
নোটবন্দীর ন’মাস পর রিসার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট যে অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে তার সম্পর্কে আন্দাজ আগেই করা হয়েছিল।নভেম্বরে যত নোট বাতিল হয়েছে তার ৯৯% ব্যাঙ্কের কাছে ফিরে এসেছে।এই খবর কয়েকটা প্রসঙ্গের অবতারণা করে।এক এক করে লিখছি।
১। কালা ধনের কী হল? মোদিজি ৮ নভেম্বরের ভাষণে কালোটাকা ধরার ওপর জোর দিয়েছিলেন। নোটবন্দীর পর দুষ্টু লোকদের তোশকের নিচে জমানো কালো টাকা অকেজো হয়ে যাবে।কিল খেয়ে কিল হজম করা ছাড়া আর গতি থাকবে না।কালা ধন সেরেফ গঙ্গা মাইয়াতে ফেলে দিতে হবে। কেননা ব্যাঙ্কে জমা করতে গেলে সরকার বাহাদুর জবাবদিহি চাইবে।একইভাবে সন্ত্রাসবাদীদের টাকাও অকেজো হবে। সরকারের উকিল মুকুল রোহাতগি সুপ্রীম কোর্টে দাবি করেছিলেন চার থেকে পাঁচ লাখ কোটি টাকা ফেরত আসবে না। অর্থাৎ প্রায় ৩০% বাতিল নোট ব্যাঙ্কে ঢুকবে না। সেটাই কালা ধন। ৯৯% টাকা ফেরত চলে এসেছে মানে সেরকম কিছু ঘটে নি।
২। প্রায় গোটা টাকা ফেরত চলে এল এর কারণ কী?
(ক) এরকমটা কি হতে পারে কালো টাকা বলে কিছু ছিলই না, তাই যত টাকা বাজারে ছিল ফেরত চলে এসেছে? কিন্তুতাহলে কালাধন কালাধন করে লম্ফঝম্প করার কী দরকার ছিল? মনে করে দেখুন ২০১৪ সালে“আব কি বার মোদি সরকার” ক্যাম্পেনের মূল স্তম্ভ ছিল দুর্নীতি দমন।
(খ) দ্বিতীয় সম্ভাবনা, কালো টাকা ছিল, কিন্তু হয়তো আক্ষরিকভাবে নগদ টাকার রূপে ছিল না? হয়তো অন্য সম্পদের মাধ্যমে ছিল যেমন জমিজমা, সোনা -- যাতে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। তাহলে নোটবন্দী করে কালো টাকা শিকারে বেরিয়ে পড়ার কী অর্থ?
(গ) তৃতীয় সম্ভাবনা, যদি কালো টাকার কিছুটা নগদে থাকেও সেটা হয়তো ইতিমধ্যে সাদা হয়ে গেছে? অন্য লোকের ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট ভাড়া করে, কালো বাজারে নতুন নোট কিনে, লোক লাগিয়ে টাকা বদলে, ট্রেনের টিকিট কেটে পরে ক্যানসেল করে – হাজারএকখানা ফিকিরের খবর কাগজে পড়া গেছে।
৩। ১% টাকা আসে নি,সেটাকে হিসেব বহির্ভূত কালো টাকা বলা যায় কি?ওটাইসাফল্য? ভুক্তভোগীরা জানেন আচ্ছে দিনে বহু স্বচ্ছ পরিবার আছে যারা বাতিল নোট বদলায় নি। টাকা কালো এই জন্য বদলায় নি এমনটা নয়।হয়তারা টাকা সম্পর্কে জানত না,বা ভুলে গিয়েছিল,বা নোটবন্দীর সম্পর্কে জানতনা, বা সময় করে দূরের ব্যাঙ্কে যাওয়া হয় নি – এমন অনেক টাকা বদলানো হয় নি। সরকার বলেছিল বৈধ কারণ দেখালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নোট বদলানো যাবে। পরে কথার খেলাপ করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করে। ৩১ ডিসেম্বরের পর পুরোনো নোট বদলানোর জন্য পাবলিক রিসার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছে। পুলিশের তাড়া খেয়েছে। নোট বদলানোর সুযোগ দিলে বাকি ১% টাকাও হয়তো ফেরত চলে আসবে।
৪। তা’লে নোটবন্দী করে লাভটা কী হল?যখন বোঝা যাচ্ছিল বেশির ভাগ নোট ব্যাঙ্কে ফিরে আসবে সরকারের সুর তখন থেকেই বদলাচ্ছিল। এখন জেটলিজি দাবি করেছেন টাকা ব্যাঙ্কে ঢোকা মানে হল দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্র হিসেবের মধ্যে এল। কর আদায়ে সুবিধে হবে। টাকা পাকড়াও করা উদ্দেশ্য ছিল না(!, ১ নং বিন্দু দেখুন)।দুটো প্রশ্ন ওঠে।
(ক) যারা কালাধন ব্যাঙ্কে জমা করেছে তাদের কী হবে? ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছে, টাকা হিসেবে এসেছে, অতএব সাত খুন মাফ? সরকার ঠারেঠোরে জানিয়েছে কিছু লোককে নাকি টাইট দেওয়া হবে। উহা ভবিষ্যৎ কালে।
(খ) কালো টাকা হিসেবে এসেছে বুঝলাম। যে কালা কারবার থেকে কালো টাকার উৎপাদন হয়েছে তা হিসেবে এসেছে কি? যদি না আসে তাহলে কালা কারবার থেকে ভবিষ্যতে নতুন কালা টাকা বেরোবে।
৫।ডিজিটাল ব্যবসার বহর বেড়েছে, জেটলিজি বলেছেন। প্রথমত, আদৌ বেড়েছে কিনা সন্দেহের ঊর্দ্ধে নয়। নভেম্বর ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, চেক, ইত্যাদি অ-নগদী লেনদেন এক ঝটকায় বেড়ে গেছিল। তারপর কিন্তু ডিজিটাল বা অন্যান্য অ-নগদী কেনাবেচার পরিমাণ ক্রমাগত কমে আসছে। দীর্ঘকালীন প্রবণতায় যতখানি বাড়ার কথা ডিজিটাল কেনাবেচারপরিমাণ তার বেশি বাড়ে নি। কারণ সহজবোধ্য। লোকে ঠেকায় পড়ে ডিজিটালে গিয়েছিল, শখ করে যায় নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের অভ্যাসে ফিরে এসেছে, কারণ ডিজিটাল পেমেন্ট অনেক সময় খরচা বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যে সরকার এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার মাশুল বাড়িয়েছে। লোকজন নগদ খরচায় আরো হিসেবি হয়ে পড়েছে। ফলে ডিজিটাল ব্যবসা বেড়েছে। তৃতীয়ত, প্রাক-নোটবন্দীর তুলনায় আজকের বাজারে নগদের পরিমাণ কমেছে। এই কমাটা সরকারের সচেতন সিদ্ধান্ত। সরকার কম নগদ ছাড়ছে যাতে লোকে বাধ্য হয় কম নগদ ব্যবহার করতে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ডিজিটাল ব্যবসা শুরুতে যত বেড়েছিল তার থেকে নেমে এসেছে। শেষ হিসেবে যত বেড়েছে তার পেছনে নোটবন্দীর কতখানি অবদান তা তর্কসাপেক্ষ। ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবসার মুনাফা অবশ্যই বেড়েছে কেননা ব্যবসার পরিমাণ বেড়েছে।
৬। রাজনৈতিক মুনাফাও হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ভাজপার জয় তার প্রমাণ। আম জনতা জেনেছে, মোদিজি এ্যাক্কেরে নো-ননসেন্স দেশাধিনায়ক। মোদিজি কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাবড়ান না। গন্ডেরি রামবাটপারিয়া থেকে রামা কৈবর্ত হাসিম শেখকে একসাথে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, সিয়াচেনের সেনাদের পাশেই। পাবলিককে দেশপ্রেম-আত্মত্যাগ-মোদিভক্তি ছোপানো একখান নৈতিক-রাজনৈতিক গপ্পো বেশ খাওয়ানো গেছে।একশোর বেশি লোক ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মরে গেল। নতুন নোট ছাপতে আট হাজার কোটি টাকা খরচা হল। লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাবলিকের লক্ষ ঘন্টা নষ্ট হল। ব্যাঙ্ক কর্মীদের নাওয়াখাওয়া চুলোয় গেল। নোট-আকালের ঠেলায় গরিবগুর্বোদের রোজগার বন্ধ হল।অপিচদেশমাতৃকার সেবায় কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। ভাজপারওক ঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই।
sm | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫০82024
2>&1 | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭82025
sm | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮82026
nabanita | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৮82027
ddt | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৩৬82028
Prativa Sarker | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১২:১৮82022
a | unkwn.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১২:৪৪82023
ddt | unkwn.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:১০82029