মোটামুটি হিট ফর্মূলা। নেহাত রামগোপাল বর্মা না হলে কেউ ছড়াবে না। কিন্তু ছড়িয়ে গেল নেতাই গ্রামে। এখানেও সেই এক পরিস্থিতি। মাওবাদীদের উপদ্রবে টেকা দায়। আজ কালিয়া ল্যান্ডমাইন [পরিচিত বাংলা শব্দ, ইদানিং অভিধানেও ঢুকে পড়েছে] ফাটাচ্ছে, তো কাল শাম্বা ট্রেন ওড়াচ্ছে। আর গব্বর সিং তো মুখে গামছা ঢাকা দিয়ে আজ চিদুকে চিমটি কাটেন, তো কাল বুধোর লুঙ্গি ধরে টান মারেন। সহ্যের একটা সীমা আছে তো, না কি?
তো, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতে জনা কয়েক জয়-বীরুকে খুজে পেতে সেখানে পাঠানো তো হল, কিন্তু গাঁয়ের লোকগুলো এত আহাম্মক, ভাবল বুঝি ওঁরা একাই সব করে দেবেন। মানে ওঁরা ভোরবেলা উঠে জাল ফেলে এক একটা দেড়মণি মাওবাদী ধরে দেবেন, আর তুমি বাপধন পাত পেড়ে বসে তার মুন্ডু চুষবে! আরে বাবা, সুপারভাইসার কখনো ফিল্ডে নামেন? অমিতাভ বচ্চনকে কখনো বাজারে যেতে দেখেছিস? নাকি ধর্মেন্দ্র খুন্তী নাড়াত? মাইরি, এসব করলে আর দেখতে হত না। গব্বর বাসন্তীকে ফেলে হয়তো ঠাকুরকেই খেমটা নাচতে বলে দিল! আর রাত্তিরে পাহারা দিতে এত কীসের আপত্তি, তাও তো বুঝিনা বাপু। ডেকে এনেছে বলে কি মাথা কিনে রেখে দিয়েছে নাকি, যে মাওবাদী মারতে এসে শেষ পর্যন্ত বাহাদুর সেজে সারা রাত গাঁ টহল দিতে হবে? এতই যদি নখরা, তাহলে নিজেদের কাজ নিজেরা করতেই পারিস।
আর প্র্যাক্টিকালি সেটাই তো দরকার। জয়-বীরু কি চিরদিন তোদের আগলাতে থাকবে? আজ নয় কাল তো তোদের হাতেই হ্যান্ড-ওভার দিয়ে যেতে হবে না কি? তারপর গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠবে গ্রামরক্ষী বাহিনী। পাঠশালা-স্কুল-কলেজে, খেতে-খামারে, পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, গাছের ডালে, খড়ের চালে শোভা দেবে উন্নততর বামের উন্নততর কমান্ডো ফৌজ। বন্দুক প্রশিক্ষণও তো সেই জন্যেই। তারপর আসুক না শালা মাওবাদী। সঙ্গে সঙ্গে দুরুম। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন জীবনের যেকোন সমস্যার অব্যর্থ সমাধান। ছেলে ভাত খেতে চাইছে না? দুরুম। ডালে নুন বেশী হয়েছে? দুরুম। পরীক্ষায় নম্বর কম দিয়েছে? দুরুম। ধার করে শোধ দেয় না? দুরুম। অনাহার-অপুষ্টি-অশিক্ষা-দু:খ-দারিদ্র্য-জ্বর-জ্বালা-যন্ত্রণা সবকিছু থেকে মুক্তি। দুরুম। দুরুম। দুরুম।