আইন পাশ হচ্ছে আইনসভায়, দ্রুত ও আলোচনাহীন। নতুন আইন কার্যকর হচ্ছে। নাগরিকরা যথারীতি, সে আইন পালনে বাধ্য। গণতন্ত্রের, চালু গণতন্ত্রের নিয়ম এমনই। সারা বিশ্বে এরকমটাই স্বীকৃত, মান্য। সিরিয়াস৯-র এবারের বিষয় আইনের শাসন। এই সংখ্যায় অতিমারী পর্যায়ে আইনের শাসন নিয়ে লিখেছেন সুজাত ভদ্র; উত্তর পূর্ব ভারতে আইনের শাসন বলতে ঠিক কী বোঝায়, সে নিয়ে লিখেছেন পার্থপ্রতিম মৈত্র। এ ছাড়া রয়েছে ভারতে আইনের শাসনের সাম্প্রদায়িক চেহারা নিয়ে একটি আলোচনা, এবং আইনের শাসনের দার্শনিক ও প্রায়োগিক দিককে সমস্যায়িত করে একটি লেখাও থাকল এবারের সংখ্যায়।
আইনের শাসনই কি যে কোনও সমাজের পক্ষে কাম্য? কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থায়, ব্যবস্থার শীর্ষে যাঁরা থাকেন, তাঁরা যেসব আইন তৈরি করেন, তা সেই ব্যবস্থাধীনদের কাছে মান্য হয়ে ওঠে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তাঁরা অধীন। ব্যবস্থার, গোষ্ঠীর, সম্প্রদায়ের, মতাদর্শের। কিন্তু মানুষ শেষত স্বাধীনতাকামী।
(এই লেখাটি একটি ভাবনাসূত্র, যা পরিবর্তনশীল। এর পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও সম্পূর্ণ পরিবর্তন সম্ভব। ২০২০ সালে পৌঁছে কিছু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে অনুভূত এই ছেঁড়া ফাটা ভাবনাগুলি অনেকের সহায়তায় রূপ পাবে, কিংবা কুরূপ - এমনই আকাঙ্ক্ষা।)
পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে অনেকভাবে, এবার প্রয়োজন তাকে বদলানোর। এটি একটি আপ্তবাক্য। এবং বহু আপ্তবাক্যের মতই একেও সন্দেহ করা দরকার, প্রশ্ন করা দরকার- এ কথাও বিবৃত হয়ে গিয়েছে। এবার এই আপ্তবাক্যটিকে ছুঁড়ে ফেলুন।
আমাদের একটি তত্ত্ব দরকার নেই। আমাদের নানা তত্ত্ব প্রয়োজন। প্রয়োজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অবস্থানকে তত্ত্বায়িত করবার। তেমনই একটি প্রয়োজনীয় অবস্থান, আইনের শাসনের উপর নিরঙ্কুশ আস্থা না-রাখা।
ধরতাই
আইন একটি এমন ব্যবস্থা, যা বিচারবিভাগের, প্রশাসনের, ও আইনসভার হাতে ব্যবহৃত হয়। দূরবর্তী অবস্থান থেকে আইনকে কেমন দেখায়, তা অপ্রয়োজনীয়। যারা আইন দ্বারা প্রভাবিত, তারাই এর মূল্যায়নে সক্ষম। প্রকৃত মূল্যায়নকারীকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিবেচনা করতে হবে, এরকম একটা প্রস্তাবনা চালু আছে বটে, কিন্তু তা বড় বেশি দূরনির্ভরশীল।
আরও পড়ুন, ভারতে আইনের শাসনের সাম্প্রদায়িক চেহারা নিয়ে আলোচনা
এসব কথা অজানা নয়। ডেপুটি বাবু, ঔপন্যাসিক হিসেবে যাঁর খ্যাতি, তিনি লিখে গিয়েছিলেন এ তামাশার কথা। তবে সে ছিল পরাধীনতার কাল। স্বাধীন ভারতে আইনের চরিত্র তা থেকে কিচ্ছুটি বদলায়নি, কেবল তাকে ভারতের ব’লে মেনে নেওয়ার ও সমর্থন করার দায়বদ্ধতার দায়ভার চাপানো ব্যাতিরেকে।
আইনের চোখে সকলে সমান, নয়
একটি মিথ্যাচার, যা সকলে মিথ্যা বলে জানে, প্রকাশ্যে স্বীকার করে না। আইনের চোখে সকলে সমান, তার যে অর্থ নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়, তা লিখিত আইন। আইনজ্ঞ ও আইন নিয়ে নানাপ্রকার ব্যবসায়ীরা লিখিত আইন সম্পর্কে সুঅবহিত হতে পারেন, বাকিদের কাছে আইনের মূল্য কেবলমাত্র ব্যবহারিক। সে ব্যবহারিক মূল্য অবশিষ্ট অধিকাংশকে মূল্যদানের মাধ্যমে পেতে হয়, হয় অর্থমূল্য নচেৎ অর্থদণ্ডের হিসেবে। অর্থমূল্যের ক্ষেত্রে আইনজীবী ও দণ্ডের ক্ষেত্রে প্রশাসন (জরিমানার মাধ্যমে) সে অর্থ গ্রহণ করে থাকে।
আরও পড়ুন, অতিমারী ও রাষ্ট্রের শাসক চোখ নিয়ে সুজাত ভদ্রের লেখা
আইন সম্পর্কে এত রকম (অর্থ)মূল্য ধার্য থাকলেও, মূল্যবোধ কিন্তু অনুপস্থিত। আইন, প্রকৃতপ্রস্তাবে সকলের পক্ষেই কোনও না কোনও প্রেক্ষিতে, চাপিয়ে দেওয়া। বা আইন কোনও না কোনও পক্ষের কাছে সবসময়েই চাপিয়ে দেওয়া। ব্যক্তি ও সমুদয়ের স্বার্থ অনেক সময়েই পরস্পরবিরোধী। আকাঙ্ক্ষাও।
বাস্তবের মাটিতে
সমগ্র আইন ব্যবস্থাকে মান্য করেন, তাকে সর্বান্তঃকরণে সর্বদা মেনে চলেন, এমন মানুষ বিরল। নাগরিক হিসেবে তাঁরা মানতে বাধ্য, কিন্তু সে কেবল বাধ্যতা। সাহসের অভাবে বহু ক্ষেত্রে তাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নেন না বটে, কিন্তু প্রস্তুত যে থাকেন, তার প্রমাণ দেখা গিয়েছে এবং যায় বেশ কিছু অপরাধের ঘটনার ক্ষেত্রে। হায়দরাবাদে ধর্ষক সন্দেহে গ্রেফতার ব্যক্তিদের সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় বহু সংখ্যক ব্যক্তি উল্লাস প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে মেধাজীবী বলে পরিচিতরাও রয়েছেন। হাথরাসের দলিত নারীধর্ষণে ঘটনাতেও তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করতে কম মানুষকে দেখা যায়নি। মৃত্যুদণ্ড বা ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড, এসব অপরাধ কমাতে কতটা কার্যকর, সে পৃথক তর্কে না গিয়েও এই যে তাৎক্ষণিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা, তা কোনও আইন বা সংহিতা (কোড)গ্রাহ্য হতে পারে না। আইনের রাস্তায় কোনও অপরাধ প্রমাণে সময় লাগে, তা সে যত ন্যূনতমই হোক না কেন। এখন একটা সওয়াল প্রায়শই ওঠে, যে এই তাৎক্ষণিক শাস্তিদানের আকাঙ্ক্ষা আসলে বিলম্বিত বিচারের অতিপ্রতিক্রিয়া। বিলম্বিত বিচার একটি সমস্যা বটে, কিন্তু এই তাৎক্ষণিক শাস্তিদানের আকাঙ্ক্ষা তারই প্রতিক্রিয়া মাত্র, এ হেন ভাবনার পিছনে এক ধরনের অতিসরলীকরণ রয়েছে। এই দ্রুতাকাঙ্ক্ষার পিছনে রয়েছে সামাজিক নৈতিকতা-নির্দিষ্ট ক্ষমাহীন অপরাধের ধারণা, যা কোনও কোডের ধার ধারে না। মেয়েদের ধর্ষণ করা হলে, সেই ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ডই, এ ভাবনার পিছনে রয়েছে সতীত্ব সম্পর্কিত পূর্বধারণা, যে ধারণার আধুনিকায়ন হয়নি, এবং আধুনিক সমাজ-নির্দিষ্ট সংহিতা বা কোড এই মনোভঙ্গি বা মনোবিকারকে বদলাতে পারেনি। আর একটা উদাহরণ এ প্রসঙ্গে দেয়া যেতে পারে। এই অতিমারীর সময়ে লকডাউন প্রসঙ্গে। লকডাউন সফল করতে পুলিশি বাড়াবাড়ির কথা সকলেই জানেন। তাতে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উদ্গত হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, পিটিয়ে মারা ছাড়াও পুলিশ এমন কিছু পদক্ষেপ করেছে, যা বহুজনমান্য হয়েছে, এবং যা আইনবিরুদ্ধ। কান ধরে ওঠবোস করানো এর মধ্যে একটি বহুল প্রচারিত ঘটনা। মাস্ক না-পরলে, রাস্তায় বেরোনোর যথাযথ কারণ না দেখালে পুলিশ কান ধরে ওঠবোস করিয়েছে, এবং সে ঘটনা সংবাদপত্রে এমনভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, যে তেমনটাই স্বাভাবিক। এক বহুলপ্রচারিত খবরের কাগজে এরকমও লেখা হয়েছে, ‘লকডাউন সফল করতে ধরপাকড়, জরিমানা, কান ধরে ওঠবোস, বাদ যায়নি কিছুই।’ যেন এমনটিই ঘটার কথা। যেন অতিমারীতে পুলিশকে এই অধিকার দেওয়া হয়েছিল। আইন-অতিরিক্ত অধিকার। আইনের শাসন যেন এক্ষেত্রে মান্য নয়। ক্ষেত্রবিশেষে এই ছাড় দেয়ার একটা কুযুক্তি আসতে পারে, কিন্তু সে কেবল কুযুক্তিই হবে, কারণ আইনের দেবীর চোখ বাঁধা থাকার কথা।
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
আইনের শাসন একটি কোডেড জীবনাচরণে মানুষকে আবদ্ধ করতে চায়। সে কোড কখনও আধুনিক রাষ্ট্রসম্মত, কখনও গোষ্ঠীসম্মত (যথা, খাপ), কখনও বা নির্দিষ্ট রাজনীতিবাহিত (গণ আদালত)। এ সব ক্ষেত্রেই কোডই সত্য। কোডের পতাকাতলে মানুষকে দণ্ডায়মান হতে হয়। কিন্তু সে কোড কদাপি সর্বজনগ্রাহ্য নয়। সকল ব্যবস্থাতেই কিছু মানুষ কোড ভাঙতে চায় বা ভেঙে ফেলে, এরকম একটা যুক্তি-তর্কে এই না-মানার বিষয়টিকে বাঁধা যাবে না। এর কারণ স্বাধীনতাকাম।
আরও পড়ুন, পার্থপ্রতিম মৈত্রের উত্তরপূর্ব ভারতে আইনের শাসন নিয়ে লেখা
ব্যক্তি মানুষ নিজের সীমানা নিজেই গড়ে ও ভাঙে। যে কোনও ধরনের ইডিওলজিক্যাল অ্যাপারেটাসকে সে কখনও সজ্ঞানে, কখনও অজ্ঞানে অস্বীকার করে। এবং সে সেই সময়ে কোডের, সংহিতার, নিয়মাবলীর তোয়াক্কা করতে চায় না। সসীমকে অতিক্রম করে অসীম হয়ে ওঠাই মানুষের ধর্ম। সে ধর্ম রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর সংহিতা দ্বারা সীমায়িত হতে পারে না। ফলত সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। উঠবেও। এর কোনও ব্যত্যয় নেই। কোড বারংবার পরিবর্তিত হতে পারে, কোডকে বর্বর সংখ্যাধিক্য দ্বারা বদলে দেয়া যেতে পারে, তার মাধ্যমে উৎপীড়ন নামিয়ে আনা যেতে পারে। কিন্তু কোড মানুষকে কেবল নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টাই করতে পারে মাত্র। তা কখনও অনেকের পক্ষে স্বস্তিদায়ক, কখনও নয়। কিন্তু কোড মানুষ ভাঙে। ভাঙবেই। তা কখনও বহুলাংশের পক্ষ ক্ষতিকর বলে মনে হতে পারে, বা মনে করানো হতে পারে। আইনভঙ্গকারীর শাস্তিপ্রদান সকলের কাছে, সর্বদা কাঙ্ক্ষিত নয়।
"আইন সবার জন্য সমান" আর "আইন আইনের পথে চলবে" - এই দুটি ফ্রেজ নিয়ে কম ঠাট্টা ইয়ার্কি হয়নি। অথচ এগুলো এখনো ব্লাসফেমিই। আইন এখনো ঈশ্বরের সিংহাসনেই রয়ে গেছে
কিন্তু কমরেড, কোড তো লাগবেই। কোন একটা ফর্মে। যে নদী থেকে খাবার জল আসে, সেখানে কারখানার বর্জ্য ফেলা যাবে না, এটা একটা কোড। কোড থাকলেও যার ক্ষমতা থাকবে, সে কোড ভাঙবে, বর্জ্য ফেলবে। কোড কিভাবে তৈরি হবে আর প্রয়োগ করা হবে, তা নিয়ে ব্যক্তি-স্বার্থের সঙ্গে সমষ্টির বোঝাপড়া তো চলতেই থাকবে। কিন্তু কোন কোড/আইন কিছুই থাকবে না, তা হলে তো ক্ষমতাবানেরই সুবিধা হবে। বরং একটা লিখিত আইন/ সংবিধান থাকলে - সেই অনুযায়ী চেপে ধরা যাবে। বরং কোড বানানোর প্রক্রিয়াতে যত বেশি মানুষ অংশ নিতে পারে সেটা দেখা দরকার। কোড নির্দিষ্ট সময়ের পরে রিভিউ হবে এটাও করা যেতে পারে।
এই আলোচনার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করেছিলাম। আইনের শাসনের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল যে আই জিনিসটা নিজে নিজেকে স্যাক্রোস্যাংক্ট দাবি করে বক্তব্য শুরু করে। বিচারপতি-রা মি-লর্ড হয়ে প্রায় ঈশ্বরের জায়গায় বসেন। আইন ব্যবস্থাও যে পাবলিক সার্ভিসের অংশ- এইটা প্রায়শঃই ভুলে যাওয়া হয়।
দ্বিতীয় সমস্যা, এটা একটা কমার্শিয়াল ব্যাপার। উকিল পয়সা নিয়ে আপনাকে জেতানর জন্যে লড়বে। দুই-দিকেই বাদী বিবাদী লড়বে না, মূলতঃ লড়বে পয়সা নেওয়া উকিল। ফলে যে বেশি পয়সা ্দিতে পারবে, তার জেতার চান্স বেশি- এইটা যতদিন থাকবে, কোনওদিনও আদালত ব্যবস্থায় গণমানুষের খুব বেশি উপকার হবে না। এবং এইটাই আরেকটু ওপরের স্তরে হয়ে যায়, কোড নির্মানের পদ্ধতি। ইলেটরাল বন্ড, লবিয়িং ইত্যাদি যে নামেই হোক, রাজনৈতিক দলকে যে বেশি পয়সা দেবে, কোড তার দিকে ঝোল টেনেই হবে।
কোড নির্মাণের ক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান হয় তো, পঞ্চায়েত স্তর থেকে কোড গুলো র্যাটিফাই করানো, এবং সাহমত্য তৈরি করা। তেমনি বিচারের ক্ষেত্রে, অপেশাদারদের সাহায্য নেওয়া (জুরি) ব্যপারটাকে পণ্যায়নের চূড়া থেকে নামাতে সাহায্য করতে পারে।
তবে, আইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা, পুলিশ ছাড়া এ নুলো। পুলিশ হাত তুলে নিলে বিচারব্যাবস্থার গাছের একটা পাতা ছেঁড়ারও ক্ষমতা নেই।
ফলে রাষ্ট্রীয় আইনব্যবথা, চারিত্রিক দিক থেকে হিংসানির্ভর এবং পণ্যায়িত।
সামাজিক আইন, সামাজিক বিচারের চরিত্র এর থেকে কম নিষ্কলুষ বলে আমার মনে হয়। কিন্তু, সেখানেও অবশ্যই একটা জোর খাটানোর জায়গা, প্রভাবশালীদের প্রতিপত্তি, বংশগত দাদাগিরি থাকবে (সেগুলো রাষ্ট্রীয় আইনেও ব্যতিক্রম নয়)। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে, আঞ্চলিক ইকুয়েশন প্রাধান্য পাওয়ায় এবং মান্য কোড না থাকায় দুর্বল এবং সংখ্যালঘু অংশ (নারী, দলিত, বিষমকামী, প্রতিবন্ধী ইত্যাদি)-দের স্বার্থ ভীষণভাবে উপেক্ষিত হতে পারে।
কেজরিওয়ালের স্বরাজ গ্রন্থে পঞ্চায়েতের শাসনে সংখ্যালঘুর স্বার্থ কীভাবে দেখা যায় তাই নিয়ে আলোচনা আছে। উনি বলছেন, গ্রামসমাজের বাইরে দুর্বল অংশগুলির দেশব্যাপী সংগঠন রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে হবে (আমরা রাষ্ট্রের বদলে, তাঁদের নিজস্ব আন্দোলনের মাধ্যমে এইধরণের সংস্থার গড়ে ওঠা ভাবতে পারি)। এবং যেখানে এঁদের স্বার্থ্য চ্যালেঞ্জড হবে, সেখানে এই সংগঠনগুলি বিচারে অংশ নেবে।
"ফলে রাষ্ট্রীয় আইনব্যবস্থা, চারিত্রিক দিক থেকে হিংসানির্ভর এবং পণ্যায়িত।" - একমত।
"ব্যবস্থায়" অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তাই বলে আইন- ব্যাপারটাই উঠে যাবে, বা আইনের শাসন বাস্তবসম্মত নয় তা তো নয়। এর বদলে অন্য ব্যবস্থা হবে। আইন ব্যাপারটাই উঠে যাবে, কারণ কিছু মানুষের কিছু আইন পছন্দ নয়, সেটা হতে পারে না। যেমন শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা থাকলে শিক্ষাই তুলে দিতে হবে, বা কিছু মানুষ কিছুতেই ইশকুল যাবে না, তাই ইশকুলের কোন মানে হয় না এটা যুক্তি হতে পারে না।
আর যদি এইটা পয়েন হয় যে আইন থাকলেই কিছু মানুষ তা ভাঙবে - সে তো অবভিয়াস।
শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আইনব্যবস্থার তুলনা খুব সঠিক কি? একই দেশের মধ্যে, একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা থাকে, প্রাইমারি-সেকেন্ডারি ছাড়া আবকি শিক্ষা কম্পালসরিও নয়। অনেক দেশে হোম স্কুলিংও অ্যালাউ করে ইত্যাদি। আইন সেখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গে প্রায় একার্থক। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেও রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে এমন কি আজকের দিনেও হাজার হাজার মানুষ শিক্ষাব্যবস্থায় পার্টিসিপেট না করে বা ন্যূনতম পার্টিসিপেট করে টিকে থাকতে পারেন। কিন্তু, আইন সেরকম নয়।
কিছু মানুষ আইন ভাঙবেনই এরকম আমি মনে হয় বলিনি, বলেছি আইন ব্যবসা যতদিন থাকবে, কিছু হাতে গোণা কিছু লোকই সেটার সুবিধে তুলবে।