এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • কার্ফিউড নাইট: আগ্নেয়গিরির শিখরে পিকনিক

    শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৩ আগস্ট ২০১৫ | ৯২৫৬ বার পঠিত
  • দক্ষিণ কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রামের এক ভীতু মানুষ, হুসেন । শান্ত চোখ, সংকুচিত ভংগীতে বসেছিল ডাক্তারখানায়। হুসেনের ধারণা সে ইমপোটেন্ট হয়ে গেছে। তার ডাক্তার ভাইয়ের ভাষায়, ‘হুসেনের আর দাঁড়ায় না’। হুসেন বিয়ে করতে চায় না, কারোর সাথে মিশতে চায় না। নিজের ছোট্ট দোকান-ঘরের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে কাটিয়ে দেয় সারাদিন। হুসেন এক একলা ভাঙ্গাচোরা মানুষ। 


    ১৯৯০ সালে যখন কাশ্মীরে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ডাক ওঠে হুসেন তখন কলেজে পড়ে। তেরোজন বন্ধুর সাথে হুসেন রওনা দিয়েছিল এল ও সি পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে ‘ট্রেনিং’ নিতে। কুপওয়ারা থেকে একটু দূরে বিএসএফ তাদের ট্রাক থামায় এবং অ্যারেস্ট করে কাছের আধা-সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালবেলা ইন্টেরোগেশন রুমে নিয়ে আসা হয় তাদের। জোর করে উলংগ করিয়ে দুই হাতে তামার তার বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতে থাকে। হুসেনের গলা ফাটিয়ে ঠিকরে আসতে চায় বমি, কিন্তু করতে পারে না কারণ মুখে গোঁজা ছিল তুলোর বল। রক্ত লালা এবং বমিতে সেই বল ভিজে গেলে ফেলে দিয়ে নতুন বল ঢোকানো হচ্ছিল। এরপর হুসেনের পুরুষাংগের ভেতর তার ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জোর করে। শক পেতে পেতে মনে হয় ছিঁড়ে যাবে পুরুষাংগ। হুসেন পরে বুঝেছিল, এগুলো শুধুই কথা বার করার জন্য নয়। কারণ সকলেই একটা না একটা সময় মুখ খোলে, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মুখ খুলতে বাধ্য হয়। ইন্ডিয়ান আর্মিও জানে সেটা। তারা দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এই টর্চার চালায় নিছক স্যাডিস্ট আনন্দ পাবার জন্যেই। 


    অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসেন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল একসময়। তাকে জাগিয়ে তুলে আবার শক দেওয়া হয়। হুসেন প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে, কিন্তু হিসির বদলে রক্ত বেরিয়ে আসে। ফুলে ওঠে অন্ডকোষ। বিপদ বুঝে আর্মি হাসপাতালে ট্রান্সফার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর আবার অত্যাচার। দুই বছর বাদে হুসেন যখন ছাড়া পায় তখন তার পুরুষাংগ আর শক্ত হয়না। বাড়ি ফিরে আসার পর গুটিয়ে যায় সে। বাড়ির লোক বিয়ে করার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে, একসময় সে জানায় যে সে বিয়ে করতে পারবে না, কারণ তার “দাঁড়ায় না”। কোনও ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না লজ্জায়। গোটা সময় কাটায় গ্রামের মসজিদে। হুসেন ধর্মপ্রাণ এক মুসলিম হয়ে যেতে শুরু করে, যাকে অনায়াসে ভারতীয় মিডিয়া দাগিয়ে দিতে পারে ধর্মান্ধ মৌলবাদী নামে।


    হুসেন কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়। বসারাত পীরের লেখা কার্ফিউড নাইট-এর পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য হুসেনের সাক্ষাতকার, যারা কাশ্মীরে ইন্ডিয়ান আর্মীর অত্যাচারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এই বই ডকুমেন্ট করেছে মুবিনা আর রশিদের কথা। বিয়ের রাতেই বিএসএফ বাস থেকে নামিয়ে মুবিনাকে গণধর্ষণ করেছিল। অপরাধ? মুবিনাদের বাস আসার আগে জঙ্গীদের একটা জিপ গিয়েছিল সেই রাস্তা দিয়ে এবং সেখান থেকে বি এস এফ-এর উদ্দেশ্যে কয়েকটা গুলি ছোঁড়া হয়েছিল শুন্যে। কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু সেই জিপকে ধরা যায়নি। এই রাগে পরের বাস থামিয়ে এক নববিবাহিতা মেয়েকে নামিয়ে সারারাত ধরে গণধর্ষণ না করলে সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমী-দর্পিত পুরুষাংগ শান্ত হত না। এই বই ডকুমেন্ট করেছে গুলজারের কথাও। ক্লাস টু্যেল্ভের ছাত্র গুলজার নিছক মজা করার জন্য স্কুলের এক জুনিয়ারকে একটু র‍্যাগ করেছিল। জানত না যে সেই ছেলেটি এক ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসিয়ালের পুত্র। আর্মি গুলজারের বাড়িতে এসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং হাত পা বেঁধে কাছের এক গোডাউনে ঢুকিয়ে মাইন ফাটিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল তার শরীর। অফিসিয়াল ডকুমেন্টে লেখা হয়েছিল গুলজার এক বিপজ্জনক জংগী যার মাইন ভুল করে হাতে ফেটে গেছিল। আছে ১৭ বছরের শফির কথাও। শফি এবং তার ভাইকে ইন্ডিয়ান আর্মি একদিন রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর শফির পেটে মাইন বেঁধে পাঠিয়ে দেয় কাছের এক বাড়িতে যেখানে নাকি জংগীরা লুকিয়ে ছিল। শফির মা সেকথা শুনে ছুটতে ছুটতে সেখানে গিয়ে দেখেন শফির ছোটভাই বিলালের পেটেও মাইন বাঁধার তোড়জোড় চলছে। আর্মির সঙ্গে হাতাহাতি করে বিলালকে ছাড়িয়ে আনা গিয়েছিল। কিন্তু শফিকে ফেরানো যায়নি। তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহের সবকটা অংশ খুঁজেও পাওয়া যায়নি কবর দেওয়ার জন্য।


    বইটা পড়তে পড়তে গা গুলিয়ে ওঠে। অসুস্থ লাগে। কয়েক দশক ধরে দেশের ঐক্যের নাম করে ইন্ডিয়ান আর্মি যে জাস্ট সাম্রাজ্যবাদী অ্যাগ্রেসন চালাচ্ছে গোটা কাশ্মীর ভূখণ্ডে তার জীবন্ত ডকুমেন্টেশন এই বই-এর পাতায় পাতায়। লেখক নিজে জীবনের প্রথম ১৮ বছর কাটিয়েছেন কাশ্মীরে। জংগী হতে হতেও হননি। কিন্তু স্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছেন কেন হাজার হাজার ছেলেপুলে এল ও সি ডিংগিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে ‘ট্রেনিং’ নিয়ে আসে। খুব সঠিকভাবে বসরাত দেখিয়েছেন যে কাশ্মীরের মানুষ কোনও কালেই নিজেদের ভারতের অংশ ভাবেনি। শারজার সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে যেখানে জাভেদ মিঁয়াদাদ শেষ বলে ছয় মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন, রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার পর উল্লাসে ফেটে পড়েছিল প্রায় গোটা কাশ্মীর। ব্যাপারটা পাকিস্তানকে সমর্থন নয়। বরং যে ভারতের বিপক্ষে খেলবে তাকেই সমর্থন। দশকের পর দশক ধরে দেশপ্রেম এবং জাতীয় সংহতির নাম করে এই ভূখণ্ডে দাপিয়ে গিয়েছে ভারতীয় রাজনীতি। ভারতীয় সেনা এবং আধা-সামরিক বাহিনী, খুন-ধর্ষণ-নিখোঁজ-এর বীভৎস মজায় ভারতবাসীকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সারসত্যটা যে কাশ্মীর ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অংশ কখনোই ছিল না। বরং আজাদ কাশ্মীরের দাবীর থেকে আর কোনও মহত্তম দাবী এই সময়ে দাঁড়িয়ে সম্ভব নয়। সেই জাতীয়তাবাদী আগ্রাসনের  বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ ছুঁড়ে দিতে পেরেছিল শুধুই নীরব অসমর্থন। আর তাই ১৯৮৭ সালে নির্বাচনের নামে যখন প্রহসন করে ভারতীয় সরকার, তার বিপরীতে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে উঠে আসে ইয়াসিন মালিকের জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে স্বাধীনতাকামী শান্তিপূর্ণ মিছিলে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে যখন আর্মি শতাধিক মানুষ মারে, তার উত্তরে হাজার হাজার ছেলে লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ‘জিহাদী ট্রেনিং’ নিতে চলে যায় এবং ফিরে এসে বীরের সংবর্ধনা পায় সাধারণ্যের কাছে। কাশ্মীরের বাস্তব এটাই। ভারতীয় দেশপ্রেমিকদের বুটের তলায় মাথা তুলবে বিচ্ছিন্নতাবাদের গর্জন।


    কিন্তু বসারাতের এই বই শুধুই বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের গল্প নয়। বরং গত কয়েক দশক ধরে আগ্নেয়গিরির শিখরে বসে পিকনিক করছে যে ভূখণ্ড, এই বই তার এলিজি। বাসারাত জানেন পক্ষ নিতে হয়। ফেন্স-সিটার মানবতাবাদীদের মতন তিনি মহত্বের সুঊচ্চ প্রাসাদের চূড়ায় বসে দিক-নির্দেশ করে দেন না। বলেন না যে আর্মী এবং জংগী দুই পক্ষই সমান খারাপ। বসারাত এই ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে অবগত যে নিরপেক্ষ অবস্থান আসলে দিল্লীতে বসে থাকা নিও-হিন্দুত্ববাদী শাইনিংদের চামচা রাজনীতির হাত-ই শক্ত করে। ভারতীয় মিডিয়া রাজনীতি ব্যাবসায়ী গোষ্ঠির সবচেয়ে পছন্দের অবস্থান এই নিরপেক্ষতা, যার আড়ালে স্ট্যাটাসকুয়োর বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে যায়। বসারাত স্পষ্টত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ নিয়েছেন। বারবার দেখিয়ে দিয়েছেন কেন ঐতিহাসিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে যুবক যুবতীরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। কেন সেই অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়াটা এই সময়ের একমাত্র দাবী। কেন পাপা-টু নামের ইন্ডিয়ান আর্মির টর্চার সেলে মার খেতে খেতে বুকের কলজে ফাটিয়ে ফেলার জবাব দিতে হাতে হাতে বদল হয় কালাশনিকভ। কেন ইয়াসিন মালিককে একটার পর একটা মিথ্যে কেসে জেলখানার মধ্যে বছরের পর বছর পচিয়ে মারার বদলা নিতে শ্রীনগরের রাস্তা ফেটে পড়ে জনবিক্ষোভে। এই বই-এর অসাধারণত্ব এখানেই যে বসারাত পক্ষ নেন বারবার। আর সেই পক্ষ-নির্বাচনে তাঁর কোনো ভুল হয় না।


    কিন্তু এতটা লেখার পর মনে হল কিছুই বলা হল না। এই বই-এর যে পার্সনাল টাচ, যে মানবিক কাহিনীগুলো, সেগুলো কিছুই ধরা গেল না। বসারাত যখন বর্ণণা করেন যে হাতের কালাশনিকভ একপাশে সরিয়ে জংগীরা নেমে পড়ে স্কুলের ছেলেপুলের সাথে ক্রিকেট খেলতে, দুম করে মনে হয়, আরে এ তো আমাদের নক্সাল ছেলেদের গল্প, যারা নিজেদের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই কয়েক মিনিটের জন্য থামিয়ে দিত যখন পাড়ার বল্টুর ঠাকুমা রাস্তা পার হতেন। বসারাত গল্প করেছেন সেই সব স্থানীয় জংগী নেতাদের যারা দেখা হলে প্রথমেই জানতে চাইত যে বাচ্চাটা লেখাপড়া ঠিকমতন করছে না কি শুধুই এই ভারত-পাকিস্তান করে করে বখে যাচ্ছে। বসারাত স্কুলে পড়ার সময় এক জে কে এল এফ-এর স্থানীয় কমান্ডারের কাছে বারবার আবদার করতেন যে তাঁকে দলে নিতে হবে। সেই কমান্ডার তাঁদের গ্রামের-ই ছেলে, প্রথমে ধমক ধামক দিত “অ্যাই পড়াশোনা কর, এসব করতে হবে না” ইত্যাদি বলে। তাতেও কাজ হয়নি দেখে সটান গিয়ে বসারাতের দাদুর কাছে গিয়ে নালিশ করে আসে। সেই জংগী ছিল দাদু যে স্কুলের হেডমাস্টার, তার ছাত্র। মাস্টারমশাই-এর নাতি উচ্ছন্নে যাচ্ছে, বসে দেখা যায় নাকি?


    তাই সবকিছুর পরেও এই বই সেই মানুষদের গল্প বলে, সেই ভূখণ্ডের গল্প বলে, আধিপত্যবাদের নিষ্পেষণে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও যা তুমুল জীবনের উদযাপনে বাঁচতে চায়। গ্রামের স্থানীয় মসজিদে গিয়ে সৌদির ক্যাম্প থেকে ফেরা কট্টর ইসলামিস্ট ছোকরা যখন চোখ-মুখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা’ (শ্রেষ্ঠ কে?) তার উত্তরে কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ চেঁচিয়ে ওঠে না, বরং একে অন্যের মুখ চাওয়া-চায়ী করে। চেঁচাবে কি করে? আরবি জানলে তো! ছেলেপুলের কাছে তুমুল প্যাঁক খেয়ে চোখমুখ লাল করে সেই ইসলামিস্ট বুঝিয়ে দেয় যা এই স্লোগানের উত্তরে আল্লাহু আকবর বলাটাই নিয়ম। তারপর আব্বার চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা”। দুই একজন মিনমিন করে বলে ওঠে ‘আল্লাহু আকবর’। প্রোগ্রাম সুপারফ্লপ হবার পর এক বছর ধরে সেই ছোকরা আওয়াজ খেতে থাকে গ্রামের অন্য ছেলেপুলের কাছে। ততদিনে কিন্তু ধর্মের হাত ধরে রেজিস্টান্স পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। পণ্ডিতদের মাস এক্সোডাস ঘটে গেছে, শ্রীনগরের রাস্তা উজিয়ে উঠছে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিখোঁজ এবং ঘরছাড়া। কিন্তু জীবন যেখানে যেটুকু চেটেপুটে নেবার, নেবেই। আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে পিকনিক করার নাম-ই কাশ্মীর, বারবার মনে করিয়ে দেয় এই বই।


    বসারাত চাইলেই ইন্ডিয়ান মিডিয়ার ব্লু-আইড বয় হতে পারতেন যদি জংগী এবং আর্মির সমান নিন্দেমন্দ করে সাধারণ মানুষের কথা বলতেন। যেটা বসারাত ভোলেননি, কিন্তু আমরা ভুলে যাই, যে কাশ্মীরে জংগী আর সাধারণ মানুষের কোনও তফাত নেই। তাই কোনও এক মায়াময় হিমেল রাতে এক সাধারণ ওষুধের দোকানদার বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে জংগী ক্যাম্পে চলে যায়। সে এবং তার মতন আরো অসংখ্য মানুষ জানত যে এর অন্তে টর্চার এবং মৃত্যু নিশ্চিত। হয়ত বধু শুয়েছিল পাশে, হয়ত শিশুটিও ছিল, তবুও তাকে নন-কনফর্মিস্ট বানিয়ে ছাড়ল এক অমোঘ মরণফাঁদ। তবুও সিনেমায় যেমন হয়, শেষ দৃশ্যে হাতের কালাশনিকভ ত্যাগ করে সে সোজা হেঁটে যাবে না কিছুতেই। মরতে মরতেও আঁকড়ে ধরে থাকবে অস্ত্র। কাশ্মীর মানে এই নন-কনফর্মিস্ট ভূখণ্ডের গল্প। অসামান্য এ বই, ভোডাফোন ক্রসওয়ার্ড পুরষ্কার পাবার পরেও খুব জানা কারণেই ইন্ডিয়ান মিডিয়াতে বেশি আলোচনায় আসবে না। বুট পরা শ্রীরামচন্দ্রের পদদ্ধনিতে কেঁপে ওঠা আজকের ভারতবর্ষে দাঁড়িয়ে এই বই ফ্লপ হতে বাধ্য। তবে নন-কনফর্মিস্টরা পড়বেন। এটুকু আশা রইল। যেমন উট শুকনো কুয়ো থেকেও জলপান করে বলার পরেও গদার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে উট জলপান করতে বাধ্য নয়, তাঁর নিজের মতন করে, খেয়াল-খুশি অনুযায়ী...


    ==============

    Curfewed Night: Basharat Peer; Random House (2010)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৩ আগস্ট ২০১৫ | ৯২৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | unkwn.***.*** | ১৬ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৫৩86855
  • আমারও মনে হচ্ছে, আগে পরে আরো কিছু বলার বাকি থেকে যাচ্ছে। আমাদের এই অন্তর্লীন ঘৃণার দানব'কে থামানোর জন্য একটা বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান অত্যন্ত জরুরি। মাঠে নেমে কাজ করার এলেম অর্জন করতে পারিনি। চেষ্টা হয়তো করেছি, কিন্তু পারিনি। কীবোর্ডে লাফাঝাঁপা করা ছাড়া এখন আর কোনও বিকল্প নেই। অন্ততঃ সেটাই থাকুক।

    তবে যাঁরা পড়েছেন বা পড়ছেন, তাঁদের মনে যদি কোনও প্রশ্ন, ভিন্ন দৃষ্টিকোণের অবকাশ থাকে, তবে এখানে লিখলে সেটা নিয়েও চিন্তার অবসর পাওয়া যাবে। উপরের বিচ্ছিন্ন মন্তব্যগুলোকে গ্রন্থিত করে এবং আরো কিছু চিন্তাভাবনাসহ কয়েকদিন পর একটা পৃথক লেখায় কোথাও পৌঁছোবার প্রয়াস পাবো।

    সবাইকে ধন্যবাদ।
  • শিবাংশু | unkwn.***.*** | ১৬ আগস্ট ২০১৫ ১১:৩৫86852
  • স্বর্ণেন্দু,

    "....অষ্টম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী , এই পুরো সময়কালে ইউরোপের ক্রিশ্চিয়ান দুনিয়ার থেকে ইসলামিক দুনিয়া বহুগুণ বেশী লিবারাল, সভ্য ও ..."

    এইখানটি থেকেই শুরু করা যায়। হিস্পানি পেনিনসুলায় আরবরা যখন প্রথম আসে ৬৫২ সালে, তখনও তারা বস্তুতঃ মরুভূমির উপজাতি মাত্র। কিছু আরব, কিছু বর্বর উপজাতি। মহম্মদ গত হয়েছিলেন ৬৩২ সালে। কুড়ি বছরের মধ্যে তাদের ভিতর ইসলামি চৈতন্যটি সেভাবে বিকশিত হতে পারেনি, যাকে ইসলামি সভ্যতা বলা যায়। ৭১১ সালে উমায়দ'রা এসে প্রথম বড়োসড়ো বিজয়ের স্বাদ পায়। তাদের এই বিজয়ভূমির মধ্যে এসে গিয়েছিলো স্পেন ও পর্তুগাল । বাস্ক, নাভারা ইত্যাদি স্থান পাহাড়ের ওপারে ছিলো বলে তখনও সেখানে আরবরা পৌঁছোতে পারেনি। আরব'রা দেশটার নাম দেয় আল আন্দালুস। দশম শতাব্দীর মধ্যে আল আন্দালুসে মুসলিম প্রভাব গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। খ্রিস্টিয় উপজাতিরা কিন্তু নেহাৎ বসে ছিলোনা। আস্তুরিয়ার ভিজিগথ হিরো পেলাজিয়স ৭২২ সালে বিখ্যাত কোভাডোঙ্গার যুদ্ধে মূরদের তাড়িয়ে দেন। যাকে লা রিকনকুইস্টা বলা হয়। মূর ও খ্রিস্টিয় হিস্পানিদের মধ্যে আক্রমণ, প্রতিআক্রমণ চলতেই থাকে। মূরদের তইফা শাসন দুর্বল হয়ে যায়। ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি গ্রানাদা ছাড়া কোথাও আর মুসলিম শাসন চোখে পড়েনা। পঞ্চদশ শতকের মধ্যে লা রিকনকুইস্টা শেষ হয়ে যায় এবং আরবীভাষী য়ুরোপীয়রা পশ্চিমের মূলস্রোতে ইসলামি সভ্যতার শ্রেষ্ঠ অবদানগুলিকে যোগ করার কাজ শুরু করেন।
    ----------------------------
    এবার একটু তাকাই ইসলামি সভ্যতার উৎসমুখে। ৬৩২ সালে পয়গম্বরের জীবনাবসানের পর প্রথম খলিফা হ'ন আবু বকর। তার পর খলিফা ওমর। ওমরের পর উথমান (উসমান)। চতুর্থ খলিফা আলি। ক্ষমতাদখলের লড়াই ক্রমশঃ প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। আবু বকর ছাড়া বাকিরা আততায়ীদের হাতে প্রাণ হারান। ৬৬১ সালে পঞ্চম খলিফা হ'ন আলিবিরোধী সিরিয়ার শাসক মুয়াও'ইয়া । ততোদিনে আরব সাম্রাজ্য বিশাল আকার ধারণ করেছে। তখনও পর্যন্ত আরবরা ছিলো একান্তভাবে বিকেন্দ্রিত মরুবাসী ভ্রাম্যমান যোদ্ধাগোষ্ঠী এবং বণিকশ্রেণী। কোনও কেন্দ্রিত রাজশাসনের অভিজ্ঞতা তাদের ছিলোনা। প্রশাসন চলতো উপজাতিক গণতন্ত্রের নিজস্ব নিয়মে। খলিফা মুয়াও'ইয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছিলো একটি বড়ো রাজত্বের শাসনব্যবস্থার সূচনা করার। যেহেতু আরবদুনিয়ায় সেরকম কোন মডেল ছিলোনা, তিনি বাইজ্যান্টাইন ও ইরানি মডেলটিকে যোগবিয়োগ করে একটা স্বীকারযোগ্য আকার দেবার প্রয়াস করলেন। এর ফলে ইসলাম সম্প্রসারণের জন্য 'উমায়দ' নামে একটা সংহত রাজশক্তির গঠন হলো বটে, কিন্তু উত্তরাধিকার ভিত্তিক রাজতন্ত্র এসে সাবেক আরবি ইসলামি গণতন্ত্রের শক্তিটিকে বিনাশ করে দিলো। ফলশ্রুতি মুয়াও'ইয়ার পুত্র য়জিদের 'রাজ্যাভিষেক'। খলিফা হবার পর য়জিদ সব আরব গোষ্ঠীপতিদের আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ করলো। কিন্তু পয়গম্বরের নাতি হুসেন ইবন আলি এবং প্রথম খলিফা আবু বকরের নাতি অবদুল্লাহ ইবন জুবেইর শপথ নিতে অস্বীকার করলেন। তার পরে ক্ষমতাদখলের লড়াই এবং ইসলামি দুনিয়ার প্রথম ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া। আরব মূলভূমিতে নব্বই বছর ধরে সুন্নি উমায়দ রাজ শেষ হয়ে গেলো ৭৫০ সালে আবুল আব্বাসের শিয়া বাহিনীর আক্রমণে। আব্বাসিদ রাজত্ব এসে ইসলামের দায়িত্ব নিলো। আব্বাসিদরা ছিলো উমায়দদের থেকেও অধিক ক্ষমতার কেন্দ্রায়নে বিশ্বাসী। যেকোন প্রতিরোধ নির্মমভাবে গুঁড়িয়ে দিয়ে চরম শক্তিমান রাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগের ঐতিহ্য এই সময় থেকেই শুরু হতে দেখি। খলিফা আলি'র প্রচারিত ইসলামি প্রেমধর্মকে, যা সুফিদর্শনের পূর্বসূরি, প্রত্যাখ্যান করে অস্ত্রের শক্তিতে ইসলাম'কে প্রতিষ্ঠা করার যে বর্বর প্রক্রিয়া, সেটা এই সময় থেকেই পুরোমাত্রায় শুরু করা হয়। যেন তেন প্রকারেণ অবিশ্বাসীদের ইসলামে বিশ্বাসী করে তোলা যে একটা শ্রেষ্ঠ পুণ্যকর্ম, সেই মতবাদটি আব্বাসিদদের সময় থেকেই প্রচারিত ও প্রযুক্ত হতে শুরু করে। এমনকি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দর্শনগুলি, যারা এই চরমপন্থী উদ্যমের বিরোধিতা করে এসেছে, তাদেরকেও ঘৃণা ও হিংসা সহকারে গুঁড়িয়ে দেবার আহ্বান ইসলামি মূল স্রোতের অংশ হয়ে যায়।
    -----------------------------------------
    অষ্টম শতক থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের কারণগুলিতে ইসলামের রাজনীতি প্রসূত বিক্রম ততোটা কাজ করেনি, যতোটা করেছে বেশ কিছু বিরাট মাপের মানুষের কর্মশক্তি ও মনীষার মেলবন্ধন। মধ্যযুগের ইসলামি জ্ঞানতাপস, শিল্পী, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, চিন্তানায়কদের সমবেত সাধনায় গড়ে ওঠে অন্য সভ্যতার জন্য ঈর্ষাজনক সমৃদ্ধ সেরিব্রাল ঐতিহ্য। জ্ঞান শুভবুদ্ধির জনক, শুভবুদ্ধি থেকে আসে উদারতা এবং তাঁদের উদারতার শ্রেয় ইসলামকে দিতেই হবে। কারণ সে সময়ের আধুনিকতম ধর্মীয় দর্শন ইসলাম তাঁদের অনুপ্রেরিত ও উদ্বুদ্ধ করেছিলো। ইসলামের অন্তর্নিহিত উদারতা থেকেই তাঁরা সারা বিশ্বের মননসঞ্জাত শ্রেষ্ঠ ফসলগুলিকে আত্তীকরণ করে আরবসভ্যতাকে সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে তৎকালীন, অর্থাৎ য়ুরোপীয় পরিভাষায় 'লা রিকনকুইস্টা' পর্বে, ইসলামের রাজনৈতিক গা-জোয়ারি সেই মনীষার বিকাশের পথে কতোটা সহায়ক হয়েছিলো, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সেকালে ইসলামের কিছু প্রচারক হয়তো ভেবেছিলেন অস্ত্রের বলে সারা পৃথিবীতে এই ধর্মের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে পারা যাবে। কিন্তু এই অসহিষ্ণু বলপ্রয়োগের মৌলবাদী ক্রমপর্যায়টি বিশ্বের অন্য সব সভ্যতাই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে প্রথম থেকে। যদিও খ্রিস্টিয় উপনিবেশবাদীরা এসিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বহুদেশে একই রকম লুঠতরাজ, হত্যালীলা করে এসেছে বহুবার, কিন্তু সেটা সরাসরি লুটেরার লোভের প্রকাশ। ধর্মবিশ্বাসকে প্রত্যক্ষ অপহ্নবের কারণ বলে তুলে ধরা হয়নি। ধর্মবিশ্বাসকে শিখন্ডী করে যে হনন-ঐতিহ্যকে গরিমান্বিত করা হয়েছিলো তার সব চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি হলো, আজ ইসলামের যাবতীয় গরিমাময় ঐতিহ্যকেও বাকি পৃথিবী বৃহত্তর মৌলবাদের অংশ হিসেবে ত্যজ্য করতে চায়। এই মূঢ় সাধারণীকরণটি শুধু যে বিপজ্জনক তাই নয়, সমগ্র মানবসভ্যতার জন্য তার ফল সর্বনাশা হতে পারে।
    -----------------------------
  • শিবাংশু | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৪:০৮86858
  • একটু বিপন্ন বোধ করছি। বিষয়টি আমার কাছে অতি সিরিয়স। বস্তুতঃ আমার দাঁড়াবার জায়গা বলাই ভালো। অনুমানভিত্তিক সাজানো কথা লিখবার ধৃষ্টতা একেবারে করতে পারবো না। গোটা পনেরো বই এই মূহুর্তে ডেস্কে নামিয়েছি। আরো নামাতে হবে এবং 'পড়তে' হবে। কে না জানে পড়তে গেলে সময় লাগে।

    সময়, আমার সময়....
  • 0 | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৫:২৮86859
  • থ্যাংক্‌স্‌ শিবাংশুদা। সরি, একটু দেরী হলো। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর যেমন পেলাম, তেমনি সেগুলো পড়তে পড়তে আরো কিছু প্রশ্ন মনে এসে গেল।

    মধ্যযুগের খুব অল্প কয়েকজন আরব মনীষীর নাম জানি যাদের কথা সেই স্কুলপাঠ্যে পড়েছিলাম।
    আলগরিৎমি - যার বই 'আল জাবর'এর জন্যে তাকে 'ফাদার অফ্‌ অ্যালজেব্রা' বলা হয়। দশমিক পদ্ধতি ইউরোপে প্রচলিত করেন। অ্যালগরিদ্‌ম্‌ শব্দটাও ওনার নাম থেকে। তারপর আলফার্গোনাস্‌ এবং আলবুটেনাস্‌ দুই অ্যাস্ট্রনমিস্ট্‌ গণিতজ্ঞ - যাদের নামে চাঁদের দুটো গহ্বর আছে। তারপর দার্শনিক আলফার্বিয়াস্‌ - যাকে 'সেকেন্ড্‌ মাস্টার আফ্‌টার অ্যারিস্টটল' বলা হয়। তারপর দার্শনিক আবেরোস্‌ - যাকে 'ফাদার অফ্‌ ওয়েস্টার্ন সেকুলার থট্‌স্‌' বলা হয়। উনি বিখ্যাত স্টোন্‌ প্যারাডক্সের স্রষ্টা। এছাড়া ভারতে আসা আলবিরুণী, ইবন বতুতা, মন্ত্রী আবুল ফজল। আর তো কারুর নাম সেভাবে জানিনা :-(

    কিন্তু যে প্রশ্নটা আসছে, সেটা হলো যে, এদের মধ্যে অনেকেই বইয়ে লিখে গেছেন যে তাদের জ্ঞান-তথ্যের সোর্স ছিল ভারত। আলগরিৎমি তার বইয়ে দশমিক আর বীজগণিতের তথ্যের সোর্স্‌ হিসেবে এদেশের কথা লিখেছেন। এছাড়া আবেরোস্‌ এবং আলফার্বিয়াস্‌ দুই দার্শনিক গ্রীসের প্লেটো-অ্যারিস্টটলের কথা লিখে গেছেন। তাহলে ত্রাদের লেখাগুলো মৌলিক হলো না তো। তাই না?
    অবশ্য পশ্চিম-রোমের ধ্বংসের পরে জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
  • সিকি | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৬:০৮86860
  • মানে, কী বলব, খুবই চমৎকার মনোজ্ঞ আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই টইটাকে শুধু কার্ফিউড নাইট সংক্রান্ত আলোচনার জন্য রেখে দিয়ে এই মূল্যবান অপর আলোচনাটি অন্য একটা টইতে চালিয়ে গেলে খুবই ভালো হত। পরে খুঁজে পেতেও অসুবিধে হত না।
  • শিবাংশু | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৬:১২86861
  • 'o'

    আবুল ফজল আরবি ন'ন। পুরো ভারতীয়। রাজস্থানের নগৌরের লোক।

    আরবী বিজ্ঞানসাধক খুঁজতে গেলে বাঁশবনে ডোম কানা হয়ে যাবে। এতো আছেন। তবে তাঁদের এই সাধনা ততোটা 'মৌলিক' নয়, যতোটা সামন্বয়িক। বীজগণিত বা শূন্যের আদি ধারণা ভারতীয়। আরবীরা তাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তেমনি ট্রিগনোমেট্রি। গ্রিকরা শুরু করেছিলো, আরবে সমৃদ্ধ হয়েছিলো। অ্যালকেমি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও গবেষণাগুলি আরবে ঠিক উদ্ভূত হয়নি, পরিণত হয়েছিলো। তাতে অবশ্য তাঁদের কৃতিত্ব কিছু কম হয়ে যায়না।

    সে কথাটাই আমি বলতে চেয়েছি। কোনও একদিন ইসলামি সভ্যতা পৃথিবীর সমস্ত শ্রেষ্ঠ মননকে দু'হাতে গ্রহণ করে, তাকে আরো সমৃদ্ধ করে দশ হাতে বহুজন হিতায় বিলিয়ে দিয়েছিলো। সেই উদার, ব্যাপক ইসলামি গরিমা আজ কেন খুঁজে পাইনা?

    তবে সব চেয়ে বড়ো যে দুটি নাম আপনার ছেড়ে গিয়েছে তাঁরা হলেন, আল-ঘজালি এবং ইবন সেনা (অভিসিনা)। আল-ঘজালি'কে পয়গম্বর মহম্মদের পর সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ইসলামি অধিনায়ক বলে মনে করা হয়। যদিও জন্মসূত্রে তিনি ইরানি, কিন্তু সাধনা ছিলো আরবে। তিনি একাধারে ছিলেন শুদ্ধতাবাদী মুসলমান, আবার একই সঙ্গে সুফি পরম্পরার একজন আদি পুরুষ। সেলজুক সুলতান গিয়াসুদ্দিন মহম্মদের থেকে পাওয়া মদিনায় গিয়ে সাধনা করার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । কারণ তিনি বুঝেছিলেন ঐ রণদুর্মদ ইসলামি আবহে তাঁর প্রচারিত ইসলামি প্রেমধর্মের কোনও স্থান নেই।
  • শিবাংশু | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৬:১৪86862
  • সিকি,

    ঠিকই বলেছো। এতে আর লিখবো না। :-)
  • a x | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৭:০১86863
  • এখানে না হলে, অন্য কোনোখানে চলুক এটা। থেমে না যায়। পড়ছি।
  • sswarnendu | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৭:২৬86864
  • একদম, কোনভাবে কোনভাবেই থেমে না যায়... নতুন জায়গায় প্রশ্ন লিখব
  • ranjan roy | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৭:৩৪86865
  • যতদূর মনে পড়ছে আমাদের প্রিয় একজন বাঙালী সেকুলার মুসলিম সৈয়দ মুজতবা আলী আল -গজ্জালির দর্শনের উপরই ডক্টরেট থিসিস লিখেছিলেন।
    আমি a র বক্তব্যের সঙ্গে ও দময়ন্তীর সঙ্গে একমত।
    শিবাংশুর চমৎকার লেখায় বিশ্বাসের জায়গা পাচ্ছি, এখনই সব নষ্ট হয়ে যায় নি!
  • de | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৯:০৪86856
  • এব্যাপারে আপনি একটা বিশদ লেখা লিখুন শিবাংশুদা - অনেক কিছু জানার আছে আপনার থেকে -
  • a | unkwn.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৯:২৫86857
  • শিবাংশুর লেখা যথাযথ হচ্ছে। আরো লিখুন। খৃশ্চানিটি, ইসলাম, হিন্দুইজম প্রত্যেক ধর্মের হিংসার ইতিহাস ঘৃণার ইতিহাস আছে। আবার তিনটি ধর্মেরই অনেক সাংস্কৃতিক অবদান আছে। এই ইতিহাস তুলে আনুন। এই টই বা রিভিউ যিনি শুরু করেছেন তাদের মতো একচোখো লোকেদের এই লেখাগুলো পড়া দরকার। একদিকে যেমন হিন্দু ধর্মের লজ্জাজনক দিকগুলো তুলে ধরলে বিজেপিওলারা লাফায় আরেকদিকে এরকম কয়েকজন আছে যারা ইসলামি মৌলবাদ আর বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার প্রতিবাদ করলে ইসলামোফোবিয়ার গন্ধ খুঁজে পায়। আইসিস নাকি ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এরকম সুযোগসন্ধানি কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়। আসলে এরা আর বিজেপি একে অপরের পরিপূরক। এদের ঘৃণার ব্যবসা বন্ধ করার জন্য শিবাংশুর বিস্তারিত লেখা জরুরি।
  • | ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৩৫542724
  • এইটা তুলে রাখি। 
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২২:৪২731398
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২২:৫৬731399
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০১731400
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০১731401
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০১731402
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০২731403
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০২731404
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০২731405
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০৫731406
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০৬731407
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০৬731408
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০৬731409
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০৬731410
  • 1 | 85.192.***.*** | ১৬ মে ২০২৫ ২৩:০৬731411
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন