প্রাক-কথন
বাংলাদেশে গত ২৯ জুলাই জাবালে নূরের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একদল শিক্ষার্থীর উপর উঠে যায়। এতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাদের সহপাঠীরা। ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকার সব রাজপথে গড়ে তোলে “নিরাপদ সড়ক আন্দোলন”। অভূতপূর্ব এই স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন খুব শিগগিরই স্ফূলিঙ্গ থেকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় শহর থেকে বন্দরে, নগর থেকে নগরে, সারা বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগের লাঠিপেটা উপেক্ষা করে ট্রাফিকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বুঝিয়ে দেয় সিস্টেমের গলদ।
ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক তো বটেই, সর্বস্তরের জনতা সমর্থন দেয় এক সপ্তাহের এই কিশোর বিদ্রোহে। ছোট পাখিদের এই কলরব পরিনত হয় আন্তর্জাতিক সংবাদে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কলকতা ও নিউ ইয়র্কের রাজপথে মিছিল হয়েছে। মিডিয়া, স্যোশাল মিডিয়া, ব্লগ, ইন্টারনেট, ইথার – দিকে দিকে ছড়ায় বিদ্রোহের বার্তা – “ইউ ওয়ান্ট জাস্টিস!”
অর্থাৎ সড়ক পথে এতো বছর ধরে যে নগর পরিবহন ও আন্ত:নগর পরিবহনের নামে অরাজকতা-দুর্নীতিতে প্রতিদিন অগুনতি তাজা প্রাণ ঝরছে, আহত ও পঙ্গু হচ্ছেন আরো অনেক মানুষ, আমরা এর অবসান চাই, বিচার চাই!
শুরু থেকে সরকার এই আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতোই নির্মম নিষ্পেষন-নির্যাতনে উৎখাত (তাই কী আর হয়?) করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা খুব শিগগিরই বুঝতে পারে, কোমলমতি শিশুদের পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ আক্রমণের প্রতিটি আঘাত আসলে পড়বে সরকারের মুখে। তাই শেষমেষ তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বেফাঁস মন্তব্যকারী নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদও শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহবান জানান।
আটদিনের মাথায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা, যারা আসলে ১৯৭১ এর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম, তারা সরকারকে একমাসের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। সেদিনই ৬ আগস্ট সোমবার, মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রস্তাবিত সড়ক নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর খসড়া অনুমোদন হয়। এই আইনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে বেপরোয়া চালকের শাস্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ফৌজদারি বিধানে সাজার কথা বলা হয়েছে। আগামী সংসদ অধিবেশনেই আইনটি পাস হ্ওয়ার কথা। সরকারের মন্ত্রীবর্গ নয় দফায় অন্যান্য দাবিও মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দৃশ্যতই কিশোর বিদ্রোহের জয় হয়েছে। [দেখুন, সাবাস বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাকতাকিয়ে রয়…]
গুজবের তুমি, গুজবের আমি…
সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, যে কোনো স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনেই বহুমুখি ঝুঁকি থাকে। যেমন, ১) আন্দোলনটি বেহাত হওয়া, ২) হঠাৎ অন্তর্ঘাতমূলক নাশকতা, ৩) গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে “তৃতীয় পক্ষ” এর ফায়দা লোটা, ৪) ব্যাপক নির্যাতনে আন্দোলন নস্যাৎ -- ইত্যাদি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তোলার দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ গণজাগরণও স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল। এতে এই চারটি ঝুঁকিই খুবই সক্রিয়ভাবে ছিল উপস্থিত। কিন্তু তারপরেও এই আন্দোলনটি মূল দাবি আদায়ে সারা বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করেছে, বাংলা ভাষাভাষী সারা বিশ্বের মানুষের সমর্থন আদায় করেছে, “জয় বাংলা” শ্লোগানটিকে সব মানুষের বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
শাহবাগ আন্দোলনের সময় (২) অন্তর্ঘাতমূলক নাশকতার চেষ্টা বিএনপি-জামাত চক্র কম করেনি, তাজা বোমা নিয়ে একাধিকবার মৌলবাদী ক্যাডার ধরা পড়েছে, স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্কতায় এটি সফল হয়নি।(৩) গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে “তৃতীয় পক্ষ” (মৌলবাদ) সফল হওয়ার চেষ্টা কম করেনি। ফটোশপ, অনলাইন ও অফলাইনে হুমকি সবই চলেছে সমানতালে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামাত সখ্যতার কারণে শাহবাগ আন্দোলনকে “নাস্তিক ব্লগার”দের আন্দোলন বলেও সুবিধা করতে পারেননি। সাইবার ওয়ার ঘোষণা করে প্রজন্ম শাহবাগ “বাঁশের কেল্লা”কে মোকাবেলা করেছে, প্রতিটি ফটোশপের জবাব দিয়েছে, শাহবাগ আন্দোলন বিরোধী লিজেন্ড ব্লগার ডা. আইজুদ্দিনের মুখোশ উন্মোচন করেছে, এমনকি সে সময় মৌলবাদী ছাত্র শিবিরের ওয়েব সাইটও হ্যাক হয়।
শাহবাগ আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়ের পর (১) আন্দোলনটি বেহাত হয়ে চার-পাঁচ খণ্ডে বিভক্ত হয়, শিগগিরই এটি পরিনত হয় কাঠের ঘোড়ায়, আর সরকারের আস্কারায় জামাত-হেফাজত নামে ব্লগারদের গলা কাটার জেহাদী মিশনে (৪)।
এবার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে স্পষ্টতই বিএনপি-জামাত গোষ্ঠি (৩) গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ফায়দা নিতে চেয়েছিল। সেখানে (১) ও (২)আশঙ্কা কাজ করেনি। তবে (৩) ও (৪) শঙ্কা খুবই সক্রিয় ছিল। বলা ভাল, (৪) নম্বর শঙ্কা – ব্যাপক নির্যাতন এখন পুরো দেশজুড়েই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
আবার প্রথম থেকেই কিশোর বিদ্রোহটিকে “সরকার বিরোধী আন্দোলন” জ্ঞানে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ লাঠিশোটা নিয়ে হামলা করে দমন করতে চেয়েছিল। তাই “আন্দোলনকারী শিক্ষার্খী একজনকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির অফিসে আটকে রাখা হয়েছে” বা “ছাত্রলীগ এক শিক্ষার্থী মেয়েকে ধর্ষন করেছে” – এমন গুজব খুব শিগগির ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ধানমন্ডির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র রাস্তায় নেমে আসে। তারা আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ অফিস। পুলিশ ও হেলমেট ধারি ছাত্রলীগ পাল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বেধড়ক পেটায়। তারা বেছে বেছে বহু সংখ্যক সাংবাদিকদেরও বেধড়ক মারপিট করে। অনেক টিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এমনকি অনেকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
গুজব ছড়ানোর জেরে গ্রেপ্তার হন নওশাবা নামে তরুণ একজন অভিনেত্রী। যিনি কিছুটা অভিনয় করে ফেসবুক লাইভে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ নাকি একটি বাচ্চার চোখ তুলে ফেলেছে। আরও দুটি বাচ্চাকে নাকি মেরে ফেলেছে – ইত্যাদি। তিনি সবাইকে রাস্তায় নেমে আসারও আহবান জানান। ওইদিন রাতে র্যাব তাকে সাইবার আইনে আটক করলে অভিনেত্রী দোষ স্বীকার করে আরেকটি লাইভে জানান, তিনি আরেকজনের কাছ থেকে শুনেই আগের লাইভটি করেছিলেন, এটি তার ভুল। আগের লাইভের কোনো তথ্য সত্য নয়, নিছক গুজব। [দেখুন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন:কী ঘটেছিল ধানমণ্ডিতে? ]
পুলিশ লীগ, হাতুড়ি লীগ, হেলমেট লীগ
আগেই বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পুলিশ ও “হাতুড়ি লীগ” (হাতুড়ি দিয়ে এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর পা ভেঙে ফেলার ঘটনায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এখন এই নামেই পরিচিতি পেয়েছে) কঠিনভাবে দমনের চেষ্টায় আছে। এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে কোটা আন্দোলনকারী সাত নেতাকে। বাকীরা রয়েছেন পলাতক।
একই কায়দায় ৫ আগস্টের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পরদিন ৬ আগস্ট নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয় রামপুরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং তেজগাঁয় ব্রাক ও আহসানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লীগ, হাতুড়ি লীগ ও হেলমেট লীগ (লুঙ্গি ও হেলমেট পরিহিত শ্রমিক লীগ) ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সরকারি-বেসরকারি বাহিনী লাঠিসোটা, ইটপাটকেল, রড, চাপাতি ও রামদা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে। শত শত শিক্ষার্থী এই আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। রামপুরায় পুলিশ টিয়ারশেল ছোঁড়ে, জলকামান ব্যবহার করে। [ দেখুন, বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর এর ভিডিও রিপোর্ট ]
এদিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে ৫ আগস্ট মধ্যরাতে সাদা পোষাকে ডিবি পুলিশ ধানমণ্ডির বাসায় রীতিমত অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। ডিবি বাসার গেট ও সিসি ক্যামেরা ভেঙে অনেকটা অপহরণের কায়দায় শহীদুলকে তুলে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে “গুজব ছড়ানো”র পাশাপাশি “শিক্ষার্থীদের উস্কানি” দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়, মামলা করা হয় নির্যাতনমূলক আইসিটি আইনে, যেটি জামিন অযোগ্য অপরাধ এবং এর সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর।[দেখুন, বিবিসি বাংলার রিপোর্ট] পরদিনই তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। শহীদুলের “অপরাধ” তিনি ধানমণ্ডিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার খবর ওইদিনই আল-জাজিরা টিভিতে লাইভ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।
এরই মধ্যে দেশের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার সংস্থাগুলো শহীদুলের মুক্তি দাবি করে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে। বিদেশ থেকেও তার শুভানুধ্যায়ী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শহীদুলের মুক্তি দাবি করছে।
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পক্ষ
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন প্রসঙ্গে এখন সরকারের মন্ত্রীবর্গ, পোষা সাংবাদিক-লেখক ও টক-শোজীবীদের একটি খুবই পছন্দের কথা “তৃতীয় পক্ষ”।
গত ১২ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন বিমান বন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও বলেন একই কথা। ঢাকার কুর্মিটোলার এই কলেজেরেই দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হলে কিশোর বিদ্রোহের সূচনা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “…আপনারা গুজবে কান দিয়েন না। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সুশিক্ষার জন্য। অশ্লীল কথা, মিথ্যা কথা, গুজব- এসবের জন্য না। কাজেই এর থেকে বিরত থাকতে হবে।”
এরপর প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে “তৃতীয়পক্ষের অনুপ্রবেশের” যে চিত্র তুলে ধরেন, তা সত্যিই ভয়াবহ। তিনি বলেন, “যখন দেখলাম ব্যাগের ভেতর থেকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল বের হচ্ছে, পাথর বের হচ্ছে… তখন আমরা চিন্তিত হয়ে গেলাম। আমি তখনই আহ্বান করলাম, তোমরা ঘরে ফিরে যাও। অভিভাবক-শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানালাম- তৃতীয়পক্ষ ঢুকে পড়েছে, তাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে নেন। সময়মত তারা শিক্ষাঙ্গনে ফিরে গেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মার খেয়েছে, অপমাণিত হয়েছে, তাদের মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু করেনি। কিন্তু দেখা গেল- এরা ছাত্র না, ছাত্র নামধারী কিছু লোক। ওই যে দর্জির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রচুর পরিমাণে স্কুল ড্রেস তৈরি হচ্ছে।”… [দেখুন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গুজবের জন্য নয়:প্রধানমন্ত্রী]
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে যা বলেননি, ইন্টারনেটের যুগে সবকিছু যেন চোখের সামনেই ঘটে, ভার্চুয়ালের সঙ্গে একচুয়ালের পার্থক্য খুব সামান্যই। তাই ফেক নিউজ বা গুজব কিছু সময়ের জন্য পাত্তা পেলেও এক সময় থলের বেড়াল বেড়িয়েই আসে।
যেমন, আগেই বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের দমন ও সাংবাদিক নির্যাতনে তৃতীয়পক্ষ ছাড়াও পুলিশের সহযোগি হিসেবে “চতুর্থ পক্ষ” হেলমেটধারী সশন্ত্র একদল যুবক এবং “পঞ্চম পক্ষ” লুঙ্গিধারী আরো একদল সশস্ত্র লোক সক্রিয় ছিল। এদের রাজনৈতিক পরিচয় কী? এদের ক্ষমতার উৎসই বা কী? আর পুলিশ কেনই বা এই সশস্ত্র গ্রুপটিকে প্রশ্রয় দেয়?
আজ না হোক, জনতার আদালতে একদিন সরকার বাহাদুরকে এর জবাব দিতেই হবে। আর এরই মধ্যে কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী মানে আগামী দিনের ভোটার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানে তরুণ ভোটার। এছাড়া তাদের সূত্রে অভিভাবক-শিক্ষক মানে আরো অনেক ভোটার। নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সবকিছু ঠিকঠাক চললে, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে হবে জাতীয় নির্বাচন।
এছাড়া বলা যায় না, আগামীতে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত শক্তি এইসব অপশক্তির লাঠিশোটা, চাপাতি, রামদা, হাতুড়ি ইত্যাদি কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের হেলমেট ও লুঙ্গি যে টেনে খুলেবে না, তারই বা গ্যারান্টি কী? [ দেখুন, দি ডেইলিস্টারের ভিডিও রিপোর্ট]
মুক্তি চাই!
আগেই বলা হয়েছে, সরকারপক্ষ বেশ জোরেশোরে প্রচার করছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে “তৃতীয় পক্ষের” ভাংচুর ও নাশকতার কথা। কিন্তু তারা বেমালুম চেপে যাচ্ছে, আন্দোলনের শুরুতেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক পুলিশী প্রহার ও পরে আন্দোলনের শেষে বেধড়ক মারপিট ও গ্রেপ্তারের কথা। সে সময় স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী, ডিএমপি কমিশনার মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের নাকি মারপিট করা হবে না বা আটক করা হবে না! বরং পুলিশ নাকি তাদের সহযোগিতা করবে – ইত্যাদি। দৃশ্যতই তারা মিথ্যাচার করেছেন।
আন্দোলনের শুরুতে শিক্ষার্থীদের বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে ( খুঁজে দেখুন, ফেসবুকে ভাইরাল পিক্স, স্কুলের এক জোড়া রক্তাক্ত সাদা কেডস জুতো; শুনুন, শিক্ষার্থীদের অশৈলী শ্লোগান, "পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?")
সবশেষ, কোরবানীর ঈদের তিনদিন আগে গত ১৯ আগস্ট ঢাকার আদালত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ৪১ জন শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছে। “ভাঙচুর, উস্কানি ও পুলিশের কাজে বাধা দান” এর অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আন্দোলনের সময় দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বিভিন্ন থানায় মোট ৪৩টি মামলা করে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ৮১ জনকে। ৬ আগস্ট সহিংসতার ঘটনায় বাড্ডা ও ভাটার থানার দুই মামলায় আফতাবনগর এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বসুন্ধরা এলাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও এলাকার সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।[দেখুন, গ্রেপ্তার ৪১ শিক্ষার্থীর জামিন]
পাদটিকা
তুমি গুজব, আমি গুজব, সব গুজব। কিন্তু পুলিশে পেটানো চার পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতি কিন্তু গুজব নয়, এটি সত্যি! [লিংক]