১৯৮৫ সনে “আসাম চুক্তি” হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২৪ মার্চ ১৯৭১ সনের পর যে বিদেশিরা আসামে এসেছেন তাদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে কেটে দেওয়া হবে, দেশ থেকে বার করে দেওয়া হবে। বিদেশিদের শনাক্তকরনের কাজ যে আইনি হাতিয়ার দিয়ে করা হচ্ছিল তার নাম হচ্ছে “আই এম (ডি টি) এ্যাক্ট ১৯৮৩” (বে-আইনি প্রব্রজনকারী (ট্রাইবুনাল দিয়ে নির্ধারণ) আইন)। ২০০৫ সনে সুপ্রীম কোর্ট আই এম (ডি টি)-কে বাতিল করে দেয়। তারপর থেকে “বিদেশি আইন” দিয়ে বিদেশি পাকড়াও করা হচ্ছে। সমালোচকেরা বলছেন বে-আইনি প্রব্রজন এতো বেশি মাত্রায় হচ্ছে যে আইন দিয়ে সিন্ধুর বিন্দু ধরা পড়ছে না।
২০০৫ সনে “সদৌ অসম ছাত্র সংস্থা” (যাকে আসুও বলে) রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সাথে আরেকটা চুক্তি করে। এবারের চুক্তি হল নাগরিকপঞ্জি নবীকরনের। মানে হল এই, আসাম চুক্তির সাথে নাগরিকপঞ্জি নবীকরনের সরাসরি সম্পর্ক নেই। আসাম চুক্তিতে নাগরিকপঞ্জির উল্লেখ পর্যন্ত নেই। অথচ ভাজপা’র জাতীয় সম্পাদক অমিত শাহ রাজ্যসভাতে ঠিক উলটো বলেছেন, আসাম চুক্তিতে নাকি নাগরিকপঞ্জি নবীকরনের কথা লেখা আছে। আসাম চুক্তিতে বিদেশিদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দেওয়ার কথা বিলক্ষণ আছে। নাগরিকপঞ্জি থেকে নয়। নাগরিকপঞ্জি নবীকরনের প্রথম চুক্তি হয় ২০০৫ সালে, আসাম চুক্তির পাক্কা ২০ বছর পর।
৩০শে জুলাইয়ে নাগরিকপঞ্জির প্রথম খসড়া বেরোনোর পর জানা গেল ৪০ লক্ষ লোক যাঁরা নাগরিক হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন নাগরিকের তালিকায় জায়গা পান নি। ৪০ লক্ষ মানে অনেক লোক। ইউরোপের অনেক দেশের জনসংখ্যা ৪০ লক্ষের কম। এতো লোকের গায়ে চট করে অ-নাগরিক তকমা লাগিয়ে দেওয়া হবে? গোটা ব্যাপারটাই অবাস্তব। নাগরিকপঞ্জির নবীকরনের অন্যায় নিয়ে অনেকে দেরি করে হলেও মুখ খুলছেন। জবাবে অনেকে বলছেন যে বহিরাগতরা আসামের স্থানীয়দের সংস্কৃতিকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে তাই নাগরিকপঞ্জি দরকার ছিল। জবাবি প্রবন্ধগুলো একটি চমকপ্রদ কথা বলেছে। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে আসামে অসমিয়াভাষীদের ভাগ ৫৮% থেকে ৪৮% হয়ে গেছে। একই সময়ে বাংলাভাষীদের ভাগ বেড়ে ২২% থেকে ২৯% হয়েছে। মাত্র ২০ বছরের মধ্যে অসমিয়ারা সংখ্যাগুরু ভাষাগোষ্ঠী থেকে অনেক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর একটা হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমরা এই লেখায় অসমিয়া বাঙালির বাড়া-কমা নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথমেই যে প্রশ্নটা আসবে, এর সাথে নাগরিকপঞ্জির কী সম্পর্ক? নাগরিকপঞ্জি নবীকরনের উদ্দেশ্য বিদেশিদের ছেঁকে বার করে দেওয়া। বাঙালিদের ভাগ বাড়ার মানে এই নয় যে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ঢুকছে। ভারতের অন্য জায়গা থেকে যদি বাঙালিরা আসামে আসে তাহলে বাঙালিদের ভাগ বাড়বে। তাদের বার করে দেওয়ার কথা নিশ্চয়ই হচ্ছে না? ভারতের অন্য নাগরিকদের মত এদেরও অধিকার আছে আসামে বসবাস করার। এরকম মানুষজনও আছেন যারা বলছেন আসামের স্থানীয়দের সংরক্ষণ দেওয়া হোক যা অন্য অঞ্চলের লোকেরা পাবে না। এমন সংরক্ষণ উত্তরপূর্বের কয়েকটি রাজ্যে জনজাতিদের দেওয়া হয়। যেমন ভোটে দাড়ানোর অধিকার, সরকারি চাকরির অধিকার ইত্যাদি। কিন্তু সে ভিন্ন ইস্যু। নাগরিকপঞ্জির সাথে গুলিয়ে দেওয়ার মানে হয় না।
দুই, ২০১১ সালের তথ্যের সাথে ১৯৯১ সালের তথ্যের তুলনা করা কেন? ২০০১-এর সাথে করলে কী হয়? ২০১১ এর আগে ২০০১ সালেই জনগণনা হয়েছে। নিচে ১ নং সারনীতে ২০০১ ও ২০১১ সালে আসামের প্রধান ভাষাগোষ্ঠীগুলোর তথ্য দিয়েছি।
জনসংখ্যা, ২০০১ (হাজার) | জনসংখ্যা, ২০১১ (হাজার) | মোট জনসংখ্যার ভাগ, ২০০১ (%) | মোট জনসংখ্যার ভাগ, ২০১১ (%) | জনসংখ্যার বৃদ্ধি (%) | |
অসমিয়া | ১৩০১০ | ১৫০৯৬ | ৪৮.৮১ | ৪৮.৩৮ | ১৬.০৩ |
বাঙালি | ৭৩৪৩ | ৯০২৪ | ২৭.৫৫ | ২৮.৯২ | ২২.৮৯ |
হিন্দি | ১৫৭০ | ২১০১ | ৫.৮৯ | ৬.৭৩ | ৩৩.৮২ |
বোড়ো | ১২৯৬ | ১৪১৬ | ৪.৮৬ | ৪.৫৪ | ৯.২৬ |
নেপালি | ৫৬৫ | ৫৯৬ | ২.১২ | ১.৯১ | ৫.৪৯ |