এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আনসারউদ্দিনের 'আবাদের আটকাহন' উপন্যাসের আলোচনা

    PURUSATTAM SINGHA লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২১২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মাঠ ও মেদিনী যে আখ্যানের ধাত্রীভূমি
    পুরুষোত্তম সিংহ

    কোনো কোনো লেখক আখ্যানমাঠ ক্রমেই প্রসারিত করে চলেন। আবার কোনো কোনো লেখক বৃত্তকে ছোট রেখে তার মধ্যেই নানা আঙ্গিকে পাঠককে পাক খাওয়ান। প্রথম পর্বের লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, মধুময় পাল। দ্বিতীয় পর্বের লেখক তপনকর ভট্টাচার্য, দেবর্ষি সারগী। কেউ কেউ ব্যক্তিকেই চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট বৃত্তের যাবতীয় সারাৎসার, রহস্যবিন্দুসহ মস্তিষ্কের কার্যকলাপ স্পষ্ট করেন, কেউ কেউ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে সমষ্টির চিত্রে চলে যান। আনসারউদ্দিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেও ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত যে সমষ্টির মহাভারত তাই প্রতিপন্ন করতে চান। আনসারউদ্দিন, লুৎফর রহমান আখ্যান মাঠ প্রসারিত করলেও দু-জনের মধ্যে প্রভেদ আছে। আবার সোহারাব হোসেন শিল্পমূল্য প্রতিস্থাপনে যতটা কার্যকারী বাকি দু-জন ততটা নয়। অন্যদিকে লুৎফর রহমান নিজেই একটা ধারার প্রবর্তক। কথকতার মধ্য দিয়ে অসমান্তরাল বিন্যাসে লোকায়ত পরিসরের যে কাব্যময় বিচ্ছুরণ সম্ভব তা লুৎফর রহমান প্রতিপন্ন করেছেন। কৃষির হালহকিকত নিয়ে সাম্প্রতিক দুটি উপন্যাস—আনসারউদ্দিনের ‘আবাদের আটকাহন’ (২০২৪) ও হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আশমানি কথা’ (২০২২)। দুইজনই কৃষির সঙ্গে যুক্ত হলেও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভেদ আছে। আনসারউদ্দিন নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায় অবক্ষয়িত সামন্ততন্ত্রের একুশ শতকের প্রতিনিধি। আনসারউদ্দিন হাল, লাঙল চালানো জানেন। হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে কৃষি এক্সপেরিমেন্ট। আনসারউদ্দিন গ্রাম বাংলার আবহমান কৃষিকাজের নিত্যদিনের স্বরূপকে এঁকেছেন। হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায় সমান্ততান্ত্রিক পরাজয়ের বেদনা, পুঁজিবাদের বিকাশে কৃষির বিনাশের চিত্র এঁকেছেন। কৃষিনির্ভর দেশের কৃষি কীভাবে, কোনপথে লোকসানের দিকে, বণিক বৃত্তের হাতে ডুবে যাচ্ছে তার ক্ষমতাতাত্ত্বিক বয়ানকে স্পষ্ট করেছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপধ্যায়ের ‘মহেশ’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘আদরিণী’, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘গোঘ্ন’ গল্পে পশুর মৃত্যুকে করুণ সংবাদের চিত্র পেয়েছি। আনসারউদ্দিন ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যান