এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • গাণ্ডু- একটি বঙ্গীয় ওভারডোজ

    প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সিনেমা | ০৪ জুলাই ২০১১ | ১১৭০ বার পঠিত
  • নীরদ সি. "আত্মঘাতী বাঙালী' বইটিতে তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গীতে বলেছিলেন "বাঙালীর জাতীয় যৌবনের প্রভাতের কথা দূরে থাকুক, সন্ধ্যার কথাও কেহ বলে না। শুধু উহাই আত্মঘাতী হইবার একটা লক্ষণ'। সেই হিসাবে "গান্ডু' সম্পর্কে কিছু কিলোবাইট খরচা না করলে শুধু যে কৃপণ হিসাবে বদনাম রটার সম্ভাবনা থাকবে তাই নয়, নীরদীয় উবাচ অনুযায়ী ব্রহ্মপাপী হয়ে থাকতে হবে। এখন প্রশ্ন একটাই - "গান্ডু' কি বাংলা সিনেমার ভোরের সূর্য নাকি মধ্যরাত্রির অন্ধকার? সে উত্তর দেওয়ার আগে কিছু প্রাককথন নিতান্তই দরকার।

    আমেরিকার ইস্ট-কোস্টের শহরগুলিতে যখন সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছিল, তখন দেশজ প্রতিবেদন গুলিতে সিনেমাটির রিভিউয়ের থেকেও বেশি প্রাধান্য পাচ্ছিল দর্শকদের সিনেমা চলাকালীন প্রতিক্রিয়া লেখাগুলি পড়লে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে "গান্ডু', "ক্যানিবাল হলোকস্ট' বা "অ্যান্টিক্রাইস্ট' এর বঙ্গীয় অবতার বিশেষ। সেই সব প্রতিবেদনে আবার ফলাও করে বলাও হল যে পরিচালক নিজেই চেয়েছেন সিনেমার মাঝপথেই দর্শকরা যেন উঠে চলে যান এবং বলাই বাহুল্য দর্শকরা সেই মনোবাঞ্ছা পূরণে ত্রুটি রাখছেন না। সিয়াটল ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এরকম অফ-স্ক্রিন নাটক দেখার বিশেষ আশা অবশ্য প্রথম থেকেই ছিল না। তার বড় কারন শহরটার নাম সিয়াটল - আমেরিকার যে কোনো শহরের থেকে এখানকার বাসিন্দাদের গড়পড়তা সহনশক্তি অনেক বেশি সহনশীলতা দেখানোটাই বলা যেতে পারে এখানকার সংস্কৃতি। ভারতীয় কি বাঙালী দর্শকদের ওপরও সেই সংস্কৃতি কিছুটা প্রভাব বিস্তার করবে এমনটাই কামনীয়। কিন্তু আশ্চর্য লাগছিল সাউথ এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটির এই ব্যাপারে বিশেষ তাপউত্তাপ না দেখে। অল্টারনেটিভ সিনেমাপ্রেমী এই সোসাইটি বাংলা চলচ্চিত্রর বিশেষ পৃষ্ঠপোষক, এতটাই যে অল্টারনেটিভ বাংলা সিনেমার অভাবে "অনুরণন' কেও এনাদের নিজস্ব ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয় সেখানে "গান্ডু' জাতীয় সিনেমা তো লুফে নেওয়ার কথা। "স্ট্রেঞ্জার' বা "সিয়াটল উইকলি'র মতন স্থানীয় যে কাগজগুলি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষ্যে ঢাউস ঢাউস সংস্করন বার করে সেখানেও গান্ডু নিয়ে আলাদা কিছু মাতামাতি দেখিনি। স্বভাবতই স্ক্রিনিংয়ের দিন অডিটোরিয়ামে বিশেষ কিছু ভিড় নেই, সিনেমা শুরু হওয়ার অল্প কিছু আগে থেকে অবশ্য ইতিউতি ভারতীয় মুখ চোখে পড়তে লাগল এবং ঘটনাচক্রে কানে এসে পড়া টুকরোটাকরা কথায় আরো বোঝা গেল তাঁদের অধিকাংশই বাঙালী। আমার যতদূর ধারণা এনাদের অধিকাংশই "গান্ডু'র খোঁজ পেয়েছিলেন ফেস্টিভ্যাল ফ্লায়ার এবং ওয়েবসাইটে চোখ বুলোতে গিয়ে। যাই হোক, মোদ্দা কথা হল দিনটি শুরু হয়েছিল নিতান্ত সাধারণ ভাবেই। প্রথম ঝটকাটি এল যখন ফেস্টিভ্যালের প্রতিনিধি সিনেমাটি নিয়ে বলতে এসে জানালেন "গান্ডু'র নির্বাচন "ইউন্যানিমাস', একটিও ভোট বিপক্ষে যায়নি। কারণ? এহেন "অ্যান্টি-বলিউড' সিনেমা তাঁরা নাকি জীবৎকালে দেখেননি।

    যাঁরা আলোচ্য সিনেমাটি দেখেননি তাঁরাও নিশ্চয় স্বীকার করবেন এখানে হয় সত্য নয় শিক্ষার অপলাপ আছে - এবং "গান্ডু'র সিনেমাটিক এক্সেলেন্স কে বিন্দুমাত্র অস্বীকার না করেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে ফেস্টিভ্যালের পর ফেস্টিভ্যালে "গান্ডু' যে সাফল্য পেয়েছে, তার অনেকটাই হয়ত এই ভুল প্রতিপাদ্যর ওপর নির্ভর করে। কিছু সিনেমা হয় পরিচালকের, কিছু সিনেমা হয় অভিনেতার আবার কিছু সিনেমায় পরিচালনা-অভিনয় কে ছাপিয়ে গিয়ে শিল্পগত বা প্রযুক্তিগত আঙ্গিকের জয়জয়কার ঘটে। "গান্ডু'তে শৈল্পিক আঙ্গিকের অনবদ্যতা থাকলেও এটি আদ্যন্তভাবে পরিচালক কৌশিক ওরফে কিউ এর সিনেমা। যে ধরনের এক্সপেরিমেন্ট কিউ করেছেন, তা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে বিরল। এবং এই প্রচেষ্টাকে যথাযথ সাধুবাদ জানাতে গেলে যে জিনিসটি সর্বাগ্রে করা উচিত সেটি হল যেকোনোরকম প্রোপ্যাগান্ডা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। আর তাই হয়ত "গান্ডু'র সঠিক মূল্যায়ণ করতে বসলে "সানডান্স' কি "বার্লিন' ভুলে যাওয়া উচিত।

    এক্সপেরিমেন্টশন কিউ করেছেন বিস্তর - তার কিছু দাঁড়িয়েছে, কিছু দাঁড়ায়নি। সিনেম্যাটিক মোটিফ থেকে শুরু করে সাবটাইটল প্রোজেকশন, গানের কথা থেকে শুরু করে পপ কালচার বিষয়ে জনমানসিকতার কোলাজ নির্মাণ - পরীক্ষানিরীক্ষার বহর ও বিস্তৃতি চমকে দেওয়ার মতন। এটি একাধারে অ্যাডভান্টেজ ও ডিসঅ্যাডভান্টেজ। সিনেমার প্রথমার্দ্ধটিতে গল্প বা চিত্র্যনাট্যর তুলনায় অনেক বেশি চোখে পড়ে এই পরীক্ষানিরীক্ষা গুলিই। স্বভাবতই মনে হতে পারে শেষমেশ হাতে রইল শুধুই গিমিক। কিন্তু এখানেই তো অডিয়েন্সের ধৈর্য্যের পরীক্ষা, আর সেটা পরিচালকের থেকে বেশী ভাল কে জানবেন? তাই বিশ্বাস করতে মন চায় না যে পরিচালক বলেছেন তিনিও চান দর্শকরা হল ছেড়ে বেরিয়ে যাক - তাতে ক্ষতি দু'পক্ষেরই। দ্বিতীয়ার্দ্ধ অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ, গল্প এবং চিত্র্যনাট্যর (যদিও ইম্প্রোভাইজেশন প্রচুর এবং উইকিকে প্রামাণ্য রেফারেন্স ধরলে বলতে হয় সিনেমাটির ফর্ম্যাল চিত্র্যনাট্য বলেই কিছু নেই) সঙ্গে অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যরূপায়ণের একটি সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়, এক্সপেরিমেন্টশন গুলিও শুধু চমক দেওয়ার জন্য এহেন ভ্রান্তিটিও দূর হয়। এই প্রসঙ্গে যে প্রশ্নটি প্রথমেই মনে আসা স্বাভাবিক সেটি হল - গপ্পটা কি? এমন কি বিশেষত্ব আছে এই গল্পে যা নিয়ে এত হইচই? "গান্ডু' (অনুব্রত) কলকাতা শহরতলির এক "ওয়ান্নাবি' র‌্যাপার যে বিশ্বাস করে জীবনের যে কোনো ছোটবড় কথা নিয়েই র‌্যাপ তৈরি হতে পারে। র‌্যাপ তার জীবনের হতাশাপ্রকাশের একটি মাধ্যমও বটে। পরিবার বলতে শুধুই মা(কমলিকা), যার সঙ্গে সম্পর্কটি ঠিক ঘৃণা বা ভালোবাসা নামক বিশেষ্য দিয়ে বোঝান যাবে না, হয়ত অবজ্ঞা শব্দটি বেশি যুক্তিযুক্ত। আর বন্ধু বলতে "রিক্‌শা' (জয়রাজ) যে ব্রুস লীকে দেবতা মানে, রিক্‌শা চালিয়ে রীতিমতন কায়িক পরিশ্রমে জীবন গুজরান করে এবং সময়-অসময়ে গান্ডুকে হেরোইন সুলভ নেশার সামগ্রীর জোগান দেয়। নেশার ব্যাপারে আমাদের র‌্যাপারের পকেটমানি আসে মায়ের প্রেমিক "দাস বাবু'র(শিলাজিৎ)ওয়ালেট থেকে টাকা সরিয়ে। নেশা(সে হেরোইনই হোক কিংবা লটারীর টিকিট কিংবা রিই অভিনীত দেহোপজীবিনী চরিত্রটি) এ সিনেমায় একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ সাবপ্লট। বাস্তব জীবনের আশা-হতাশা, চাহিদা-পাপবোধ সব কিছুই শুধু ওপরের ভোল্‌টা পাল্টে ফিরে আসে নেশার পরাবাস্তব দুনিয়ায় এবং এক সময়ে বাস্তব ও পরাবাস্তবের সীমারেখাটাই ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে।

    শুধু গল্পের মান দিয়ে বিচার করলে এ ছায়াছবি অসামান্য নয়, প্লটের নভেলটির দিক দিয়েও হয়ত নতুন নয়। ভারতীয় বা বাঙালী দর্শকদের কাছে এই হতাশাজনিত "অ্যাঙ্গস্ট' নতুন কিছু নয়। সেই সত্তর দশকেই অমিতাভ বচ্চন হোক বা ধৃতিমান, বেশ সাফল্যের সঙ্গে এই হতাশা, এই ক্ষোভ ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এই ২০০৪-এই পার্থ সেনগুপ্ত বানিয়েছেন "হাওয়া আনে দে', সেখানেও উপজীব্য বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে (কথা প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে ঐ সিনেমাটি তেও কিন্তু মূল চরিত্রটি তার মায়ের সঙ্গে থাকে এবং তার একমাত্র না হলেও প্রধান বন্ধু গ্যারাজ মেকানিক)। কিন্তু নতুন আঙ্গিকে সেই একই বিষয় পরিবেশনে কিউ যা মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন তার প্রশংসা করতেই হয়। কখনোসখনো (অবশ্য পৌন:পুনিকতার ব্যাপারটি অনেকাংশেই দর্শকের গ্রহণক্ষমতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে) "ওভার দ্য টপ' দৃশ্যায়ন অবশ্যই এসেছে, কিন্তু সেটাকে পরিচালকের সিনেমাটিক লাইসেন্সে হিসাবে নি:সন্দেহে ছাড় দেওয়া যায় ভুলে গেলে চলবে না "মাত্রুভূমি'র মতন সিনেমা দেখিয়েছে কেন অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে অনেক সময় "ওভার দ্য টপ' সিন্‌ পরিচালকের ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ব-চলচ্চিত্র কে রেফারেন্স পয়েন্ট ধরলে এটাও বলা উচিত "নাইন সংস্‌' বা "বেইজে-মই' যদি মূলধারার চলচ্চিত্র হিসাবে গণ্য হতে পারে তবে "গান্ডু' কেন নয়? শব্দার্থ থেকে শুরু করে দৃশ্যায়ণ, যাই কনসিডার করুন না কেন এরকম অনেক সিনেমার পরিপ্রেক্ষিতেই "গান্ডু' নিছকই একটি সৎ প্রচেষ্টা। সিনেমাটিতে যদি একটি জিনিসের নিতান্তই অভাব থাকে, সেটি হল হিপোক্রেসি। ক'জন ভারতীয় পরিচালকের নাম এই মুহূর্তে আপনার মনে আসছে যাঁরা "ইডিপাস কমপ্লেক্স' কে নেহাতই সাইকোঅ্যানালিসিসে প্রাপ্ত ফল হিসাবে না দেখিয়ে যথাযথ দৃশ্যনির্মাণে উদ্যোগী হবেন? কতজন দেখাতে পারবেন প্রেমহীন শারীরিক সম্পর্কের জান্তব তান্ডব? কারা রূপোলী পর্দায় শারীরিক মিলন দেখানোর আগে দেখিয়ে উঠতে পারেন শরীরের প্রতিটি রন্ধ্র জুড়ে খানাতল্লাশি? কিউ পেরেছেন। এই সব কিছুই ভীষন ভাবে বাস্তব, এর কোনো কিছুই কিন্তু বিকৃতকামের পরিচায়ক নয় আর তাই পরিচালকের সাধুবাদ প্রাপ্য, বাস্তবিক-ই। চরিত্রগুলিও কিন্তু আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নয় হতে পারে এহেন চরিত্ররা আমাদের "কমপ্যাশিবিলিটি' বা "কম্ফর্ট' বৃত্তের মধ্যে পড়ে না কিন্তু আমরা এদেরকে চিনি, চিনতে না চাইলেও চিনি। পরিচালকের এই আপোষহীন মানসিকতাটি অন্তত সিনেফিলিকদের যথার্থ আনন্দ দেবে কারণ গুচ্ছ গুচ্ছ দেশী-বিদেশী সিনেমার মধ্য থেকে ভালো জিনিসটিকে চিনে বার করার একটা আলাদা আনন্দ আছে এবং এই আপোষহীনতা সেখানে সিনেফিলিকদের বড় সহায় হবে বলেই আমার ধারণা।

    কিছু প্রশ্ন থেকে যায় সেগুলো হয়ত সমালোচনার থেকেও বেশি করে আলোচনার দিকটি তুলে ধরে, আর আলোচনাটা নিতান্তই হওয়া উচিত। প্রথমত - র‌্যাপ যদি সত্যিই জীবনের যে কোনো কথা দিয়ে তৈরি হতে পারে তবে কেন এত দু অক্ষর, চার অক্ষরের প্রাধান্য? "ফাক্‌ দ্য পোলিস' জাতীয় পশ্চিমি "প্রোটেস্ট' গানও গানের কথা প্রসঙ্গে এতটাই উদ্ধত কিন্তু তার একটা বেসিস আছে, ইতিহাস আছে "গান্ডু'তে কিন্তু সেরকম কিছু নেই। থাকতেই হবে এরকম মাথার দিব্যিও কেউ দেয়নি কিন্তু শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্যটা একটু ধোঁয়াটে থেকে যায়। এ জাতীয় গানে তো কথাই ঈশ্বর বা ডি.এন.এ, সুতরাং আরাধনা বলুন বা গবেষণা তার একটা প্রামাণ্য রূপ দেখতে পাওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত - পরিচালক বস্তুনিষ্ঠভাবে কোনো তত্ত্ব বা দর্শন তুলে ধরতে চেয়েছেন কিনা সে নিয়েও একটু বিভ্রান্তি থাকে। প্রোট্যাগনিস্টের বাহ্যিক রূপটি বারেবারেই "নিহিলিসম' জাতীয় মতাদর্শের দিকে ইংগিত দেয় অথচ সিনেমাটিতে "মর‌্যাল ডিলেমা'ও ঘুরেফিরে এসেছে।তাই মনে হয় কোথাও যেন একটা পিছুটান রয়েই যায়, সেটা ব্যক্তিগত বিভ্রান্তি না সামাজিক দায়বদ্ধতা? আর শেষে একটা নিছক পর্যবেক্ষণ - কিউ কোলাজ তৈরি করতে ভালবাসেন, সম্ভাব্য দর্শক বা বিশেষজ্ঞদের মতামতের টুকরো কোলাজ ঢুকিয়ে কখনো তৈরি করেন একটু চোরাগোপ্তা হাস্যরস, কখনো বা শুধুই দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার পথে একটা "ট্র্যানসিশন্‌ পিস্‌' ওনার "লে পচা' তেও এই স্টাইলটি দেখেছি। এখনও পর্যন্ত খারাপ লাগেনি, ক্লান্তিও আসেনি তবে ভবিষৎ এর কথা বলতে পারি না।

    পরিচালকের কথা বলতে গিয়ে বাকি কলাকুশলীদের কথা বলা হয়নি। জয়রাজ এবং রিই মুগ্ধ করেছেন, কমলিকা-ও তাঁর চরিত্র-চিত্রায়ণে যথেষ্ট সাবলীল। কিন্তু অনুব্রতই কিছুটা হতাশ করেন। এক্সপ্রেশনের পরিপ্রক্ষিতে বলা যেতেই পারে যে অনুব্রত এখনও পরিচালক নির্ভরশীল।অভিনেতার নিজস্ব ইম্প্রোভাইজেশন বা পার্সনাল টাচ্‌টুকু এখনো অধরাই থেকে গেল। "প্রতিদ্বন্দ্বী' তে ধৃতিমান-ও কিছুটা গতে বাঁধা এক্সপ্রেশন নিয়ে কাজ করেছিলেন কিন্তু চরিত্রটির যে সফিস্টিকেটেডনেস ওনাকে সেই সুযোগ দিয়েছিল সেরকম মোড়ক গান্ডুর জন্য প্রযোজ্য নয়। আর তাই ওনার থেকে চাহিদাটা একটু বেশিই ছিল।

    এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে ভারতে বসে আমরা এ সিনেমা দেখার সুযোগ পাব না। কিন্তু যদি কখনো সে সুযোগ পান তবে নিশ্চয় দেখবেন এবং ভালো-খারাপ যাই লাগুক, মাঝপথে উঠে যাওয়ার ভুলটি করবেন না। দু:সাহস সবার থাকে না, থাকলেও অধিকাংশ সময় স্থান-কাল-পাত্র বিচার করতে করতেই উদ্যম শেষ হয়ে যায়। কৌশিক সেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠেছেন, আর সেই সুবাদে আপনাদের সিনেমাটা দেখার থেকে বড় পুরস্কার ওঁর আর কিছু হতে পারে না।

    ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে বেরিয়ে দেখছিলাম ইভ্যালুয়েশনের কাগজ হাতে নিয়ে অধিকাংশই হতভম্ব মুখে দাঁড়িয়ে একজন তাঁর সঙ্গিনীকে জিজ্ঞাসাই করে ফেললেন "এই সিনেমা কে কি রেটিং দিই বলো তো?' ভাল লাগছিল, সত্যিই ভাল লাগছিল। অন্তত হতভম্ব তো করতে পেরেছে, নিছক পর্নোগ্রাফি কি আঁতলামি কিন্তু বোর্‌ করে বা বিরক্তি জাগায়। আর হ্যঁ¡, কড়া নজর রেখেছিলাম - মাঝপথে কেউ উঠে যান নি। অস্ফূটে বিড়বিড় করে গেছেন, গালে হাত দিয়ে বসে থেকেছেন, মাথাটাকে দুপাশে নাড়িয়ে চলেছেন কিন্তু ওঠার নামগন্ধ করেন নি। সিয়াটল থেকেও কিউ খালি হাতে ফেরেন নি, স্পেশ্যাল জুরি প্রাইজ পেয়েছেন কিন্তু "গান্ডু'র সব থেকে বড় পাওনা - মানুষ দেখেছেন। তাই কিউ যদি নিজে বারণ করেও থাকেন, মোটেই শুনবেন না ওঁর কথা। guts কি কেবল ওনার একারই আছে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৪ জুলাই ২০১১ | ১১৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • mrinmoy nandi | ***:*** | ০৬ নভেম্বর ২০১২ ০৬:৫৮89207
  • 'গান্ডু' নিয়ে সমালোচনা ভালো লাগলো। শুধু Rap -র ব্যবহারের বিষয়টা আরো আলোচনা দাবি করে বলে মনে হয়। কলকাতায় বসে বাংলায় সিনেমা বানাতে গিয়ে Rap -র ভাবনা কি করে মাথায় এলো সেটা ভাববার। বাংলা সঙ্গীত ও সনস্কৃতি-তে Rap নামক আমেরিকান স্টাইল-র প্রতিবাদ কোনদিন ছিল কি বা তার কোনো প্রয়োজন হয়েছে কি ? সমস্ত প্রতিবাদেরই একটা কোনো কারন বা ইতিহাস থাকে। কলকাতায় বসে কোন বাঙালি যুবক কেন Rapper হবে তার উত্তর পাওয়া যায় না। তবে Rap মুখরতা 'গান্ডু'-কে যে আরো গ্লোবাল (আমেরিকান) করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন