আপনাকে এই আমার জানা ফুরাবে না
গোড়াতেই নিজেদেরকে প্রশ্ন করা যায় – এরকম হিংস্রতা, রক্তপাত, অবান্তর মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস আমাদের কাছে খুব অজানা বা অপ্রত্যাশিত ছিল কী? ওপরে যে ছবিটি আছে সেরকম ছবি তো আমরা যখন তখন দেখে থাকি। আমাদের স্নায়ু বা চিন্তার ওপরে আদৌ কোন ছাপ ফেলে কি? আমরা তো সইয়ে নিয়েছি। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মনন, অনুভূতি বা, একটু বাড়িয়ে বললে, আমাদের সুকুমার প্রবৃত্তি এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। Numbing of our collective consciousness – আমাদের সামগ্রিক চেতনার বিবশতা। কিন্তু এগুলো তো একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে, প্রতি মুহূর্তে সমস্ত রকমের মিডিয়ার অপার মহিমায়, ছাপার অক্ষরে এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় (যদি কখনো কিছু হয়ে থাকে) আমরা একটি অসংবেদনশীল পিণ্ডে পরিণত হচ্ছি? যদি সমাজতত্ত্ব এবং আমাদের পারিবারিক জীবনের প্রেক্ষিতে দেখি তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিকারক যে ফলাফল জন্ম নিচ্ছে তার চরিত্র হল শিশু থেকে কিশোর এবং সদ্য যৌবনে পা-রাখা (বাংলা শুধু নয়, সমগ্র ভারত জুড়েই) প্রজন্ম একে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিচ্ছে। এমনকি হিংস্রতার মাঝে আমোদও পাচ্ছে।
তর্কযোগ্যভাবে, ভারত ভূখণ্ডের ‘imagined communities’ ঢোঁড়াই চরিত মানস-এর ‘মহাৎমাজীর’ মাকড়সার জালের মত পলকা সুতোর জালে বাঁধা হয় তিনটি প্রধান শক্তির উপরে ভর করে – (১) হিন্দি সিনেমা (একেবারে হালে আমরা ‘পাঠান’ বা ‘আদিপুরুষ’-এর মত ফিল্মের পৌরুষ তো জমিয়ে উপভোগ করেছি), (২) ক্রিকেট, এবং (৩) হিন্দি ভাষা। এরকম পৌরুষেরই আঞ্চলিক সংস্করণ নীচের ছবিটি। বর্ধমানের কোন এক গ্রামে নির্বাচনী হিংসার তোড়ে একটি ছেলে বিরোধী শিবিরের আরেকটি ছেলের কান কামড়ে ছিঁড়ে নেয়। ছেঁড়া কান নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে আসে ছেলেটি ও তার আত্মীয়স্বজন।
এতেই বা আমাদের কি এসে গেল? খুব হেলদোল হল কি? প্রসঙ্গত মনে পড়ে, ইরাক যুদ্ধের সময়ে (২০০৩) আমরা বিভিন্ন মিসাইলের যে জ্বলজ্বলে চিত্র দেখেছিলাম সেগুলোকে ডোনা হারাওয়ে আমাদের ‘spectacle of violence’-কে সইয়ে নেবার একটি উদাহরণ হিসেবে দেখেছিলেন। আরেকটি উদাহরণ, সাদ্দাম হুসেইনের ফাঁসিকে (২০০৪) প্রিন্স চার্লসের অভিষেকের মত করে দীর্ঘ সময় ধরে টিভিতে দেখানো হয়েছিল। এবং আমরা দেদার উপভোগ করেছিলাম। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ ফাঁসির ভিডিও শুদ্ধ প্রতিবেদন ছিল “An Overnight Death Watch, and Then Images of the Hangman’s Noose” ( ডিসেম্বর ৩১, ২০০৬ )।
নির্বাচনের আগে রাজ্য পুলিশ নাকি কেন্দ্রীয় বাহিনী এ বিতর্কও গড়িয়েছে হাই কোর্ট অব্দি। পরবর্তী বিতর্ক ছিল নির্বাচন কমিশনের (রাজ্য) ভূমিকা নিয়ে। সঙ্গে জুড়েছিল রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকার একদিকে, অন্যদিকে রাজ্যপাল বনাম রাজ্য নির্বাচনী কমিশনার। এছাড়া শাসক দল এবং বিরোধী পক্ষ নিয়ে বিতর্কের ওপরে বিতর্ক, তার ওপরে আরও বিতর্ক তো দিনের পর দিন আমাদের “ঘণ্টাখানেক” ঊর্ধ্বস্থ করে রেখেছিল। আমরা মনে মনে গালি দিয়েছি হয়তো, আবার তেমনি শিশুদের কার্টুন দেখার মত এ সব বিতর্ক ক্রমাগত গিলেছি ও তো! সহজ কথা হল, আমরা জানতাম – পঞ্চায়েত নির্বাচন মানে একটি প্রাণঘাতী যুদ্ধ। এ যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে – অস্ত্র সজ্জায়, টাকার থলিতে, রণকৌশল তৈরিতে, প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং বুথের জন্য উপযুক্ত ‘সেনা’ নির্বাচনে। আমাদের নীরব মৌনতা একে সমর্থন জুগিয়েছে। আমাদের সম্মিলিত কোন প্রশ্ন ছিলনা – এত রক্ত কেন? প্রশ্ন ছিল না – এত হিংসা কেন? এত টাকা কেন?
পঞ্চায়েত রাজের বাকী ইতিহাস
১৯৪৭-এর ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে ভারত রাষ্ট্রের একটি ফেডারেল কাঠামো জন্ম নিল, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হল। কিন্তু একেবারে গ্রামস্তর পর্যন্ত এ বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেনি। ১৯৪১ সালে লেখা ঢোঁড়াই চরিত মানস-এও উপনিবেশিক দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের টুকরো বর্ণনা আছে, রয়েছে পঞ্চায়েতেরও – “গাঁয়ে আছে কেবল ‘পঞ্চায়তি’ আর ‘পঞ্চায়তি’ আর ‘পঞ্চায়তি’।” ঢোঁড়াই-এ “অদ্ভুত জিনিস এই ‘বোট’”-এর ভেতরের ছবিও আছে –
“মাগনা কচ্চুরি পাও খেয়ে নিও
মাগনা গাড়ি পাও চড়ে নিও
পয়সা পাও বটু্যাতে ভরে নিও
কিন্তু মন্দিরে গিয়ে বদলে যেও ভাই হামারা
‘সাদা বাক্ষ’ মহাৎমাজীর সাদা বাক্স!”
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ১৯৩৪-এ যা ছিল মানবিক, ২০২৩-এ সেটাই আলাদিনের দৈত্য। গান্ধীর রাজনৈতিক চিন্তার অনেক সমস্যা থাকলেও যে বিষয়টিকে তিনি কংগ্রেস সহ সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের সামনে এনেছিলেন তা হল “গ্রাম স্বরাজ্য”-র ধারণা। রবীন্দ্রনাথের বিস্তৃত ভুবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে ছিল গ্রাম সভা এবং গ্রামের মানুষ। এদের স্থানিকভাবে উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, এ কথা আমার মত পল্লবগ্রাহিতা নিয়েও যারা রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন, তারাও এ খবর রাখেন আশা করি।
যাহোক, সংবিধানের ৩৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী একটি রাজ্যের উন্নয়নের ক্ষমতা রাজ্যের হাতে দেওয়া হল। ৪০ নম্বর ধারায় স্পষ্টতই উল্লেখ করা হল – “the State shall take steps to organise village panchayats and endow them with such powers and authority as may be necessary to enable them to function as units of self-government.” কিন্তু নতুন ভারত গড়ে তোলার জন্য যখন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়া শুরু হল তখন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হল আমলাদের হাতে। জনগণের অংশগ্রহণ ‘ঐ যে সুদূর নীহারিকা’ হয়ে রইল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৭ সালে বলবন্ত রাজ মেটা স্টাডি টিম-এর রিপোর্ট প্রকাশিত হল। পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে বাস্তব এবং কার্যকরী করার লক্ষ্যে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখা হল এই কমিটির তরফে। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ১৯৫৮ সালে এ প্রস্তাবগুলোর অধিকাংশই গ্রহণ করে।
অবশেষে ঐতিহাসিকভাবে গান্ধীর জন্মদিনে (২ অক্টোবর) ১৯৫৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নেহেরুর হাতে প্রথম পঞ্চায়েতি রাজের প্রতিষ্ঠা ঘটলো গুজরাটে। কিন্তু বাস্তবে ১৯৭৭ পর্যন্ত পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতো স্থানীয় ভূস্বামী, অর্থবান মানুষ এবং মূলত এদের প্রভাবে চলা বিডিও সহ স্থানীয় সরকারি আমলাতন্ত্র। সেখানে টাকা, পেশি শক্তি, উৎকোচ এবং ক্ষমতার খেলা চলতো। বাংলায় এগুলো অতুল্য ঘোষের সময়কালের সঙ্গে জুড়ে আছে।
মূলত তেভাগা আন্দোলন এবং বিহারে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিসংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বামপন্থীদের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল গ্রামের একেবারে প্রান্তিক কৃষকের মাঝেও। ১৯৭৭ সালে আসমুদ্র হিমাচলব্যাপী অবিস্মরণীয় গণ আন্দোলনের ঢেউয়ের চুড়োয় শক্তিতে (আমি সাংগঠনিক শক্তিকেও সম গুরুত্ব দিচ্ছি) যেদিন বামফ্রন্ট সরকার বাংলার ক্ষমতায় এলো, সেসময় বামফ্রন্টের তরফে দুটি নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ গণ-ঘোষণা করা হয়েছিল – (১) রাজনৈতিক বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি, এবং (২) পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার সংস্কার করে ভূমিহীন ও দরিদ্র কৃষকদের পাট্টা দেওয়া এবং ‘অপারেশন বর্গা’। এর ফলে গ্রামীণ পঞ্চায়েতগুলো জোতদার, জমিদার, ভূস্বামী, অর্থবান মানুষ এবং আমলাদের বেষ্টনী থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন, নিজেদের মত অবাধে প্রকাশ এবং ক্ষমতাকে ব্যবহার করার মাধ্যম হিসেবে মুখের ভাষা, বুকের আশা, অস্তিত্বের শক্তি খুঁজে পেল। গ্রামীণ জীবনে এবং জীবনচর্যায় অনেকখানি গণতান্ত্রিকীকরণ ঘটে গেলো।
এই পঞ্চায়েত সংস্কার ও নিয়মিত নির্বাচন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ধারণাটিকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করে তোলে। এর ফলে ব্যাপক হারে জনসাধারণ সরকারি কাজে অংশগ্রহণের সুবিধা অর্জন করে। ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও সাহস অনেক বৃদ্ধি পায়। অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়ের দ্য পঞ্চায়ত অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্রন্থে মন্তব্য করা হয়েছে – “সাধারণ গ্রামবাসীরা আর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে দাক্ষিণ্য প্রার্থনা করতে যান না, বরং যান যা তাঁদের প্রাপ্য তার দাবি নিয়ে। নয়া গণতন্ত্রে মানুষের রাজনৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি কম গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব নয়।” (পৃঃ ১৫২)
কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের রাজত্বে পরের দিকে পঞ্চায়েতগুলো পার্টি ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ছোট ছোট ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে ওঠে। আরেকটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ – পঞ্চায়েতে কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরফে অসংখ্য উন্নয়নমূলক খাতে এত টাকা আসে যে পঞ্চায়েত আসলে কৌশলী মানুষদের কাছে হয়ে ওঠে একটি মধুভাণ্ড। যে কারণে আমরা ২০১১-র পরে তো দেখেইছি, ১৯৮৭ পরবর্তী সময়েও দরিদ্র গ্রামের মাঝে বিসদৃশ, বিশাল, বেখাপ্পা বড়িগুলো হয় চাক্ষুষ করেছি, কিংবা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি। এই মধুভাণ্ডের ভাগ পাবার জন্য শক্তিশালী সবকটি রাজনৈতিক দলই তাদের ‘সশস্ত্র সংগ্রাম’-এর ঘুঁটি সাজায়। পঞ্চায়েতের দখল নিতে চায়।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত হিংসা, সংঘর্ষ, অস্ত্রের ব্যবহার এবং রক্তপাতের চালিকা শক্তি হল একেবারে তৃণমূল স্তরে ক্ষমতা এবং অর্থের ওপরে নিরঙ্কুশ আধিপত্য রক্ষা করার। এর সাথে ভোট ব্যাংকের রাজনীতি তো রয়েইছে।
বায়োলজির সামান্য ব্যাখ্যা – সামাজিক হিংসার উৎস
২০১৬ সালের মার্চ মাসে নেচার জার্নালে একটি সাড়া জাগানো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় “Hypothalamic control of male aggression-seeking behaviour” শিরোনামে। এ গবেষণায় দেখানো হয় মানব মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অঞ্চলে পুরুষদের মধ্যে এরকম হিংস্রতার জন্ম হয় কর্টেক্সের নিউরনের মাঝে। আরও বলা হয় – “multiple modes of aggres¬sive action may emerge from a common motivational mechanism.”
এখানে একটি কথা আমাদের নজরে রাখতে পারি। আমাদের মস্তিষ্কে নিউরনের পাশাপাশি রয়েছে গ্লায়াল কোষ। নিউরনের কাজ প্রধানত তাৎক্ষণিক আবেগ, ক্রোধ ইত্যাদির জন্ম দেয়। গ্লায়াল কোষ গভীরে গিয়ে ভাবা, সৃজনশীল কাজ ইত্যাদির উৎস। টিভির ‘সোপ সিরিয়াল’, বিজ্ঞাপনের কুহকী মায়া – সুকুমার বাচ্চা কিংবা সুন্দরী মহিলাদের জন্য হরলিক্সের অসীম প্রয়োজনীয়তা, সাবানে মুখের ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে প্রেমের আকর্ষণের বান ডাকানো, ‘ঘণ্টা খানেক’-এর সুগম্ভীর তাৎক্ষণিক আক্রমণের শরীরী ভাষায় আলোচনা ইত্যাদি সবই সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়কেও কাজে লাগায় এই নিউরনগুলোকে সবল সজীব রাখার জন্য। পণ্য দুনিয়ার বাজার আরও প্রসারিত হয়। কিনতে হয় নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়! এরকম অবস্থায় শীত ঘুমে চলে যায় গ্লায়াল কোষ, এবং এসবের মাঝে কার্যকারণ সম্পর্ক নিয়ে গভীরে ভাবার চেষ্টা।
এই মানুষেরাই সামাজিকভাবে ভাবে আমাদের সাথে বসবাস করে। এ ধরণের চিন্তাহীন, তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর মানুষেরা স্বাভাবিকভাবেই পার্টিরও সম্পদ। আবার বহুলাংশে একই ধরণের মস্তিষ্কগত ক্রিয়াকর্মে আমরাও তো মজে থাকি। এভাবেই শাসকদের তরফে তৈরি হয়ে যায় এক ধরণের মানসিক hegemony – হুবহু গ্রামসির মত না হলেও।
চিকিৎসক, সমাজতাত্ত্বিক এবং নৃতত্ত্ববিদ আর্থার ক্লিনম্যান প্রায় দু’দশক আগে একটি সুখ্যাত বই লিখেছিলেন – What Really Matters: Living a Moral Life Amidst Uncertainty and Danger। এ বইয়ে ক্লিনম্যান বলেন – “Ordinary experience frequently thrusts people into troubling circumstances and confounding conditions that threaten to undo our thin mastery over those deeper things that matter most, such as our self-esteem, intimate relations, or religious values.” আরও বলেন – “Today, our view of genuine reality is increasingly clouded by professionals whose technical expertise often introduces a superficial and soulless model of the person that denies moral significance.” এ কথাগুলোর তাৎপর্য বর্তমান সময়ে অসীম। আমরা এরকম এক সময়কেই অতিবাহিত করছি।
এ সময়ে কেন হিংসা হচ্ছে – এ প্রশ্ন বারংবার করা কার্যত অর্থহীন। কারণ সামাজিকভাবে আমাদের বৌদ্ধিক ও মানসিকতার অস্তিত্ব এরকম চিন্তার পরিসরের সাথে লিপ্ত হয়ে আছে – যেমনটা ওপরে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করেছি।
পঞ্চায়েতের মধুভান্ডকে কেন্দ্র করে প্রতিবার নির্বাচনের সময় এরই পৌনঃপুনিক পুনরাবৃত্তি আমরা বারংবার দেখবো। যদি একটি শক্তিশালী নাগরিক তথা তৃতীয় পরিসর গড়ে তুলতে পারি তাহলে হয়তো এরকম ঘটনাকে অনেকাংশে প্রতিহত করা যাবে।
আমরা কী পারবো এ কাজটি করতে?
ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যর পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা নিয়ে লেখাটি পড়লাম এবং তাঁর বিশ্লেষণে পুরোপুরি সহমত না হলেও যুক্তির দৃঢ়তা ভাল লাগল। সারা ভারতেই রাজনৈতিক দলগুলি যে কোন নির্বাচনেই বিভিন্ন অসাধু কায়দায় ক্ষমতা দখলে সক্রিয়। কিন্তু নির্বাচনী খুন জখম পশ্চিমবঙ্গে এবং পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতে চিরকালই যেন লাগামছাড়া। মধুভাণ্ড থেকে ক্ষমতাই আসল লক্ষ্য বলে আমার মনে হয়েছে।
প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও দৃঢ়তার অভাবই আমার মূল কারণ বলে মনে হয়।