এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ  গুরুচন্ডা৯ আট

  • রেসিজম -- সাইকোলজির বিশ্বাসঘাতকতা

    বিক্রম পাকড়াশী
    আলোচনা | বিবিধ | ০১ জুন ২০০৬ | ৮০৬ বার পঠিত
  • অনুবাদ -- বিক্রম পাকড়াশী

    এই রিপোর্টটি সিটিজেনস কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (সিসিএইচআর) এর লেখা, মুখবন্ধে য়ান ইস্টগেট সই করেছেন। আমি ছোটো করে ইনস্ট্যান্ট ভাষান্তর করলাম। এর একমাত্র উদ্দেশ্য রিপোর্টটির এক কপি সাদা বাংলায় রেখে দেওয়া। সকলের পড়া উচিত বলে আমি বিশ্বাস করি। ইংরিজি শব্দে জর্জর ভাষান্তরের সময় নিজের বায়াস যাতে না ঢোকে তার কনশাস চেষ্টা করেছি। সিসিএইচআর তাদের এই রিপোর্টটির বাংলা গুরুচণ্ডা৯তে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে। এদের ওয়েবসাইট । এই অনুবাদের মাধ্যমে গুরুচন্ডা৯ বা অনুবাদক আর্থিকভাবে লাভবান হয় নি। -- অনুবাদক


    পাঠকদের উদ্দেশ্যে

    সাইকোলজি ও সাইকোলজিস্টরা/সাইকিয়াট্রিস্টরা মনে করেন যে মানসিক সুস্থতা ও রোগ বিষয়ে তাঁদের কথাই শেষ কথা। কিন্তু সত্য যাচাই করে যা দেখা গেছে তা এইরূপ:

    ১। মানসিক বিশৃঙ্খলতা রোগ নয়। ডাক্তারী মতে কোনো অবস্থাকে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করতে গেলে কিছু উপসর্গ এবং তাদের সাথে শারীরব্যবস্থার একটা ডেফিনিট সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। সর্দিকাশি, জ্বর আসা যেমন উপসর্গ এবং ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি হলো রোগ। কোনো রোগ বিদ্যমান কিনা তার জন্য উপযুক্ত প্রমান ও পরীক্ষা সর্বতোভাবে জরুরি। সেই অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত কোনো মানসিক 'রোগ' এর উপস্থিতি ডাক্তারী মতে প্রমানিত নয়।

    ২। সাইকিয়াট্রিস্টরা মানসিক উপসর্গ নিয়ে কাজ করেন, যার কোনো শারীরবৃত্তীয় ব্যাখ্যা নেই। এমন কোনো শারীরিক পরীক্ষাও নেই যার মাধ্যমে মানসিক রোগের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নির্ণীত হবে।

    ৩। ওয়ার্লড সাইকিয়াট্রিকঅ্যাসোসিয়েশান ও মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ স্বীকার করে যে মানসিক রোগের কারন বা তার চিকিৎসা ডাক্তারদের হাতে নেই। যা পড়ে আছে, তা শুধুই বহু পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহার। সাইকিয়াট্রিস্টরা মনে করেন না যে তাঁরা রোগের উপশম করতে পারেন। মানসিক রোগীরা রোগ নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকতে পারেন সেইটুকুই কেবল মাত্র দেখা যেতে পারে।

    ৪। মানসিক বিশৃঙ্খলা মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক উপাদানের ব্যালেন্সের অভাবে হয় - এই থিওরিটি একটি বিশ্বাস মাত্র, এখনো একে প্রমান করা যায় নি।

    ৫। বহু ক্ষেত্রেই, মানসিক রোগের উৎস মানুষের মাথার মধ্যে নয়।

    মুখবন্ধ

    রেসিজম কি আজও জীবিত?

    মার্কিন দেশে সাদা অধ্যুষিত অঞ্চলে সাদাদের তুলনায় কালো ও হিস্প্যানিক বাচ্চাদের গায়ে 'লার্নিং ডিস্যাবল্ড' এর তকমা খুব সহজে এঁটে দেওয়া হয়। লাখ লাখ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশুদের সেই 'রোগ' এর চিকিৎসা হয় মাইন্ড অল্টারিং ওষুধের মাধ্যমে। এই বাচ্চাদেরই ছোটো বয়সে সময় থাকতে ঠিকভাবে লেখাপড়া শেখালে সংখ্যাটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত নীচে নাবিয়ে আনা সম্ভব। কালো ও হিস্প্যানিকরা তাদের সংখ্যার তুলনায় আমেরিকার জেলেও অনেক বেশি পরিমানে উপস্থিত। ব্রিটেনে কালো লোকেদের সাদাদের তুলনায় ১০ গুন বেশি চান্স আছে স্কিৎজোফ্রিনিক হিসাবে চিহ্নিত হবার। শুধু তাই নয়, তাদের রোগের ওষুধ এর মাত্রাও তুলনামূলকভাবে অনেক অতিরিক্ত। সাধারন (সাদা) লোকদের থেকে তাদের হাই ভোল্টেজ (মাথার মধ্য দিয়ে ৪০০ ভোল্ট) ইলেকট্রিক শকের ট্রিটমেন্ট, শারীরিক ও রাসায়নিক রেস্ট্রেইন্ট দেবারও সম্ভাবনা বেশি।

    সারা পৃথিবীতে মাইনরিটির ওপর অত্যাচার ঘটে চলেছে। তার ফলাফল দেখা যাচ্ছে গরিবিয়ানায়, বিচ্ছিন্ন পরিবারে, নষ্ট যৌবনে ও গনহত্যায়। আমাদের ধর্মীয় গুরুরা, আমাদের রাজনীতির দাদারা এ নিয়ে যতই ভালো ভালো কথা বলুন না কেন, রেসিজম খুব ভালো মতই সারা পৃথিবীতে বিদ্যমান।

    কিন্তু কেন?

    এর উত্তর খুব কঠিন। কিন্তু সেটি জানার জন্য প্রথমেই যে প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে, তা হলো - কারা?
    দুটি সম্প্রদায়, যাদের কেউ এতদিন বিশেষ সন্দেহ করেনি। এরা বছরের পর বছর অ্যাক্টিভ ভাবে মানুষকে প্রতারিত করেছে এবং সারা পৃথিবী জুড়ে রেসিজমের বীজ বপন করেছে। নাৎসী হলোকস্ট, দক্ষিন আফ্রিকার অ্যাপারথেড ও অজস্র শিশুকে ক্ষতিকর ড্রাগের মাধ্যমে অপাহিজ করে দেবার পেছনে এরা সরাসরি লিপ্ত। সম্প্রদায়দুটি সাইকয়াট্রি ও সাইকোলজি।

    ১৯৮৩ সালে ওয়ার্লড হেলথ অর্গানাইজেশানের রিপোর্ট জানায় যে দক্ষিন আফ্রিকায় মানুষের প্রতি মানুষের বিদ্বেষ তৈরিতে সাইকিয়াট্রির মতো ভয়ানক ভূমিকা আর কোনো ডাক্তারির শাখা পালন করে নি। ১৯৯৯ সালে ডাক্তার এস.পি. শশীধরন জানান যে একমাত্র পুলিশি ব্যাবস্থা সাইকিয়াট্রির সাথে তুলনীয়। এর মাধ্যমে ব্রিটেনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ডিসক্রিমিনেশান পলিসি সরাসরি রূপ পেয়েছে। ২০০১ সালে ড: ক্যারেন রেন ও প্রফেসার পল বয়েল জানান যে ইউরোপে সাইকিয়াট্রির মাধ্যমে সায়েন্টিফিক রেসিজম শুধুমাত্র ঐতিহাসিকভাবেই নয়, বর্তমানেও যথেষ্ট পরিমানে রয়েছে।

    সিটিজেনস কমিশন অন হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনালের আইজ্যাক হেইস জানাচ্ছেন যে এইসব সাইকিয়াট্রিক প্রোগ্রাম এবং ওষুধের মাধ্যমে শহরের গরীব কালোদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্রিমিনাল বানিয়ে দিতে মদত দেওয়া হয়েছে। এদের রেসিস্ট বিশ্বাস ও কার্যকলাপ একসময়ে নাৎসী হলোকস্ট, পরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আদি অধিবাসীদের, এবং এই মুহূর্তে কালো আফ্রিকানদের বিশ্বজুড়ে দমন করছে।

    এই রিপোর্টের মূল উদ্দ্যেশ্য এই ধরনের রেসিজমের ব্যাপারে মানুষজনকে অবগত করা। একদিন এভাবেই আমরা এই ভয়ানক প্রথাকে জয় করব ও সকলে মিলেমিশে এই পৃথিবীতে আনন্দে থাকতে পারবো।

    য়ান ইস্টগেট
    প্রেসিডেন্ট, সিটিজেনস কমিশান
    অন হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল

    প্রথম অধ্যায়
    বৈজ্ঞানিক রেসিজমের ইতিহাস

    'চাবকে সিধে করা'। এটি ড্রপেটোম্যানিয়া নামক মানসিক রোগের ওষুধ। ড্রপেটিস শব্দের অর্থ হলো পালিয়ে যাওয়া ক্রীতদাস। ক্রীতদাসের পালানোর এই অদ্ভুত রোগ ১৮৫১ সালে লুইসিয়ানায় আবিষ্কৃত হয়।

    ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রান্সিস গ্যাল্টন নামে এক ইংরেজ সাইকোলাজিস্ট ইউজেনিকস বলে একটি শব্দের সৃষ্টি করেন। এটি গ্রীক শব্দ ইউজিন থেকে নেওয়া যার মানে হলো গুড স্টক, বা ভালো কোয়ালিটির মাল। উনি মনে করতেন যে রেসিয়ালি সুপিরিয়ার জাতির বাচ্চা হওয়া এবং ইনফিরিয়ার জাতির না হওয়া বিশ্বের পক্ষে মঙ্গলকর। গ্যাল্টন নিজেকে উন্নত ও আফ্রিকানদের অনুন্নত জাতির আওতায় ফেলেন এবং দু বছর আফ্রিকায় কাটিয়ে ট্রপিকাল সাউথ আফ্রিকা বলে একটি বই লেখেন। তিনি বলেন যে এইসব বন্যগুলো আপনে আপ দাস হতে চায়। এদের নিজেদের কোনো স্বাধীনতার কনসেপ্টই নেই। যেভাবে একটি স্পেনিয়েল তারপ্রভুকে ফলো করে, এদের অবস্থাও ঠিক তাই। একটি সাধারন নিগ্রোর বুদ্ধিবৃত্তি 'আমাদের' অপেক্ষা দুই দাগ নীচে। যেহেতু সব মানুষ সমান নয়, সেই হেতু এই অনুন্নত জাতিদের চ্যারিটি করা যেতে পারে কেবলমাত্র যদি তারা সন্তান উৎপাদনে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। গ্যাল্টনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বিখ্যাত চার্লস ডারউইন বলেন পশুদের যখন পাল খাওয়ানো হয় তখন কেউ বোকার মতো খারাপ প্রানীগুলোকে দিয়ে পরের প্রজনন বানায় না। মানুষের ক্ষেত্রেও সেই একই জিনিস সত্য।

    এর অনেক পরে, নাৎসী সাইকিয়াট্রিস্ট ও আমেরিকার মেন্টাল হেলথ মুভমেন্ট এই আইডিয়াগুলোকেই সরাসরি ব্যবহার করে। তবে প্রথমে তারা এগুলোকে ক্রীতদাস প্রথা জাস্টিফাই করতে ও পরে অভিবাসী নীতিতে কাজে লাগায়। ইউজেনিকস তত্ত্ব অনুযায়ী ইটালি, গ্রীস, হাঙ্গেরী ও অন্যান্য দক্ষিনপূর্ব দেশের লোকজনের শরীরে এক ধরনের জীবানু আছে যা তাদের চুরি, অপহরন, দাঙ্গা, খুন, ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন অপরাধে প্রবৃত্ত করে।

    একই ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমেরিকায় কালোদের নিম্নস্তরের জীব হিসাবে প্রমাণের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হতো। ১৭৯৭ সালে বেনজামিন রাশ (আমেরিকার সাইকয়াট্রির ফাদার ফিগার) ঘোষনা করেন যে কালোদের চামড়ার রঙ নেগ্রিচুড নামক একটি রেয়ার ও বংশগত কুষ্ঠজাতীয় রোগের জন্য ঘটে থাকে। এই রোগের একমাত্র উপশম হলো চামড়া সাদা করা ও সেই রোগের ছোঁয়াচের হাত থেকে বাঁচার উপায় সাদা ও কালোদের আলাদা থাকা।

    সেই উনবিংশ শতাব্দীতে যারা এই স্টেটগুলোয় থাকতো বা যে সব ক্রীতদাস জনসমক্ষে স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করতো তাদের অনেককেই উন্মাদ হিসাবে ধরে নেবার হাই চান্স ছিলো। ১৮৪০ সালের মার্কিন আদমসুমারি অনুযায়ী উত্তরের নিগ্রোদের মধ্যে পাগলামো দক্ষিনের তুলনায় ১১ গুন বেশি ছিলো। অচিরেই দেখা যায় যে এই তথ্য বাড়িয়ে বলা, কিন্তু তার মধ্যেই দক্ষিনের রাজনীতিকরা ব্যাখ্যা করেন যে দক্ষিনে কম সংখ্যক কালো পাগল থাকার অর্থ যে দাসত্ত্ব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যর পক্ষে ভালো।

    সেনেটার জন ক্যালহুন দাসপ্রথার গুরুত্ত্ব বুঝিয়ে বলেন। আফ্রিকানরা নিজেদের দায়িত্ব নিতে অসমর্থ এবং স্বাধীনতার বোঝা তাদের উন্মাদনার দিকে ঠেলে দেয়। দয়া করে তাদের অভিভাকত নিয়ে তাদেরকে মানসিক মৃত্যুর হাত থেকে আমরা বাঁচাচ্ছি।

    ১৮৫১ সালে ইউজেনিকসের বিখ্যাত ডাক্তার স্যামুয়েল কার্টরাইট দুটি বিশেষ রোগ আবিষ্কার করেন যা নিগ্রোদের মধ্যেই দেখা যায়। একটির বিষয়ে এই অধ্যায়ের শুরুতেই বলা হয়েছে। অপরটির নাম ডিসেস্থেসিয়া ইথিওপিস। এই রোগটি শরীর ও মন উভয়কেই প্রভাবিত করে। রোগের লক্ষনগুলির মধ্যে অবাধ্যতা, উদ্ধতভাবে কথার উত্তর দেওয়া ও কর্মবিমুখতা প্রধান। এর উপশম কঠিন কায়িক শ্রমের মাধ্যমে ঘটানো সম্ভব। কার্টরাইটের কথা অনুযায়ী, সাদা চামড়ার মানুষের অলস নিগ্রোদের ব্যায়াম করানোর ন্যায়সঙ্গত ও বাধ্যতামূলক অধিকার আছে। এতে তাদের ফুসফুস সক্রিয় হয় এবং পরিষ্কার রক্ত মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হয়ে তাদের 'লিবার্টি অফ দা মাইন্ড' দেয়।

    ১৮৭৯ খ্রীষ্টাব্দে জার্মান সাইকোলজিস্ট উইলহেলম উন্ডট লাইপজিগ ইউনিভার্সিটি থেকে জানালেন যে মানুষের 'সোল'-এর কোনো অস্তিত্ত্ব নেই কারন তা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের মাধ্যমে মাপা যায় না। এর ফলে মানুষ হঠাৎ করেই আর পাঁচটা জন্তুর সমান হয়ে গেলো যাকে পাভলভের কুকুরের মতো খুব সহজেই বশে আনা যায়। ১৮৯৫ তে বেরোলো সুইস জার্মান সাইকিয়াট্রিস্ট আলউড প্লোটজের বই দা ফিটনেস অফ আওয়ার রেস অ্যান্ড দা প্রোটেকশান অফ দা উইক । র‌্যাসেনহাইজিন, বা রেসিয়াল হাইজিন বলে একটি নতুন তত্ত্ব এই বইতে পাওয়া গেলো। দুর্বল লোকেদের চিকিৎসার অপ্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধেও অনেক কথা এতে ছিলো। পরে হিটলার এবং নাৎসীরা তাদের সময়ে কে দুর্বল ও তাদের নিয়ে কি করা উচিত তা নির্ণয় করতে গিয়ে এই থিওরির সাহায্য পান। প্লোটজ ও তাঁর সঙ্গীদের এই কাজ শুধু নাৎসী রাষ্ট্রে নয়, সারা পৃথিবীতে রেসিজমের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ভয়াবহ 'গবেষনা'র কিছু ফলাফল দেখা যাক - উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্ট-দের কিছু উক্তি :

    ইউজেনিক থিওরি অনুযায়ী কালো ও সাদাদের বৈবাহিক সম্পর্ক যেভাবে সম্ভব পরিহার করা উচিত। কালো (কালার্ড) মানুষদের সাদাদের মতো কর্মশক্তি বা অধ্যবসায় কোনোটাই নেই।
    ১৯১৮ সালে আমেরিকান পল পোপেনো দাবি করেন যে কালোদের আই কিউ তাদের শরীরে উপস্থিত সাদা রক্তের পরিমানের ওপর নির্ভরশীল। চামড়ার রঙ যত ফিকে হয়, আই কিউ তত বাড়ে।
    নিগ্রো বাচ্চারা বয়:সন্ধি পর্যন্ত মানসিকভাবে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। এই সময় হঠাৎ করে তার বৃদ্ধি থেমে যায়, অনেক সময় কমেও যায়। তার মনের অন্তরতম স্তরে শিক্ষা কখনোই পৌঁছোতে পারে না।
    জে টি ডানস্টন (ব্রিটিশ সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাউথ আফ্রিকার কমিশনার অফ মেন্টাল হাইজিন) ১৯২৩ সালে দাবি করেন যে নেটিবরা, এমনকি সেরা উপজাতিগুলোও মানসিকভাবে আমাদের থেকে নিকৃষ্ট। এর কারন হলো যে তাদের সময় সম্বন্ধে ধারনা খুব কম। তাদের কত বয়েস সেটুকুও তারা বলতে পারে না। এমনকি তাদের নাচ - যা নিয়ে তারা এত গর্বিত, তাতেও কোনো লালিত্য দেখতে পাওয়া যায় না।

    অস্ট্রেলিয়াতে কিন্তু জেনোসাইড একটু আলাদাভাবে সংঘটিত হয়েছিলো। মিশ্র বাচ্চাদেরকে (সাধারনত: নেটিভ মা ও সাদা বাবা) তাদের মায়ের থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো এবং গবর্মেন্টের কাছে সাদাদের সঙ্গে রাখা হতো। তাকে তার নিজের ইতিহাস বা সংস্কৃতি বিষয়ে কোনোকিছু জানতে দেওয়া হত না। ১৯২১ সালে অ্যাবরিজিন স্টেট বোর্ড জানায় যে এই নীতির মাধ্যমে অচিরেই 'অ্যাবরিজিন প্রবলেম' এর সমাধান হবে। এভাবে পুরোপুরি নেটিভদের আস্তে আস্তে সে দেশের ম্যাপ থেকে পুরোপুরি মুছে দেবার চেষ্টা করা হয়েছিলো। এদের আলাদা করে রাখার প্রধান কারন দেওয়া হতো যে নেটিভদের আত্মসংযম নেই, খারাপ ও ভালোর তফাত তারা করতে পারে না। তাই তাদের রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য এবং দুষ্টুমি করলে তাদের চাবুক মেরে শাসন করাও অত্যন্ত জরুরি।

    পরে এই নিয়ে যখন তদন্ত হয় তখন একজনের থেকে জানা যায় - আমাদের বলা হতো যে আমাদের মা মদ্যপ, বেশ্যা, এবং আমাদের ব্যাপারে সে আদৌ চিন্তিত নয়। বড়ো হলে তাই আমাদেরও বেশ্যা হয়ে যাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলে এখন থেকেই খুব সাবধানে থাকতে হবে। আমরা সাদা হলে আমাদের দেহে এই নোংরাগুলো থাকতো না, আমাদের গায়ের চামড়ার সাথে এগুলো জন্মসূত্রে চলে এসেছে।

    আমেরিকার ও ক্যানাডার নেটিভ, নিউজিল্যান্ডের মাওরি এবং অন্যান্য কালো লোক, জার্মানীতে ইহুদি ও জিপসিদের একইরকম নিকৃষ্ট মনে করা হতো। ২০০২ সালে নেটিভ আমেরিকান স্যান্ডি হোয়াইটকে ৩০ বছর আগে তাঁর আসল বাবা-মার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওনার জবানিতে - আমাকে বলা হয় যে আমি যেখান থেকে এসেছি তারা ভয়ঙ্কর, বন্য ও হীদেন। বয়:সন্ধির সময়ে আমাকে বার বার বলা হতো নেটিভদের মতো বেড়ে উঠো না।

    আইকিউ টেস্টের মাধ্যমে রেসিস্ট থিওরিগুলোকে প্রোমোট করা হয়। ১৯৫০ এ সাইকোলজিস্ট লিউইস টার্মান একটি এক্সপার্ট আইকিউ টেস্ট তৈরি করেন। সেই গবেষনা থেকে জানা যায় যে গরীব বাচ্চাদের পড়াশুনা শেখানো সম্ভব নয়। সুতরাং মেক্সিকান, নেটিব ইন্ডিয়ান এবং কালোদের বাচ্চাকাচ্চা হওয়া যেভাবে সম্ভব বন্ধ করতে হবে। একই আইকিউ টেস্টের মাধ্যমে ইটালিয়ান ও পোলিশদের আমেরিকা এসে আমেরিকান রক্ত নোংরা করা বন্ধ করার কাজে ব্যবহার হতো। মার্গারেট স্যানজার এই সময় প্ল্যানড পেরেন্টহুড অফ আমেরিকা বলে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। রেসিয়ালি আমেরিকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উনি নিগ্রোদের সংঘবদ্ধ নাসবন্দী ঘটানোর পরামর্শ দেন। এই কাজে কালোদের উৎসাহিত করতে কিছু কালো মিনিস্টারদের (চার্চওয়ালা) প্রয়োজন আছে বলে তিনি বোধ করেন। একই চামড়ার রঙ হবার কারনে তারা তাদের জাতভাইদের বোঝাতে পারবে যে গরিবিয়ানা ঘোচানোর একমাত্র উপায় বাচ্চা তৈরি না করা। এইভাবে কালোদের কাছে ধর্মীয়ভাবে পৌঁছোনোটাই সবথেকে যুক্তিযুক্ত।

    ১৯৯৪ সালে চার্লস মারে ও রিচার্ড হার্নস্টাইনের লেখা বই দা বেল কার্ভ দাবি করেছে যে কালো ও হিস্প্যানিকরা সাদাদের তুলনায় আইকিউ টেস্টে পিছিয়ে। তারা জিনগতভাবে অক্ষম এবং আধুনিক সভ্যতার চাহিদার পক্ষে অনুপযুক্ত। আমেরিকানরা প্রতি প্রজননে আগের তুলনায় বোকা হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র উপায় হলো সিলেক্টিভ ব্রিডিং।

    এইভাবে সাইকোলজি ও সাইকয়াট্রি বিভিন্ন রেসিয়াল রোগ আবিষ্কার করেছে, আইকিউ মেপেছে, উৎকৃষ্টতা নির্ধারন করেছে এবং উনবিংশ, বিংশ ও একবিংশ শতাব্দী ধরে রেসিজমকে বৈধ করে তুলেছে।

    দ্বিতীয় অধ্যায়
    আধুনিক জেনোসাইডের শেকড়

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহু আগেই জার্মান সাইকয়াট্রিস্টরা রেসিজমের ওপর ভিত্তি করে ইউথেনেসিয়ার পরিকল্পনা করেন। প্লোটজ ও রুডিন ১৯০৯ সালে যে জার্মান সোসাইটি ফর রেসিয়াল হাইজিন শুরু করেন তাতে নিকৃষ্টকে নিশ্চিহ্ন করার আইডিয়াটিকে চিকিৎসাপদ্ধতি হিসাবে গন্য করা হয়। নাৎসীরা ক্ষমতায় আসার আগে ১৯১১-২২ এর মধ্যে রুডিন বলেই দিয়েছিলেন যে প্রতিটি দেশকে তাদের মধ্যে বিপুল পরিমানে পঙ্গু, অথর্ব, অসুস্থ ও পিছিয়ে পড়া লোক নিয়ে চলতে হয়। একমাত্র বাছাই করে নাসবন্দী করলে যদি বা এর প্রতিকার হয়। ১৯২০ নাগাদ আলউড হোশে ও কার্ল বাইন্ডিং (ইনি ভবিষ্যাতে নাৎসী রাইখের প্রধান বিচারপতি হন) একটি বইয়ে মানসিক প্রতিবন্ধীদের মেরে ফেলার সুপারিশ করেন কারন তাদের অনুপস্থিতি একমাত্র তাদের পরিবার ছাড়া আর কেউ অনুভব করবে না। তাঁরা বলেন যে এটি খুন নয়, বরং অত্যন্ত সদয় চিকিৎসাপদ্ধতি। ওই একই সময় ইউজিন ফিশার নিগ্রোদের নিশ্চিহ্ন করার ডাক দেন। জানা যায় যে নিগ্রোরা পরিশ্রমের টুকটাক কাজ ছাড়া আর কোনোরকমভাবে চাকরি পাবার যোগ্য নয়। নিগ্রোরা ঠিক বুদ্ধিমান যে সেন্সে বলা হয়, সে সেন্সে নয়, তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা নেই ও তাদের কল্পনাশক্তি খুব দুর্বল। সে কারনে এদের মধ্যে কোনো সহজাত শিল্প গড়ে ওঠে নি, কোনো বিস্তৃত মহাকাব্য তৈরি হয় নি। ১৯৩৯ সালে ফিশার তাঁর ছাত্রদের লেকচার দিতেন - আমি সমস্ত ইহুদীদের নিকৃষ্ট মনে করি না, যা নিগ্রোদের ক্ষেত্রে করি।

    অন্যদিকে রুডিনের লেখা স্টেরিলাইজেশান অ্যাক্ট অনুযায়ী (সমস্ত ইহুদী ও কালো চামড়ার মানুষদের সন্তানধারনে অক্ষম করে দেওয়া) ৩৫০০০০ অনুপযুক্ত জার্মানদের বিরূদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রথম গ্যাস এক্সপেরিমেন্ট হয় ব্র্যান্ডেনবুর্গে - ১৯৪০ সালে ১৮ জন রোগীকে সাইকোলজিস্ট ও বাকি স্টাফদের সামনে মেরে ফেলা হয়েছিল। এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাটি সফল হওয়ায় তাকে বড়ো মাপে আনা হয় ও ৩০০০০০ মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষকে (সারা জার্মানীর মানসিক রোগীদের ৯৪ শতাংশ) হত্যা করা হয়। রুডিন এই গনহত্যার নায়ক হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯০ সালে ইউএস ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর রিসার্চ অন স্কিৎজোফিনিয়া অ্যান্ড ডিপ্রেশান রুডিনকে সাইকিয়াট্রিক জেনেটিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে অভিষিক্ত করে। নুরেমবার্গ ট্রায়ালে খুব কম সাইকিয়াট্রিস্টের বিচার হয়। বেশিরভাগই বিচার এড়িয়ে যুদ্ধের পর আবার আপন আপন চেম্বারে ফিরে যান।

    সাইকোলজি সাইকিয়াট্রি অ্যাপারথেডের সম্পর্ক বহুদিনের। সাউথ আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রী হেনড্রিক ভেরোয়ার্ড নাৎসী পরিবেশে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার তিনি দেশে ফিরে ঘটান। ১৮২৮ খ্রীষ্টাব্দে কার্নেগি ফাউন্ডেশানের সাহায্যে একটি তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে সে দেশের সাদাদের মধ্যে গরিবির কারন হিসাবে কালোদের উপস্থিতিকে দেখানো হয়। ভেরোয়ার্ড জানান, বহুদিন ধরে নীচু জাতির লোকের সাথে থাকতে থাকতে ইউরোপিয়দের ওপর খুব খারাপ প্রভাব পড়েছে। ইউরোপিয় সমাজে একটি নির্দিষ্ট লেভেলের বেশি উঁচু কাজে কালোদের রাখার কোনো প্রয়োজন নেই কারন সে ধরনের কাজ করার জন্য যে শিক্ষার প্রয়োজন আছে, তা নিগ্রোদের পক্ষে কখনই গ্রহন করা সম্ভবপর নয়। ওনার বৈষম্যমূলক আইনের মধ্যে জার্মান রেসিয়াল পিউরিটি ল এর ছাপ খুব পরিষ্কার। ১৯৪৩, সেপ্টেম্বর মাসে ভেরোয়ার্ড আরো বলেন, যে এই আইনের মাধ্যমে সাদা ও কালোদের অসমান রেখে নেটিবদের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে। কারন সেক্ষেত্রে সেই নিগ্রো নিজের মত বিকশিত হবার সুযোগ পাচ্ছে, তার আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হচ্ছে। তাকে পদে পদে অকৃতকার্যভাবে সাদা জনসংখ্যার অনুকরন করে যেতে হচ্ছে না। যদি কালোদের নিজেদের শিক্ষিত করে ত¥লতে দেওয়া হয়, অধিক মাহিনা দেওয়া হয় এবং সাদা সাউথ আফ্রিকায় আরো সুজোগ করে দেওয়া হয় তবে দেশটা একেবারে শেষ হয়ে যাবে।

    কালোদের শিক্ষাক্ষেত্রে এ সময় সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করে রাখা হয় এবং সাইকোলজিস্ট এম. এল ফিক কিছু বুদ্ধি মাপার টেস্ট তৈরি করেন যাতে প্রমান হয় যে কালোদের শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবই নীচু মানের। বেকারি ও দারিদ্র্যের জ্বালায় যখন লক্ষ লক্ষ লোক জর্জরিত, সে সময় যে কোনো প্রতিবাদকে, প্রতিবাদীকে মানসিকভাবে অসুস্থ ঘোষনা করা শুরু হয়। তিরিশ বছর ধরে বেশ কিছু সাইকয়াট্রিক প্রতিষ্ঠান চলে গবর্মেন্ট ও প্রাইভেট কোম্পানী স্মিথ মিচেলের সহায়তায়। এদের কাজ ছিলো কালো লোকদের মানসিক চিকিৎসা এবং ৯০% বেড ভর্তি করার আশ্বাস স্বয়ং সরকার সে সময়ে তাদের দেয়।

    হাজার হাজার মানুষকে আটকে রাখা হয়, তাদের অতিরিক্ত ওষুধ দিয়ে ঝিমিয়ে ফেলা হয় ও অ্যানেস্থেশিয়া না করেই যন্ত্রনাদায়ক ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। কালোদের ওপর প্রয়োগ করার পক্ষে অ্যানেস্থেশিয়াকে অতিরিক্ত ব্যয়বহুল স্থির করা হয়েছিলো সে সময়। এদের রোগ সারাবার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল থেরাপির ব্যবস্থা করা হয় এবং বিভিন্ন কোম্পানী তাদের বিনা মাইনের শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করে। হিউম্যান রাইটস কমিশান ১৯৭৪ এ যখন এই ঘটনাটিকে সকলের সামনে আনে, তখনকার সরকার তাদের কোনো মানসিক হাসপাতালের ওপর রিপোর্ট বা ফটো তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ১৯৭৭ সালে ওয়ার্লড হেলথ অরগ্যানাইজেশান আবার এ বিষয়ে তদন্ত করে। ১৯৮৩ সালে তদন্ত শেষে জানা যায় যে এই হাসপাতালের মতো আর কোনো হাসপাতাল পৃথিবীর ইতিহাসে ছিলো বা আছে বলে জানা নেই। একমাত্র ক্রীতদাসপ্রথার সাথে এর কোনো রকম তুলনা করা যেতে পারে।

    এই তদন্ত থেকে আরেকটি ভয়ানক ঘটনা উঠে আসে। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়েসী বহু কালো মানুষকে বিছানায় পড়ে পড়ে রোগশয্যায় সুচিন্তিতভাবে মরে যেতে দেওয়া হয়েছিলো। ১৯৯৭ সালে দক্ষিন আফ্রিকার সাইকোলজোকাল সোসাইটি শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে যে কালোদেরকে নিকৃষ্ট প্রমান করার লক্ষ্যে মনোবিজ্ঞানকে কাজে লাগানো হয়। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের দায়িত্ত্ব এ বিষয়ে অস্বীকার করে ও অ্যাপারথেড সরকারকে বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে।

    সংখ্যালঘুদের ওপর মানসিক চিকিৎসার নামে পৃথিবীতে বর্বরতম কাজ ঘটানো হয়েছে। ১৯৫০ সালে নিউ ওরলিন্সে কালো বন্দীদের মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড ঢুকিয়ে রেখে দেওয়া হয়। নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট হিথ ও হ্যারি বেইলি। বেইলি পরে নার্সদের ক্লাস নিতে গিয়ে বড়ো মুখ করে বলেছিলেন যে নিগ্রোদের ওপর পরীক্ষা করা বেড়ালের ওপর করার থেকেও সস্তা কারন এদের প্রায় সর্বত্রই খুব সহজে পাওয়া যায়। হিথ অন্যদিকে সিআইএ-র হয়ে এলএসডি ও বুলবোক্যাপনিন এর ডোজ দিয়ে গোপনে লুইজিয়ানায় বন্দীদের ওপর আরো কিছু পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় সফল বন্দীদের কথা বলার, যন্ত্রনা অনুভব করার ক্ষমতা, ইচ্ছাশক্তি ও স্মৃতি লোপ পেত। ১৯৫০ এর মাঝামাঝি কেন্টাকিতে এনআইএমএইচ অ্যাডিকশান রিসার্চ সেন্টারে ড্রাগ আসক্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের এলএসডি দেওয়ার ফলে অনেকে পর পর ৭৭ দিন হ্যালুসিনেট করেছিলো। ওই একই জায়গায় ষাটের দশকে সুস্থ আফ্রিকান আমেরিকানদের যুদ্ধের কাজে লাগানোর জন্য আবিষ্কৃত আরো একটি ড্রাগ বি.জেড প্রয়োগ করা হয়। এর শক্তি এলএসডির ১০০ গুন বেশি ছিলো।

    সত্তরের দশকে এনআইএমএইচ গোপনে কালো ও হিসপ্যানিকদের ওপর এক অতি ন্যক্কারজনক পরীক্ষা করে। লস অ্যানজেলেসে সেই সময় ওয়াটস বলে একটি কালো অধ্যুষিত এলাকায় রায়ট হয়। তখন ইউসিএলএ (ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যানজেলেস)-র নিউরোসাইকিয়াট্রিক ইনস্টিটিউট এই ঘটনাকে জিনগত প্রভাব হিসাবে ব্যাখ্যা করে। মাথায় অপারেশান করা ও খোজা করে দেওয়ার মাধ্যমে এইসব হিংস্র লোকজনকে রোগমুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। ডেট্রয়েটে লাফায়েত ক্লিনিক ঐ অশিক্ষিত দাঙ্গাবাজদের সাথে উন্মত্ত ষাঁড়ের তুলনা করে।

    কালোদের এভাবে জানোয়ারের পর্যায়ে টাইপকাস্ট করা এখনও হয়ে চলেছে। ১৯৯২ সালে এনআইএমএইচএর ডিরেক্টার ফ্রেডরিক গুডউইন গরীব কালোদের আক্রমনশীল উগ্র যৌন ক্ষুধায় ভরপুর জংলি বাঁদর বলে বর্ণনা করেন। ঐ একই প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলেদের ওপর আরও পরীক্ষা করে যার বিষয়বস্তু ছিল আফ্রিকান ও হিস্পানিকরা যে জিনের কারনে দাঙ্গাপরায়ন, তাকে খুঁজে বের করা। এবং অবশ্যই তার ওষুধ আবিষ্কার। কালো তরুনদের চিহ্নিত করে, তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে ওষুধের ওপর রেখে দেওয়া হতো। এখনও আমেরিকায় সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্টরা নির্লজ্জভাবে আরো বেশি তহবিল তাদের গবেষনায় চান কারন আফ্রিকান আমেরিকান, নেটিব ও হিস্প্যানিকরা তাদের সংখ্যার তুলনায় মানসিকভাবে অসুস্থদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমানে রয়েছে। আগে চাবুক মেরে শেষ করা হতো। এখন তার জাগা নিয়েছে অপারেশান, শক এবং মনোরোগের ওষুধ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ধীরে ধীরে আইনসম্মত ড্রাগের বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা নতুন মাদকাসক্ত প্রজনন বেড়ে উঠছে। তার সাথে বাড়ছে অপরাধ, অশিক্ষা ও বেকারত্ব। একটা গোটা জাতিকে অত্যাচার করা হচ্ছে, তারা যখন প্রতিবাদ করছে তখন তাদের মানসিকভাবে অসুস্থ বলে তাদের গায়ে লেবেল মেরে দেওয়া হচ্ছে।

    অক্টোবর ৩০, ১৯৯৮ - ডেভিড রকি বেনেট - বয়েস ৩৮ - গায়ের রঙ কালো - জাত আফ্রিকান ক্যারিবিয়ান - বাস ইংল্যান্ড। একটি সাইকিয়াট্রিক ওয়ার্ড এ ফোন করা নিয়ে তাঁর সাথে একটি সাদা চামড়ার লোকের ঝগড়া হয়। সেখানকার কর্মীরা বেনেটকে দোষী সাব্যস্ত করলে উনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তারা তাঁকে মাটিতে ২৫ মিনিট মুখের ওপর ফেলে রাখে। বেনেট চিৎকার করেন - আমাকে ছেড়ে দাও, আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না, গলার থেকে ..... আমাকে এরা মেরে ফেলছে। কেউ তার কথায় আমল দেয় নি। তিনি ওখানে ঐ অবস্থায় মারা যান। ২০০১ সালে তদন্তের রায়ে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু বলে একে খারিজ করা হয়। বেনেটের পরিবার এই রায়ের বিরূদ্ধে লড়েও ২০০৪ সালে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় সংঘবদ্ধ রেসিজমকে মানুষের সামনে নিয়ে আসে। সার জন ব্লোফিল্ড, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত জজ বলেন যে কালো লোকজনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস সম্বন্ধে একটা ভীতি আছে। মানসিক চিকিৎসার লোক হলেই তারা ওদের বহুদিন আটকে রেখে দেবে, কখনো কখনো সারা জীবন আটকে রেখে দেবে। এমন ভয়ানক ওষুধ তার ওপর চিকিৎসার নামে ব্যবহৃত হবে, যে তারা মরেও যেতে পারে।

    ডেজমন্ড ম্যাকলীনকে ১৪ বছর বয়সে ধর্ষন করা হয়। এ নিয়ে সে বাড়িতে কিছুই বলতে চাইতো না এবং তার পরিবার খুব চিন্তিত হয়ে পড়ছিলো। ঘরে তার আচরন কিছু উগ্র হয়ে পরলে তাকে অ্যাডাল্ট ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। যখনি সে কোনো ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করতো, সঙ্গে সঙ্গে চার পাঁচজন তার ওপর লাফিয়ে পড়ে প্যান্ট নাবিয়ে দিয়ে পেছনে একটা ছুঁচ গুঁজে দিত।

    ডেজমন্ডের জবানি অনুযায়ী - হাতে একটা ছুঁচ থাকায় ওরা মানুষের আবেগের ওপর অনেকটা কন্ট্রোল পেয়ে যায়। যখনি কোনো কালো লোকের কোনো মানসিক অসুবিধা হয়, তাকে পত্রপাঠ স্কিৎজোফ্রিনিক বা সাইকোটিক বানিয়ে দেওয়া হয়। এর একটা বড় কারন এই যে ওরা জানে না আমরা কোথা থেকে আসছি এবং আমরা কিভাবে আমাদের হতাশার বহি:প্রকাশ ঘটাই।

    ইউএস প্রেসিডেন্টস কমিশন ফর হিউম্যান এক্সেলেন্স জানাচ্ছে স্পেশাল এডুকেশান বিভাগে ৪০ শতাংশ শিশুকে ভুল করে পিছিয়ে পড়া মনে করা হয়েছিলো। তারা পড়তে পারত না কারন তাদের পড়তেই কেউ শেখায় নি। স্পেশাল এডুকেশান একধরনের গোপন সাইকিয়াট্রিক রেসিজম যার মাধ্যমে সংখ্যালঘু বাচ্চাদের বিভিন্ন মাদকে আসক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। যেসব বাচ্চা অ্যামফিটামিন বা অন্য মনোরোগের ওষুধ নেয় তারা পড়াশুনায় ভালো করে না। বয়:সন্ধির সময় যাদের সাইকিয়াট্রিক ওষুধের ওপর রাখা হয় তাদের অনেকে স্কুলে গুলি করার জন্য দায়ী। উগ্রতা, আত্মহত্যার প্রবনতাও এর সাথে থাকে।

    তৃতীয় অধ্যায়
    যেভাবে বাচ্চাদের মাদকাসক্ত করে তোলা হচ্ছে

    ২০০৩ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার গোল্ডওয়াটার ইনস্টিটিউটের পলিসি রিপোর্টে দেখা গেছে যে গরীব এবং আফ্রিকান আমেরিকান ক্লাস ফোরের বাচ্চাদের ৬০ শতাংশ ন্যূনতম মানের নীচে রয়েছে। শুধু তাই নয়, সাদা প্রধান এলাকায় স্কুলে সংখ্যালঘু বাচ্চাদের অনেক বেশি হারে পিছিয়ে পড়া শ্রেনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কালো ছাত্রছাত্রীদের সাদাদের তুলনায় তিনগুন বেশি পরিমানে মানসিকভাবে 'রিটার্ডেড' বলে ধরা হয়। কালোরা সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংখ্যায় মাত্র ১৬ শতাংশ, কিন্তু বিভিন্ন রিটার্ডেশান প্রোগ্রামে এদের সংখ্যা ৩২ শতাংশ।

    অতিরিক্ত সংখ্যায় কালোরা এই প্রোগ্রামে থাকায় একটি ঘেটোর মধ্যে আরেকটি ঘেটোর সৃষ্টি করেছে। এই সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গড়ে ও বেড়ে উঠছে অপরাধপ্রবনতা। জর্জিয়া স্টেট ইউনিবার্সিটির প্রফেসার আসা হিলিয়ার্ড বলেন - যেসব বাচ্চারা রিটার্ড নয় তাদের রিটার্ড বলা হচ্ছে, তাকে বাকিদের থেকে আলাদা করে স্পেশাল ক্লাসে দেওয়া হচ্ছে, এবং সেখানে তাকে কোনো স্পেশাল কিছুই শেখানো হচ্ছেনা। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা খুব ভয়ঙ্কর। এই বিশেষ প্রোগ্রাম ও 'ওষুধ'-এর জেরে বছরে আমেরিকায় আঠাশ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে।

    সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলাজিস্টরা এই ধরনের অ্যাবিউজের সমর্থনে আমেরিকান সাইকয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশানের লেখা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসর্ডারস বলে পুস্তিকাটি ব্যবহার করেন। প্রফেসার হার্ব কাচিনস বলে এক ভদ্রলোক এ নিয়ে মেকিং আস ক্রেজি বলে একটি বই লিখেছেন। তাঁর মতে ঐ পুস্তিকাটি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটি ক্রীতদাসপ্রথার ও জাতিবিদ্বেষের সমর্থক, এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের দমন করার জন্য একের পর এক নতুন রোগ উদ্ভাবন করে চলেছে তথা ঐ সম্প্রদায়ের মধ্যে মানসিকভাবে অসুস্থদের সংখ্যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে রিপোর্ট করছে। কোনো উপসর্গের সমষ্টিকে রোগ বলে ঐ পুস্তিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভোটের মাধ্যমে, বৈজ্ঞানিকভাবে নয়।

    উদাহরনস্বরূপ অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসর্ডার বলে রোগটির উপসর্গগুলি দেওয়া হলো :

    তারা চুপচাপ খেলাধুলা করে
    অনেক সময় অত্যন্ত বেশি কথা বলে
    জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলে
    হোমওয়ার্ক কি বাড়ির কাজ করে না
    হাত পা নিয়ে খেলাধুলা করে
    সিটে বশে তুরবুরতুরবুর করে
    ইত্যাদি ইত্যাদি

    এভাবে একটি স্বাভাবিক বাচ্চাকে মানসিক রোগী করে দেওয়া হয়। এর ওষুধ হিসাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এরকম কড়া কড়া জিনিস দেওয়া হয়। সাইকিয়াট্রিস্টরা ব্রেনের রাসায়নিক সন্তোলনের ওপর নির্ভরশীল মানসিক রোগের একটি তত্ত্ব খাড়া করেছে। কিন্তু তা প্রমান করতে পারে নি। শুধু তাই নয়, সাইকিয়াট্রিস্ট কোনো পরীক্ষা করে না। সে রোগীর কেস হিস্ট্রি শোনে ও তার ওপর বেস করে ওষুধ দেয়।

    এইধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিষয়ে প্রায় কিছুই বলা হয় না। উপরের রোগটির ক্ষেত্রে যে সব ওষুধ দেওয়া হয় তাদের বিষয়ে অল্প কথায় কিছু বলা হলো।

    মিথাইলফেনিডেট বা রিটালিন কোকেনের থেকে বেশি শক্তিশালী। এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর প্রতি আসক্তি মর্ফিন ও আফিং মতো।

    রিটালিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে রক্তচাপ ও পালস এর পরিবর্তন, অ্যানজাইনা, ওজন হ্রাস এবং বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা। উইথড্রয়াল এর সময় আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে যায়। রিটালিন খেয়ে ছাত্রদের পড়াশুনার কোনো উন্নতি হয় না।

    ২০০৩ ও ২০০৪ এ ব্রিটেনের ডাক্তাররা সিলেক্টিভ সেরাটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটার অবসাদগ্রস্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের দিতে নিষেধ করেছে। এই ধরনের অ্যান্টি ডিপ্রসেন্ট আত্মহত্যার প্রবনতা বাড়ায়। ২০০৪ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা ও ইউরোপিয়ান এজেন্সিগুলি একই মর্মে নিষেধ জারি করেছে। প্রতিক্রিয়া হিসাবে উদ্বেগ, উত্তেজনা, আতঙ্ক, অনিদ্রা, ক্রোধ ইত্যাদি বয়স নির্বিশেষে লেখা রয়েছে। ২০০৪ সেপ্টেম্বরে ঐ ধরনের ওষুধের ওপর সিগারেটের মতো 'সাবধান - আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে' লেখা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব এসেছে।

    শীলা অস এর মুখ থেকে তাঁর বাচ্চার কথা শুনুন। স্কুল থেকে আমাকে আমার মেয়ের ব্যাপারে দুটো অপশান দেয়। হয় ওষুধ দাও, নয়তো তাকে ক্লাস থেকে সরিয়ে স্পেশাল এডুকেশানের আওতায় আনো। আমি ওষুধ বেছে নেই। স্কুলের সাইকিয়াট্রিস্টরা ওষুধ দেবার পর থেকে মেয়ে হ্যালুসিনেট করতে শুরু করে, মারপিট করার প্রবনতা বেড়ে যায়, স্বার্থপর হয়ে পড়ে - হাতের বাইরে চলে যায়। আমি স্কুলে বলি যে আমি ওষুধ বন্ধ করতে চাই। কিন্তু লাভ হয় না। তারা আমার বিরূদ্ধে সরকারি এজেন্সিকে রিপোর্ট করে আমি আমার অসুস্থ মেয়ের যত্ন নেই না। কিভাবে এই পাগলামো বন্ধ করা যেতে পারে? আমার মেয়েকে আস্তে আস্তে শেষ করে দিয়ে সাইকয়াট্রিস্টরা বড়োলোক হচ্ছে।

    বিভিন্ন স্কুলে ইদানীং সাইকোলজিকাল প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হলো রাগ নিয়ন্ত্রন বা অ্যাংঙ্গার ম্যানেজমেন্ট ও অপরটি ডেথ এডুকেশান। এর ফলাফলগুলি একটু দেখা যাক।

    - অ্যাংঙ্গার ম্যানেজমেন্ট ক্লাসে এক ছাত্র আরেকজনকে এমন মার মারে যে আহত ছেলেটি ছ দিন হাসপাতালে পড়ে থাকে।
    - ডেথ এডুকেশান ক্লাসে বাচ্চাদের নিজেদের উইল ও সমাধির ওপর কি লেখা হবে এইসব লেখানো হয়।
    - আরেকটি ক্লাসে সকলকে নির্জন নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে একটা অপরাধের সীন আগে থেকেই তৈরি করে রাখা। একটি মেয়ে পুতুল টুকরো টুকরো করে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। একটা বাজারের ব্যাগে একটা কাটা হাত ও একটি রক্তে ভেসে যাওয়া করাত।
    - কিওটোর এক শিক্ষক ছাত্রদের ভায়োলেন্স নিয়ে শেখাতে চাইলেন। ছদ্মবেশে টুপি সানগ্লাস পরে একটা ২০ ইঞ্চির সলিড ডান্ডা নিয়ে ১১ বছরের বাচ্চাদের ক্লাসে ঢুকেই তাদের তাড়া করতে লাগলেন। তারা পাগলের মতো ছুটে দৌড়ে লাফিয়ে পালাতে লাগলো।
    - ৮ বছরের জোয়ি সোশাল সায়েন্স এর ক্লাস করতে গেলো। সেখানে ভিডিওতে একটা বাচ্চাকে দেখালো। তাকে স্কুলে কেউ পছন্দ করে না, সবাই ক্ষ্যাপায়। সে ভাবে আমি কবে কি করে বড়ো হবো? বাচ্চাটি গলায় দড়ি দিয়ে মরার চেষ্টা করে। ভিডিওটি দেখার দুদিন পর জোয়িকে গলায় দড়ি দিয়ে মৃত অবস্থায় তার বাংক বেডের থেকে ঝুলতে দেখা যায়।
    - কলাম্বাইন হাই স্কুল। এরিক আর ডিলান। এরিক অ্যান্টিডিপ্রসেন্ট খেতো। দুজনেই ডেথ এডুকেশানের ক্লাস করতো। তাছাড়া ওদের উগ্র ব্যবহারের জন্য কোর্ট থেকে অ্যাংগার ম্যানেজমেন্ট ক্লাসেও পাঠানো হয়।ডেথ এডুকেশান ক্লাসের একটি প্রশ্নে নিজের মৃত্যুর বর্ণনা দিতে বলা হয়েছিলো। হ্যারিস এর পর একটি স্বপ্ন দেখে যে সে আর ডিলান একটা বাজারে সবাইকে গুলি করে মেরে নিজেদের মেরে ফেলছে। এই স্বপ্নটি তারা লেখে, টিচারের হাতে দেয়, ও তাঁকে, ক্লাসের বারোজন ছাত্রকে এবং নিজেদের গুলি করে মেরে ফেলে।

    ঠিক যেভাবে রেসিয়াল প্রোফাইলিং হয়, সেভাবেই সাইকোলজিতেও স্কুলে প্রোফাইল করা হয়। বাধ্যতামূলক প্রশ্নের অন্তর্গত থাকে

    - তুমি গত ১২ মাসে কতজনের সাথে মারামারি করেছো?
    - কতবার দোকান থেকে চুরি করেছো?
    - কতবার কোকেন নিয়েছো?
    - কজন মেয়ের সাথে শুয়েছো?
    - কত ঘনঘন তোমার মানসিক অবসাদ হয়?
    - তোমার বাবা মা কতবার বলেছে তারা তোমায় ভালোবাসে?

    এরকম একের পর এক প্রশ্নের মাধ্যমে এদের হাইস্কুলে ক্যাটেগোরাইজ করা হয়। যথেষ্ট পরিমানে ঠিক উত্তর পেলে এদের আরো পরীক্ষা করা হয়। আঠারো রকম রোগের মধ্যে এদের কোনোটা তো আছে!

    চতুর্থ অধ্যায়
    একটি নতুন ভবিষ্যত

    নেলসন ম্যান্ডলা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন মানুষের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাগুলি থেকে এমন একটি সমাজ জন্ম নেবে যার জন্য সমগ্র মানবজাতি গর্বিত হতে পারবে। এই সুন্দর পৃথিবীতে আর কখোনো, কোনও দিন একের প্রতি অন্যের আক্রোশ আর থাকবে না।

    তাঁর কথাকে সত্যি করতে গেলে মানুষের প্রতি মানুষের আক্রোশকে পুরোপুরি খুঁজে বার করতে হবে। শিশুরা আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ - কালো, হিস্প্যানিক, সাদা, নেটিব, বস্তিবাসী যাই হোক। কি প্রয়োজন তাদের দারিদ্র্য, শিক্ষা, বেকারত্ব ও ভেঙে যেতে থাকা পরিবারের হাজারো অসুবিধের মধ্যে ওষুধের নাম করে বিষ ঢ¥কিয়ে দেবার? এই লড়াই মানসিক দাসত্ত্বের বিরূদ্ধে।

    ২০০৩ সালে একটি রেজোলিউশান পাশ হয়েছে যার ফলে কোনো বাচ্চাকে জোর করে মানসিক চিকিৎসায় ওষুধের প্রয়োগ করা যাবে না। যে কারনে তার কোনো অবাঞ্ছিত ব্যবহার দেখা যাচ্ছে তা খুঁজে বার করতে হবে। দেখতে হবে এর পেছনে অন্য কোনো শারীরিক অসুবিধে যুক্ত কিনা। অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসর্ডারের (এডিএইচডি) সাথে পুরোপুরি মিলে যায় এমন উপসর্গ আরো অনেক কারনে ঘটতে পারে যথা অতিরিক্ত মাত্রায় সীসা, পারদ বা কীটনাশকের শরীরে প্রবেশ অথবা অপুষ্টি।

    বাচ্চাদের সাহায্য করুন, প্রতারনা নয়

    আট বছরের মাইকেলকে যখন এডিএইচডি-র রোগী বলে ওষুধ দেওয়া শুরু হয় তার পর থেকে সে আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে ও বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে শুরু করে। মা প্যাট্রিশিয়া সময়মতো বুঝতে পারেন যে এগুলো ঐ ওষুধের জন্যই ঘটছে। অন্য এক ডাক্তারের সাহায্যে শেষে বের হয় যে মাইকেলের এক ধরনের এলার্জি আছে যার লক্ষণগুলো সব এডিএইচডি-র মতো। ধীরে ধীরে এই ওষুধগুলো থেকে ওকে বের করে আনা সম্ভব হয়, কিন্তু বহুদিন বাদে।

    রিড শ আরেকটি গল্প বলেন এই একই রোগ নিয়ে - একটি কালো তরুণ। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কোনো মেয়ের সাথে ফোনে সবথেকে বেশি কতক্ষন কথা বলেছো? সে বললো, তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা। তোমার মনে আছে কি নিয়ে কথা হয়েছিলো? - হ্যাঁ। তুমি একটানা কতক্ষন ভিডিও গেম খেলতে পারো? - একবার টানা আট ঘন্টা খেলেছিলাম। বই? বই পড়তে পারো? এই পর্যন্ত প্রশ্ন আসার পর দেখা গেলো যে সে সবই পারে, বই পড়তে ভালোবাসে - কিন্তু সবসময় সব জিনিস তার পছন্দ নয়। তার যা ইচ্ছা সেগুলোই সে পড়ে। এছাড়া ছেলেটি বাস্কেটবল খেলে। অর্থাৎ তার পক্ষে যে কোনো জিনিসেই মন:সংযোগ করা সম্ভব যদি সেটা তার ইন্টারেস্টিং লাগে।

    বাচ্চাদের মাদকাসক্ত করে দেওয়া সংখ্যালঘুদের ওপর সাইকয়াট্রির আক্রমনের একটই অংশ মাত্র। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে আমাদের সন্তানদের বিষয়ে। এই সাইকিয়াট্রি নামক জীবিকা সমাজে রেসিজমের বীজ ছড়িয়েছে, ছড়াচ্ছে এবং অর্থনৈতিক মুনাফা লুটছে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সাইকোলজি ও সাইকিয়াট্রি নামক দুটি সামাজিক বিষকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং তাদের ক্ষমতার সীমা নির্ধারন করে দেওয়া।

    পঞ্চম অধ্যায়
    কি করিতে হইবে


    ১। আপনি যদি বাচ্চার অভিভাবক হন, তবে অবশ্যই বাচ্চার স্কুলের শিক্ষকের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন যে বাচ্চাটি তার পড়া বুঝতে পারছে কি না, সে শব্দের উচ্চারন শিখছে কি না এবং শব্দের মানে জানার জন্য একটি সহজ ডিকশিনারির ব্যবহার করতে পারে কি না। কথা বলার সময় কখোনো ভাববেন না আপনি কোন 'জাত' (রেস) এর।

    ২। বাচ্চার ব্যবহারে অসংলগ্নতা দেখা গেলে এমন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান যে তার শারীরিক পরীক্ষা করে দেখবে কি কারনে এটি হচ্ছে। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবেন না।

    ৩। সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্ট রা আপনার বাচ্চাকে জোর করে আপনার থেকে সরিয়ে নিয়ে ওষুধের ওপর রাখতে পারে না। এটি রুখতে সম্ভব হলে সরাসরি উকিলের সাহায্য নিন।

    ৪। আপনার জ্ঞাতসারে কোনো সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্ট আপনার পরিজন, বন্ধু বা প্রতিবেশীর ক্ষতি করে থাকে তবে অবশ্যই পুলিশে খবর দেবেন। সেই ব্যক্তির সাথে জড়িত হাসপাতাল বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নামও তার সাথে উল্লেখ করবেন।

    ৫। আপনার মানসিক অসুবিধে হলে যার ওপর আপনি ভরসা রাখতে পারেন এমন কারুর সঙ্গে কথা বলুন। আপনার বাবা-মা, ভাই বোন, শিক্ষক, বন্ধু - যার সাথে সম্ভব। তাদের থেকে আপনি আসল সাহায্য পাবেন - সাইকোলজি ও সাইকিয়াট্রির বিশ্বাসঘাতকতা নয়।

    ৬। সাইকিয়াট্রি ও সাইকোলজিকে শিক্ষাক্ষেত্র, জেল, আদালত এবং অন্যান্য সমাজব্যবস্থার যাবতীয় অঙ্গ থেকে সম্প¨র্ণভাবে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এরা যেন এদের ক্ষতিকর গবেষণার জন্য অনুদান না পায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০১ জুন ২০০৬ | ৮০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন