হিরণ মিত্র
জবাব চাও, ধুঁকতে থাকা হাঁটতে থাকা, ঘরে পৌছানোর জন্য ব্যাকুল দেশ আমার, তোমার লক্ষ লক্ষ মুখে তুমি জবাব চাও।
কী করে তোমার হাত থেকে চলে গেল তোমার ঘন জংগল, খোলা মাঠ, নদী পুকুর ঝোপঝাড় ভরা, পাথুরে পাহাড় ভরা নিজের নিজের ঘর, নিজের গ্রাম? কেন যেতে হয়েছিল মিথ্যেকথায় ভরা ভবিষ্যতের অলীক স্বপ্ন দেখে আর নিজের সবকিছু হারিয়ে? কোন কুহক কানে মন্ত্র দিয়েছিল ‘এইসব মাঠ-জঙ্গল-নদীতীর-মরুজমি ফেলে দিয়ে চলে যাও দূরদেশে হাত-ভরে মাইনে পাবে’ বলে? বলেছিল, ‘নিজের আচারনিয়মসমাজমাভাই ঘর গিরস্তি সব ভোল, নতুন বিদ্যা শিখে উন্নতি করতে চলে যাও’? সব উন্নতির পরে, সব নির্মাণের শেষে, মা গো এই তুমি ফিরে আসছ তোমার যথাসর্বস্ব ধরে গেছে মাথার ওপরের ওই একটি ঝোলায় আর পিছনে রয়ে গেল তোমার শরীর স্বাস্থ্য বুদ্ধি কাজ করার শক্তি, সংসারের সাধ। ওইটুকু সম্বল তো তোমার গ্রাম, তোমার দুঃখী জীবনযাত্রা, তোমার নিজের পুরোন মাটি তোমাকে দিতে পারত। আমরা চুপ করে ছিলাম। আমরাও স্বপ্ন দেখছিলাম ঝলমলে জীবনের। ক্ষমা করো আমাদের নির্বুদ্ধিতা আর স্বার্থপরতার মূর্খামিকে। তোমার ওই পথমিছিলের পিছনে কোথাও বাকি আছে আমাদেরও হাঁটু ভেঙে পড়া। তোমার মুখ এতদিন চেয়ে দেখিনি, আজ এই অসারতার স্বপ্নশেষে দেখছি। তুমি আমার দেশ, বাড়ি ফেরার পথের ক্লান্তিতে নিজের হাতে পাতা রেললাইনের পরে ঘুমিয়ে পড়েছিল অসাড় শরীর, তাই যে গাড়ি তোমাকে ঘরে পৌঁছে দিতে পারেনা সে তোমার ক্লান্ত অচেতন শরীর পিষে দিয়ে চলে যায়।
পথ দিয়ে, বিপথের দিকে যাওয়া দিয়ে, সময়ের ভেতর দিয়ে তোমার উন্নয়নের পথ। তোমার বিশাল পরিসরে জমিতে বিষ, জলে শুষ্কতা, ভাবনা পঙ্গু, সময়েরও ভেতর দিয়ে বয়ে আসে বিষের পথ। পঁয়ত্রিশ বছরের এপার ওপার, এও তো অর্থময় যে এখনই, কতোদূরের ভোপাল থেকে এই সমৃদ্ধ বিশাল ভূমির কোন বিশাখাপত্তনমে, সন্দেহ না-করে উন্নয়নকে মেনে নেওয়া কোন গ্রামে বাতাসে শ্বাস নিতে গিয়ে রাস্তায় ছিটিয়ে রইল তোমার কলজের টুকরো আর তার পেছন থেকে জেগে উঠল বহুজাতিকের বিষ-বহনের উন্নয়নের, কর্মসংস্থানের কাঙাল মিথ্যেকথার গল্প।
ফেরো, আমার দেশ, ঘরে ফেরো। আর যেওনা রাক্ষসের নরভুক পুরীর উন্নয়ন-পুজোয় বলি হতে। নিজের ঘরে থাকো। নিজের জোরে থাকো। ও মা আমার, তোমার লক্ষ মুখ যখন কাতরাচ্ছিল, যখন মায়ের কোলেও ঘুমোচ্ছিল না খিদেয় কাঁদা শিশুরা, যখন সতেরো দিনের বাচ্চা কোলে বাড়ি যাবে বলে হাঁটছিলে তুমি, তখনও তোমার মাথার ওপর জেগে ছিল নীল আকাশ। মেঘ। গাছপালারা তাকিয়েছিল দূর থেকে। পাশের সরু ঘোলাটে জলধারাটি যে তোমার ফেটে যাওয়া বুকে ওই কাদাজলের অঞ্জলি জোগাচ্ছিল- এরা সবাই তাকিয়েছিল তোমার দিকে। তোমার অপেক্ষায়। ওরাও আশ্রয়হারা। তুমি ওদেরও বাঁচাও। আমাদের বাঁচাও, শিক্ষিত করো আমাদের।
তুমি নিজের ঘরে থাকো।।
থাম্বনেল গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত
ফেরা যে নেই জয়াদি! ফেরা যায় না। নূতন পথ খোঁজা আছে।
বেদনার কান্না-
আর না , আর না।
জ্বলতে জ্বলতে শেষ
অচেনা লাগছে চেনা পথ-
অচেনা লাগছে দেশ।
লেখা আপনার চাবুক
এবার দেশ ভাবুক।
ফেরা যে খুব দরকার ! বুঝবে কে !
খুব দরকারি লেখা । সঠিক জায়গাতে ছড়িয়ে পড়ুক ।
শ্রদ্ধা
শ্রমিকের পিঠে পড়া প্রতিটি লাঠির আঘাত আসলে পড়ছে মোদি সরকারের মুখে!
পুলিশ রাজ নিপাত যাক।।
___
এই লেখা পড়ে হিরণ মিত্র একটি অসামান্য ছবি এঁকেছেন। সেটি তার ফেসবুকের টাইম লাইনে পাওয়া যাবে।
গুরুর সঞ্চালনা দলের কাছে অনুরোধ, সম্ভব হলে একটি টিকাসহ ছবিটি এই লেখায় জুড়ে দেওয়ার।
খুব দরকারি লেখা। এই আলোচনার দুটো পার্ট আছে-
১) কীভাবে বাইরে যাওয়া শ্রমিকের প্রয়োজন ও অ্যাস্পিরেশনকে স্থানীয় অর্থিণিতিতে অ্যাকমডেট করা যায়?
২) এঁদের ব্যবহার করে স্থানীয় উৎপাদন কীরূপ বিকশিত হতে পারে। বিশেষতঃ করোনা-উত্তর পৃথিবীতে বিশ্বায়ন বিরোধী চিন্তা শক্তিশালী হবে, স্বনির্ভর অর্থনীতি নিয়ে কাজ হবে। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকের সম্পদ বিরাট কাজে লাগতে পারে।
এই বিপুল বিশাল যুগপাল্টানোর মত ঘটনা - মহানিষ্ক্রমণ ঘটল, একে জোরদার করা আদতে ভদ্রবিত্তের বাঁচার উপায়। ভদ্রবিত্ত বাঁচার জন্যে শুধুই রাষ্ট্র আর কর্পোরেটের দিকে গত ২০০ বছর ধরে তাকিয়েছিল, তাকে রাষ্ট্র আর কর্পোরেট নিরাশ করে নি - লুঠের সঙ্গী বানিয়েছে, খ্যাতি দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। কিন্তু নব্য জামানায় ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্তের পেশা আর চাকরি আর দালালি এবং তার জীবনধারণ সঙ্কট্টে পড়েছে। সুদ কমা থেকে ব্যাঙ্ক মার্জার থেকে সরকারি চাকরিতে ল্যাটারাল এন্ট্রি, শ্রমনিরপেক্ষা, ভদ্রবিত্তদক্ষতা নিরপেক্ষ প্রযুক্তি প্রয়োগে আগামী ২/৩ দশকে তার অস্তিত্ব বিপাকে পড়বে।
তাকে বাঁচাতে পারে এই কারিগর চাষী হকার ব্যবস্থা।
---
কিন্তু লুঠেরা ব্যবস্থার বিরোধিতার কোনও নির্দিষ্ট রাস্তা নেই, কোনও নির্দিষ্ট মেডিজি নেই। কেন্দ্রিভবন বিরোধী, লুঠ বিরোধী কর্পোরেট বিরোধী সমাজ মানুষ জীবনযাত্রা আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে, তাকে চিনে নিতে হবে। ভদ্রবিত্ত সেটা কী আদৌ চিনতে চায়? না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তারা চায় না। জিডিপি কমলেই চেঁচামেঁচি করে।
প্রথম কাজ আমাদের আশেপাশের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিকেন্দ্রিভবনের রাস্তা খুঁজে নিচ্ছেন, এটাই আদতে কর্পোরেট বিরোধিতা। আমরা যারা এই লুঠেরা ব্যবস্থায় নিষিক্ত হয়ে রয়েছি, তাদের উদ্যম হোক আশেপাশে যে সব লুঠ নিরপেক্ষ ব্যবস্থা আছে তার সঙ্গে নিজেকে ক্রমশ যুক্ত করা এবং নিজের জীবনকে যতটা সম্ভব এই লুঠেরা ব্যবস্থা থেকে বিচ্যুত করা। কর্পোরেট নিরপেক্ষ সমাজ দেখার, বন্ধু দেখার, ব্যবস্থা দেখার এবং গোষ্ঠী দেখার আর চিনে নেওয়ার চোখ তৈরি করতে হবে নিজেকেই।
পুঁজি চেষ্টা করে নানান প্রচারের মাধ্যমে আমার সামনে একটা অদৃশ্য ঘোমটা ফেলে দিতে যা দিয়ে আমরা দেশিয় অপুঁজিবাদী অকর্পোরেটিয় বাস্তব অবস্থা বিরোধী হয়ে উঠি। সেই ঘোমটাকে সরানোর কলজেটা তৈরি করতে হবে - এটা দ্বিতীয় কাজ।
ভোক্তা নির্ভর সমাজ বিচ্যুত পণ্য নির্ভর পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুক্তির নির্দিষ্ট হাতিয়ার নেই - অথচ সমাধান আমাদের জীবনের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। সরকারি কর্পোরেট ভাষ্যের বাইরে বেরিয়ে দেখুন পুঁজি বিকেন্দ্রিভূত সমাজের মত ততটা শক্তশালী নয় বলেই তাকে নোট বাতিল, জিএসটি ইত্যাদির হাতিয়ার নিতে হয়। সমাজে কর্পোরেটরা স্বরাট নয় তার একটা উদাহরণ হল আজও ভাল বর্ষার দিতে তাকিয়ে থাকে কর্পোরেটেরা, ভাল চাষ না হলে জিডিপি গোঁত্তা খেয়ে পড়ে।
যে ব্যবস্থা পুঁজি আর কেন্দ্রিভূত ব্যবস্থাকে নিরবে ধাক্কা দিতে পারে ব্যবস্থাকে খুঁজে বার করতে হবে - এটাই এই সময়ের ডাক।
আমার আপনার জন্যে আমাদের আগত ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্যেও।
It is very necessary to return! Who knows!
Very useful writing. Spread to the right place.
Respect
<a href="https://www.captaintechno.in/">Visit CaptainTechno!</a>
মানুষ কি করে আজকের দিনে জন্তুর ন্যায় আচরণ করে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না
চোখে যে রঙিন ন চশমা পরিয়ে দিয়েছে। আমরা কাছের জিনিসটা দেখতে পাইনা দূরের জিনিসটাই ভাল দেখি।
চশমা খোলার পর থাম্বনেল গ্রাফিস্কে স্মিতা দাশগুপ্তর ছবি দেখতে পাচ্ছি।
ধন্যবাদ ধীমান বাবু।
আমাকে অ্যাডমিন প্যানেলে যুক্ত করায় ধন্যবাদ পাই। সব পোস্টের স্ক্রীণ শট নিয়ে রাখছি।
@কলের দাস,
আমি বুতে চেয়েছি মাস-সাইকোলজিতে বিশ্বায়ন বিরোধিতা শক্তিশালী হবে। এম্নিও গ্লোবালি গ্লোবালাইজেশোনের সাপোর্ট খুব কমে এসেছে, ট্রাম্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের নেতারা বিশ্বায়নকে খিস্তিয়ে ভোট জোটাচ্ছে। আজকে মোদিও সেই লাইনে গেল।
কিন্তু, এরা কাজের কাজ করবে না বলেই সন্দেহ হয়, তবুও জনতা বিশ্বজুড়ে বিশ্বায়নের থেকে রেহাই চাইছে।
আমি চাড্ডি ও ইতরের সার্টিফিকেট দেই। হি হি হি
দয়াকরে একাই সব কথা বলার অধিকারী হবেন না দিদি। অন্যদের বলতে দিন।
সত্যি কথা। ফেরা যায় না। কি হবে ওদের!!!