......উনি দিব্যি হেসে উঠলেন। একেবারেই একটা তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন, ঠিক মন্তব্য নয়, প্রশ্ন! তার প্রশ্নের ধরনের দেখে সকলে ইতস্তত: করেও হেসে উঠল। তিনি মজা পেলেন। যে বলেছিল, সে একটা উত্তর দিল আমতা আমতা করে। তিনি আরো এমন একটি মন্তব্য করলেন, সকলে আরো বেশ খানিকটা হেসে উঠলো। এই "উনি"টি কোনো কমেডিয়ান নন, অনুষ্ঠানটিও কোনো পাড়ার জলসা নয়, যে এমন ছ্যাবলামো অনায়াসে করা যায়! অনুষ্ঠানটি চলছিল দেরাদুনে, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিভিন্ন স্বপ্নের প্রকল্প পেশ করছিল ওনার সামনে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে। হ্যাঁ, ঘটনাচক্রে উনি দেশের প্রধানমন্ত্রীও বটে। যে বিষয়ের উপর প্রকল্পটি পেশ করেছিলেন ছাত্রীটি, সেটি কিন্তু এইরকম হালকা কোনো বিষয় ছিল না। বিষয়টি ছিল ডিসলেক্সিয়া (dyslexia)। এইধরনের সমস্যায় ভোগা ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ প্রতিভার উন্নতিকল্পে একটি প্রকল্প। পেশাগত জীবনে প্রতিনিয়ত এই ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকা ছেলেমেয়েদের অসুবিধা নিয়ে কাজ করতে হয় বলে আরো বেশি করে জানি সমস্যার গভীরতা আর এই ধরনের প্রকল্পের প্রয়োজন কতটা! আর সেখানেই উনি দিব্যি "ছ্যাবলামো" করলেন!!! একটু বলে নিই ডিসলেক্সিয়া সম্পর্কে। সহজ ভাষায় বললে, এটি লেখাপড়ার একটি এমন সমস্যা যাতে "ভাষা" বুঝতে ও প্রকাশ করতে কিছু অসুবিধা হয়। অনেকে ভাবেন এটি হয়তো "প্রতিবন্ধকতা" বা "অসুস্থতা", কিন্তু আধুনিক গবেষণা সেই ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটি একটি এমনই অসুবিধা, যাতে বুদ্ধির ঔৎকর্ষ-এর কোনো সমস্যা সাধারণভাবে থাকে না। ভাষা বোঝার সমস্যার জন্য পড়তে, বা লিখতে, কিংবা বানান বলতে বা লিখতে কম-বেশি অসুবিধার কারণে প্রথাগত লেখাপড়ায় একটু পিছিয়ে পড়তে হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় এদের নির্দিষ্ট কিছু প্রতিভার বিচ্ছুরণ অন্যভাবে হয়ে থাকে। দেশে বিদেশে অনেক বিখ্যাত মানুষের এই ধরনের অসুবিধা ছিল বলে অনুমান করা হয়, বা হালে অনেকে সেটা স্বীকারও করেন। তাতে তাদের বিখ্যাত হওয়ার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন বিশেষ ক্ষেত্রে দুর্দান্ত কিছু করবার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি, বা হয় না। এই প্রসঙ্গে ছাত্রীটি আমীর খানের নামকরা সিনেমা "তারে জমিন পর" এর 'ঈশান' নামে চরিত্রটির উল্লেখ করেছিল। উনি বলে বসলেন যে এই প্রকল্পে ৪০-৫০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা। উত্তর সদর্থক হলে মুচকি হেসে বললেন যে তাহলে এদের মায়েরা বেশ খুশি হবেন। উদ্দেশ্য যাকেই করা হোক না কেন, এটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট গঠনমূলক উদ্দেশ্যের অনুষ্ঠানে একটি অতি নিকৃষ্ট মানের রসিকতা বা এককথায় "ভাঁড়ের" মত আচরণ ছাড়া কিছুই নয়। তা, সব কিছুর মধ্যেই উনি রাজনীতির এইধরনের মোটা দাগের "ভাঁড়ামো" টেনে এনে ্কীভাবে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে চাইছেন, তাই সে নিয়েই রইল একটি ধারাবিবরণী, হয়তো বা একটি "দেশদ্রোহী" আখ্যায়ন।