এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • মধ্যভারত কথা

    দেবর্ষি দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৬ জুলাই ২০০৯ | ৯৪০ বার পঠিত
  • বালিমেলা জলাশয়

    শুভ্রাংশু চৌধরি ছত্তিসগড়ে CitizensJournalismInitiativeCGnet-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য। ছত্তিসগড়ের একটি সংবাদপত্রে এক সময় নিয়মিত কলাম লিখতেন। একবার রাজ্যের চাষিদের আত্মহত্যার খবর নিয়ে লেখেন। চাপ দিয়ে, মিথ্যেপ্রচারের অভিযোগে তাঁর কলাম বন্ধ করে দেওয়া হয়(১)। শুভ্রাংশু দন্ডকারণ্যের কাছের বালিমেলা জলাশয় ও নিয়ামগিরি পাহাড় অঞ্চলে সাংবাদিকতার সূত্রে গেছিলেন(২)। বালিমেলা জলাশয় নেহরুর আমলের বৃহ্‌ৎ বাঁধ প্রকল্পের একটি নিদর্শন। অঞ্চলের আদিবাসীদের বহু গ্রাম এর ফলে ডুবে যায়, উচ্ছিন্ন লোকেরা যেখানে গিয়ে নতুন ঘর বাঁধেন সেগুলূ জলস্তর বাড়ার পর বাকি দুনিয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সব থেকে কাছের হাসপাতালে যেতে হলে তিন ঘন্টা লঞ্চ, যা দিনে একটা চলে, ও তারপর দু’ঘন্টা হন্টন। অর্থাৎ মোট ৫ ঘন্টা। স্কুল ৩+৪ = ৭ ঘন্টা। বাঁধের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এই গ্রামগুলোতে চার দশক পরেও পৌঁছোয় নি, ওড়িসার বড় শহরগুলোতে চলে যাচ্ছে তারে তারে। জল বয়ে চলেছে হিন্দু উঁচু জাতের চাষিদের জমিসেচের জন্য। উচ্ছিন্ন আদিবাসীদের হাতে যে অনুর্বর জমি আছে তাতে এত কম খাদ্যশস্য হয় যে অধিক অরতথকরী কিন্তু বেআইনি গাঁজার চাষ করে পেট চালাতে হয়। অথচ যে জমিতে তারা মাথা গুঁজেছে বা ফসল ফলাচ্ছে তার কাগজও কিন্তু সরকার তাদের দেয়নি, ক্ষতিপূরণ তো দূর অস্ত।

    ২০০৮ সালে মাওবাদীরা জলাশয়ে একটি পুলিশের বোট ডুবিয়ে দিলে ৪০জন গ্রেহাউন্ড নামে নক্সালদমণকারী পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে পুলিশ এই অঞ্চলে বড় একটা পা রাখছে না। আদিবাসীরা অবশ্য খুব চিন্তিত নয় তাতে। “পুলিশ নানান হুজ্জুতি করে আমাদের থেকে টাকা তুলত। ওরা বিদায় হওয়াতে মেয়েরা বেশ খুশি,” রাম খারা বলে। একশন করার সময় মাওবাদীরা গ্রামে এসেছিল, বিশ্রাম নিয়ে, জল খেয়ে গেছে, অচেনা সাংবাদিককে একথা জানাতে গ্রামবাসীদের বাধে না। ডমরুধরের মত যুবক, যাদের আট ক্লাস পর্যন্ত পড়ে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছে কেননা টাকা নেই, কেননা স্কুলে যাওয়া আসাই প্রতিদিনের পরীক্ষার সামিল, তাদের প্রশ্ন সরকার তাদের জন্য কী করেছে? তাদের জন্য, যারা ঝকঝকে ভারতের উন্নয়নকল্পে আরো অন্ধকারে সরে গেছে? আদিবাসীরা ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৮%, দেশের ২০% অঞ্চলে তাদের বসতি। এই অঞ্চলগুলো দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের অন্তর্গত। আবার তাদের বসবাসের জমিই দেশের অধিকাংশ খনিজ ও বনজ সম্পদকে ধারণ করে আছে: দেশের ৮০% খনিজ ও ৭০% বনজ সম্পদ আদিবাসী অঞ্চলে রয়েছে(৩)। ফল সহজে অনুমেয়। নানান ‘উন্নয়ন প্রকল্পে’ এখন পর্যন্ত দেশের যত লোক উৎপাটিত হয়েছে তার প্রায় ৫০% আদিবাসী। ডমরুধরের মত আদিবাসী যুবকেরা আজ মাওবাদীদের সেনার এক বড় অংশ।

    সালোয়া জুদুমের অর্থনীতি

    নেহরুর সময়ের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উন্নয়ন ও আজকের বাজার-নির্ধারিত মাৎস্যন্যায়ী উন্নয়ন মডেলকে যা একসুরে জুড়ে দেয়, তা হল প্রাকৃতিক সম্পদের লুঠপাট ও আদিবাসীদের উচ্ছেদ। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ছত্তিসগড় রাজ্য বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি কোম্পানীর সাথে শ’খানেক মৌ সই করে। ছত্তিসগড়ে ভারতবর্ষের খনিজ সম্পদের একটা বড় অংশ পাওয়া যায়। বক্সাইটের ৭%, কয়লার ১৬%, লোহা আকরের ২০%(৪)। সিমেন্টের আকর চুনাপাথরের বিপুল ভান্ডারও রাজ্যে আছে। রমন সিং আগের রাজত্বকালে ১১টা সিমেস্ট কোম্পানীর সাথে মৌ সই করেন, সেগুলো রূপায়িত হলে বর্তমান উৎপাদনের স্তর প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। ফল পড়ছে জমি অধিগ্রহণের ওপর। কর্পোরেট ছত্তিসগড়ের রাজধানী রায়পুরের ন অবতারের জন্য ৬৫টা গ্রামকে উচ্ছেদ করা হবে। বিলাসপুরের কাছে ৯টা গ্রাম উচ্ছেদ হবে সামরিক ছাউনি ও হাই কোর্টের নতুন বিল্ডিং-এর জন্য। ৭ খানা গ্রাম রাজনন্দগাঁও-এর কাছে এয়ার ফোর্স বেসের জন্য।

    সরকারি হিসেব মতে প্রায় ২৪,০০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ এই মুহূর্তে চলছে। মানে ধরে নিন, ২৪ খানা সিঙ্গুর। সিঙ্গুরের মতই চুক্তিগুলো সরকার গোপন করেছে। টাটা ও এসার গোষ্ঠীর সাথে দান্তেওয়াড়া ও বস্তার জেলায় ইস্পাত কারখানা স্থাপনের চুক্তিপত্রে সরকার সই করেছে। এই চুক্তির শর্ত কেউ জানে না। ‘আদিবাসী কল্যাণ সমাজ’-এর প্রবীণ প্যাটেল জানাচ্ছেন, সরকার লোহার আকরের জন্য মাত্র ২৭ টাকা প্রতি মেট্রিক টন রল্টি ধার্য করেছে, যেখানে কিনা আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য ২১০ আমেরিকান ডলারেরও ওপরে। মাত্র ৪০ টাকা প্রতি টন দামে জাপানে প্রথম শ্রেণীর লোহার আকর রপ্তানী করা হচ্ছে, অথচ স্থানীয় লোহা-ইস্পাত উৎপাদকেরা কিনছেন ৫৮০০ টাকা দরে।

    স্বাভাবিকভাবেই এই লুঠতরাজের মুখে মানুষ এক হওয়ার চেষ্টা করেছে। ছত্তিসগড় মুক্তি মোর্চার মত সংগঠন জমির আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে কোম্পানীর দেওয়া ক্ষতিপূরণের কাগজ ভুয়ো। মৃত, অস্তিত্বহীন মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে দাবি করেছে টাটা কোম্পানী। লোহান্দিগুড়া ও ভান্সিতে ‘আদিবাসী মহাসভা’র নেতারা যখন বিকল্প গ্রামসভা করার চেষ্টা করেছে তাদের নেতাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাদের ওপরে জাতীয় সুরক্ষা আইনের মত সন্ত্রাসদমন আইনের কেস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা রাজ্যপালের সাথে পূর্বনির্দিষ্ট এপোয়েন্টমেন্টে দেখা করতে গেলে রাস্তার মধ্যে পুলিস এরেস্ট করেছে। শিল্পোদ্যোগ ছাড়াও আসছে লাভজনক বহু রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, যার কর্মসংস্থান উৎপাদন ক্ষমতা অতি সামান্য। পিএসিএল নামে একটি মাত্র কোম্পানী এক বছরের মধ্যে ৫,০০০ একর জমি কিনছে।

    ছত্তিসগড় রাজ্যের জনসংখ্যার ৩২% আদিবাসী। দান্তেওয়াড়া জেলায় সংখ্যাটা সবচাইতে বেশি: ৭৯%। এই জেলাতে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাটাও একই: ৭৯%। এই জেলাতেই আরো দুটো জিনিষ লক্ষণীয়: (ক) লোহার আকরের বৃহ্‌ৎ ভান্ডার, (খ) মাওবাদীদের সাথে সরকার ও সালোয়া জুদুমের তীব্র সংঘর্ষ। সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে সালোয়া জুদুম একটি মাওবাদীদের হিংসা বিরোধী স্বত:স্ফূর্ত জন আন্দোলন। ঘটনা হল শুরুর থেকেই বিজেপি ও কংগ্রেস -- অর্থাৎ ছত্তিসগড়ের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল একে মদত দিয়ে এসেছে। গত ৬ বছর ধরে বিজেপি ছত্তিসগড় সরকার চালাচ্ছে। সরকার স্পষ্টতই সালোয়া জুদুমকে সব ধরনের সাহায্য করছে। অন্যদিকে সালোয়া জুদুমের একমেবাদ্বিতীয়ম নেতা মহেন্দ্র কর্মা কংগ্রেসের বিধায়ক। লোহান্দিগুড়া ও ধুরলি ব্লকে জমি অধিগ্রহণের সময় বন্দুকের নলের ডগায় এক মেকি জনশুনানি হয়। সেই গণ-নাটকের নায়ক ছিলেন এই মহেন্দ্রবাবুই। তিনি DistrictInvestmentPromotionBoard-এরও Chairman। বৃহ্‌ৎপুঁজী ও সালোয়া জুদুমের সম্পর্কতন্তুগুলো এই সব রোদে ঝিলমিলিয়ে ওঠে। এই লগ্নিদরদী লোকটির দল কংগ্রেস পার্টি গত ৫-৬ বছর কেন্দ্রে সরকার চালিয়েছে। কেন্দ্রের মদত ছাড়া এই তথাকথিত শান্তি অভিযান স্পষ্টতই চালানো যেত না।

    এছাড়া আছে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর টাকা। এসার ইস্পাত গোষ্ঠী প্রথমদিকের সালোয়া জুদুম ক্যাম্পগুলোর স্থাপনের জন্য আর্থিক সাহায্য জুগিয়েছে। ক্রেস্ট নামে একটি শিল্প গোষ্ঠীকে দক্ষিণ বস্তার, দান্তেওয়াড়া ও বিজাপুর জেলার খনিজ সম্পদ সার্ভে করার কাজ দিলে তারা জানায় শুধুমাত্র জমি পরিস্কার করলেই তারা এই বিস্তৃত সার্ভের কাজ করতে পারবে। সালোয়া জুদুম মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে জমি খালি করানোর একটি মহতী সরকারি ও শৈল্পিক প্রচেষ্টা।

    দান্তেওয়াড়া ও বিজাপুর জেলায় ৬৫০-৭০০টা গ্রামকে খালি করা হয়। প্রায় ৪৭,০০০ গ্রামবাসীদের জোর করে হাঁস-মুরগির মত প্রায় ২০টা সালোয়া জুদুম ক্যাম্পে পুরে দেওয়া হয়। সরকারি বন অনুযায়ী অবশ্য এরা মাওবাদীদের অত্যাচারের ভয়ে পালিয়ে ক্যাম্পে এসেছে। মুশকিল হল ক্যাম্পে বসবাসকারীরা মোট গ্রামবাসীর মাত্র ১৩%। বাকিরা জঙ্গলে গত চার বছর ধরে কী উপায়ে জীবনধারণ করছে তা সহজে অনুমেয়। অনেকে পাশের অন্ধ্র প্রদেশে পালিয়ে গেছে। উৎসাহী পাঠকেরা এই লেখাটিতে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী পাবেন (http://sanhati.com/excerpted/1545/ )। জওয়ানদের জবানবন্দী মতে যে গ্রামবাসীরা ক্যাম্পে আসেনি তারা মাওবাদী হিসেবে গণ্য হবে, পালাতে গেলে তাদের গুলি করে মারার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখানে আমরা ওয়াশিংটনের ফতোয়ার প্রতিধ্বনি পাচ্ছি। ক্যাম্পে কর্মহীন বদ্ধ জীবন, অপ্রতুল সরকারি অনুদান। তার ওপর আছে নিয়মিত সালোয়া জুদুম বাহিনীর অকারণ প্রহার। আদিবাসীরা অনেকেই সুযোগ পেলে ক্যাম্প থেকে গ্রামে পালিয়েছে। এমন একাধিকবার হয়েছে সালোয়া জুদুমের অস্ত্রধারী কিশোরের দল পরিত্যক্ত গ্রামে তল্লাসি চালিয়ে জঙ্গল বা ক্যাম্প থেকে ভিটের টানে ফেরত আসা গ্রামবাসীদের খুন করেছে, মেয়েদের ধর্ষণ করে মাওবাদী তকমা লাগিয়ে ছত্তিসগড়ের ভীড় জেলগুলোর একটাতে ভরে দিয়েছে। শিশুরাও বাদ যায়নি।
    ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামের লোকেদের ক্যাম্পে পুরে জমি সাফ করা, যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করা একটি সামরিক কৌশল যাকে বলে strategichamletting. ভিয়েতনামে মার্কিন সেনা এই রীতি অবলম্বন করেছিল। বা মিজ?ওরামে ভারতীয় সেনা। প্রহসন এই যে ভারতীয় রাষ্ট্র ছত্তিসগড়ে আদিবাসীদের ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের শায়েস্তা করার জন্য সেই মিজ?ও আর নাগা রেজিমেন্টকেই পাঠায়। উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই দুই সামরিক বাহিনী নৃশংসতায় বিশেষ নাম কিনেছে। ১৩ই মার্চ, ২০০৭-এ নাগা বাহিনী ও সালোয়া জুদুমের দল গঙ্গাপল্লি পঞ্চায়েতের নেন্দ্রা গ্রামে প্রবেশ করলে প্রাপ্তবয়স্করা পালায়। ১২জন শিশু-কিশোরকে, যাদের বয়েস ২ থেকে ২০, নাগা জওয়ানরা গুলি করে মারে। দুটো নাগা ও মিজ?ও ব্যাটালিয়ন ছাড়া অবশ্য ১৯টা ব্যাটালিয়ন সি আর পি এফ-ও রাজ্যের উন্নয়নকল্পে কেন্দ্র সরকার পাঠিয়েছেন।
    কিন্তু এত রক্তপাতের পরও ঘোষিত উদ্দেশ্য কিন্তু সফল হয়নি। সম্প্রতি ছত্তিসগড়ের কুখ্যাত ডিজিপি বিশ্বরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন দান্তেওয়াড়াতে ১০,০০০ মাওবাদী জঙ্গী রয়েছে। এছাড়া ৪০,০০০ গণ বাহিনীর (পিপলস মিলিশিয়া) সদস্য আছে, যার ১৫,০০০ মহিলা। অর্থাৎ ৫০,০০০ কাছাকাছি সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। জুন, ২০০৫-এ সালোয়া জুদুমের উদ্ভাবনের আগে পুলিশের মতে সংখ্যাটা ৫০,০০০-ই ছিল।
    তবে এটা প্রত্যাশিত। ২০০৫-এর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে PUCL, PUDR, APDR এবং আরো কিছু মানবাধিকার সংগঠন ছত্তিসগড়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টীম পাঠায়। রিপোর্টে তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। (ক) সালোয়া জুদুম স্বত:স্ফূর্ত আন্দোলন নয়; রাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। (খ) সাধারণ মানুষ মাওবাদী ও সালোয়া জুদুমের মাঝখানে অসহায়ভাবে ফেঁসে গেছে ব্যাপারটা তেমন নয়। মাওবাদীদের জনসমর্থন যথেষ্ট। অন্যদিকে সরকার মাওবাদীদের জনবিচ্ছিন্ন না করতে পেরে মরিয়া হয়ে সাধারন মানুষকে সালোয়া জুদুমের মাধ্যমে গ্রামছাড়া করছে। (গ) সালোয়া জুদুম শান্তি আন্দোলন নয়। বরং এর ফলে দু’দিকে হিংসার ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। মাওবাদীদের হিংসা-হত্যাগুলোকে গণমাধ্যম প্রচার করছে; সালোয়া জুদুম এবং অর্দ্ধ-সামরিক বাহিনীদের হিংসাগুলো নিয়ে সবাই নীরব। শুভ্রাংশুবাবু জানাচ্ছেন ছত্তিসগড়ের সাংবাদিকেরা এখন মাইনে পান লেখার জন্য নয়, না লেখার জন্য(১)।
    PUCL-এর মতে ২০০৫-২০০৭, এই দুই বছরে ছত্তিসগড়ে ১৫৫ জনকে ভুয়ো লড়াইয়ে (fakeencounter) হত্যা করা হয়েছে। এর CBI তদন্তের দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য ৩১ মার্চ, ২০০৭-এ রাজ্য পুলিশ ১২ সাধারন মানুষকে ভুয়ো লড়াইয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ। ঠিক দেড় মাস পরেই PUCL-এর ছত্তিসগড়ের সাধারন সম্পাদক বিনায়ক সেনকে কয়েকটি দুর্বল অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
    নিয়ামগিরি ও শেষকথা

    ওড়িসার নিয়ামগিরিতে বৃটিশ শিল্প গোষ্ঠী Vedanta এশিয়ার সর্ববৃহ্‌ৎ এলুমিনিয়াম স্মেল্টার বসিয়েছে। সরকার একটা গোটা পাহাড় শিল্প গোষ্ঠীকে বেচে দিতে পারে, অঞ্চলের আদিবাসীদের কাছে পাহাড়টা কিন্তু উপাসনার বস্তু। কদমগুডা গ্রামে ৬০ বছর বয়েসী অঞ্জনা চান্ডি শুভ্রাংশুবাবুকে জানান, “আমাদের কাছে নিয়ামগিরি মায়ের মত, তার জল পবিত্র দুধের মত। যদি পাহাড় না থাকে জলও থাকবে না, আমাদের জীবনও শেষ হয়ে যাবে।” ৪০ বছর বয়েসী মহেন্দ্র চান্ডি, “কোম্পানী আমাকে চাকরি দেবে বলেছে। ওরা কি আমার ছেলে বা নাতিকেও দেবে? পরিবারের একজনই তো চাকরি পাবে, বাকিদের কী হবে? জমি যদি থাকে ভবিষ্যতেও লোকে খেতে পরতে পাবে, যেমন আগে থেকে হয়ে এসেছে।” এখানে আমরা সিঙ্গুরের চাষিদের কথারই যেন প্রতিধ্বনি পাচ্ছি। (http://video.google.com/videoplay?docid=3052261023426138538) আদিবাসীদের প্রতিরোধের মুখে এখনো পর্যন্ত কোম্পানী যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে নিয়ামগিরির জঙ্গলে রাস্তাঘাট বানাতে পারেনি। ছত্তিসগড়ের কুনকুরি তেহসিলেও সেপ্টেম্বর, ২০০৮-এ ৩০টা গ্রামের মানুষ “জমিন বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি”র মঞ্চে রাস্তা রোকোর আয়োজন করে। কারণ, সরকার প্রায় ১০৫ বর্গ কিলোমিটার জমি জিন্দাল গোষ্ঠীকে সোনা, হীরে, প্ল্যাটিনাম ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর আহরনের সমীক্ষার জন্য হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করেছিল। এই কর্মসূচী সফল হয়। কিন্তু নিরস্ত্র মানুষের এই ধরনের প্রতিরোধ কত দিন চলা সম্ভব? কত দূর সফল হবে এই অস্ত্র? কয়েক বছর আগে ওড়িসার কাশীপুরে এক দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় শিল্পোদ্যোগের বিরোধীদের ওপরে পুলিশ গুলি চালিয়ে তিনজনকে খুন করে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, কলিঙ্গনগরের ঘটনা বহুচর্চিত।
    এই বিপন্ন জিজ্ঞাসার উদ্বেগ স্পর্শ করে যায় অঞ্চলের পরিচিত মুখ প্রবীণ অধ্যাপক ভগবত প্রসাদ রথকেও। “কর্পোরেশনগুলো এতো নির্লজ্জ আর লোভী, আমার ভয় হয় যে কোনো বিবেকবান মানুষ এই লড়াইয়ে বাধ্য হবে মাওবাদীদের নেতৃত্ব মেনে নিতে। সব খুঁত সঙ্কেÄও গণতন্ত্র নিশ্চিতভাবে স্বৈরতন্ত্রের থেকে ভাল। কিন্তু পুঁজিপতিদের গণতন্ত্র এতো পচে গেছে যে বিদ্যাজীবীরা আখেরে কমিউনিস্টদের ওপরে নির্ভর করবে হয়তো। দেশের ২০% মাত্র মধ্য ও উচ্চবিত্ত, যারা বর্তমানের উন্নয়নের ছক থেকে লাভবান হয়েছে। এরা অনায়াসে কর্পোরেট-ফ্যাসিবাদী জোটের নেতৃত্ব মেনে নেবে। ভয় হয় বাকিরা মাওবাদীদের সাথে যাবে।”

    সূত্রাবলী:
    (1) http://www.binayaksen.net/2009/04/the-art-of-not-writing
    (2) http://sanhati.com/excerpted/1616/
    (3) http://mrzine.monthlyreview.org/amr140607.html
    (4) http://sanhati.com/excerpted/1545/

    জুলাই ২৭, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৬ জুলাই ২০০৯ | ৯৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন