আজকের বিশ্বে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত লেখালেখি হয়, যতখানি ভাবতে হচ্ছে, সেমিনার, সম্মেলন, গবেষণা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে ইসলামকে কিভাবে উগ্রতা থেকে উদার ও সহনশীল করে তরুণ-যুবাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- তার এক পার্সেন্টও অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনি। ইসলাম ধর্মের উদারপন্থি যেমন আছে তেমনি কট্টরপন্থিও আছে। অন্য ধর্মেও এরকম বিভক্তি দেখা যায়। তবে তারা একে অপরকে “অখ্রিস্টান” বা “অহিন্দু” টাইপ কিছু ঘোষণা করেন না। একে অপরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত করেন না। ইসলামে এটা নিত্য সহা এক সত্য। রোজ এক দল নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলাম অনুসারী ও বিপক্ষকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে দাবী করেন। ইসলামের হাজারো পন্থির সকলের একই কুরআন, একজনই নবী মুহাম্মদ, প্রত্যেক পন্থিদেরই আল্লামা, শাইখুল হাদিস আছেন। তারা আপনাকে কুরআন থেকে দেখিয়ে দিবেন একমাত্র তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম অনুসারী। নবী মুহাম্মদকে তারাই অক্ষরে অক্ষেরে পালন করেন। আপনার আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে আপনি আমি একজন মুসলমান হিসেবে কাদের খপ্পরে পড়বো সেটা নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন তাদের উপর। বলা হয় বাংলাদেশের বাঙালী মুসলমানরা উদারপন্থিদের হাতে ইসলাম গ্রহণ করায় তারা চরিত্রে ছিল উদারভাবাপন্ন। সময়ের ফেরে উগ্রবাদীদের ব্যাপক প্রচার ও তাদের সংস্পর্শের আসার কারণে গত ৩০-৪০ বছরে বাংলাদেশের উদারপন্থি মুসলিমরা দিনকে দিন উগ্রপন্থি মুসলিমে পরিণতি হচ্ছে। যদিও ভারতবর্ষের উদারপন্থি বলে পরিচিত সুফিদের (যারা এই অঞ্চলের মানুষকে ধর্মান্তকরণ করেছিল) সম্পর্কে যে ইতিহাস আমরা জানি-তারা উদার ইসলামের অনুসারী ছিলেন- তা সঠিক নয়। যাই হোক, সুফিদের ইতিহাস বলার জন্য এই লেখা নয়, এমন কি ইসলামের কোন পন্থিকেই ইসলামের একমাত্র আসল পক্ষ বলা বা কোন একটা পক্ষকে ধরে নিয়ে ইসলামের সমালোচনা করারও উদ্দেশ্য এই লেখার নেই। এই লেখায় আসলে বলার চেষ্টা করা হবে- কেমন করে ইসলামের জিহাদী, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম টাইপ চাপাতি ইসলামকে মোকাবেলা করা সম্ভব। আদৌ সম্ভব কিনা? কেমন করে জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলা জিহাদী ইসলামের প্রসার ঠেকানো যায়।…
সারা দুনিয়াতেই এই সমস্যার একটি সমাধান খোঁজার জন্য প্রাণন্ত চেষ্টা চলছে। নানা মুণির নানা মত। অতিতে খ্রিস্টান চার্চের এইরকম উগ্র ও জিহাদী চেহারা বিশ্ব দেখেছে। কিন্তু সেসব সরাসরি খ্রিস্টের বাণী ছিল না। বাইবেলকে অবমাননা, একই বিষয়ে বাইবেলের ব্যাখ্যা ব্যতিত ভিন্ন ব্যাখ্যা (যেমন- মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে-সূর্য কেন্দ্রিক সৌরজগত নিয়ে), বিধর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ থেকে এসব চালানো হয়েছিল। এটা ছিল মহান খ্রিস্টান ধর্মের অবমাননাকারীদের বিচার করা একজন খ্রিস্ট প্রেমি হিসেবে। যীশুর কোন নির্দেশকে মান্য করতে নয়। কিন্তু ইসলামী জিহাদীদের হাতে আছে নবী মুহাম্মদের বাণীর দলিল। তাদের জিহাদ, কোপাকুপি, গণিমতের মাল লুটপাট, বিধর্মী নিধন বিষয়ে মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের বাণীর স্পষ্ট দলিল! এখন এই “স্পষ্ট বাণীর দলিল” নিয়ে মতান্তর আছে। এই মতান্তর বাণীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য নিয়ে। একদল বলেন কুরআনের সব কিছু আক্ষরিক অর্থে নেয়া যাবে না। এসব রূপক হিসেবে এসেছে। কোথাও ভিন্ন অর্থ করা হয়েছে । এই ব্যাখ্যাগুলোর উদার ও উগ্রতা নির্ভর করে একজন আলেমের ইসলামী বিশ্বাসের উপর। এটি কিন্তু খুবই ভয়ংকর কথা! ইসলাম ধর্ম একটি ছুরি যেটাকে দিয়ে আপনি সবজি কাটার কাজে ব্যবহার করতে পারেন আবার মানুষ মারার কাজেও ব্যবহার করতে পারেন! দুনিয়ার অন্য ধর্মের বাণীকে নিয়েও এরকম উদার ও উগ্র ব্যাখ্যার নজির থাকতে পারে কিন্তু সেটা কখনোই মানুষ খুন করার বিষয়ে গিয়ে পড়ে না। এর মানে হচ্ছে ইসলামী জিহাদী তথা রাজনৈতিক যে ধারা ইসলামে আছে সেটি অন্য ধর্মে ঈশ্বর ও পয়গম্বরের সরাসরি বাণী হিসেবে নেই। এজন্য “খ্রিস্টান রাষ্ট্র” বা “রামরাজ্য” মোটেই ঐ ধর্মগুলোর সঙ্গে জড়িত নয়। যীশুর বাণী বলে যা আমরা জানি সেখানে কোথাও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। যীশু বলছেন না তোমরা ঈশ্বরের রাজ্য গঠন করে খ্রিস্টিয় বিধিবিধান কায়েম করো। কাজেই খ্রিস্টান মৌলবাদী দল বা সংগঠন প্রধানত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে উসকে দিয়ে, অন্য জাতি বা সম্প্রদায়কে নিজেদের জন্য হুমকি স্বরূপ এরকম উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রচারই তাদের সার - সরাসরি প্রভু যীশুর নির্দেশ বলে কিছু চালানোর সুযোগ নেই। ইউরোপের পাত্তাহীন কিছু খ্রিস্টান মৌলবাদী দলগুলোকে মূলত ক্রমশ বর্ধিত অভিবাসী এশিয়ান ও মুসলিমদের দেখিয়ে নিজেদের জাতীতাবাদী রাজনীতি চালাতে হয়। ভারতের “হিন্দুত্ববাদী” মূলত পাকিস্তানকে ঘিরে। অধুনা বাংলাদেশে ইসলামীকরণ ও মুসলিম মৌলবাদী উত্থান ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। হিন্দু মৌলবাদীরা প্রতিবেশী উগ্র মুসলিম পাকিস্তান ও আস্থাহীন মুসলিম বাংলাদেশীদের দেখিয়ে ভারতীয় জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়- ভারতকে তার নিজস্বতা ও আদি পরিচয় নিয়ই টিকে থাকতে হবে। খোদ ভারতের মুসলিম মৌলবাদের যে উত্থান ঘটেছে তাকে প্রটেস্ট করতে পারবে একমাত্র হিন্দুত্ববাদী দলই। অর্থ্যাৎ পুরো ব্যাপারটাই রাজনৈতিক। ধর্মীয় কোন প্রত্যাদেশ, আদিষ্ট, অবতার বাণী, ঈশ্বরের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস বাণী জাতীয় কোন শক্ত ভিত্তি নেই। এই ধরণের মৌলবাদকে ধর্মের মধ্যে থেকেই মোকাবেলা করা খুব সহজ। নিজেকে ধার্মীক সাজিয়ে, ধর্মের বিরুদ্ধে একটি কথাও না বলে এই মৌলবাদকে মোকাবেল করা সম্ভব। কারণ এসবের কোন ধর্মগ্রন্থীয় দলিলি প্রমাণ নেই। কিন্তু একজন বিশ্বাসী ইহুদীর “ইহুদী রাষ্ট্র” তার ধর্মীয় বিশ্বাস! এই রাষ্ট্রের “জাতির পিতা” স্বয়ং ঈশ্বরই হওয়া উচিত। ইতিহাসের ঈশ্বরের রাজনীতিতে নাক গলানো সম্ভবত এটাই প্রথম। এই ধারায় ইসলামও সর্বশেষ রাজনৈতিক একটি ধর্ম। ইসলামের একেশ্বরবাদীর অনুপ্রেরণা হচ্ছে ইহুদী ধর্ম। এ জন্যই ইসলামকে ইহুদী ধর্মের কপি-পেস্ট ধর্ম বললে অতিক্তি হবে না। নবী মুহাম্মদ ইহুদী ধর্ম থেকে দুহাতে গ্রহণ করেছেন। আরব প্যাগন ধর্ম ও ইহুদী ধর্মের মিশেল হচ্ছে ইসলাম। যেকারণে ইসলামেও আমরা দেখতে পাই ইসলামের নবী “ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করছেন। মক্কা বিজয়ের পর মুসলিমরা যে রাষ্ট্র গঠন করেন সেটা ইসলামী রাষ্ট্র। নবীর এই রাষ্ট্র গঠন করা ও সেই রাষ্ট্রের প্রিন্স হওয়ার নিয়েও কিন্তু ইসলামের উগ্র ও উদার গ্রুপের ভাষ্য ভিন্ন রকম। উদারবাদীরা ইসলামের এই রাষ্ট্রকে রীতিমত “ধর্মনিরপেক্ষ-সেক্যুলার রাষ্ট্র” ব্যবস্থা বলতেও দ্বিধা করেন না! যদিও এই দাবী সত্যি নয়। ইসলামের ইতিহাসকে নির্মোহভাবে পাঠ করলে সেটা স্পষ্ট বুঝতে সক্ষম হবেন যে কেউ।…
আমরা এখন মূল আলোচনায় চলে এসেছি। অভিযোগ করা হচ্ছে, আমরা সেক্যুলাররা কেন ইসলামের উদার ব্যাখ্যাকে গ্রহণ না করে উগ্রবাদী সালাফীপন্থিদের ইসলামকেই ইসলামের একমাত্র সহি তরিকা হিসেবে ধরে নিয়ে ইসলামকে সমালোচনা করে যাচ্ছি? আমরাও কি তাহলে মৌলবাদীদের মত ইসলামকে প্রচার করছি না? তার বদলে ইসলামে সাম্য ও উদার হিসেবে চিহিৃত করে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক ইসলামকে মোকাবেল করা উচিত না? ইসলামের নিন্দা করে কোন মুসলমানের সমর্থন পাওয়া যাবে কি? বাংলাদেশের সেক্যুলাররা (যাদেরকে আজকাল বামপন্থিরা “নাস্তিক লেখক/ব্লগার” বলে এক ধরণের সম্প্রদায় ভুক্ত করতে চাচ্ছেন!) ইসলাম ধর্মের সালাফী ব্যাখ্যাকে একমাত্র সহি ইসলাম হিসেবে গণ্য করে এর সমালোচনা করে দেশের সাম্প্রাদায়িক-মৌলবাদী শক্তির এতটুকু নড়চড় করতে পারছে কি?
অভিযাগ কিন্তু খুব গুরুতর!...প্রথমে যেটা বলা উচিত এ বিষয়ে, ইসলামের ওহাবী মতবাদের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান রাস্তাই মুসলিমদের হজ পালনের উদ্দেশ্যেই মক্কা শরীফে গমন। আমাদের দেশে “হাজি সাহেব” চরিত্রটি অনেক প্রাচীনকাল থেকেই গোঁড়া রক্ষণশীল, যিনি নারীর পর্দার বিষয়ে বাড়াবাড়ি করেন, যিনি একধরণের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মত ছুৎমার্গ বেছে চলেন- এইরকম একটি ইমেজ হাজী সাহেবে চরিত্রটি জনমানসে গড়ে উঠেছে। এসবই ওহাবী সংস্পর্শের কারণ। প্রতি বছর যে হারে মুসলিমদের হজ পালনের সংখ্যা বাড়ছে তাতে ইসলামের ওহাবী মতবাদ জনপ্রিয়তা কমানো কোন সম্ভাবনাই নেই। যদি ভুল না করে থাকি ইসলামের জন্মভূমি সৌদি আরবে কোনকালেই সুফিবাদী বা এই ঘরনার কোন মতবাদ দানা বাধতে পারেনি। আমাদের মত দেশে আশির দশক থেকে নিম্নবিত্ত মানুষ পেটের দায়ে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে চাকরি করতে স্রোতের মত ঢল নামায়। দেশের বেকার সমস্যা কাটানো সহ রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে যেমন এই শ্রমজীবী মানুষের বিড়াট ভূমিকা তেমনি গ্রাম-গঞ্জে ওহাবী ইসলামের তড়িকা অনুযায়ী ব্যক্তি জীবনের ইসলাম চর্চার ভূমিকায়ও তাদের বিড়াট অবদান! গ্রাম-বাংলার চিরচেনা ইসলামের জায়গায় দখল নিতে থাকে আরবী ইসলাম! যারা একদিন বয়াতী গান আর কবির লড়াই শীতের রাত জেগে শুনতো- তারাই একদিন এসবকে ত্যাগ করেছে “প্রকৃত ইসলামকে” জানতে পেরে। ইসলামে এইসব নফরামী-বেদাতীর স্থান নেই! বয়াতীদের বর্ণনা করা ইসলাম শিরকি!... গ্রামের যখন এই হাল তখন শহুরে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের খবর কি? সত্যি বলতে কি, শহুরে উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের জিহাদী ইসলামে সংম্পৃক্ততা আবিষ্কার না হলে সম্ভবত জঙ্গিবাদ-জিহাদী ইসলাম নিয়ে আমাদের মধ্যে অতখানি চৈতন্য এখনো হতো না। এই উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত ওহাবী সালাফী ইসলামের গ্রাসের শিকার হন মূলত ৯০-এর দশকে আফগান ফেরত মুজাহিদদের দেশে ফেরার পর। মুজাহিদরা এক সময় বুঝতে সক্ষম হন শুধু মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে ফয়দা হাসিল হবে না। এর সঙ্গে জুড়তে হবে মূলধারার যুবক-তরুণদের। মেধাবী ও আধুনিকমনা ছেলেদেরকে ইসলামের ছায়ার নিচে আনতে হবে। মাত্র কয়েকটা দশকেই তাদের সেই মিশন এতটাই সফল যে আমাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে এদেশের ইসলামী জঙ্গিবাদ নিয়ে! খুবই বিস্ময়কর যে, এতসব কিছু বাদ দিয়ে বামপন্থি, সুশীল বুদ্ধিজীবী থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপির মত মূলধারার রাজনৈতিক মতালম্বিরা দেশের উগ্রবাদী ইসলাম প্রসারের জন্য অনলাইন সেক্যুলার লেখক-ব্লগারদেরকেই দায়ী করা শুরু করলেন! অথচ শাহবাগ মুভমেন্ট না হলে এদের অনেকেই অনলাইন লেখালেখির কোন খোঁজ-খবরই হয়ত পেতেন না। গোটা দেশে এই যে ওহাবী ইসলামীকরণের ইতিহাস সেটাকে আমলে না এনে অনলাইনে ব্লগে লেখা গুটি কয়েক সেক্যুলার লেখকরা উগ্রবাদী মৌলবাদীদের উত্থানে বিড়াট ভূমিকা রাখছে’ বলার পর কোন কোন মহলকে নিয়েই সন্দেহটা বেড়ে যাচ্ছে! “সালাফী সেক্যুলাররা” কারুর বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিচ্ছে না তো …।
পশ্চিমাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণে ইসলামী জিহাদীরা আমেরিকা ও তার মিত্রদের শত্রু মনে করে। বামপন্থিদেরও অভিন্ন শত্রু তারা। বামরা তাই জিহাদীদের চলমান যুদ্ধকে সামাজ্যবাদী বিরোধী যুদ্ধ হিসেবেই দেখতে রাজি। ইউরোপে ইসলামী মৌলবাদীদের সঙ্গে বামপন্থিদের আঁতাতের গল্প অনলাইনে অত্যন্ত যৌক্তিক ও উচিত ও অনুকরণীয় কর্ম বলে বামপন্থিদেরকেই পরামর্শ দিলেন এক স্বঘোষিত বামপন্থি। উদাহরণ দিলেন ইউরোপীয়ান বামপন্থিদের। আজকাল গণহারে বাম ঘরানার বুদ্ধিবীজী-লেখক-তাত্ত্বিক নেতাদের মুখের বুলি শুনলে কিন্তু অভিযোগের সত্যতাকে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করে না। এই জন্যই কি ইসলামের নরমশরম চেহারাটিকে প্রচারের জন্য উঠে পড়ে লেগেছ তারা? তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে আমি আমল দিতে রাজি নই। যদি সত্যিই এর মাঝে সমাধান থাকে ইসলামী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিনাশের তাহলে সেই পথকে মেনে নিতে কোন সৎ ও সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক মৌলবাদ বিরোধী সেক্যুলার মানুষেরই দ্বিমত হবার কথা নয়। এখন তাহলে দেখি উদার ইসলামকে সমর্থন জানিয়ে একজন সেক্যুলার হিসেবে প্রকারন্তে একটি ধর্মকে সমর্থন জানিয়ে দেশের সেক্যুলার ও অসাম্প্রদায়িক সমাজের স্বপ্নকে কিভাবে অসুস্থ হলদেটে করে ফেলতে পারি। ইসলামের নবীকে যদি একজন অসাম্প্রদায়িক এবং মক্কা বিজয়ের পর তার উদারতার গল্পকে মিথ্যা জেনেও সমর্থন করি এবং প্রচার করি, উনার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী রাষ্ট্রকে যদি সত্যিকারের সেক্যুলার-ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবী করি সমস্ত সিরাত-হাদিস গ্রন্থকে চেপে গিয়ে তার ফল কি হবে? যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি মদিনা সনদের অধিনে দেশ চালাবেন- সেটা কি আমাদের কানে অসাম্প্রদায়িক-মৌলবাদ বিরোধী কোন ধ্বনি হয়ে ধরা দেয়? যারা দেশে ১৪০০ বছর আগের খেলাফত অনুকরণে ইসলামী খেলাফতের দাবী করছেন তাহলে একজন সেক্যুলার হিসেবে তো আমাকে সেটাকেই মেনে নিতে হয়? যদি আমি তথাকথিত উদার ইসলামকে সমর্থন জানাই, সালাফী ইসলামিস্টদের মত আক্ষরিক ইসলামকে না প্রচার করে এইরকম টক-মিষ্টি-ঝাল টাইপ ইসলামকে প্রচার করি- তাদের সঙ্গে দ্বিমত করার কোন পথ আছে কি? একজন বিধর্মী ইসলামী রাষ্ট্রে দুধে ভাতে থাকুক- কিন্তু রাষ্ট্রটিকে ধর্মীয় ছায়াতলে গিয়ে দাঁড়াতে হলো। সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় পরিচয়ে নামতে হলো। আমরা জানি ইসলামের ইতিহাস, খলিফাদের শাসনকাল থেকে খিলাফতের শেষদিন পর্যন্ত। স্বাধীনতার ৪৩ বছরে সংখ্যালঘুদের দেশ ত্যাগের পরিমাণ নিয়ে সম্ভবত কারুরই কিছু যায় আসে না। অনলাইনের সেক্যুলার লেখকরা কাল থেকেই লেখালেখি বন্ধ করে দিলেই কি উগ্র মৌলবাদীদের উত্থান বন্ধ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা “সালাফী সেক্যুলার” বলে নিজেদেরকে যারা “সুফিঘরানার সেক্যুলার” সাজছেন, তারা কি ওহাবী ইসলামকে উদার ইসলাম দিয়ে মোকাবিল করতে পারবেন? সেক্যুলার লেখকদের দোষারোপ করা ছাড়া তারা কিন্তু কোন পথ দেখাতে পারেননি। মানলাম, ইসলামের কোন একক সহি পন্থা নেই, কিন্তু এই অমৃতবচনে তো “চাপাতি ইসলামের” কোন সুরাহ হবে না। আমরা যারা একটা পথকে বেছে নিয়েছি সমাধানের লক্ষ্য হিসেবে- নির্মোহভাবে ইসলামকে বর্ণনা করা ও বিশ্লেষণ করা। অবশ্যই তার ভিত্তি হবে কুরআন, সর্বজন স্বীকৃত তাফসিরকারকদের তাফসির, সহি হাদিস বর্ণনাকারী হাদিস গ্রন্থ। এই পন্থাটি পুরোপুরি লেখালেখি উপর নির্ভর। অনলাইনে যাদেরকে “নাস্তিক ব্লগার” ট্যাগ মেরছেন তারা শুধুই লেখক- বিপ্লবী কেউ নয়। আমাদের মধ্যে বিপ্লবী ধারার কেউ থাকলে লেখালেখির বাইরে কিছু করার থাকলে তারা সেটা করবেন। কিন্তু অনলাইনের “বিপ্লবীরা” যখন বলেন ইসলামী জিহাদীদের সঙ্গে মার্জ হয়ে সামাজ্যবাদীদের সঙ্গে লড়তে- তখন দেশের অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ নিয়ে আর বড় কিছু আশা করা যায় না। উদার ইসলামের প্রচার ইচ্ছুক কথিত সেক্যুলাররাও যখন সমস্ত দোষ “সালাফী সেক্যুলারদের” উপর চাপায় তখন মৌলবাদেরই জয়ধ্বনিই শুনতে পাই! ধর্ম সে উদারই হোক আর উগ্র- তাকে প্রশ্রয় দিলেই সে সেক্যুলার- মুক্তচিন্তার বুক বরাবর ছুরি চালাবেই! আজ যারা একদল সেক্যুলার মুক্তচিন্তক লেখককে “সালাফী সেক্যুলার” ট্যাগ মারছেন তারা ধর্মের হাতে ধরা (হোক উদার বা উগ্র) তরোয়ালের ধারটাকেই বাড়িয়ে দিচ্ছেন শুধু…।