এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ  গুরুচন্ডা৯ আট

  • পানিপথ

    দীপ্তেন
    আলোচনা | বিবিধ | ০১ জুন ২০০৬ | ৮২০ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • ষোড়োশ শতাব্দীর মধ্য ভাগ, ঠিক বছর বলতে গেলে ১৫২৫। দুনিয়া কাঁপানো কিছু তেমন ঘটেনি সেই শতকে। অটোমান সাম্রাজ্য লম্বা পা ফেলে দখল করে নিচ্ছে মিশর ও আরব দেশ, লিওনার্দো ততদিনে এঁকে ফেলেছেন মোনালিসা, আর মার্টিন লুথার তার প্রতিবাদী ধর্মের থিসীস খাড়া করে ফেলেছেন। সারা দুনিয়া মাত্র ৪৫ কোটী মানুষ।

    হিন্দুস্তানে তখতে এ তাউসে আসীন আফ্‌গানী সুলতান ইব্রাহিম লোদী। প্রায় দেড়শো বছর আগে তৈমুর লং দিল্লী নগরী তছনছ করে দিয়েছেন, ধর্ষন, খুন, অবাধ লুটতরাজ। সুলতানেদের ক্ষমতার অবনতি তখন থেকেই। খিলজি ও তুঘলকদের আমলে যেরকম রমরমা ছিলো অবশেষে লোদী বংশের হাতে পরে অস্তমিত প্রায় সেই সৌভাগ্য রবি। দিল্লীর সিংহাসনে বসে সুলতান ইব্রাহিম লোদী, কিন্তু তার শাসনের বৃত্ত অনেক সংকুচিত। উত্তর ভারতে অনেক রাজা, মহারাজা ছোটো ছোটো অঞ্চলে নিজেদের শাসন কায়েম করেছেন আর দক্ষিন ভারতে সাম্রাজ্য গড়ছেন বিজয়নগরের সম্রাট, তাদের রাজধানী গড়ে উঠচে কর্ণাটের হাম্পিতে।

    ঘরে বাইরে ইব্রাহিমের অনেক শত্রু। পশ্চিমে রাজপুতেরা একজোট হচ্ছেন রানা সঙ্গের নেতৃত্বে, আর তার রাজসভায় আমীরেরাও কেউ সন্তুষ্ট নন তাকে নিয়ে।

    রাজা বদল চাই, নতুন রাজা চাই। দিল্লীর সিংহাসনে বসা মানে যেনো এক কেউটে সাপের মাথায় পা রাখা - যতক্ষন চেপে রাখা যাবে ততদিনই জীবন। একবার দুর্বল পা কেঁপে উঠলেই নির্ঘাত মৃত্যু।

    লাহোরের গভর্নর দৌলত খান লোদী চুপি চুপি আমন্ত্রন জানালেন কাবুলের নবাব বাবুরকে। তৈমুরের বংশধর বাবুর তখন চল্লিশের তরুন। সেই বারো বছর বয়স থেকেই তিনি রাজা। যুদ্ধ বিগ্রহ তার কাছে নতুন কিছু নয়। ঐ লড়াই করতে করতে উজবেকিস্তানের ফেরগানাদেশ থেকে এসে পরেছেন কাবুলে। দখল করেছেন আবার হারিয়েছেন - তিনবার এইরকম হয়েছে। তখনো কাবুল নেহাৎই ছোট্টো শহর। ওতে আর মন ভরে না - বাবুর লিখলেন - হিন্দুস্তানের উপর আমার বহুদিন ধরেই নজর ছিলো।

    তো বাবুর যুদ্ধযাত্রা শুরু করলেন। বরফ পড়ার আগেই, পয়লা নভেম্বার। বারো হাজার সৈন্য, তার উপজাতির লোকই বেশী। এ ছাড়া কিছু তুর্কী আর পারসীক সেনাও রয়েছে।

    বাবুরের সেনাবাহিনী উপজাতিদের ট্র্যাডিশন মেনে চলতো। হায়ারার্কী বিশেষ ছিলো না। সবাই একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করতেন। তুলনায় লোদীর সেনাবাহিনীতে হায়ারার্কী খুব স্পষ্ট।

    কামান। বাবুর কিছু কামনও কিনেছেন পারসীক আর তুর্কী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে, আর কিনেছেন ম্যাচলক বন্দুক। স্থলযুদ্ধে কিছুদিন আগেই অটোমান তুর্কীরা পরসীক সেনার বিরুদ্ধে কামান ব্যবহার করেছেন। স্থলযুদ্ধে কামানের সফল ব্যবহার সেটিই প্রথম। সেই খবর নিশ্চয়ই বাবুরের কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু কতগুলি কামান? বাবুরনামা পড়ে কখনো মনে হয় মাত্র দুটি কামান ছিলো, কখনো মনে হয় দুশো। ঐতিহাসিকেরও সঠিক খবর কেউ দিতে পারেন নি। আমার ধারনা দুটি ( আমার যুক্তিটা পরে লিখছি)। কামান তখনো বেশ প্রিমিটিভ। আড়াই কেজি ওজনের পাথরের বল যার রেঞ্জ ছিলো পাঁচশো গজ কি আরেকটু বেশী। সেই গোলা গায়ে লাগলে আঘাত হতো গুরুতর, হয়ে্‌তা সেই আঘাত হতো প্রাননাশী, কিন্তু সেই গোলা গায়ে লাগা চাই। বিস্ফোরক ক্ষমতা ছিলো না সেই গোলোকের। খুবই সীমিত ক্ষমতা। তখনো স্থলযুদ্ধে কামান মুলত: ব্যবহার হতো দুর্গ প্রাকার ভাঙতে, ছুটন্ত কাভালরীর বিরুদ্ধে কামানের ক্ষমতা ছিলো নেহাৎই সাইকলজিক্যাল।

    বাবুরের প্রধান অস্ত্র ছিলো টার্কো মোঙ্গোল ধনুক। দৈর্ঘ্যে আড়াই কি তিন ফীট। দুশো গজ পর্য্যন্ত স্বচ্ছন্দে লক্ষ্যভেদ করা যেতো। তুলনীয় ইউরোপের লং বো - কখনো ছয় ফীট পর্যন্ত দীর্ঘ হতো। সেটি শুধুমাত্র পদাতিক সেনারাই ব্যবহার করতো ।

    আর মাস্কেট মানে পুরোনোদিনের গাদা বন্দুক? কতগুলি ছিলো বাবুরের হাতে? কেউ বলেন দুশো, কেউ বলেন চার হাজার। আমার মনে হয় কমের দিকেই ছিলো। কামানের মতন ঐ ম্যাচলক বন্দুকও খুব ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে নি। প্রায় সাড়ে সাত-আট কেজি ওজনের এই বন্দুক একটা ট্রাইপডের উপর বসিয়ে দাগাতে হতো। দুই মিনিটে একটা, খুব বেশী হলে তিন মিনিটে দুটো গুলি ছোঁড়া যেতো। রেঞ্জ ছিলো দুশো গজ। গুলির ওজন ছিলো দুই আউন্স বা পঞ্চাশ গ্রাম মাত্ন। সেই তুলনায় ঐ টার্কো মোঙ্গোল ধনুক থেকে মিনিটে ছয়বার লক্ষ্যভেদ করা যেতো।

    প্রায় বিনা বাধায় পাঞ্জাব পার হলেন বাবুর। পাঁচ মাস ধরে মার্চ করে এসে পানিপতে তাবু গাঁড়লেন তার ফৌজ। ততদিনে আরো আট হাজার সৈন্য তার দলে যোগ দিয়েছেন - যাদের মধ্যে কিছু দলছুট আফগান সেনানীও ছিলো।

    যমুনা তখন বর্তমান পানিপাত শহরের আরো কাছ দিয়ে বইতো। পনিপাত শহরকে ডানদিকে রেখে বাবুর ঘাঁটী গাঁড়লেন। বাম দিকে যমুনা নদী। সামনে ধু ধু উষর ভুমি, গাছ গাছালিও কম। তখন এপ্রিল মাস - বেশ গরম পরে গেছে।

    লোদীও এসে পানিপতে নিজের ঘাঁটী গাড়লেন। তার সেনা সংখ্যা একলক্ষ, হাতী এক হাজার। দুই পক্ষ মুখোমুখী । কেউই আক্রমন করতে চান না। বাবুরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই জোরদার - তাছাড়া লোদীর দরকার দিল্লির পথ আটকানো। লড়াই না করেই বাবুর যদি নিজের দেশে আবার ফিরে যায় তাহলে লোদীর কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু, বাবুর বাকী জীবনে আর কখনো নিজের দেশে ফিরবেন না। সামারকন্দ তার কাছে অধরা স্বপ্নই থেকে যাবে। দুই দশক পরে তার মৃতদেহ অবশ্য ফিরে যাবে কাবুলে।

    বাবুর প্রতিরক্ষায় মন দিলেন। বাম দিকে যমুনা নদী ও তাদের ক্যাম্পের মাঝখানে বড় গাছ কেটে আর ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রাখলেন। নিজেদের ক্যাম্পের চারিদিকে বানালেন এক নতুন প্রতিরক্ষার প্রকৌশল। প্রায় আটশো গরুর গাড়ী এনে তাদের মোটা চামড়া আর দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি অর্ধবৃত্তাকার ব্যুহ বানালেন। ঐ গো শকটের বেড়ার মাঝে মাঝে প্রায় দুশো গজ ফাঁক রাখলেন যাতে তাদের অশ্বারোহী বাহিনী দ্রুত আক্রমনে সামিল হতে পারে। গরুর গাড়ীর পিছনে ট্রাইপড বানিয়ে তৈরী থাকলো মাস্কেটধারীরা। এ এক দারুন ব্যুহ, প্রায় একটা দুর্গের মতন।

    তার সেনাবাহিনীর মরাল কেমন ছিলো? বাবুর নিজেই লিখলেন সবাই খুব ভীত আর সন্ত্রস্থ ছিল। অচেনা দেশ, অজানা মানুষ। আমরা কেউ ও দেশের ভাষা বুঝি না, ওরাও বোঝে না আমাদের ভাষা। ইব্রাহিম লোদীর প্রায় একলক্ষ সেনা আর এক হাজার হাতী। যদি আরো পয়সা খরচা করে byd hind অর্থাৎ পেশাদার সৈন্য যোগার করতেন তো লোদীর পক্ষে আরো এক লাখ বা দু লাখ সেনা যোগাড় করা কঠিন হত না।”

    কিন্তু লোদী অত পয়সা খরচা করতে রাজী ছিলেন না, এমন কি তার রেগুলার সেনারাই অনেকে তাদের মায়নাও পায় নি অনেকদিন।

    দুজনে মুখোমুখি - কেউই আগ বারিয়ে আক্রমনের ঝুঁকি নিচ্ছেন না, এমন ভাবে যাবে আট দিন। বাবুর মাঝে মাঝে কয়েকশো অশ্বারোহীর দল পাঠাবেন, তারা লোদীর ক্যাম্পের কাছে গিয়ে খানিকটা হৈ হল্লা করে ফিরে আসতেন, কোনো অসতর্ক আফগানী সেনাকে একা পেলে তার মুন্ডু কেতে নিয়ে আসতেন। কিন্তু লোদী একবারো কোনো স্কাউটিং ট্রুপ পাঠাননি বাবুরের শিবিরে।

    এ ভাবে তো চলে না। বাবুরেরই ভয় বেশী। শেষ সম্বল নিয়ে যুদ্ধে নমেছেন এক অজানা দেশে। তার আর পিছন ফিরবার সুযোগ নেই। তাই ২০ এপ্রিল রাতে পাঁচ হাজার অশ্বারোহীর একটি বড় দল তিনি পাঠালেন লোদীর শিবিরে। কিন্তু তাদের এই নিশুতি রাতের সারপ্রাইজ অ্যাটাক মোটেই লোদীর শিবিরকে বিভ্রান্ত করতে পারলো না। তারা সম্পূর্ণ সজাগ ছিলো। মুঘল অশ্বারোহীরা দৌড়ে পালিয়ে এলেন। আফগানের তাদের বিশেষ তাড়াও করলেন না।

    কিন্তু এই হানার একটি ফলাফল হলো। লোদী ভাবলেন খুব সহজেই তিনি মুঘলদের হারিয়ে দিতে পারবেন। তিনি বাবুরের শিবির আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

    বাবুর লিখলেন তখন সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আমরা দেখতে পেলাম এক ঘন কালো সেনাপুঞ্জ চুটে আসছে আমাদের দিকে দুর্বার গতিতে। আমরাও তাড়াতাড়ি বর্ম পরে ঘোড়ায় উঠে বসলাম। আরেকটু কাছে আসলে দেখলাম এক সরল রেখায় নয়, ডানদিকের শত্রু বাহিনী অনেকটা এগিয়ে, অসম ভাবে এগোচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি ডানদিকে আরও সরে আসলাম। আমাদের কাছাকাছি এসে লোদীর সেনারা থমকে গেলো। আক্রমন করব? না পিছিয়ে যাবো? কিন্তু পিছু হটবার বা থমকে থাকার আর সুযোগ ছিলো না। পিছন থেকে আরো সেনানী ধেয়ে আসছে, কেউ হাতীতে চড়ে, কেউ ঘোড়ায়।

    বাবুরের অসামান্য রণকৌশল ছিল তার সামনের আক্রমনের জায়গাটিকে তিনি খুব স্বল্প পরিসর করে রেখেছিলেন, তাই আফঘান সেনা কখনই তাদের পুরো শক্তি দিয়ে আক্রমন করতে পারে নি। বরং ছোটো যায়গায় অত সেনানী এবং হাতী ঘোড়া মিলে আরো সমস্যা তৈরী হলো। তাদের ম্যানুভারিংএর জন্য কোনো স্থান রইলো না।

    তখন ভোর ছটা। ৪০০ গজ দুরত্ব থেকে বাবরের কামান গর্জে উঠলো। এখানে একটু টীকা আবশ্যক। বাবুরনামায় কামানের কথা মাত্র দুইবার উল্লেখিত হয়েছে। দেখলাম উস্তাদ আলি কুইলি মধ্যভাগ থেকে চমৎকার ফিরিঙ্গী কামান দাগাচ্ছিলেন আর তার বাম দিকে মুস্তাফা দাগাচ্ছিলেন Zarb Zan - এই ফিরিঙ্গী কামান আবার কি? এ নিয়ে অনেক মতামত, তবে বেশীর ভাগই মনে করেন এটি একটি ফিল্ড আর্টিলারি অর্থাৎ বেশ ভারী কামান। আর zarb zan? বোধহয় কালভেরিন কামান। এটি একটি নীচু পাটাতনের উপর বসানো থাকতো। গোলা ছুটতো কোমরের উচ্চতায়। বিদ্ধংশী ক্ষমতা ছিলো ফিল্ড আর্টিলারির থেকে কম। তখনকার দিনের কামানের মুখ খুব বেশী উঁচু নীচু করা যেত না। বাবরনামায় এই এক যায়গাতেই কামানের উল্লেখ আছে। অনেক ঐতিহাসিক তাই মনে করেন বাবুর মাত্র দুটি কামানের কথাই বলেছেন। তার আর্থিক ক্ষমতা ছিলো সীমিত ও কামান দাগানোর জন্য প্রশিক্ষিত লোকের অভাব ছিলো। খুব বেশী কামান নিয়ে যুদ্ধ , তাই আমার মনে হয়, বাবুরের আয়ত্ব আর ইচ্ছার বাইরে ছিলো।

