সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর, তার বিষয়, ভাষারীতি ও বানানবিধি নাগরিক সমাজে ঠিক কত দূর ছাপ ফেলে তা সাদা চোখে বোঝা যায় না সম্ভবত। অন্তত রীতি ও বিধির হাল হকিকৎ দেখলে তেমনটাই মনে হয়। একটা সময়ে, বেশিদিন আগে নয়, বছর ১৫-২০ আগেও, যখন সংবাদমাধ্যমের এত বিস্ফোরণ ঘটেনি, তখন, কয়েকটা আদর্শ বিধি ছিল, যা মান্য বলেই ধরে নেয়া হত। ক্রমশ অজস্র টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র ও পরবর্তীকালে সংবাদ ওয়েবসাইটের বীভৎস বৃদ্ধি সমস্ত রীতিনীতিকে পিছনে ঠেলে দিয়েছে। টিআরপি ও হিট - এই দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে ব্যবসাবৃদ্ধির পরিকল্পনা এবং সংবাদকর্মীদের পটু হয়ে উঠতে না দেওয়া এরই ফসল। এই লেখায় আমরা বাংলা সংবাদমাধ্যমের ক্রমবিকার দেখাব। কোনও নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যম-গোষ্ঠী নয়, এই আলোচনা সামগ্রিক পতনের দিকে লক্ষ্য রাখতে চায়।
ছত্রধর মাহাতকে সাংবাদিক ছদ্মবেশে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এ ঘটনা পর সাংবাদিকদের একাংশ প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন, একটি কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছিল। এর পিছনে কাজ করছিল একটা মনোভঙ্গি- যে, সাংবাদিকের পেশা পবিত্র, তাকে কলুষিত করা হয়েছে। আর একটা ভাবনাও ছিল অবশ্য। সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহ করার কাজটি এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা প্রথম মনোভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করব। সাংবাদিকের পেশার পবিত্রতা। এ ব্যাপারে যাঁরা সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন, তাঁরা পুরনো দিনের সাংবাদিক। তাঁরা মনে করতেন ও করেন সাংবাদিকের দায় ও দায়িত্ব সাধারণের চেয়ে কিছু বেশি। এবং সেই অতিরিক্ত দায় ও দায়িত্ব বহন করার কারণেই তাঁরা এই পেশার পবিত্রতার কথা ভাবতেন, ভাবেন, উপলব্ধি করেন, করতেন। অথচ মার্ক্সসাহেবের লেখায় আমরা পড়ে ফেলেছি যে পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে এমনটা ভাবার নয়। সে কথাই আমরা আবার শুনি লালকুঠি সিনেমায়, ড্যানির মুখনিঃসৃত গানে, পয়সা দিয়ে সবই কেনা যায়। অথচ তা সত্যি ছিল না। খবর না করার জন্য অর্থ বা অন্যবিধ উৎকোচ সব সাংবাদিক গ্রহণ করতেন না, তখন সেটাই ছিল রীতি। গত বিশ বছরে এ মনোভঙ্গির ব্যাপক বদল হয়েছে, মূল্যবোধের মাপকাঠি গিয়েছে বদলে, কখনও কখনও তা উলঙ্গ রাজার পোশাকের মতও হয়ে পড়েছে। রীতিটি এখন সাধারণ নেই। তা সংখ্যালঘু তো বটেই এবং এমনকী আরাধ্যও নয়। ফলে আরব্ধতা বিলকুল নেই।
সম্পাদনা, এখন, মূলত ম্যানেজারি। কেউ কোনওদিন রিপোর্টিং না করেও অ্যাসাইনমেন্ট বিভাগের প্রধান হয়ে উঠতে পারেন। একটিও নির্ভুল নিবন্ধ কোনও দিন না লিখেও হয়ে উঠতে পারেন ডেস্ক বিভাগের প্রধান। শুধু হয়ে উঠতে পারেন বলা ভুল, তাঁকে প্রধান করে তোলাও হতে পারে। দৃশ্য-অদৃশ্য ম্যানেজমেন্ট এরকম নির্দেশ জারি করে থাকে। এর পিছনে নানারকম নীতি থাকে। কিন্তু সে সব থাক। থাক দুর্নীতির কথাও। আমরা বিষয়ে থাকি।
কোনও একটি ঘটনা, যেখানে দুই পক্ষ জড়িত, সেখানে দু পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ ও প্রচার করা সাংবাদিকতা হিসেবে গণ্য হত। এবং এটিই পদ্ধতি বলে এখনও স্বীকৃত। তেমনটা এখন আর ঘটে না তা নয়, কিন্তু তেমনটা না-ঘটতেও পারে। এক টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদবিভাগীয় সম্পাদক বলেছিলেন, 'ওসব উঠে গেছে।' ঠিক কবে যে উঠল, কে যে তুলে দিল, তেমন প্রশ্ন করায় ওই সম্পাদকের তিরস্কারের মুখে পড়েছিলেন এক নিম্নপদস্থ সম্পাদক।
প্রশ্ন, বাস্তবত, নেই আর। প্রশ্নের অভাব, সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় সাংবাদিক সম্মেলনগুলিতে। বা কোনও কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতেও। একটি আদৌ-অপ্রচারিত ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। একটি শিশুমৃত্যুর ঘটনায়, একজন টেলিভিশন সাংবাদিক মৃত শিশুর বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার এখন কেমন লাগছে! তাতে সন্তানহারা মানুষটি কেবল তাকিয়েছিলেন, ক্যামেরার দিকে নয়, প্রশ্নকারীর দিকে। কোনও জবাব দেননি। এমন একটি প্রশ্ন যে করা সম্ভব, তা দেখে-শুনে কিঞ্চিৎ দিশেহারাই হয়ে পড়েছিলেন সংশ্লিষ্ট ডেস্ক-কর্মীটি, যাঁর উপর দায়িত্ব ছিল এই সম্পর্কিত সংবাদ সম্পাদনা ও প্রচারের।
বেহাল-বেআদব প্রশ্নের উল্টোদিকে থাকে নীরবতা। বা বোকা প্রশ্ন। সাংবাদিক সম্মেলন, যেসব সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, সেখানে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় তৈলমর্দন ও রিপিটেটিভ প্রশ্ন। আর থাকে ওভারস্মার্টনেস, বেকায়দায়-ফেলছি ভাব করা প্রশ্নাবলী, যদিও তার সংখ্যা ক্রমক্ষীয়মাণ, এবং তাতে কেউ বেকায়দায় পড়েন বলে মনে হয় না।
এ ধরনের সংক্রমণ কেবল বাংলাতেই ঘটেছে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমরা বাংলার নির্দিষ্টতা নিয়ে কথা বলতে বদ্ধপরিকর, প্রতিশ্রুতও। এবং তা মূলত বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক।
আরও পড়ুন, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার গতি ও প্রকৃতি নিয়ে সুস্নাত চৌধুরীর লেখা
বাংলায় সংবাদমাধ্যমের সংখ্যাবিস্ফোরণ যখন এল, তা ঘটেছিল হঠাৎই। বিস্ফোরণ সচরাচর যেমন ঘটে। সে সময়ে, চাহিদানুসারে সংবাদকর্মীর জোগান ঘটে উঠল বটে, কিন্তু সে মান যোগ্যতানুসারী হয়নি। সে সময়ে যোগ্যতামানও বদলে ফেলা হচ্ছিল। যোগাযোগ, সুসম্পর্ক ইত্যাদি বেশি স্থান পাচ্ছিল অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণী মনের চেয়ে। ফলে, যা সর্বসমক্ষে প্রচারিত হচ্ছিল, তা মানরক্ষাকারী নয়। মান- গুণ অর্থে, সংবাদমাধ্যমের সম্মানার্থেও।
প্রাথমিক ভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল টেলিভিশনে। চ্যানেলের পর চ্যানেল শুরু হয়ে গিয়েছিল বাংলা ভাষায়। এত অর্থ জোগান কোথা থেকে আসছিল, সে নিয়ে নিশ্চয়ই কখনও আলোচনা হবে। অন্তত তেমন আশা করাই যায়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলি একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মূলত অ্যাংকরকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। বা শো কেন্দ্রিক। গোটা টেলি সংবাদমাধ্যম পরিচিত হতে থাকে, মূলত শো পার্সনদের নামে। টেলি মিডিয়া এখন আর রিপোর্টিংয়ে ভিত্তি করে নেই, প্যারাডাইম শিফট ঘটে গিয়েছে সেখানে। সংবাদ নয়, ইস্যুই সেখানে মুখ্য। এ কেবল বাংলায় নয়, সর্বভারতীয় স্তরেই ঘটতে থেকেছে। সারাদিনের সংবাদ এখন মূলত গ্রন্থিত ও সম্প্রচারিত হয় সন্ধের পরের শোয়ের জন্য। তথ্যও থাকে অবশ্য। এক আয়তক্ষেত্রের মধ্যে ছবির উপর নিচে তিন থেকে চারটি চলমান লাইনে তথ্য দেওয়া হতে থাকে। আর আয়তক্ষেত্রের মধ্যের ছবিতে অনেক অনেক বাক্স তৈরি হতে থাকে, যে বাক্সের মধ্যে থাকে আরও অনেক ছবি, তাতে কখনও মুখ দেখা যায়, কখনও অন্য কিছু দৃশ্যও। যে যত ছবির বাক্স তৈরি করতে পারে, তার তত আস্ফালন। কিন্তু এত কিছু কে দেখে? সত্যিই কি দেখে কেউ? এই নিবন্ধকার একদা কাউকে কাউকে, কোনও কোনও টেলিদর্শকের সঙ্গে কথা বলে নেতিবাচক উত্তরই পেয়েছেন। তথ্যের ব্যাপারে কি দর্শকাগ্রহ কমেছে? একটা যুক্তি এ প্রসঙ্গে উঠে আসে, দর্শকরা যা চান, তাই দেখানো হয়। এর জন্য মার্কেট সার্ভে, টিআরপি রেটিংয়ের জটিল হিসেব-নিকেশও রয়েছে। এর একটা পাল্টা যুক্তি, সম্ভবত খুবই ক্ষীণ ও ভঙ্গুর যুক্তি দেয়া যায়। তাহলে সম্পাদনার কী হল? সম্পাদকের কাজ কি এখন লোকে যা চায়, তাইই দেখাতে থাকা, কারণ এই ব্যবসায়ে অনেক অর্থ লগ্নিকৃত হয় গিয়েছে, এবং লগ্নিকারীর স্বার্থরক্ষাই সম্পাদকের মূল বা অন্যতম বা একমাত্র লক্ষ? এবং সংবাদমাধ্যমের কাজ কি জনমত তৈরির জায়গায় জনগণেশের মধ্যেকার জনপ্রিয়তম বিষয়সূচির পিছনে দৌড়ানো? এ দুটি প্রশ্ন আলাদা করে উত্থাপিত হলেও এর মধ্যে আন্তঃসংযোগ যে রয়েছে তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স অনুধাবন করার মত মেধা বা অনুশীলন লাগে না। এ দুই প্রশ্নের সঙ্গে বরং যা যুক্ত হয়ে থাকে, তা এখানে পূর্বোল্লিখিত। জনমত তৈরি করার জন্য যে মেধা ও মনন, আত্মবিশ্বাস (যথাযথ) ও দার্ঢ্য প্রয়োজন, তা সম্পাদকদের মধ্যে অতিবিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, এখন সম্পাদনা বলতে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ও ম্যানেজমেন্টের চাহিদামত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সুসম্পর্কই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলা টেলিভিশনের রমরমা কমতে শুরু করে চিট ফান্ডের রমরমা কমার সঙ্গে সঙ্গেই। সংবাদকর্মীরা কাজ হারাতে থাকেন। পেশাও বদলে নিতে থাকেন অনেকেই। কিছুদিনের মধ্যে ফের পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে ব্রডব্যান্ডের সুলভতার কারণে। সহজলভ্য, সর্বত্রগামী ব্রডব্যান্ড যখন বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যেতে থাকল, তখন বাংলার দিকে নতুন করে নজর পড়ল দিল্লির সংবাদমাধ্যমগুলির। টেলিভিশন চ্যানেল শুরু করার মত অনেক পুঁজি লগ্নির ব্যাপার বা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা এখানে নেই, এবং জয় করবার জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীর বাংলা-পড়তে-পারা মানুষজন। জাতীয় পর্যায়ে প্রচলিত সংবাদমাধ্যমগুলি যখন নেমে পড়ল, তখন চোখ খুলল বাংলার বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠী ও ব্যক্তির। সামান্য লগ্নিই এবার সুযোগ করে দিতে পারে অনেকটাই এমন মনোভাবের সংক্রমণ দেখা দিল। এ নিবন্ধের সময়কালে, আমরা এই পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছি।
পড়ুন, ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের বাঙালি সম্পাদক নিয়ে প্রতীকের লেখা
গত এক দেড় দশকের মধ্যে প্রযুক্তি ও যোগাযোগের দ্রুত, প্রায় বৈপ্লবিক বদল ঘটেছে। বদল ঘটেছে দৃষ্টিভঙ্গিরও। একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। কিছুদিন আগে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বাংলা ডিজিটাল শাখায় এক বিভাগীয় কপিরাইটার (বিজ্ঞাপনজগতের এই শব্দবন্ধই এখন সংবাদমাধ্যমেও চলছে) নেবার প্রয়োজন হয়। বাংলা ডিজিটালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি সুপটু কারও খোঁজ করছিলেন। ঝাড়াই-বাছাইয়ে সময় বয়ে যাচ্ছিল। সে সময়ে বাংলার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে তাঁর দিল্লিস্থ উপরওয়ালা চোখ খুলে দেন। তিনি যা বলেছিলেন, সংক্ষেপে তা এরকম, 'খুব উজ্জ্বল মেধাবীরা আজকাল সাংবাদিকতা করতে আসে না। ফলে খুব সক্ষম কাউকে খুঁজে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।' দূরদর্শী উচ্চপদস্থ রাজধানীবাসীর এই ধারণাটি চোখে আঙুল দিয়ে এখনকার সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতার চেহারা স্পষ্ট করে দেয়।
উপরের উদাহরণটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এখন বাংলায় বেশ কয়েকটি জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমের পোর্টাল চালু রয়েছে। সেই পোর্টালগুলির অধিকাংশেরই, সামান্য ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রকাশিত খবর থাকে ভুলে ভরা। ভুলগুলি নানাবিধ। সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে বানান ভুল। এ প্রসঙ্গে আরেক দিল্লিবাসী উচ্চপদস্থের সাংগঠনিক স্তরে কথিত বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত বাংলা রূপ এইরকম, এখন আর কেউ বানানের নির্ভুলতা বিষয়ে মনোযোগী নয়। অত নির্ভুলতা খবরের কাগজে প্রত্যাশিত হতে পারে, পোর্টালে নয়। এ বক্তব্য কেবল বাংলাকেন্দ্রিক না কি সমস্ত আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রেই এই প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা, তা অবশ্য অজ্ঞাত। তবে এই ভাবনাপদ্ধতির বিষময় ফল কেবল বানান ভুলে সীমাবদ্ধ নেই, বাক্যের গঠন ভুল হচ্ছে, সহজবোধ্য এবং অর্থপূর্ণ বাক্যের সমাহার লোপাট হতে থাকছে। যা চলছে, তার উদাহরণ হিসেবে এ লেখাতে কিছু ছবি পেশ করা হল। ছবিতে সংবাদগোষ্ঠীগুলির নাম আবডালে রাখা হল, কারণ, এটিই চলমান ধারা, এসব ভুলসমূহ কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীতে আবদ্ধ নেই।
যেমন, মধুরেণ সমাপয়েৎ। একটি সংবাদ পোর্টালের শিরোনামে মধুরেণ লিখতে ণ-এর জায়গায় ন ব্যবহৃত হয়েছে। এবং, তা ভুল হেডলাইন যে প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে, তা নিয়ে হয় কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত, অথবা তাঁরা একে সংশোধনযোগ্য ভুল বলে মনেও করেন না। মোদ্দা কথা ভুল শিরোনাম বিষয়ে সম্পাদনার অনুপস্থিতি। এবং এটি মোটেও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্যপাল ধনখড় কলকাতায় এসে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সে খবর সম্পর্কে লেখা হয়েছে, হেডলাইনের নিচেই, যা সারাংশ বা হাইলাইট বা এক্সসার্পট নামে পরিচিত, ধনখড় বুদ্ধদেবকে 'স্টেসম্যান' হিসেবে অভিহিত করেন। এখানে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে। যিনি লিখছেন, তাঁর টাইপোগ্রাফিকাল এরর হয়েছে বা আরও মারাত্মক, তিনি স্টেটসম্যান শব্দটির উচ্চারণ-বানান যথাযথ জানেন না, ফলে ভুল লিখে ফেলেছেন, এবং সম্পাদনাবিহীন ভাবেই তা প্রকাশিত হচ্ছে। একটা মোটামুটি চলনসই ইংরেজি জানাটা যে কোনও আঞ্চলিক ভাষার সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় বিভাগ বা ডেস্কবিভাগের কর্মীর পক্ষে ন্যূনতম প্রয়োজনীয়। তার কারণ, পিটিআই হোক বা এএনআই বা অন্য যে কোনও সংবাদসংস্থার খবর ইংরেজিতেই লিখিত হয়, ডেস্ক তথা সম্পাদকীয়বিভাগের কর্মীদের সেখান থেকে সরাসরি অনুবাদ করতে হয়। কয়েকদিন আগে এক সম্পাদক খেদ করছিলেন, তাঁর কর্মস্থলে এক কর্মী Pak Based Terrorist-এর বঙ্গানুবাদ করেছেন ‘পাক অধ্যুষিত জঙ্গি’।
বাংলা ভাষায় গত কয়েক বছরে অন্তত পাঁচটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বাংলা পোর্টাল চালু হয়েছে, যাদের বাংলা ভাষায় অন্য কোনও কর্মকাণ্ড নেই। পাইপলাইনে রয়েছে সম্ভবত আরও কয়েকটি। এই পোর্টালগুলির মধ্যে অনেকেই এখানে আলাদা কোনও রিপোর্টার নিয়োগ করেনি, তাদের সর্বভারতীয় স্তরের রিপোর্টারদের কলকাতাস্থ কর্মীদের দিয়েই সে ফাঁক বোজানোর চেষ্টা করা হয়। এরকম ক্ষেত্রে প্রায় সব খবরই মূলত ইংরেজি ভাষা থেকেই অনুবাদ করতে হয় পোর্টাল কর্মীদের। এবং, কোনও এক সামাজিক কারণে ইংরেজি ও বাংলা, দুই ভাষায় মোটামুটি দক্ষ কর্মীর সংখ্যা কম। সম্ভবত, ওই দিল্লিস্থ উপরওয়ালার বক্তব্যই ঠিক, যে তুলনায় বেশি সক্ষম তেমন কেউই আর এ পেশায় আসেন না, ফলে মোটামুটি মধ্যমানের কর্মীদের দিয়েই কাজ চালাতে হয়।
মধ্যমানের ও তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ কর্মী নেওয়ার একটা বিশেষ সুবিধাও রয়েছে। তা কম খরচসাপেক্ষ। একটু কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করা এবং নির্ভুল হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা না-রাখা, যে প্রসঙ্গ একটু আগে উল্লিখিত, অনেকটা খরচ বাঁচায়। এর ফলে অত্যুচ্চপদস্থ উপরওয়ালা, কম লগ্নির মাধ্যমে আরও একটি আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দিয়ে তস্য উপরওয়ালার সুনজরে থাকতে পারেন এবং নিজস্ব উচ্চ বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার রক্ষাকবচ বজায় রাখতে পারেন। আরও একটি দৈনন্দিন সুবিধাও এর ফলে ঘটে। কম দক্ষতাসম্পন্নরা অনেক বেশি ইয়েস ম্যান গোত্রের হয়ে থাকেন। তাঁদের তর্ক করার প্রবণতা কম থাকে, যে তর্ক একদা নিউজরুমকে জাগরূক রাখত। এখন তার জায়গায় এসেছে ঘাড় গুঁজে কাজ করা কর্মিদল।
আমরা ভুলের প্রসঙ্গে ফিরি। কথা হচ্ছিল ইংরেজি থেকে বাংলা করার প্রয়োজনীয়তা এসব ক্ষেত্রে বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু দক্ষতার অভাবে সংক্ষেপিত করতে গিয়ে খবরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ পড়ে যাচ্ছে, এমনকী ভুলও হয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও। যেমন এক পোর্টালে ইংরেজি থেকে অনুবাদ করতে গিয়ে একটু জটিল এক বাক্যে মিঠুনপুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের ইতিহাস ভুল বর্ণিত হয়ে পড়েছে। ভুলটা আরও স্পষ্ট চোখে পড়ে ওই প্রতিবেদনের নিচেই ইংরেজি সূত্রটি দেওয়া থাকায়। সে লিংকে ক্লিক করে ইংরেজিতে প্রতিবেদন পড়লেই বিষয়টি স্পষ্ট নজরে আসবে। ইংরেজি বোঝার ভুল অন্যতম হলেও, ইংরেজিয়ানার প্রভাবও বাংলা ভাষার সংবাদমাধ্যমে কম নেই। একটি পুরনো ও বাঙালির ভরসাস্থল সংবাদমাধ্যমের পোর্টালে একটি চলচ্চি্ত্র সমালোচনা প্রকশিত হয়েছিল। তার ছত্রে ছত্রে ইংরেজি শব্দের বাহুল্য দেখে যে কোনও বাংলা সংবাদকর্মী কিঞ্চিৎ বিড়ম্বিত বোধ করবেন সম্ভবত।
“... এই প্রমিসিং পরিচালকের উপর আস্থা ও প্রত্যাশা দুইই বেশি ছিল।
… জীবনের আখ্যান অনেকটাই ন্যারেশন ও ফ্ল্যাশব্যাকে বলে দেওয়া হয়।
… ভরসার মানুষদের বেইমানি করার চমকগুলি স্ক্রিপ্টে যথাযথ প্রয়োগ করেছেন পরিচালক।
অপরাধীদের ব্যাকস্টোরিগুলি শুধু ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি।
… আধো আধো বুলিতে …. স্ক্রিনে এলেই একরাশ ভাললাগা ছড়িয়ে দিয়েছে।
… একজ়িকিউশনে ফাঁকফোকর থাকলেও মন ভাল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এ ছবি।”
এ যেন বাংলা বলে প্রচারিত এফএম চ্যানেলগুলির জকিদের ভাষা।
পড়তে থাকুন, বই সম্পাদনা নিয়ে সৌম্যেন পালের লেখা
এরই সঙ্গে মিলে যাচ্ছে আরেক ধরনের অপটুতা এবং স্রোতে গা ভাসানো। স্রোতে গা ভাসানোর সবচেয়ে বড় উদাহরণ, সীমান্ত সংঘর্ষের সময়ে ঘটে থাকে। সংবাদমাধ্যম কথা বলতে থাকে কেবল রাষ্ট্রের ভাষায়, রাষ্ট্রের নির্ধারিত বুলিই হয়ে ওঠে তাদের বুলি। এমন নয় যে এ ব্যাপারে সর্বদা উপর থেকে নির্দেশ থাকে। রাষ্ট্রবাদী সাংবাদিকতাই যে আরব্ধ এবং সঠিক, সেই বুলিই যে গ্রহণীয়, এমন ভাবনা চলে আসে চিন্তার দৈন্য থেকে। যে কারণে দেশের সেনার মৃত্যুতে শহিদ ও যুযুধান অপর পক্ষের নিহত সম্পর্কে খতম বা নিকেশ জাতীয় শব্দ ব্যবহৃত হতে থাকে এমনকি লিবারাল বলে পরিচিত জাতীয় সংবাদমাধ্যমের বাংলা ভাষ্যে। এরই সঙ্গে থাকে অগ্রপশ্চাত বিবেচনাহীন ভাবে সেনসেশন তৈরি করার চেষ্টা। এর একটা উদাহরণ, সরাসরি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত ও প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি সংবাদ। ইংরেজি যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে, দেখা যাচ্ছে, তার শিরোনাম “China removes domes, minarets from famous mosque; bars visitors”। এই সংবাদগোষ্ঠী রাষ্ট্রবাদী সংবাদমাধ্যম হিসেবে পরিচিত নয়। তাদের বাংলা মাধ্যমে প্রকাশিত এই সংবাদের শিরোনাম দেখে, ফলত, আঁতকে উঠতে হয়। সেখানে লেখা “ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন চিনে, প্রাচীন মসজিদের গম্বুজ গুঁড়িয়ে দিল জিনপিং প্রশাসন”।
বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষার সংবাদমাধ্যমের সম্পাদনার যে ঘটমান বর্তমান, তার ক্ষয়িষ্ণুতার ক্রমপরম্পরা রয়েছে। যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে অর্থনীতি ও রাজনীতি। বাংলা ভাষার সংবাদ ও সম্পাদনার সেসব দিক নিয়ে কোনও একদিন নিশ্চিতভাবেই ইতিহাস লিখিত হবে। সে ইতিহাসে এই পর্যায়টি একেবারেই যে উজ্জ্বল দেখাবে না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আদর্শ সংবাদ সম্পাদক ছেঁড়া জামা পরবেন, এমনটা কাঙ্ক্ষিত নয়, কিন্তু তিনি সম্পাদনাক্ষমও হবেন, কেবল ম্যানেজার নন, এটুকু অন্তত প্রত্যাশিত। বাংলা ভাষার সংবাদের ততটুকু অন্তত প্রাপ্য। শিরদাঁড়ার কথা না হয় আপাতত মুলতুবি থাক।
গ্রাফিক্স- মনোনীতা কাঁড়ার
চাবুক লেখা। মিডিয়াবাজীর যেন এক্স রে রিপোর্ট।
দীর্ঘদিন তথ্য সাংবাদিকতার পেশায় আছি, সাপ্তাহিক, দৈনিকে অনেক বছর কলম ঘষে নিউজ পোর্টাল হয়ে এখন টিভিতে। তাই লেখাটি আরও বেশী স্পর্শ করলো।
এপারেও প্রিন্ট, অনলাইন, টিভি মিডিয়ার হাল একই, অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে! :/
ভালো লাগলো।
তবে ভালো সাংবাদিকতা বলতে যা যা কলকাতায় , বাংলায়, ভারতে যা বোঝানো হয়েছে দীর্ঘদিন বা বিদেশেও দীর্ঘদিন, সেটার একটা কাটাছেঁড়াও দরকার।
আরেকটা কথা, মধ্যমান টা আমার মনে হয় না সমস্যা। ইনডাস্ট্রি হঠাৎ এক্সপ্যান্ড করলে, বা নতুন তৈরী হওয়ার সময়ে যখন স্কিল জিনিসটা ই তৈরী হচ্ছে, মান তার পরে হবে, তখন নানা লোক আসবে। ফিল্ম আগে এসেছে ন পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট আগে এসেছে?
বানান ভুল টা, বাংরেজি ব্যাবহার টাকে প্রধান সিম্টম ধরা হয়তো যায়, আমার সেটা বড় সিমটম মনে হয় না, সমস্যা শিড়দাঁড়া র বা সেটা না থাকার। বানান ব হাতের লেখা ভালো হলেই সংক্ষেপে "গ তে দ" থাকবে এটা না ধরাই ভালো :-))) এবং গ তে দ জিনিসটা ফ্র্যাংকলি সাংবাদিক রয়ালটির মধ্যে স্বল্পলভ্য। সব পেশাতেই তাই, তবে এই পেশাতেই এইটেই মেন স্কিল।
নিউজ যখন ভিউজ হয়ে গেল, তখন ওপরতলার পলিসিমেকার ও এক্সিকিউটিভদের ছাড়া 'সাংবাদিক'দের আর তেমন গুরুত্ব রইল না। কয়েকজন করণিক রাইটার হলেই যথেষ্ট। খবরের কাগজ তো উঠেই যাবে, পোর্টাল থাকবে আর তার ভাষা হবে ক্রমশ এফএমধর্মী। বাংলার মধ্যে মাঝেমাঝে রোমান হরফে এসেমেস-ভাষা এলেও আশ্চর্য হব না।
তবে এর মধ্যে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী পোর্টালও এসেছে। বঙ্গদর্শন। প্রহর। আরও আসুক।
অনেকদিন পরে গুরুতে এমন একজনের লেখা পড়লাম যিনি বিষয়টি খুব ভালো তো জানেনই, উপরন্তু শব্দ-বাক্যগঠন-বানান নিয়ে সতত যত্নশীল। কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি সংবাদপত্রের সম্পাদনার বিষয়ে। আমার অভিজ্ঞতার পুঁজি মূলত আনন্দবাজার-কেন্দ্রিক, যদিও তাকে সব বাংলা সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা যায়। এবং নিউজ পোর্টাল নিয়ে কিছু বলবই না।
সম্পাদকরা ইদানীং আমন্ত্রিত লেখকদের কাছে বিষয়ভিত্তিক, যা তাঁদের কাছে সেই মুহূর্তের ইন থিং, লেখা চান। মানে সোজা বাংলায় ফরমায়েশি লেখা। কারণ কাগজের একটি নির্দিষ্ট স্থান তাঁদের ভরাট করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে লেখক যদি নিজে যথেষ্ট সৎ, পরিশ্রমী ও খুঁতখুঁতে না হয়ে সেই ফরমায়েশি লেখা তাঁদের পাঠান, তবে তাঁরা সেসব চোখ বুঁজে ছেপে দেন। সেখানে তথ্যের কোনও ভুল থাকল কি না, উদ্ধৃতি ঠিক আছে কি না, রেফারেন্স ঠিক আছে কি না - কোনও কিছু নিয়েই তাঁরা মাথা ঘামান না। ভাবটা এমন - পাবলিক চাইছে, লেখা এসে গেছে, ছেপে দাও। এতে যে প্রকাশিত লেখাটিতে মারাত্মক ভুল থাকার আশঙ্কা আছে, সেসব দেখার বা ভাবার দায় বা সময় তাদের নেই।
একটা সামান্য উদাহরণ দিই। কলকাতার আনন্দবাজার সম্পাদকীয় দফতর থেকে শুক্রবার রাত ৯ টা নাগাদ আমাকে ৩৭০ ধারা নিয়ে একটি লেখা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ফোন করা হয়। লেখাটি জমা দিতে বলা হয় শনিবার সন্ধে ৬টার মধ্যে, কারণ রবিবার সকালে ওটি ছাপা হবে! এই হচ্ছে হাল। এবং আসলে হাঁড়ির হাল।
অধিকাংশ সাংবাদিক আজকাল আর স্পটে গিয়ে সাংবাদিকতা করেন না। পেটোয়া বা পরিচিত চার-পাঁচজনকে ফোন করে দায় মিটিয়ে কপি ধরাতে বসে পড়েন! আর বাক্যগঠন এবং বানান ইদানীং এত বিসদৃশ যে কহতব্য নয়। এই সেদিনই আনন্দবাজারের চারের পাতায় রাধানাথ শিকদারের ছবি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। মোট কথা সর্বত্র একটা গয়ংগচ্ছ দায়সারা ভাব। বলা বাহুল্য, বাংলা পোর্টালগুলির হাল আরও খারাপ।
আমি কালকেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা পোর্টালের একটি খবর পড়ছিলাম। আদ্যোপান্ত ক্লিকবেট। বড় একটা ছবি দিয়ে, এদিক ওদিক ভাটিয়ে আসল তথ্য বা খবরটা একটি শব্দে সারা।
এখনকার সাংবাদিকরা রাজনীতিকদের পাইকারিহারে 'দাদা' 'দিদি' বলে সম্বোধন করেন কেন? কাছের মানুষ হয়ে সুবিধে আদায় করার আশায়? এসব কি পেশাদারিত্বের অঙ্গ?
আসলে এই আলোচনা টা ততক্ষন কিসুই জমবে না, যতক্ষন না ভালো সাংবাদিকতা বলতে আমরা কি বুঝি সেটা ক্লিয়ার না হয়।
লেখাগুলো ভাল, কিন্ত ইমপ্রেশনিস্টিক। জ্বর নিয়ে কথা হচ্ছে , কিন্ত রোগটা কী , ডেঙ্গু না টিবি? সেটা নিয়ে কথা হোক।
কথা হোক ওয়ার্কিঙ জার্নাল জার্নালিস্ট আইন, তাতে সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা এবং কীভাবে স্টেপ বাই স্টেপ তা ছিনিয়ে নেওয়া হল তা নিয়ে। নইলে চর্চা আগে সাংবাদিকতা কত ভাল ছিল আর আজ? জাতীয় হা হুতাশে আটকে যাবে।
শিরদাঁড়া কীভাবে নুইয়ে দেয়া গেল তা অজানা থেকে যাবে।
বড় অটো করেকশন ও টাইপো !
এবং অপিনিয়ন ডাইভার্সিটি , অ্যাকোমোডেশন, ছাপার যত্ন র বাইরে রয়েছে, হার্ড নিউজ রিপোর্টিং। টেলিভিসন টা পার্মানেন্ট জাপানী তেল হয়ে যাওয়ায় বাংলা কাগজের একটা সুযোগ ছিল, সেটা হল অ্যানালিসিস ফিরিয়ে আনা। আর আরেকটা ছিল হার্ড রিপোর্ট্স, (এটা তো মূলতঃ সরকারের স্টেটমেন্ট) ফ্যাক্ট চেকিং, পুরোনো ইনভেস্টিগেশন এর নতুন ফলো আপ, লিগাল বা কনস্টিটিউশনাল বিষয়ে র রিপোর্টিং , কোন গল্প বিশেষ নেই। সব ই পোলিটিকাল রিপোর্টিং e গেলে যা হয়। এবং সেটা যে অর্থে তাপস সাংবাদিকতার মান নির্নয় করছেন, তার ভালো সময়ে এ ও এই সমস্যা ছিল, এসবের কোন গল্প ছিল না।
এই প্রসংগে এলের অপিনিয়ন রাইটিং এর অভিজ্ঞতা এমনিতে আসে না, তবে ঐ , তাপস ছাপার যত্নের কথ বলেছে বলে প্রসংগ টা এসেছে।
দ্যাখা যাচ্ছে, মিঃ ট্যাপোশ ড্যাশ এর কাছে আমাদের দাবীর কোন অন্ত নেই, লিক্খতে পারলে তিনি ই পারবেন। :-)))))
খুব ভাল পর্যালোচনা। সমৃদ্ধ হলাম।
আশাপূর্ণা দেবীর একটা গল্পে পড়েছিলাম অমুকের রাঁধুনি রান্নার সবই বোঝেন, কেবল যেটা জানেন না সেটা হল রাঁধতে হলে হলে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য জিনিসের সাথে যেটা লাগে সেটা হল একটু সময়। খাবারের বানানোর মত খবর লিখতে আর তা পরিবেশন করতেও একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। বানান ভুল, বাক্যগঠনে ভ্রান্তি - এগুলোর পিছনে এই নিবন্ধে উল্লেখ করা বিষয়গুলোর পাশাপাশি সময়ও একটা কারণ হতে পারে। ট্রেন্ডিং-এ থাকার তাড়নায় যদি প্রতি মুহূর্তে তাড়া দেওয়া হয় কপি ছাড়ার জন্য, তবে ভুল অবশ্যম্ভাবী। তবে সে ভুল চোখে পড়ার পরেই তা ঠিক করে দেওয়া না হলে বুঝতে হবে অন্য কোনও সমস্যা আছে। অর্থাৎ, ও সব ঠিক ভুলে কর্তৃপক্ষের কিছুই আসে যায় না।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্তের সাথে আমি একমত যে বাংলা কাগজগুলো বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্ব দিতে পারত, দেয়নি। টেলিভিশনে সরাসরি খেলা দেখানো শুরু হওয়ার ফলে লোকে ফলাফল আগেই জেনে যায়, ফলে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ধারা পালটে গেছে। সেখানে বিশ্লেষণই এখন মুখ্য (এবং সেলিব্রিটি খেলোয়াড়দের নিয়ে গসিপ)। এই ধারাটা অন্য জায়গাতেও আসতে পারত বেশি করে। তাতে এক শ্রেণীর পাঠক (যাঁরা হেডলাইনের বাইরেও এডিট পেজের লেখাগুলো পড়েন) খুশি হতেন।
আনন্দবাজারে প্রকাশিত ব্যক্তি বা স্থান নামের বানান নিয়ে অনেক কথাবার্তা টিপ্পনী হয়েছে। তার বাইরে আর একটা কথা মনে এল। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সিএজি-কে তাঁরা "কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল" লিখে থাকেন বহু বছর ধরে, "কম্পট্রোলার" নয়।