এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গপ্পো

  • তোমার বাস কোথা যে... - ৭

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গপ্পো | ২০ জুন ২০২৪ | ৮৪০ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  •  
    [ এই কাহিনীর সব চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তির সাথে কোনও মিল যদি কেউ খুঁজে পান তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। ]
     
    সাড়ে চারটে বাজে। ইলেকট্রিক বেল বেজে ওঠে কিররররররর-কিররররররর শব্দে। দীর্ঘ সময় ধরে বেজে বেজে ঘোষণা করে আজকের মত স্কুল শেষ হল। বিনীতার বিশ্রী লাগে এই আওয়াজটা। নিজের ছোটবেলার স্কুলের ঢং ঢং শব্দটা অনেক বেশি মিষ্টি ছিল। এখন অবশ্য এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই তার। তাড়াতাড়ি স্টাফ রুম ছেড়ে স্কুলের বাইরে বেরিয়ে আসে সে। বাইরের বড় গেটের পাল্লা দুটো খুলে দিয়েছে সিকিউরিটি গার্ডরা। একটু দূরে একটা গলির মধ্যে রাখা আছে অরুণাভর গাড়ি। ড্রাইভার বিকাশ স্কুলের কাছেই রাখতে চেয়েছিল, বিনীতা রাজী হয়নি। রোজ সামান্য হেঁটে গিয়ে গাড়িতে ওঠে সে। গাড়ি তাকে নিয়ে বাড়ি যায়, দ্রুত পোশাক বদল করে নেয় বিনীতা, তারপর ছোটে হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে বিকাশের ছুটি। অরুণাভ ভর্তি হওয়ার থেকে এই ব্যবস্থা চলছে। অফিসের নির্দেশে বিকাশকে এই কাজ করতে হলেও বিনীতা তাকে প্রায় রোজই কিছু টাকা দেয়। 

    আজও স্কুলের বাচ্চা আর তাদের গার্জেনদের পাশ কাটিয়ে চলছিল বিনীতা। ভিড় ঠেলে একটু ফাঁকায় আসতেই শুনতে পেল কেউ তাকে ডাকছে। ফিরে দেখল গায়ত্রীও আসছে। ছোটখাটো চেহারা হওয়ায় বিনীতার তুলনায় তার আসতে একটু বেশি সময় লাগে। বিনীতা দাঁড়িয়ে গেল বন্ধুর জন্য। শেষ পিরিয়ডে গায়ত্রীর ক্লাস ছিল, তাই ওকে বলে আসতে পারেনি বিনীতা। 
    “দাদা তাহলে কাল ছাড়া পাচ্ছে?” কলকাতার কলেজে পড়া গায়ত্রী সিনহা ভালই বাংলা বলে, তবে সামান্য হিন্দির টান আছে।
    “হ্যাঁ, তাই তো বলেছে। কোনও প্রবলেম না হলে…” বলল বিনীতা।
    “একটা সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিলি না, সার্জারি হয়ে গেল…”
    “ও তো কোন উচ্চ বাচ্য করল না। বলে দিল সময় নেই। আমিও কোনও ডাক্তার জানি না, এই ডাক্তার বিশ্বাসও খুব তাড়া দিলেন, বললেন কন্ডিশন ভাল না।”
    “ডাক্তারদের নাকি অনেক সময়ে টার্গেট দেওয়া থাকে এত টাকার বিজনেস দিতে হবে। সেই জন্য তাড়াহুড়ো করল না তো?”
    এ দিকটা মাথায় আসেনি বিনীতার। “জানি না,” বলল সে।
    “অপারেশন হয়ে গেছে তো কী হয়েছে। একটা সেকেন্ড ওপিনিয়ন নে। ঠিক চিকিৎসা করছে কি না সেটা তো জানা যাবে।”
    “কার কাছে যাব?”
    এর উত্তর তৈরি ছিল গায়ত্রীর কাছে। “আমার এক কাজিনের বন্ধু কলকাতায় অঙ্কোলজিস্ট। আমার সংগেও আলাপ আছে। সব পেপারস আমায় হোয়াটসঅ্যাপ কর। আমি ওর কাছে পাঠাই। মোড অফ ট্রিটমেন্ট ঠিক আছে কিনা সেটা জানা যাবে।”
    “পেপারস তো সবই এখন হসপিটালে। ওখান থেকে যদি ছবি তুলে পাঠাতে পারি, দেব।”
    গায়ত্রী বলল, “ঠিক আছে, তুই পাঠা। ওর ওপিনিয়ন পেলে যদি দরকার হয় কলকাতা যাওয়ার কথা ভাবা যাবে।”
    “ও কলকাতা যেতে চাইবে বলে মনে হয় না। কবিতার কাছে শুনলাম ওর ডিপার্টমেন্টের দু-এক জন ওকে হসপিটালে দেখতে আসতে চেয়েছিল। ও স্ট্রেট না করে দিয়েছে, বলেছে কাজ ফেলে কাউকে আসতে হবে না।”
    “কবিতা কে?”
    “ওর সেক্রেটারি,” বলল বিনীতা, তারপরে ঘড়ি দেখেই চমকে উঠল। “দেরি হয়ে গেল রে। আজ আসি। কাল স্কুলে আসব না। প্রিন্সিপ্যালকে বলে দিয়েছি।”
    হুড়মুড় করে চলে গেল বিনীতা। তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল গায়ত্রী। পাশ দিয়ে যাওয়া রিকসাটাকে ডেকে নিল সে। আজ আর হেঁটে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না তার।
    ***
    পরের দিন বিকেল বেলা ঘরের মেঝেতে মাদুর পেতে বসে একা একা ছবি আঁকছিল রঙিন। আঁকতে তার ভাল লাগে। মা বলেছে কাছাকাছি ভাল ড্রইং টিচার পেলে তার কাছে ভর্তি করে দেবে। বোকারো হলে চট করে পাওয়া যেত। বাবা তাকে একটা অ্যানিম্যাল ডিকশনারি দিয়েছিল, সেইটার থেকে ছবি দেখে একটা হাতি আঁকার চেষ্টা করছিল সে, মাথা আর শুঁড়ের কাছটা হচ্ছিল না কিছুতেই। বাইরে গাড়ি থামার শব্দ হতেই বারান্দায় ছুটে গেল সে, দেখল বিকাশ আংকল এসে বেল বাজাল, তারপর গাড়ির কাছে ফিরে গিয়ে পিছনের দরজা খুলে দিল। মা আগেই বেরিয়েছিল পিছনের অন্য দরজা দিয়ে। বাবাকে বেরোতে দেখেই বারান্দা থেকে সে ছুটে গেল ভেতরে, সদর দরজার দিকে। গিয়ে দেখে দরজা খুলে দিয়েছে বিসা, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে। দরজার কাছে এসে দেখল মা আর বিকাশ আংকল দু দিকে থেকে ধরে বাবাকে নিয়ে আসছে। এভাবে বাবাকে আসতে দেখেনি কখনও সে। একটু পিছিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল সে। 
    ধীরে ধীরে বাইরের ঘরে এসে সোফায় বসল অরুণাভ। দেখে রঙিন উঁকি দিচ্ছে ডাইনিং রুমের দরজার পাশ থেকে। তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় অরুণাভ, ইসারায় কাছে আসতে বলে।  ইতস্ততঃ করে রঙিন, বাবার সঙ্গ এমনিতেই খুব একটা পায় না সে, আর এই ক’দিন তো হাসপাতালেই ছিল। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় যায় সে। বাবা হাসে, তাকে ধরে নিজের পাশে বসায়। 
    পোশাক বদল করতে ভেতরে গেছিল বিনীতা। ডাইনিং রুমে এসে বলল, “বিসপাতিয়া, চা করো।” বলতে বলতেই চোখে পড়ল ড্রইং রুমে বাবা আর মেয়েতে কিছু একটা কথা হচ্ছে। প্রায় বিরল এই দৃশ্যটা বিনীতা দেখছিল, এমন সময়ে শুনতে পেল শোয়ার ঘরে তার মোবাইল বাজছে। সেদিকে যেতে যেতেই দেখল রঙিন দৌড়তে দৌড়তে এসে তাকে পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে ঢুকল। মেয়ের এত তাড়া কিসের দেখার জন্য একটু দাঁড়িয়ে গেল সে। মেঝে থেকে ড্রইং খাতা তুলে নিয়ে ফের বাইরের ঘরের দিকে ছুটল রঙিন। ওদিকে ফোন বেজে বেজে থেমে গেল।

    শোয়ার ঘরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল গায়ত্রীর মিসড কল। কল ব্যাক করল সে। 
    “হ্যাঁ বল, এই মাত্র বাড়ি ঢুকলাম,” বলল বিনীতা।
    “তাহলে থাক, পরে কথা বলব।”
    “না না, বল না।”
    “কলকাতার ওই ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে।”
    মুহূর্তে একটা চাপা টেনশন তৈরি হল বিনীতার মনে। গলা একটু নামাল সে। “কী বললেন উনি?”
    “বললেন পেপারস দেখে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, ট্রিটমেন্ট ঠিকই হচ্ছে।”
    দমবন্ধ ভাবটা কেটে গেল বিনীতার। “যাক, বাঁচা গেল। তাহলে আর কাউকে দেখাচ্ছি না।”
    “হ্যাঁ, আপাততঃ দরকার নেই মনে হচ্ছে।”

    ফোন রেখে ড্রইং রুমে ফিরে আসে বিনীতা, দেখে মেয়ে খাতার পাতা উলটে উলটে বাবাকে তার আঁকা ছবি দেখাচ্ছে আর অরুণাভ খুব প্রশংসা করছে।
    মানুষটা কি পালটে গেল নাকি, ভাবল বিনীতা। মুখে বলল, “রঙিন, বাবার তো শরীর ভাল নেই; এখন একটু রেস্ট নেবে। আবার পরে ড্রইং দেখিও। আর তুমিও ওঠ। চেঞ্জ করে নাও।”

    সন্ধ্যাবেলা বিনীতা বুঝল মেয়ের আজ পড়ায় মন নেই। জোর করল না সে, বাবার সঙ্গ পাওয়া রঙিনের হয় না। আজ একটু পেয়েছে, অরুণাভও বাড়ি ফিরে অবধি অফিসের কথা তোলেনি। তাতে বিনীতাও খুশি, তবে এও নিশ্চিত যে এই আনন্দ স্থায়ী হবে না। আরে সেটা হয়ওনি। রাতের দিকে রঙিন বাবাকে টেনে নিয়ে বারান্দায় যেতে চাইছে, সেই সময়ে অরুণাভ জানিয়ে দিল কাল সে অফিস যাবে।
    রাত ন’টা প্রায় বাজে। বারান্দায় অরুণাভ বসে আছে মেয়ের সঙ্গে। রাস্তার উল্টো দিকের বাড়িটায় কেউ নেই মনে হয়, আলো জ্বলছে না। পাশের স্ট্রিট লাইটের আলোটাও একটা শাল গাছের ছায়ায় ঢাকা পড়েছে। সামনেটা তাই কিছুটা অন্ধকার আর আকাশ ভর্তি তারার খানিকটা দেখা যাচ্ছে।
    অরুণাভ মেয়েকে দেখায় তারারা আকাশে জ্বলজ্বল করছে।
    রঙিন বলে, “আমি এই রকম একটা স্কাই এঁকেছিলাম। স্টার ছিল, পাহাড় ছিল।”
    “কই, ড্রইং খাতায় তো দেখলাম না,” বলল অরুণাভ।
    “অন্য খাতায় আছে।”
    একটু চুপ করে থেকে অরুণাভ বলে, “কালিম্পং বলে ওয়েস্ট বেঙ্গলে একটা জায়গা আছে, জানো তো? দার্জিলিং-এর কাছে। ওখানে আমি স্কুলে পড়তাম। অনেক পাহাড় আছে ওখানে। খুব সুন্দর জায়গা। আমি আর তোমার মা বেড়াতে গিযেছিলাম, তুমি তখনও হওনি। ওখানে এই রকম আকাশ ভর্তি তারা দেখা যেত।”
    “বাবা, তারাগুলো বড় করে দেখা যায়?”
    “হ্যাঁ, তার জন্য টেলিস্কোপ লাগে। সায়েন্টিস্টরা টেলিস্কোপ দিয়ে কত দূরের স্টার দেখেন।”
    “আমায় একটা টেলিস্কোপ দেবে?”
    অরুণাভ হেসে ফেলে। “কী করবে টেলিস্কোপ দিয়ে?”
    “আমিও স্টার দেখব।”
    “ছোটদের জন্য টেলিস্কোপ পাওয়া যায়, তবে আমাদের এখানে ভাল কিছু বোধ হয় পাব না... দেখি,” মেয়েকে বলল বাবা।
    কিছু একটা মনে পড়ায় রঙিন একটু উত্তেজিত হল। “বাবা, বাবা, বিশাল বলে কি ওর দাদাজী মারা গেছে, তারপর তারা হয়ে গেছে। কী করে হবে, তারা তো গ্যাস দিয়ে তৈরি। মারা গেলে লোকে গ্যাস হয়ে যায়?”
    অরুণাভ অবাক হল, “তুমি জান তারা গ্যাস দিয়ে তৈরি?”
    “ম্যাম বলেছে, স্কুলে।”
    মাথা ঝাঁকায় অরুণাভ। “কেউ কেউ ভাবে মারা গেলে মানুষ তারা হয়ে যায়।”
    “সত্যি সত্যি হয় না?” মেয়ের প্রশ্ন।
    “না”, বাবার উত্তর, “তবে হলে দারুণ হত। আমি তারা হয়ে ওপর থেকে দেখতাম তুমি কী কী দুষ্টুমি করছ।”
    “আমি কি খালি দুষ্টুমি করি?”
    “না না, তুমি তো গুড গার্ল।” মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অরুণাভ।
    বিসপাতিয়া এসে জানায় রঙিনের খাওয়ার সময় হয়েছে। 
     

    ওদিকে বিনীতা ফোন করেছে ইন্দ্রনীলকে। কাল অফিস যেতে চাইছে সেটা জানানো দরকার।
    ডাক্তার বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, অফিসে যান না। উনি কাজ করলে ভাল থাকবেন। তবে ওষুধ টোষুধগুলো ঠিক মত খাওয়া দরকার। কেমোর সিডিউল মেনটেন করতে হবে। আর হ্যাঁ, প্রথম দিকে কাজের চাপ একটু কম রাখলে ভাল হয়। এগুলো অবশ্য সবই আমি ওনাকে বলেছি বারবার করে। আপনিও বলবেন।”
    “শুনলে আপনার কথাই শুনবে, আমার নয়। এমনিতে তো ওষুধ খেতে মনে থাকে না। তবে এবার হাসপাতালে দেখলাম নিজেই ওষুধ চাইছে কোনও কারণে নার্সের দিতে দেরি হলে,” বলল বিনীতা।
    “আপনার নিজের শরীরের দিকেও নজর রাখবেন। মেয়ের কী খবর?”
    “মেয়ে তো বাবাকে ছাড়ছেই না বাড়ি ফেরার পর থেকে। যাই হোক, রাখছি। মেয়ের খাবার সময় হল। দরকার হলে আবার আপনাকে বিরক্ত করব।” ফোন রাখল বিনীতা। 
    ডাইনিং রুমে গিয়ে বিনীতা দেখল এক অদ্ভুত দৃশ্য। টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে বিসপাতিয়া, আর অরুণাভ রঙিনকে খাইয়ে দিচ্ছে। শেষ কবে এমন ঘটনা ঘটেছে মনে করতে পারল না রঙিনের মা।
    ঘণ্টাখানেক পরে বিছানার এক পাশে শুয়ে বেড সাইড টেবিলের আলোয় বই পড়ছে অরুণাভ। রাতের ওষুধ খাওয়া হয়ে গেছে তার। ওপাশে বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে বিনীতা। সে কাজটা শেষ করে আয়নার কাছে গিয়ে বসে। অরুণাভ বই-এর পাতায় আঙুল রেখে সেটা বন্ধ করে। তাকিয়ে দেখে তার স্ত্রী ক্রিম লাগাচ্ছে মুখে।
    অরুণাভ বলে, “রঙিনকে আজ অনেক দিন পরে খাওয়ালাম। লাস্ট কবে খাইয়েছি মনেই পড়ে না।”
    বিনীতা উত্তর দেয় না। মুখে ক্রিম মাখতে থাকে।
    অরূণাভ বলে যায়, “যে কোনও কাজ আমরা কোনও না কোনও দিন শুরু করি। এক সময় শেষও করি। খুব মেজর কিছু হলে প্রথম দিনের ঘটনাটা মনে থাকে, শেষ দিনেরটা থাকে না।”
    “বেশির ভাগ সমযে তো জানাই থাকে না যে এই কাজটা এই বারই শেষ বার করছি। কেন?” বলল বিনীতা।
    “না, এমনি।” ফের বই-এর পাতা খোলে অরুণাভ।
    বিনীতা ঘড়ির দিকে তাকায়। ১০-৩৫ বাজে। ঘর থেকে বেরোতে যায় সে।
    “শোবে না?” জিজ্ঞাসা করা অরুণাভ।
    বিনীতা বলল, “ঘুম আসেনি, কয়েকটা খাতা দেখে রাখি।”
    ডাইনিং টেবিলে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছিল বিনীতা। এ কয়দিন হাসপাতাল যাতায়াত করতে গিয়ে আর মানসিক ভাবে দুর্বল থাকায় খাতা প্রায় দেখাই হয়নি। রাত ১২টা বাজলে উঠে পড়ল সে।  
     
    শোবার ঘরে এসে দেখে ল্যাম্পের আলো তখনও জ্বলছে, বিছানার পাশে বই খোলা, অরুণাভ ঘুমিয়ে পড়েছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা বোতল থেকে জল খায় বিনীতা, তারপর আস্তে আস্তে বইটা সরিয়ে রাখে, আলোটা নিভিয়ে দিতে গিয়েও দেয় না। স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত। গোল, দাড়ি গোঁফ কামানো মুখ, ডান দিকের গালের উঁচু অংশে একটা কালো জরুল। নাকের এক পাশে ল্যাম্পের আলো পড়ায় অন্য দিকে ঢালু হয়ে আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। অপারেশনের ধকল সামলাতে বা অন্য কোনও কারণে চোখের নিচে কালি পড়েছে তার। বিয়ের একেবারে প্রথম দিকে ছাড়া আর কখনও ঘুমন্ত স্বামীকে লুকিয়ে দেখেছে কি সে? ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে দিয়ে তার অভ্যাস মত চিত হয়ে শুয়ে পড়ল সে। 
    বিনীতা কাল স্কুল যাবে, আর বেশ কয়েকদিন পরে অরুণাভও অফিস যাবে কাল। (ক্রমশঃ) 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২০ জুন ২০২৪ | ৮৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বন্দনা রায় | 2402:3a80:42fc:85bc:8ce1:15ff:fe94:***:*** | ২১ জুন ২০২৪ ১০:২৭533555
  • ঘুমন্ত স্বামীকে স্ত্রীর লুকিয়ে দেখার বিবরণ খুউব সুন্দর।
  • Kuntala | ২১ জুন ২০২৪ ১৮:৫৭533563
  • খুব ভালো লাগছে পড়তে। বেশ নিটোল ভাবে গল্পটিকে সাজিয়েছেন। পরবর্তী কিস্তি দিতে দেরি করবেন না যেন।
  • Ranjan Roy | ২৬ জুন ২০২৪ ২০:০৯533746
  • সুন্দর লিখছেন নির্মাল্য। পড়ছি।
  • Nirmalya Nag | ২৭ জুন ২০২৪ ১৬:১৫533782
  • @ বন্দনা রায় - অনেক ধন্যবাদ 
     
    @ কুন্তলা - অনেক ধন্যবাদ 
     
    @ রঞ্জন রায় - অনেক ধন্যবাদ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন