এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • পুরুষশূন্য হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন

    জয়া মিত্র লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৭ জুন ২০১১ | ১৪৫৫ বার পঠিত
  • আয়লার পর সুন্দরবন গিয়ে আমার মনে হয়েছিল ,যদি আয়লার ধ্বংসলীলা না ঘটতো তাহলে সুন্দরবনের সমস্যা দেশের তো বটেই ,এমনকি রাজ্যের সচেতন মানুষদের কাছেও অজানা রয়ে যেতো । সুন্দরবনবাসীদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছিল ,যদি আয়লার মত বা তার চেয়ে বড় কোনও সমুদ্র তুফান আবার হয়, তাহলে কি হবে । তারপর তিনবছর কেটেছে । আয়লার ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণগুলি বিভিন্নজন, যারা বিষয়টি বোঝেন ও কাছ থেকে দেখেছেন,তাঁরা চিহ্নিত করেছিলেন । সমাধানের উপায়ও বাতলে দিয়েছিলেন ,তার মধ্যে ছিল বাদাবন বাড়ান ,এমব্যঙ্কমেন্ট সারানোর নিয়মিত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বীরভূমের পান্নালাল দাশগুপ্তের পথে ফ্লাড সেন্টার তৈরী পর্‌যন্ত নানারকম সমাধান সূত্র ,এই পরামর্শগুলির পিছনে ভাবনা ছিল ,সমবেদনা ছিল ,ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতার জোর ।কিন্তু কিছুই হয়ে ওঠেনি সুন্দরবনে । পানীয় জলের সংস্থান টুকুও নয়।

    একবার একটা কথা শোনা গিয়েছিল যে, সবকটি দ্বীপের যতগুলি এমম্ব্যঙ্কমেন্ট আছে সব ,প্রায় সাড়েতিন হাজার কিলোমিটার ,কংক্রিট করে দেওয়া হবে ।সমস্ত পরিকল্পনাটি এমন ভয়ঙ্কর ,এত উদবেগজনক যে ,ভারতবর্ষের নদী ও তাদের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে যাঁদের ধারণা আছে তাঁদের অনেকেই একে অসমর্থন করেন ।প্রাথমিক আলোচনার পর এই প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেল মনে করে অধিকাংশ মানুষ স্বস্তি পেয়েছিলেন ।যদিও আয়লার বিপর্‌যয়ের অন্যতম প্রধান যে কারণ বিভিন্ন দ্বীপে দেখা গিয়েছিল সেই ভেঙ্গে যাওয়া পাড়বাঁধ গুলি মেরামতির ব্যপারে কার্‌যত কোন উদ্যোগই সরকার নেয়নি ।ত্রাণের জিনিষ লুটপাট ,ত্রাণ বণ্টনের ক্ষেত্রে দলীয় সমর্থন আদায় ,গণমাধ্যমের সামনে জলের ড্রাম হাতে নিয়ে মন্ত্রীর নৌকোয় ওঠার ছবি তোলান ধরণের হৃদয়হীন নোংরামির সাক্ষী হয়ে থেকেছেন আয়লার মার খাওয়া স্থানীয় মানুষ । সরকারি তরফ থেকে এমন উদ্যোগের পর বাসিন্দারা যা করতে পারতেন, সাধ্যমত সেটাই করেছেন তাঁরা ।স্থানীয় এক তরুন বলছিলেন, নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা। ভোটের দুদিন পরের কথা ।ভোটের দুদিন পর গোসাবা থেকে মাতলা নদীর সেতু পার হয়ে কলকাতা যাওয়ার বাসস্ট্যান্ডে সারাদিনব্যপি অনন্ত দুশো মিটার লম্বা লাইনের কথা ।যারা ভোট দেওয়ার জন্যে গ্রামে এসেছিলেন, তাঁদের আবার গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সেই লাইন ।বলছিলেন, কিভাবে দিনের পর দিন ক্রমশ পুরুষ শূন্য হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের গ্রামের পর গ্রাম। হাতের শেষ কপর্দক দিয়ে বাসভাড়া , রেল ভাড়া জুটিয়ে কাজের খোঁজে বাইরে চলে যাচ্ছেন এতদিন মাটি কামড়ে পড়েথাকা মানুষেরা । আয়লা তো এক প্রাকৃতিক বিপর্‌যয় ,এবং ও রকম মাপের সমুদ্রতুফান আবার আসা অসম্ভব নয়। ইতিমধ্যে বিপুল ভাবে জমি ভাঙা চলেছেই , সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ,গোসাবা, বাসন্তী ,সাতজেলিয়া, রামচন্দ্রখালি সহ নানা জায়গায় ।২০১০ সালে সরকারি বীজখামার থেকে চাষিরা দেশী বা হাইব্রিড যে ধানবীজ জমিতে দিয়েছিলেন ,তার ফলন হল বিঘা প্রতি মাত্র দেড় দু বস্তা, অথচ যে সামান্যকজন নিজেদের তুলে রাখা বীজে চাষ করেছিলেন তাঁদের ফলন অত খারাপ নয় ।অর্থাৎ ,লবণ জলে ধ্বস্ত মাটি ধীরে ধীরে নিজেকে সারিয়ে তুলছে কিন্তু রাজ্যের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনার হাত থেকে যে যত্ন সুন্দরবনের পাওয়ার কথা ছিল ,তা পৌঁছায়নি ।