    বাবুরনামায় কামানের কীর্তির থেকে তীরন্দাজ বাহিনীর কথাই বেশী বলা আছে। সেটাই স্বাভাবিক। প্রথমত: বাবুর নিজেই ছিলেন এক অশ্বারোহী। মোঙ্গোলরা অশ্বারোহী বাহিনীর ট্যাকটিক নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করেছেন। তুলঘামা নমে তাদের একটি রনকৌশল তারা পানিপথের যুদ্ধেও ব্যবহার করবেন। সেই সময়ে অশ্বারোহী বাহিনীর দুটি বিভাগ থাকতো - ভারী ও হাল্কা ( হেভী ক্যাভলরী আর লাইট ক্যাভালরী)। ভারী অশ্বারোহী বাহিনী বর্ম পরে থাকতো, তাদের ঘোড়ারাও বর্মে সুসজ্জিত থাকতো। সওয়ারীদের অস্ত্র ছিলো প্রধানত: দীর্ঘ বর্শা। সেনা ব্যুহের মধ্যভাগে এর থাকতো, যেন ফুটবল মাঠের স্টপার। আর লাইট ক্যাভালরী বাহিনী বর্ম পরতো না, তারা দ্রুত গতিতে সারিবদ্ধ হয়ে তীর ছুঁড়তে ছঁড়তে শত্রুপক্ষের পাশ দিয়ে এগিয়ে পিছন থেকে ঘিরে ফেলে আক্রমন করতো। দ্রুত গতি আর দুশো গজ দুর থেকে নিক্ষিপ্ত তীরের বর্ষন, এটাই ছিলো তাদের ট্যাকটিক।

    পানিপথের যুদ্ধেও তাই হলো। লোদীর সেনারা স্বল্প পরিসর যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলাঠেলি করেই ঘায়েল হলো। ইব্রাহিম লোদীর রিজার্ভ সেনার বিরাট অংশ ঐ সামনের ভীড় ঠেলে মুখোমুখী সংঘাতে পৌঁছতেই পারলো না। আর কামানের গোলায় না হোক, ধোঁয়া আর আওয়াজে লোদীর হাতিরা ঐ ভীড়ের মধ্যে আরো সন্ত্রাস সৃষ্টি করলো।

    আবুল ফজলের আকবরনামায় খুব সংক্ষিপ্ত বর্ননা রয়েছে এই যুদ্ধের। তিনি উল্লেখ করেছেন বর্শাধারী আর তরোয়াল হাতে পদাতিক সৈন্যের। সেই সাহসী অসিধারীদের পা শক্ত ছিলো জমিনের উপর। একেবার বামপক্ষের শেষ দিকে ছিলো পদাতিক সেনানীরা, তাদের হাতিয়ার বর্শা, জীবন ঘাতি তীর আর রক্ত পিপাসু সমসাম তরোয়াল । কিন্তু যুদ্ধের বর্ননা খুব একটা ছিল না এবং কামানের উল্লেখ ছিল একেবরেই অনুপস্থিত।

    এক মিলিটারী হিস্টোরিয়ান রাশব্রুক উইলিয়ামস বলেছেন যে কামানের (এবং মাস্কেটের) ব্যবহারেই লোদীর বাহিনী এত বিশৃঙ্খল হয়ে পরে এবং তাদের পরাজয় হয় সেই কারণেই।

    তবে আমার ধারনা কামানের গোলাবাজীর ফলাফলটা বোধহয় কিছুটা বাড়িয়ে বলা হয়েছে। কেননা সকাল ছয়টা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে ঐ যুদ্ধ অবশেষে সমাপ্ত হলো দুপুর বারোটায়। এপ্রিলের গরমে ততক্ষনে ক্লান্ত হয়ে পরেছে শীতের দেশের মোঙ্গোল সেনারা। দ্বিপ্রহরের সুর্য্যের বল্লম তখন আমাদের বিদ্ধ করছে বাবর লিখেছিলেন, সেই সময়ই লড়াই ক্রমে থেমে গেলো।

    আমার ধারনা কামানের গোলায় ভীত সন্ত্রস্থ প্রায় হাজার খানেক হাতী পাগলের মতন ছোটাছুটী করছে এবং একেবারে স্ট্যাম্পীড হচ্ছে - এটা খুবই অতিরঞ্জিত। সেক্ষেত্রে ছয়ঘন্টা ধরে লড়াই হতো না। হয়তো কামানের গোলা আর মাস্কেটের গুলি, এই দুই-এর জাল ছিন্ন করে হাতীরা এগোতে পারেনি আর ট্রেঞ্চ আর গরুর গাড়ীর ব্যুহ ভেদ করে ঘোড়সওয়ার বাহিনীও এগোতে পারেনি। তাই থমকে থাকা অগ্রগামী বাহিনীর পিছনে ভীড় বাড়ছিলো, আর বাবুরের লাইট ক্যাভালরী বাম ও ডানদিক থেকে ক্রমাগত: তীর ছুঁড়ে আরো বেশী করে চেপে দিচ্ছিলো শত্রুপক্ষকে।

    বাবুর লিখলেন শত্রুরা আমাদের বাম ও ডানদিকে কয়েকবার আক্রমন করেছিলো কিন্তু আমাদের তীরের আঘাত সহ্য করতে না পেরে পিছু হঠে যায়। (লোদীর) বাম ও দক্ষিন পক্ষে এতো ভীড় হয়ে গিয়েছিলো যে না পারছিলো তারা সামনে আক্রমন করতে, না পারছিলো পিছু হঠতে।”

    বাবুর প্রথমে ভেবেছিলেন লোদী বোধহয় রনক্ষেত্র থেকে প্রানে বেঁচে পালিয়েছেন। পলায়মান আফঘানী সেনাদেরকে ধাওয়া করে যাওয়া মোঙ্গোল বাহিনীর তিন অধিনায়ক, কিসমতি মির্জা, চুড়া আর বুজুক - এই তিনজনকে বাবুর নির্দেশ দিলেন দ্রুত আগ্রা গিয়ে ধরো ইব্রাহিম লোদীকে। রনক্ষেত্রে লোদীর ক্যাম্প ছিলো জনশুন্য।

    কিন্তু কিছুপরেই ইব্রাহিম লোদীর মৃতদেহ পাওয়া গেলো যুদ্ধক্ষেত্রের পিছন দিকে। তিনি হয়তো শেষ চেষ্টা করেছিলেন বাবুরের বাহিনীর মুখোমুখী হবার। লোদীর মৃতদেহের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিলো প্রায় পাঁচ ছয় হাজার নিহত সেনানীর স্তুপীকৃত শব। প্রভুর সাথে সাথে তারাও মরন পন লড়াই করেছিলেন কিন্তু জিততে পারেন নি।

    সেই সময়কার যেমন রীতি, তেমন ভাবে লোদীর মাথা কেটে ফেলা হয়েছিলো। এরপর বাকী থাকে শুধু মপিং আপ। ইব্রাহিম পক্ষের আমীরেরা দলে দলে আত্মসমর্পন করলেন, মাহুতেরা নিয়ে এলো হাতীর পাল। সবাই জয়ী রাজার শিবিরে।

    দুই দলের সেনাবাহিনীর মধ্যেও চরিত্রগত পার্থক্য ছিলো। বাবুরের বাহিনীর অনেকেই বাবুরের সাথে রয়েছেন প্রায় বছর পনেরো কুড়ি হলো। যখন তারা হিন্দুস্তানে, তখন তাঁদের বেশ ডেসপারেট অবস্থা কেননা তাদের আর কাবুলে ফিরে যাবার জন্য কোনো পথ খোলা নেই। অন্যদিকে লোদীর দলের সেনারা স্থানীয় ভাবে রিক্রুট করা। নিয়মিত সেনাবাহিনী আফগানী সুলতানদের বিশেষ ছিলো না। কোনো রকমে পানিপথ থেকে মুঘলদের ফিরিয়ে দিতে পারলেই লোদীর উদ্দেশ্য সফল আর বাবুরের ছিলো মরনপন লড়াই।

    বিলেতের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রক্ষিত একটি মুঘল মিনিয়েচারে রয়েছে বাবুর তার সঙ্গীদের সাথে পথে বসে আগুন পোহাচ্ছেন। তার সেনাদের সাথে তিনি যে আদৌ দুরত্ব বজায় রাখতেন না সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। বাবুরের গোলন্দাজেরা সবাই তুর্কী, কিন্তু বাবুরের আত্মচরিতে ঐ গোলন্দাজদের জন্য শুধু প্রশংসাই রয়েছে।

    মুঘল মিনিএচারে পানিপথের যুদ্ধেরও বেশ কিছু ছবি পাওয়া যায়। অসিধারী পদাতিক ও অশ্বারোহী সেনার ছবিই বেশী। হয়ত তীরন্দাজের গুরুত্ব বেশী থাকলেও ঢাল তরোয়াল তখনও বেশীর ভাগ সেনারই প্রধান অস্ত্র। একটি ছবিতে খুব ছোটো তিনটি কামান দেখা গেছে। হাতী এসেছে একবার। আর উটের পিঠে বিরাট জালা নিয়ে দুজন বসে, কি থাকত ঐ পাত্রে? পানীয় জল? নকি শত্রু নিধনের জন্য প্রস্তুত গরম তেল? প্রথমটাই হওয়া বেশী স্বাভাবিক। একটি ছবিতে রয়েছে রাজছত্রের নীচে রথে এক যোদ্ধা। বেশ কয়েকট ছবিতে দেখা জায় গদার মতন কিছু হাতে নিয়ে কয়েকজন, তবে সেতা বোঝার ভুলও হতে পরে, হয়তো সেটা তুনীর, কেননা সেই গদা নিয়ে কেউ যুদ্ধ করছে এমন দেখি নি। আবুল ফজল কুথারের উল্লেখও করেছেন যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে।

    বাবুরের প্রথমে ধারনা ছিলো ১৫০০০ থেকে ১৬০০০ আফগান সেনা মারা গেছে। পরে হিন্দুস্তানের সকলের বিবৃতি নিয়ে মনে হলো চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার শত্রু সৈন্য নিহত হয়েছে। তবে ঐ ১৫ হাজারের হিসাবটাই বেশী বিশ্বাসযোগ্য। বাবুরের অবস্থাও কিন্তু সংগীন হয়ে উঠেছিলো। এপ্রিলের উত্তর ভারতের গরমে অনভ্যস্ত তার অশ্বারোহী বাহিনী খুবই ক্লান্ত হয়ে পরছিলো। বাবুরের পক্ষে হতাহত ছিলো প্রয় চার হাজার, কিন্তু বাবুরের রিজার্ভড ফোর্স বলতে কিছু ছিলো না। হয়তো, হয়তো আরো ঘন্টা খানেক টিঁকে থেকে লড়াই চালাতে পারলে লোদী পারতেন যুদ্ধের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনতে।

    কিন্তু তেমন হল কই? যুদ্ধের পাঁচ দিন পরে বাবুর হলেন দিল্লীশ্বর আর আরো সাত দিন পরে আগ্রা শহরে গিয়ে পেলেন কোহিনুর মনি। সেটি তিনি হুমায়ুনকে দান করে দিলেন।

    ছিন্নশির ইব্রাহিম লোদীর কবর পানিপতের এক তেহশিলদারের অফিসে, পাঁচশো বছর পরেও এখনো টিঁকে আছে। নেহাৎই সাদা মাটা। জানি না কতজন ট্যুরিস্ট সেটিকে দেখতে যায়। তাও, তার দেহ হিন্দুস্তানেই রইলো। আর তার মৃত্যুর পর বাবুরের দেহ কবর দেওয়া হলো তার প্রিয় কাবুলে।

    বাবুর এর পরের যুদ্ধেও এই একই ট্যাকটিক ব্যবহার করেছিলেন, দুগুন সেনা বেশী থাকা স্বত্তেও রানা সঙ্গ ঐ যুদ্ধে হেরে যান। এই অফেনসিভ-ডিফেনসিভ ব্যুহ আর তুলঘামার উত্তর তখন হিন্দুস্তানে ছিলো না।

    শুধু রাজা বদলই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান আর বন্দুকের ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। একটা কারন যে মোঙ্গোল ধনুকে তৈরী করতে প্রায় এক বছর সময় লাগতো এবং যে প্রানীজ আঠা ব্যবহৃত হতো সেগুলি শুষ্ক আবহাওয়ার উপযোগী ছিলো। ভারতবর্ষের প্রচন্ড মৌসুমী আবহাওয়ায় সেগুলি অচল হয়ে পরতো। তাছাড়া বড় সৈন্যদলের পক্ষে অনেকগুলো ধনুক দরকার, যোগান নেহাৎ ই অপ্রতুল। বন্দুক আর কামানের আরেকটি সুবিধে হচ্ছে অল্প কিছুদিন পরেই ঐ গোলন্দাজী বিদ্যা শিখে নেওয়া যেতো কিন্তু ভালো ধনুর্ধর হতে গেলে দীর্ঘ কালের অনুশীলন চাই।

    মুঘলেরা এরপরে ইস্পাতের ধনুক ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু তাঁদের তৈরী টার্কো মোঙ্গোল ধনুকের ধারে কাছেও আসে নি সেই ধাতব ধনুক।

    মুঘলদের অবস্থানো বদলালো। তারা দেশের রাজা, ঘোড়সওয়ার ছুটিয়েই একমাত্র লড়াই তাদের নয়। চারিদিকের বিদ্রোহী রাজাদের দুর্গ আক্রমন করে অবোরোধী লড়াই (siege warfare) চালানো খুব চালু হলো। পানিপথের এই লড়াইএর মাত্র পনেরো বছর পরেই দেখি হুমায়ুন কানাউজ আক্রমন করেছেন সাতশো কামান নিয়ে। চিতোর দুর্গ অবোরোধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রেই ঢালাই করা হয়েছে বিশাল কামান - সেই তোপ দাগিয়ে চুর্ন করা হলো দুর্গের প্রাচীর ।

    রণভুমিতে হতীর ব্যবহার কমে এলো কিন্তু একেবারে থেমে যায় নি। আর মোঙ্গোলদের ঐতিহ্য মেনে অশ্বারোহী বাহিনী আরো জোরদার হয়ে উঠলো। তুর্কমান আর উজবেগ উপজাতিরা তাদের ঘোড়া নিয়ে আসতেন কাবুলের উপত্যকায়। ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে স্বাস্থ্যবান করে সেই ঘোড়া আফগান ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসতেন হিন্দুস্তানে - নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে। সেখান থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঘোড়া নিয়ে যেতেন তিরুপাতি, কর্নাট ও হাজিপুরে। বার্নিয়ার বলেছেন প্রতিবছর পঁচিশ হাজার ঘোড়া আসতো হিন্দুস্তানে। শুধু মোঘোল অশ্বারোহী বাহিনী প্রতিবছরে ষোলো হাজার ঘোড়া কিনতেন।

    রাজা বদলের সাথে সাথে পানিপথের যুদ্ধ হিন্দুস্তানী রনক্ষেত্রে এ ভাবে নিয়ে আসলো নতুন রনকৌশল ও প্রকরন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০১ জুন ২০০৬ | ৮২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন