এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ  গুরুচন্ডা৯ দশ

  • সেই শস্য অগণন মানুষের শব?

    যশোধরা রায়চৌধুরী
    আলোচনা | বিবিধ | ০৩ জুন ২০০৭ | ১২৮৬ বার পঠিত
  • ১।

    "One desires freedom as long as one does not possess power. Once one does possess it, one desires to overpower." - Nietzche

    একটা আÏéকার লোকগাথা অনেক দিন আগে শুনেছিলাম, এক শিল্পপতির মুখে। গল্পটা উন্নয়ন বিষয়ে, আর সেজন্যেই এই মুহূর্তে হঠাৎ খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

    এক মুরগি এবং এক শুয়োরের ভেতরে খুব বন্ধুত্ব। মুরগি ও শুয়োর হাঁটছে পথ দিয়ে, আর আলোচনা করছে দেশের ও সমাজের উন্নতির কথা। বলাবলি করছে, সারা দেশের লোক এখন উন্নয়নের চেষ্টায় কতটা আত্মত্যাগ করছে, কত বড় বড় কাজ করছে সবাই, কত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। মুরগি বলে ওঠে হঠাৎ, চলো বন্ধু, দেশের জন্য, লোকের জন্য আমরাও কিছুটা আত্মত্যাগ করি। রোজ সকালে আমরাও কিছুটা খাদ্য জুগিয়ে দেশের মানুষকে উন্নয়নের কাজে সহায়তা করি। ধরো, আমি রোজ সকালে আমার একটি করে ডিম জনগণকে উৎসর্গ করলাম। তুমিও, তোমার এক পাউন্ড মাংস উন্নয়নখাতে বরাদ্দ করলে। কেমন, ভালো বলিনি?
    শুয়োর উৎসাহিত হয়। উদ্দীপিত হয়। এ নিয়ে তারা সোৎসাহে আলোচনা করতে থাকে। আরো খানিকটা পথ চলার পর হঠাৎ শুয়োর থেমে যায় মাঝরাস্তায়। মুরগি বলে, কী হল বন্ধু? শুয়োর বলে, দ্যাখো, তুমি যে প্রস্তাবটা দিলে, আমার মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোথায় যেন একটা গন্ডগোল আছে।
    মুরগি বলল : কি গন্ডগোল?
    শুয়োর বলল, তোমার আত্মত্যাগ আর আমার আত্মত্যাগের মধ্যে কোথায় যেন তফাৎ আছে, মনে হয় না তোমার?
    মুরগি বলল, আছে নাকি ?
    শুয়োর বলল, আছে বন্ধু, আছে। তোমার যে ডিম দেবার কথাটা, সেটাতে কোনো অসুবিধে নেই, কারণ রোজ একটা করে ডিম দিলে তুমি মরবে না। কিন্তু আমাকে যে কাজটা করতে বললে, ভেবে দেখেছো কি, সেটা করতে গেলে উন্নয়নের ফল পাবার জন্য আমি আর জানেপ্রাণে বেঁচে থাকব না ? আমার আত্মত্যাগ মানে একেবারে অক্কা !

    গল্পটা কেন এ মুহূর্তে খুব প্রাসঙ্গিক, সেটা বোধহয় বুঝিয়ে বলবার অপেক্ষা রাখেনা। তবে এই কলকাতাকেন্দ্রিক শহুরে "বুদ্ধি"জীবীদের মহলে যে শুয়োরের চেয়ে মুরগিদেরই রমরমা বেশি, সে কথা ভেবে নিজের দিকে তাকিয়ে ইদানীং কেমন যেন হীনম্মন্যতায় ভুগছি। আর শিল্পায়নের গুণকীর্তণ করে আমরা যারা নিজেদের মনকে চোখ ঠারছি, আর আরো বেশি করে নিজেরাই মুর্গি হচ্ছি, তারা বুঝছি তো, যে শুয়োরের বুদ্ধিতেও এই কথাটা ভালো বোঝা যায়, যে নিজে বেঁচে থাকাটা ভাষা, ভাব, তর্ক, বিতর্ক, উন্নয়ন, শিল্পায়ন ইত্যাদির আগে এবং এগুলোর চেয়ে বেশি জরুরি !

    ২।

    "You are telling a poor tiller of the land that his livelihood will disappear and that if you wait for 15 years he might get a job in a new factory. It is not going to be acceptable," -Ashok Mitra

    প্রশ্নগুলো পরতে পরতে আসে। এখন, হয়ত মাথা ঠান্ডা করে ভাববার সামান্য অবসর এসেছে। যাঁরা ১৪ তারিখের মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটবার ঠিক পর পর যুক্তিজাল বিন্যাস করছিলেন, তাঁদের আমার কেন অশালীন বলে মনে হয়েছিল, বলেছি কোনো কোনো লেখায়। আসলে মানুষের বেঁচে বর্তে থাকাটা তো তার ভাষা, যুক্তি, কথা, "গণতান্ত্রিক পদ্ধতি", এসবের অনেক আগে জরুরি, তাই, মৃতদেহের স্তূপ সামনে নিয়ে কোনো শান্ত, অথবা শাণিত, আলোচনা করা যায় না।

    এরপর হলদি নদী দিয়ে অনেক জল ( অনেকের মতে, রক্তও ) গড়িয়ে গেছে। কলকাতার জনগণ, যাঁরা টিভি দেখেন ও খবরের কাগজ পড়েন, তাঁরাও এতদিনে নিজের মনের মত করে ভাগাভাগি করে নিতে পেরেছেন দু তিনটে কাগজ, দু তিনটে টিভি চ্যানেল। সংবাদমাধ্যম নামে একটি বস্তুর অস্তিত্ব যে গণতন্ত্রে নির্মোহভাবে, ভারসাম্য বজায় রেখে, নির্জলা সত্য প্রচারের জন্য রচিত হয়েছিল, সেটা আমরা ভুলেই গেছি। মাধ্যমও এখন একটি প্লেয়ার, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী। তাই এখন আমপাঠকের, অর্থাৎ জনগণেরই দায়, বেছে বেছে, ঠিক মাধ্যমটি ( পড়ুন নিজের পছন্দমতো মাধ্যমটি ) থেকে খবর…লো সংগ্রহ করে নেবার। এবং সেই খবরের উপরে কতটা আস্থা রাখবেন, কতটা অন্ধ বিশ্বাস বা সন্দেহময় বিচারবিবেচনা জারি রাখবেন, ঠিক করার।

    যেমন যে কোন দায়িত্ববান নাগরিকের দায়, উন্নয়ন, শিল্পায়ন, কৃষি বনাম শিল্প, এইসব শব্দের নানান অর্থ, নানান ব্যঞ্জনা, বুঝে নেবার। চোখ কান খোলা রেখে জেনে নেবার, আমার ভালো,আপনার ভালো, ওদের ভালো, তাদের ভালো,কোনটা। এবং সবার ভালো বলে আদৌ কিছু হবে কিনা।

    এটাও বুঝে নিতে হবে যে এখানে দুটো আলাদা বিষয় একজায়গায় এসে মিলেমিশে গেছে :

    এক। একটি মানবদরদী, শ্রমিক ও কৃষকের পার্টি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলে, তার মুখ কি ভাবে পালটে যায়। এটা কেবলই পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা। এবং সমস্যাটা যে ১৪ মার্চই শুরু হল, তাও নয়, এমনকি, ৬ জানুয়ারি ২০০৭, বা সিঙ্গুরে ২ ডিসেম্বর, ২০০৬ -এও নয়। বহুদিন ধরেই, পাওয়ার করাপ্টস, অ্যান্ড অ্যাবসলিউট পাওয়ার করাপ্টস অ্যাবসলিউটলি, বলে সেই অমোঘ বিধিবাক্যকে সত্য করে, ক্যাডারতন্ত্র, সমাজের প্রতি ক্ষেত্রে চারিয়ে গেছে। শুধু শিল্প ও কৃষির এলাকার বাইরে, সরকারের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি প্রকল্পের টাকা বিলি বন্দোবস্তে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতির প্রতিটি অলিগলিতে। সে কথা ভাবতে আমাদের রুদ্ধশ্বাস লাগলেও আমরা সব ভুলে মিঠে কড়া, টক মিষ্টি, সহিংস ও অহিংস, নানারকমের বিচ্ছিন্নতার গল্প কবিতা লিখে দিব্যি ছিলাম। হঠাৎ যেন ১৪ টি শবদেহ আমাদের মধ্যে একটা ভূকম্পন ও বিপর্যয় ঘটিয়ে দিল।

    দুই। ভারতের সমস্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে যে সেজ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেই সেজ নীতি আসলে কতখানি বড় ধাক্কা খেল এই ঘটনায়, সেজের বিরুদ্ধে ওড়িশা, হরিয়ানা, ভারতের নানা প্রদেশের দানা বেঁধে ওঠা আন্দোলন…লি কীভাবে নিজেদের রসদ সংগ্রহ করে নিল নন্দীগ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলন ও রক্তক্ষয় থেকে। এখানেই, সমস্যাটি, আর পশ্চিমবঙ্গর থাকে না। এটা হয়ে ওঠে ভারতের, তথা তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা। কারণ চিন, পোল্যান্ড, ফিলিপিনস, কাজাকস্তান, পেরু ও ভারত এখানে একসূত্রে বাঁধা। এখানে প্রশ্ন ওঠে, আমেরিকার আবিষ্কৃত সেজ-ধারণা, দেশের ভেতরে আর এক দেশ রচনার প্রকল্প, কতখানি কাঙ্ক্ষিত ভারতের জন্য। সেসব আলোচনা করবার জন্য অর্থনীতির মানুষেরা অনেক বেশি যোগ্য। উন্নয়ন, বড় পুঁজিকে নেমন্তন্ন করে ডেকে আনার জন্য আছাড়িপিছাড়ি, এবং স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট-এর বাধ্যতামূলকতা, ভারতের জাতীয় চৈতন্যকে কতটা পেড়ে ফেলেছে, কতটাই অপরিবর্তনীয় এই বাজার অর্থনীতির সর্বগ্রাসী অভিমুখ। কোনো রাষ্ট্র এই নয়া অর্থনীতির সামনে অন্য কথা বলে দাঁড়াতে সক্ষম নয়।

    এবং এখানেই গল্পটা ফিরে আসে পশ্চিমবঙ্গে । কারণ বামফ্রন্ট সরকারকেও শেষ অবধি মেনে নিতে হয় সেই ঐতিহাসিক, অপ্রতিরোধ্য নয়া অর্থনীতির ডিকট্যাট। নিজের মনটাকে সমন্বয় মুখী, নিজের পার্টিটাকে গণতান্ত্রিক ও আদানপ্রদানের উপযুক্ত, বিরোধিতার প্রতি সহনশীল না করেই, যোগ দিতে হয় প্রাইভেট পুঁজির সম্মোহনী রথযাত্রায়। লাফিয়ে পড়তে হয় ব্যান্ড-ওয়াগনে।

    ৩।

    “Charity begins at home.” old proverb.

    দায় থেকে যায় আরও একটি। নিজের বিবেকের কাছে বিশ্বস্ত থাকবার।

    এ মুহূর্তে আমার নিজেরও, আমার সবচেয়ে স্বত:স্ফূর্ত প্রতিবাদটিকেও, কোনো এক জায়গায় বুঝে ও পড়ে নেবার প্রয়োজন আছে। "ঘুমোতে যাবার আগে প্রশ্ন করো, ত¥মি কোন দলে ? - ইদানীং প্রায়শই উচ্চারিত এই কবিতাপংক্তিটি দুভাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে আজ। এক দল বলছে, যারা প্রতিবাদী, তারা হয় মাওবাদী, নয় প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণপন্থী । এটা পরিচিত রিঅ্যাকশন। ক্ষমতা এভাবেই ভাবে। ইরাক যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধবিরোধীদেরকে জর্জ বুশ বলেছিলেন, "either you are with us, or against us. " আসলে এইভাবে ভাবলে তৃতীয় কোনো বিচার বিবেচনা-সক্ষম কন্ঠস্বরকে খুব সহজেই ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া যায়। যাঁরা যুদ্ধ চান না, তাঁরা সবাই দেশদ্রোহী আখ্যা পান, যেমনটা হয়েছিল চিনযুদ্ধের সময়ে, ৬২ তে।
    কিন্তু অন্য ব্যবহার ? ভেতরের ব্যবহার ? যেখানে নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করে যেতে হয়, আমি কি ধর্মপক্ষে আছি ? না কি অধর্মপক্ষেও .... প্রয়োজনে ....?

    তার থেকেও বোধহয় বেশি প্রয়োজন হল, চুপ করে বসে একটু তাকিয়ে দেখবার। কারণ, আমরা যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী মনে করি, তাদের বোধহয় সেইটুকু বুদ্ধির ইদানীং খুবই অভাব দেখা যাচ্ছে। ইতিহাস ও সময়কে দেখার, বিচার করার, পড়ে নেবার জন্য প্রয়োজনীয় °ধর্যট¥ক¥ও আমাদের যে নেই, বলতে কি, সময়ই নেই এত পরিশ্রম করবার, তার চেয়ে ঢের বেশি …গুরুত্বপূর্ন কোন না কোন মঞ্চে উঠে পড়া, কোন না কোন বহি:প্রকাশের মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়া।

    এটা বলার যুক্তিটা আসলে নিজেকেই এই কথা…লো বলা। প্রতিমুহূর্তেই নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, আমি যে কথা বলছি, যা কিছু করছি, সেগুলো সততা নিয়ে করছি তো? হাততালি কুড়োবার জন্য করছি না তো? এই বোধটা খুব জরুরি। আয়নার দিকে তাকানোটা ও এ মুহূর্তে ঠিক ততটাই জরুরি। কারণ আমাদের লড়াই আসলে বাইরের সাথে নয়। লড়াইটা ভেতরের। লড়াইটা অসত্য ও সত্যের। মানবিকতা ও অমানবিকতার। এখানে মানুষের রক্ত নিয়ে কথা হচ্ছে। সন্ত্রাস নিয়ে কথা হচ্ছে। সন্ত্রাস কি শুধু পুলিসের বুলেটে থাকে ? বা পুলিসের পোষাক পরা ক্যাডারের ভেতরে ? পরিবারে, সমাজে, পাড়ায়, মোড়ের মাথায়, সাহিত্য সভায়, মঞ্চে, সন্ত্রাস থাকে না ? প্রতিটি সন্ত্রাসই তো মূলে কোথাও একেবারে এক ? প্রতিটি সন্ত্রাসই তো রক্ত নিয়ে খেলা করে। মানুষকে পশুর মত কাটে ? তাহলে লড়াইটা কোথায় শুরু হয়, সেটা বুঝতে অসু¤বিধে হবার তো কথা নয়।

    যে মানুষ নিজে অসৎ, নিজের জীবন যাপনে, কথায়বার্তায় অসৎ, যে মানুষের কেন্দ্রে কোথাও একটা মিথ্যে ঢুকে গেছে, তাকে এই মুহূর্তে যদি পাশেও পাই, নিরন্তর নিজেকে মনে করিয়ে দিতে থাকি, এই সব পাশে থাকার কোন মূল্য নেই। উল্টোদিকে এখন যদি আসে চূড়ান্ত একাকিতÆ, তা বরং হবে ঢের ঢের বেশি জরুরি এক আত্ম সমীক্ষণের মুহূর্ত।

    আমরা ছোটবেলা থেকেই তো রবি ঠাক¥রের ওই গানটি কত রোম্যান্স নিয়ে গেয়েছি, " যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি / ঝড় উঠেছে ওরে এবার ঝড়কে পেলেম সাথি "। আজ হঠাৎ বুঝতে পারছি, কত চূড়ান্ত বেদনা ও তীব্র যন্ত্রণা ভেতরে থাকলে একজন মানুষ জীবনের কোনো মোড়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ অনুভব করেন গানের ওই কথা…লি। যে আ…ণের উপরে হাত একবার রেখেছে, সেই কেবল জানতে পারে, আ…ণে ঝলসে যাওয়ার অনুভূতি কেমন।

    কোনো কোনো প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ মানুষ আমার প্রতিবাদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। কেউ বলেছেন, যদি পারো, এর ভেতর থেকে নিজের সৃষ্টির উপাদান খুঁজে নাও। নীরবে লক্ষ্য করো সমাজ ও রাজনীতির গতি প্রক«তি, কেউ বা বলেছেন। এখন বদলের সময়। এই তো সবে শুরু। যা কিছু ঘটেছে, তার ভেতরে তোমার অংশ খুবই অল্প, তোমার ভূমিকা খুবই নগণ্য, জেনে রেখো, তাঁরা বলেছেন। আসলে ওই যে মানুশ…লি মরতে মরতেও লড়ছে, লড়ল, ওই যে যারা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, যে মেয়েরা …লিবিদ্ধ ছেলেটিকে ত¥লতে গিয়ে পুলিশের লাঠি কেয়ে সরে গেল, ওদের জোরটা দেখো। এবং বোঝো, এর কোনোকিছুই কিন্তু এমনি এমনি হচ্ছে না। এর সবটাই একটা বিরাট ঘটনার অংশ। সেই বিরাট ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করো, দেখবে, খানিকক্ষণ পরে তোমার মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ত¥মি সহজে বুঝতে পারবে না। কারণ এটা বোঝার জন্য শ্রম চাই,অধ্যবসায় চাই।

    এই প্রবীণেরা আমাকে জানিয়েছেন, আমার প্রতিবাদ তাঁদের মন:পুত, কিন্তু তা এই বিশাল গণ আন্দোলনের নিরিখে কিছুই নয়। আর সেই গণ আন্দোলন তো শুরু হয়ে গেছেই। তাকে বুঝে নেওয়াই তো আসল কাজ। কারণ ঘটনাটা ঘটছে মানুষের দ্বারা। মব বা দিশাহীন ভিড়ের দ্বারা নয়। গ্রামের প্রতিটি মানুষ, যাদের অস্তিতÆ এখন প্রশ্ন চিহ্ন আত¥র, যারা এতদিন একটি নির্দিষ্ট পার্টিকে ভোট দিত, তাদের হয়ে মিছিলে যেত, এখন পায়ের তলার মাটি কেড়ে নেবে সেই পার্টিরই লোক, সে কথা ভেবে যারা রুখে দাঁড়াচ্ছে, আর যাদের হাতে মারের পরে মার খেয়েও তাদের বিশ্বাস, যুদ্ধ করার মন, এতট¥ক¥ টলছে না। এরাই আসল জায়গা। এদেরকেই অনুধাবন করো। নিজেকে এই আ…ণের ভেতর দিয়ে হাঁটাও বার বার। নিজেকে এভাবেই বদলে নাও, আর পৌঁছতে চেষ্টা করো কোনো চিরসত্যে। তবেই তো উত্তরণ। নিছক প্রতিবাদের পর কোনো শূন্যতা, দিকভ্রান্ত অশান্ততা, যেন গ্রাস না করে তোমার বুদ্ধিকে।

    এক মুহূর্ত থেমে, চ¥প করে, ভাবছিলাম : এখনো তো আমাদের বন্দরের রোদে, যেসব ফসল নিয়ে উপনীত হয় জাহাজ…লি, " সেই শস্য অগণন মানুষের শব " রয়ে গেল। যার পুষ্টিতে আমরা কমপিউটার খুলে চিঠি লিখি বন্ধুদের, খাইদাই, ঘুমোই, রাজনীতি করি ?

    এ আসলে একটা মৃত্য¥তন্ত্র। এর সাথে লড়াই তো নন্দীগ্রামের মূক মুখেরাই করবে, কারণ ভাষাহীনতাই বোধ হয় এখন এক মাত্র অÙ»।
    নীরবতা, ভাষাহীনতা, কন্ঠস্বরহীনতার লড়াই তো এই শুরু হল সবাক, ভাষাময়, আইন শৃঙ্খলাময় রাষ্টÊনিয়ত সমাজের স®‰। নন্দীগ্রাম আমাদের দেখাচ্ছে, দলহীন, মঞ্চহীন, কোন হিলিং টাচ -বিহীন একটি কন্ঠহীনতার কত জোর থাকতে পারে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৩ জুন ২০০৭ | ১২৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন