এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভিডিও গুরু

  • শিক্ষার এই দুর্গতি কেন? দায়িত্ব কার?

    ভিডিও গুরু
    ভিডিও গুরু | ০২ আগস্ট ২০২৪ | ১২২৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)



  • দেখুন, শুনুন, গ্রাহক হোন এবং শেয়ার করুন


    ভিডিও এবং অনুসন্ধানঃ গুরুচণ্ডা৯, উপস্থাপনাঃ সহেলি চৌধুরি

    রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে হাহাকার প্রায়ই নজরে পড়ে। অথচ পিছনের এর বড় চিত্রটা নিয়ে কাউকেই বলতে শোনা যায়না। ২০২৩ সালে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর একটা ঘোষণ নিয়ে খুব হইচই হয়েছিল। ঘোষণা করা হয়েছিল, রাজ্যে আট হাজারেরও বেশি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হবে, কারণ ছাত্র নেই। ত্রিপুরাতেও অবিকল একই রকম একটা ঘোষণা করা হয়েছে এই বছরই। সেখানে ৫০০ রও বেশি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হতে চলেছে বলে খবর। এর আগে ২০১৮-তে বিজেপি সরকারে এসে ছাত্র সংখ্যা কম রয়েছে রাজ্যের এমন মোট ৯৬১টি বিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। সেই সঙ্গে আরও ৮০০ সরকারি বিদ্যালয়কে বেসরকারি হাতে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। এপর্যন্ত মোট কত বিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে এবং কটিকে বেসরকারি হাতে দেওয়া হয়েছে তার কোনও স্পষ্ট যদিও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু কারণটা দুই রাজ্যেই একই। ছাত্ররা আর রাজ্যসরকারের সরকারি বা আধাসরকারি স্কুলে পড়তে যাচ্ছেনা।

    কোথায় যাচ্ছে এই ছাত্ররা? পড়াশুনো ছেড়ে দিচ্ছে, নাকি অন্য কোথাও যাচ্ছে? এই নিয়ে আলাদা করে পরিসংখ্যান নেই। তবে যেটা চোখে দেখা যায়, যে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্কুল এবং ইংরিজি মাধ্যম স্কুল। ত্রিপুরায় ১২৫ টা রাজ্যসরকারি স্কুলকে তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যজ্যোতি প্রকল্পের হাতে। বহু স্কুলকে ইংরিজি মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যজ্যোতি প্রকল্পের খবর তেমন নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় বোর্ডের রমরমা যথেষ্ট। সিবিএসইর সাইট অনুযায়ী, সিবিএসই অনুমোদিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫০। আইসিএসইর সাইটে পরিসংখ্যান নেই, বেসরকারি হিসেবে মোটামুটি ৪০০। এছাড়াও আছে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়। সব মিলিয়ে মোটামুটি হাজার খানেক কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্কুল তো আছেই। এদের সংখ্যা বছর-বছর বেড়েছে এবং বাড়ছে। ফলে আন্দাজ করার যথেষ্ট কারণ আছে, রাজ্য সরকারি স্কুলগুলো থেকে কেন্দ্রীয় বোর্ডে কিছু পরিমান ছাত্র তো যাচ্ছেই।

    এই দুটো বোর্ডের মধ্যে তফাত কী? নানারকম তফাত আছে। সবচেয়ে বড় তফাত দৃষ্টিভঙ্গীতে। রাজ্য সরকার আধাসরকারি স্কুলকে অনুমোদন দেয় বিনামূল্যে। বামফ্রন্ট জমানা থেকেই শিক্ষকদের মাইনে জোগায় নির্দিষ্ট স্কেলে। ছাত্রদের ফি দিতে হয়না। নিয়োগও, অন্তত খাতায়-কলমে হবার কথা সুষমভাবে। সেটা ইদানিং হচ্ছেনা বলেই চারদিকে হইচই হচ্ছে। কিন্তু তাতে করে এইটা মিথ্যে হয়ে যায়না, যে, এখনও রাজ্যসরকার স্কুলগুলোর সমস্ত খরচা বহন করে। অভিভাবকদের পকেট থেকে তোলেনা।

    উল্টোদিকে কেন্দ্রীয় বোর্ডের পুরো ব্যাপারটা যদি দেখেন, এর মধ্যে "শিক্ষা হল অধিকার" বা মানকল্যাণের কোনো জায়গা নেই। সিবিএসইর নীতিমালা যদি দেখেন, সেখানে কেন্দ্রীয় বোর্ড একটি অর্থকরী প্রতিষ্ঠান, তারা অনুমোদনের বিনিময়ে পয়সা নেয়। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, পয়সা নেয়, দেয়না। সিবিএসইর সাইট অনুযায়ী স্কুল কে খুলতে এবং চালাতে পারে, সোসাইটি, ট্রাস্ট বা কোম্পানিরা। স্কুলের স্বীকৃতির জন্য বোর্ডকে তাদের টাকা দিতে হবে। অনুমোদনের জন্য দিতে হবে আড়াই লক্ষ টাকা। পুনর্নবীকরণের খরচ আলাদা।

    স্কুল এই পয়সা কোথা থেকে পায়? পায়, কারণ তারাও একটি অর্থকরী প্রতিষ্ঠান। তারা সম্পূর্ণ বেসরকারি। তারা টাকা তোলে ছাত্রদের কাছ থেকে। তার থেকে শিক্ষকদের মাইনে দেয়। নিয়োগও করে তারা এবং মাইনেও তারাই ঠিক করে। সিবিএসইর নীতিমালায় লেখা আছে, পে-স্কেল যথোপযুক্ত সরকারি পে-স্কেলের সমতূল্য হওয়া উচিত। কিন্তু বাধ্যবাধকতা কিছু নেই, মাইনে ঠিক কী হবে, তার আইনও নেই, কিছু উপদেশ আছে। ফলে কত মাইনে হবে, সেটা কোম্পানির ইচ্ছে। এইসব স্কুলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কত মাইনে পান, তা জানা ন গেলেও, তেমন কিছু কাড়াকাড়ি নেই দেখে বোঝা যায়, মাইনে বা নিরাপত্তা খুব উঁচুমানের কিছু না। কত কম খরচে স্কুল চালিয়ে লাভ করা যায়, সেটাই লক্ষ্য। এক কথায় পুরোটাই ব্যবসা। কত ফি হবে, কত মাইনে হবে, সবশুদ্ধ। কোথাও কোনো নির্দিষ্টতা নেই। হ্যাঁ, কোম্পানির মালিক লাভের গুড় পকেটে নিয়ে বাড়ি যেতে পারেননা, তার কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু তাঁরা সপার্ষদ ডিরেক্টর হয়ে মোটা টাকা মাইনে নিলে সেটা সম্পূর্ণ বৈধ।

    তাহলে সব মিলিয়ে যা দাঁড়ায়, অভিভাবকদের বেশি টাকা খরচা করে কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে হয়, যেখানে শিক্ষা একটা ব্যবসা ছাড়া আর কিছু না। পাঠান কেন তাঁরা? একটা কারণ হতে পারে, পড়াশুনোর মান ভালো। আরেকটা কারণ হল, ভালো ইংরিজি শেখানো হয়, কারণ চাকরির বাজারে, যে কোনো কারণেই হোক, ইংরিজির মূল্য খুব বেশি বলে দাবী করা হয়। এই দুটোর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে পড়াশুনো যদি শিক্ষকদের মানের সঙ্গে সমানুপাতিক হয়, তবে ব্যাপারটা ঠিক হবার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ রাজ্যসরকারি স্কুলে শিক্ষকদের একটা নির্দিষ্ট যোগ্যতামান পেরিয়ে আসতে হয়। কেন্দ্রীয় বোর্ডে কিছু যোগ্যতামানের কথা বলা আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা বা পদ্ধতি নেই। নিয়োগ পুরোটাই স্কুলের কোম্পানির হাতে। তাঁরা স্কুলের সুনাম রক্ষা করতে চাইলে বেশি যোগ্যতার শিক্ষক নিয়োগ করবেন, তার জন্য ছাত্রদের মাইনেও বেশি দিতে হবে। আর যদি জলদি কিছু মুনাফা করে নিতে হয়, তবে শিক্ষকদের যোগ্যতাও তথৈবচ হবে। এই কারণেই কেন্দ্রীয় বোর্ডের মধ্যেও নামী-স্কুল আর অনামী-স্কুল নামের একটা বিরাট বিভাজন তৈরি হয়েছে। দুই জায়গাতেই পয়সা দিয়ে পড়তে হয়। নামী স্কুলের খরচা বেশি, ভর্তি হবার জন্য লাইন পড়ে, ভর্তি হওয়া কঠিন। উল্টোদিকে কেন্দ্রীয় বোর্ডের অনামী স্কুলে খরচা একটু কম, কিন্তু মানের কোনো নিশ্চয়তা নেই।

    এই অবস্থায়, রাজ্য সরকারি স্কুলগুলোর খুব ভালো করার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছেনা। সত্যি সত্যিই ছাত্রদের একটা অংশ এই বিনাখরচের জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা ছেড়ে বেশি খরচের কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্কুলে যাচ্ছে। কারণ, অন্যান্য বহু জায়গার মতোই কার্যত সরকারি ব্যবস্থাটাকে খোঁড়া করে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এর একটা অতি সামান্য অংশ। এর বাইরেও অজস্র ব্যাপার আছে। পরিকাঠামোর উপর আছে ভীষণ অযত্ন। শিক্ষকদের কাজ এবং তার ফলাফল, এর কোনো মূল্যায়নের ব্যাপারই নেই। ছাত্র-শিক্ষকের একটা নির্দিষ্ট অনুপাত থাকার কথা, সে নিয়ে নিয়ে কেউ চিন্তিত বলেও মনে হয়না। এই সার্বিক অযত্নে যেটা হচ্ছে, মধ্যবিত্ত বাড়ির বাবা-মারা, যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাঁরা সরকারি স্কুল থেকে ক্রমশ মুখ ফেরাচ্ছেন, আর সরকারি স্কুলগুলো ভরে যাচ্ছে কেবলমাত্র প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ায়, যাদের অন্য কোথাও যাবার সঙ্গতি নেই। প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের দরকার যত্ন, কিন্তু শিক্ষকদের উপর কোনো মূল্যায়নের খাঁড়া নেই, পরিকাঠামোর ঠিক-ঠিকানা নেই, এবং শিক্ষকের তুলনায় ছাত্রের সংখ্যা বিপুল। ফলে শিক্ষক এবং ছাত্র উভয় পক্ষই ক্রমশ উৎসাহ হারাচ্ছে, স্কুলগুলো হয়ে যাচ্ছে ফাঁকা। এসব নিয়ে আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই, কিন্তু শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়।

    সঙ্গে আরও একটা জিনিস পরিষ্কার হয়, যে, এ জিনিস এমনি এমনি হয়না। প্রমাণ করা যাবেনা, কিন্তু সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, যে, সরকারি এবং স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমশ বন্ধ করে দেবার উদ্দেশ্যেই এই পুরো জিনিসটা হচ্ছে, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে। রাজ্য সরকারি স্কুলগুলোকে ভালো না করলে এক এক করে ছাত্রের অভাবে তারা বন্ধ হবে, এবং বলা যাবে, যে, ছাত্র হচ্ছেনা তাই বন্ধ করলাম। আর তাদের জায়গা নেবে কেন্দ্রীয় বোর্ডের বেসরকারি স্কুলগুলো। তাদেরও মানের কোনো ঠিকঠিকানা থাকবে এমন না, কিন্তু সরকারের ঘাড় থেকে বোঝা তো নামবে।

    এই ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীয় বোর্ডের আধিপত্যের একটা দিক হল বেসরকারীকরণ এবং শিক্ষাকে মুনাফাবাজদের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু অন্য আরেকটা দিকও আছে। সংবিধানে শিক্ষাকে প্রাথমিকভাবে রাজ্য তালিকায় রাখা হয়েছিল, তার কারণ, ভারত একটা বিরাট দেশ। ভারত একটা যুক্তরাষ্ট্র। তার নানা ভাষা, নানা জাতি, নানা সংস্কৃতি। কেউ কারো থেকে বেশি বা কম না। প্রতিটা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে রক্ষা যাতে করা যায়, তাই শিক্ষা পুরোটাই ছিল রাজ্যের হাতে। জরুরি অবস্থার সময় থেকে ক্রমাগত সেটা সরিয়ে কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই কেন্দ্রীয় শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিভূমিটাই হল একরকম করে হিন্দি এবং ইংরিজির একচেটিয়া আধিপত্য। কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্কুলগুলোতে হিন্দি পড়েনা এরকম ছাত্র খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে এই বোর্ডের প্রভাব যত বাড়বে, বাড়তে থাকবে এবং থাকছে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের আধিপত্য। ধ্বংস হবে ভাষা, সংস্কৃতি, যেটা এখন প্রতি মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই, শিক্ষাপ্রেমী, ভাষাপ্রেমী মানুষ যাঁরা আছেন, যাঁরা নিজের ভাষা এবং সংস্কৃতির উত্তরাধিকারকে রক্ষা করতে চান, বেসরকারি হলেই পরিষেবা ভালো হবে, এরকম কোনো আপ্তবাক্যে বিশ্বাস করেননা, প্রত্যেকেরই এই মুহূর্তে একটাই দাবী হওয় উচিত, যে, রাজ্য সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে খোঁড়া করে দেওয়া যাবেনা। তাকে উন্নত এবং উন্নততর করতে হবে। কারণ হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান, সত্যিই কোনো বিকল্প নয়।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভিডিও গুরু | ০২ আগস্ট ২০২৪ | ১২২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Argha Bagchi | ০২ আগস্ট ২০২৪ ১৮:০০535611
  • সমস্যা গুরুতর। সমাধান কোন পথে? 
  • r2h | 134.238.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৩540476
  • কী মুশকিল। স্কুল শিক্ষা বিষয়ে রাজ্য কেন্দ্র নিয়ন্ত্রন নিয়ে একটা লেখায় ত্রিপুরার বিদ্যাজ্যোতি বিড়ম্বনার খবরের লিংক রাখছিলাম, কিন্তু সেটা যে কোন লেখা আর কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না। প্রাসঙ্গিক কয়েকটা পেলাম কিন্তু তার কোনটাতেই আমার কমেন্ট নেই, আরেকটু খুঁজে দেখবো।
    আপাতত এখানে রাখি।




    এই লিংকটাও থাক। এইসংক্রান্ত সবগুলিকে একত্রে রাখা যায়। https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=29204
  • r2h | 134.238.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:০৭540480
  • ওহো থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ ঃ)
  • r2h | 165.***.*** | ০৭ মে ২০২৫ ২৩:২০731158
  • দেশী গোবংশ রক্ষন সম্বর্ধন সমিতি
  • আমি সোমা বলছি | 2a0b:f4c2::***:*** | ০৮ মে ২০২৫ ০৭:১২731160
  • "প্রমাণ করা যাবেনা, কিন্তু সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, যে, সরকারি এবং স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমশ বন্ধ করে দেবার উদ্দেশ্যেই এই পুরো জিনিসটা হচ্ছে, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে। রাজ্য সরকারি স্কুলগুলোকে ভালো না করলে এক এক করে ছাত্রের অভাবে তারা বন্ধ হবে, এবং বলা যাবে, যে, ছাত্র হচ্ছেনা তাই বন্ধ করলাম। আর তাদের জায়গা নেবে কেন্দ্রীয় বোর্ডের বেসরকারি স্কুলগুলো। তাদেরও মানের কোনো ঠিকঠিকানা থাকবে এমন না, কিন্তু সরকারের ঘাড় থেকে বোঝা তো নামবে।"
  • যদুবাবু | ০৮ মে ২০২৫ ০৭:৪৮731161
  • এই টই-টা তুলে ভালো করলে হুতোদা। আমি ভাবছিলাম অসর (ASER)-এর ২০২৪ এর রিপোর্ট-টা কোথাও একটা তুলে রাখব, অন্তত পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি গ্রাফ/ম্যাপ/টেবল ইত্যাদি। এখানে সেগুলোই রাখলাম পরপর। (পুরো রিপোর্ট, ডেটা, আরও বিবিধ পেপার ইত্যাদি সব-ই পাওয়া যাচ্ছে ওদের সাইটে - https://asercentre.org/)। 

    ১) সার্ভে-পদ্ধতি, টাইমলাইন ইত্যাদি। এখানে বলে রাখা ভালো যে অসরের লক্ষ্য গ্রামাঞ্চল, রুরাল ইন্ডিয়া। The Annual Status of Education Report (ASER) is a large-scale, citizen-led household survey conducted across rural India to assess children's enrollment status and foundational learning levels in reading and arithmetic.



    ২) গণিতে বাংলার গ্রামের ছেলেমেয়েদের দক্ষতা। টেবলের কোন নম্বরের ব্যাখ্যা কী নিচেই দেওয়া, তবু, ক্লাস এইটের প্রায় ২০% শিশু বিয়োগ করতে পারে, ভাগ করতে পারে না। 



    ৩) এক-ই রকম, কিন্তু এটা পড়ার দক্ষতা। ক্লাস এইটের ১৫.৩% স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান বাংলা টেক্সট পড়তে পারে কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড টু বাংলা পড়তে পারে না। স্ট্যান্ডার্ড টু আর ওয়ানের বাংলা নমুনা নিচে দিলাম। 



    স্ট্যাণ্ডার্ড টু - "রবিবার ছুটির দিন ছিল। পাড়ার ছেলেরা গ্রামের মাঠে মিলিত হল। দুটি দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলতে শুরু করল। রামু কাকা রেফারি হল। তাদের খেলা দেখতে গ্রামের সকলে ভিড় জমাল। এক দল অন্য দলকে একটা গোল দিল। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলা সম্পন্ন করল। ছেলেদের খেলা দেখে সকলে খুব খুশি হল। বিজয়ী দলকে তারা উপহার দিল। সবাই মিলে খুশিতে নাচগান করল।"

    স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান - "রাধার মামার বাড়ি বীরভূম। বাড়ির পাশে কোপাই নদী। নদীর পারে মেলা বসে। মেলা দেখতে অনেক লোক আসে।"

    ৪) ডিজিট্যাল সাক্ষরতার শতকরা হিসেব অবশ্য বেশ ভালোই (মতান্তরে, বেশ আশঙ্কাজনক)। ১৪-১৬-র প্রায় ৮৫% শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারে। 

     
    কিন্তু তার পরের টেবিলে আবার দেখা যাচ্ছে, যারা পারে তাদের মধ্যে শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার অনেক কম, তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়াতে আসাযাওয়া বেশি। এটাও হয়তো সামান্য উদ্বেগের কারণ? (এই নিয়ে ব্যক্তিগত সূত্রে দু-একটি ভয়ের গল্প জানি, তবে এখানে অবান্তর।)  



    ৫) এ ছাড়া, সারা ভারতের নিরীখে বাংলার অবস্থান কোথায় সেটাও সুন্দর দেওয়া আছে। এ আর ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। তবে বাংলা স্মার্টফোন ব্যবহারের দিক থেকে যতটা উপরে (নাকি নিচে?), অঙ্ক বা বাংলা/অক্ষরপরিচয়ে মোটেই তেমন না। অবশ্য সে আর আশ্চর্য কী? শিক্ষা-স্বাস্থ্য অন্তত এই দুটি ক্ষেত্রে আগামীতে আমাদের রাজ্যের অধঃপতন ছাড়া কিছু নেই। কলকাতার ইংরেজিনবিশ স্কুলের একঝাঁক উজ্জ্বল ছাত্রছাত্রীর সাফল্যের খতিয়ানের তলায় সেই অন্ধকার চাপা পড়বে কী না সে অবশ্য আমি জানি না। 
     






    (পুঃ এই সংস্থা, প্রথম এডুকেশন ফাউণ্ডেশনের কেউ গুরুচণ্ডা৯ ব্যবহার করেন কি না জানি না। করলে এই সুযোগে আপনাদের কর্মকাণ্ডকে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সাধুবাদ জানিয়ে গেলাম।) 
  • অপু | 2409:40e0:1054:c602:8000::***:*** | ১৬ মে ২০২৫ ০৯:০৮731369
  • পশ্চিমবগ সরকার 
    পশ্চিমবঙ্গ সরকার 
    পশ্চিমবঙ্গ সরকার 
     
    কঈ শক?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন