বাংলা ভাষায় ওয়েব সিরিজ, এবং অপ্রচলিত মাধ্যমে। ফলে, সমালোচনার ক্ষেত্রে যা মহাপাপ, সেরকম একটি আবেদন দিয়েই শুরু করা যাক। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উরিবাবা চ্যানেলের বিরহী ওয়েব সিরিজটি দেখুন। পছন্দ হলে পপকর্ন খেতে খেতে হাঁ করে দেখুন, না হলে গাল দিতে দিতে। গালাগাল বা হাততালি, যা খুশি দিন, কিন্তু দেখুন, নইলে বনবিবি পাপ দেবেন। কেন দেখবেন? কারণ, এক, এটি বিকল্প হয়ে ওঠার এক পরিশ্রমসাধ্য চেষ্টা। দুই, এতে বাংলার গ্রামের মোটামুটি বাস্তবসম্মত ছবি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রাম দেখাতে গেলেই শহুরে পরিচালকরা হয় নালেঝোলে একাকার হয়ে সরল ও গোলগাল চাষীভাইদের দেখাতে শুরু করেন, নইলে দেখান কুটিল ও জটিল জোতদার এবং লেঠেলদের। এখানে সেসবের বালাই নেই। আসল গ্রামবাংলা, যা একেবারেই সাদা-কালো নয়, এই সিরিজে সেই জটিল এবং আধা-অপরিচিত বাস্তবতা ছোঁয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিন, আবহসঙ্গীত। গ্রাম মানেই উদাত্ত ভাটিয়ালি কিংবা পৌষমেলার বাউলনৃত্য নয়। কীর্তন থেকে পাঁচালি, সর্বত্রই মিশে থাকে গ্রামের বিদঘুটে ধূসরতা। তা যেমন মোলায়েম তেমনই রুক্ষ। যেমন শাস্ত্রীয়, তেমনই স্থানীয়। যেমন সুরেলা, তেমনই পঞ্চাশ রকম দেশজ ধ্বনির কোলাজ। সর্বত্র সফল না হলেও, এ সিরিজের সঙ্গীতে এবং আবহে এই বিপুল বাস্তবতা একরকম করে ধরার চেষ্টা আছে।
এত কিছুর পরেও অবশ্য এ বস্তু আপনার ভাল নাই লাগতে পারে। যেমন আমার লাগেনি। কারণ একটিই। ভাল ক্যামেরা হাতে নিয়ে “গ্রাম দেখাব” বলে শুট করতে গ্রামে চলে গেলে গ্রাম হয়তো ভালই দেখা যায়, কিন্তু সিনেমা তো ঠিক ফোটোগ্রাফির প্রদর্শনী নয়। নায়ককে "যাও বাবা, চোঙা ফুঁকে পাড়ার লোককে চাট্টি ভালোভালো কথা শুনিয়ে এস" বলে উপন্যাসের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিলে যেমন ভালো সাহিত্য হয়না, তেমনই সিনেমা বা সিরিজ ভাল হতে গেলে ড্রোনে চড়ে ফোটোগ্রাফিক গ্রামদর্শনের চেয়ে অধিক কিছু প্রয়োজন। বস্তুত এ সিরিজে ড্রোনের ব্যবহার এত বেশি, যে, পরিচালককে নির্দ্বিধায় ড্রোনাচার্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্যশ্রাব্যের কুরুক্ষেত্রে, এমনকি "ভালো খেলিয়াও পরাস্ত" হতে গেলেও সঙ্গে কিছু কুশলী অস্ত্রচালনাও প্রয়োজন। ন্যূনতম যেটুকু দরকার, তা হল টান-টান, নির্মেদ চিত্রনাট্য। পরিচালনা এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে একাধারে দরকার মমত্ব এবং কঠোর ও নির্মম কুশলতা। এর প্রতিটিতেই বিরহী পিছিয়ে আছে।
