না, এই নৃশংসতার পরও গড়িয়ার মেয়ে সুলতানার জন্য কলকাতা রাস্তায় নামবে না। কোনো ঝড় উঠবে না। কারণ মিডিয়া ঠিক করে দেয় কার জন্য নামবো আর কার জন্য না। কার জন্য গর্জে উঠবো; চুপ থাকবো কার জন্য। এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অবশ্য প্রশ্ন তোলা যায়, আমরা নিজেরাও কি ঠিক করে নিইনা, কার জন্য বলব আর কার জন্য বলবনা ?
কোন নৃশংসতা? এবং কতটা নৃশংসতা?
আপাতত ঘটনাটা জানা যাক। এটা ততটা নৃশংসতা কিনা, যার জন্য রাস্তায় নামা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা যায়, মিডিয়ায় লেখালেখি করা যায়, সেটা পাঠকই ঠিক করুন।
এই ঘটনার পর এপিডিয়ার সহ আরো কিছু ব্যক্তি যে তথ্যানুসন্ধান করে, সেই রিপোর্টটি অবিকল রইল। আর রইল, তারপরের কিছু ঘটনাক্রম, আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে।
সুলতানার ছবি দেওয়া গেলনা। এতটাই বীভৎস। যাদের সন্দেহ আছে তারা পরীক্ষা করে নিতে পারেন বা সোনারপুর থানায় গিয়ে যাচাই করে নিতে পারেন (Fir no.542)। মাত্র একশ টাকা রোজে সেই গড়িয়া থেকে রাজাবাজার প্রতিদিন ব্যাগের কারখানায় কাজ করতে যেতেন মেয়েটি। ছেলে জব্বারকে নিয়ে।বারো বছর বয়স। ও মায়ের সঙ্গে যেত। সুলতানার সাথে। বছর পঁয়ত্রিশের সুলতানা। স্বামী মারা গেছে্ন দশ মাস আগে। চারটে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। তার ওপর শাশুড়ির ব্রেস্ট ক্যান্সার। নিজেও দু’চোখে বেশ কিছুদিন হল কম দেখা শুরু করেছিলেন। গড়িয়া স্টেশন থেকে অটো ধরলে মিনিট পনেরো দূরে বাঁশতলা মসজিদ। সেখানেই চার ছেলেমেয়ে আর শাশুড়িকেনিয়ে একটা ভাড়ার ঘরে থাকতেন সুলতানা।
মায়ে আর ছেলেতে কাজ সেরে সেদিনও বাড়ি ফিরছিলেন। এপ্রিলের সতেরো তারিখ। ঝড়-জলে গোটা কলকাতা সেদিন অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। বহুক্ষণ বন্ধ ছিল ট্রেন। শেষ ১১টা৪৫এর ট্রেনও ছেড়েছে বহু দেরি করে। স্থানীয়দের হিসাব অনুযায়ী যদি সেটা এক ঘন্টা দেরি করেও ছেড়ে থাকে তবে গড়িয়া স্টেশনে ঢুকতে দেড়টা হওয়ার কথা। সারাদিনের কাজের চাপ আর তার ওপর ঝড়-বৃষ্টির ধকল।স্টেশনে পৌঁছনোর পর সুলতানা অসুস্থ হয়ে এক জায়গায় বসে পড়ে্ন। ছেলেকে বলেন ঠাকমাকে একটু ডেকে আন। শরীরটা ভালো লাগছে না। সুলতানার এলাকার মানুষদের বক্তব্য সেদিন গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের (তখন বন্ধ ছিল) সামনেই সুলতানা বসে পড়েছিলেন। ভদ্রকালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার (তখন কখোলা ছিল) থেকে দুটো মিষ্টিও খেয়েছিলেন। যদিও আজ সোনারপুর এপিডিআর সহ আমরা যখন সেই মিষ্টির দোকানে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যাই তখন সে সরাসরি সেদিনের এই ঘটনা অস্বীকার করে। হতে পারে ঝামেলায় না জড়াতে চাওয়ার কারণেই হয়তো। শাশুড়ি এবং নাতি দুজন যখন ফিরে আসে তখন তারা দেখে সুলতানা অকুস্থলে নেই। পাড়ার লোকেদের কাছে ছেলে যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে সে বলে যে সে সময় মিষ্টির দোকানের সামনে দুজন বসে ছিলো এবং তাদের মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করায় তারা দূরে হাত দিয়ে দেখায় যে ওখানে গেছে। বৃদ্ধা এবং বাচ্চা ছেলেটি তারপর এক ঘণ্টা স্টেশন চত্বরে,আশেপাশের এলাকায় তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও সুলতানাকে পান নি। নিরুপায় হয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান এই ভেবে যে মেয়ে হয়তো বাড়ি চলে আসতে পারে। কিন্তু সুলতানা ফেরেন নি।ভোরের দিকে তাঁরা খবর পান যে সুলতানার খণ্ড-বিখণ্ড দেহ নৃশংসভাবে পড়ে আছে। গায়ে সুতোটুকু পর্যন্ত ছিল না। বডি যেখানে পড়ে ছিল তার থেকে কিছুটা দূরে সুলতানার সালোয়ার-কামিজ-চটি আবিষ্কার হয়।
প্রথম গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ও তারপর কন্দর্পপুর,বাঁশতলা যেখানে সুলতানার বাড়ি সেখানে আমরা একটি তদন্ত-অনুসন্ধান চালাই। ও তারপর সোনারপুর থানায়ও যাই। এলাকার বাসিন্দা সহ বহু মানুষের সাথে কথা বলি। উপরে যে তথ্য ও ঘটনা রাখলাম তা এর মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে। কিছু সামান্য পরস্পরবিরোধিতা থাকলেও শতকরা ৯৯শতাংশ মানুষের মত যে এটি প্রথমে ধর্ষণ ও তারপর হত্যা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। যেভাবে সকাল সাড়ে আট’টা অবধি প্রকাশ্য রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত আর দলা দলা মাংসপিণ্ড পড়েছিল তাতে বহু মানুষ শিউরে উঠেছেন। এলাকার বৃদ্ধ-বয়স্করা পর্যন্ত মনে করতে পারছেন না তাঁরা তাঁদের জীবনে এমন নৃশংসতার সাক্ষী থেকেছেন কিনা।
সুলতানার গ্রামের মানুষ,প্রতিবেশী ও গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন ছোট দোকানদার,ব্যবসায়ী,অটোচালক ও স্থানীয় রিকশাচালকদের বক্তব্য থেকে উঠে আসা কিছু তথ্য:
১) রাত প্রায় দুটো নাগাদ জব্বার,সুলতানার ছেলে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে আসে ও ঠাকুমাকে জানায় যে মায়ের শরীর খারাপ করেছে।মাকে আনতে যেতে হবে।
২)রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই এলাকায় একটি পুলিশ ভ্যান টহল দেয় ( সোনারপুর থানার Ic ও যা confirm করেছেন)এবং তারা সেই সময়ে কোনো বডি দেখে নি।
৩) ভোর চারটে নাগাদ ট্রেন ধরেন এমন কয়েকজনের সাথে আমরা কথা বলেছি যারা ওই রাস্তা দিয়েই গেছেন এবং তাঁদেরও কোন কিছু চোখে পড়ে নি।
৪)গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এর আগে এত বড় ঘটনা আগে না ঘটলেও মেয়েদের টিটকারি,হাত ধরে টানা,চটুল রসিকতা ছুঁড়ে দেওয়া নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫)বেশিরভাগেরই মত সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই সুলতানার বডি ওখানে ফেলা হয়। হয় কোন গাড়ি দিয়ে পিষে দেওয়া হয় আর নয়তো পরিকল্পনামাফিক গাড়ির তলায় ফেলা হয়।
৬) পরিকল্পনামাফিক শরীরের নিম্নাংশ এমনভাবে পিষে ফেলা হয়েছে যাতে পোষ্ট -মর্টেমে ধর্ষণের চিহ্ণমাত্র না পাওয়া যায়।
৭)সমস্ত জামাকাপড় অবিকৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ধর্ষণের পক্ষেই প্রমাণ হিসেবে জোরালোভাবে হাজির হয়।
৮)রাত দেড়টার পরেই মেয়েটিকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় ও তারপর প্রমাণ লোপাটের জন্য খুন করা হয়।
৯)যে বা যারাই এই কাজ করে থাকুক না কেন স্থানীয় মুখ হওয়ার সম্ভাবনাই তাদের বেশি।
এত বড় নারকীয় ঘটনা ঘটার পরেও এবং সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্সে ধর্ষণের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এটিকে শুধুমাত্র দুর্ঘটনায় মৃত্যু হিসাবেই মামলা করেছে। এমনকি সোনারপুর থানায় যখন এই নিয়ে আমরা কথা বলতে যাই তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক পরেশ রায় পোস্টমর্টেম ও মেডিক্যাল রিপোর্ট না আসার আগেই confidently বলে দেন যে এটা unnatural death ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। পুলিশ কাকে/কাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে?অদ্ভুত লাগে আরও আমরা চেপে ধরার পর উনি এফআইআর কপি যখন পড়ে শোনান, যে ভাষায় ও যে শব্দচয়নে তা লেখা হয়েছে সুলতানার বৃদ্ধ শ্বশুরের পক্ষে তা কোনভাবেই লেখা সম্ভব নয় বলে আমাদের ধারণা। গোটা এফআইআরে দুটো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেই। জব্বার ও তার ঠাকুমা যখন সুলতানাকে খুঁজতে এসেছিল তখন যে দুজন তাদের সুলতানা অন্যদিকে গেছে বলে তথ্য দেয় সেটি এবং দ্বিতীয়ত ধর্ষণ যে হয়েছে সে সম্পর্কে তদন্তের কোনো দাবি এফআইআরে নেই।
সুলতানার গ্রামের মানুষ তার প্রতিবশীরা অবশ্য বলেছিলেন, সরল,পরিশ্রমী এই মেয়েটির ন্যায়বিচারের জন্য যতদূর প্রয়োজন, তাঁরা যাবেন। সেই কথা তাঁরা রেখেছেন। এরপরই সুলতানার ধর্ষণ আর হত্যার বিচার আর দোষীদের শাস্তির দাবিতে সুলতানার গ্রামের মানুষ রাস্তায় নামেন। তাঁদের সাথে আমরা যাই সোনারপুর থানায়। সুলতানার দুই সন্তানও সেদিন বিচার চাইতে গিয়েছিল সোনারপুর থানায়।
যেভাবে গোটা ঘটনাটার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথম থেকে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, সুলতানার ধর্ষণ হয়েছে কিনা তার থেকেও বড় হয়ে উঠেছে মেয়েটি মদ খেয়েছিল কি খায় নি, সোনারপুর থানায় যাওয়ার পর যেভাবে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এলাকার মানুষদের ভয় দেখাতে শুরু করে,প্রায় এক ঘণ্টা তাদের সাথে উত্তপ্ত বাগবিনিময়ের পরই একমাত্র থানায় ঢোকা সম্ভব হয়। আমাদের শুনতে হয় যে, এলাকার মেয়ে,আমরা বুঝে নেবো,যদিও এত বড় নৃশংসতার পরও তাদের কাউকে কোনভাবে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় নি। যেভাবে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আমাদের সাথে প্রায় ধমকি দিয়ে কথা বলেন, এতদিন হয়ে যাওয়ার পরও যেখানে পুলিশ স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যন্ত চেক করে নি, এমনকি রাতে আমরা থানা থেকে ফিরে আসার পর যেভাবে গড়িয়া স্টেশন চত্বরের স্থানীয় দোকানদার অটোচালক, রিকশাচালকদের সন্ত্রস্ত করা হয়েছে, যেভাবে প্রথম থেকে এটাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে দেখিয়ে এফআইআর কে প্রভাবিত করা হয়েছে তাতে এই আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে যে একটা প্রশাসন-নেতা দুষ্টচক্র কাজ করছে ঘটনাটা কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং সুলতানার হতদরিদ্র পরিবারটিকে ও প্রভাবিত করে ভয় দেখানোর একটা জোরদার চেষ্টার সম্ভাবনাও নেহাত অমূলক নয়।
এর মধ্যে আশার কথা এই যে, সুলতানার গ্রামের মানুষ কথা রেখেছেন। এই ভয়-ভীতির পরিবেশের মধ্যেও এক পা ফেলেছেন।মেয়েটার ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে ছিল যেখানে সেখানেই সুলতানার ইনসাফের দাবিতে গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সুলতানা ধর্ষণ কান্ডের তথ্য অনুসন্ধানকারী দল APDR Radical সহ বিভিন্ন গণসংগঠন এর উদ্যোগে গড়িয়া স্টেশন চত্বরে গত শুক্রবার, ৪ মে প্রতিবাদসভা আয়োজিত হয়।
প্রত্যেকের বক্তব্যের মাধ্যমে উঠে আসে শাসকের প্রতি ঘৃণা আর মেয়েটির বিচারের দাবি। বিশিষ্ট বক্তাদের সঙ্গে বক্তব্য রেখেছেন সুলতানার শাশুড়ি সহ ওর গ্রামের মেয়ে ফতেমা। শাশুড়ি ও সবার বক্তব্য থেকে একটাই কথা উঠে এসেছে বারবার সুলতানার বিচার এর দাবির সাথে সাথে সমস্ত মানুষকে সংঘবদ্ধভাবে সারা দেশ জুড়ে চলতে থাকা নারী নির্যাতন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
যে চলে গেছে তার ন্যায়বিচারের জন্য আমরা লড়াই করতে পারি। কিন্তু আর যাতে কোনো মেয়ের সাথে সুলতানার ঘটনা না ঘটে, তার জন্য আমরা কী করতে পারি?এই নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এলাকার বিভিন্ন মেয়েদের মধ্যে থেকেই বিভিন্ন মতামত উঠে আসতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে প্রতিটা মেয়ের লঙ্কাগুঁড়ো, ছুরি, ব্লেড ইত্যাদি সঙ্গে রাখা, সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে থাকা। এছাড়াও সব চেয়ে যেটা জরুরি এলাকার মহিলা ও পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মিলে সংগঠিত হওয়া। যেকোনও ঘটনা ঘটলে সবাই মিলে একজোট হয়ে তার মোকাবিলা করা।মূল বিষয় হল মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাটা খুব জরুরি। দুষ্কৃতীদের এটা বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে তারা সংখ্যালঘু; যে দাপুটে নেতা মন্ত্রী-পুলিশ-প্রশাসন তাদের পাশে থাকুক না কেন।
জব্বার্, বারো বছরের যে ছেলেটা,গত ১৮ই এপ্রিল মায়ের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ দেখেছিল,গড়িয়ার সুলতানার সেই ছেলের পড়াশোনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিয়েছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বাকী বাচ্চাদেরও যাতে একটা সুন্দর-সুস্থ পরিবেশে রেখে বাঁচার আর মায়ের মৃত্যুর এই দুঃসহ স্মৃতি থেকে বার করে আনা যায় তার জন্য চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। একেবারে হতদরিদ্র পরিবার। তাই এখনও পর্যন্ত দানের টাকাতেই বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে পরিবারটিকে। সুলতানার দশ বছরের মেয়েটা এক ধাক্কায় অনেক বড় হয়ে গেছে,সংসারের অনেক দায়িত্ব তার ওপর পড়েছে। ছয় বছরের ছোট মেয়েটা যে কথাবার্তার মাঝে মাঝে আমাদের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে খেলছিল, "ওকে যখন বললাম আমরা এবার যাই?" ও বলে উঠলো "আমিও যাবো। মা আসলে, আমিও যাবো তোমাদের পেছনে পেছনে। "শুনে বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। ছোট শিশু এখনো আশা করে আছে ওর মা ফিরবে। ওর মাকে তো ফিরিয়ে দিতে পারবো না আমরা। আমরা বড়জোর লড়াই করতে পারি ওর মায়ের বিচারের দাবিতে। যা ও হয়তো এখন বুঝবেনা। বড় হয়ে বুঝবে।
কিন্তু এই লড়াই শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষ আর আর কয়েকজনের লড়াই হলে বিচার কি পাওয়া যাবে? এখনো অব্দি প্রায় কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রায় একমাস হতে চললো। এখনও পর্যন্ত সোনারপুর থানা কেসের বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয় নি।বরং হুমকি ফোন আসতে শুরু করেছে এলাকার সেই মেয়েদের কাছে যারা তাদের বন্ধুর বিচারের দাবিতে সক্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় মানুষজন ও যারা প্রথম থেকে গোটা বিষয়টির সাথে আছি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস এলাকার স্থানীয দুষ্কৃতীরাই পুরোমাত্রায় জড়িত এই ঘটনার সাথে, আর এদের সাথে অশুভ আঁতাতের জন্যই থানা যার জন্য এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের মামলা পর্যন্ত দায়ের করে নি। এই দুষ্টচক্র না ভাঙ্গলে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আরো ঘটতে পারে, বিশেষ করে একটি ঘটনার পরে পুরোই পার পেয়ে গেলে।
আজ, ১০তারিখ সুলতানার গ্রামের মানুষ,বিভিন্ন গণসংগঠন ও ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে যাওয়া হবে সোনারপুর থানায়, জানতে চাওয়া হবে গত তিন সপ্তাহ ধরে তাদের ভূমিকা কী ছিল, জানতে চাওয়া হবে নিষ্ক্রিয়তার কারণ, সবাই মিলে। অনেকে মিলে । সোনারপুর স্টেশনে বিকেল ৪টেয় ১ নং প্লাটফর্মে জমায়েতের পর একসাথে থানায় যাওয়া হবে। যত বেশি মানুষ এই দাবি তোলেন, ততই জোরদার হবে, বলাই বাহুল্য। কিন্তু তার জন্য মানুষকে জানতে হবে। না, কোন মিডিয়ায় এখনো সেভাবে এই খবর আসেনি, সোশ্যাল মিডিয়াও সরব হয়নি এখনো এই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। সেটা কি সুলতানা নেহাত গরীব মেয়ে বলে ? তাঁর পরিবারের লোকজনের কোন প্রভাব, ক্ষমতা নেই বলে? তাঁরা এমনিতেই নিতান্ত অসহায় বলে ? কিন্তু সেজন্যেই তাঁদের পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়ে যায়না কি ?
আসিফার কেসে কিন্তু দেরিতে হলেও তদন্ত ঠিকভাবে হচ্ছে, সত্য সামনে আসছে। তা সামনে আনার জন্য বিস্তর চাপ এসেছে, আসছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে সবস্তর থেকে প্রতিবাদের ফলেই। আমাদের এই রাজ্যেরই মেয়েটার ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করা কি নিতান্ত বাতুলতা ? এ লেখার শুরু যে হতাশা দিয়ে, যে আশঙ্কা দিয়ে, তা মিথ্যা হলেও হতে পারে, এমন আশা কিন্তু মরিতে মরিতেও মরেনা।