১৯৫১ সালে পাউল সেলান ক্লাউস ডেমুজকে বলেছিলেন তাঁর একমাত্র বন্ধু। পাউল এবং ক্লাউস-এর বন্ধুত্বের কথা ইয়োরোপের সাহিত্যজগতে সুবিদিত। সেলান তাঁর ‘দ্য জগ’ নামক কবিতাটি উৎসর্গ করেছিলেন ক্লাউস ডেমুজকেই। ক্লাউস এবং তাঁর স্ত্রী ন্যানির সঙ্গে পাউলের বন্ধুত্ব ছিল গভীর।
কবি ক্লাউস ডেমুজ ও পাউল সেলান (ডান দিকে)
১৯২৭ সালে জন্ম এই শিল্পবিষয়ক ইতিহাসবিদ কবি ক্লাউস ডেমুজের। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। আর্ট-হিস্টোরিয়ান এবং কিউরেটর হিসেবে তিনি ভিয়েনাতেই বেশির ভাগ সময় কাটান। জার্মান কবিতার ইতিহাসে ক্লাউস ডেমুজ একদমই অন্যরকম এক কবি। বিশেষ করে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা চলছে, তখনও তিনি তাঁর মনের স্থিরবিন্দুতেই অবস্থান করতেন। একপ্রকার মহাজাগতিক মরমিয়াবাদ তাঁর মনের মধ্যে সবসময়ই কাজ করত। যার ফলে, তিনি সবকিছুর মধ্যে থেকেও, সবকিছুর থেকে আলাদা থাকতে চাইতেন। তাঁর কবিতায় তাই একপ্রকার মিস্টিক পরিবেশ তৈরি হয়। হয়তো, অস্তিত্ববাদের যে আধুনিকতা ইয়োরোপে বিস্তার লাভ করছিল তখন, তা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানিতে তাঁর কবিতা একেবারেই ব্যতিক্রমী।
১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই। কিন্তু তাঁর কবিতার অন্তর্নিহিত শান্ত স্বরের জন্যই হয়তো সমসময়ে খুব বেশি আলোচিত হননি। এমনকি, খুব বেশি কবিতা-সংকলন ও অ্যান্থোলজিতেও তাঁর কবিতা বা নাম অন্তর্ভুক্ত হত না। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘দ্য হেভি কান্ট্রি’ প্রকাশিত হওয়ার পরে আবার ১৯৬৯ সালে প্রকাশ পায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘টুমরো নাইট’। এর পর ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘ইন দ্য নিউ সাইলেন্স’ বা ‘ নতুন নীরবতায়’। ২০১৭ সাল অবধি তাঁর ১৮টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
বোধিবৃক্ষ
যতটা গভীরে যাওয়া যায়
গাছের শিকড়গুলি
তত দূরে গেছে।
গাছের শীর্ষ
নিজেই ভেবেছে সে-ই
নক্ষত্র, আলোর মতো।
যেন বা তারই মধ্যে
সূর্যের ঘূর্ণনপথ
চাঁদের বাড়িও
সেখানেই ঝুলে আছে
সাদা সাদা ফেনায়
গভীর স্বপ্নের মতো।
নিজেরই আকর্ষণে
নিজেরই ভিতরে ঘুরে
আত্মার পুনর্জন্মে
তারা ঘুরে চলে।
--
দিনরাত্রি থেকে
চড়াইয়ে, জঙ্গলে
দেবদারু গাছের ভিতর
বরফ পড়ছে।
দীর্ঘ দীর্ঘতম জঙ্গল
মিশে গেছে মেঘের
দরজায়।
ক্রিভার্স, গভীর ও খাড়া।
হিমবাহ উজ্জ্বলতর।
ধূসর, তোমায় দেখি
রাতের আগেই কুয়াশায়
একা। গোধূলির মতো
শান্ত।
---
নতুন নীরবতায়
আমি তোমার সঙ্গে
এক নদী সাঁতরে যেতে যেতে
বরফের মধ্যে
হারিয়ে গেছি।
এখানে, কুয়াশার মধ্যে
স্রোত ভেসে যায়।
দূরে গাছেদের মধ্যে
শীর্ণ ওই রাস্তা দিয়ে
হেঁটে গেছ তুমিও।
--
বিদ্যুৎ
যখন তোমার কথা মনে পড়ে
শীতের ভিতর
দেখি আগুনের মতো চোখ
আমায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
সন্ধেবেলার দিকে
বারবার ছুটে আসছে কিশোর।
যেন-বা আমারই আয়নায়
তাকিয়ে রয়েছি।
--
আশ্রয়
ভেঙে যায় যখন
ওই মাটি
আত্মা উঠে আসে
কয়েক শতাব্দীর।
যখন
তোমার কেউ নেই
তখন
গাছের কথা ভেব।
কারণ তখন
তোমার সত্যিই
কেউ নেই।
পড়লাম।ভালো লাগলো।
ভালো লাগল। জার্মান কবির কবিতা পড়তে পাওয়া সৌভাগ্যবিশেষ। হিন্দোলদাকে অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।