শুরু হচ্ছে কৃষক হিকমতের চাষের বলদ জোড়া মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। চাষের বলদ না থাকলে কৃষকের অবশিষ্ট আর কী থাকে? আনসারউদ্দিন সমষ্টির চিত্র খুঁজতে অগ্রসর হয়েছেন। বিশ্বায়ন, ভোগবাদের যুগে বসে আরেক পৃথিবীর ভাষ্য শোনাতে চেয়েছেন। যে উপনিবেশ এখনো অন্ধকারচ্ছন্ন, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, মৌলবি মোড়ল শাসনে পরিবৃত্ত, অনাহারী অভুক্ত দরিদ্র জনপদ। কৃষি-মুচি-শকুন ত্রিবিধ বৃত্তে ডুবন্ত জীবনের বিনাশশয্যা দ্বারা আখ্যানের যাত্রা শুরু হয়েছে। বলদের মৃত্যুতে রীতিমতো নাজেহাল একটি পরিবার। মনের অন্দরে উঁকি দিচ্ছে যাপনের বিবিধ উদ্ভাসন। ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর মতো ডানা ভাঙা জীবনের সৌন্দর্য কী? যা কেবলই বঞ্চিত নিপীড়িত তার আবার বহমানতা কী? তবুও জীবন চঞ্চল। সেই চঞ্চল জীবনের অনাবৃত সৌন্দর্যের আবিষ্কারক আনসারউদ্দিন। একুশ শতকের বিশ্বায়ন, ভোগবাদ, ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের বিপরীতে আছে অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামীণ জনপদ। বাত-বিতর্কে, সালিশি সভায়, ধর্মীয় নিপীড়নে তা কুসংস্কারচ্ছন্ন। সেই জনপদের স্বরূপচিত্র আনসারউদ্দিনের ভাষায় —
    “আজকাল মানুষ সামান্য ভুলত্রুটি পেলে বিচার বসায়। জরিমানা করে। বিচার বসবে গাঁয়ের তেমাথায় বা চৌমাথায়। সেখানে মেয়েমদ্দ সবাই হাজির হবে। গলায় গামছা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা দিতে পারে, আবার নাও দিতে পারে। তারপর আছে নাকখত। কতদূর সীমানাজুড়ে নাকখতের দণ্ডিকাটা হবে ঠিক করবে মোড়ল মাতব্বর। একেক গাঁয়ের একেক রকম নিয়ম। কেমন থাকবে মোড়লের মনমর্জি? মুসলমান গ্রাম হলে বলবে—নাকখত জরিমানা বাদ দাও। মেয়েছেলে হল মায়ের জাত। যে গোরুতে বেইজ্জতি করেছে তাকে ধরে এনে খেজুর গাছে বাঁধো। তারপর খুনকার ফরাজিকে খবর দাও। গাঁ সুদ্ধু মানুষ হালাল করে খাই।” (আবাদের আটকাহন, অভিযান, প্রথম প্রকাশ, জানুয়ারি ২০২৫, পৃ. ১৪)

    শোষণ, প্রতারণা, লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে ক্ষুধিত পাষাণের প্রতিমা পথ চলে। জীবনের মানচিত্র গড়ে। সেই শোকতাপের কোলাহল আনসারউদ্দিন ঢুলুঢুলু দু-নয়নে দেখেন। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য শব্দসাগরে ডুব দেন। এও যেন আনসারউদ্দিনের স্বদেশ স্বজনের আত্মসেবা। নিজস্ব বৃত্তের মধ্যে অচেনা ভারত আবিষ্কারসহ জীবনের মন্থনযোগ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা।

    ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যান কৃষি সংবাদের। জটিল তত্ত্ব নয় গ্রামবাংলার আবহমান কৃষিকাজের অন্তঃভুবনের সামগ্রিক পরিচয়। লাঙল, বলদ, মাঠ, বীজ, সার, শস্য নিয়ে যাঁদের কারবার। শুধু তো কৃষি নয় কৃষক পরিবারের যাবতীয় খতিয়ান। ঘুটে যাদের ব্রহ্মাস্ত, মাঠ যাদের ক্ষুধার অনল। প্রান্তিক জীবনের সামগ্রিক চিত্র প্রতিস্থাপনে লেখক অঙ্গিকারবদ্ধ। হিকমত, ছবিতনের পরিবার কেন্দ্রে রইলেও সমষ্টির চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সামান্য প্রাপ্তিতেই এখানে আনন্দ জাগে, সামান্য দৃশ্যেই বিস্ময় জাগে। ঝগড়া, বিবাদ ঘটে বটে আবার মিলিয়েও যায়। দুঃখ, পরাজয়, হতাশা নিয়ে মানুষগুলি চিন্তিত নয়। কেউ চেয়ে চিন্তে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকে। ছিদু ব্যাঁকা তেমনই মানুষ। গল্পের বাঁকে বাঁকে লেখক চিত্রকল্প আঁকেন। মিথ, সংস্কার, লোকাচারের এ জীবন আলো-আঁধারি ছন্দে ভেসে যায়। বলদের নাল থেকে, গোরু কেনার বাতাসা বিতড়নে প্রাপ্তির সুখ অনুভব করে। ভোগবাদ, আত্মকেন্দ্রিক, যান্ত্রিক সভ্যতার বিপরীতেও গ্রাম বাংলার আরেক চিত্র আজও বর্তমান। কৃত্রিম ধারাপাতের বিরুদ্ধে সমষ্টির ঐক্যনির্ভর জীবন ছাঁচ। গ্রাম জীবনের বদলনামা আনসারউদ্দিন, আবুল বাশার, নলিনী বেরা, সৈকত রক্ষিত, অমর মিত্র, আফসার আমেদ নানাভাবে দেখিয়েছেন। সেই জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে আজও জড়িয়ে আছেন সৈকত রক্ষিত, আনসারউদ্দিন, নীহারুল ইসলাম। আনসারউদ্দিনের লেখা যে এত সতেজ, জীবন্ত, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর তার কারণই এই। তিনি নিজ হাতে লাঙল টেনে চলেন আজও। আর লিখেছেন লাঙল টানা হিকমতকে। বাংলা সাহিত্যে ‘আবাদের আটকাহন’ লেখা একমাত্র আনসারউদ্দিনের পক্ষেই সাজে। হ্যাঁ শিল্পের সত্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে পারে, আর্টের পন্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে তবে নির্ভেজাল বাস্তবতার পাঠও গণ্য। কলকাতা মহানগর থেকে বহুদূরে থাকা গ্রাম বাংলার পাঠকের এ আখ্যান নাও ভালো লাগতে পারে কেননা তারা সবটাই জানেন। যেমন আমি। তবুও আনসারউদ্দিন জিতে যান কাব্যময় ভাষার ছোটো ছোটো চিত্রকল্পে। গল্পের পরতে পরতে জটিল সময়ের ক্যানভাস ও জীবনতরঙ্গের বহুবিধ সজ্জাচিত্রে। ভাঙন গড়নের মাঝখান থেকে গ্রাম বাংলার মানুষ আজও অবাক বিস্ময়ে তাকায়। সামান্য সত্য রোমন্থনেই আনন্দে উদ্দীপিত হয়। সামান্য দৃশ্যসজ্জা দেখতেও ভিড় করে। জীবনের পরতে পরতে যে বিস্ময়, কোলাহল, আনন্দ তা শহরের মানুষ যান্ত্রিক ও ব্যস্ততায় ভুলে গেছে। প্রান্ত জীবনে তো মুহুর্মুহু সংবাদ নেই, নিত্য নতুন আনন্দযজ্ঞ নেই, তাই সামান্য দৃশ্যেই অবাক বিস্ময়ে তাকায়। ছাইচাপা আগুন থেকে জীবনের বিস্ময়সজ্জা দেখে নেয়। মাঠে নতুন বলদ নেমেছে তাই দেখতে ভিড় করেছে মানুষ—
    “হিকমত সেই মই জোয়াল লাঙল কাঁধে নিয়ে মাঠে নেমেছে। তার সঙ্গে আরও অনেকেই গিয়েছে। তারা দেখতে চায় নতুন বলদে কেমন লাঙল টানে। চাষের বলদ শুধু হৃষ্টপুষ্ট হলেই হবে না। কাঁধে জোয়াল নিয়ে কাজ করা চাই। তা নইলে চাষ মাটি। গোরু দেখে তো অর্ধেক গাঁয়ের লোক মাঠে এসে হাজির হয়েছে। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। গোরু নয়, যেন দুটো হাতি নামছে। শুধু দর্শনধারী হলে হবে না, কাজের বিচার দিয়েই হবে গুণের বিচার।” (তদেব, পৃ. ২৫)

    আখ্যানের নাম ‘আবাদের আটকাহন’ হলেও তা আবাদের ষোলোআনা কথা বলতে প্রস্তুত। কৃষক ও তার মাঠের শস্য উৎপাদন পদ্ধতিতে কথা ভেসে গেছে। মেঠো মানুষের সুখ দুঃখের গল্পের সঙ্গে জমি-জোত তো অনিবার্যভাবে জড়িত। আনসারউদ্দিন নিজেও কৃষির সঙ্গে যুক্ত বলে কৃষির আগাপাশতলা সংবাদ জানেন। সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি এখানে প্রতিফলিত করেছেন। জমির চরিত্র, মাটি ভাঙা, নীচু জমি-উঁচু জমি, চরিত্র অনুসারে ফসল আবাদ, শুকা জমি, রসযুক্ত জমি, সার, লাঙল, বলদ, জমি নিড়ানো, কর্মকার দ্বারা লাঙল ধার করানো, কৃষকের অভিজ্ঞতা, সমষ্টির জ্ঞান সমস্ত মিলিয়ে এ আখ্যান মাঠের কাব্য। চিত্রকল্পময় গল্পধর্মীতার আড়াল দিয়ে কৃষিজ শব্দের সঙ্গে পাঠকের মিতালি। মাঠকেন্দ্রিক জীবনবৃত্তে গোষ্ঠীজীবনের চেহারা, কৃষকের ঘর-বাইরের চিত্র, নিসর্গের আস্তরণ ও জমি-বলদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মানুষের নিত্যদিনের পথচলার গল্প এ আখ্যান। এ যেন নির্ভেজাল জীবনের পাঠ। আনসারউদ্দিনের ঝুলিতে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত আছে তাই যেন তিনি চরিত্র সাজিয়ে বুনে দেন। এইসব চরিত্রদের তিনি নিবিড়ভাবে চেনেন, জানেন। জীবনের সুখ-দুঃখের সব কথাই তাঁর জ্ঞাত। তিনি কেবল চিত্রকল্পময় মধুর গন্ধে বুনে দেন। হারু কৈবর্ত, অনিল ঘোষ, কামাল, জামাল, হিকমত সকলেরই সুখ-দুঃখের গল্প চাষকেন্দ্রিক। অল্পতেই সুখী এ জীবন বড় বিস্ময়কেন্দ্রিক, বড় আনন্দময়। এখানে তো বাইরের বাতাস নেই, উড়ো সংবাদ নেই তাই সামান্য দৃশ্যসজ্জাতেই মানুষ পরম আনন্দে উপভোগ করে—
    “হিকমত এই প্রথম নতুন বলদের কাঁধে জোয়াল চাপিয়ে বিসমিল্লাহ বলে হালচলনা শুরু করল। চারপাশে আলের উপর যেসব চাষি মানুষ বসেছিল তারাও উঠে দাঁড়াল। নতুন বলদে হাল টানছে। মাটিতে শিকড় গেড়ে বসে থাকা হাজার রকম ঘাস লতাপাতা থেকে পট্‌পট্‌ শব্দ হচ্ছে। তার সঙ্গে উঠে আসছে বড়ো ঢেলা। বলদের গায়ে পাচন দাবানোর দরকার পড়ছে না। সামান্য তাউ টোক্করে বুঝে যায় গেরস্ত কেমনভাবে হাল চালাতে চায়।” (তদেব, পৃ. ২৭)

    বাংলা উপন্যাসকে আনসারউদ্দিন শেষপর্যন্ত চাষের জমিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন। বাংলা উপন্যাসের ভূগোল প্রসারিত করার ক্ষেত্রে ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যানের গুরুত্ব অনেকখানি। শুধু তো চাষজমি নয় চাষের সঙ্গে যুক্ত বড় বৃত্তের কথা আখ্যান প্রতিপন্ন করেছে। চরিত্ররা সবাই কৃষক, কর্মকার, মুনিষ। একে অপরের সঙ্গে সৌভ্রাত্ব সম্পর্কে নির্ভরশীল। মান অভিমান ঝগড়া বিবাদ আছে কিন্তু আন্তরিকতার কোনো অভাব ঘটেনি। জীবনের আন্তরিকতাকে কীভাবে স্পর্শ করতে হয়, জীবনের ভাব ভালোবাসাকে প্রচণ্ড রৌদ্র-জলে কীভাবে ভাসমান করতে হয়, নিদারুণ অভাবকে কীভাবে স্নেহের পরশে ডুবিয়ে দিতে হয় তার জীবন্ত বয়ান এ আখ্যান। জীবনের অফুরন্ত প্রাণশক্তিকে কাঁধে বয়ে কৃষক হাসিমুখে ফসল ফলায়। আনসারউদ্দিন এইসব মানুষগুলিকে স্পর্শ করছেন বড় আন্তরিক ঢঙে, সুরে ছন্দে। ভাষার মায়াবী ছাঁচে গদ্যের অবিরাম চলমানতাকে যেমন বজায় রাখেন তেমনি চরিত্রকে ভাসমান করেন কৃষির নানা উপকরণে। তেমনি শব্দের সম্প্রসারিত গুণেও এ আখ্যান বরেণ্য। কৃষিকাজের এমনসব অচেনা অজানা শব্দকে তিনি বাংলা উপন্যাসবৃত্তে নিয়ে এলেন যা শুধু স্বতন্ত্রই নয় পাঠকের মনে নতুনত্বের স্পর্শ বয়ে আনে।

    শিল্পীর জীবন বাংলা উপন্যাসে নানাভাবে এসেছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পঞ্চপুত্তলী’ উপন্যাসের মলিন দাসের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে জরাসন্ধের ‘দেহশিল্পী’ আখ্যানের কথা। সমরেশ বসু লিখেছেন মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে’। সমরেশ বসুর ‘ষষ্ঠ ঋতু’, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ‘খালপোল ও টিনের ঘরের চিত্রকর’, আনসারউদ্দিনের ‘শিল্পী’ গল্পের কথা স্মরণীয়। দেবেশকান্তি চক্রবর্তীর ‘ষোল ঘড়ি কথা’ (২০০৮) আখ্যানে কুম্ভকার সমাজের কথা পাই। কুম্ভকার সমাজের কথা আছে নলিনী বেরার ‘মাটির মৃদঙ্গ’ আখ্যানে। আখ চাষি, তুলা চাষিদের কথা আছে সৈকত রক্ষিতের আখ্যানে। আনসারউদ্দিনের ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যানে কৃষির জনমুনিষের পাশাপাশি আছে কর্মকার জীবনের ইতিবৃত্ত। কৃষক যেন কর্মকারের উপর নির্ভরশীল। তেমনি আখ্যানের নাম চিহ্নিত গ্রামগুলিতে নতুন নতুন কর্মকারের আগমনে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে উঠতে দেখি। হিন্দু-মুসলিমের মিলিত জনপদে, ধর্ম-অধর্মের মিল মহব্বতে, সম্প্রীতির মেলবন্ধনে জীবনের আরোগ্য সেতু গড়ে উঠতে দেখি। জীবনের ষোলোআনা সৌন্দর্যের শিল্পী আনসারউদ্দিন। সম্প্রীতির মেলবন্ধনই যে শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য তা নানাভাবে আবিষ্কার করেছেন সোহারাব হোসেন, আনসারউদ্দিন, লুৎফর রহমানের মতো পবিত্র লেখকরা।

    হিকমতকে সামনে রেখে আখ্যান শুরু হলেও তা ক্রমেই বহুচরিত্র ভেসে গেছে। আসলে তিনি মাঠের কাব্য লিখতে চেয়েছেন। মাঠ তো ব্যক্তিনির্ভর নয় তাই সমষ্টির সত্য, সমষ্টির সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া আখ্যানে ভেসে যায়। তবে সবটাই কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষক থেকে জনমুনিষ, কৃষকের অন্তঃপুরের সুখ দুঃখ থেকে মাঠের নিয়মচরিত, দক্ষ মুনিষের কদর থেকে চাষপদ্ধতি, বিভিন্ন ফসলের চাষের রকমফের নিয়ে নানারকম সংবাদে ভেসে গেছে। ইতিপূর্বে আনসারউদ্দিনের ‘মাটির মানুষ মাঠের মানুষ’, ‘জন-মুনিষ’ আখ্যানে সে জীবনের কথা এসেছে। জনচরিত্রের জীবনবিন্যাস, জীবনে বেঁচেবর্তে থাকার নিত্য কোলাহল, আবাদের নানামাত্রিক পদ্ধতি, কৃষকের বক্তব্য, জনমুনিষের বক্তব্য নিয়ে আখ্যান কৃষিজীবনের অভ্যন্তরের সংবাদ বহন করেছে। ভারতের কৃষিকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে এ আখ্যান উল্লেখযোগ্য সংযোজন। প্রান্ত মানুষের কৃষিভাবনা যেমন আখ্যানে নানামাত্রায় ছড়িয়ে আছে তেমনি একুশ শতকের কৃষিপাঠ আজ কোন বীক্ষণে প্রবাহিত হচ্ছে তার নিদর্শন মিলবে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষা, কৃষিজাত শব্দ, মাটি মেশানো জীবনের ঘ্রাণ যে বয়ানে ব্যক্ত হয়েছে তা তাৎপর্যপূর্ণ। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা কৃষিকাজ হলেও পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তভুবনে আজও তা মুনিষনির্ভর। শত হাত বয়ে যেন সোনার ফসল তোলা হচ্ছে। সেই সোনার ফসলের আখ্যান ‘আবাদের আটকাহন’।

    আনসারউদ্দিন উদার মানবিক শিল্পী। ‘শিল্পী’ গল্পে তিনি যে উচ্চ দার্শনিক সুর বেঁধেছিলেন গত শতকের শেষের দশকে তা আজও পাঠককে চমকে দেয়। শুধু ‘শিল্পী’ গল্প নয় সমস্ত আখ্যানেই তিনি মানুষকে নির্মাণ করেছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে। আজও প্রান্ত তেমনই আছে। রাষ্ট্রের ধর্ম যত বিভেদ সৃষ্টি করবে, স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি যত সম্প্রদায়িক বিষ বুনে যাবে আনসারউদ্দিনের প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদ তত প্রখর হবে। তিনি মানুষকে নির্মাণ করেছেন অভাবের সত্যে। এ আখ্যান চাষের সত্যে তা ভেসে গেছে। সেখানে হিন্দু-মুসলিম এক সুরে জীবনের গান গাইছে। আজানের সুরে, ফসলের গন্ধে, মাটির টানে ধর্ম সংস্কার কখন যে জীবনের আয়ুধ হয়ে যায় মানুষ জানে না—
    “আজান না মানলে বলব কেন খেতে আজান দিতে। নামাজ কালাম সবই মানি। তা নইলে তোমাদের ইমামের কাছ থেকে পানি পড়া কেন নিয়ে যায় আমাদের পাড়ার লোক? তাবিজ পড়া মাদুলি পড়া নিয়ে যায়। তাতে কারও কাজ হয় কারও হয় না।
    এরপর আর কথা থাকে না। একই গ্রামে বাস। একই মাঠে চাষ। তবু অনিল ঘোষের জমিতে আজান দিতে গিয়ে কাদির আবদুল্লা একবার থমকে দাঁড়াল। বলল—তোর জমি আমার জমির পশ্চিমে। আমার জমিতে যখন আজান দিয়েছি তখন সেই আজানের ধ্বনি তোর জমিতেও ছড়িয়ে গিয়েছে। আজান তো পশ্চিমদিকে মুখ করে দিয়েছি।” (তদেব, পৃ. ৬৮)

    রুজি রোজগার, পেটভাত যেখানে একমাত্র সত্য, যেখানে ফসল উৎপাদনই জীবনের একমাত্র নিয়তি সেখানে প্রচলিত ধর্মে আটকে থাকা অন্যায়। সেই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেনি অনিল ঘোষ, সদু দফাদার, কাদির আবদুল্লারা। ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যান যেমন কৃষির চালচিত্র তেমনি অভাবের কাব্য। জনমুনিষদের জীবনে অন্নের কান্না কোনোদিনই থামে না। অভুক্ত, অনাহারী মুনিষ এগাঁ থেকে ওগাঁয় কর্ম সন্ধানে যায়। খেদু কয়দিন পাট পাতা সেদ্ধ খেয়ে জীবন নির্ধারণ করেছে। হ্যাঁ আনসারউদ্দিন একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক অতিক্রান্ত সময়ে এই আখ্যান লিখছেন। আজও প্রান্ত অনাহারে ডুবে আছে। সেই ডুবন্ত মানুষের অভাবের সৌন্দর্য এ আখ্যানে উঁকি দিয়েছে। অগা সেখ, বগা সেখ, নফর কানা, ঝামেলা বিবিদের নামই যেন সেই সত্য বহন করে। নামহীন মানুষগুলির নামের কোনো আভরণ নেই। নাম থাকতে হয় তাই নাম। অভাব এঁদের গায়ে আষ্টেপৃষ্টে সারাজীবন লেগে থাকে। জীবনের ঘ্রাণ এখানে উৎপাদিত ফসলের গন্ধে ভাসে। তাও প্রকৃতিনির্ভর। প্রকৃতির রুদ্রবীণা কখন বাজে কেউ জানে না। আল্লাতলার দোহাই দিয়ে নিয়তির সন্তান হয়ে মানুষগুলি বসে থাকে। কেউ দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। মাঠের ঘাসকে শয়তানের প্রতীকভাবে। নবীন ফসলের গন্ধে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে ওঠে। এঁরা বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটক বা যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘নবান্ন’ কবিতায় কথা শোনেনি। শোনার প্রয়োজন হয় না। এখানে অজস্র ধর্মীয় সংস্থান, লোকচার, লোককথা বর্তমান। এঁরা নিজেরাই জীবনের কাব্য রচনা করে। তাদের জীবনের সফল রূপকার আনসারউদ্দিন।

    রসুলপুরের মুসলিম মুনিষ এসেছে জয়কালীর মাঠে হিন্দু মালিক গোপাল কৈবর্তের জমিতে পাট কাটতে। খোদাতলার মানুষ আজানের ধ্বনি দিতে ভয় পায়। কখনো হিন্দু মুনিষ আল্লার নাম করে পাটে হাঁসুয়া বসায়। ধর্ম এখানে যাপনের অংশ। বিভেদ বা আধিপত্যের অংশ নয়। তেমনি ধর্ম এখানে কৃত্রিম নয়। জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসে, সংস্কারে কখন জড়িয়ে গেছে নিজেরাও জানে না। অভাবের টানে জানার প্রয়োজন হয় না। ভাবে অভাবে, স্বভাবে সত্যে মানুষগুলি জীবনের ঘ্রাণকে আষ্টেপৃষ্টে অনুভব করে। কোলাহল বিবাদের বদলে সামান্য গল্পে, সামান্য প্রাপ্তিতে জীবনের মহানুভবতাকে উদ্‌যাপন করে।

    ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যানের অষ্টম কাহন অভাব। হ্যাঁ মানবতা, সম্প্রীতির আছে। রসুলপুরের মুনিষ এসেছে জয়কালীর মাঠ, পিরতলার মাঠে ধান, পাট কাটতে। গোপাল কৈবর্তের জমি আছে জয়কালীর মাঠ ও পিরতলার মাঠে। স্থাননামের উল্লেখ হিন্দু-মুসলমানের মিলিত অবস্থান চিহ্নিতকরণে। আল্লা-ভগবান এখানে দ্বন্দ্ব পাকায়নি। ব্যক্তি মানুষ নিজের ধর্মের প্রতি সচেতন, নিষ্ঠাবন আবার অপর ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু। গোপাল কৈবর্তের জমিতে মুসলিম মুনিষ কাজ করছে। আল্লাধ্বনি দিলে মালিকের একঘরে হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে সামাজিক নিকতেন। হাতেম মোল্লা, কায়েম মল্লিক, নকেচ সেখ, নফর কানা, আজমত পাগলা, নজে, ফজে সকলেই সচেতন হয়ে ওঠে। আনসারউদ্দিন উদার মানবতাবোধের এক দিগন্ত সত্য প্রতিস্থাপনকারী অভ্রান্ত শিল্পী। ধর্মতন্ত্রের বেড়াজালকে তিনি অতিক্রম করে যান জনপদের সত্যে। আবুল বাশার, আফসার আমেদের আখ্যানে ধর্মতন্ত্রের ভেকধারী বাহক মিথের মানুষকে নানা কায়দায় আবিষ্কার করেছেন, ধর্মতন্ত্রের গোঁড়ামিকে ভেঙে রেখেছেন, আনসারউদ্দিন জনপদের বাতাসের সঙ্গে ধর্মকে এমনভাবে মিলিয়ে রেখেছেন যা নীরব। মানুষের যাপনের অংশ হিসেবে, আশ্রয়প্রার্থীর তন্নিষ্ট উচ্চারণ হিসেবে, কর্মে বল পাবার প্রেরণা হিসেবে, শুভচেতনার অগ্রণী সেতুবন্ধনকারী দূত হিসেবে আল্লা আছে। বিভেদে নয়, সাম্প্রদায়িকতায় নয়।

    ‘আবাদের আটকাহন’ জনপদের আন্তরিক উচ্চারণ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজের নিচু তলার মানুষের আবহমানসুরকে যেমন মহাকালের বীণায় বাজিয়েছেন তেমনি আনসারউদ্দিন খুঁজে চলেছেন একুশ শতকের প্রান্তজীবন। আচরণে, আবরণে আভরণে কৃষিকাজে, জনমুনিষে ভাবে ছন্দে জীবনের পাল্লায় ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে থাকা মানুষগুলির নির্বিকল্প জীবনের উদ্দেশ্যহীন সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট সাধক আনসারউদ্দিন। দশকে দশকে বদলে যাওয়া জনপদকে তিনি দেখছেন, জনপদের ভাঙন-গড়ন সবটাই তাঁর জানা। আখ্যানমাঠে তা ঝোড়ো বাতাসে উঁকি দেয়। নিস্তব্ধ জনপদের নির্বাক চিত্রকল্পের এক অনিবার্য শিল্পী আনসারউদ্দিন। তাঁর আখ্যানে শব্দ পরলে যেন শোনা যায়। গ্রাম বাংলার অপরিচিত আটপৌর শব্দে তিনি জীবনের দ্বন্দ্বমথিত সত্যকে নির্মাণ করে চলেন। আল্লাতলা, খোদাতলার মানুষকে তিনি দেখেছেন অভাবের সত্যে, জীবিকার সত্যে, জীবনের সত্যে—“আমরা ঘোষও না মুছলমানও না, মাঠে যখন পা দিয়েছি তখন ধর্ম বাড়িতে ধুয়ে এয়েছি। এখন ছেরেপ মুনিষখাটা আমরা।” এই মানুষগুলির জীবনে মাঠ সত্য, চাষ সত্য, হাল বলদ সত্য, প্রকৃতি সত্য। মাঠের সঙ্গে নিসর্গের সঙ্গে সত্য বন্ধনে মানুষগুলি মিলিত। জনপদের হাওয়া বাতাস, অর্থ-অনর্থ, ক্ষুধা, লোকসংস্কৃতি মিলে গাঁয়ের বধূ ঘোমটা দিয়ে, পুরুষ বিড়ি টেনে হাল চালিয়ে, গোরুর গাড়ি টেনে, ফসল কেটে নিত্য গুজরানে জীবনের কাব্য রচনা করে। মাঠ ও মেদিনীকে তিনি দেখেছেন জীবনের অনিবার্য আরোগ্যসেতু হিসেবে। মাঠ ও মাটি আঁকড়ে পরে থাকা মানুষগুলির বর্ণহীন জীবনের রংহীন রূপচ্ছটার আশ্চর্য মেলবন্ধন ঘটেছে ‘আবাদের আটকাহন’ আখ্যানে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মাধব মণ্ডল | 2409:4088:9ec6:1e8d::568a:***:*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:১২541065
  • দাদার লেখা সবসময় অনবদ্য।
  • | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫০541082
  • চমৎকার আলোচনা। আনসারউদ্দিনের লেখা পড়ি নি। আলোচনা পড়ে আগ্রহ জেগেছে। পড়ব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন