
শুনলাম, মেদিনীপুরের সভায় না কি মোদীজি বলেছেন, "আগে বিদেশ থেকে বাঁশ আমদানি করতে হত, এখন আর হয় না"। সে ভালো কথা। সেই কথা শুনে আমার এক বন্ধু বলল, "বাঁশ নিজেই এখন বিদেশে যায়।" সেও ভালো কথা। বাঁশের মত বস্তু ইমপোর্ট করার থেকে এক্সপোর্ট করাই বেহতর।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম, বাঁশ আসলে ঘাস, তৃণ পর্যায়ে পড়ে। পরে শুনলাম, সেই ঘাসে না কি ফুলও ফোটে। তবে বাঁশগাছে ফুল ফোটা মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। বাঁশগাছের ফুল মহামারী ও দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে। তবে দোষটা আসলে ফুলের নয়, সমস্যা তৈরী করে সেই ফুলের বীজ খেতে ভিড় জমানো ইঁদুরেরা। বাঁশফুলের পুষ্টিকর বীজ খেয়ে তারা দ্রুতহারে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই খাবার শেষ হতে সময় লাগে না কেন না, একবার ফুল ফোটা হয়ে গেলে, বাঁশগাছগুলো মরে যায়। তখন পাল কে পাল ইঁদুর বাধ্য হয়ে আক্রমণ করে আশেপাশের গ্রামগুলোকে। নি:শেষ করে দেয় জমানো খাদ্যশস্য, ছারখার করে ঘরদোর। ইঁদুরের উৎপাতে ছড়িয়ে পড়ে মহামারী। মিজোরামে এই ঘটনাকে বলে মওতম দুর্ভিক্ষ। বাঁশের ফুলের এহেন প্রভাবের উল্লেখ প্রাচীন সাহিত্যে, এমনকি মহাভারতেও রয়েছে। কথিত, জয়দ্রথ যখন দ্রৌপদীকে হরণ করেছিলেন, তখন দ্রৌপদী তাকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিলেন, "বাঁশগাছে ফুল এলে যেমন সব ধ্বংস হয়ে যায়, তুমিও তেমনই ধ্বংস হবে।"
অর্থাৎ, সব ঘাসফুল হাওয়াতে মাথা দোলানো শিশুর মত নিরীহ নয়। কেউ কেউ ধ্বংসও ডেকে আনে।
ঠিক যেমন সব আলিঙ্গনও নিরীহ, নির্বিষ নয়। "বাঁহো মে চলে আও" বলে ডাকলেই যে তাকে প্রেমের আহ্বান বলে ভাবতে হবে এমন নয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অবসানে, ধৃতরাষ্ট্র ভীমকে মরণ আলিঙ্গনে জাপটে ধরতে চেয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধিতে ভীমসেন সে যাত্রায় বেঁচে যান। কিন্তু আফজল খান বাঁচতে পারেন নি এমনই এক মরণ আলিঙ্গন থেকে। শিবাজী আলিঙ্গনপাশে আবদ্ধ আফজলকে বাঘনখ দিয়ে হত্যা করেন। তাই আলিঙ্গন, বিশেষত হঠাৎ আলিঙ্গন থেকে সাবধান থাকাই ভালো। আশা করা যায় ভবিষ্যতের বিদেশ যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর পার্লামেন্টের অভিজ্ঞতা মাথায় রাখবেন এবং অনিচ্ছুক রাষ্ট্রপ্রধানদের যখন তখন জাপটে ধরবেন না।
ঘরের কাছেই শুনলাম আরো দুটো খবর আছে। এক, মা-মাটি-মানুষের সরকার শহীদ দিবস উপলক্ষে জমায়েত হওয়া ভিন জেলার লোকেদের বিরিয়ানি খাইয়েছে। সাধু, সাধু। দুই, বসবাসযোগ্য হোস্টেল আর স্বচ্ছ প্রশাসনের দাবিতে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের অনশন দশদিন পার করে ফেলেছে। একজন ছাত্রকে এমার্জেন্সিতে নিয়ে যেতে হয়েছে। হোস্টেল সমস্যা যেকোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুব সাধারন সমস্যা। সেই সমস্যা কার জেদে বা কাদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে এত বড় আকার নিল, সেই প্রশ্নটা ওঠা খুব জরুরী। কেন এইটুকু সাধারন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কলেজ কতৃপক্ষকে অদৃশ্য "হায়ার অথরিটির" মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সেটাও আশ্চর্যের।
আশ্চর্যের কি আর শেষ আছে? সুপ্রীম কোর্টে ৩৭৭ নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানি শেষ হয়েছে। তাতে ৩৭৭-এর পক্ষের কে একজন সুপ্রীম কোর্টে যেন বলেছেন শুনলাম, ৩৭৭ উঠে গেলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কেননা, সেক্ষেত্রে না কি জওয়ানরা সীমাসুরক্ষার কথা ভুলে নিজেদের মধ্যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। হুম, গুরুতর সমস্যা। সীমা সুরক্ষার কথা ভুলে যাওয়া কোনও কাজের কথা নয়। অন্তত বুলাদি তাই শিখিয়েছিলেন।
এ সবের বাইরে গত সপ্তাহে আরও কিছু সাধারন ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজন গনপিটুনিতে মারা গেছেন, কোথায় যেন কাকে গেস্ট হাউসে আটকে রেখে চারদিনে চল্লিশবার ধর্ষণ করা হয়েছে, টাকা নীচে ও পেট্রল ওপরে উঠে চলেছে, কিছু চাষী এদিক ওদিক আত্মহত্যা করেছে। আর ও হ্যাঁ, শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নবীর প্রথম সিনেমা রিলিজ করেছে।
দেখা যাক, বংশের ধারা বজায় থাকে কি না।
Mithu Majumder | unkwn.***.*** | ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৫:৪৭85523
Mahua | unkwn.***.*** | ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৭:২৫85522