not encourage the common man by arming them to fight naxalites, - জানালেন বিচারপতিরা ।
বেঞ্চের মতে, সাধারণ মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার থেকে সরকারের উচিত এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নতির দিকে নজর দেওয়া। সেন্টার ফর ইকনমিক আপলিফমেন্ট অফ দা ভিলেজারস অ্যান্ড ট্রাইবালস সরকারকে যে টাকা দিয়েছে সরকারের উচিত সেই টাকার সঠিক ব্যবহার।
সরকারী পক্ষের উকিল ভেনুগোপাল বলেন সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত, কোন পক্ষে গেলে প্রাণ বাঁচবে তাই স্থির করতে পারছে না, সরকার? নাকি নক্সাল পক্ষ? তিনি আরও বলেন যে সরকার কখনোই সাধারণ মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় নি। কিন্তু কোর্ট পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয় যে সালওয়া জুড়ুমের নামে সরকারই সাধারণ মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, এ নিয়ে কোর্টের অন্তত কোনো দ্বিমত নেই।
http://www.hindu.com/2008/09/20/stories/2008092055941300.htm
http://timesofindia.indiatimes.com/rssarticleshow/msid-4082716,prtpage-1.cms
সুপ্রীম কোর্ট থেকে এর ঠিক একদিন পরেই বেরোনো আরেকটি রায় ও ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনকারীদের আরেকটি বড় জয়।
বছর তিনেক আগে, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাশম জেলায় আট জন পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে মারা যান, পাঁচ জন মহিলাও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। কারণ হিসেবে জানানো হয় যে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কোনো এফ. আই. আর. দাখিল করা হয় নি এবং কোনো পুলিশকর্মীর বিচারও হয় নি। এ রকম ঘটনা দেশে প্রথম না। কিন্তু এই প্রথম, হাইকোর্ট নির্দেশ দিলো যে, পুলিশের হাতে মৃত্যুর ঘটনায় প্রতি ক্ষেত্রেই একটি এফ. আই. আর. দাখিল করতে হবে, বাধ্যতামূলকভাবে। প্রতিটি ঘটনা একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের বদলে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারাধীন হবে। ঐ আটজনের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্ধ্রপ্রদেশ সিভিল লিবার্টিস কমিটির (APALC) পিটিশনের উত্তরে গত ৬ই ফেব্রুয়ারী অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের এই রায় ।
ঐতিহাসিক এই রায়ে আরো বলা হয় যে অন্যান্য প্রমাণের সাথে পুলিশের দাখিল করা রিপোর্টটিও একটি মতামত হিসেবে গণ্য করা হবে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবস্থাসাপেক্ষে এই মতামতটি অগ্রাহ্যও করতে পারেন। ভারতবর্ষের মানবাধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রায়। জুন ২০০৬-এ একটি সি. আর. পি. সি. অ্যামেন্ডমেন্টে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে এই ধরণের মৃত্যুর ঘটনাগুলিকে বিচার করানোর কথা বলা হলেও সারা দেশেই পুলিশ একে কার্যকরী করতে অগ্রাহ্য করে। উল্টোদিকে গত চার দশকে শুধু অন্ধ্রপ্রদেশে পুলিশের হাতে ৬০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে,যার মধ্যে ২০০০ জন মারা গেছেন গত এক দশকে।
http://www.tehelka.com/story_main41.asp?filename=Ne210209proscons.asp
আশা করা যায় এই রায়ের সঠিক প্রয়োগ গোটা দেশেই পুলিশের হাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমাবে,
কমবে এইভাবে 'ফেক এনকাউন্টারে' মরণোত্তর ভাবে মাওবাদী আখ্যায়িত হবার ঘটনা।
এ বিষয়ে দেখুন, জাভেদ ইকবাল, এক আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় বস্তারের একটি এনকাউন্টারের চিত্রপ্রবন্ধ ।
http://www.lightstalkers.org/galleries/contact_sheet/20348
সালওয়া জুডূম : অন্য রাজ্যের কাছে আদর্শ না শিক্ষা ?
ছত্তিশগড়ে এটি বন্ধ করার এইসব উদ্যোগ প্রচেষ্টার মধ্যেই শোনা গেল জঙ্গি মোকাবিলায় সালবা জুদুমের অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে চলেছে মণিপুর সরকার। হেইরং ও চাজিং গ্রাম থেকে ৫০০ জন যুবককে স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসার পোস্ট দিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং-এ পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।
আশার কথা এই, যে, এর মধ্যেই এই গ্রামগুলি থেকে কিছু গ্রামবাসী ও মানবাধিকার কর্মীদের একটি দল ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়া জেলার সালওয়া জুদুম অধ্যুষিত গ্রামগুলি দেখে এসেছেন। ছত্তিশগড়ে দেখা গেছে এর ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁরা দেখে এসেছেন যে, সালওয়া জুদুমে নাম লেখানো গ্রামবাসীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন বাকি লোকেদের থেকে এবং কাজের সন্ধানে বা অন্য কারণে জেলার অন্যত্র যেতে পারছেন না, কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অপর মাওয়িস্টদের আক্রমণ নেমে আসছে। আবার উল্টোদিকে যাঁরা সালওয়া-জুদুমে নাম লেখাতে চাইছেন না, সরকারের দিক থেকে তাঁদের কে মাওবাদী বা মাও-সিম্প্যাথাইজার বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলের গ্রামগুলিতে সামাজিক সম্পর্কগুলি নষ্ট হয়ে পড়ছে।
ইম্ফলের মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই অভিজ্ঞতা সেখানকার মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। এর ফলে এই সালবা জুদুম পদ্ধতির চাজিং গ্রামের অধিবাসীরা ছত্তিশগড় থেকে পাওয়া ভিডিও ক্লিপগুলি নিয়ে পুলিশ সুপারিন্ডেন্টের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আপত্তির জায়গা ব্যক্ত করেছেন এবং সালওয়া জুদুমের বিরুদ্ধে মণিপুরে একটি বক্তব্য ক্রমশ: জোরদার হয়ে উঠছে।
http://www.binayaksen.net/2008/07/salwa-judum-in-manipur-eyes-wide-open
মে ১৭, ২০০৯