এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • তোমার বাস কোথা যে... - ৩৩

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ | ৪২১ বার পঠিত
  • ।। তেত্রিশ ।।
    [ এই কাহিনীর সব চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তির সাথে কোনও মিল যদি কেউ খুঁজে পান তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। ]

    কার সঙ্গে আসছে রঙিন, খালি চোখে বুঝতে পারে না অরুণাভ। চশমাটা মাটি থেকে তুলে চোখে দেয় সে। তারপর দেখে অন্য কেউ না, ডাক্তার আসছে। তবে সে হাঁটছে একটু খুঁড়িয়ে, আর গায়ে বেশ ঝলমলে ফুলহাতা একাধিক রঙের টি-শার্ট। আগে সব সময়েই হালকা রঙের ফরম্যাল পোশাকে ডাক্তারকে দেখেছে অরুণাভ। তবে এমন বেশের জন্য না হলেও, খুঁড়িয়ে হাঁটার কারণেই সে বিনা চশমায় দূর থেকে বুঝতে পারেনি ইন্দ্রনীলকে। কিন্তু ডাক্তার এভাবে হাঁটছে কেন? কী হয়েছে? জিজ্ঞাসা করার সময় পেল না অরুণাভ। তার আগেই ইন্দ্রকে ডেকে নিল রঞ্জিত, হাসপাতালে একাধিকবার যাওয়ার জন্য তাকে এখন ভালই চেনে ডাক্তার।

    “সরি ডাক্তারবাবু, জানি এটা আপনার ডিপার্টমেন্ট নয়। তবু যদি কিছু করতে পারেন,” অনুনয়ের সাথে বলল রঞ্জিত।
    “কী হয়েছে?” জিজ্ঞাসা করল ইন্দ্রনীল।
    গায়ত্রী কেমন করে চোট পেয়েছে বুঝিয়ে বলল রঞ্জিত। পুরোটা শুনে নিয়ে বরফ ঠান্ডা জল দেওয়া চালিয়ে যেতে বলল ইন্দ্রনীল, বলল ফিরে গিয়ে অ্যাংকল বাইন্ডার ব্যবহার করতে। ফোলা না কমলে অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাতে বলল, সাথে এটাও জানাল যে আইস প্যাক দেওয়া হলে  মনে হয় কিছুক্ষণ পরে ব্যাথাটা কমে যাবে। 

    একটু পরে বিনীতা ইলিশ মাছ ভাজা প্লেটে করে নিয়ে আসে টেবিলের দিকে। বিনয় সিগারেট খাচ্ছে একটু দূরে গিয়ে। গায়ত্রী আর রঞ্জিতের সামনে প্লেট রাখে বিনীতা। দাদাকেও ডাকে। 
    বিনীতা গায়ত্রীকে বলে, “নে, ইলিশ ভাজা টেস্ট কর।”
    গায়ত্রী বলে, “ইলিশ তো লাঞ্চের জন্য রাখা ছিল।”
    “আরে অনেক আছে, খা তো। আপনি নিন ভাইসাব, ইলিশের পুরো ক্রেডিট তো আপনার প্রাপ্য। দাদা, আয় রে। ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
    গায়ত্রী পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “কী হয়ে গেল বল তো!”
    বিনীতা বলে, “লেগে গেছে কী করবি?”
    রঞ্জিত এ কথায় সায় দেয়। “দেখুন তো ভাবি, তখন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছে।”
    ইতিমধ্যে বিনয় এসেছে টেবিলের কাছে। “অ্যাক্সিডেন্ট… হো যাতা হ্যায় কভি কভি।…(একটা মাছা ভাজায় কামড় দেয় সে) “বাহ, হেব্বি হ্যায়। (রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বলে) আপকো বহুত বহুত থ্যাংক ইউ।”
    “ইউ আর ওয়েলকাম স্যারজী। বসুন, হুইস্কি চলে তো?”
    “চলতা হ্যায় মাঝে মাঝে,” চেয়ারে বসে বিনয়। রঞ্জিত হুইস্কি এগিয়ে দেয়। বিনয় একটা চুমুক দেয়, জিজ্ঞাসা করে, “বাকি সবাই কাঁহা গিয়া?”
    রঞ্জিত বুঝতে পারে না বিনয় কী বলতে চাইছে। গায়ত্রী বলে, “সবাই মনে হয় ড্যাম দেখতে গেছে।”
    “হাম ভি যায়েঙ্গে ড্যাম দেখনে,” বলল বিনয়।
    “যাবো, আপনি হুইস্কি শেষ করুন,” উত্তর দিল রঞ্জিত।
    বিনীতা এতক্ষণ এদিক ওদিক দেখছিল। “রঙিন কোথায়?”
    “এখনই ওই দিকে গেল টেলিস্কোপ নিয়ে, ডাক্তারবাবু আর কোলম্যানের সঙ্গে,” বলল বিনয়।
    “আমি দেখে আসছি,” উঠে পড়ল রঞ্জিত।
    “আপনি এখানে থাকুন… আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে,” হাসল বিনীতা। “ইম্পোর্টেড ইলিশ টেস্ট করুন। আমি যাচ্ছি।”
    “ডাক্তারবাবু খোঁড়াচ্ছিল আজ,” বলল গায়ত্রী।
    “হ্যাঁ দেখেছি… কী হয়েছে কে জানে,” বলল বিনীতা।

    বিনীতা এগিয়ে যায় রঞ্জিত যেদিকে দেখালো। দূর থেকেই দেখতে পায় অরুণাভ, ইন্দ্রনীল আর রঙিন টেলিস্কোপ সেট করছে।
    বিনীতা বলে, “টেলিস্কোপ পরে হবে। আগে ইলিশ মাছ ভাজা। ওদিকে দিয়েছি। চলুন  সবাই।
    রঙিন 'ইলিশ মাছ' 'ইলিশ মাছ' বলতে বলতে লাফাতে লাফাতে ছুটে যায়। বিনীতা, ইন্দ্রনীল আর অরুণাভ তার পেছনে যায়।

    “আপনার পায়ে কী হয়েছে?” জিজ্ঞাসা করল বিনীতা।
    “উনি সিঁড়িতে পড়ে গেছিলেন,” উত্তর দিল অরুণাভ।
    “সে কি! কোথায়? হাসপাতালে?”
    “না, রাঁচীর একটা হোটেলে।”
    “রাঁচীর হোটেলে!!!” অবাক হয় বিনীতা, তবে কিছু বলে না।
    ইন্দ্রনীলও এ বিষয়ে আলোকপাত করল না। অরুণাভও এ বিষয়ে শুনেছে বলে মনে হল না।
    রাঁচীর হোটেলে কেন গিয়েছিল ইন্দ্রনীল? সেখানে পড়ে গেল কী ভাবে? আজকে বেশ উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট পরেছে ডাক্তার, বেশ অন্যরকম দেখাচ্ছে তাকে। ভালই দেখাচ্ছে, মনে মনে ভাবল বিনীতা। 
    একটু পরে দেখা যায় রঙিনকে মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছে অরুণাভ। বিনয়ও বসে বসে মাছ ভাজা খাচ্ছে। রঞ্জিত আর ইন্দ্রনীলের হাতে হুইস্কির গ্লাস। গায়ত্রীও আছে। সুনীল আর কবিতা আসে। সুনীলের দিকে একটা গ্লাস বাড়িয়ে দেয় রঞ্জিত।

    খাওয়া শেষ করে বিনয়, রঞ্জিত, কবিতা, অরুণাভ, রঙিন আর ইন্দ্রনীল মিলে এগোয় ড্যামের দিকে। স্লুইশ গেটের দু’দিকে দু’রকম দৃশ্য। একদিকের চ্যানেল জুড়ে অনেক জল, সেই জলে সূর্যের ছায়া জ্বলজ্বল করছে। যেন এক বিশাল আয়না নীল আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রেখেছে। সেই জলধারার দুই পাড়ে গাছপালা - বড় গাছের মধ্যে দূর থেকে অমলতাস, বট, আর শাল দেখা যাচ্ছে। গরমের সময় হলে অমলতাসের সোনালী হলুদ ফুলে পুরো গাছ ভরে থাকত। এখন তার সামান্য আভাস মাত্র পাওয়া যাচ্ছে। আর রয়েছে তুলসী আর পুটুশ ফুলের ঝোপ। জলের মৃদু স্রোতকে আটকে দিয়েছে স্লুইশ গেটের সারি। হাওয়া দিচ্ছে বলে গেটের গায়ে জলের ধাক্কা খাওয়ার হালকা শব্দ ভেসে আসছে। মাত্র দুটো স্লুইশ গেট খোলা আছে। সেই খোলা গেট দিয়ে অন্য দিকের রুক্ষ পাথুরে মাটির ওপর জল আসছে। সে মাটিতে দেখা যাচ্ছে কাশ গাছের ঝোপ, আর তারই আশপাশ দিয়ে জলধারা বয়ে চলেছে অসংখ্য সরু ফিতের মত।  

    ড্যাম দেখে ফিরে এল সবাই। গায়ত্রীর পায়ে চোট লাগায় খেলায় আর বিশেষ কেউ উৎসাহ পাচ্ছে না। তবে ইন্দ্রনীল একটা খেলা শুরু করল। রান্নার ভার আপাতত বিসপাতিয়া আর অন্যদের ওপর ছেড়ে দিয়ে বিনীতাও এসেছে। ডাক্তার প্রথমেই যারা খেলবে তাদের পর পর বসালো।

    “খেলাটা খুব সোজা। আমি একটা সংখ্যা আপনাদের জানাবো। তারপর প্রথম জন বলবে তার ঠিক আগের সংখ্যাটা, তার একে একে অন্যরা আগের সংখ্যাগুলো বলতে বলতে যাবেন। এক জন ভুল বললে নতুন করে শুরু হবে নতুন ফিগার দিয়ে। এক রাউন্ড কমপ্লিট হলে লাইনের প্রথম জন চলে আসবে কন্ডাক্ট করতে আর আগের কন্ডাক্টর চলে যাবে কিউ-এর শেষে,” বুঝিয়ে বলল ইন্দ্রনীল।
    “ইয়ে আবার ক্যায়সা গেম হ্যায়? বহুত ইজি হ্যায়,” বলল বিনয়।
    “খেলেই দেখুন না,” হাসল ইন্দ্র। “আবার বলছি, আমি একটা নাম্বার বলব, বলে কুইকলি তিনটে তুড়ি দেব। তার মধ্যে আপনি প্রেসিডিং নাম্বারটা বলবেন। ঠিক বললে আবার আমি তিনটে তুড়ি দেব, তার মধ্যে আপনার পরের জন তার আগের নাম্বার বলবেন। এই ভাবে চলবে। ভুল হলে আউট, নো সেকেন্ড চান্স। দু’ মিনিটে একটা রাউন্ড শেষ হবে। ক্লিয়ার টু এভরি ওয়ান?”
    সবাই মাথা ঝাঁকাল।
    বিনয় বলল, “ইয়েস। হাম রেডি হ্যায়।”
    “ওকে,” বলে ইন্দ্রনীল মোবাইলে দু মিনিটে সময় সেট করে নিল। খেলা শুরু করার আগে সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো একবার। লাইনে প্রথমে রঞ্জিত, তারপর গায়ত্রী, বিনয়, অরুণাভ, রঙিন, বিনীতা আর কবিতা।
    “রেডি,” বলে ইন্দ্রনীল দ্রুত তিনটে তুড়ি দেয়, বলে, “টুয়েন্টি এইট।” বলেই ফের তুড়ি দিতে থাকে।
    “টুয়েন্টি সেভেন,” সামান্য ইতস্তত করে বলে রঞ্জিত। মাথা ঝাঁকায় ডাক্তার, তুড়ি দেয়।
    “টুয়েন্টি সিক্স,” গায়ত্রীর জবাব।
    “টুয়েন্টি সেভেন,... না না… টুয়েন্টি এইট… ধ্যুৎ” বলে বিনয়। সবাই হেসে ওঠে, আফশোস করে সে।
    “মামু তুমি আউট,” বলে রঙিন।
    “কি দাদা, খুব ইজি?” জিজ্ঞাসা করে ইন্দ্রনীল।
    হেসে মাথা নাড়ে বিনয়। ফের নতুন সংখ্যা দিয়ে খেলা শুরু করে ইন্দ্র। এবার অরুণাভকে দিয়ে শুরু হবে।
    “ফিফটি,” বলে ডাক্তার। এবার তুড়ির বদলে মধ্যমা আর অণামিকা জুড়ে তিন বার বাতাসে ঝাঁকায় সে।
    “ফর্টি নাইন,” বলে অরূণাভ।
    অন্য কিছু একটা বলতে গিয়ে সামলে নেয় রঙিন, বলে “ফর্টি এইট।”
    বিনীতা ঠিক জবাব দিলেও কবিতা ভুল বলে। ওদিকে দু মিনিটও শেষ হয়ে যায়।
    আরও দু রাউন্ড খেলার পর একটা ব্রেক নেয় সবাই।
    “আসলে এই খেলাটা বেশি লোক থাকলে ভাল জমে। দুটো টিম করা যায়, তাদের মধ্যে একটা কম্পিটিশনের ফ্লেভার চলে আসে,” বলে ইন্দ্রনীল।

    ওদিকে ড্রাইভাররা একটু দূরে অন্য গাছের ছায়ায় পলিথিন শিট পেতে বসেছে। তাদের মধ্যে লুডো খেলা চলছে। 
    আর সব রান্না মোটামুটি শেষ। এখন কড়াইয়ে মাংস ফুটছে টগবগ করে। দেখভাল করছে ইন্দ্রনীল, পাশে রয়েছে বিনীতা আর বিসপাতিয়া। গায়ত্রী ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে রান্নার জায়গার দিকে, রঞ্জিত তাকে ধরে আছে।

    কিছুক্ষণ বাদে খাওয়া দাওয়া শুরু হয়। বিসপাতিয়া, বিনীতা আর কবিতা খাবার পরিবেশন করে।

    খেতে খেতে অরুণাভ বলে, “আপনার হয়তো জানেন না। ডক্টর বিশ্বাস শুধু ভাল ডাক্তার নন, ভাল শেফও।”
    ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, “ভাল কিছু না। রান্না করতে ভালবাসি, রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসি - এই পর্যন্ত। আসলে একগাদা বিষয়ে আমার ইন্টারেস্ট আছে। যেমন মিস্টার দাসের ইন্টারেস্ট অনেক রকম বইয়ে।”
    হাসল অরুণাভ, কোনও উত্তর দিল না। 

    খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে। শতরঞ্জিতে শুয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে রঞ্জিত। পাশে শুয়েছিল বিনয়। সে  উঠে বসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে। চেয়ারে বসা গায়ত্রীর আহত পা পরীক্ষা করছে ডাক্তার। দূর থেকে এদের দিকে ক্লান্ত ভাবে হেঁটে আসছে বিনীতা। 
    “নো প্রবলেম। অ্যাংকল বাইন্ডার ব্যবহার করুন কয়েক দিন। বরফ দিন। ঠিক হয়ে যাবে। পাঁচ-ছ’ দিনের মধ্যে না সারলে অর্থোপেডিক দেখাবেন,” বলে ইন্দ্রনীল।
    “থ্যাংক ইউ,” গায়ত্রীর ঠোঁটে স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে, সে আড় চোখে ঘুমন্ত স্বামীর দিকে তাকায়। ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে বিনয়।
    ইন্দ্রকে ডেকে বিনয় বলে, “ডক্টর, এক মিনিট ইধার আইয়ে প্লিজ।”
    ইন্দ্রনীল একটু অবাক হয়। দেখে বিনীতা আসছে। ডাক্তার উঠে বিনয়ের কাছে আসে।
    বিনয় বলে, “চলিয়ে উস সাইডসে ঘুরকে আসি।”
    ইন্দ্রনীল হাসে। “চলুন।”

    বিনীতা এসে গায়ত্রীর পাশে বসে। তবে তার চোখ বিনয়দের দিকে।
    গায়ত্রী জিজ্ঞাসা করল, “কবিতা কোথায় গেল?”
    বিনীতা, “আশেপাশেই হবে… সুনীলকেও তো দেখছি না।”
    “রঙিন কি টেলিস্কোপ দেখছে?” জিজ্ঞাসা করে গায়ত্রী।
    বিনীতা মাথা ঝাঁকিয়ে 'হ্যাঁ' জানায়। তার চোখ যেমন দাদার দিকে ছিল সেদিকেই থাকে।

    বিনয় আর ইন্দ্রনীল হাঁটছে। বিনয় ইন্দ্রকে সিগারেট অফার করে। ডাক্তার হেসে মাথা নাড়ে। বিনয় সিগারেট ধরাতে গিয়েও ধরায় না। হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় এসে থামে বিনয়, ফলে ডাক্তারও থামে।

    বিনয় বলে, “একটা কথা বলার ছিল।”
    “বলুন।”
    “অরুণাভ ঠিক কেমন আছে?”
    ইন্দ্র চুপ করে থাকে।
    বিনয় বলে, “আপনি শুধু ওর ডাক্তার নন, পারিবারিক বন্ধুও বটে। আমার বোনের ভবিষ্যৎ, ওর মেয়ের ভবিষ্যৎ সব জড়িয়ে রয়েছে। আপনার কাছ থেকে একটা পরিষ্কার ইঙ্গিত পেলে আমার কিছু করনীয় থাকবে কিনা সেটা বুঝতে পারব। ওর সঙ্গেও কথা  বলতে হবে।”
    ইন্দ্রনীল জিজ্ঞাসা করে, “আপনি বোনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেননি?”
    বিনয় একটু ইতস্তত  করে বলে, “না।… আসলে আমার আদৌ কিছু করার থাকবে কিনা সেটা আমায় জানতে হবে। বিন্তি আসলে খুব…”
    উদ্গত কান্নায় কথা আটকে যায় বিনয়ের। ঠোঁট কামড়ে ধরে সে, মুখ বিকৃত হয়ে যায়।  ইন্দ্র মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্য্যদিকে, বিনয়কে সময় দেয় নিজেকে সামলে নেওয়ার।

    সামলে নেয়ও বিনয়। বলে, “বিন্তির আত্মমর্যাদাবোধ খুব বেশি। ও হয়তো আমাকেও কিছু বলবে না। ভগবান যে কী করলেন…”
    ইন্দ্রনীল বিনয়ের কাঁধে হাত রাখে। বলে, “নিজেকে সামলান দাদা। বিনীতা কিন্তু ওপাশ থেকে আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন। আপনার বোনের তো চাকরি আছে। এত চিন্তা করছেন কেন? একটা ফ্ল্যাট হচ্ছে জানেন নিশ্চয়। আর দাদা… সময়ে অসময়ে বন্ধুরা পাশে থাকেই।”
    বিনয় কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর জিজ্ঞাসা করে, “তাহলে অরুণাভর ব্যাপারে আর কিছুই করার নেই?”
    ইন্দ্রনীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ে। বিনয় মাথা নিচু করে থাকে, তারপর সিগারেট ধরায়।
    ডাক্তার বলে, “চলুন ওদিকে যাওয়া যাক, আমার এবার ফিরতে হবে।”

    এরা দু’জন ফিরতে শুরু করে। কিছু একটা খেয়াল হওয়ায় ডাক্তার বলে, “আপনি যান, আমি মিস্টার দাসকে বলে আসি।”
    বিনীতা দূর থেকে দেখতে পায় ইন্দ্রনীল অন্য দিকে ঘুরে গেল, আর বিনয় এগোল যেদিকে তার বোন আছে।

    অরুণাভ আর রঙিন টেলিস্কোপ দেখছে। টেলিস্কোপে ক্লোজ আপে পাখির বাসা, মা-পাখি, বাচ্চা পাখি দেখা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে নানা গাছের ফুল ফল ইত্যাদি।
    ইন্দ্রনীল সেখানে এসে পৌঁছয়। জিজ্ঞাসা করে, “রঙিন, কী দেখছ?”
    “অনেক কিছু। তুমি দেখবে?” উত্তর দেয় রঙিন।
    ইন্দ্রনীল মাখা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়। অরুণাভ এদিক ওদিক দেখে একটু অ্যাডজাস্ট করে টেলিস্কোপ। ইসারায় ইন্দ্রকে দেখতে বলে। ডাক্তার আইপিসে চোখ লাগায়। কিছু দেখতে পায় না।
    “সব ঝাপসা দেখাচ্ছে,” বলে সে।
    অরুণাভ বলে, “ওহ হো দাঁড়াও।” টেলিস্কোপ অ্যাডজাস্ট করে। “এই বার দেখ।”

    ইন্দ্র ফের চোখ লাগায় টেলিস্কোপের আইপিসে। আর তার পরেই ছিটকে উঠে পড়ে, হনহনিয়ে হাঁটতে থাকে টেলিস্কোপ পিছনে ফেলে। কী দেখল সে? (ক্রমশঃ)
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ | ৪২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩০540860
  • "বিন্তি আমলে খুব…" এটা বোধহয় টাইপো - 'আসলে' কি?
  • | 2409:40e0:5b:11c0:8000::***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:০০540861
  • হমমম। "আসলে.. " হবে
     
     
    মনটা খারাপ  হয়ে যাচ্ছে। কেমন দ্রুত  নিশ্চিত  পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শপষের সেদিন 
    ভয়ঙ্কর। 
     
    কিন্তু  লেখক তো সর্ব  শক্তিমান। কিছু মিরাকেল ঘটানো যায় না?
  • :|: | 2607:fb90:bd5f:c247:5140:f0fe:4420:***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:২৭540862
  • এই বাক্যটি একটু নজর করবেন? "... আর গায়ে বেশ ঝলমলে একাধিক ফুলহাতা রঙের টি-শার্ট"। 
     
    সত্যিই কি লেখক সর্ব শক্তিমান? মনে তো হয় উল্টোটা। চরিত্রের নিয়তির সামনে লেখক অসহায়। 
  • Nirmalya Nag | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৩০540864
  • মতামত দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। খুব খারাপ লাগছে এত টাইপো থাকার জন্য। ঠিক করে দিলাম।
     
    ব আর চতুর্ভুজ লেখকের ক্ষমতা নিয়ে একটা প্রশ্ন রেখেছেন। এ বিষয়ে নিজের কী মনে হয় সেটা বলি। কবি অনেক বেশি অসহায়, একটা সময়ের পর কবিতা নিজের থেকেই যেন লেখা হয়ে যাচ্ছে এটা অনুভব করেছি। তবে গদ্যের ক্ষেত্রে সম্ভবত এ ব্যাপারটা কম ঘটে। চরিত্রের নিয়তি তো লেখক নিজেই ঠিক করেন। এই বিষয়ে আরও কেউ কিছু বললে ভাল লাগবে।
  • :|: | 2607:fb90:bd11:d8d6:a9f5:d499:c69f:***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৬540865
  • টিশার্ট কিন্তু "পরে"।
  • Nirmalya Nag | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫০540866
  • @:।: - নাহ, কপাল চাপড়ানো ছাড়া গতি নেই। ঠিক করে দিলাম। আরও কিছু রয়ে গেল কি না জানি না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন