অতিমারির এই এলোপাথাড়ি আক্রমণে তাবৎ পৃথিবীর বামপন্থী তাত্ত্বিকরা অন্তত তিন টুকরো। প্রথম, যাঁদের কোনো অবস্থানই নেই। এই পরিস্থিতিতে স্রেফ রিলিফ ছাড়া আর কোনো কিছু করণীয় আছে বলে মনে করছেন না এবং ‘বিজ্ঞান’ যা বলবে, সেই রাস্তাতেই তাঁরা এগোবেন, এরকমই ধরে নিয়েছেন। ‘বিজ্ঞান’ যে দৈবদত্ত কোনো বস্তু নয়, বরং শাস্ত্রটির বেড়ে ওঠা এবং প্রয়োগের মধ্যে দস্তুরমতো রাজনীতি আছে, সেই বিষয়টি আপাতত এই পরিস্থিতিতে তাঁরা উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। মূলধারার অধিকাংশ বামপন্থীই এই অংশটিতে পড়েন।
উলটোদিকে র্যাডিকাল যাঁরা, কৌতূহলোদ্দীপক ভাবে তাঁদের মধ্যে চরমপন্থী চিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি জগৎ তৈরি হয়েছে। চিন্তাবিদদের একটি অংশ কোভিডের ‘ছুতো’য় ‘ব্যক্তি’র জীবনে রাষ্ট্রের উত্তরোত্তর হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রবলভাবে উদ্বিগ্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রান্তেই ‘লকডাউন’ যেভাবে চালনো হচ্ছে, তা বস্তুত রাষ্ট্রীয় কারফিউ। ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য গতিবিধির উপর চলছে নজরদারি। এতদিন গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন বা অ্যাপলের মতো সংস্থাগুলি যেসমস্ত তথ্য লুকিয়ে-চুরিয়ে সংগ্রহ এবং ব্যবহার করত, এখন রাষ্ট্রের উদ্যোগে সেসমস্তই সংগ্রহ করা হচ্ছে রীতিমতো দামামা বাজিয়ে। প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি কোণে ঢুকে পড়ছে রাষ্ট্র। এবং এর পুরোটাই হচ্ছে বিপুল জনসমর্থনের উপর ভিত্তি করে। এই জনসমর্থন দাঁড়িয়ে আছে করোনা-সংক্রান্ত তীব্র আতঙ্কের উপর। সেই আতঙ্কের প্রচার ও প্রসার হচ্ছে অভূতপূর্ব এক ঐকমত্যের মাধ্যমে। এই ঐকমত্যের অংশীদার একচেটিয়া বৃহৎ মিডিয়া এবং রাষ্ট্র স্বয়ং। ঘটনাচক্রে পুরোটাই হচ্ছে এমন একসময় যখন বিশ্বজুড়ে দক্ষিণপন্থার পুনরুত্থানও চলছে। আমেরিকায় ট্রাম্প, ভারতে মোদী, ব্রাজিলে বলসোনারো এবং ব্রিটেনে বরিস জনসন এই মুহূর্তে ক্ষমতায়।
ইতালীয় দার্শনিক জর্জিও আগামবেন এই ত্র্যহস্পর্শ সম্পর্কে এককথায় সংক্ষেপে প্রশ্ন তুলেছেন: “আতঙ্কের এক আবহাওয়া তৈরি করা, এমন এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি তৈরি করা, যেখানে বিরাট এলাকা জুড়ে চলাচল এবং দৈনন্দিন কাজ ও জীবনযাপনকে সম্পূর্ণ ব্যাহত করে দেবার মতো বিধিনিষেধ তৈরি করার মতো কাজেই মিডিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে? “স্লাভোই জিজেক যদিও চিন্তার এই ভুবনের অংশীদার নন, কিন্তু তবুও ‘প্যানডেমিক’-এ লিখেছেন যে, ইতালিতে গোটা দেশকে যেভাবে করতলগত করে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দেওয়া হল, তা যে-কোনো স্বৈরাচারী ব্যবস্থার স্বপ্ন। বস্তুত জিজেকের এই ছোট্টো পুস্তিকার একটি পরিচ্ছেদের নামই হল ‘মনিটার অ্যান্ড পানিশ’, যা স্পষ্টতই মিশেল ফুকো অনুপ্রাণিত। এই ফুকো-উত্তর পরিস্থিতিকে ‘ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ’-এর দ্বিতীয় ভাগ বলা যেতেই পারে।
ফুকো দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত হয়েছেন ক্ষমতার তত্ত্ব থেকে কোয়র্শন বা গা-জোয়ারিকে নির্বাসিত করার জন্য। ফুকোর ক্ষমতার তত্ত্বের হৃৎপিণ্ড হল এই, যে, শৃঙ্খলার জন্য রাষ্ট্রের বেত হাতে নজরদারির আর প্রয়োজন নেই। বরং তার বদলে নির্মিত হয় নানা ‘সত্য’। যেমন ‘সুন্দর স্বাস্থ্য যৌন আকর্ষণ তৈরি করে’। এই ‘সত্য’ তাবৎ যুবক-যুবতীকে উজ্জীবিত করে নিয়ে যায় ব্যায়ামাগারে। বেত বা ঘড়ি হাতে মাস্টারের নজরদারির প্রয়োজন থাকে না। মানুষ নিজেই হয়ে ওঠে তার নজরদারির যন্ত্র। এর সঙ্গে আজকের নজরদারির যে আদর্শ মডেল, তার পার্থক্য কী? যদি চিনকেই ধরা যায়, সত্যনির্মাণের সঙ্গে তারা রাষ্ট্রীয় নজরদারিকেও আরও পোক্ত করে তুলেছে। প্রতিটি মানুষের চলাফেলা গতিবিধির ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমে মানুষ পিছু ‘ক্রেডিট স্কোর’ নামক একটি মাপকাঠি চালু আছে, যা দেখে ব্যাংকরা ঠিক করে কোনো ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়া যায় কি যায় না। শোনা যায়, নিশ্চিত করে বলার অবশ্য উপায় নেই, চিনে সেই মডেলেই ডিজিটাল ম্যাপ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘সোশ্যাল ক্রেডিট স্কোর’ যা দিয়ে বোঝা যাবে আপনি কতটা ‘আদর্শ’ নাগরিক। এইধরনের নজরদারির ক্ষেত্রে, ফুকো স্পষ্ট করে না লিখলেও, মোটামুটি ভাবে যা লিখেছিলেন, তার মানে দাঁড়ায়, যে, পদ্ধতিটি অত্যন্ত অকার্যকর। কারণ সমস্ত মানুষের সমস্ত কার্যকলাপ নজরে রাখতে হলে চাই বিরাট এক বাহিনী। তার উপরে নজর রাখতে হলে চাই আরও এক বাহিনী। চিন এই সমস্যাটির সমাধান করতে চলেছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স দিয়ে। অর্থাৎ কম্পিউটারই ছবি বা তথ্য নিয়ে নজরদারির কাজটি করে দেবে, বাহিনী-টাহিনীর প্রয়োজন নেই। একটু অন্য মোড়কে হলেও পশ্চিমি তথ্যপ্রযুক্তির দানবরাও এই একই মডেলে চলেছে। খুব সম্ভবত সিক্রেট সার্ভিসও। কারণ এরকম কিছু তথ্য ফাঁস করার কারণেই স্নোডেনকে পশ্চিমি দুনিয়া থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে হয়েছে। আগামবেন বা অন্য দার্শনিকদের প্রশ্নটি এই মডেলের উত্থান বিষয়েই। যাকে জিজেক এককথায় প্রকাশ করেছেন এইভাবে, ‘চিনই কি তবে আমাদের ভবিতব্য?’
জিজেক নিজে অবশ্য এই মতটির অংশীদার নন। বরং সমালোচক। বাম ঘরানার তৃতীয় একটি ধারা আছে, যারা করোনা-উত্তর পৃথিবীতে ‘চিনই আমাদের ভবিতব্য’ একেবারেই মনে করে না। জিজেক তার অংশ। তিনি প্রশ্নটিকে সম্পূর্ণ উলটোদিক থেকে দেখতে বলছেন। ট্রাম্পের মতো ঘোষিত দক্ষিণপন্থীরা, জিজেক বলেছেন, বারবার বলে চলেছে, যে, এই অতিমারি আসলে ট্রাম্পকে নির্বাচনে হারানোর জন্য ডেমোক্রাট এবং চৈনিকদের যৌথ চক্রান্ত। ট্রাম্প এবং অন্য দক্ষিণপন্থীদের এইরকম প্রতিক্রিয়া কেন? রাষ্ট্রক্ষমতা কেন এমন আতঙ্ক তৈরি করবে, যা রাষ্ট্রের উপর অনাস্থা তৈরি করবে? কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে, যা পুঁজির পুনরুৎপাদনকেই ব্যাহত করে? সত্যিই কি একটি পৃথিবীজোড়া অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করে পুঁজির কোনো ফায়দা আছে? আগামবেনের সম্পূর্ণ উলটো দিকে দাঁড়িয়ে জিজেক ঘোষণা করেছেন, এ আতঙ্ক শুধু জনতার নয়, রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেও আতঙ্কিত।
জিজেকের ঘোষণা অবশ্য অনেকটাই ৭০-এর ‘সাম্রাজ্যবাদ হল কাগুজে বাঘ’ স্লোগানের মতো শোনায়, যখন তিনি পুরো বিষয়টিকেই একটি ধ্রুপদি দ্বান্দ্বিক মডেলে দাঁড় করান। খুব সংক্ষেপে বললে, এই দ্বন্দ্বের মডেলটি হল বর্বরতা বনাম কমিউনিজম। জিজেকের মতে, এই মুহূর্তে ভবিষ্যতের দিকে এগোনোর দুটি পথ আছে। একটি হল মানবিক মুখের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা বর্বরতার দিকে এগোনো। ইতালি, জিজেক লেখেন, ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে, যে, পরিস্থিতি ঘোরতর হয়ে উঠলে, যাঁদের ৮০-র উপরে বয়স এবং ইতিমধ্যেই শরীরে নানা জটিলতা আছে, তাঁদের একদম সোজা বিনাচিকিৎসায় মরতে দেওয়া হবে। (জিজেকের এই বই লেখার পরে এরকম আরও কয়েকটি ঘোষণাও শোনা গেছে)। কিন্তু এই ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’-এর ধারণা, বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ এমনকি সামরিক আচরণবিধিকেও এতে লঙ্ঘন করা হয়। সেখানেও সবচেয়ে গুরুতর ভাবে আহতদেরই সবার আগে চিকিৎসা করা হয়।
এর ঠিক উলটো দিকে আর-একটি পথ হল পারস্পরিক সহযোগিতা। এই দ্রুত যাতায়াতের যুগে করোনা কেন, কোনো ভাইরাসকেই কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের পক্ষে রোখা সম্ভব নয়। ভাইরাস এখন আন্তর্জাতিক বিমানের প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণ করে। ফলে আতঙ্কিত রাষ্ট্রক্ষমতার একমাত্র উপায় হল পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা। ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন কেবলমাত্র আমেরিকার জন্য বানাতে বলে কিওরভ্যাক নামক একটি জার্মান সংস্থাকে বরাত দিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই প্রস্তাব খারিজ হয়েছে। জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন তৈরি হলে সারা পৃথিবীর জন্য হবে। বস্তুত চাপ শুধু জার্মানির দিক থেকেই নেই, সর্বত্র। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন, যে, দরকারে তিনি ‘বেসরকারি ক্ষেত্রকে অধিগ্রহণ করবেন’। বরিস জনসন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন ব্রিটেনের রেলব্যবস্থার একাংশকে অধিগ্রহণের কথা। স্রেফ কোয়ারান্টাইন এই সমস্যার সমাধান করবে না। এই চাপ আরও বাড়বে। এবং এইধরনের আরও ব্যবস্থা নিতেই হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বার্নি স্যান্ডার্সের কথামতো রাষ্ট্রীয়করণের দিকে এগোবে। উৎপাদনের উপকরণের উপর তৈরি হবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। এ কোনো ইউটোপিয়া নয়, জিজেক লিখেছেন, বস্তুত সবমিলিয়ে বিশ্বজুড়ে যা তৈরি হবে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯১৮ সালের ‘যুদ্ধকালীন কমিউনিজম’-এর নতুন একটি সংস্করণ। অর্থাৎ এককথায় বর্বরতা বনাম কমিউনিজমের লড়াইয়ে এই করোনা-উত্তর যুগে কোনো এক আকারের কমিউনিজমের জয় হবে। বা অন্তত সেইদিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে। জিজেক আরও লিখেছেন, সেই পরিবর্তন আসবে দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রনায়কদের হাত ধরেই, যেমন চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক তৈরি হয় নিক্সনের আমলে। এর একমাত্র কারণ হল ‘প্রগতিশীল’রা যেসমস্ত পদক্ষেপ নিলে শোরগোল পড়ে যেত এবং ‘রক্ষণশীল’রা আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতেন, এখন সেইসমস্ত পদক্ষেপ নিতে হবে ‘রক্ষণশীল’দেরই। ‘প্রগতিশীল’রা বলাবাহুল্য সে পথে কাঁটা হবেন না।
তাত্ত্বিকদের ভবিষ্যদ্বাণীর ইতিহাস খুব উজ্জ্বল নয়। স্বয়ং ফুকো ইরানের বিপ্লব নিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রায় নবদিগন্তের সূচনা হল জাতীয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তারও আগে মার্কস শিল্পোন্নত দেশেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। কোনোটাই ইতিহাসের জটিল গতিপথে মেলেনি। জিজেকেরটাও মিলবে, এমন আশা, খুবই কম। কিন্তু তবুও এইমুহূর্তে দাঁড়িয়ে ভুল বা ঠিক বলা অসম্ভব। কারণ ইতিহাস কোন্ পথে চলবে, তা একমাত্র ঘটনা ঘটে গেলে তবেই জানা যাবে। তার আগে নয়।
Credit Score ভারতেও আছে । একে CIBIL score বলে, এটা RBI approved ।
মহামারী বিশ্ব রাজকূটের অনেক মুখোশ খুলেছে তো অবশ্যই ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ওসি ওয়ার্ল্ড আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়া, চীন ও রাশিয়ার তৈরি করোনা টিকার নিরাপদ কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা না কেনার ঘোষণা, উত্তর কোরিয়ায় কোভিড রোগির মৃত্যু কম বলে নানা প্রচারণাসহ তৎসংলগ্ন নানান চাতুরী এ সবেরই ইংগিত বহন করে।
"সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯১৮ সালের ‘যুদ্ধকালীন কমিউনিজম’-এর নতুন একটি সংস্করণ" ই বটে। যদিও সে রাম নাই, অযোধ্যা নাই, আছে মেনিফেস্টো কথিত কমিউনিজমের ভূূত।
সৈকত দা, আরেকটু বড় করে লিখতে পারতেন।
আর সাক্ষাৎকারে স্লাভোয় জিজেককে "অতি বিপদজনক বিশ্ব চিন্তক" এর উল্লেখ খুবই যথার্থ
খালি স্বাস্থ্য আর শিক্ষা কেন সরকারের হাতে থাকবে?রেল,বিজলী,সড়ক,আবাসন,ইন্স্যুরেন্স এগুলো নয় কেন?
ভাল পাঠালোচনা। বইটি পড়ি নি। সম্ভবত পড়া হবেও না। কারণ দামটায় উঁকি দিয়ে ফেলেচি। সে যাক।
যেটা বোধগম্য হল না, বা কম হোলো -- জিজেক করোনা-উত্তর সম্ভাব্য ভুবনবিন্যাস ব্যাপারে সোভিয়েত ওয়র-কম্যুনিজম এর, তাও হালের দক্ষিণপন্থী ঈশ্বরদের হাত ধরে, সম্ভাবনাকেই এত অমোঘ ভাবে কেন দেখলেন। বর্তমান বিশ্বের অতি-উদারবাদী তথা পুঁজির একচেটে শাসনের গোঁড়ামির বিপরীতে , জিজেক উল্লিখিত এই সম্ভাব্য 'নতুন' বিন্যাসের প্রায় সমতুল্য স্পষ্টতর ঐতিহাসিক নজীর আছে -- আমেরিকান নিউ ডীল। বিশ্বব্যাপী মন্দার পরে পরে, রুজেভেল্টের জমানায়। ও ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষেত্রগুলোর হোলসেল রাষ্ট্রীকিকরণ হয় নি বটে, কিন্ত গণউপযোগগুলি (যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন ইত্যাদি) ভোগের বিস্তৃত সামাজিকীকরণ ঘটেছিল বই কি। কেইন্সীয় আর্থ-দর্শনের সার্থক প্রয়োগ নিউ ডীলেই তো ঘটেছিল। নয়া কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আপেক্ষিক আর্থিক বৈষম্য কমানো ইত্যাদি ব্যাপারগুলো খুবই সাফল্যের সংগে করা গেছিল সে জমানায়। বস্তুতঃ, কল্যাণ-অর্থনীতির সেই-ই তো সূচনা। কেইন্সীয় তত্ত্বের মার্কিনি প্রয়োগের নাছোড় সেপাই হয়ে লড়েছিলেন আলভিন হ্যানসেন ইত্যাদি অর্থশাস্ত্রীরা। তার সুফলও মার্কিনিরা ভোগ করেছিল প্রায় সত্তর দশকের গোড়া পর্যন্ত।
কেইন্স বামপন্থী মোটে ছিলেন না, মার্ক্সবাদী তো কোন ছাড়। তাঁর জীবনভ'র সাধনা ছিল পুঁজিবাদকে নবজীবন দান করা -- অবশ্যই সেটা পুঁজিবাদের একধরনের ' য়ুরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট' এর আদর্শানুগামী সংস্করণ -- সেটা অবিশ্যি সোনার পাথরবাটি বলে ইতিহাসে পরে প্রমাণ হয়ে গেছে। হওয়ারই ছিল। তবে এ হেন পাথরবাটির নজির তো বাম-ডান কোনো শিবিরেই বাড়ন্ত নয়। কিন্তু কেইনসের দাওয়াই কাজে লেগেছিল তা ইতিহাসেই আছে।
করোনাকালের এই নির্মম বর্বরদশাগ্রস্ত বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় কেইনসের কথা কেন জিজেকের মনে হয় নি তা অবিশ্যি উনিই বলতে পারবেন। জিজেক ঘোষিত বামপন্থী বলে? সেক্ষেত্রে 'দৃষ্টিবাদ'-বর্জিত নির্জলা তথ্যের খাতিরে বলতেই হয় -- সোভিয়েত war communism কালে গৃহীত বিশুদ্ধ অর্থনৈতিক পলিসিগুলির সংগে কেইনস নির্দেশিত দাওয়াই গুলির গভীর বৈসাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন।
টিকা উদ্ভাবনের দৌড়ে চীন অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ চীনের কাছে আগেই টিকা চেয়ে বুকিং দিয়ে রেখেছে। ভবিষ্যতে রাজকূটে?