এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • বিভ্রম – আমি যেমন ভাবি

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১৪৭৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  •  আমি একসাথে অনেক বই পড়তে ভালবাসি । অনেক মানে ধরুন চার পাঁচ কিংবা ছয়টা! এখন যে বইগুলো পড়ছি সেইগুলো হল
    ১) পারস্যুট অফ অব্লিভিয়ন - আ সোশ্যাল হিস্ট্রি অফ ড্রাগস্
    ২) জেম ইন দা লোটাস - সিডিং অফ ইন্ডিয়ান সিভিলাইসেশন
    ৩) ওয়েইং দা সোল - এভোল্যুশন অফ সায়েন্টিফিক বিলিফস্
    ৪) পর্ণোগ্রাফি - প্রোডাকশন্ এ্যান্ড কনসাম্পশন অফ ইনইকুয়েলিটি


    অনেক বই একসাথে পড়ার মূল সুবিধা হল - অনেক বই একসাথে পড়া যায়। আর প্রধান অসুবিধা খুব মন দিয়ে পড়তে হয় - তা না হলে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা। উপরের বইয়ের নামগুলি দেবার একটা কারণ আছে যেটা পরে বলব, কিন্তু আদতে যেটা চাইছি সেটা হল একটা বিভ্রান্তিমূলক বা সূচক পরিবেশের সৃষ্টি করতে। এটা সহজ কাজ নয়, আমি শত চেষ্টাতেও আপাতত পারছিনা কারণ যেদিন পারব সেদিন আমি বিখ্যাত লেখক হবার প্রথম সোপানে পা দিয়ে ফেলববিখ্যাত লেখক বা কবি হবার প্রাথমিক শর্তই হল বিভ্রান্তি তৈরী করার ক্ষমতা অর্জন করা। এখন প্রশ্ন হল বিখ্যাত কি জিনিস এবং কারাই বা লেখক আর কারাই বা কবি। হুমায়ুন আহমেদকে নাকি একবার একুশে বই মেলায় একজন ধরেছিল এবং নাছোড়বান্দা হয়ে স্বীকার করিয়েছিল, তিনি কবিতা লাইনে দাগ না কাটতে পেরে গদ্য লাইনে শিফট করে গ্যাছেন! বেশীর ভাগ কবিই নাকি এই লাইন শিফটের ফসল। খুবই সত্যি কথা, শুধু তাই নয় – বড় বড় (বিখ্যাত) গদ্য সাহিত্যিকও এই শিফটের ফসল বলেই আমার মনে হয়। তবে অনেকে আছেন শিফট না করেও কোনদিকেই দাগ কাটতে পারেননা এবং vice versa
    আমরা বাঙালীরা আরো অনেক কারণ ছাড়াও যে কারণে পিছিয়ে আছি সেটা হল আমাদের পূর্ব পুরুষেরা সহজ ভাবে কোন পদ্ধতি লিখে যেতে পারেন না – অযথা জিনিস জটিল করে ফেলেনতা সে প্রেম নিবেদন বা সত্যনারায়ন পূজা যাই হোক না কেন। আমেরিকায় দেখুন – আপনি সব জিনিসের সরল পদ্ধতি পাবেনHow to get rich in seven steps, How to repair a motor cycle in 15 minutes, Seven good habits to be successful, Writing made easy এই সব। আমাদের এমন কিছুই নেই – আমাদের একটা বাঙালী বাচ্ছা ছেলে যদি কবিতা লিখতে চায়, ভাবতে পারেন, তার কাছে কোন গাইড লাইন নেই! সাধারণত উপরে উল্লিখিত আমেরিকান সাকসেস বইগুলি লেখা হয়ে থাকে সেই বিষয়ে অসফল লোকেদের দ্বারা। বাঙালীদের মধ্যে কোন ব্যবস্থা নেই, আর মনে হয় না এই নিয়ে কেউ ভাবছেওযেমন লেখা লাইনের অনেকেই জানেন যে বিভ্রম তৈরী না করতে পারলে মাল মার্কেট খাবে না – কিন্তু কেমন ভাবে বিভ্রম তৈরী করতে হয় তার কোন গাইড পাবেন? গোটা কলেজ স্ট্রীটে হেদিয়ে মরলেও নয়।      
    তো কি ভাবে বিভ্রান্তি তৈরী করা যায়?
    যদি আমাদের রবি ঠাকুরের কথা ধরেন তা হলে প্রথম বিভ্রান্তিই হল এর কবিতা করার কি দরকার? বাপের যা আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খা, বাঈজী নাচা তা নয় সখীদের মত কবিতা লেখা! তৎকালীন পাবলিক বিভ্রান্ত, মালটাকে একটু নজরে রাখো। কাকে বিয়ে করে আনলি? বিভ্রান্তির পারা চড়ছে। বৌদি মারা গেল, এবার জনতা চরমভাবেই বিভ্রান্ত। রবি সুপুরুষ এটা নজরে এলোওর লেখা গান গাওয়া শুরু হল যাইহোক এইভাবে লিখেই চলা যায়। মূল বক্তব্য হল জনপ্রিয়তা ততই বাড়ছিল যত ছড়াচ্ছিল বিভ্রান্তি। রবি ঠাকুরের কবিতায় বিশেষ বিভ্রান্তি আছে কি? সুধীজনেরা ভালো বলতে পারবেন, তবে আমার মনে হয় নেই। ডাইরেক্ট দিলে আঘাত করে। এর দু একটা ব্যত্যয় আছে, যেমন হল প্রশ্ন কবিতাটি। এখনকার ফিরিঙ্গি ইস্কুলে পড়া ট্যাসপোলাপানের কথা বলতে পারব না, তবে আমাদের আমলে তালতলা, বকুলতলা, আদি, সবুজ ও নেতাজী সংঘ এবং রকেট ও স্টার ক্লাব পরিচালিত সাহিত্য প্রতিযোগিতার আবৃত্তি বিভাগে অনুর্দ্ধ ১৪ বিভাগে প্রশ্ন কবিতাটি মাস্ট ছিল। ছেলে আবৃত্তি করছে, ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে, এই দয়াহীন সংসারেদয়াহীন সংসারে আমাদের প্রবল বিশ্বাস থাকলেও ভগবান ও দূতে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত। কোথায় দূত? তাহলে কেন আবৃত্তি করতে হচ্ছে? তারা আসছে না কেন? আমরা সবাই বিভ্রান্ত। প্রশ্ন কবিতাটিও জবরদস্ত হিট্ ছিল।   
    তো যাই হোক রবিঠাকুরের মূল বিভ্রান্তিমূলক লেখা ওই ছোট গল্প, উপন্যাস বিশেষ করে প্রবন্ধেই আবদ্ধ ছিল। আমরা ক্লাস ইলেভেনে শাস্তি গল্পের শেষ বাক্য নিয়ে বিশেষ রূপেই বিভ্রান্ত ছিলাম, চন্দরা বলিল মরণ। সেই বয়সে নানারূপ মরণ তখন ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে। আর তার ফাঁকে চন্দরার মরণ আমাদের রীতিমত কাহিল করে দিয়েছিল।
    রবিঠাকুরকে নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে পৌঁছল নোবেল প্রাপ্তির পর। অবশ্য এই নোবেল প্রাপ্তিই প্রথম প্রমাণ করে যে সাহেবদেরও বিভ্রান্ত করা যায়! আহা এ'তো ভালই দুকলম ইংরাজী জানে। কিন্তু লিখেছে কি? কাকে সমর্পণ? ছেলে না মেয়ে? হিন্দু ভগবান, নাকি আমাদের? এই নিয়ে ডিটেলড আলোচনা অনেক বাঘা বাঘা পন্ডিত করেছেন বা করে চলেছেনপাশ্চাত্যে রবীন্দ্র প্রভাব বা পাশ্চাত্যের আলোকে রবীন্দ্র সৃষ্টি কিন্তু আদতে সেই বাধা কাটাবারই চেষ্টা। কোন বস্তু নিয়ে দীর্ঘদিন নাড়াচাড়া করলে নাকি তার একটা প্রভাব মনুষ্য চরিত্রে পড়ে তো রবীন্দ্রনাথের উপরেও পড়বে তা আর আশ্চর্য্য কি? মানুষ বই তো নয়! যার ফলে শেষ বয়সে ছবি আঁকার শুরু। যাকে বলে বিভ্রান্তির রাজপ্রাসাদের ফিতা কাটা। বুড়ো করে কি? সেই সব প্রবল অবস্থার মাঝেই লোকহিত-এর মত প্রবন্ধ লেখা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বিভ্রান্তির স্বীকার হয়ে আমাদের ক্লাশ ইলেভেনের পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভূত করেছিল। একথা হলপ করেই বলা যায়, বিভ্রান্তি তৈরীর এমন উৎকৃষ্ট রচনা বাংলা সাহিত্যে তখনও পর্যন্ত বিরল ছিল।
    মানুষ যত বুদ্ধিমান হয় তাদের বিভ্রান্ত করা ততোধিক সহজ হয়ে পড়ে। বোকা মানুষেরা সহজে ধাঁধায় পড়েন না। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে ভারতবাসী চালাকির দ্বারা (বিশেষত বাঙালী) কার্য সিদ্ধ করার টেকনিকে অশেষ ভাবে সিদ্ধিলাভ করেছে। তার ফলশ্রুতি হিসাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রকরণ-ও নানাভাবে হাজির করতে হচ্ছে। পি.সি. সরকার মঞ্চে রুমাল, বেড়াল আমদানি করতেন এবং খুব বেশি হলে মানুষ বা হাতি হাপিস করতেনতাঁর ছেলেকে এখন তাজমহল আর ট্রেন গায়েব করতে হচ্ছে! জেট যুগ একেই বলে।
    আচ্ছা, এই ফুলটার কি নাম? রবিঠাকুর জানতে চাইলেন
    আজ্ঞে টগর
    সেকি, এত সুন্দর ফুলের এই নাম! আজ থেকে আমি এর নাম পাল্টে রাখলাম মহাশ্বেতা
    তেমনি আমিও এখন থেকে মাঝে মাঝে বিভ্রমকে ইলিউশন বলব। তাহলে পাঞ্চটা বাড়বে। তবে আগে ভাগেই বলে রাখি এই লেখায় আমি রবিবাবু বা অন্য কারো বিভ্রম তৈরীর ক্ষমতা নিয়ে আমি আলোচনা করতে বসিনি, সে যোগ্যতাও আমার নেই। তবে কিনা সাধারণ পাঠক একটু চোখ কান খোলা রাখলেই ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করবেন রবিঠাকুর এটা নিজেও জানতেন। তাই তাঁর কবিতা কতটা পৌঁছতে পারছে সেই সম্পর্কে আলটিমেট কথা খোদ নিজে বলে গ্যাছেন। বলেছেন যে.... কি বলেছেন এই মুহুর্তে ঠিক মনে পড়ছেনা। তবে খুব ভারী গোছের কিছু।  
    "আমার কবিতা জানি আমি ... হয় নাই তা সর্বত্রগামী"
    লেখক দুই প্রকার হয়ে থাকে। একপ্রকার লেখকেরা বিভ্রমমূলক লেখার থেকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে বিভ্রম তৈরী করতে ভালবাসেন (আফটার অল বিভ্রম তৈরী কি সোজা ব্যাপার !!) আর দ্বিতীয় প্রকার লেখকেরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে কলমে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ব্যক্তিগত জীবন এদের একদমই ম্যাদামারা। সকালে চা খেয়ে এরা বাজারে যান, আলু পটলের দর করেন, বিকেলে লুঙ্গি (বা ফেত্তা মারা ধুতি) পরে বাসি খবরের কাগজ পড়েন। রবিবাবু ছিলেন প্রথম প্রকার, আর দ্বিতীয় বিভাগের প্রাণপুরুষ জীবনানন্দ বললে কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে কি? ওই চর্যাপদের পরে বাংলা ভাষায় এমন হেঁয়ালী পূর্ণ কবিতা লেখার দুঃসাহস খোদ হুতোম পেঁচাও করেননি। এই সব বিভ্রান্তির উদাহরণ দিতে গেলে গোটা জীবনানন্দ সমগ্রই কোট করতে হয় (ইনক্লুডিং বাক্সবন্দী অপ্রকাশিত লেখাগুলোও) । স্বাধীনতার আগে জীবুদার তেমন জনপ্রিয়তা ছিলনা কারণ মানুষ বিভ্রান্ত হতে পছন্দ করত নাস্বাধীনতার পর চড়বড় জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল যার কারণ আগেই বর্ণিত হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় জীবনানন্দ হস্তি (যেমন কণ্ঠ থেকে কণ্ঠী) দেখা যেতে লাগল। এই ভদ্রলোকের জীবনে চমকপ্রদ কিছু ছিলনা। ভগবান নিজ হাতে এই মহান কবির সাথে বিভ্রম যোগ করার দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন একদম তাঁর শেষ জীবনে। নইলে এত কিছু থাকতে ট্রাম!! জনতার ইলিউশন চরমে চলে এল। একটা লাইন খুব মনে পড়ছে ...
    "... বাঁশের ঘোমটা মুখে বিধবার ছাঁদে ..."
    এইসব লাইনের ঠিক মত টাচ পেতে হলে কল্পনার বিস্তার যথাসম্ভব ঘটাতে হবে। তাইতো আমার মনে হয় তাঁর কবিতার আসল ব্যাখ্যা ১৯৬৯ সালে মানুষের চন্দ্র বিজয়ের পরেই মার্কেটে পাওয়া যেতে লাগল। বিভ্রম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল, কে কেমন ভাবে ব্যাখ্যার মধ্যে আরো ইলিউশন আমদানি করতে পারে। সেই একটা গল্পে আছে না, যে বীরবল বাদশা আকবরকে একটা সাদা ক্যানভাস দেখিয়ে বলেছিল যার জন্মের ঠিক আছে লেই কেবল এই অপূর্ব চিত্র প্রত্যক্ষ করতে পারবে।আকবর ঘাড় নেড়ে যেমন সুন্দর ছবির প্রশংসা করেছিলেন, আমার জীবনানন্দ কাব্য পাঠও তদ্রূপ চলতে লাগল। উপরিউক্ত কবিতার লাইনে সমাজতাত্ত্বিক প্রশ্ন হল বিধবা ঘোমটা দেয় কিনা? আমাদের এলাকায় মনে হয় দেয় তার মানে কবিতা ভ্যালিড। শব্দগুলো একটু অদলবদল করে নিতে হবে।
    "... বাঁশের ছাঁদে ঘোমটা মুখে বিধবার ..."
    এবার বোঝা যাচ্ছে?? হুঁ হুঁ বাবা সাধে কি আর বিদ্যাসাগর মশাই বিধবা বিবাহের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন! সে ওই বাঁশের ছাঁদে যাওয়া কমানোর জন্যই।
    তা যাই হোক আর মাত্র গুটিকতক লাইন আমি তুলে ধরব:
    "হাড় পাহাড়ের দিকে চেয়ে চেয়ে হিম হয়ে গেছে তার স্তন"
    "একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে"
    "ফুটে থাকে হিম সাদা রঙ তার আশ্বিনের আলোর মতন"
    কত রকম হিম? স্তন ঠান্ডা মেরে গেছে বোঝা গেল, কিন্তু হিম কমলালেবু জিনিষটা গড়পড়তা বাঙালীকে বুঝতে গোদরেজ ফ্যামিলির দূরদৃষ্টির উপর ভরসা করতে হয়েছিলতো এই ভাবেই এগোচ্ছিলহিম সাদা। এশিয়ান পেন্টস এর ক্যাটালগ স্বীকার করুক আর না করুক জীবুদার দ্বারা অনেকটাই অনুপ্রাণিত।
    "চলে গেছে পৃথিবীর সব চেয়ে শান্ত হিম সান্ত্বনার ঘরে ..."
    এইবার ঋণ স্বীকার করা উচিত তাবত সাংবাদিককুলের। ওদের এখনো নজর পড়েনি হিম সান্ত্বনাস্টেটবাস ফুটপাথে চারজন পিষে দিলে নেতারা যে সান্ত্বনা দেন তাকেই বলে হিম টাইপ। এখন এই লাইনে জনতা আর বিভ্রান্ত হবেনা কিন্তু আগে হয়েছিল। আর মাত্র দুটি লাইন তুলে আনব জীবনানন্দের বিভ্রান্তিকর মহাসাগর থেকে।
    "আকাশের নীলাভ নরম বুক ছেড়ে দিয়ে হিমের ভিতরে"
    "চোখ ক্লান্ত হয় তবু নখের ভিতরে হিম, নিরুত্তর দর্পনকে দেখে"
    নো কমেন্টস!
    আগেই বলেছি এইরূপ ইলিউশন তৈরীর ক্ষমতা সবার থাকেনা। প্রতি শতাব্দীতে এক বা দুই বা তিনজন এমন প্রতিভা নিয়ে আসেন। তাহলে বাকি খ্যাতির মরিচীকায় ধাওয়া করা লেখক/কবিরা কি করেন? তাঁরা যেটা করেন সেটা হল গ্রুপ তৈরী এবং আন্দোলন প্রচেষ্টা। সবে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ কল্লোল যুগের সূচনা এখান থেকেই। পাঠক বিভ্রান্তির তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে চলে এলো, এমনকি কবিদের নিজেদের বিভ্রান্তিও একে অপরের সাথে ইন্টারফিয়ারেন্স সৃষ্টি করল। প্রবল হৈ-চৈ। পণ্ডিত ব্যক্তিরা ডিটেলস-এ যাবেন। এ জাতীয় প্রচেষ্টা একবার পুরোদমে শুরু হয় আর একবারের মতন কৃত্তিবাস আমলে। বেচারী কৃত্তিবাস কবরে থাকলে হয়ত উঠে বসার কথা ভাবতেন! কত কষ্ট করে জটিলতা বর্জন করে সরল মহাভারত তর্জমা করলেন, আর তার নাম নিয়ে এই! কৃত্তিবাস কবিরা পূর্বে বর্ণিত পাঠক বিভ্রান্ত করার প্রথম পদ্ধতি অবলম্বন করলেন। মার্কেটে তখন ভালই কম্পিটিশন, পাবলিককে জানাতে হবে। সেমিনার দিতে হবে, সাক্ষাৎকারে অনবরত ফাটা রেকর্ডের মত গল্প বা ঘটনা কপচাতে হবে।  
    আমার গাঁয়ে অরুণদা মদ, গাঁজা খাদ্যদ্রব্যের মতন গ্রহণ করত, সাহিত্য সভা করত, শূয়ার নামক সিরিজে কবিতা লিখত। লাইফ যাকে বলে ঘটনার ঘনঘটা। কিন্তু প্রচার নেই, আর কেউ কেয়ার করতনা। গ্রামের মানুষ সহজে বিভ্রান্ত হয়না। তাই গ্রামে আধুনিক কবিতার কদরও নেই। মদ খেলে মাতাল হবি। ট্রেনিং পিরিওডে মাতাল হৈ-চৈ করবে। মাতাল ধর্মে মোক্ষ লাভের দিকে এগোলে থম মেরে থাকবি। জলবত্ তরলং। এই নিয়ে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে কারও নেই। মহুয়া মদ খেয়ে শালবনে মাতলামো করা যে কি করে খবরের বা আলোচনার বিষয় হতে পারে আমাদের মেমারী সংবাদ-এর সম্পাদক তখনো পর্যন্ত ঠাওর করতে পারে নি! কলকাতাবাসী সেই সরল সত্যটা বুঝলনা। খালাসীটোলা, চাইবাসা, ঝাড়গ্রাম, পুলিশের কালো ভ্যান শুনে ঘাবড়ে গেল। মিথ তৈরী হতে লাগল।  কিসের মিথ সেটা লাইনের লোক (কবিতার লাইন বোঝাতে চাইছি!) ছাড়া কেউ বুঝল না। ফলতঃ হল কি আঁতেল সমাজ এইরূপ সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে মদ ও কবিতার সাথে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক। হক কথা। মদ না খেয়ে তারপর থেকে কবিতা লেখা প্রায় বন্ধ হয় এলো। সঙ্গে মাতলামি ফাউ। একজন ফরাসী ভাষার পণ্ডিত ব্যক্তিকেও সেই সময় মিথের দলে টেনে ফেলার চেষ্টা চলতে থাকে। ভদ্রলোক মনে হয় ততটা পাত্তা দেননি কিংবা দিয়েছিলেন। আগে বন্ধু সার্কেলে মিথ ছিলেন এখন সমগ্র বাংলায় ছড়াচ্ছেন মৃত্যুর পর। বিভ্রম থেকে বিভ্রমতা। মাঝে মাঝে মনে হয় শিব্রামের কথা। লাইফে আপাত কোন বিভ্রম নেই। মেসে থাকব, খাব ভালোমন্দ, ঘুমাবো সিম্পল। পাবলিক ভুলে গেল। আবার যদি কেউ তাঁর লেখা থেকে বিভ্রম বের করতে পারে তবেই আবার ফিরেফিত্তি বিখ্যাত হবেন!
    জীবনানন্দ বিভ্রম রাজপ্রাসাদের ফিতে কাটলে সেখানে ফোয়ারার ব্যবস্থা করলেন বিনয়। মারা যাবার পর খুব কদিন হৈ-চৈ হল তাঁকে নিয়েআলাদা টাইপের স্পিসিস - নিজে বিভ্রম কবিতাও বিভ্রম তায় আবার গণিতজ্ঞ! আমার ভুট্টায় তেল কবিতার সাথে মহাকাশ, গ্যালাক্সি, অভিকর্ষ, অনুক্ষেপণ, উৎক্ষেপণ সব জুড়ে গেল পাতার পর পাতা ড্রাফট লেখায় ছেয়ে গেল। বস্ সব ঠিক আছে। সব পড়া শেষ করে মনে করি ওটা ডাইরেক্ট আমার ভুট্টায় তেল হলেই ভালো মানায়!
    "ভুট্টাটি সহজভাবে ঢুকে গেল সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কা শুরু করি।"
    পাবলিক বিভ্রান্ত। এটা আবার ফলাও করে লেখার কি আছে! পুরুষ তো নাকি? ইন্টেলেকচুয়াল ভুট্টা হলে অবশ্য আলাদা কথা।
    কার্ল মার্কস বলেছিলেন যে আমরা যাকে ইতিহাস বলি তা প্রায়শই বিজয়ীদের বলা গল্পকথা মাত্র। তাহলে বাকিদের কি হবে? কবিতার ব্যাপারটিও তাই। কবিতার ইতিহাসও দেখছি হৈ-চৈ এর ইতিহাস। যারা বিভ্রান্ত হচ্ছে তাদেরই গল্প। বাকিরা? কোথায় পড়েছিলাম একটা প্রবাদ বাক্য
    "Use new drugs quickly, while they still work"
    আমাদের কবিতাও তেমন। গরম গরম পড়তে হবে তাহলে বিভ্রম কি চিরস্থায়ী? Charles Dickens কি বলে গেছেন, A tale of two cities-এ

    "It was the best of times, it was the worst of times, it was the age of wisdom, it was the age of foolishness, it was the epoch of belief it was the epoch of incredulity, it was the season of light, it was the season of darkness....."
    যাকে বলে একেবারে বিভ্রান্তিকর অবস্থা।
    এইরূপ অবস্থার মাঝে আমার এক ভ্রাতৃপ্রতিম চীপ্ ডিজাইনারের কাছ থেকে বার্তা পেলাম--- সুকান্তদা, তুমি কি লেখো মাইরি, টাইটেল না দেখলে ভাবতাম সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা!

    দুর্ভাগ্য কোন সুকান্তর বুঝতে পারলাম না! বেচারী সুকান্তর অবস্থা কৃত্তিবাসের মতই হত
    যে কবিতা প্রসঙ্গে ভাই আমার সেই বার্তা দিয়েছিল সেটা হল
    "........সোনালী পেশী আর সরু কোমরের দল
    একটি ঘন্টায় দুটি ল্যাম্প পোস্ট পেরিয়ে
    রাত দশটা তিরিশে প্রজাপতি হয়ে যায় প্রতিদিন
    মঙ্গলবারে যাই রেস্তোঁরায়
    আমি ডন কি হোতে ......."
    সে যে এই কবিতার অর্থ অনুধাবন করতে পারে নি তাতে আর আশ্চর্য্য কি, আমি নিজেই পড়তে গিয়ে বুঝতে পারি নি! আমি অনেকদিন আগে একটা কবিতা লেখেছিলাম আলু চাষ নিয়ে। সুধীজন কবিতাটিকে নাকচ করে দিয়েছিল। ওটা সবাই সরাসরি আলুই ধরে নিয়েছিল আমি চাষার ছেলে হবার জন্য বিনয়ের ভুট্টার সাথে অন্য কিছুর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেলেও আমার আলু কারও চোখে পড়ল না। কারণটা আর কিছুই নয়, আমার এখনও বিভ্রান্তি তৈরীর ক্ষমতা হয়নি বলেই। আমি সিওর, এই বিষয়ে দক্ষতা লাভ করলে ওই আলু থেকেই অন্য আলু বের হবে। অথচ কবিতাটিতে আমি কি দিইনি! একটি সাম্যতাত্বিক সূত্র - আলুচাষের সাথে বইমেলার সম্পর্ক।
    যা দেখলাম এই লাইনেও প্রচুর কম্পিটিশন। রবিঠাকুর জয়বাবুর মডেলে বড়, মেজ, সেজ, ছোট কবিতে দেশ ছেয়ে গেছে। লাইন শিফট করতে হবে জমি মানে ইলিউশনের জমি। উঠে পড়ে লাগলাম। একটা রেস্তোঁরা থেকে খেয়ে ফিরে কবিতা লিখে ফেললাম:
    "গাঢ় জলে ডুব বাদামী এলাচ
    আহা, তুলোনা সখী হাত
    বিস্ফোরক ভেজা কাঠে
    ঝুলুক উইলিয়াম টেল ক্রস--বো
    সুন্দরী খাঁজে ... "
    বোঝো এবার! পাঞ্চ দিতে হবেএটা পড়ে কিছু পাঠক নড়ে চড়ে বসল। আমিও একটু মার্কেট সার্ভেতে বেরুলাম। তারপর হতবাক এই লাইনে যাকে বলে তুমুল প্রতিযোগিতা। বিভ্রান্তির উপর বিভ্রান্তি ...
    "১ নম্বর পাগল বলল আমি কান ধরে নিয়ে যাব আমাকে
    ২ নম্বর পাগল অসম্মতি জানাল। ২ নম্বর পাগলা
    ডান পায়ের জুতো দিয়ে বাঁ পায়ের জুতোকে পেটাল
    তারপর দুজন আরো ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল" [দুজন-- সুশীল ভৌমিক]
    এখন ব্যাপারটা হল পাগল কে? কবি না পাঠক? আচ্ছা আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন কি? কবিদের সাথে ক্যাথলিক চার্চের কেমন অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক? বিশেষ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কবিদের সাথে? ঈশ্বর কিভাবে দেখব? পাগল নাকি? আচ্ছা তাহলে কি করে বুঝব ঈশ্বর আছে? ওহে অবোধ সাধারণ জনতা, এ সব হল অনুভবের ব্যাপার, বিশ্বাসের ব্যাপার। ঢাল তৈরী হতে লাগল। আসলে আমার মনে হয় পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহ খুবই লজিক্যাল, লজিক দিয়ে মোটামুটি একটা আপোষে আসা যায়। কিন্তু কিছু বিভ্রম সৃষ্টিকারী কবিদের লেখায় লজিক পাওয়া গেলনা! তখনই ঢাল সৃষ্টি হল কোন কবিকে তার কবিতা ব্যাখ্যা করতে বলার মত অপমানকর আর কিছু হয়না লে ঠ্যালা! বন্ধুগণ এর সাথে কি আপনারা ক্যাথলিক চার্চের কিংবা বাংলার অগ্নিকন্যার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না? সব আছে স্রেফ লজিকটা ছাড়া। বিজ্ঞানী এটা সেটা মেশাল ওটা তৈরী হল। কি করে হল? বেচারী প্রশ্নবাণে জরজর -তাড়া তাড়া আঁক কষতে লাগল - এ সব আকসেপ্টেড। তবে কবিকে প্রশ্ন করা যাবে না। কেন বাওয়া? কবি কি আঁতেল না জলপুলিশ? রবিদা এইসব কন্ট্রোভার্সি এড়াবার জন্য কবেই বলে দিয়েছিলেন বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু, তর্কে বহুদূর !
    রবিদার প্রচুর কাজ ছিল কিন্তু এখনকার কবিদের বেশীর ভাগেরই নেই (এক বিভ্রম তৈরী ছাড়া) । এখন অবশ্য কবিরা সিনেমা ও ডকুমেণ্টারী তৈরীতে মেতেছে। সেই ডকুমেন্টারী বা ছোট সিনেমা আগে থেকে বানানো হতে শুরু করলে আমার মনে হয় সত্যজিত সিকিম, পিকু বা রবীন্দ্রনাথ যে ভুল গুলি করেছিলেন সেইগুলি শুধরে নেবার সুযোগ পেতেন বা পিসগুলো বানানোর দরকারই মনে করতেন না! 
    তাই রবিদার বিশ্বাস বিষয়ক উক্তির প্রথম পার্টটা মেনে নিলেও দ্বিতীয়টা মানতে পারলাম না। তাহলে টাইম পাস হবে কি ভাবে? ফলত কফি হাউস ছেয়ে গেল এবং কানপাতা দায় হল। ক্যাথলিক চার্চ ছাড়াও বিভ্রান্ত কবিদের সাথে বাউল সম্প্রদায়েরও মিল দেখা গেল। না আমি ভাষাগত দিক থেকে মিলের কথা বলছি না বাউলেরা যে ভাষায় গান লেখেন সেই গানের অর্থ বোঝা যায় বাউল সাধনার মাধ্যমে। আর বিভ্রম সৃষ্টিকারী কবিতার সাধনা করলে ব্যাপারটা আরো ধোঁয়াটে করে তোলা যায়। তবে মিলটা হল উভয় সাধনাই গুরুমুখী বিদ্যা। আজকালকার কবিতায় গুরু না ধরলে সিদ্ধি লাভের সম্ভাবনা খুবই কম। দুলু খ্যাপা, নিতাই ও নবীন বাউল সহ ইদানিংকার কমার্শিয়াল বাউলদের মত কবি আখড়া গড়ে উঠল। মডেল কবি-গুরুতে বাজার ছেয়ে গেল। বাংলা সাহিত্যে ও প্রকাশনার মরা গাঙে বান এলো। কবির থেকে পত্রিকা সম্পাদকের সংখ্যা বেশি হওয়ার সাথে সাথে দুলালের তালমিছরির মত আসল মাল নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হল। নতুন কবিতা, পরীক্ষা কবিতা, নতুনদের নতুন কবিতা এবং পোষ্ট পোষ্ট মডার্ন কবিতায় আমাদের সোনার তরী ভরে উঠল। শেষোক্ত জিনিসটি নিয়ে আলোচনায় একটু পরে আসছি। কবিদের দ্বিতীয় ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হতে লাগল যে জিনিসটি তার নাম পড়াশুনা বা দোহাইও বলতে পারেন। আরও পড়তে হবে। তাতেও বুঝতে পারলাম না! আরও পড়তে হবে। কত এবং কি পড়তে হবে সেই সম্পর্কে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। গোটা দুই স্প্যানীশ, ফরাসী এবং চিলির কবি সহ খানকতক গে এবং বোহেমিয়নে কবির নাম মুখস্ত করা জরুরী হয়ে পড়ল। এঁরা নাকি আদর্শ! কাদের? ডিট্রয়েটে গাঁজাখোর যুবক, নিউইয়র্কের ফুটপাথবাসী ড্রাগ আডিক্ট, টেক্সাস ও বুরুগ্যান্ডির সীমানা ছেড়ে না বেরুন জনতার। ভাই, তুমি ভারতের নাম শুনেছ? শোননি! কোই বাত নেহি আমরা তোমাদের ফলো করছি। চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান! ভয়ে কেউ বলতেই পারছে না - কিছু বুঝতে পারলাম না কবিতাখানি পড়ে! কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে! আমরা বিশ্বাস করি কবিতার কোনো অর্থ থাকবে না। কবিতা হবে রাজনৈতিক বুলির মত বিভ্রম -সরল ভাষায় লেখা কিন্তু ঠিক ধরা যাবে না।
    তো যা বলছিলাম আগে শক্তি মদের সাথে কবিতার সরলীকরণ করে দিয়ে গেলে বিনয় কবিতা ও মানসিক রোগের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটালেন। এই মডেলে কবিদের একটু অগোছাল এবং ব্যাখ্যাহীন জীবনযাপন করতে হয়।
    "যদি এ ভারতবর্ষে সর্বদা পর্যাপ্ত পরিমাণ
    খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় তবে আর কোনো সমস্যা থাকে না"
    [যেদিন ভারতবর্ষে---বিনয়]
    এটা কবিতা না বিডিও রিপোর্ট সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে বলতে চাইছি উপরের জিনিসটি উপলব্ধি করার জন্য কি পরিমান পান্ডিত্য লাগে বুঝতে পারছেন! কবিতায় সায়েন্স ঢুকে পড়ল। একেবারে গভীর অন্তর্দৃষ্টি!
    "আর পৃথিবী যেদিন দেখে চাঁদটির অমাবস্যা সেই দিন চাঁদ
    পৃথিবীকে পুরোপুরি বৃত্তাকার আলোকিত দেখে"
    [পৃথিবী চাঁদকে দেখে
    বিনয়]
    গ্যালিলিও গর্বিত হতেন ! হতেন না কি? এখানে বিনয়ের কবিতায় সহজ শব্দের ব্যবহার দ্যাখোনি? কে বলে সহজ ভাষায় বিভ্রম তৈরী করা যায় না? বিনয় আমাদের বিভ্রম তৈরীর পূর্ব শর্ত দুটিই পালন করেছেন কলম এবং জীবনযাপন দিয়ে।
    "আমার বাড়ীর থেকে বাইরে বেড়িয়ে দেখি অগণিত যুবতী চলেছে"
    পাঠকগণ, একবার বুকে হাত দিয়ে ভাবুন এটা আপনি লিখলেন আর কবিতা হয়ে গেল! যুবতী না চলে বুকে হেঁটে বা উড়ে গেলে আশ্চর্য হতাম, কিন্তু যেহেতু কবিতা, তাই এর ভিতরে ঢুকতে হবে। যুবতী কোথায় চলেছে? অবিবাহিত নাকি? নানা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন আর কি। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চরম পংতিমালা :
    "শিবপুর থেকে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে
    এখন গণিতচর্চা এবং সাহিত্যচর্চা করি।
    আমার ছেলের নাম কেলো, বউ রাধা"
    পাঠক গলে গেল। ছেলের নাম কেলো! আহা যেন ইঞ্জিনিয়ারদের ছেলের নাম কেলো হতে পারে না? তবে এটা কেমন কথা? প্রথম দুলাইন সত্যি আর তারপরের লাইনটি গ্যাস! এটা কি ঠিক হল বস্!
    তবে ভাগ্য সাহসীদেরই সহায় হয়। কথাটা একবার প্রমাণ হয়ে গেল। ঘটনাচক্রে আজকাল বিভ্রম সৃষ্টিকারী কবিরা পুঁথিগত কেতাবী ডিগ্রিতে ওই মেমবালিকাদের থেকে একটু বেশি ভারীই। ফলে হল কি পড়াশুনা করতে হবে এই ঢালটার সফল ব্যবহার হতে লাগল। পড়লেই হল থার্মোডায়নামিক্স বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স - বিনয়ের সাথে খাপে খাপ মিলে গেল ইঞ্জিনিয়ার কবির। জয় আবার এলোমেলো। বার্গার আর চীপসের সাথে কোক ফ্রী! আমার প্রথম দুটো লক্ষণ বিনয়ের সাথে মিলে যাচ্ছে (যদিও আমি ধাতুবিদ্যার লোক, মেকানিক্যাল নয়!) এখন একটু এলোমেলো হবার চেষ্টায় আছি। আমি লিখে দিলামঃ
    প্রগাঢ় সন্ধ্যায় মেশে সম্ভাবনা, কিছু সূত্রলেখা
    ধ্রুবক নিয়ন্ত্রিত তাদেরই আকর্ষণ - সরে যাওয়া
    আমার সকল মস্তিষ্ক কোষের রাশিবিজ্ঞানে, বিলাসিতা, অবগাহনে
    তারই আগমন ক্রমশঃ একক হয়ে আসে
    - স্মৃতি অথচ বিষ্মৃতির দোদুল্য ভারসাম্যহীনতার ?”
    [নাম যখন প্রকারণ মাত্র]
    কেমন দিলাম? রাশিবিজ্ঞান দিয়েছি, ধ্রুবক দিয়েছি পরের লাইনগুলোতে নিউরোণ টাইপেরও কিছু দিয়েছিলাম। কিছু বোঝা গেল? বুঝতে পারলে একটু যোগাযোগ করবেন প্লীজ - আশায় আছি খুব শিগগিরি মার্কেট পাব।
    আজকাল আমার মত অনেকেই মানে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার লাইনের লোকেরা এই বিভ্রম সৃষ্টির মাধ্যমে গোল দেবার চেষ্টায় আছি। অবশ্য এক ডাক্তারনী কিছুদিন আগে সফল ভাবে বিভ্রম সৃষ্টি করেছিলেন কবিতা লিখে এবং তাতে ইন্দ্রকাকুকে ভালোবাসা জ্ঞাপন করে। এই সাবজেক্ট এখন পাবলিক খুব খাচ্ছে তায় আবার এই মাইয়া ছাদে উঠে ভালোবাসা জ্ঞাপন করেছিল। ফলত ইনি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
    পূর্বের প্রতিশ্রুতি মত আমি আর একটি বিষয়ে নাড়াঘাটা করতে চাই যেটা হল পোষ্ট মডার্ন কবিতা। পোষ্ট মডার্ন আমার কাছে আল কায়দার হেডকোয়ার্টারের অবস্থানের মতই ধোঁয়াটে! গত ৭০ বছর ধরে না কি আমরা পোষ্ট মডার্ন আর আমার গাঁয়ে বিজলী এল ১৯৯২ সালে। একটা সরল জিনিস আলোচকেরা এড়িয়ে গ্যাছেন সেটা হল আমরা ততখানিই পোষ্ট মডার্ন যতখানি শাক-বাঁধাকপি খেয়ে বেঙ্কটেশ প্রসাদের বোলিং! আরে, আমাদের আধুনিক কবি সাকুল্যে দুইজন আর উত্তর আধুনিক কবি গুনতে ক্যালকুলেটর লাগছে! আধুনিকতা ছিল ইন্টারনাল ইউনিফায়ার আর অধুনান্তিক এক্সটারনাল ইউনিফায়ার! ভাই, এটা আমার কথা নয় বিদ্বান গুণীজনের লেখা। আমার মতে ওটা ইউনিফায়ার না হয়ে এফেয়ার হলেই মানাত তাহলে ইন্দ্রকাকুকে নিয়ে কবিতা কেন পোষ্টমডার্ন সেটা সহজেই বোঝা যেত। আবার বলে হচ্ছে মডার্নিজম বেশীর ভাগ শব্দ সংগ্রহ করেছে দর্শন থেকে, অধুনান্তিক যোগাড় করেছে বিজ্ঞান থেকে। পাবলিক বিভ্রান্ত হলে কি হবে, এটা কিন্তু হক কথার এক কথা যার মূলে আছে এতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের কবি হবার ব্যাখ্যা।
    "কানধার পাছে দাঁড়িয়ে বিড়াল, সাতে লাই, পাঁচে লাই কেবল
    জম্পেশ একটা কোয়ান্টামলাফ দিবে বলে টানটান, শরীরের অগ্রভাগ"
    [প্যাটার্ন --- বিশ্বজিত সেন]
    এই যে কেমন কোয়ান্টাম চলে এলো সায়েন্স থেকে, সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা এবং অর্ধতৎসম শব্দ শিক্ষা ফাউ!
    একটি পুস্তকে পোষ্টমডার্ন কবিতা চেনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে পড়ছিলাম। সে এক বিশাল লিষ্ট! গায়ে হলুদের ফর্দ থেকেও বড়। চারলাইনের কবিতার জন্য চৌষট্টি লাইনের লক্ষণ মেলানো। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ টাইপ - জ্বরের ঔষধ আনতে গেলে জানতে চাওয়া হয়েছিল ক্লাশ সেভেনে ফেল করেছিলাম কি না! বলাই বাহুল্য সেই সব বেশির ভাগ লক্ষণই মানুষকে বিভ্রান্তির এক স্বর্গ থেকে আরেক স্বর্গে পৌঁছায়।
    central theme থাকবে না - open ended , লজিক্যাল ক্র্যাক বা যুক্তি ফাটল ইত্যাদি ইত্যাদি। পাঠক সাথীরা লক্ষ্য করুন এ সব কিন্তু আদপেই বিভ্রান্তি তৈরীর প্রাণান্তকর চেষ্টা!
    আগে কবি বললেন সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি এই লাইনটি বিভ্রম সৃষ্টিকারী কবিদের প্রতি গালাগাল স্বরূপ ব্যবহৃত হয়। তো এই কবিরা নতুন ডেফিনেশন তৈরীর চেষ্টা করলেন
    "কবি যা লেখেন তা-ই কবিতা
    যিনি কবিতা লেখেন তিনি-ই কবি"
    এই ডেফিনেশন দিয়ে বেশ আক্রমণ সামলানো গেল। কিন্তু বিরুদ্ধ পন্থাও বসে নেই! তাই ডেফিনেশন আরো ঘোলাটে করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল।
    "কবি যে কবিতাটি লিখবেন সেটি অবশ্যই update করা কবিতা
    যিনি
    update করা কবিতা লিখবেন তিনিই কবি"
    এবার! কেমন দিলাম! পুরো বিগ-ব্যাঙ থিওরী টাইপ চোর পুলিশ খেলা! আমিও বুকে বল পেয়ে লিখে ফেলছিলাম -
    আমি অন্ধকার ভালোবাসি
    আলোহীনতায় কোন রং আসলেই নেই
    তবু তুমি সাদাতেও পৃথক করতে পার না
    ওই সব বন্দুক, জীবাণু ও ইস্পাতের সম্পর্কগুলি
    [বন্দুক, জীবাণু ও ইস্পাত]
    আমি আর কিছু স্যাম্পল দিয়ে লেখা শেষ করার দিকে এগিয়ে যাব। ঘটনা হল এখন যা দেখছি বেশ কিছু মানে সিরিয়াসলি বেশ কিছু কবি বিভ্রম তৈরী করতে পেরেছেন কিন্তু মার্কেট পান নি। কেন পান নি তার বহুল কারণ হতে পারে। প্রধান কারণ সম্ভবত ব্যাকিং বা প্রচার পান নিএঁদের হয়ে ঢোল ফাটাবার কাউকে পাওয়া যায় নি। তাদেরই বা দোষ দিই কি করে চারিদিকে এত ঢোল! আমাদের ডিপার্টমেন্টের মত ১১ জন ফ্যাকাল্টি তো তার বারোটা গ্রুপ!
    "চুম্বকক্ষেত্রে শুয়ে থাকা দীর্ঘ আঙুল চুষতে চুষতে
    এভারেডি টর্চ থেকে লাফিয়ে নামল
    গ্রহবিড়াল" [ডায়েরী
    ধীমান চক্রবর্ত্তী]
    পোষ্টমডার্ন কবিতার লক্ষণের দীর্ঘ তালিকাটিকে খুবই সংক্ষিপ্ত করা যায় ইচ্ছা করলে মূল কথা হল মালটাকে ধোঁয়াটে হতে হবে। উপরের কবিতায় ধোঁয়াটে ভাবটায় আলো বলতে শুধু ওই এভারেডি টর্চ। চুম্বকক্ষেত্রের ভিতর সায়েন্স ঢুকে পড়েছে। তবে দীর্ঘ আঙুল বলতে কি বোঝানো হয়েছে তাই বোঝানো হয়েছে তাই ভাবছি। মানে কল্পনাটাকে কতটা প্রসারিত করব! চুষতে চুষতে মানুষের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায় এবং vice versa ও, আবার এটা প্রবলেম হচ্ছে। শালা কবিতা কোট করব কি? কি বিশাল সব লাইন আর বিরাম চিহ্নেরও কোন বালাই নেইফ্রি সোসাইটি তাই আমি এবার স্বাধীনতা গ্রহন করব এই দ্যাখো, মেঘ না চাইতেই জল আমার মনের কথা কে লিখিয়ে দেয়?
    "এসবই যদি প্রহসনের মতো মনে হয় তবে কলকাতার
    ম্যানহোলের ঢাকনা চোরেদের জবানবন্দী দিয়ে অনায়াসেই লেখা
    যেতে পারে একটি নিটোল কবিতার গদ্য"........
    [কবিতার জন্য
    সেখ আজাহার]
    এখানে মূল ইন্টারেস্টিং বিষয়টি হল ম্যান হোলের ঢাকনা চোর। এদের কোথায় পাওয়া যায়? কবি কেমনে চিনলেন এদের? শুধু এই উত্তর পাবার জন্যই কবিকে দেখতে ইচ্ছা হয়!
    "এই কবিতার সম্ভাব্য শিরোনাম
    লোমশ মুনির গল্প
    চিত্রলেখার সখীসংবাদ
    বাণরাজার মেয়ের রূপকথা
    বিষ্ণু পুরাণের আনলিমিটেড সেক্স স্টোরি
    সেভেন
    ক্লক এর এড স্নিপেট
    একটি উদারবাদী কবিতা" [প্রাসঙ্গিক
    সমীর রায়চৌধুরী]
    এই কবি যে নাম করবেন বলাই বাহুল্য! ইনি পাঞ্চ টেকনিকটা খুবই ভালো রপ্ত করেছিলেন না হলে এতো থাকতে বিষ্ণু পুরাণে সেক্স স্টোরি? বাৎসায়ন কি দোষ করেছিলেন বাওয়া ? আসলে তা নয়, বিভ্রান্ত করতে হবে তাই লৌকিক পথ থেকে সরে এসে বিষ্ণু পুরাণে ঢুকে যাওয়া।
    সায়েন্সের সাথে দু চারটি শব্দ যোগ করে বিভ্রম ফাঁদবার এক আশ্চর্য প্রচেষ্টা চোখে পড়ে এই লেখাটিতে।
    "(a+b)2 - এর উপর যদি একটা পিংপং বল রাখা যায় তাহলে সেটা গড়াতে গড়াতে যে অদ্বিতীয় শর্টকাট রাস্তা দিয়ে নীচের দিকে নামতে থাকবে সেই রাস্তায় উজ্জ্বল অফসেটে লেখা আছে যাবতীয় ভ্রমন বৃত্তান্তের ভূমিকা থেকে উপসংহার" - রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    ভাগ্যিস আজকাল কবিদের কবিতার অর্থ জিজ্ঞেস করতে নেই!

    যত ভেতরে ঢুকছি ততই পরিষ্কার হচ্ছে যে এই সব কবিতা লিখতে গেলে মদ ও মানসিক সমস্যার সাথে পরিচিত হওয়া খুবই দরকার, বলা যেতে পারে অত্যাবশ্যকীয়। সুস্থ ব্রেনের মানুষ এই জাতীয় বিভ্রম সৃষ্টি সহজে করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। এই বিষয়ে আরো জানার জন্যই আমি আমার তালিকার প্রথম বইটি পড়া শুরু করেছি হ্যালুসিনেশনের সাথে মাদক দ্রব্যের সম্পর্ক!
    "গাব্বুই গাব্বুর জন্য লিখে যায় গাব্বু গাব্বু অসংখ্য কবিতা
    গাব্বুই গাব্বুর জন্য রেখে যায় গাব্বু গাব্বু অসংখ্য কবিতা।"
    [তারাপদ রায়]
    ঝিঙে আলু পোস্ত এবং আলু পটলের (পাঠকগণ আলুটা কমন সেটা লক্ষ্য করুন) তরকারী খেয়েও যে বড় কিছু করা যায় তার প্রমাণ বাঙালী ভাষা আন্দোলন করে এবং পোষ্ট মডার্ন কবিতা লিখে জানান দিয়েছে যে প্রদেশের রাজা পনের জন ঘোড় সওয়ার দেখে ভাতের থালা ফেলে খিড়কি দরজা দিয়ে পালায় তার প্রজাদের ক্ষেত্রে এ হেন আচরণ কৃতিত্বের দাবি করতে পারে বৈকি। আমি গানের জগতে ঢুকতে চাইছি না, না হলে সুমন চাটুজ্জে বা অধুনা কবীর সুমনের উদাহরণ টানতেই পারতাম। ইনি একজন বিভ্রম সৃষ্টিকারী সার্থক কবি গায়ক। সতীর্থরা যখন কোনো নাম্বার নিয়ে নাড়াঘাঁটা করছে বা বিষ দাও, বিষ দাও বলে ডাক ছাড়ছে তখন ইনি গাইলেন কি
    "ভয় নেই প্রিয়তমা, এমন দিন এনে দেব
    বন্দুক নয় গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ
    করবে তোমারই জন্য"
    পাবলিক বিভ্রান্ত হয়ে খেয়ে গেল। জীবিত কারও জন্য ফুল হাতে (গোলাপ তো দূর অস্ত) কুচকাওয়াজ রাজঘাট বা সেকেন্ড অক্টোবর ছাড়া বাঙালী দ্যাখেনি। ফলতঃ এ সঙ্গীত আলোড়ন তুলতে বাধ্য হল। ঠিক আছে, এই গান না হয় উনার নিজের লেখা নয় কিন্তু নিজে কি লিখলেন
    হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই
    বিসমিল্লার পাগলা সানাই
    অন্য কারও নাম না জানলেও মফস্বল কিন্তু সানাই ও বিয়ে বাড়ির নহবত উপলক্ষে বিসমিল্লা খানের সাথে ভালোই পরিচিত ছিল। এহেন লোকের জিনিস চেটে-পুটে খাওয়া কি ঝকমারি ব্যাপার সৃষ্টি করেছিল সেটা আশা করি বুঝতে পারছেন।
    একটা কথা শেষ মেশ বলে নিই ডিসক্লেমার টাইপের। আমি নিজে কিন্তু কবিতা লিখেই মার্কেটে নাম করতে চেয়েছিলাম- আমার নিজের কবিতায় পুরো বিভ্রান্তি (আমার গণ্ডী যতটা পেরেছে আর কি) ভরা - দুই একটা উদাহরণ আগেই দিয়েছি। দু-একজন কে বিভ্রান্ত করতে পেরেছি, তাই দুই-চার জন আমার কবিতা পড়েনমানে পড়েন বলতে লেখা হলে মেলিয়ে বা ফেসবুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাই কেমন হয়েছে। কিন্তু যা হয় আর কি মার্কেটে নাম নেই! ফেসবুকের ২২৩ জন (পিওর বাঙালী ধরলে সংখ্যা কমবে), কিছু সোশ্যাল সার্কিটের পাবলিক ছাড়া কেই বা জানে। প্রচুর মনে দুঃখু, তাই এই গদ্য লিখেছিলাম। আঙ্গুর ফল টক টাইপের লেখা আর কি। এই সব কবিদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা পুরো টলটল করছে এখনো। এদের অনেকেই আমার প্রিয়তম লেখক এদেঁর কাছ থেকে আমি শিখে যাবার চেষ্টা করি অবিরত, সেই বিভ্রম বিষয়েই!
    এই যে এতো কথা লিখলাম, এটা কি কোন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি পড়বেন? পড়লে ভালো - দু চার পিস্ বিভ্রান্ত পাবলিক আরো বাড়বে। আপনি যে বিভ্রান্ত নন তা কেমন করে প্রমাণ করবেন? সোজা ব্যাপার -
    "নাকি প্রকৃতির কাছে গেলে অনুবাদকৃত হয়ে যায় অনুবাদকৃত
    তোমাদের প্রতিটা চেহারা আমাদের উপর হামলে পড়ল
    তোমাদের
    eine kleine nachtmusik-এ" ...

    এর অর্থ বার করে ফেলুন  © 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১৪৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • arindam | ***:*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৪:৪৩89393
  • হেব্বী লেগেছে।
  • গান্ধী | ***:*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৪:৪৩89392
  • চরম !!! অমর লেখা
  • রূপঙ্কর সরকার | ***:*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৯:২০89394
  • অসাধারণ লেখা। গুরুচন্ডালি ছাড়া অন্য কোথাও এমন লেখা পাওয়া যেতনা। সুকান্তবাবু আবার কোথাও বিভ্রান্তি ছড়ালে খবর দেবেন। দুটো ছোট্ট বানান বিভ্রম আছে, তা থাক কিন্তু ভাতের থালা ফেলে পালাতে তো আরও আড়াই জন লাগবে, দুজন পূর্ণ দৈর্ঘের আর একজন বামন। :)
  • Subhankar Koley | ***:*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১১:০১89395
  • এতো বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম যে পুরোটা শেষ করতে পারলাম না!
  • সুকান্ত | ***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১০:৪১89396
  • সবাইকে ধন্যবাদ লেখাটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য। এমনিতেই বড় লেখা পড়তে গেলে আমি নিজে বিভ্রান্ত হয়ে যাই!
    রূপঙ্কর বাবু, আমি আপনার লেখার খুবই ফ্যান। মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়ে যাই। ভালোলাগা জানানো হয় না, সেটা আমারই দোষ - এই ফাঁকে ভালোলাগা জানিয়ে রাখলাম।
  • রূপঙ্কর সরকার | ***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১২:৩৫89397
  • :-)
  • শিবাংশু | ***:*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৭:১৫89400
  • দারুণ হয়েছে...!!
  • মৌ | ***:*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৭:৩২89398
  • দারুন লাগলো। বিভ্রান্ত আর বিভ্রান্তি বড়ই মধুর ক্যাপেল।
    জন্ম থেকে মরা অবধি বিভ্রান্ত হয়ে থাকলো সবাই। জন্মাবার আগে ছেলে কি মেয়ে, মরার পর কোথায়ে, কবে, কি ভাবে, এখন কি হবে ও ওতি অবশ্যই শ্রাদ্দের মেনু... সবই বিভ্রান্তি।
  • b | ***:*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৮:০৫89399
  • ইয়ে, কৃত্তিবাস কি মহাভারত?
  • π | ১১ আগস্ট ২০২০ ২১:১৩96175
  • সুকির এই লেখাটা খুব পছন্দের ছিল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন