“এটা কিন্তু প্রথম টাইম মেশিন, হ্যাঁ মশায় ।” প্রোফেসর জনসন বেশ একটু গর্বের সঙ্গে তাঁর দুই সহকর্মীকে বললেন, “মডেলটা একটু ছোট করেই বানালাম, যদিও । তিন পাউন্ড পাঁচ আউন্সের বেশি ভারি জিনিসের ওপর এ পরীক্ষা চলবে না, আর অতীত বা ভবিষ্যতে বারো মিনিটের বেশি দূরে পাঠানোও যাবে না । তবে, এতে সত্যিই কাজ হয় ।”
ছোট্ট জিনিসটা দেখতে অনেকটা ডাকঘরের সেই চিঠি ওজন করার যন্ত্রের মতন, তফাত শুধু এই যে, এক্ষেত্রে ওজন করার পাটাতনের নিচের অংশে খান দুই ডায়াল আছে ।
প্রোফেসর জনসন ধাতুর তৈরি একটা ছোট্ট ঘনক হাতে তুলে নিলেন । “একটা পেতলের ঘনক, এর ওজন এক পাউন্ড এবং দুই দশমিক তিন আউন্স । আমাদের পরীক্ষাটা হবে এর ওপরেই, প্রথমে আমি একে পাঁচ মিনিট ভবিষ্যতে পাঠিয়ে দেখাব ।”
তিনি সামনে একটু ঝুঁকে টাইম মেশিনের একটা ডায়াল সেট করলেন । বললেন, “আপনাদের হাতঘড়ি দেখুন।”
সহকর্মীরা ঘড়ির দিকে তাকালেন । তারপর প্রোফেসর জনসন আস্তে আস্তে ঘনকটাকে মেশিনের পাটাতনটার ওপর রাখলেন, এবং ঘনকটা অদৃশ্য হয়ে গেল ।
এবং, কাঁটায় কাঁটায় ঠিক পাঁচ মিনিট পরে সেটা আবার স্বস্থানে ফিরে এল ।
প্রফেসর সেটা হাতে তুলে নিয়ে বললেন, “এবার পাঁচ মিনিট অতীতে”, এবং অন্য ডায়ালটি সেট করলেন । ঘনকটি হাতে ধরা অবস্থায় ঘড়ি দেখলেন তিনি, “এখন তিনটে বাজতে ছয় মিনিট বাকি । আমি ঠিক তিনটের সময়ে ঘনকটাকে ওই পাটাতনে বসিয়ে মেশিন চালু করে দেব । তাহলে, এখন ওই ঘনকটির উচিত হচ্ছে ঠিক তিনটে বাজার পাঁচ মিনিট আগে আমার হাত থেকে অদৃশ্য হয়ে ওই পাটাতনের ওপর চেপে বসা । আমি ওটা ওখানে বসাবার ঠিক পাঁচ মিনিট আগেই । তাইতো ?”
“কিন্তু, তাহলে আদৌ ওটা ওখানে বসাবেন কী করে ?” জিজ্ঞেস করলেন এক সহকর্মী ।
“আমার হাতটা যেই পাটাতনের দিকে এগোবে, অমনি ওটা ওখান থেকে অদৃশ্য হয়ে আপনা থেকে আমার হাতেই আবার ফিরে আসবে, যাতে ওটা ওখানে রাখতে পারি । নিজের চোখেই দেখুন।”
হাত থেকে ঘনক অদৃশ্য হল, এবং পাটাতনে আবার ঠিকঠাক ফিরেও এল ।
“দেখেছেন, আমি ওখানে রাখার ঠিক পাঁচ মিনিট আগেই ওটা ওখানে গিয়ে হাজির হয়েছে !”
“হুম, কিন্তু ধরুন,” ঘনকের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে অন্য সহকর্মী বললেন, “আপনি ওটা ওখানে রাখার পাঁচ মিনিট আগেই এই যে ওটা ওখানে এসে গেল, এখন আপনি যদি মত পালটে ফেলেন, এবং তিনটের সময়ে ওটা ওখানে আর না রাখেন, তখন কী হবে ? সব ঘেঁটে গিয়ে একটা ভজঘট্ট লেগে যাবে না ?”
“আরে, দারুণ বলেছেন, এ কথাটা তো সত্যিই কখনও ভেবে দেখিনি!” বললেন প্রোফেসর জনসন, “দাঁড়ান তবে, চেষ্টা করে দেখি । ভাল কথা, আমি তাহলে ওটাকে আর ওখানে …………”
নাঃ, গণ্ডগোল তেমন কিছুই হলনা । যেমনকার ঘনক ঠিক তেমনটিই রইল ।
শুধু, প্রোফেসর এবং তার সহকর্মীবৃন্দ সমেত বাকি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড লোপাট হয়ে গেল !