১৯৩৫ সালে ড্রেসডেনে জন্মগ্রহণ করেন এই কবি। যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে তিনি জার্মানিতেই কাটান। যুদ্ধের পর পূর্ব জার্মানিতে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত তিনি অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৮-তে তিনি একটি পত্রিকার অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ের সম্পাদক হন। ১৯৫৯ থেকে ৬৩ পর্যন্ত তিনি একটি শিল্প সংক্রান্ত পত্রিকার সম্পাদনা করেন। হিটলার জমানার ফ্যাসিবাদের পর তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন সোভিয়েত শাসিত পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট শাসনও। পূর্ব জার্মানিতে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পরেই তিনি সেই সময়কার শাসকদের কুনজরে পড়েন। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় পশ্চিম জার্মানিতে। হিটলার শাসনের সময়কার জার্মানির চেয়েও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পূর্ব জার্মানির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়েই তিনি লিখে গেছেন দুটি দেশেই। তাঁর কবিতা নিয়ে পশ্চিম জার্মানির কবিরা ছিলেন উল্লসিত। বের্লিন দেয়াল ভাঙার পর জার্মানিতে তিনি অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর কবিতার মধ্যে সমসাময়িক অ্যান্টিপোয়েট্রির ছায়া পাওয়া যায়। ২০০০ সালের ২০ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
জার্মান নারী ১৯৪৬
হয়তো এটা মজার বা একদমই মজার নয়
আমার মন বলল, সে ছিল উপযুক্ত পুরুষ
জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে সে গাছেদের সঙ্গে কথা বলত,—
কিন্তু সেগুলো কথা ছিল না, ছিল হুমকি
বলত, ‘আমি তোমাদের কেটে কেটে আসবাব বানিয়ে ছাড়ব’
সে ছিল কাঠের মিস্ত্রী, কমিউনিস্ট, বেকার।
বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত একটা রান্নাঘরের মধ্যে
তুমি যদি একটু সুন্দর নারী হও, তাহলেই তাকে আর থামাবে কার সাধ্য
যখন সে আমাকে নিতে এসেছিল, তখন মালকিন এমনই বলেছিলেন
তার পর হিটলার, মালকিন বললেন, হিটলার শব্দের মানেই হল যুদ্ধ
এখানেও কোনও শিশুর অস্তিত্ব ছিল না, হত্যা করার জন্য
আমার কোনও শিশুর দরকার ছিল না, মালকিনের একটি মেয়ে ছিল।
তার পর যুদ্ধ শুরু হল। এ এক অন্য যুদ্ধ
রাশিয়ায় যুদ্ধবন্দীদের বেঁচে থাকার যুদ্ধ, নতুন ভাবে শিক্ষা দেওয়া
গাছগুলো কাটতে কাটতে যখন বনসাই হয়ে গেছে
কেউ কেউ চেয়ার, টেবিল, খাট
তখন কেউ বলল, গাছে পাতা নেই, আমাদের কেউ চুমু খায় না।
ভাঙা বাড়ি
তুমি ইতিহাসের কথা বললে, আমি দেখলাম একটি খসে পড়া স্তম্ভ
হুমকির সুরে কথা বলতে বলতে যেন ঝড় স্থির হয়ে গেছে
দেওয়ালে গুলির দাগ, সমাধির উপরে পচা ফুল
যেন গোধূলির রঙ তোমার মুখের উপর এসে পড়েছে
আমরা কেউ দরজা পেরিয়ে মাঠে নামতে পারি না
এর দায় তোমার নয়, এই দ্যাখো পেট ফুলে গেছে তিমি মাছের
আকাশ থেকে খসে পড়ছে পাখি, যারা একদিন ধূসর ধোঁয়ার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল
সাঁজোয়া গাড়ির মতো মন নিয়ে আমাদের দিন শুরু হয়
ড্রাগন
আমাদের দেওয়ালগুলো আমাদের তৈরি করা নয়
যদি তৈরি করা হত, কবে সেই দেওয়াল ভেঙে পড়ে যেত
পঞ্চাশ বছর ধরে একটি ড্রাগন আছে আমাদের মধ্যে
এত লোভ, এত জিভ
লকলকে খুনী এক, আমাদের মধ্যে
এসেছে বন্দুকবেশে, এসেছে আদর করে, চেনে বেঁধে নিতে
তাকে যতই আদর করবে, তুমি হয়ে উঠবে তার পোষা চাকুরিজীবী
আবহসঙ্গীত বাজবে,
যেন হত্যার আগের রাতে
স্বাধীনতার বিউগল।
ভালবাসার স্মৃতিস্তম্ভ
এইখানে সমাধি ছিল, আলোর মধ্যে, ছায়ার মধ্যে
ঘোড়ার গায়ের গন্ধের মতো
ভালবাসা ছিল
তোমার চোখের মধ্যে যেদিন বেয়নেট ঢুকে গেল
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম
আমি প্রতিশোধ নেব
আজ দেখো, কেমন প্রার্থনা করছি
আর সৈন্যরা এসে
আমার বুকে এঁকে দিয়ে যাচ্ছে
ক্রুশ
আমরা ভাল আছি
আকাশের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো
আমরা ভাল আছি
আলো আসছে
অন্ধকার আসছে
বৃষ্টি আসছে
এমনকি বোমাও
যুদ্ধবিমানও
সভ্যতার ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে
এই তো বেঁচে আছ তুমি
আমিও
একবুক মৃত গন্ধ টেনে নিতে নিতে
বলছি
আমার পরিচয় দাও
আমার আয়না দাও
আমার ভালবাসা দাও
আমার দেশ দাও
আমরা ভাল আছি
এখনও
কাঁদতে পারছি তোমার জন্য
স্বীকারোক্তি
এত কিছু সহ্য করার ক্ষমতা কোথা থেকে আসে মানুষের?
খিদে ও যৌনতা থেকে?
ভালবাসা থেকে?
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস থেকে?
আশা থেকে?
স্বপ্ন থেকে?
এত কিছু মেনে নেওয়ার ক্ষমতা কোথা থেকে আসে মানুষের?
সমাধির দিকে তাকাতে তাকাতে
এক পাগল প্রশ্ন করেছিল।
আমি শুনেছিলাম মাত্র। আর কিছু করিনি, বিশ্বাস করুন কমরেড!
হিন্দোলের লেখাটি অসাধারণ। জার্মান কবিতার উপর একটি বড় কাজ প্রকাশিত হোক, হিন্দোলের। দ্রুত
চমৎকার অনুবাদ। এই কবির কবিতা এই প্রথমবার পড়ছি। ঋদ্ধ হলুম। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
অসাধারণ অনুবাদ!
কবির সাথে দারুণভাবেই পরিচয় হলো।
অসাধারণ, অসাধারণ এবং অসাধারণ। অনুবাদ সমেত বইটি পেতে চাই।