    এখন নতুন করে উঠে আসছে সেই কংক্রিটের বাঁধের কথা ।কেন আমরা ,নদীকে ,দীর্ঘকাল ধরে লক্ষ্য করা কিছু সাধারন লোক কংক্রিটের বাঁধের কথায় ভয় পাই ?বাঁধ বলতে সুন্দরবনে নদীর পাশে জমি ঘিরে যে পাশবাঁধ সেই এমব্যঙ্কমেন্টের কথাই বলা হয়ছে ।ভারতবর্ষের বিশেষত: উত্তর ভারতের হিমালয়জাত নদীদের ক্ষেত্রে পাশবাঁধের অভিজ্ঞতা বরাবরই আতঙ্কজনক । ফারাক্কা উজানে মালদার পঞ্চানন্দ পুর , কালিয়াচক যেখানে নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্‌যন্ত গঙ্গার ভাঙন সবচেয়ে বেশী ছিল , সেখানে প্রকাণ্ড সব পাথরের টুকরো জালে জড়িয়ে তাই দিয়ে এমব্যঙ্কমেন্ট তৈরি করা হয় । কিন্তু ভাঙনের যে মূল কারণ ,পিছন থেকে এসে পড়া স্রোতের জল ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে ঠিক মত বেরিয়ে যেতে না পারা,তার কোনও সুরাহা হয়নি , ফলে পাশবাঁধের পিছন দিক থেকে জল জমি কাটে ও শেষ পর্‌যন্ত অবলম্বনহীন পাশবাঁধ নিজের ওজনে গঙ্গায় পড়ে যায় ও গঙ্গাবক্ষ আরও উঁচু হয়ে ওঠে ।অথচ ,সে অভিজ্ঞতা থেকে কোন শিক্ষা না নিয়ে গত ত্রিশ বছরে অন্তত: আটটি পাশবাঁধ তৈরি হয় মালদা , পঞ্চানন্দপুরে । ভাঙনে গিয়েছে অনন্ত: দেড়শো কিলোমিটার জমি ,গ্রাম , সম্পদশালী বাজার , সমৃদ্ধ জনপদ । নদীয়া ,মুর্শিদাবাদ ,মালদার নদী পারের মানুষেরা ? নদী থেকে বহুদূরে বাস করার পরিকল্পনার হিসাবহীন খরচ হওয়া ছেঁড়া মানুশজন ? আবর্জনার মত পড়ে আছেন বিভিন্ন দুর্গত জনপদে ।

    আরও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা কোশী নদীর । কোশী ও তার উপনদীর সিঞ্চনে ও বন্যা বাহিত পলিতে উত্তর বিহারের জমি কতখানি সমৃদ্ধ ছিল তার প্রমান ডেহরি -অন-শোন স্টেশনের বিশাল লম্বা প্ল্যাটফর্ম । ইংরেজ আমলে মালগাড়ী বোঝাই কৃষি উৎপাদন সম্পদ আখ থেকে নীল ,ধান, সুস্বাদু ফল থেকে সুগন্ধি কড়া তামাক ছিল । বন্যায় এক দু'বছর পর পর নতুন পলি ক্ষেতের উর্বরতার নবীকরণ করতো । কেন্দ্রীয় সরকার বন্যাত্রাণের পরিকল্পনা নিয়ে কোশী ব্যারাজের নীচ দিকে ও উজানে পাশবাঁধ দিতে সুরু করে ১৯৫৫ সালে ।কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ তে । নদীর দুই ধারই বেঁধে দেওয়া হয় ,কেবল কোশী নদীর দুই তীরেই পাশ বাঁধের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২৯২ কিলোমিটার ।কি হয় তার ফলে ? নদী বেয়ে বর্ষাকালে যে পলি আসতো বন্যার জলের সঙ্গে সঙ্গে তাও জমিতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । সেই বিপুল পলির বোঝা জমতে থাকে নদীখাতে । কমতে থাকে নদীর গভীরতা ও তার জল ধারণের ক্ষমতা ।প্রতি বছর উজানে নদীর বন্যার জলে ডুবে থাকা জমির পরিমান বাড়ে, সেই বন্যার জল ঠেলে অনান্য নদীতে ঢুকে যায় । সেই সব নদীতেও দেওয়া হয় পাশবাঁধ । স্বাধীনতার আগে সম্পূর্ণ বিহারে এমব্যঙ্কমেন্টের দৈর্ঘ্য ছিল ১৬০ কিলোমিটার ,বন্যা ও জলাভূমি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টায় আজ তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯,৬৩০ কিলোমিটার । সঙ্কট বাড়ছেই । নদী প্রকৃতির এক জটিল ও গভীর প্রভাবী সংস্থান ।তার নিজস্ব নিয়ম লঙ্ঘিত হ'তে হ'তে যখন সহনসীমা্‌র বাইরে যায়,তখন জলমাটীর চাপ নদীর বন্ধন ভাঙে ।২০০৯সালে নেপালের কুশাহা থেকে উত্তর বিহারের সুপোল, মাধোপুরা পর্‌যন্ত সমগ্র কোশী অববাহিকা জুড়ে পাশবাঁধ ভেঙে জলের তাণ্ডব নেমে আসে । চার লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হন । মৃত্যুর হিসাব থাকেনা ।এক সময়ের অতি উর্বর সমগ্র এলাকাটি এতদিন এমব্যঙ্কমেন্টের আটকে পড়া বৃষ্টির জলে ডুবে পচে উঠেছিল ,এখন সেই কয়েক হেক্টর জমি নদী গর্ভে জমে থাকা ভারি বালির নীচে চাপা পড়ল চিরতরে । কোশী নদী তার একশো বছর আগকার খাতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে ।

    গঙ্গা বেয়ে জলের সঙ্গে সঙ্গে নামে হিমালয় পর্বত থেকে সমতল ক্ষেত্র হয়ে দেড়হাজার কিলোমিটার যাত্রাপথের সংগৃহীত লক্ষাধিক টন মাটী বালির বোঝা । এই বাহিত মাটীর পরিমাণ ক্রমশ আরও বাড়ছে, একদিকে জঙ্গল হারানো ভুমিক্ষয়এর দরুন , অন্যদিকে ব্যপকভাবে পুকুর ও জলাভূমি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে বৃষ্টিপাতের সমস্ত জল বিশৃঙ্খল ভাবে খেতের , মাঠের গ্রামের মাটী ধুয়ে নদীতে এনে জমা করার ফলে ।সুন্দরবনের কাছাকাছি অর্থাৎ নদী মোহনা এলাকায় এর সঙ্গে প্রতিদিন যোগ হয় জোয়ারের জলে নদীর দিক থেকে ঠেলে আসা বিপুল পরিমাণ পলিমাটি । জোয়ারের জল যে গতি ও শক্তিতে উজানে যায় ভাঁটার টান ও শক্তি তার চেয়ে অনেক কম ।উপরন্তু ডি ভি সি তে বাঁধা পড়া দামোদর আগেকার মত' হড়পা ' বাণের ধাক্কায় মোহনায় জমা বালি বঙ্গোপসাগরে ঠেলে ফেলে দিয়ে গঙ্গার মুখ পরিস্কার রাখতে পারেনা ।অসংখ্য বাঁধ ও বেহিসাবি ভূতলস্থ জল টেনে তোলার কারনে গঙ্গা ও তার শাখা নদীগুলি জল হারিয়ে স্থিমিত স্রোত ।এলাকায় জলে উপস্থিত মাটি- বালির পরিমাণ দুই লক্ষ টনের বেশী । সুন্দরবন অঞ্চলের মাতলা, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী সহ ছোটবড় প্রতিটি নদীরই খাত আশঙ্কাজনকভাবে ভরাট হয়ে উঠছে, বহু বছরের অজত্নে দ্বীপগুলির মাটির তৈরি রিংবাঁধ ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তার অন্য একটি কারণ হ'ল গভীরতা হারানো নদীতে যতটুকু জল আছে , তাও ওই এমব্যঙ্কমেন্ট গুলিকে জোয়ার- ভাঁটায় জোরে ধাক্কা দেয় । নদীর মানুষ অনেকে এমনও মনে করেন যে ,সুন্দরবনের নদী সমূহের প্রকৃত গভীরতা যদি থাকতো তাহ'লে আয়লার পঁচিশ ফুট উঁচু ঢেউ দ্বীপের এত ক্ষতি ঘটাতে পারতনা ।

    এই অবস্থার মধ্যে নদীদের দু'পাশে কংক্রিটের পাশবাঁধ দিয়ে নদী ও দ্বীপ ঘিরে ফেললে কি ফলাফল হতে পারে ? দ্বীপের মধ্যে আটকে পড়া বৃষ্টিজল বাইরে যেতে পারবেনা এবং বাইরে নদীর খাত জমা মাটিতে দ্‌রুত উঁচু হয়ে উঠতে থাকবে ।অচিরেই দ্বীপের থেকে নদীতল উঁচু হয়ে উঠবে । সেই অকল্পনীয় জলের চাপে এমব্যঙ্কমেন্টের ফাটল রোধ করা অসম্ভব হবে। হাওড়া -হুগলী নিম্ন দামোদর অঞ্চলে যারা থাকেন, তাঁরা বিপদের আশঙ্কাটা একটু আন্দাজ করতে পারবেন । মাটির বাঁধে ফাটল ধরলে স্থানীয় লোকেরা ঝোড়া কোদাল নিয়ে মাটী ফেলে তা মেরামত করতে পারেন। গত পঁচিশ ত্রিশ বছর সরকার রিংবাঁধ রক্ষণাবেক্ষনের জন্যে 'বেলদার' নামে সরকারি কর্মী রেখেছিল বলে বাঁধের অতখানি অতখানি অবহেলা হয়েছিল । তার আগে পর্‌যন্ত সে কাজ গ্রামসমাজ নিজেরাই করতেন ,কিন্তু কংক্রিট বাঁধের মেরামতি স্থানীয় ভাবে করা যাবেনা । এই প্রসঙ্গে হল্যান্ডের সমুদ্রবাঁধ দিয়ে জমি রক্ষা করার প্রসঙ্গ মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে । হল্যান্ডের মত দেশে সেই বাঁধের প্রতি নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয়, এদেশের কোন সরকারি কাজে কি তা দেখা গিয়েছে ? নদীমোহনা , সমুদ্র প্রত্যকের স্বভাব ভিন্ন ভিন্ন।

    যে অবস্থায়, যে অবহেলায় ও সঙ্কটের মুখে রয়েছেন সুন্দরবনের মানুষ তাতে ক্ষতিপূরণ পেলে জমি দিয়ে দিতে দ্বিধা হয়তো কেউই করবেন না । এম্ব্যঙ্কমেন্টের জমি পাওয়া সমস্যা হবেনা ।কিন্তু যে ছ'হাজার একর জমির উপর ওই সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার লম্বা , প্রস্থ ও উচ্চতার কথা এখনও জানিনা ,কংক্রিটের প্রাকার গড়ে উঠবে সে জমি অতখানি ভার নিতে সক্ষম হবে তো? এম্ব্যঙ্কমেন্ট নিজের ভারে ধীরে ধীরে বসে যাবে নাতো ?কে দেবে এই বিপুল নির্মাণের টাকা ? কি শর্তে ? কিন্তু কি করা যাবে তাহ'লে ? কংক্রিটের বাঁধ যদি প্রকৃত সুরক্ষা না হয় ,তাহ'লে বিকল্প সুরক্ষা ব্যবস্থা কি, হতে পারে? সুন্দরবনের এই ভয়াবহ অবস্থা একদিনে তৈরী হয়নি । জানাই কথা দ্‌রুত তৎক্ষনিক কোন সমাধান নেই এর । কিন্তু এখন থেকেই চেষ্টা করলে একটু একটু করে ফল পাওয়া যাবেই ।এক্ষেত্রে খুব বড় সদর্থক ভূমিকা হতে পারে রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর ।সাধারণ মানুষের পাশে আন্তরিক ভাবে দাঁড়ানোর যে এপর্‌যন্ত না দেখা সংস্কৃতি তিনি তৈরী করেছেন ,তা দিয়ে সুন্দরবনের হতাশ, হারমেনে নেওয়া মানুষদের দাঁড় করাতে পারেন আত্মবিশ্বাসে । নিজেদের গ্রামের সমস্যা অন্য কারও করে দেওয়ার অপেক্ষায় না থেকে নিজেরা চিহ্নিত করা ও সমাধানের চেষ্টা করা । আয়লার পর বাঁধ মেরামতি , পানীয় জল, খেত, ফসল ,বীজ যা যা দরকার গ্রাম ধরে নির্দিষ্ট করা । তারপর সরকার তো আছে নেত্রীর সহানূভুতিশীল দায়িত্ব বোধ ও দক্ষতা নিয়ে ।

    গ্রামের ভিতর বড় পুকুর কেটে সেই মাটী দিয়ে বর্তমান এম্ব্যঙ্কমেন্ট গুলি আরও পাকা পোক্ত আরও একটু চওড়া করে নিলে কেবল বিপর্‌যয়কালেই নয় সাধারণ ভাবেও মানুষ তার ওপর বাড়ী করতে পারেন । বীরভূমে ১৯৯৪'র বন্যার পর পান্নালাল দাশগুপ্ত যে ভাবে গ্রামে গ্রামে বন্যা দুর্‌যোগ আশ্রয়- নিবাস তৈরী করতে শিখিয়েছিলেন ,সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ,সন্দেশখালি, রামকৃষ্‌ণখালি , সর্দার পাড়া, বাসন্তী ,কূলতলির গ্রামে গ্রামে সেরকম উঁচু মাটিতে ইঁটের ঘর ,ধর্ম গোলা, শৌচালয় , উঁচুতে বসান নলকূপ হোক । সেই ঘর গুলিতে সারা বছর স্কুল হোক , স্বাস্থ্য কেন্দ্র হোক। এই আসন্ন বর্ষা থেকেই ভাদ্রের ' ষাঁড়া ষাঁড়ির বাণের আতঙ্কে ' থাকা মানুষেরা ওই কাজটুকু তো শুরু করতে পারবেন । আর নদীতে পলি জমা বন্ধের আর জল থাকার ব্যবস্থা ? নদীর গভীরতা? এই দায় সমগ্র দেশের । রাজ্যে অন্তত: শুরু কি করা যায় ভূমিক্ষয় রোধ করা আর 'জল ধর, জল ভর' র' কাজ ? সবচেয়ে বেশী গাছ লাগানোর কাজ? যাতে দেশের সামনে দাবী তোলা যায় 'আমরা নদীর শেষ মাথায় আছি , নদী এখানে অসুস্থ হ'লে , অবরুদ্ধ হলে ,সে দায়, সে বিপদ সারা দেশের । নদীকে আর নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা করো । বাঙলা দেখো ।' হতে পারেনা এমন ? যে দেশের স্তুতিতে 'সুফলার 'র চেয়ে' সুজলা' শব্দ আগে , নদী জপমালা ধৃত প্রান্তর 'সেই দেশ কে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়না আবার ? যখন নতুন করে সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন সেই কাজে থাকার মতামত জানানোর সম্মান ? মানুষের সদিচ্ছার চেয়ে কর্ম ক্ষমতা র চেয়ে শক্ত কোন সিমেন্ট নেই ।

    পরিশেষে একটা কথা ।হয়তো অপ্রিয় কিন্তু একই সঙ্গে প্রয়জনীয়ও ।একথা সকলেই জানেন যে সুন্দরবনের অধিকাংশ দ্বীপই গঠনশীল অবস্থায় আছে । মনুষ্য বসতির উপযুক্ত নয় সেগুলি যে মানুষেরা আছেন ,তাঁরা নিতান্ত নিরুপায় বলেই আছেন । বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সে রকম বিপন্ন ,সমস্যাসঙ্কুল কিছু দ্বীপকে চিহ্নিত করিয়ে সেখানকার মানুষদের অন্যকোথাও পুনর্বাসন দেওয়া যায়না ? সেই দ্বীপগুলি নাহয় রয়ে যাবে বাদাবনের অংশ হিসেবেই, সুন্দরবনের সুরক্ষার কবচ হয়ে ? আশা করতে তো বাধা নেই , আর আশাই যদি করবো, তা'হলে ছ'মাসের কেন,দশ বছর পরের ভবিষ্যৎ ভেবে করলে ঠেকায়কে ?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৭ জুন ২০১১ | ১৪৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন