এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • তোমার বাস কোথা যে... - ২০

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪২০ বার পঠিত
  • ।। কুড়ি ।।

    [ এই কাহিনীর সব চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তির সাথে কোনও মিল যদি কেউ খুঁজে পান তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। ] 

    ইন্দ্রনীল দরজা খুলে দেওয়ার পর “সরি, আমার একটু দেরি হয়ে গেল” বলে ঘরে ঢুকতেই হুইস্কির গন্ধ নাকে এল বিনীতার। তারপরেই দেখতে পেল তার স্বামী সোফার ব্যাকে এলিয়ে রয়েছে, আর সেন্টার টেবিলের ওপর হুইস্কির বোতল, গ্লাস ইত্যাদি রাখা।  
    স্ত্রীকে দেখে অরুণাভ সোজা হয়ে বসে, ঈষৎ জড়ানো গলায় বলে, “তোমার কাজ হল?”
    “হ্যাঁ, হল,” বলে একটু অবাক হয়েই ইন্দ্রনীলের দিকে তাকাল বিনীতা। অপ্রতিভ ভাবে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সে। ফিসফিস করে বলল, “ওনার মনে হয় একটু নেশা হয়ে গেছে।”

    ধপাস করে সোফায় বসে পড়ল বিনীতা, তার হাতে এখন একটা প্লাস্টিকের ফোল্ডার, তাতেই রয়েছে সুপ্রিয়া ম্যাডামের দেওয়া প্রশ্নপত্র। সেটা আর নিজের ব্যাগটা পাশে রাখল সে। কী করবে, কী বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে। নেশা হয়ে গেলে গাড়ি চালিয়ে ফিরবে কী করে? এখানে তাদের খাওয়ার কথা ছিল, খিদেও পেয়েছে অল্প, কিন্তু এখন খাওয়াটারই বা কী হবে? রঙিন বাইরে রয়েছে, তাকে তোলার কথা ছিল ফেরার সময়ে; সেটারই বা কী করা যাবে? কতটা মদ খেয়েছে অরুণাভ? বেশি তো খায় না কখনই। তার স্বামীর মধ্যে যে সব বদল দেখছে গত কয়েক মাসে, এটাও কি তার মধ্যেই পড়ে? কিন্তু ডাক্তারই বা কী করে মদ খাওয়া অ্যালাও করল?  অরুণাভর দিকে একবার তাকাল বিনীতা, সে এখন মোবাইল ফোনে কিছু দেখছে।

    সেন্টার টেবিল থেকে জিনিসগুলো তুলতে এল ইন্দ্র। খালি মদের গ্লাস, ফর্ক, প্লেট যার ওপর খান তিনেক শসা এখনও রয়েছে - সবকিছু তুলে ট্রেতে রাখছে, এই সময়ে উঠে দাঁড়াল অরুণাভ। “আমি একটু ওয়াশরুম যাব, আন-ইজি লাগছে একটু” বলল সে।
    মনে হল স্বস্তি পেল ইন্দ্রনীল। “আসুন, এই দিকে।”
    ডাক্তারের পিছু পিছু ডাইনিং টেবিলের দিকে গেল রোগী। তার যাওয়াটা তীক্ষ্ণ চোখে দেখল বিনীতা। স্বাভাবিক হাঁটাই, নেশাগ্রস্তের মত টলোমলো নয়, তবে একটু ধীরগতি। টয়লেটের দরজার পাশেই সুইচ, সেটা টিপে ভেতরের আলো জ্বালিয়ে দিল ইন্দ্রনীল।
    “নসিয়া আছে কি”? রোগীকে জিজ্ঞাসা করল ডাক্তার।
    “না,” উত্তর এল।
    “যান, ভাল করে চোখে মুখে জল দিয়ে নেবেন। ফ্রেশ টাওয়েল রাখা আছে ভেতরে,” বলল ইন্দ্রনীল।

    অরূণাভ ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ইন্দ্রনীল ফিরে এল সেন্টার টেবিলের কাছে, ট্রেটা তুলতে তুলতে বলল, “চিন্তা করবেন না। উনি ঠিকই আছেন, খাবার খেলে আরও নরম্যাল হবেন। আর ড্রাইভ করার কনফিডেন্স যদি না পান তার ব্যাবস্থাও করা যাবে।”

    একটা উদ্ভট চিন্তা মাথায় এল বিনীতার। সে নিজে গাড়ি চালাতে জানে না। অরুণাভ ড্রাইভ করতে না পারলে “তার ব্যাবস্থাও করা যাবে” মানে কী? ডাক্তার নিজেই প্ল্যান করে কিছু করেছে না কি? বেশি মদ খাইয়ে দিয়েছে? অরুণাভর গ্লাসে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে? যাতে ওরা এখানে থেকে যেতে বাধ্য হয়? না না ছি ছি, সেটা নিশ্চয় ভাবছেন না উনি। এর আগে সেদিন কাফেতেও বিনীতা অকারণ সন্দেহ করেছিল ওনাকে। জটিল সমস্যার মধ্যে দিয়ে চললে মনের মধ্যে নানা প্যাঁচালো ধারণা তৈরি হয়। অসুস্থ স্বামী, তার স্ত্রীর প্রতি ডাক্তারের দুর্বলতা প্রকাশ, বিয়েতে অসুখী স্ত্রীরও স্বামীর ডাক্তারের ওপর ভাল লাগা তৈরি হওয়া - এই জটিলতা থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই বিনীতার। 

    কিচেনে ট্রে রেখে ইন্দ্রনীল ফিরে এসে বলল, “এবার খাবার গরম করি। উনি বেরোলে দিয়ে দেব।”
    বিনীতা বলল, “আপনার পেশেন্টের ড্রিঙ্ক করা অ্যালাওড?”
    নিচু গলায় উত্তর দিল ডাক্তার। “দেখুন, কম পরিমাণে অকেশনাল ড্রিঙ্ক কোন সমস্যা করে না। উনি এখন যে কন্ডিশনে, তাতে তো নয়ই।… ওনার এমন অবস্থা হবে তো বুঝতে পারিনি। বললেন অকেশনালি ড্রিঙ্ক করে থাকেন। তার পর মাত্র দু পেগে যে এই অবস্থা হবে…”
    বিনীতা খুব অবাক হল। “দু পেগ? আপনি ঠিক জানেন?”
    “সারটেনলি। পেশেন্ট আমার সঙ্গে ড্রিংক করছে, আমি খেয়াল রাখব না?” বলল ইন্দ্র।
    চুপ করে রইল বিনীতা, একবার তাকাল বাথরুমের দরজার দিকে। ইন্দ্রনীলও দেখল সেই দিকে, তারপর চাপা গলায় বলল, “আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে।”
    “কী?”
    “আমার মনে হচ্ছে–”
    টয়লেটের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ফের ও দিকে তাকাল দু’জনেই। রুমাল দিয়ে হাত-মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এল অরুণাভ।
    কী সন্দেহ হচ্ছে ডাক্তারের সেটা আর জানা হল না বিনীতার। ইন্দ্রনীল রোগীকে জিজ্ঞাসা করল, “আন-ইজি ভাবটা কেটেছে?”
    “হ্যাঁ,” উত্তর দিল অরুণাভ, সোফায় এসে বসল।
    “খাওয়ার বন্দোবস্ত করি তাহলে,” বলল ইন্দ্রনীল।
    “হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়,” উত্তর দিল অরুণাভ।

    কিচেনের দিকে চলে গেল ইন্দ্রনীল। সব খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করতে হবে, আইটেম যদিও বেশি নয়। গ্লাস, প্লেট, বাটি সবই বার করে রাখা আছে। ম্যাডামকে যেতে না হলে এতক্ষণে খাওয়া হয়ে যেত। আর মিস্টার দাসের ব্যাপারটাও ঘটত না। আচ্ছে, ওনার কি সত্যিই নেশা হয়েছিল, না কি নেশা হওয়ার ভান করছিলেন? যদি প্রথমটা ঠিক হয়, তাহলে একটু পড়াশোনা, অন্য ডাক্তারদের সাথে আলোচনা প্রয়োজন তাদের পেশেন্টদের ড্রিংক করা নিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয়টা ধারণাটা ঠিক হলে?, তখন প্রশ্ন হল কেন উনি ভান করছিলেন? একটু ভাল করে ভাবতে হবে। পারলে ম্যাডামের সাথে একটু কথা বলাও দরকার এই নিয়ে।

    বিনীতাকে এইখানে পেয়ে তার ভাল লেগেছে, সেটা অল্প সময়ের জন্য হলেও, সেটা অরুণাভ থাকা সত্ত্বেও। সেই জন্যই নেমন্তন্ন করা, তবে ওনারা - বিশেষ করে ম্যাডাম নিজে - আসবেন কি না তাই নিয়ে একটু সন্দেহও ছিল।

    মোট ছ’টা বাটিতে খাবার ঢেলে সেগুলো মাইক্রোতে চালান করল ডাক্তার। পরে ফ্রায়েড রাইস গরম করবে।

    ওদিকে রঙিনের বাড়ি ফেরার ব্যাপারে বিনীতা ফোন করছে মিসেস খানকে। যে ক’জন নিমন্ত্রিত আছে তাদের মধ্যে খানের বাড়ীই ওদের সব চেয়ে কাছে। মিসেস খান তাঁর ছেলেকে আনতে যাবেন সেটা বিনীতা জানে। যদি রঙিনকেও উনি নিয়ে আসতে পারেন আর বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে যান তাহলে ভাল হয়, কারণ ওদের ফিরতে দেরি হতে পারে। ভদ্রমহিলা রাজি হয়ে যেতে নিশ্চিন্ত হল হল বিনীতা। ওদের ফেরাটা কী ভাবে হবে এখন সেটা দেখার। অরুণাভকে এখন স্বাভাবিক দেখাচ্ছে, ফোনে কিছু একটা টাইপ করছে সে।

    “তুমি ড্রাইভ করতে পারবে তো?” স্বামীকে জিজ্ঞাসা করল বিনীতা।
    মুখ তুলে তাকাল অরুণাভ। “কেন? না পারার কী হল?”
    “ড্রিংক করেছ, তখন বললে আন-ইজি লাগছে…”
    “আই অ্যাম ফাইন,” বলল অরুণাভ। ফিরে গেল টাইপ করতে।
    ইন্দ্রনীল এসে জানাল ডিনার রেডি।

    বিনীতার ইচ্ছে ছিল ডিনার সাজাতে সাহায্য করার অজুহাতে জানতে চাইবে ডাক্তার কী সন্দেহ করেছিল। আর সেই সঙ্গে কয়েকটা মুহূর্ত কাটাতেও পারবে এক সাথে। কোনওটাই হল না। রঙিনের বাড়ি ফেরাটা নিশ্চিত করতে হত, কাল সকালেই ওর স্কুল আছে।

    তবু সোফা থেকে উঠল বিনীতা। বলল, “চলুন আমিও একটু কাজে লাগি। আপনার কিচেনটাও তো দেখাননি তখন।”
    হাসল ইন্দ্রনীল, এই হাসিটা এখন বড় প্রিয় হয়ে গেছে বিনীতার। “আসুন, আসুন,” বলল সে। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর কাজের লোক ছাড়া আর কোনও মহিলা তার রান্নাঘরে ঢোকেনি। 
    বিনীতা ইন্দ্রনীলের সঙ্গে এগিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে। অরুণাভ মোবাইল থেকে চোখ তুলে একবার দুজনকে দেখে নিল।

    রান্নাঘর দেখে অবাক হল বিনীতা। ঘরটা বেশি বড় নয়, দুটো বিপরীতমুখী দেওয়ালে কিচেন টেবিল - গ্যাসওভেনের সাথে যেটা সেটা পাথরের আর অন্য দিকেরটা কাঠের। চিমনির নিচে দুই বার্নারের গ্যাস ওভেন, তার ওপর এখন রয়েছে দুটো মাঝারি আকারের অ্যানোডাইজড কড়াই, তার ওপরের ঢাকনাদুটো অবশ্য স্টিলের। গ্যাস ওভেনের ডান দিকে একটা জানলা, জানলার  পাশে দেওয়ালটা ঘুরেছে, সেই দেওয়ালে একটা বাসনপত্রের শেলফ, তারই একটা অংশে রাখা মাইক্রোওয়েভ। শেলফের নিচে মেঝের ওপর কাঠের লম্বা টেবিল, তার ওপর ইন্ডাকশন, মিক্সি আর স্যান্ডুইচ মেকার। অন্য দিকের দেওয়ালে যে পাথরের টেবিল তার এক পাশে স্টিলের  সিংক, খাবার জল পিউরিফায়ার। টেবিলের নিচে আর ওপরে খোলা আর ঢাকা দেওয়া তাক, নানা জিনিসপত্র রাখা। টেবিলের ওপরের খালি জায়গায় তিনটে বোন চায়নার প্লেট, বাটি ইত্যাদি রাখা।

    বিনীতার খুঁটিয়ে দেখাটা দেখছিল ইন্দ্রনীল। “কেমন দেখলেন, ম্যাডাম?”
    “খুব গোছানো,” বলল বিনীতা।
    “যে কাজটা আপনি ভালবেসে করেন, সেটা ভাল হবে, গোছানো হবে। যার যা পেশা, তার বাইরে প্রতিটা মানুষের একটা ভাল লাগার কাজ থাকা উচিত। সেটা কীর্তন গাওয়াও হতে পারে, বাগান করাও হতে পারে, আবার অ্যালকোহলিক ড্রিংকস বানানোও হতে পারে।”
    “আপনার ক্ষেত্রে সেটা রান্না করা?”
    “হ্যাঁ, রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা। তবে খাওয়ানোর লোক নেই,” দুঃখ পাওয়া মুখ করে বলল ইন্দ্রনীল।
    “বলুন কী সাহায্যে লাগতে পারি?” জিজ্ঞাসা করল বিনীতা।
    উত্তর দেওয়ার আগে একটু সময় নিল ইন্দ্রনীল। বিনীতার মনে হল অনন্তকাল ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে ডাক্তার। “এই প্লেট গুলো যদি কষ্ট করে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে যান, আর ওখান থেকে বোলটা নিয়ে আসেন। গরম করতে হবে।”

    অনুরোধ রাখার জন্য ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতে গিয়ে বিনীতা দেখল তার স্বামী সোফার ব্যাকে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রয়েছে। আওয়াজ পেয়ে তার দিকে তাকাল। সত্যিই কি নেশা হয়েছিল? সন্দেহের ব্যাপারটা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করতে এখন অস্বস্তি হচ্ছে। 

    খাবার ইন্দ্রনীলই সার্ভ করল। ফ্রায়েড রাইস - লাল ক্যাপসিকাম, হলুদ কর্ন, সবুজ মটরশুঁটি, কমলা গাজর আর বাদামী ফিশবল দেওয়া হালকা খয়েরী রঙের ভাত। একটা চিকেন আর একটা ফিশ আইটেমও রয়েছে।

    “এ তো খুব কালারফুল ফ্রায়েড রাইস। খেতেও বেশ অন্যরকম,” বলল অরুণাভ।
    “সত্যিই অন্যরকম,” সায় দিল বিনীতা।
    “এটা একটা ইন্দোনেশিয়ান প্রিপারেশন। ফ্রায়েড রাইস উইথ ফিশবল। অয়েস্টার সস আর ফিশ সস দিয়ে বানানো। তবে একটু ইন্ডিয়ানাইজ করা,” বলল নিমন্ত্রনকর্তা।
    “আর এগুলো?” জিজ্ঞাসা করল অতিথি অরুণাভ।
    “মাছের আইটেমটা আসলে ভিয়েতনামী সুইট অ্যাণ্ড সাওয়ার স্যুপ। সেটাকে একটু টুইক করে নিয়েছি সাইড ডিশ হিসেবে। কেমন খেতে হয়েছে?”
    “বলা মুশকিল, কখনও এমন খাইনি। সত্যি বলতে কি আমার রাইসটা খুব ভাল লেগেছে,” বলল অরুণাভ।
    “আমার ভালই লেগেছে। চিকেনটা তো অনেকটা হুনান চিকেনের মত খেতে,” জানাল বিনীতা।
    “হ্যাঁ, কারণ ওটা হুনান চিকেনই,” ডাক্তারের উত্তর শুনে হাসল সবাই।
    “তিন দেশের খাবার খেলাম,” বলল বিনীতা।

    খাওয়া শেষ হল, ইন্দ্রনীল খেয়াল করল অরুণাভ তেমন কিছু খেল না। ওনার মনে হয় খাবার ভাল লাগেনি। ম্যাডাম অবশ্য মনে হল তৃপ্তি করেই খেলেন। একবার জিজ্ঞাসাও করলেন ফিশ সস কোথায় কিনতে পাওয়া যায়।

    বেনারসী মশলা দিয়ে মুখশুদ্ধি হল। এবার ফেরার পালা। বিনীতা আর অরুণাভ খুব অবাক হয়ে গেল যখন দেখল ডাক্তারও রেডি হয়ে বেরোল তাদের সাথে।
    “কোথাও যাবেন?” জিজ্ঞাসা করল অরুণাভ।
    “হ্যাঁ, আপনাদের গাড়িকে ফলো করে যাব।”
    “সে কি! কেন?... আপনি বোধ হয় ভাবছেন… আরে আমি ঠিক আছি,” বলল অরুণাভ।
    “জানি। আমি এমনিতেই মাঝে মাঝে একা একা গাড়ি নিয়ে বেরোই। এটাও সেই রকমই ধরে নিন।”

    বিনীতা বুঝতে পারছে ইন্দ্রনীল কেন এমন করছে। তার মনে হয়েছে অরুণাভর যদি সত্যিই নেশা হয়ে থাকে, আর সে জন্য রাস্তায় যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে উনি থাকবেন। অরুণাভ গাড়ি চালাতে না পারলে উনি নিজে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে দেবেন, তখন এই “ব্যাবস্থার” কথাই মনে হয় বলতে চাইছিলেন। ডাক্তারকে নতুন করে ভাল লাগল তার। মুখে শুধু বলল, “গুড নাইট।”
    বাকি দুজনও শুভ রাত্রি জানিয়ে যে যার গাড়িতে উঠে পড়ে রওনা হল।

    কোনও সমস্যা ছাড়াই দুটো গাড়ি পৌঁছে গেল এজিএম সাহেবের বাংলোয়। বিসপাতিয়া দরজা খুলে দিল। জানালো রঙিন ঘুমিয়ে পড়েছে। 

    অরুণাভ গাড়ি গ্যারেজে তুলে দিয়ে ইন্দ্রনীলকে ফের “গুড নাইট” বলে ঘরে ঢুকে যায়। ইন্দ্রর গাড়ির দরজার কাছে ছিল বিনীতা। একটু ইতস্তত করে সে বলে, “আপনাকে কী বলে…”
    “থ্যাংকস দেবেন? এক দিন সত্যিকারের আউটিং করে।”
    “আচ্ছা। গুড নাইট।” ঘরের দিকে এগোয় বিনীতা।

    গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ইন্দ্রনীল দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অরুণাভ। মনে হল তাকিয়ে আছে তারই গাড়ির দিকে।

    বিনীতাও স্বামীকে দেখে। এই প্রবল ওঠাপড়ায় ভরা সন্ধ্যা কি এখনও শেষ হয়নি? (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন