"কাট, কাট, কাট বলছি" চিত্রলেখাদিদির বাজখাঁই গলার পিলেচমকানো হুংকারে নতুন গুড়ের পায়েসের মত মাখোমাখো সুমিষ্ট পরিবেশটি অকস্মাৎ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, সকলে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা মুখে তাকিয়ে রইল, কৃষ্ণাদিদির হারমোনিয়ম থেমে গেল, রাজপুত্র হাত বাড়িয়ে হৃদয়শতদলের টলটলায়মান অবস্থাটি বোঝানোর চেষ্টা পাচ্ছিলেন,গুটিয়ে ফেললেন (আহা,শতদল নয়,হাত), সতরঞ্চিতে উপবিষ্ট রাজা,রাণী,হরতনী ইত্যাদিরা তাঁদের দৃশ্য আসতে দেরি আছে,এমত বিবেচনায় সামান্য ঝিমিয়ে নিচ্ছিলেন, তাঁরা চমকে উঠে জেগেইআছি মুখে সোজাসটান হয়ে বসলেন আর যে দুটো চড়ুই রোজ বিকেলের পড়ন্ত রোদে জানলায় বসে গভীর মনোযোগে মহড়া দেখে, তারা ধড়ফড় করে "কী হল, কী হল? বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো ও ও" বলতে বলতে উড়ে পালাল।
আশা করি, গুরুর ধীমতী/মান পাঠিকা/পাঠকরা বুঝতে পেরেছেন, এ কোন ফিলিম এমনকি ডকুমেন্টারি শুটিং এরও গল্প নয়। এ হল নেহাতই সে - এ - ই ত্রেতাযুগে গোপালনগর রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের "তাসের দেশ" নাটকের নেপথ্যকাহিনি। আসন্ন পুরস্কার বিতরণী উৎসব হল ইশকুলের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান, প্রতি বছর এই উপলক্ষে তিন চারটি নাটক হয়। এবার হবে তাসের দেশ, মার্চেন্ট অফ ভেনিসের তিনটি দৃশ্য আর পরীদের দেশ।
অ, চিত্রলেখা সেনগুপ্ত বা চিত্রাদির সঙ্গে পরিচয় হয়নি বুঝি! উনি হলেন সহকারী প্রধানা শিক্ষিকা, কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে বদলী হয়ে এসেছেন, স্কুল বোর্ডিং-এ থাকেন, অঙ্ক, ফিজিক্স পড়ান, কিন্তু কবিতা পড়তে যারপরনাই ভালবাসেন, ছুটির পর সিঁড়িতে বসে কতদিন ছাত্রীদের ক্ষণিকা পড়ে শোনান। চমৎকার, মোটাসোটা, হাসিখুশি চেহারা, দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। এতটুকু অকারণ গাম্ভীর্য বা অহংকার নেই, ছাত্রী, শিক্ষিকা, স্কুলকর্মী (ইনক্লুডিং বাস ড্রাইভার, দারোয়ান, মালি) সকলকে প্রাণতুল্য ভালবাসেন, এমনকি দারোয়ানের বৌ, একগলা ঘোমটা টানা কমলিসুন্দরী পর্যন্ত তাঁর স্নেহের ভাগীদার। কমলির পোষা দুই নচ্ছার ছাগলছানা হীরা, মোতি আর ড্রাইভারের পেয়ারের নেড়ি কুকুর চাক্কা সুযোগ পেলেই দিদির আদর খেতে লেগে যায়। ডিসেম্বরের শীতরোদে পিঠ দিয়ে দিদি অ্যানুয়েল পরীক্ষার অঙ্ক খাতা দেখেন, এরা তিনজন পায়ের কাছে খুনসুটি করে। দুষ্টু মেয়েরা বলে, হীরা, মোতিকে কাঁঠালপাতা আর চাক্কাকে বিস্কুট খাওয়ালেই পাশমার্ক বাঁধা। ক্লাশে এসে বা ল্যাবে নিজের হাতে টেবিল মোছেন, স্কুলের কোন দেওয়ালের প্লাস্টার খসে গেলে দিদি সেই জায়গাটা সযত্নে ঘষে দেন। সবুজ বাসের গায়ে রাস্তার কোন বদমাইশ ছেলে লম্বা লম্বা আঁচড় কেটেছিল, দেখে দিদি কাঁদো কাঁদো মুখে নিজেই সবুজ রং, বুরুশ ইত্যাদি কিনে এনে দাগগুলো মিলিয়ে দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় অবশ্য বাসের গায়ে সাদা রঙে লেখা স্কুলের লম্বা নামের স্থানে স্থানে সবুজ ছোপ পড়ে এইরকম দেখাত –
বেঁচে যাওয়া রং দিয়ে মেয়েরা সুযোগ পেলেই হীরা, মোতির পিঠে ছবিছাবা আঁকত, ফলে কমলিসুন্দরীর ঘোমটার ভেতর থেকে ভোজপুরীতে ভয়ংকর সব শাপশাপান্ত শোনা যেত।
সামান্য অসুবিধে ছিল তিনটি জায়গায় – চিত্রা দিদিমণি ছিলেন প্রচণ্ড ভুলো। চশমা, টাকাপয়সা, রুমাল, কানের দুল, বই এসব তো হামেশাই হারাতেন, ভুলভাল ট্রেনে বা বাসে চড়তেন, ছাত্রীদের এমন কি সহশিক্ষিকাদের নামও মনে থাকত না - কেবল প্রধানা শিক্ষিকা হেমন্তবালা রায়চৌধুরীর নামটি প্রাণের দায়ে মনে রেখেছিলেন। ক্লাস এইটে ঢুকে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কেউ কিছু বোঝার আগেই ক্লাস ইলেভেনের ফিজিক্স সিলেবাসের অঙ্ক বুঝিয়ে দিতেন, বা ইলেভেনে গিয়ে এইটের অ্যালজেব্রা কষে ব্ল্যাকবোর্ড ভরে ফেলতেন। শেষ অবধি নিয়ম হয়েছিল, উনি ক্লাসে এলেই মনিটর দাঁড়িয়ে যাত্রার স্টাইলে ঘোষণা করত –
"দিদি, আমরা ক্লাস নাইন, অঙ্ক ক্লাস, আজ পড়া হবে -----------"
(কী কইলেন, কেবল ইলেভেন ইলেভেন করচি কেন? আমাদের উশ্চারণ অইরকমই ছিল, বুঝলেন। টুয়েলভের কথা? দেখেন, এ হল কুমুর কিশোরীবেলা অর্থাৎ ত্রেতা যুগের কাহিনী, তখন ক্লাশ টুয়েলভ ছিল না। ইলেভেন পর্যন্ত হয়ে ইশকুল শেষ, তারপর হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিয়ে কলেজ। বোঝা গেল?
হ্যাঁ, শিক্ষিকাদের ম্যাম নয়, দিদি বা দিদিমণি বলার নিয়ম ছিল, বল্লাম না ত্রেতা যুগের গল্প।)
যাক, যে কথা বলছিলাম, দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল দিদির ক্ষণে সন্তুষ্ট, ক্ষণে অতিরুষ্ট মেজাজ যা স্ফুটনাংকে পৌঁছতে অতি অল্প সময়, ধরুন পনেরো সেকেন্ড মত লাগত, আর চটে গেলেই দিদির মুখ থেকে "বোকার মরণ, রামছাগল, গাধা, পাঁঠা, উট, জিরাফ" ইত্যাদি বিশেষণ গলিত লাভাস্রোতের মত ছুটে আসত। সামনে যে বা যারা আছে তাদের তখন ডিউটি হল হেঁটমুন্ডে কাঁচুমাচু মুখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা। আগ্নেয়গিরি শান্ত হতে বেশি সময় নিত না, তখন মিটিরমিটির হেসে দিদি আবার সেই মাটির মানুষ, চতুর্দিকে শান্তিকল্যাণ।
আর তিন নং? সেটি সামান্য অস্বস্তিকর, এই সময়ের ভাষায় বোধহয় বডিশেমিং এর পর্যায়ে পড়বে। তবে গুরুচণ্ডা৯র এই আদিগন্ত প্রাঙ্গণে আপনারা সব ঘরের লোক, বলাই যায়। থাইরয়েড অথবা অপরিমিত খাওয়া (নৈশাহারে বারোটা পরোটা, বড় জামবাটি মাংস, মেজো জামবাটি ঘুগনি, সেজো বাটি চাটনি খাওয়ার পর পেট ও মন যথাক্রমে খালি ও উদাস লাগায় গোটা ছয় রাজভোগ) অথবা যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে সকলের প্রিয় দিদি ক্রমেই বেজায় গোলগাল হয়ে যাচ্ছিলেন। ফলতঃ, কয়েকটি বিশেষ চেয়ারে বসলেই তিনি আটকে যেতেন। ওইসব চেয়ার থেকে দিদিকে উদ্ধার করতে বেশ উঁচুদরের স্কিল লাগত। কয়েকটি মেয়ে (ইনক্লুডিং কুমু) এই রেসকিউ টীমের বিশেষ সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল, তারা জানত কোথায় কতটুকু ঠেললে, টানলে বা মৃদু ধাক্কা দিলে দিদি চেয়ার থেকে মসৃণভাবে বেরিয়ে এসে একটা চওড়া হাসি দিয়ে উদ্ধারকারীদের চুল ঘেঁটে দেবেন।
কী বললেন, কেবল চিত্রাদির কথাই বলছি, এই গল্পে কুমু কই? কেন, তাসের দেশের মঞ্চে পত্রলেখার পেছনে যে দু'বিনুনি করা সদাগর রোগা হয়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে, ওই তো ক্লাস এইটে পড়া কুমু। দেখুন, আপনারা চিরটাকাল কুমুকে তাচ্ছিল্য করে এলেন বটে (সেজন্য অবশ্য বিশেষ দোষ দেয়াও চলে না। এক নব্বই কেজি ওজনের বুড়ি সর্বদা নিজের মনে ফিকফিক করে হাসে, বিনা নোটিশে বইমেলায় গুরুর স্টলে উপস্থিত হয়ে চেঁচায়, "আসবার ছিল না কথা, তবুও কুমুদি এসেছেন", আর ঈপ্সিতা যত কাজ দেয় তার এক শতাংশ ও করে না কিন্তু দেখা হলেই এমন আহ্লাদীপনা করে যে ঈপ্সিতা সব ভুলেটুলে অ্যাতো ছবি তোলে - এমন লোককে গুরুত্ব দিলেই সেটি আশ্চর্য ঘটনা হত), কিন্তু ঢ্যাঙা হওয়ার কারণে স্কুলের প্রায় সমস্ত নাটকে প্রহরী্, কোতোয়াল, সৈ্ন্যদল, চৌকিদার, সেপাই, দেহরক্ষী ইত্যাদি ভূমিকায় কুমুর পার্ট একরকম বাঁধা ছিল। নেহাৎ তখনো ক্যামেরা আবিষ্কার হয় নি, নইলে কুমু সেইসব নাটকের ছবি পটাপট এখেনে লাগিয়ে দিত আর অই যে রৌহিন ইত্যাদিরা ফ্যাচফ্যাচ করে হাসছে, তাদের মুখ দিস কাইন্ড অফ স্মল হয়ে যেত। তবে এ তো সবাই জানে, বেশির ভাগ সময়েই ওই পার্টগুলো এলেবেলে ক্যাটাগরিতে পড়ে, তাই মেকাপও আগেভাগে হয়ে যায়। চিরকালের ট্যালা কুমু অবশ্য তাতে কিছু মনে করত না, সে বিরাট গোঁফ লাগিয়ে ইয়াব্বড় পাগড়ি বেঁধে, সড়কি বা বল্লম, অভাবে মোটা লাঠি হাতে ইতিউতি ঘুরে বেড়াত, দিদিমণিদের হাতে হাতে কাজ করত বা স্টেজ সাজাতে সাহায্য করত ।
আগের বছর এই উৎসবে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন আশাপূর্ণা দেবী। বড়দিদিমণি লেখিকাকে নিয়ে গেটের কাছে এসে গেছেন, এই খবর পাওয়া মাত্র তাঁকে অভ্যর্থনা করতে কয়েকজন শিক্ষিকা পড়ি কি মরি করে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটলেন, আর সেই দলের নেত্রী চিত্রাদি কী মনে করে প্রহরীবেশী কু্মুকেও নড়া ধরে টেনে নিয়ে চললেন। আশাপূর্ণা দেবী অবশ্য বহুদর্শী মানুষ, বল্লমধারী প্রহরীর অভ্যর্থনা দেখে তিনি মোটেই আশ্চর্য হলেন না, হাসিমুখে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে হলের ভেতরে এলেন। পুরষ্কার বিতরণের সময় সেই প্রহরী যখন এসে নমস্কার করে দাঁড়াল, তখন তাঁর কৌতূকপূর্ণ স্মিত মুখটি আজও কুমু চোখ বন্ধ করলে পরিষ্কার দেখতে পায়।
ওহ্, বুড়ো বয়েসে গল্প বলতে বসার এই এক মহা হ্যাপা, কথারা কোথা হতে কোথায় গড়গড়িয়ে চলে যায়, গল্পের খেই হারিয়ে যায়। কিসের কথা হচ্চিল যেন, অ সুমন, অরণ্য, অমন আধভেজা বেড়ালের মত মিটমিটে হাসিটি পকেটে রেখে একটু ধরতাই দ্যাও না, বাপু। কী বল্লে, না না ,বড়মন্ত্রী বা গুলিসুতোর কোন গল্প হচ্চিল না, পক্ষীরাজের ন্যাজের বিষয়েও আমি কিছু জানি না। এই তো হুতো, অভ্যু এরা বড় লক্ষ্মী ছেলে, ঠিক কয়েচে, আমরা ছিলাম কুমুর সেই ছোটবেলার ইশকুলে তাসের দেশের মহড়ার দৃশ্যে।
তা, চিত্রাদি তো দুই হাত নেড়ে "কাট কাট" বলতে বলতে হেলেদুলে এসে ধাঁই ধপ্পাস করে একটি চেয়ারে বসলেন, চেয়ারের অসহায় প্রতিবাদ ও মেয়েদের নীচু গলায় সম্মিলিত হতাশার শব্দ একসঙ্গে শোনা গেল। আর অন্যদিক থেকে ছাত্রীদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে ভীষণ গনগনে মুখে তেড়েমেড়ে উঠলেন পরিচালিকা অপর্ণাদি –
"আপনি কাট কাট বলে হঠাৎ এইরকম চ্যাঁচালেন কেন? দিব্যি হচ্ছিল তো"
"দিব্যি হচ্ছিল? অই অর্জুন গানের সঙ্গে এত এক্সপ্রেশন দিচ্ছিল কেন? বেজায় ওভার অ্যাকটিং তো। রোজ বলি, আমি চাই সংযত, সুন্দর অভিনয় –"
"অর্জুন কোদ্দিয়ে এল? সে তো চিত্রাঙ্গদায় ছিল, গতবছর হয়ে গেছে। তাসের দেশে অর্জুন?"
"(কুমুর উদ্দেশ্যে) অ্যাই মেয়ে, সুপর্ণা তো তুই? কোন চরিত্র করচিস?"
এখন, এই পয়েন্টে কুমুর নিজেরো বেশ কনফিউশন ছিল। "তাসের দেশ" নাটকের প্রথম দৃশ্যে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে দুটি চরিত্রের নাম-রাজপুত্র ও সদাগরপুত্র। কিন্তু নাটকের মধ্যে সর্বত্র চরিত্রটি সদাগর। সুতরাং, ভূমিকাটি পিতা অথবা পুত্রের, তা নিয়ে কুমুর বিভ্রান্তি ছিল। কিন্তু জীবনে প্রথমবার বেশ কিছু সংলাপ বলার সুযোগ পেয়ে সে এইসব আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নিয়ে আর বেশি নাড়াঘাঁটা করেনি। এখন এই মোক্ষম প্রশ্নটির সামনেও সে বাক্যব্যয় না করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকাই নিরাপদ মনে করল। কিন্তু অপর্ণাদি ছাড়বেন কেন?
"কথা বলছ না যে! এ হল সদাগর,রাজপুত্রের সখা।"
"অ, বুঝেচি, তা গোপন কথাটি গানের সঙ্গে ও অমন রবি ঘোষের মত মুখ করছিল কেন? আর হারমোনিয়ম অত লাউড কেন? এসব কানে ঢোকে না আপনাদের?"
স্কুলের সমস্ত অনুষ্ঠানের নিষ্ঠাবতী হারমোনিয়মবাদিকা কৃ্ষ্ণাদি ছিটকে উঠে দুমদুম করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। খানিকক্ষণ তাঁর যাওয়ার দিকে হতাশভাবে চেয়ে থেকে অপর্ণাদি "আজ হেস্তনেস্ত করবই" এই রকম একটা কঠিন গলায় প্রশ্ন করলেন,
"চিত্রাদি, এই নাটকটার পরিচালিকা কে? আমি না আপনি?"
"আমি, আমিই তো। মিটিং এ ঠিক হল, মনে নেই?" সগর্বে, প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব এল।
শুনে আর সব শিক্ষিকারা স্থানকাল ভুলে হো হো করে হাসতে থাকলেন। অপর্ণাদি মাথায় হাত দিয়ে হতাশ ভাবে সতরঞ্চিতেই থেবড়ে বসে পড়লেন। চিত্রাদি অবশ্য সদয় হয়ে চেয়ার থেকেই হাত বাড়িয়ে তাঁকে ঠিকঠাক করে বসিয়ে দিলেন। জলটল খেয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে কেমন ভাঙা ফ্যাসফেসে গলায় অপর্ণাদি বললেন,
"আপনি নন, তাসে্র দেশের পরিচালিকা হলাম আমি। আপনি হলেন মার্চেন্ট অফ ভেনিসের পরিচালিকা, পাশের ঘরে যার মহড়া হচ্ছে।"
"অ, তাই নাকি! ঘরটা আর মেয়েগুলোকে একটু অন্যরকম লাগছিল বটে। ওরে, আমায় একটু তোল না, দেখচিস না ভুলভাল জায়গায় আটকে গেছি।"
রাজা, রাণী, হরতনী এবং অবশ্যই সদাগর দৌড়ে আসে, তলব পেয়ে আদালত ফেলে ছুটে আসে পোর্শিয়া ও শাইলক।
বিয়ের সুবিশাল কেনাকাটা, কার্ড ছাপানো, নেমন্তন্ন, আইবুড়ো ভাত খাওয়া, ব্যাচেলরস পার্টি এইসব হতে হতেই একদিন হঠাৎ দেখা যায়, বিয়ে হয়ে গেছে। তেমনই মহড়া, মহড়া, স্টেজ রিহার্সাল - ৩ নং, ২ নং. ফাইনাল এইসব ঝড়ের বেগে পার হয়ে এসে গেল অনুষ্ঠানের দিন। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হত রবীন্দ্র ভবনে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উপলক্ষে স্থাপিত এই প্রেক্ষাগৃহে গোপাল নগরের যাবতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। সকাল থেকে শিক্ষিকা ও ছাত্রীরা স্কুল থেকে একশো আট রকমের দরকারী বা অদরকারী জিনিস ভবনে নিয়ে যেত, বাসদুটি মাকুর মত যাতায়াত করত।
কী বললেন? তাসের দেশ নাটক কেমন হল? অতি চমৎকার অভিনয়, সুন্দর মঞ্চসজ্জা, অপূর্ব গান ও নাচ। সামান্য একটু সমস্যা অবশ্য হয়েছিল শেষ দৃশ্যে, যা না হলে এই গল্প, (মতান্তরে টল্প) লেখাই হত না। রাজপুত্র যে সেজেছে, কুমুর প্রাণের বন্ধু সেই মালবিকার কথা আপনাদের বলা হয় নি। সে ছিল ভারি সরল, সাদাসিধে, মেধাবী কন্যা, অসাধারণ গান গাইত, সুন্দর অভিনয় করত, তবে অসম্ভব পেটরোগা। অর্ধেক দিন গাঁদাল পাতা বা মাগুর মাছের ঝোল বা বার্লি খেয়ে থাকত, আর সে কারণেই হয়ত ভাল খাবার দেখলে নিজেকে সামলাতে পারত না। দুপুরে স্কুল থেকে দেওয়া লাঞ্চ - লুচি, ছোলার ডাল, ঘুগনী এইসব দু তিন বার করে নিতে দেখেই কুমু বন্ধুকে সাবধান করে দিয়েছিল, "অত অত খাস নি, শেষে হয়ত স্টেজেই -----"
সকলের সম্মিলিত হাসির চোটে কথাটা চাপা পড়ে গেল, মালবিকাও অবিচলিত ভাবে খেয়ে যেতে লাগল। কিন্তু নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে কুমু সভয়ে লক্ষ্য করল - "এ আমাদের ইচ্ছে" এই সংলাপ টি বলেই রাজপুত্র আস্তে আস্তে পিছিয়ে যাচ্ছে। মঞ্চে তখন অনেক চরিত্র, ছক্কা-পঞ্জা, টেক্কা, হরতনী, রাজা রাণী ইত্যাদি। শেষ নাটকের শেষ দৃশ্য, দর্শক একটু কম, কিন্তু কুশীলবরা প্রাণপণে অভিনয় করে যাচ্ছে, হেনকালে কুমু একটি ঠান্ডা ভিজে হাতের স্পর্শ পেল, আর চোখের কোণ দিয়ে দেখল রাজপুত্র পা টিপে টিপে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের বজ্রকঠিন ডিসিপ্লিন, শৃঙ্খলা ইত্যাদি অগ্রাহ্য করে অসময়ে মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার মত অচিন্তনীয়, অসম্ভব ব্যাপার আর কিছুই ছিল না। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিতে নিতে কুমু শুনল, রাণী বলছেন "কোথায় গেল সেই মানুষরা।"
নিরুপায় সদাগর বলল রাজপুত্রের হয়ে "এই-যে আছি আমরা।"
পরের দুটি সংলাপও (পারবে, নিশ্চয় পারবে; আর শেষ সংলাপ -সন্দেহ করি। কিন্তু, রানী আছেন তোমার সহায়। জয় রানীর।) সদাগর বলে দিল রাজপুত্রের মত গলা করে। সৌভাগ্যবশত কেঊ অতটা খেয়াল করল না।
বাঁধ ভেঙে দাও গানটি সমবেত ভাবে গাওয়া ও সকলে মঞ্চে এসে দর্শকদের অভিবাদন করার পর নাটক শেষ। তখনো মালবিকার দেখা নেই। ড্রেসিং রুমে কোনরকমে পোশাক বদলে স্কুল ইউনিফর্ম পরেই কুমু ছুটল বন্ধুর খোঁজে।
চারটি টয়লেট, সবগুলোই খালি। ড্রেসিং রুম খালি, অন্য তিন চারটি ঘরে তালা পড়ে গেছে।
অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের বাস শিক্ষিকাদের এবং যে সব ছাত্রীদের বাড়ি থেকে কেউ অনুষ্ঠান দেখতে আসেনি, তাদের পৌঁছে দিত। কুমু বাসে ফিরত, সে কারণে মালবিকাও বাবামাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বাসে চড়ত।
কুমু ভাবল, শরীর খারাপ লাগায় মালবিকা মায়ের সঙ্গে বাড়ি চলে গেল বা বাসে ঊঠে পড়েছে? নাহ, ওর নাম লেখা ইউনিফর্মের প্যাকেট, প্রাইজের বই সব পড়ে রয়েছে। কুমুকে ছেড়ে একা বাসে উঠবে তা সম্ভব নয়।
সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে একে একে, কুমু প্রাণপণে বন্ধুকে খুঁজে যাচ্ছে, ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, এমন সময় চোখে পড়ল চিত্রাদি আসছেন তাঁর চিরাচরিত হাসিমুখে।
ঘটনা শুনে দিদিও একটু থমকে গেলেন, "সব টয়লেট দেখেছিস?"
"হ্যাঁ দিদি।"
বিভ্রান্ত মুখে একটু ইতিউতি চেয়ে দিদি বললেন, "চল, ওই যে দিগবিজয় সিং বসে আছে, ওকে জিগাই।"
দিগবিজয় সিং, অর্থাৎ, ভীষণ রোগাপ্যাংলা কিন্তু উজ্জ্বল চোখের একটা পনেরো ষোল বছরের ছেলে, চৌকিদারের পরিবারের কেউ হবে, ভাঙা টুলে বসে আমাদের দেখছিল।
"এই, উপরমে কোই ঘর হ্যায়? টয়লেট, মানে ওই ইয়ে হ্যায়?"
"হিঁ, অপরে বাদরুম রয়েচে তো।"
"কোন দিদিকে যেতে দেখলি ?"
"এই মাত্তর এলুম ত, কাউকে দেখিনিকো।"
সামান্য বিরতির পর - "ওদিকে ভূত আছে।"
তুচ্ছ ভূতের ভয় অবশ্য চিত্রাদিদিকে বিচলিত করতে পারে না, তিনি মহাবেগে দৌড়ে বেজায় নোংরা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় চড়েন, পেছনে কুমু। সামনেই টয়লেট, ভেতর থেকে নির্ভুল মালবিকার কান্না।
চিত্রাদি ও কুমুর আওয়াজ পেয়ে মালবিকা আর্ত্তস্বরে কেঁদে ওঠে, "দিদি আমি আজ মরে যাব।"
"মরবি কেন? পেটখারাপ তো তোর রোজই হয়। ভূত দেখেছিস? ও কিছু না। স্টেজ থেকে বেরিয়ে গেছিলি বলে একমাস দাঁড় খাবি, বড়জোর।" কুমু সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করে।
"সে সব নয় রে, টিকটিকি। তখন কেউ যাতে না দেখে ফেলে, তাই ওপরে চলে এসেছিলাম। বেরোতে গিয়ে দেখি কী বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি বিরাট চেহারার কালো ছোপছোপ –। অন্তত দশবারোটা। ছাদে, দরজায় সবখানে। একটা ঠিক ছিটকিনির ওপর গোল হয়ে বসে আছে। আমি মরে যাব এইখানে, কুমু উ উ"
"তাড়া দে, অন্তত ছিটকিনির ওপরেরটাকে তাড়া" দিদি চেঁচান।
"যাচ্ছে না দিদি। পারব না তাড়াতে"
"দাঁড়া, আমরা বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা দিই ।
"নাঁ নাঁ, ও দিদি, আঁমার ওপর পঁড়বে।
"কুমু, ছেলেটাকে ডাক তো। নাহ থাক, ও কী করবে?"
মফস্বল শহরের রাত দশটা, জনশূন্য রবীন্দ্র ভবন,মালবিকার প্রবল হাহাকার – এর মধ্যে দিদি একটু ভেবে, কুমুকে দুটি প্রশ্ন করলেন –
- তোর স্কার্ট টাইট? (স্কুলের ইউনিফর্ম ছিল সাদা ব্লাউজ, মেরুন স্কার্ট। বাড়ন্ত কিশোরীদের স্কার্ট অনবরতই ঢিলা বা টাইট হত, হুক, সেফটিপিন ইত্যাদি লাগানো মায়েদের নিত্যকর্ম ছিল। পরে চিত্রাদিই বেল্ট প্রবর্ত্তন করেন।)
- চল, চল, চল, উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল - এই গানটা জানিস?
বিন্দু বিসর্গ না বুঝলেও দুটি প্রশ্নেরই হ্যাঁ উত্তরে দিদি ভারী খুশি হলেন।
"দেখ,আমি কী করছি। দেখে নে, আমাকে ফলো করবি।"
সেই দৃশ্য একবার দেখলে জন্ম জন্মান্তরে ভোলা সম্ভব না।
১। চল চল চল! ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল – বিশাল গোলাকৃতি চেহারার চিত্রাদির গানসহ দুলে দুলে জগিং ,
২। নিম্নে উতলা ধরণি তল, অরুণ প্রাতের তরুণ দল – মৃদু গতিতে তালে তালে ধাবিত হওন,
৩। চল রে চল রে চল চল চল চল -হো ও ও.. অবিশ্বাস্য বেগে ছুটে গিয়ে কাঁধ দিয়ে দরজায় প্রচণ্ড ধাক্কা দেওন।
দু'বার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দেখার পর কুমুও যোগ দিল।
মোট ছবারের চেষ্টায় দরজা ভেঙে পড়ল,আর ভেতরে তাকিয়েই কুমু চোখ বুজে ফেলল, একটা বিকট টিকটিকি সত্যি সত্যি মালবিকার হাতের ওপর পড়ে ধড়ফড় করছে।
চিত্রাদির অসীম সাহস, তিনি এক ঝাপড় মেরে টিকটিকি ফেলে দিয়ে, প্রায় অজ্ঞান মালবিকাকে কোলে তুলে, কুমুকে টানতে টানতে নীচে নেমে এলেন। কোনরকমে দুজনের প্রাইজগুলো তুলে নিয়ে মেয়ে দুটিকে বাসের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলতে দু মিনিট সময় লাগল। দুজন ড্রেসার দিদি রাজপুত্রের পোশাক ফেরত নেবার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে শেষমেশ বিষণ্ণ মুখে তার ইউনিফর্মের থলিটি নিয়ে রিকশায় চড়তে যাচ্ছিলেন, চিত্রাদি সেটি ছিনিয়ে নিয়ে কুমুকে ধরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বললেন, "অই মুকুট ফুকুট পরে পাঠিয়ে দেব।"
বাস চলল রাতের শহরের নির্জন পথে, হাক্লান্ত শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের ঘরে পৌঁছে দিতে।
দুদিন ছুটির পর স্কুল খুলল; প্রার্থনা সভায় গান শেষ হওয়া মাত্র বড়দিদিমণি ফেটে পড়লেন "তোমরা জান, এই স্কুল তার ছাত্রীদের সততা, মূল্যবোধ শৃঙ্খ্লাবোধের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু সেই সুনামে তোমরা কালি ঢেলে দিয়েছ। পুরস্কার বিতরণী উৎসবের দিন কে বা কারা রবীন্দ্র ভবনের দোতলায় উঠে শৌচাগারের দরজা ভেঙেছ। ভবন কর্ত্তৃপক্ষ আমাদের বিনামূল্যে মঞ্চ ব্যবহার করতে দেন, তোমরা তার এই প্রতিদান দিলে? দোষীকে ধরতে পারলে আমি এমন শাস্তি দেব, জীবনে ভুলবে না। "
রাগে, দুঃখে বড়দিদিমণির কথা বন্ধ হয়ে যায়।
আরো একটি পুরস্কার বিতরণী উৎসব চলে গেছে,পরের বছর গরমের ছুটির দিন।
এই দিনে জয়েন্ট প্রেয়ার হয়, ক্লাশ ওয়ান থেকে ইলেভেন পর্যন্ত সমস্ত ছাত্রীদের নিয়ে। প্রার্থনার পর ক্লাশে ক্লাশে গান, আবৃত্তি, নাচ, খাওয়াদাওয়া এইসব হয়।
প্রতিটি ক্লাশের লাইনের সামনে মনিটর দাঁড়িয়ে আছে, ওয়ান এর তিনটি লাইনের সামনে একজন করে বড় মেয়ে, কুমু তাদের একজন।
প্রার্থনা শুরু হল –
"ও পিতা নোহসি—"
"মোরে ডাকি লয়ে যাও, মুক্ত দ্বারে তোমার বিশ্বের সভাতে আজি এ মঙ্গলপ্রভাতে মোরে ডাকি লয়ে যাও"
সব শিক্ষিকারা দাঁড়িয়ে আছেন, কেবল চিত্রাদি বসে আছেন একটি চেয়ারে।
বড়দিদিমণির গলা শোনা গেল, কাল থেকে গরমের ছুটি, পড়াশোনা্র কথা – এইসব কিছুই না বলে তিনি বললেন,
"মেয়েরা, তোমরা হয়ত জান, আমাদের প্রিয় চিত্রাদি অসুস্থ। উনি তোমাদের জানাতে বলছেন, ওনার ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছে, উনি বম্বে যাচ্ছেন চিকিৎসা করাতে। আমরা মনেপ্রাণে প্রার্থনা করব, উনি সুস্থ হয়ে হাসিমুখে আমাদের মধ্যে আবার---------"
ইশকুলের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী আবেগের বহিঃপ্রকাশ, কোন কারণে বিচলিত হয়ে কান্নাকাটি করা অত্যন্ত অপছন্দ করা হত, আজ বড়দিদি স্বয়ং সেই নিয়ম ভেঙে ফেললেন।
শিক্ষিকারা নিজেদের ধরে রাখতে পারছেন না, অনেক মেয়েরা আগেই জানত, তারা মুখ নিচু করে আছে।
ক্লাশ ওয়ানের বাচ্চারা কী বুঝল কে জানে, তারা সামনে দাঁড়ানো বড় মেয়েদের প্রায় ঠেলে ফেলে চিত্রাদিকে ঘিরে দাঁড়ালো।
- দিদি, ইঞ্জেকশন দিতে এলে কেঁদো না যেন, দেখবে একটুও লাগবে না।
- দিদি, ওষুধ খেও মনে করে।
- দিদি, হরলিক্স খেও, আর ঝোল ভাত।
- দিদি, তোমার কাছে পয়সা আছে তো? এই নাও আমাকে মা আজ টিফিন খেতে দিয়েছিল।
যে যা পারে, পয়সা, লজেন্স, সন্দেশ, বিস্কুট, হজমিগুলি, রং পেন্সিল, রবার, ফুল, এমন কি গাছের পাতা দিয়ে চিত্রাদির কোল ভরে দিল। সব বাচ্চাদের দিদি চুমু দিলেন, আদর করলেন।
তারপর অপরূপ হাসিমুখে চিত্রাদি সব মেয়েদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন, "খুব সুন্দর থেকো, আনন্দে থেকো সকলে। দেখো, নিজের মানুষরা, আশপাশের জীব, গাছপালা সক্কলে যেন ভাল থাকে। আচার খাবে, বৃষ্টিতে ভিজবে, গান গাইবে, লাফাবে চ্যাঁচাবে যখন যেমন মন চায়। আর সময় পেলে একটু আধটু পড়াশোনাও করো, কেমন। এখন ক্লাশে যাও, Good Bye, God be with you."
সব ছাত্রীরা ক্লাশে গেল, শিক্ষিকারা চোখ মুছতে মুছতে টিচার্স রুমে ফিরে গেলেন। বিশাল প্রেয়ার গ্রাউন্ডে কেউ নেই। কেবল সম্রাজ্ঞীর মহিমায় চেয়ারে আসীন চিত্রলেখাদি আর কুমুসহ চারটি মেয়ে। তাদের দায়িত্ব দিদিকে সাবধানে তাঁর নিজের ঘরে নিয়ে যাওয়া।
দুটি মেয়ে একটি থলিতে জিনিসগুলো সব গুছিয়ে তুলছে, দিদি হঠাৎ কুমুর দিকে তাকিয়ে একটা ভুরু নাচালেন, "সরোজিনী, আরে আমার তো সবসময়েই মনে ছিল তোর নাম সরোজিনী, ইচ্ছে করে উল্টোপাল্টা নাম বলতাম, কেমন চমৎকার একটা জিনিস তোকে শিখিয়ে গেলাম, বল? প্রথমে আস্তে আস্তে তালে তালে ছুটবি, তার পর জোরসে রামধাক্কা, সব দরজা ভেঙে পড়তে বাধ্য। দেখবি, জীবনে কতসময় এই শিক্ষা কাজে লাগবে। নে, এখন আমাকে তোল দিকি, হীরা মোতি আর চাক্কাকে একটু বিস্কুট আর সন্দেশ দিয়ে আসি। তোরাও লজেন্স নে, আমাকে দে।
আরে কী মুশকিল, অতবার নাক মুছিস কেন? কতবার তোদের শুনিয়েছি তো-
মনেরে তাই কহ যে/ ভালোমন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে ।"
ছবি ঃ সায়ন কর ভৌমিক
বাঃ, কুমুদি! ভালো লাগলো।
ওফফ . এটা পড়ার পর থেকে হেসে চলেছি . পেট থেকে ভসভসিয়ে হাসি উঠে আসছে।
আপনি বড়ো কম কম লেখেন ।এরকম মন ভালো করা লেখা প্রতি হপ্তায় হপ্তায় আসুক।
জবরদস্ত কলম। কুমুদির কি গরপাড়ের রায়চৌধুরী বাড়ির সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে?
আমার নাম দেখে ভারি ভালো লাগল। চিরাচরিত মনকাড়া লেখা।
আহা! কি মিস্টি লেখা!!! প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
*মিষ্টি
কতকাল বাদে আবার কুমুদির লেখা পড়লাম এবং যা হওয়ার কথা মুগ্ধ হলাম।
কী জানি, এই লেখাটি পড়ে হাসতে পারছি না, রুমাল খুঁজছি। চিত্রাদির মতন মানুষেরা সংখ্যায় একটু বেশি হলে দুনিয়ার আরও সহজ সুন্দর হত।
সকলকে শুভেচ্ছা।
গল্পটি সত্য ঘটনা আ ধারিত।
ওঁ পিতা নোহসি হবে।
ইশকুলের দিদিরা এই ভুলটা দেখলে কান মলে দিতেন।
কুমুদি,
এই লেখা ঠিক এই ফর্মে একদম প্রত্যক্ষদর্শী করে দেয়। যেন ঠিক এক্ষুণি সামনে ঘটছে -
আমি কুমু নামে লিখতে চাই।কিভাবে লিখব ?
ওপরে ডানদিকে কোনায় ড্রপডাউনে ব্যবহারকারীর খুঁটিনাটিতে গেলে স্ট্যাম্প পেপার উকিল সব পাবেন।
থ্যাংকু,থ্যাংকু
ভিন্টেজ কুমু ! বহুদিন পর ....
কুমু লী ম উপাধি প্রাপ্ত
কুমু লী ম উপাধি প্রাপ্ত
কুমুদিদির লেখা আমার বরাবরই খুব ভালো লাগে। এত ঝরঝরে, এত সরস, মনভালো করা লেখা! ছোট ছোট কথা, নাগালের মধ্যেকার ব্যাকড্রপ, কিন্তু সবই হাসির রসে টলমল করছে। তো এই গল্পটায় শুধু দুটো জিনিষ নিয়ে একটু অন্যরকম বলবার আছে। ১) শেষটা সামান্য একটু যেন রাশড লাগলো। ২) গুরুচন্ডালী বা ভাটিয়ালির সাথে যাঁরা পরিচিত নন তাঁদের কিছু কিছু জায়গা বোঝার একটু অসুবিধে হবে না? আদার ওয়াইজ চমৎকার। লী ম উপাধি সম্পর্কে কল্লোলদার সাথে একমত।
চিত্রাদির মত শিক্ষকদের আমাদের দ্বাপর যুগেও কিছু দেখেছি। তারপর, হাসে ইতিহাস
চিত্রাদিদের জন্যই পৃথিবী এখনো সুন্দর। অপূর্ব লেখা
লেখক ধরা ছোঁয়ার বাইরে- লিখছেন, ছাপা হচ্ছে , পাঠক পড়ছে, মতামত দেবে - কুমুদিদির সব লেখা তেমন নয়।
এই লেখা পড়তে গিয়ে মনে হয় সামনে বসে গল্প শুনছি আর বয়স কমে গিয়ে খিলখিলিয়ে হাসি আসছে; আবার শেষের দিকে চোখ চিকচিক করল, নাক টেনে নিলাম -
গম্ভীর সমালোচনা, মতামত অন্য লেখার জন্য তোলা রইল।
সকলকে অনেক ভালবাসা দিলাম।
তবে কিনা অই ল ীম উপাধি শুনলে ঘুড়ায় হাসব। সারাজীবনেও কি লীমর নখের যুগ্যি হতে পারা যায় ?
কেকে ,শেষটি একটু সংযত করতে চেয়েছিলাম। ঠিকই বলেছ,গুরুর সঙ্গে পরিচিত নয়,এমন পাঠক অনেক জায়গাতে আটকে যাবেন.। এই লেখাটি এক্সক্লুসিভলি গুরুর জন্য।
আবার সকলকে অনিঃশেষ ধন্যবাদ শুভকামনা ভালোবাসা ।এত বচ্ছর ধরে আপনারা কুমুর গল্প পড়ে চলেছেন ,তা আপনাদের নিজগুণে।
দারুন, দারুন এবং দারুন
এই তো ভালো লেগেছিল
খুব ভাল লাগল। চিত্রাদি রা আছেন তাইতো পৃথিবী এত সুন্দর।