এর ভুরি-ভুরি উদাহরণ গোটা সিরিজ জুড়ে ছড়িয়ে। কিন্তু দেখা নষ্ট করে দেওয়া এড়াতে এবং প্রবন্ধের আকার কমাতে তার একটিই শুধু বলা যাক। সিরিজ শুরু হচ্ছে, নায়কের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া দিয়ে। নায়ক থাকে গ্রামে। চাকরি পেয়েছে আরেকটি গ্রামে, নিজের বাড়ি থেকে ৮০ বা ১০০ কিলোমিটার দূরে। সিরিজের একদম শুরুর দিকে, নায়ক প্রথম দিন চলেছে কাজে যোগদান করতে। সে দৃশ্য কীভাবে দেখানো হয়েছে? নানা কায়দায়। ড্রোন থেকে দেখানো হয়েছে সরু পিচের রাস্তা দিয়েছে চলেছে বাস। কন্ডাকটার হাঁকডাক করছে (ড্রোন থেকে নয়) । বাসে তোলা হচ্ছে হাস-মুরগি-ছাগল। একজন স্থানীয় “বাবু” বাসে উঠে এসব দেখে নাক কোঁচকাচ্ছেন। আর নায়ক চলেছে জানলার ধারে বসে। মুখ বুজে। চুপচাপ। বাসে ওঠা থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি দৃশ্যই খুব উপভোগ্য। কিন্তু পুরো দৃশ্য ঘেঁটে যায়, যখনই কথোপকথন চলে আসে পর্দায়। সেই স্থানীয় "বাবু" নায়কের পাশে বসে শুরু করেন আলাপচারিতা, আর সিরিজের উপভোগ্যতা ছড়িয়ে হয়ে যায় ছাপ্পান্ন। বাবুটি বলেন খুবই সাধারণ কথাবার্তা, কিন্তু তাঁর বলার ভঙ্গী লাগতে থাকে অতিনাটকীয় এবং অতিআরোপিত। মনে হয়, কেমন গাঁক-গাঁক করে পড়ামুখস্থের মতো বলে চলেছেন সংলাপ, যেন মাথায় বন্দুক ধরে পরিচালক বলে দিয়েছেন, নায়ককে যত তাড়াতাড়ি জানিয়ে দিতে হবে, যে, সে যেখানে কাজে যোগ দিতে চলেছে, সেটি অতি অখাদ্য জায়গা, যেমন খারাপ তেমনই বিপদসঙ্কুল, আর যাতায়াত তেমনই কঠিন, তবেই ছুটি।
আপাতদৃষ্টিতে এটি অভিনয়ের সমস্যা বলে মনে হলেও ব্যাপার আদপেই তা নয়। একটু ভাল করে দেখলেই বোঝা যাবে, অভিনেতার তেমন কোনো খামতি নেই। ওই একই অভিনয় তিনি যদি নাটকে করতেন, তবে দূর থেকে দেখে দর্শকের দিব্যি মানানসই লাগত। ফলত সমস্যাটি অভিনয়ের মাত্রার। আরও খোলসা করে বললে, অভিনয়ের মাত্রা এবং ক্যামেরা থেকে দূরত্বের অসামঞ্জস্যের। আমরা সবাই জানি, অভিব্যক্তি এবং বাচনভঙ্গী লং শটে যতটা চড়া হতে পারে, কাছের শটে তা পারেনা। তার মাত্রাকে কমিয়ে আনতে হয়। নইলে তা এরকমই চড়া এবং আরোপিত লাগে। অভিনেতারা, সব ক্ষেত্রে এটা বুঝে উঠতে নাই পারেন, বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বটা তাঁর, যিনি ক্যামেরার পিছন থেকে ব্যাপারটির উপর নজরদারি করছেন, অর্থাৎ পরিচালকের। পরিচালক এই কর্তব্য একেবারেই ঠিকঠাক পালন করেননি।
একই কথা সম্পাদনা সম্পর্কেও। এ কথা ঠিক, যে, যে দৃশ্য তোলা হয়েছে, কেবল তাইই সম্পাদনা করা যায়। সম্পাদকের টেবিলে নতুন দৃশ্য প্রসব করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার পরেও সম্পাদকের কিছু করণীয় তো অবশ্যই আছে। যেমন, এই দৃশ্যেই, ধরা যাক, সম্পাদক দেখলেন, যে, সংলাপ ছুঁড়ে দেওয়ার ভঙ্গী দৃশ্যের সঙ্গে একেবারেই বেমানান লাগছে। এতে দোষের কিছু নেই। শুট করার সময় প্রবাদপ্রতিম রায় মহাশয়ও সবটা বুঝে উঠতে পারতেননা। অন্তত পথের পাঁচালিতে বেমানান লাগায় এডিটিং টেবিলে বসে কিছু শট তিনি ফেলে দিয়েছিলেন বলেই জানা যায়। তাঁর ক্ষেত্রে পুনরায় চিত্রগ্রহণ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে অতটা না হলেও, অন্তত অংশত, বেমানান সংলাপের সময় অন্য দৃশ্য দেখানো যেতে পারত। অর্থাৎ, সংলাপ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বক্তার অঙ্গভঙ্গী পুরোটা না দেখিয়ে অন্য কিছু দেখানো হচ্ছে। সম্পাদনার টেবিলে এর কতটা সম্ভব ছিল, তা অবশ্য লেখকের টেবিলে বসে বলে দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু পরিচালনা-সম্পাদনা যুগলবন্দী যে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
চিত্রনাট্য এবং তার পরিকল্পনা অবশ্য এর চেয়েও কম নম্বর পাবে। এরও উদাহরণ এই একই দৃশ্যেই পাওয়া যাবে। বস্তুত দৃশ্যটি ভজকট হবার একটি বড় কারণ চিত্রনাট্য। নায়ক যেখানে কাজে যোগ দিতে চলেছে, তা তার বাড়ি থেকে ৮০-১০০ কিলোমিটার। ভয়াবহ কিছু দূরত্ব নয়, কারণ নায়ক একদিনেই যাতায়াত করার পরিকল্পনা করেছে। অথচ, এই দৃশ্যে দেখা যায়, যে, জায়গাটি কেমন, তা নিয়ে সে কিছুই জানেনা। জানার চেষ্টা করেছে বলেও দেখা যায়নি। শুধু এটুকুই না, কীকরে সেখানে যেতে হয়, সে সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা নেই। খোঁজও নেয়নি। কোথাও একটা নেমে বারো কিলোমিটার হেঁটে মেরে দেবে, এই তার আবছা পরিকল্পনা। নেহাৎই ঘটনাচক্রে এই "বাবু"টির সঙ্গে তার বাসে দেখা হয়ে যাবে, এবং তিনি নায়ককে বাতলে দেবেন, কীকরে পৌঁছতে হবে কর্মস্থলে। শোনাবেন আরও নানা পিলে চমকানো গপ্পো। সেও নায়ক শুনবে প্রথমবার।
এখানে বক্তব্য একটিই, যে, এর চেয়ে বেশি অবাস্তব চিত্রনাট্য হওয়া মুশকিল। কারণ, গ্রামেগঞ্জে তো নয়ই, শহরেও এরকম হয়না। বাঙালি জাতি হিসেবেই এরকম না। ধরা যাক আপনি থাকেন বারুইপুরে, চাকরি পেয়েছেন ভাঙড়ে। এ কথা কানে যাওয়া মাত্র পাড়ার লোক থেকে বন্ধুবন্ধব তৎক্ষণাৎ বলবে, ওরে ভেড়ি থেকে দূরে থাকিস। সন্দেশখালিতে যাচ্ছেন শুনলে, কিস্যু না জেনেই পাবলিক বলবে কুমীর-টুমির নেই তো? ডায়মন্ডহারবার শুনলে বলবে মধুচক্র হইতে সাবধান। এ তো শুধু জায়গার বিবরণ। তারপর ১০০ টি লোক, না হলেও ১৯৯ রকম উপায় বাতলাবে, কীকরে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। জানা যাবে, প্রত্যেকেরই ছোটো মামা কিংবা মেজোপিসির পরিচিত কোনো একজন ওদিকেই যেত বা থাকত। শহরেই এই, গ্রামে এর কতগুণ চলে, তা বলাবাহুল্য। ভালো-খারাপের কথা হচ্ছেনা, বাঙালির কারবারই এরকম। শুধু এইটুকু দিয়েই একটি এপিসোডের আধখানা ভরে যায়, বস্তুত কম্পোজিশনের খাতিরে ভরানো উচিতই ছিল। পরিবর্তে আমরা কী পেলাম? না, গ্রামের ছেলে চাকরি করতে চলেছে একটি জায়গায়, সে জানেইনা, জায়গাটা কেমন, কীকরে পৌঁছতে হয়। ফলে তৈরি হল এক অলীক এবং সংকটময় পরিস্থিতি। বাস্তবতা এবং কম্পোজিশন দুয়ের ক্ষেত্রেই। বাস্তবতার ক্ষেত্রে অলীক, কারণ, এরকম হয়না। আর কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে সমস্যাসঙ্কুল, কারণ, নায়ককে কাহিনীর খাতিরে জানানো দরকার, তার কাজের জায়গাটি কেমন। কিন্তু সেকথা জানানো হয়নি। এই সংকট সামাল দিতে কী করা হল? না বাসে নায়কের সঙ্গে দেখা করানো হল এক আগন্তুকের। তিনি উচ্চগ্রামের ডায়লগ দিয়ে ঠিক যা-যা দরকার সেটুকু জানিয়ে দিলেন। কাহিনীর সুতো, আল্লার নামে অক্ষত থাকল। কিন্তু কম্পোজিশনের হল দফারফা। (বস্তুত, এর পরেও যেখানেই এইভাবে কম্পোজিশন ঘেঁটে গেছে, সেখানেই এই চরিত্রটির বা অন্য কোনো চরিত্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সূত্রধর হিসেবে কিছু কথা জানিয়ে দেবার জন্য। ) সমস্যা এখানে নয়, যে, চরিত্রটিকে দরকারে আনা হয়েছে। যেকোনো কাহিনীচিত্রেই সমস্ত চরিত্রই কাহিনীতে ঢোকে কোনো-না-কোনো কম্পোজিশনগত প্রয়োজনে। কিন্তু দরকারটি যদি চোখে দেখা যায়, তাহলে কম্পোজিশন ব্যর্থ, সাটলটি অনুপস্থিত, বাস্তবতা অলীক। শুধু পড়ে থাকে কিছু বক্তব্য। এক্ষেত্রে সেটি হলঃ "আসুন আপনাদের গ্রাম দেখাই"।
এখানে আরেকটি কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার, যে, না, এখানে রিয়েলিজমের কথা হচ্ছে না। যা পৃথিবীতে ঘটে, তাই সিনেমাতে ঘটাতে হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। কিন্তু চিত্রনাট্য যেভাবেই তৈরি হোক, তার বিশ্বাসযোগ্যতার উপাদানটি সবসময়েই খুব জরুরি। ফটোগ্রাফিক বিশ্বাসযোগ্যতা নয়, কাহিনীর অভ্যন্তরের বিশ্বাসযোগ্যতা, যার কিছুটা কাহিনীর সূত্র দিয়ে নির্মিত হয়, কিছুটা বাস্তবতা নির্ধারিত। নিতান্তই রূপকথা বা আধা-রূপকথাতেও এই উপাদানগুলি থাকে। মার্কেজের আষাঢ়ে উপন্যাসেও মাকোন্দোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তৈরি করতে হয়েছে, নইলে কাহিনীটি বিশ্ববন্দিত হতনা। তা, এই বিশ্বাসযোগ্যতা এবং একই সঙ্গে ঠাসবুনোট টান-টান ভাব, এই দুটির যুগলবন্দীর চূড়ান্ত অভাব চিত্রনাট্যে। টান-টান ভাবটা অতি অবশ্যই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন, এই দৃশ্যেই, নায়কের কাজের জায়গাটি কেমন, আকস্মিকভাবে সেটি জানানোর মধ্যে দিয়ে চমক এবং টান দুটোই তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আগে যা বলা হল, যে, পুরোটাই ঘটেছে সাটলটিহীন ভাবে, এবং বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবে চমকটি সম্পূর্ণ মাঠে মারা গেছে। বুনিয়াদেই গণ্ডগোল থাকলে, স্রেফ টান বা চমক দিয়ে আদতে কোথাও পৌঁছনো মুশকিল।
এ শুধু একটি দৃশ্য নিয়েই বলা হল। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলেই, এমনকি ততটা না খুঁটিয়ে দেখলেও, বোঝা যাবে, গোটা সিরিজ, প্রথম থেকে শেষাবধি এই তিনটে সমস্যায় ভুগে-ভুগে রুগ্ন হয়েছে। এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছে। গ্রামের ঠিকঠাক লোকেশন, কিছু চমৎকার দৃশ্য, মোটামুটি ঠিকঠাক অভিনয়, যত্রতত্র ড্রোনের ব্যবহার, মায়াবী ও রুক্ষ আবহসঙ্গীত, কোনো কিছু দিয়েই তাকে আর টেনে তোলা যায়নি। তুলতে পারলে ভালো হত। বাংলা সিরিজের বিকল্প পথের এক মাইলফলক হয়ে থাকতে পারত, কিন্তু এ সিরিজ তার ধারেকাছেও পৌঁছয়নি।
বলাবাহুল্য এই সমালোচনা বিরূপ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছেনা। বাংলায় ভালো সিরিজ হচ্ছেনা, এটি হতে হতেও হলনা, সেই আক্ষেপ থেকে তার কারণগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেটা দরকারও। কারণ, বাংলায় ভালো সিরিজ হয়না, তার সবচেয়ে বড় কারণ হল বাংলা ভাষায় বিনিয়োগ হয়না। নেটফ্লিক্স চল্লিশের বেশি ভারতীয় সিরিজ তৈরির কথা ঘোষণা করেছে কিছুদিন আগে। তার মধ্যে একটিও বাংলা নয়। বাঙালি দর্শক হিন্দি সিরিজ দেখেই খুশি, আর কুশীলবরা বোম্বে দৌড়তে পারলে হাতে চাঁদ পান। সম্প্রতি বোম্বে প্রবাসী একজন প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্রকার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্রদ্ধার্ঘ দিতে গিয়ে বলেছেন, সৌমিত্র "জাতীয়" স্তরে সম্মান এবং পরিচিতি পেলে ভালো হত। সর্বভারতীয় বলতে এখানে ভুল করে জাতীয় বলা হয়েছে, ধরে নেওয়া গেল। কিন্তু তার পরেও, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন তারকার আন্তর্জাতিক পরিচিতি ঠিক কতটা, সে সম্পর্কে তাঁর আদৌ কোনো ধারণা নেই, সেটাও বোঝা গেল। কারণ, তাঁর কাছে ভারত অর্থে বোম্বের সিনেমা। ভারত অর্থে হিন্দি। এই ব্যাপারটা যতই পীড়াদায়ক হোক, এটা বাস্তব, এবং আগামী কিছুদিনে সেই বাস্তব বদলাবেনা। ফলে বিকল্প রাস্তা খুঁজে বার করা জরুরি। ব্যর্থতার বিশ্লেষণও সে কারণেই জরুরি, নইলে পরের ধাপের সাফল্য কোনোভাবেই আসবেনা। এই সিরিজের স্রষ্টা এবং কলাকুশলীরা, এই সমালোচনাকে সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গ্রহণ করলেই ভালো লাগবে। কারণ, এই কলমচি, বা অন্য কেউ, যতই বঞ্চনা বলে চেঁচাক, যতই দেখতে বলুক, তা দিয়ে তো দর্শক দেখবেনা। সে এসব সমস্যা বোঝেনা তা নয়, কিন্তু দেখার সময় ক্ষমাহীন। ফলত, সীমিত সাধ্য নিয়েই সীমাবদ্ধতাগুলি অতিক্রম করা খুবই জরুরি। পরিচালক, এবং এই সিরিজের যাবতীয় কুশীলবরা সীমাবদ্ধতাগুলি টপকে পরের উদ্যোগে ফাটিয়ে দিলে, এই নগণ্য কলমচির খুব ভালো লাগবে। দেখতে এবং সমালোচনা লিখতে।