এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • কালাজ্বর, একটি অন্ধকার ঘর ও এক অপরাজিত যোদ্ধা

    জয়ন্তী অধিকারী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০ আগস্ট ২০১৮ | ৩৩৯৩ বার পঠিত
  • “তার পর বড়দা অসুখে পড়লেন। শুনলাম রোগটার নাম কালাজ্বর, তার তখন কোনো ভালো চিকিৎসা ছিলোনা। চোখের সামনে একটু একটু করে বড়দার শরীর ভাঙ্গতে লাগলো। অমন দশাসই চেহারার আর কিছুই রইলো না। তার আগের বছরেই বিবাহের নয় বছর পরে, বড়ো বৌঠানের সুন্দর একটা ছেলে হয়েছিলো, ঘটা করে তার নামকরণ হয়েছিলো, আত্মীয়স্বজন খুব ভোজ খেয়েছিলো। ছেলের নাম সত্যজিৎ, ডাকনাম মানিক।” (লীলা মজুমদার)

    “মায়ের সম্ভবত কালাজ্বর হয়েছিলো। সারাদিন গরমে, ধোঁয়ায় পাকশাল সামলাতে সামলাতে তাঁর অত্যন্ত স্বাস্থ্যহানি হয়েছিলো। রোগের ধকল আর সামলাতে পারেননি।”(রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

    কালাজ্বর নামক বিভীষিকাময় অসুখটির করাল গ্রাসে পড়ে বহু অমূল্য প্রাণ অকালে বিনষ্ট হয়েছে।

    কালাজ্বর

    কালাজ্বর ( Visceral leishmaniasis, Sahib's disease, Dumdum fever, Black fever) ভয়ংকর একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। এর কারণ হিসাবে ছারপোকা (বেড বাগ), মাছি ইত্যাদি অনেক কিছু ভাবা হয়েছিল, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকের বিফল প্রচেষ্টা ও দীর্ঘ গবেষণার পর বেলেমাছি (Phlebotomus argntipes)-কে কালাজ্বরের কারণ হিসাবে নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়। লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবী (Leishmania donovani ) এই রোগটি ঘটায় এবং বেলেমাছির কামড়ের দ্বারা এই অসুখ বিস্তার লাভ করে। ম্যালেরিয়ার পরেই পরজীবী-ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী রোগ; হু-র তথ্যানুযায়ী আজও লিশম্যানিয়াসিসে প্রতি বছর পৃথিবীতে কুড়ি থেকে তিরিশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, আক্রান্ত হন সাত থেকে দশ লাখ মানুষ !

    প্রোটোজোয়া পরজীবীটি মানুষের কলিজা, প্লীহা ও অস্থিমজ্জাতে সংক্রমণ ঘটায় এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যু প্রায় অবধারিত। রোগের লক্ষণ হল, বার বার জ্বর আসা, ওজন হ্রাস, ক্ষত, অবসাদ, রক্তাল্পতা, চামড়া কালচে হওয়া এবং কলিজা ও প্লীহার আকার বৃদ্ধি,শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধা মন্দা ভাব হওয়া, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি।

    তবে এগুলো মূলতঃ ভিস্যারাল লিশম্যানিয়াসিসের লক্ষণ, যেটি লিশম্যানিয়ার তিনপ্রকারের মধ্যে সবচেয়ে সাঙ্ঘাতিক, লিশম্যানিয়া দোনভানির সংক্রমণে হয়, আমাদের দেশেও মূলতঃ; এটিই হয়, এছাড়াও অপেক্ষাকৃত দু'রকম লিশম্যানিয়াসিস হয়ে, কিউটেনাস, যার ফলে ত্বকের নানা স্থানে গভীর ক্ষত হয়ে যায়, নানারকম শারীরিক অক্ষমতা চলে আসে, এর প্রাদুর্ভাব লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বেশি। আর আছে মিউকোকিউটেনিয়াস লিশ্ম্যানিয়াসিস, যাতে নাক মুখের মিউকাস মেম্ব্রেন পুরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, এর সিংহভাগও লাতিন আমেরিকায় হয়।

    পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রোগটি আছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। বাংলা উইকিপিডিয়াতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি দশটি কালাজ্বর রোগির মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল ও সুদান এই চারটি দেশের বাসিন্দা। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতে 'মানুষ' এই রোগের উতস রূপে চিহ্নিত, চীন ও ব্রাজিলে 'কুকুর' এই রোগের উৎস। দরিদ্র মানুষ যাঁরা মাটির ঘরে বাস করেন বা গোয়ালঘরের আশে পাশে থাকে তাঁরাই বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন, কারণ বেলেমাছি বাস করে মাটির ফাটলে বা আবর্জনার নিচে।

    ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে (1870 সাল নাগাদ) বৃটিশ সরকারের উদ্যোগে আসামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল চা বাগান ও অন্যান্য কৃষিক্ষেত্র, স্থাপিত হয়েছিল জলপথ ও স্থলপথে বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, যশোর, হুগলী, নদীয়ার গ্রামে গ্রামে জেলায় জেলায়, ভয়ংকর মারণব্যধি কালাজ্বরের আতঙ্ক, যার অন্য নাম অনেকের মতে old burdwan fever। Captain Clark McNaught, সিভিল সার্জন তাঁর রিপোর্টে লিখেছিলেন, "fever of malaria poisoning that darkens the skin in its chronic form.” অনেকেই রাজশক্তিকে দায়ী করেছিলেন এই ভয়ংকর অসুখের জন্য, যে কারণে কালাজ্বরের নানা নাম দেওয়া হয়েছিল, যেমন "সরকারী বিমারী (গারো), কালাদুখ(পূর্ণিয়া), কালাজ্বর(দার্জিলিং), পুষ্করা(জলপাইগুড়ি), দমদম ফিভার(কলকাতা), সাহেবের অসুখ(আসাম) ইত্যাদি।

    অচিরেই গ্রামবাসীরা আবিষ্কার করলেন, কালাজ্বরের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় হল, আক্রান্ত এলাকা ছেড়ে পালানো। এর ফলে গ্রামের পর গ্রাম অস্বাভাবিক দ্রুতবেগে শূন্য হয়ে যেতে লাগল, ব্ল্যাক ডায়মন্ড বা ভারতীয় চায়ের ব্যবসা অভাবনীয় সঙ্কটের সম্মুখীন হল।

    1902 সালে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী Ronald Ross-কে (ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তারের কারণ যে মশার শরীরে অবস্থিত ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট, এই তত্ত্বের আবিষ্কর্ত্তা) কালাজ্বর কমিশনের প্রধান পদে বসানো হয়। যদিও এই নতুন কর্মভার গ্রহণ করতে তাঁর ইচ্ছা ছিল না (বলেছিলেন “Columbus having sighted America was ordered off to discover the North Pole”), তবু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে তিনি যে বিশাল case history তৈরি করেন, তারই ওপর ভিত্তি করে Dr Mason (Ross-এর শিক্ষক) সিদ্ধান্ত নেন, কালাজ্বর ও ম্যালেরিয়া এক নয়, কারণ ভারি ডোজে কুইনাইন দিয়েও কালাজ্বরে কোন ফল পাওয়া যায় না। Major W.B.Leishman দমদম জ্বরে মৃত এক সৈনিকের প্লীহাতে অদ্ভূত কিছু পরজীবী (প্যারাসাইট) লক্ষ্য করেন, যা কখনই ম্যালেরিয়ার নয়, বরং স্লিপিং সিকনেস অসুখের প্যারাসাইটের সঙ্গে এর সাদৃশ্য আছে। 1903 সালে মাদ্রাজ মেডিকাল কলেজের Charles Donavan এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। Ronald Ross স্বয়ং তখন পর্যন্ত অজানা এই প্যারাসাইটের নাম দেন, Leishmania donovani - harbinger যা কালাজ্বরে র মুখ্য উৎস। এই সময় গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন, সিংহল, চীন, সিসিলি, গ্রীস, পর্ত্তুগাল ইত্যাদি দেশ থেকেও কালাজ্বরের খবর আসতে থাকে।

    কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার ও অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী

    1905 সাল - Annus mirabilis বা বিস্ময় বর্ষগুলির অন্যতম। এই বছরে Robert Koch নোবেল পুরষ্কার পান, জগদীশচন্দ্র electromagnetic detector আবিষ্কার করেন, ফ্রয়েড তাঁর যৌনতা তত্ত্ব প্রমাণ করেন, তদানীন্তন পেটেন্ট অফিসকেরাণী Albert Einstein বিশ্বের সামনে নিয়ে আসেন তাঁর আশ্চর্য সব অবদান - Brownian motion, Photoelctric effect, Special theory of relativity ,mass energy equivalence equation,
    এবং
    অতুলনীয় মেধা, অতি উজ্জ্বল ছাত্রজীবন ও তীক্ষ্ণ ধীশক্তির অধিকারী হিসাবে সুপরিচিত অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কালাজ্বরের প্রতিষেধক বিষয়ক গবেষণা আরম্ভ হয়। ক্যাম্পবেল কলেজে (বর্ত্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে) শুরু হয় ভীষণ মারণব্যধি কালাজ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক সংগ্রাম। গবেষণার জন্য তিনি পেলেন ছোট একটি ঘর, যেখানে জলের কল, গ্যাস পয়েন্ট বা বিদ্যুত সংযোগ কিছুই নেই। কিন্তু এইসব অসুবিধা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে একটি পুরনো কেরোসিন ল্যাম্প সম্বল করে প্রকৃত বিজ্ঞানতপস্বী উপেন্দ্রনাথ শুরু করেন তাঁর গবেষণা।

    ধাতুঘটিত যৌগকে রোগনিরাময়ের জন্য ব্যবহার করার পদ্ধতি তখন খুব বেশি প্রচলিত হয়নি। এই প্রসঙ্গে, মিশরের রাণীরা রূপটান হিসেবে ঘন নীল রঙের একধরণের অ্যান্টিমনি পেষ্ট ব্যবহার করতেন, অর্থাত অ্যান্টিমনির ভেষজ গুণের কথা তখনও জানা ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমে Paul Ehrlich ও তাঁর সহযোগীরা আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি ইত্যাদির যৌগকে সিফিলিস, আফ্রিকান স্লীপিং সিকনেস ইত্যাদি অসুখের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেন।

    1903 সালে Sir Leonard Rogers অ্যান্টিমনি অক্সাইড দিয়ে কালাজ্বরের চিকিৎসা করেন।

    উপেন্দ্রনাথ 1902 সাল থেকে শুরু করেন নানা অ্যান্টিমনিয়াল যৌগ নিয়ে তাঁর রাসায়নিক ও ভেষজ (therapeutic) গবেষণা।

    ব্রাজিল ও ইটালীর ডাক্তাররা তখন দাবি করছিলেন যে, দক্ষিণ আমেরিকায় antimonyl potassium tartrate বা tartar emetic ব্যবহার করে তাঁরা ভাল ফল পেয়েছেন। কিন্তু উপেন্দ্রনাথ জানতেন, Dr Lonard Roger দশজন ভারতীয় কালাজ্বরের রোগীর ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করে সন্তোষজনক ফল পান নি। টারটার এমেরিকের ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ছিল বমি, নিউমোনিয়া, কাশি, ইঞ্জেক্শন দেওয়ার পর ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন, গাঁটে ব্যথা ইত্যাদি এবং এই যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসা দীর্ঘকাল ধরে চলত (1% সল্যুশন হিসাবে ইঞ্জেকশন শুরু করে আস্তে আস্তে ডোজ বাড়িয়ে তিনমাস বা আরো বেশি সময় ধরে দিতে হত) - এইসব কারণে রোগীরা বেশির ভাগ সময়েই চিকিৎসা করাতে চাইত না। রোগীদের প্রত্যাখ্যান টারাটারিক এমেরিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তদুপরি এই ওষুধ গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যেত, রাবার ক্যাপের ফ্লাস্কে বারবার ছুঁচ দিয়ে ফুটো করে ওষুধ টানার ফলে জীবাণুর সংক্রমণও দেখা দিত।

    ব্রহ্মচারী পটাশিয়মের বদলে সোডিয়াম ব্যবহার করেন, কিন্তু sodium antimonyl tartrate তেমন কার্যকরী হয় না। তখন তিনি শুরু করেন বিশুদ্ধ সূক্ষ্মচূর্ণ ও colloidal form-এ অ্যান্টিমনি তৈরির কাজ। কয়েকমাসের মধ্যে তিনি সফল হন এবং এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবে অ্যান্টিমনি ধাতু intravenous উপায় রোগীর দেহে প্রবেশ করানোর যন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। The Lancet পত্রিকার October,1916 সংখ্যায় এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়। উপেন্দ্রনাথ বলেন, ধাতব ও কলয়ডাল অ্যান্টিমনি সহজেই প্লীহায় অবস্থিত কোষগুলির সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্ষতিকর পরজীবী বা প্যারাসাইটদের খুব দ্রুত মেরে ফেলে। কিন্তু এই পদ্ধতির সমস্যা ছিল,অ্যান্টিমনি ধাতু সহজ পাওয়া যেত না, প্রতিবার প্রয়োজনের সময় তৈরি করে নিতে হত, intravnous administration এর পদ্ধতিও জটিল ছিল।

    1919 সালে উপেন্দ্রনাথ Indian Research Fund Association থেকে তাঁর গবেষণার জন্য একটি বড় অনুদান পান। অ্যান্টিমনির অজৈব যৌগের নানা সীমাবদ্ধতা, সংরক্ষণের অসুবিধা, ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদির কথা স্মরণ করে তিনি ঠিক করেন, Paul Ehrlichএর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অ্যান্টিমনি ও জৈবযৌগের সংযোগ ঘটাবেন (to design and synthesise organic antimonials, with antimony bonded to carbon, his over-arching aim being designing molecules that fulfilled Ehrlich’s criteria of therapeutic benefit – to achieve maximum ‘parasitotropism’ with minimum ‘organotropism)। কারণ, অ্যান্টিমনিয়ালের গঠন অনেকটাই atoxyl এর মত, যা ব্যবহার করে Ehrlich স্লীপিং সিকনেস অসুখে সুফল পেয়েছিলেন। আর একটি বিষয়ে তিনি ভেবেছিলেন, বিভিন্ন অ্যান্টিমনিয়াল যৌগের ইঞ্জেকশন ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক। রোগীদের কষ্ট লাঘবের জন্য উপেন্দ্রনাথ ইউরিয়া ও p stibanilic acid এর (পেন্টাভ্যালেন্ট অ্যান্টিমনি) সংযোগ করানোর কথা ভাবেন, কারণ ইউরিয়ার যন্ত্রণা উপশমকারী গুণের কথা আগেই জানা ছিল (কুইনাইন ইউরিয়া ইত্যাদি)। মূলতঃ এই ভাবনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় urea stibamine-এক ঐতিহাসিক জীবনদায়ী ওষুধ।

    প্রাথমিক অবস্থায় উপেন্দ্রনাথ বেশ কয়েকটি অ্যান্টিমনি যৌগ তৈরি করেন, এবং প্রতিটির প্রতিষেধক ক্ষমতা, administration route, dosing pratocol, toxicity ইত্যাদি পরীক্ষা করেন। 1921-22 সালে উপেন্দ্রনাথ আবিষ্কার করেন তাঁর প্রস্তুত যৌগগুলির মধ্যে Urea Stibamin (carbostimamide) - Urea salt of p-stibanilic acid (p amino benzenestibonic acid, IUPAC name 4-aminophenyl stibonic acid ) কালাজ্বরের প্রতিষেধক হিসাবে আশ্চর্য ফলদায়ী। গবেষণার ফলাফল দেখতে তিনি প্রথমে যৌগটি খরগোশের শরীরে প্রয়োগ করেন ও অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন তাঁর গবেষণালব্ধ ইউরিয়া স্টিবামাইন যৌগটি কালাজ্বরের বিরুদ্ধে অদ্ভুত কার্যকরী। উপেন্দ্রনাথ তাঁর গবেষণার কথা Indian Research Fund Association কে জানান এবং মন্তব্য করেন, ম্যালেরিয়া নিবারণের জন্য সিঙ্কোনা চাষের যতটা প্রয়োজন, urea stibamine তৈরী করার প্রয়োজনীয়তাও ঠিক ততটাই।

    1922 সালের কোন এক দিন প্রায়ান্ধকার ঘরে তিনি যে অসাধারণ আবিষ্কার করেছিলেন তা ইতিহাসে এক আলোকিত নব দিগন্তের সূচনা করেছিল। Indian Journal of Medical Research,October,1922 প্রথম প্রকাশ করে উপেন্দ্রনাথের যুগান্তকারী সফলতার কাহিনী- আটজন রোগীর সফল চিকিৎসা ও প্রতিটি ওষুধের toxicity-র বিবরণ।

    1932 সালে শিলং-এর পাস্তুর ইন্সটিটিউট থেকে সরকার নিযুক্ত Col. H. E. Shortt, Director, Kala-azar Commission, ও তাঁর সহযোগী ড্ক্টর সেন জানান আসামের রোগীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করে অভূতপূর্ব ফল পাওয়া গেছে।তাঁরা কালাজ্বর কমিশনকে বিশেষ রিপোর্টে লেখেন -

    “We found Urea Stibamine an eminently safe and reliable drug and in seven years we treated some thousands of cases of Kala-azar and saw thousands more treated in treatment centers. The acute fulminating type characteristic of the peak period of an epidemic responds to treatment extraordinarily promptly and with an almost dramatic cessation of fever, diminution in the size of spleen and return to normal condition of health.was observed Since 1923 when reliable figures for the disease became available by the end of the year under report, no less than 3,28,591 patients were brought under control.it is no exaggeration ta say that approximately 3.25 lacs of valuable lives have been saved in the province.”

    1923 সালে ক্যাম্পবেল ও কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কালাজ্বর রোগীদের ওপর মাত্র 1.5 গ্রাম urea stibamine প্রয়োগ করে আশাতীত ফল পাওয়া যায়। আগে কালাজ্বরের চিকিতসায় প্রায় 12 সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগত,কিন্তু এই নতুন ওষুধে মাত্র 2-3 সপ্তাহের মধ্যেই কোন অসুবিধা, অস্বস্তি বা পুনরাক্রমণ ছাড়াই নিরাময় সম্ভব হল। Indian Journal of Medical Research, April,1924 এ প্রকাশিত হয় উপেন্দ্রনথের আরেকটি পেপার, যাতে তিনি দেখিয়েছিলেন টারটার এমেরিকে কাজ হয়নি এমন নয়জন রোগীকে তাঁর ওষুধে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছিল।

    উপেন্দ্রনাথ পরে লিখেছিলেন,
    "I recall with joy that memorable night in the Calcutta Campbell Hospital at Sealdah, where after a very hard day’s work I found at about 10 o’clock that the results of my experiments were up to my expectations. But I didn’t know then that providence had put into my hands a wondrous thing and that this little thing would save the lives of millions of my fellowmen. I shall never forget that room where Urea Stibamine was discovered. The room where I had to labour for months without a gas point or a water tap and where I had to remain contented with an old kerosene lamp for my work at night. To me it will ever remain a place of pilgrimage where the first light of Urea Stibamine dawned upon my mind."

    পঞ্চাশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কালাজ্বর ছিল আরোগ্যের অতীত, মৃত্যুর দূত। Urea Stibamine হয়ে উঠল এই ব্যধি নিরাময়ের Gold Standard Treatment। প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে এই ওষুধ কলকাতা সহ দেশের বড় বড় মেডিকেল কলেজে ও Badlipur, Solana, Hantley estate ইত্যাদি চা বাগানে ব্যবহার হতে লাগল।
    সবচেয়ে যা উল্লেখযোগ্য, মৃত্যুহার নেমে এল 90% থেকে 10% এ অর্থাৎ মৃত্যুহার পরিণত হল আরোগ্যহারে। 1936 সালে মৃত্যুহার গিয়ে দাঁড়ায় 7% এ।

    Sir John Kerr, Governor of Assam জানিয়েছিলেন এই ওষুধ তিন লাখ বা তারো বেশি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। 1932 সাল পর্যন্ত আরোগ্যের সংখ্যা দাঁড়ায় আনুমানিক পঞ্চাশ লাখ। গ্রীস, ফ্রান্স ও চীনেও এই ওষুধের ব্যবহার শুরু হয়।

    1925 সালে আসাম সরকার নির্দেশ দিল, সমস্ত কালাজ্বর রোগীর চিকিৎসা যেন Urea Stibamine দিয়ে করা হয়। Major Morison, Director of Public Health একটি নির্দেশিকা তৈরী করেন, যাতে ডোজ, ইনজেকশন দেওয়ার সল্যুশন, প্রস্তুতপ্রণালী, যন্ত্র, স্টেরিলাইজেশন প্রক্রিয়ার বিশদ নির্দেশ ইত্যাদির বিশদ নির্দেশ দেওয়া ছিল।

    উপেন্দ্রনাথের সময় স্পেসিফিক ড্রাগ বা বিশেষ ওষুধ বলতে যা বোঝায় তা ছিল খুবই কম, যেমন ম্যালেরিয়ার জন্য কুইনিন, অ্যানিমিয়ার জন্য আয়রন, সিফিলিসের জন্য আর্সেনিক যৌগ ইত্যাদি। অন্য সব অসুখের চিকিৎসা হত palliative উপায়ে, রোগের মূল কারণ না খুঁজে সাময়িকভাবে যন্ত্রণা উপশমের ওষুধ দিয়ে। অ্যান্টিবায়োটিক তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। এইসব বিচার করলে বোঝা যায় রসায়নবিদ্যাকে চিকিৎসার কাজে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

    1922 সালেই উপেন্দ্রনাথ কালাজ্বরের অন্য একটি রূপভেদ আবিষ্কার করেন, যা একই রকম সাংঘাতিক। এই অসুখে, আংশিক ভাবে আরোগ্যলাভ করেছে এমন কালাজ্বর রোগীর সারা দেহ গুটিতে (eruption) ভরে যায়, জ্বর বা অন্য অসুবিধা ছাড়াই। উপেন্দ্রনাথ এই অসুখের নাম দেন Dermal Leishmanoid। পরে এই অসুখটি BrahmachaarI’s Dermal Leishmaniosis নামে পরিচিত হয়।

    কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কারকে অতি সঙ্গতভাবেই উপেন্দ্রনাথের কালজয়ী মহত্তম কীর্ত্তি বলে মানা হয়, কিন্তু তিনি অন্য বহু অসুখ যেমন Malaria, Black-Water Fever, Cerebrospinal Meningitis, Diabetes, Filariasis, Influenza, Leprosy, and Syphilis নিয়েও মূল্যবান গবেষণা করেছিলেন,প্রকাশ করেছিলেন প্রায় 150 টি গবেষণা পত্র।1928 সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত তাঁর "Treatise on Kala azar" আজ পর্যন্ত একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে বিবেচিত হয়। জার্মান চিকিৎসাবিদ ডাঃ কার্লমেনস রচিত চিকিৎসাবিজ্ঞান গ্রন্থের কালাজ্বর অধ্যায় উপেন্দ্রনাথেরই প্রণীত।

    তিনিই প্রথম অতি দুর্লভ অসুখ Qurtartan Fever-এর অস্তিত্ব কলকাতা ও ঢাকায় আবিষ্কার করেন। Old Burdwan Fever অসুখটির বিষয়ে যে বিশাল সংখ্যক গবেষণাপত্র তখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল, উপেন্দ্রনাথ বহু পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করে তা অতি বিশদভাবে অধ্যয়ন করেন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে এই অসুখ আসলে ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বরের সমন্বয়। “On the nature of the epidemic fever in Lower Bengal commonly known as Burdwan Fever (1854-75)” নামে তাঁর এই গবেষণা Indian Medical Gazette,(September, 1911) প্রকাশিত হয়। Black-water Fever এ রোগীর লিভারের মধ্যে লোহিত রক্তকণা ভেঙে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তা তিনিই প্রথম দেখান, প্রতিরোধের জন্য কুইনাইন সমন্বিত একটি antihaemolytic ওষুধও তৈরী করেন।

    ছাত্রজীবন

    19 ডিসেম্বর, 1873 সালে উপেন্দ্রনাথ বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্তর্গত জামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, পিতা প্রখ্যাত ডাক্তার নীলমণি ব্রহ্মচারী, মাতা সৌরভসুন্দরী দেবী। উপেন্দ্রনাথ ছিলেন গোপাল ভারতী ব্রহ্মচারীর বংশধর। গোপাল ভারতী তাঁর অনুজ কেশব ভারতীর কাছে দীক্ষা নেন ও মুখোপাধ্যায় পদবী পরিবর্ত্তন করে ব্রহ্মচারী পদবী গ্রহণ করেন। (কেশব ভারতী মহাপ্রভু চৈতন্যদেবকে সন্ন্যাস গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন, নিজেও সন্ন্যাস নেন)। উপেন্দ্রনাথের ছাত্রজীবন শুরু হয় জামালপুরের ইষ্টার্ণ রেলওয়েজ বয়েজ হাইস্কুলে, এই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এনট্রান্স পরীক্ষা পাশ করে তিনি হুগলী কলেজে ভর্ত্তি হন। রসায়নশাস্ত্র ও গণিতে অনার্স সহ তিনি স্নাতক হন। বিএ পরীক্ষায় গণিতশাস্ত্রে প্রথম হওয়ার জন্য তাঁকে “Thwyates Medal” দিয়ে সম্মানিত করা হয়। গণিত ভালবাসতেন, কিন্তু এর পর তিনি একই সঙ্গে ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ ও প্রেসিডেন্সী কলেজে রসায়ন নিয়ে স্নাতোকত্তর বিভাগে ভর্ত্তি হন। প্রেসিডেন্সীতে তিনি Sir Alexander Pedler ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন, আচার্য রায়ের প্রভাব তাঁর জীবনে সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। 1894 সালে রসায়ন বিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন।

    1899 সালে তিনি L.M.S ডিগ্রি (Licentiate in Medicine and Surgery) লাভ করেন এবং পরের বছর Medicine ও Surgery এই দুটি বিষয়েই প্রথম হয়ে Goodeve ও McLeod Medals লাভ করেন এবং M.B. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। 1902 সালে তিনি M.D. ডিগ্রী অর্জন করেন, যা ছিল সেই সময়ের নিরিখে এক বিরল সম্মান। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রিও পেয়েছিলেন। তাঁর থিসিস Studies in Haemolysis, আজ পর্যন্ত লোহিত রক্তকণা বিষয়ক গবেষণার ইতিহাসে মূল্যবান।

    কর্মজীবন

    গণিতশাস্ত্র, রসায়ন বিদ্যা, ফিজিওলজি, আধুনিক ঔষধিবিদ্যা এই চারটি শাস্ত্রে প্রভূত পারদর্শিতা লাভ করার পর উপেন্দ্রনাথ 1899 সালে Provincial Medical Service যোগদান করেন। Sir Gerald Bomford এই যুবকের গবেষণায় আগ্রহ ও কর্ত্তব্যজ্ঞান দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে ঢাকা মেডিকেল স্কুলে Physiology and Materia Medica-র অধ্যাপক ও চিকিৎসক হিসাবে নিযুক্ত করেন। ঢাকাতে তাঁর অবস্থান কালে তিনি দক্ষ শিক্ষক ও চিকিৎসক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। 1905 সালে কলকাতা ফিরে এসে তিনি ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলে Teacher of Medicine and First Physician পদে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি কুড়ি বছর ছিলেন এবং এখানেই তাঁর জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হয়। 1923 সালে তিনি Additional Physician হিসাবে ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন। 1927 সালে সরকারী চাকরী থেকে অবসর নিয়ে কারমাইকেল মেডিকেল কলেজে Professor of Tropical Diseases পদ গ্রহণ করেন।

    উপরোক্ত পদগুলি ছাড়াও তিনি ছিলেন ন্যাশনাল মেডিকাল ইন্সটিটিউটের In-charge of Tropical Disease, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রী বিভাগের প্রধান এবং সাম্মানিক অধ্যাপক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তিনি চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় নানাভাবে যুক্ত ছিলেন।

    সাম্মানিক পদ

    উপেন্দ্রনাথের অন্যতম মহান অবদান যা প্রায় বিস্মৃতির অন্তরালে, তা হল তিনি কলকাতায়, ভারতবর্ষের প্রথম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় ব্লাড ব্যাঙ্কটি প্রতিষ্ঠা করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।তিনি ছিলেন ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিসের প্রধান, সেন্ট জোন্স অ্যামবুলেন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলা শাখার সভাপতি, রেড ক্রস সোসাইটির প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান।

    তাঁর কর্মতালিকা ছিল অবিশ্বাস্য রকম দীর্ঘ। কয়েকটি পদের কথা নীচে উল্লেখ করা হল -

    - ভারতীয় যাদুঘরের বোর্ড অফ ট্রাস্টির ভাইসচেয়ারম্যান
    - সভাপতি, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েসন অফ কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স
    - সভাপতি, সোসাইটি অফ বায়োলজিকাল কেমিস্ট্স
    - সভাপতি, ইন্ডিয়ান কমিটি অফ ইন্টারন্যাশন্যাল মাইক্রোবায়োলজিকাল কংগ্রেস
    - সভাপতি, ফিজিওলজিকাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া
    - সভাপতি, ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস
    - সভাপতি, এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল
    - সভাপতি, ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েসন, কলকাতা
    - ফেলো, রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিন, লন্ডন
    - সভাপতি, ইন্ডিয়ান প্রভিন্সিয়াল মেডিকাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েসন
    - ফেলো, রয়্যাল সোসাইটি অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন, লন্ডন
    - অনারারি ফেলো, ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্সেস, লন্ডন
    - ফেলো, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সেস অফ ইন্ডিয়া

    বিশেষ সম্মান

    - গ্রীফিথ মেমোরিয়াল প্রাইজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যলয়
    - মিন্টো মেডেল, স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন
    - কাইজার ঈ হিন্দ স্বর্ণপদক
    - স্যার উইলিয়াম জোনস মেডেল, সিআটিক সোসাইটি, বেঙ্গল
    - রায় বাহাদুর উপাধি
    - নাইট উপাধি
    -1929 ও 1942 সালে ফিজিওলজি ও মেডিসিনে নোবেল প্রাইজের জন্য মনোনয়ন

    ব্যক্তি উপেন্দ্রনাথ

    ব্যক্তি জীবনে উপেন্দ্রনাথ ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও দানশীল। ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি, কলকাতা ব্লাড ব্যাংক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, যাদবপুর টিউবারকুলোসিস স্যানাটোরিয়াম, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েসন অফ কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স, ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস, ভাইসরয়ের ভূমিকম্প ত্রাণ তহবিল ইত্যাদি বহু সংস্থায় তিনি মুক্তহস্তে দান করতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্কলারশিপ, পুরষ্কার ও মেডেলেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে বিনামুল্য Urea Stibamine পায় নি, ভারতে এমন কোন হাসপাতাল ছিল না বললেই হয়। দরিদ্র রোগীদের কথা ভেবে তিনি সরকারের কাছে Urea Stibamine কেনা দামে বিক্রি করতেন ও এই ওষুধের কোন পেটেন্ট নেন নি। “Science and Culture” নামের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জার্নাল প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল কেবল প্রাথমিক অবস্থায় উপেন্দ্রনাথের অর্থসাহায্যের ফলে। পৈতৃক বাড়ির কাছে পূর্বস্থলী বিদ্যালয়ে তিনি চিরকাল মুক্তহস্তে দান করতেন।
    “Brahmachari was a genius but a maverick; a rebel,” এই মন্তব্য করেছিলেন বিখ্যাত অধ্যাপিকা ও বৈজ্ঞানিক, ভারতের প্রথম মহিলা ডিএসসি অসীমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন ত্রিশের দশকের কথা, যখন চতুর্দিকে শোনা যাচ্ছে নেহরু, গান্ধীজি, জিন্না, প্যাটেল ইত্যাদি তারকাদের নাম। অসীমা লিখছেন, তাঁদের মহাত্মা ছিলেন একজনই, কুর্তা ও ধুতি শোভিত ঠাকুরদা, উপেন্দ্রনাথ, যাঁর মাথায় সর্বদা নতুন নতুন চিন্তার আনাগোনা। একদিন হঠাত তাঁর মনে হল যে দেশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে, সেই দেশে কিভাবে হাতে টানা রিক্সাওলা আরেকটি মানুষকে টেনে নিয়ে যায়? পরের দিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন একটি রিকশায়, আরোহী হয়ে নয়, চালকের ভূমিকায়। যেন কিছুই হয় নি এইভাবে তিনি রিকশাটি নামালেন, ও গম্ভীরভাবে ঘরে ঢুকে গেলেন। বৃটিশ অধ্যাপকরা ভয়ঙ্কর চটলেন, তাতে তাঁর কোন পরোয়া ছিল না ।

    নিজের বিশাল বাড়িতে তিনি প্রায়ই বৃটিশ ও ভারতীয় বন্ধু আপ্যায়ন করতেন। Lancet লিখেছেন “The fare was always good and the conversation even better. If all distinguished Indians, and for that matter all British officials, had shared his liberal outlook, many of the difficulties of India today would have been solved before they have time to develop.”

    1924 সালে উপেন্দ্রনাথ নিজের কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের বাড়িতে একটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করেন। তাঁর নেতৃত্বে এখানে উচ্চমানের গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে 1964 সালে এই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।
    নোবেল পুরষ্কারের জন্য নমিনেশন, মারণব্যধির অব্যর্থ ওষুধ আবিষ্কার, নিজের নামে একটি অসুখের নামকরণ, পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক স্থাপন করা - এত কীর্ত্তির ইতিহাস খুব কম বিজ্ঞানী রচনা করতে পারেন।
    1946 সালের ৬ ই ফেব্রুয়ারী এই বিজ্ঞানসাধকের মহাপ্রয়াণ ঘটে।।

    তাঁর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি, যা আজও প্রাসঙ্গিক
    “As a matter of the most vital concern in nation-building, the problem of nutrition demands very careful consideration by statesmen and scientists alike, more so due to the fact, as has been recently observed, that a great part of the world’s population is not consuming the necessary food stuff. An eminent Swiss authority predicts the decay of civilization unless there is a fundamental revision of the people’s diet."
    ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস,1936 সালে প্রদত্ত সভাপতির ভাষণ।

    কয়েকটি রচনা

    1. Studies in Haemolysis, University of Calcutta, 1909.
    2. Kala-Azar : Its treatment, Butterworth & Co. Ltd. Calcutta 1917.
    3. Kala-Azar in Doctor Carl Mense’s Handbuch der Tropenkrankheiten, vol. IV, 1926.
    4. Treatise on Kala-Azar, John Bale, Sons & Danielsson Ltd., London, 1928.
    5. Campaign against Kala-Azar in India in Jubilee Publication on the 80th birthday of Dr. Prof. Bernhard Nocht, Hamburg, 1937.
    6. Progress of Medical Research work in India during the last 25 years, and progress of Science in India, during the past 25 years, Indian Science Congress Association 1938.
    7. Gleanings from my Researchers Vol. I, University of Calcutta, 1940.
    8. Gleanings from my Researchers Vol. II, University of Calcutta, 1941.
    9. Infantile Biliary Cirrhosis in India in British Encyclopedia of Medical practice edited by Sir Humphrey Rolleston.

    তথ্যসূত্র

    1. Brahmachari: The Forgotten Saint Of Calcutta,by Anand Ranganathan and Sheetal Ranganathan. swarajyamag.com/science/brahmachari-the-forgotten-saint-of-calcutta
    2. Upendranath Brahmachari - A pioneer of tropical diseases: A summary of his discoveries and scientific works,Publisher: Shaker Verlag Aachen
    Authors and Editors-Dr Rajinder Singh
    3. vigyanprasar.gov.in/brahmachari-upendra-nath
    4. Biographical Memoirs of Fellows of the Indian National Science Academy Vol. 4. New Delhi: Indian National Science academy, 1976.
    5.Dictionary of Medical Biography Vol. 1 A-B, Edited by W. F. Bynum and Helen Bynum, Greenwood Press, 2006 From Philosophy and Chemistry to Biochemistry edited by D P BURMA MAHARANI CHAKRAVORTY,PEARSONLONGMAN
    6. Biographical Memoirs of Fellows of the Indian National Science Academy Vol. 4. New Delhi: Indian National Science academy, 1976.

    পরিশিষ্ট

    উপেন্দ্রনাথ এক বিস্মৃত বিজ্ঞানসাধক, একটি রাস্তার নামকরণ ছড়া তাঁর স্মরণার্থে বিশেষ কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি।
    বিজ্ঞান কখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। কালক্রমে ইউরিয়া স্টিবামাইন ওষুধটিরও কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে, পেন্টাভ্যালেন্ট অ্যান্টিমনি ব্যবহার করে অনেক উন্নততর ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। তবু 1922 সলে দাঁড়িয়ে সীমিত সুবিধা ও উপকরণ নিয়ে উপেন্দ্রনাথ যে আবিষ্কার করেন, তা লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছিল, এই কারণেই ভারত তথা বিশ্বের চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসে তাঁর আসন অক্ষয় হয়ে থাকবে।


    উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কালাজ্বরের উপর প্রকাশিত গবেষণাপত্র; Source: পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি ই-জার্নাল আর্কাইভ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১০ আগস্ট ২০১৮ | ৩৩৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | ***:*** | ১১ আগস্ট ২০১৮ ০১:৩০84864
  • বিস্মৃত এই বিজ্ঞানসাধককে নিয়ে এত বিশদ লেখা খুব কমই পড়েছি। লেখককে ধন্যবাদ।
  • কুমু | ***:*** | ১৩ আগস্ট ২০১৮ ০৪:২৬84865
  • পাইয়ের অনুরোধে লেখা।
    ছোটাইকে ভালবাসা।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১৩ আগস্ট ২০১৮ ০৮:০১84866
  • রথীন্দ্রনাথ বলেছিলেন মৃণালিনী দেবীর মৃত্যুর কারণও নাকি কালাজ্বর ছিল।

    যেসব মানুষদের দৌলতে বাঙালিরা একদিন এদেশে অন্যরকম মর্যাদা পেতো, তাঁদের একজনকে নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি প্রয়োজনীয় শুধু নয়, সময়ানুগও বটে।

    লেখককে অনেক সাধুবাদ।
  • Kaju | ***:*** | ১৩ আগস্ট ২০১৮ ১২:০৮84867
  • অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয় এমন একটি প্রবন্ধের জন্যে।
  • স্বাতী রায় | ***:*** | ১৪ আগস্ট ২০১৮ ০৬:৪৬84868
  • ভালো লাগল পড়ে। বিজ্ঞানী মানুষটির নাম তো তাও অন্তত স্কুলের বইতে পড়েছি, ব্যক্তি মানুষকে চেনানর জন্য কুমুদিকে অনেক ধন্যবাদ। সবথেকে ভালো লাগল এই লাইন কটা -
    "একদিন হঠাত তাঁর মনে হল যে দেশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে,সেই দেশে কিভাবে হাতে টানা রিক্সাওলা আরেকটি মানুষকে টেনে নিয়ে যায়?পরের দিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন একটি রিকশায়,আরোহী হয়ে নয়,চালকের ভূমিকায়।যেন কিছুই হয় নি এইভাবে তিনি রিকশাটি নামালেন,ও গম্ভীরভাবে ঘরে ঢুকে গেলেন।বৃটিশ অধ্যাপকরা ভয়ঙ্কর চটলেন,তাতে তাঁর কোন পরোয়া ছিল না ।"
  • Du | ***:*** | ১৫ আগস্ট ২০১৮ ০৩:১৮84869
  • ভালো লাগল খুব লেঝাটা।
  • . | ***:*** | ২২ আগস্ট ২০১৮ ০৭:১০84870
  • .
  • অমিত সেনগুপ্ত | ***:*** | ২২ আগস্ট ২০১৮ ১০:২৭84871
  • লেখার বিষয়বস্তু, সহজ ভাব আমাকে মুগ্ধ করেছে। ঋদ্ধ হলাম। এরকম আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম। লেখিকাকে অভিনন্দন।
  • kumu | ***:*** | ২২ আগস্ট ২০১৮ ১১:৪১84872
  • সকলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
  • PT | ***:*** | ২৩ আগস্ট ২০১৮ ০৫:০০84873
  • অ্যান্টিমনি যৌগটি কি ভাবে কাজ করে তার একটা ব্যাখ্যা এই গবেষণাপত্রে দেওয়া আছে। যদি কারো কাজে লাগে.......

    Mode of action of pentavalent antimonials: specific inhibition of type I DNA topoisomerase of Leishmania donovani
    Chakraborty A K; Majumder H K
    Biochemical and biophysical research communications (1988), 152(2), 605-11.

    Sodium stibogluconate and Ureastibamine, two potent antileishmanial drugs specifically inhibit the relaxation of supercoiled plasmid pBR322 catalyzed by DNA topoisomerase I of Leishmania donovani. Dose dependent inhibition suggests that the drugs interact with the enzyme rather than the DNA. The inhibition reported here concerning a type I DNA topoisomerase demonstrates at least one possible mode of action of these antileishmanial drugs.
  • b | ***:*** | ২৩ আগস্ট ২০১৮ ০৭:০৪84874
  • আর যদি কারো অ-কাজে লাগে? বাংলায় লিখুন না গোদা করে?
  • কুমু | ***:*** | ২৩ আগস্ট ২০১৮ ১০:১২84875
  • পিটি,ধন‍্যবাদ।
  • গবু | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৮ ০৩:১৫84876
  • তুললাম
  • prativa | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১৯84877
  • কত কম জানতাম উপেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে !
    কালাজ্বর নামটাই খুব কৌতূহল জাগায় । যা কিছু খারাপ ,জানলেওয়া , আমাদের দেশে কালা কথাটা তার সংগে জুড়ে দেবার প্রবণতা বহু প্রাচীন ।

    লেখার ধরনটাও খুব আগ্রহী করে তোলে একবারে শেষ করতে ।
  • prativa | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৮ ০৫:২২84878
  • এ কিরে বাবা ।আমি প্রতিভা সরকার কমেন্টালাম ওপরে । আর কি এলো !!!!!!
  • শক্তি | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৮ ০৬:১৮84879
  • অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা ।কিছুই প্রায় জানা ছিলো না উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী সম্পর্কে
  • pi | ***:*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৪84880
  • হ্যাঁ, পিটিবাবু বাংলায় বড় করে লিখুন না।
  • Debasis Bhattacharya | ***:*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫৬84881
  • বাঃ, অতি জরুরি লেখা, সুলিখিতও । পরিশিষ্টটি আরেকটু বিস্তারিত হওয়ার দরকার ছিল, ব্রহ্মচারী ও তাঁর আবিষ্কারকে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ও অর্থ জোগানোর জন্য ।
  • gg | 37.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৪১97272
  • ১৬০০০ ২০১৮ 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন