এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  নাটক

  • জাল

    সিদ্ধার্থ সেন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | নাটক | ২৮ মে ২০১২ | ২৬৬৮ বার পঠিত
  • (জাঁ পল সার্ত্রের L'Engrenage-এর অনুপ্রেরণায়)

    (১৯৪৬ সালে জাঁ পল সার্ত্র L'Engrenage নামে একটি চিত্রনাট্য লেখেন। প্রথমে নাম দেওয়া হয়েছিল --'নোংরা হাত'। তখনো একই নামের সার্ত্রের অতিবিখ্যাত নাটকটি প্রকাশিত হয়নি। যাই হোক, সিনেমাটা আর হয়নি। এবং সার্ত্রের অন্যান্য রচনার তুলনায় এই রচনাটা একদম-ই জনপ্রিয় হয়নি। ফ্রান্স এবং জার্মানীতে এটার নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করা হয়, এবং খুব তাড়াতাড়ি-ই বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনায় ফালাফালা করে ছাড়েন নাটকটাকে। তার কারণ-ও ছিল।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার মুখে সার্ত্র এমন একটা চিত্রনাট্য লিখলেন যা গোটা বিপ্লব-প্রক্রিয়াটাকেই প্রশ্ন করে বসেছিল। তখন সোভিয়েতের আকাশচুম্বী সাফল্য এবং বিপ্লব স্টালিন সাম্যবাদ এসবের লোককথা প্রায় অতিকথায় পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সের বামপন্থী হেজিমনিতে (সার্ত্র নিজেও যার অঙ্গ ছিলেন) স্বভাবতই তখন এমন একটি শিল্পপ্রয়াস বেশ অস্বস্তিকর যা ইঙ্গিত করেছিল যে বিপ্লব তার সন্তানদের গিলে খাচ্ছে।

    বর্তমান নাটকটি L'Engrenage থেকে বহুলাংশে অনুপ্রাণিত। পাত্র-পাত্রীদের নাম একই আছে। কিন্তু নাটকের অভিমুখ বদলে দেওয়া হয়েছে। সার্ত্র তাঁর নিজস্ব অস্তিত্ববাদী নৈতিকতার ভিত্তিভুমিতে দাঁড়িয়ে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন, চিত্রনাট্যের পাত্র-পাত্রীর অস্বস্তিকর বিবেকের কাছে। হাইডেগারের যে অস্তিত্ববাদী নিস্ক্রিয়তা সার্ত্রকে বিমুখ করেছিল তার প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছু রচনা লিখেছিলেন তিনি, এই চিত্রনাট্যটাও সম্ভবতঃ তারই অঙ্গ হিসেবে ভাবা যায়। কিন্তু আজকের পশ্চিমবঙ্গের পটভুমিতে দাঁড়িয়ে বর্তমান নাটকটা যে প্রশ্নগুলো করতে চাইছে, তা অনেক আলাদা। তার সাথে নৈতিকতার যোগ খুব বেশি নেই, বরং অনেক বেশি আছে বর্তমান রাজনীতির কাঠামোর মধ্যে থেকে উঠে আসা কিছু সমস্যার কথা, যে রাজনীতির সঙ্গে মুল নাটকের সম্পর্ক সামান্য । এর জন্য মোদ্দা থিমটাকে এক রেখে মূল রচনাকে প্রায় ভাঙচুর করতে হয়েছে। নতুন অনেক দৃশ্য এসেছে, স্থান কাল পালটে গেছে, প্রচুর দৃশ্য বাদ গেছে, পাত্র-পাত্রীর চরিত্রের অভিমুখ বদলে গেছে, একমাত্রিক চরিত্রকে বহুমাত্রিক করা হয়েছে, এবং মূল রচনার রশোমনীয় স্ট্রাকচার যতটা পারা যায় কাট-ছাঁট করে লিনিয়ার করতে হয়েছে। এর ফলে বর্তমান নাটকটা শিল্প হিসেবে কেমন হয়েছে বলা মুশকিল, তবে যে প্রশ্নগুলো করতে চাওয়া হয়েছিল, সেগুলো হয়ত কিছুটা করতে পারা গেছে।

    নাটকটা লেখার জন্য মার্ভিন সেভিলের করা মুল রচনার ইংরেজি অনুবাদ 'In the Mesh'-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। )

     



    দৃশ্য \\০১

    (শহরের রাজপথ। শুনশান। ল্যাম্পপোস্ট থেকে একটা পুতুল ঝুলছে। পুতুলের বুকে একটা প্ল্যাকার্ড, সেখানে বড় বড় করে লেখা ‘জাঁ অগুয়েরা, অত্যাচারী’। রাস্তায় একটা মৃতদেহ পড়ে। দূরে মাঝে মাঝে গুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। একটা গাছের আড়াল থেকে একজন বিপ্লবী বেরিয়ে আসে। হাতে বন্দুক। চারিপাশ সতর্ক চোখে দেখে দৌড়ে এগিয়ে যায় দেওয়ালের গা ঘেঁষে। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগানের বুলেটের আওয়াজ পাওয়া যায়। লোকটা মৃতদেহের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে বাঁচায়। গুলির শব্দ থেমে গেলে আবার ছুটে এগোতে যায়। আবার গুলির শব্দ। এবারে পড়ে যায় লোকটা। কিছু বিদ্রোহী মহিলা ও পুরুষ প্রবেশ করে। ছেঁড়াখোঁড়া পোষাক, হাতে বন্দুক। উল্টোদিক থেকে আরেকজন ছুটতে ছুটতে ঢোকে। দলনেতা তার দিকে এগিয়ে যায়)

    দলনেতা - খবর কী?
    বিদ্রোহী - শত্রুঘাঁটি দখলে। রাজভবনের দিকে যাচ্ছি আমরা।
    দলনেতা - অগুয়েরা কোথায়?
    বিদ্রোহী - রাজভবনেই আছে। ওখান ছেড়ে যায়নি।
    দলনেতা - তাহলে রাজভবনের দিকে যাওয়া যাক।

    (সকলে মিলে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে যায়)



    দৃশ্য \\০২

    (রাজভবনের ঘর। সোফা টেবিল দিয়ে সাজানো গোছানো। কয়েকজন আমলা বসে আছে। সকলেই খুব ভয় পেয়েছে। বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ। একজন মন্ত্রী জানালার কাছে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখতে চায় কি ঘটছে। হঠাৎ একটা গুলি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। মন্ত্রী ধড়াম করে পড়ে যায়, তারপর পড়ি মরি করে হুড়মুড় করে পালিয়ে আসে সোফার কাছে। ধুপ করে বসে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে।)

    আমলা ১ (মুখ খিঁচিয়ে) - বীরত্ব না দেখালেই চলছিল না, না?
    মন্ত্রী - কী করে জানব বেজন্মার বাচ্চাগুলো এতদুর চলে আসবে!
    আমলা ১ - থাক, আর মুখ খারাপ করতে হবে না। দু মিনিট পরে এই বেজন্মাদের দয়ার ওপরেই মরণ বাঁচন নির্ভর করছে।
    আমলা ২ (মুখ ঢেকে) - সব শেষ?
    আমলা ১ - ওরা এগিয়ে আসছে। এটাই শেষ আঘাত।

    (জাঁ ঢোকে। সকলে উঠে দাঁড়ায়। জাঁ-এর মজবুত চেহারা। চল্লিশ বছর বয়েস। বাঁ হাতখানা অসাড়। মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। আমলা ১ এগিয়ে যায়)

    আমলা ১ - শেষ আঘাত হানছে ওরা। আমরা সব কটা ব্যারাক হারিয়েছি। বাকি রইল এই রাজভবন।
    জাঁ (জানালা দেখতে দেখতে)-ভাল।
    মন্ত্রী - ওদিকে যাবেন না। গোলাগুলি চলছে। (জাঁ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে) না মানে, (উঠতে যায়, আরেকটা গুলির আওয়াজ, ধপ করে পা উলটে বসে পড়ে আবার), বলছিলাম কি, এখনো হার স্বীকারের সময় আসেনি। লড়াই চালাব আমরা।
    জাঁ - আমি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছি।
    মন্ত্রী - (উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায় জাঁ-এর দিকে) অসম্ভব। ঐকাজ আমি পারব না। ওদের ঝাড়ে-বংশে শেষ করব আমি।
    আমলা ২ - পাগল!
    জাঁ - যারা আমাদের আক্রমণ করছে, সকলেই গ্রামের কৃষক। ওদের নিকেশ করতে পারি না আমরা।
    মন্ত্রী - না। চাষা গেলে চাষা আসবে। কিন্তু আমরা পড়ে গেলে...আমি অবশিষ্ট সেনাবাহিনীকে...
    জাঁ(চেঁচিয়ে) - এটা আমার আদেশ। বুঝলেন? আমি নির্দেশ দিচ্ছি। ওরা মরলে গোটা দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
    আমলা ১ - কিন্তু...
    জাঁ - আই অর্ডার!

    (মন্ত্রী মাথা নিচু করে। জাঁ পাশের টেবিল থেকে হুইস্কির বোতল তুলে গ্লাসে ঢালে, এক ঢোঁকে খায় পুরোটা। আরও কয়েকজন আমলা ঢোকে। সাথে দারিও। জাঁ আমলাদের দিকে তাকিয়ে হাসে)

    জাঁ - কিস্তিমাত!
    দারিও - তাহলে?
    জাঁ(আমলাদের দিকে ঘুরে, এক এক করে দেখিয়ে) - আপনাদের মধ্যে প্রায় সবাই বিশ্বাসঘাতক। আপনি, আমি নিশ্চিত। আপনিও, কিছুটা। আপনি, হতেও পারে, জানি না।শুধু তুমি দারিও, তুমি আমার সাথে থেকেছ সারা জীবন। (দারিওর কাঁধে হাত রাখে) তুমিই আমাকে শেষ মুহূর্তেও সঙ্গ দেবে, জানি আমি, ফায়ারিং স্কোয়াড হলেও। (দারিওকে দুহাত দিয়ে আলিঙ্গন করে। দারিও মাথা নিচু করে থাকে) ধন্যবাদ কমরেড!

    (ধড়াম করে দরজা খোলার আওয়াজ। অনেক বিদ্রোহী একসাথে প্রবেশ করে। একজন গুলি ছোঁড়ে। আমলা ২ পড়ে যায়। অনেকে মিলে অস্ত্র বাগিয়ে ধরে। জাঁ দ্রুত বিদ্রোহী আর আমলাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ে)

    জাঁ - গুলি করার কোনও দরকার নেই। আমি আত্মসমর্পণ করছি।

    (ডান হাত ওপরে তোলে। বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে ধ্বনি ওঠে, ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’। মন্ত্রী এতক্ষন জাঁ-এর পেছনে লুকিয়ে ছিল। এবারে গুটি গুটি পায়ে বিদ্রোহীদের দলে ভীড়ে যায়। তাকে দেখাদেখি অন্যরাও। সবশেষে ছিল দারিও। সে-ও গিয়ে জনতার দলে ঢুকে পড়ে)

    জাঁ (ম্লান হেসে) - দারিও, তুমিও? তাহলে সিজারের পতন হোক!

    (দারিও মাথা নিচু করে। হঠাৎ একজন চাষি চেঁচিয়ে ওঠে, ‘বিশ্বাসঘাতক!’ তারপর নিজের বন্দুক তুলে ধরে জাঁ-এর দিকে। জাঁ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে, যেন অবাক বিস্ময়ে। ফ্রাঁসোয়া আর সুজান প্রবেশ করে)

    ফ্রাঁসোয়া (চেঁচিয়ে) - থামো, অগুয়েরা এখন আমাদের বন্দী। এর গায়ে হাত দেওয়া চলবে না কিছুতেই। (চাষীর হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেয়) যথাযথ বিচারের মাধ্যমেই শুধু শাস্তি দেওয়া সম্ভব।
    জাঁ - ফ্রাঁসোয়া, কী খবর? তোমাদের ক্যু তো সফল।
    ফ্রাঁসোয়া (রুক্ষ ভাবে) - পুরোটা নয়, আংশিক মাত্র। কেবলমাত্র তোমার বিচার আর শাস্তির পরেই একে সফল বলতে পারি।
    সুজান (চেঁচিয়ে, ক্ষিপ্তের মত) - মনে আছে জাঁ, কিরকম কুকুরের মত ব্যবহার করতে আমার সাথে? আজ কিন্তু আমরা অতটা মহানুভব হব না (ঝাঁপিয়ে পড়ে জাঁ-এর ওপর। কিল চড় মারতে থাকে। জাঁ বাধা দেয় না। ফ্রাঁসোয়া সুজানকে ছাড়িয়ে নেয়, ধরে রাখে দুহাতে) প্রতিশোধ নেবই, প্রতিজ্ঞ্যা করেছিলাম। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কুকুরের মত শুয়ে থেকেছি তোমার দরজার সামনে, আর তুমি, তুমি...(কেঁদে ফেলে)
    ফ্রাঁসোয়া - পাগলামি কোরো না সুজান। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওর বিচার শুরু করতে হবে তাড়াতাড়ি।
    জাঁ - আমার বিচারের দায়িত্বে কারা থাকবে?
    ফ্রাঁসোয়া (নাটকীয় ভঙ্গিতে দুহাত মেলে) - আমরা সবাই, এই দেশের জনগণ।
    জাঁ- কোন আইন মোতাবেক?
    একজন বিদ্রোহী-আমাদের নিজেদের আইন।
    জাঁ- তোমাদের কতজন লোক মারা গেছে? হাজার? দু হাজার? পাঁচ?
    ফ্রাঁসোয়া- তার থেকেও বেশি।
    জাঁ- এত এত মানুষ...শুধু আমায় পেতে গিয়ে! ফ্রাঁসোয়া, আমায় মেরে ফেললে বিপ্লব বাঁচবে?
    ফ্রাঁসোয়া (এগিয়ে এসে জাঁ-এর চোখে চোখ রাখে)- তোমাকে এদের সবার জীবনের জন্য দাম দিতে হবে, জাঁ! কড়ায় গন্ডায়। তোমার ঐ ক্লেদাক্ত নিষ্ঠুরতাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে, এই কয়েক হাজার খুব বেশি নয়।
    জাঁ (হতাশায় কাঁধ ঝাঁকিয়ে)- তোমরা আমার চেয়ে অনেক গুণ বেশি স্বৈরাচারী হবে। ফ্রাঁসোয়া, তোমরা বড় বেশি দুর্বোধ্য। তোমরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

    (সকলে জাঁ কে ঘিরে ধরে। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়)



    দৃশ্য \\০৩

    (জনতার আদালত। অনেক মানুষ বসে আছে গাদাগাদি করে। জুরীদের দেখা যাচ্ছে না, যেন তারা ওপরের কোনো কক্ষে বসে আছে। একপাশের চেয়ারে জাঁ বসে। মাথা ঝোঁকানো। ফ্রাঁসোয়া, সুজান, দারিও মঞ্চের সামনে, মানুষের ভিড়ের মুখোমুখি)

    ফ্রাঁসোয়া (উত্তেজিত কন্ঠে, কখনো উপরের জুরীদের দিকে তাকিয়ে, কখনো মানুষদের দিকে লক্ষ্য করে)- আমাদের নির্দয় হতে হবে কমরেডস। আপনারা এই মানুষটাকে পনের বছর হলো চেনেন। এর সঙ্গেই লড়াই করেছেন আপনারা। সাত বছর আগে আপনারাই তাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন কারণ আমরা যে গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র চাই তা আনার পক্ষে এই লোক আমাদের কাছে উপযুক্ত মনে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এ। জোতদার-পুঁজিপতির হাত থেকে যে জমি ছিনিয়ে নিয়ে সমবন্টনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ ক্ষমতায় এসেছিল, সেই জমিই সে তুলে দিয়েছে পুঁজিপতির হাতে। আজ আমরা তার বিচার করছি এবং কৈফিয়ত চাইছি। গণতন্ত্র এবং দেশপ্রেমের নামে আমি শপথ নিচ্ছি যে আইনের বিচার থাকবে সবার উঁচুতে এবং সেই বিচার মোতাবেক যা রায় হবে সেই মতন সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ। আমি এখন এই প্রসিডিং-এর দায়িত্ব গ্রহণ করব।

    (জনতা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানায়, চেঁচায়)

    ফ্রাঁসোয়া (জাঁ কে)- তুমি তোমার সমর্থনকারী কাউকে খুঁজে নাও।
    জাঁ- আমি নিজেকে ডিফেন্ড করব না।
    ফ্রাঁসোয়া- বেশ, তাহলে কিন্তু বিচার হবে একতরফা। আইনের নায্য সমানাধিকারের সুযোগ তুমি নিজেই হারাবে।(জাঁ হাসতে থাকে। আসতে আসতে হাসি উচ্চগ্রামে ওঠে। একসময় অট্টহাস্য হয়ে যায়। ফ্রাঁসোয়া বিরক্ত ভঙ্গিতে পেছন ফেরে) কমরেডস, আপনারা বলুন এর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ। (একটা গুঞ্জন ওঠে। তিনখানা শব্দ পরিষ্কার শোনা যায়, ‘জমি’, ‘দলতন্ত্র’, ‘স্বৈরাচারী’) আস্তে, এক এক করে বলুন।
    ভদ্রলোক (ধোপদুরস্ত পোষাক পরা। হাত তুলে চেঁচায়)- ও, ওর মুনাফার জন্য সব পদে দলতন্ত্র কায়েম করেছে। নিজের কাছের লোকদের বসিয়েছে ও।
    বুদ্ধিজীবী- ও প্রেসের কন্ঠরোধ করেছে। কাগজে ওর বিরুদ্ধাচরণের জন্য ওরই কমরেড লুঁসিয়ে দেলিত্রিচকে ও খুন করেছে।
    চাষি (নিজের পোড়া দোমড়ানো হাত দেখিয়ে)- আমাদের জমি কেড়ে নেবার জন্য গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
    যুবতী (কাঁদতে কাঁদতে)- আমার বরকে ও এলাকা ছাড়া করেছে, বাধ্য করেছে পালিয়ে বেড়াতে।

    (হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। ফ্রাঁসোয়া হাত নাড়ে, কিন্তু ঝামেলা থামে না। শেষে একজন চাষী লাফিয়ে ওঠে)

    চাষি- আসল কথাটা সব শালা চেপে যাচ্ছে। আমাদের চাষের জমিগুলোকে কারখানা মালিকদের কাছে বেচে দেবার একটা নোংরা খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল।
    দারিও (চেঁচিয়ে)- এটা মিথ্যে কথা।
    চাষি (দারিওর দিকে ফিরে) - শুয়রের বাচ্চা। মিথ্যে কীভাবে?
    দারিও- ওটা একশ বছর আগের আইন। আগের গভমেন্ট জমি লিজ দিয়ে দিয়েছিল ইন্ড্রাস্টিয়ালিস্ট গিল্ডের কাছে। গিল্ড নিজেরাই মালিক হয়ে গিয়েছিল জমির।
    চাষি- গান্ডু, বলতো আমায়, তোমার মনিবকে আমরা কি জন্য ক্ষমতায় এনেছিলাম? বসে বসে মালা জপার জন্য? (জনতার দিকে তাকিয়ে) আমাদের সবচেয়ে বড় পেশা কি?
    জনতা -চাষবাস।
    চাষি - কোন পেশায় আমরা সবচেয়ে শোষিত হই?
    জনতা -চাষবাস।
    চাষি- বিপ্লব কারা এনেছিল? কারা ঐ কুকুরটাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য লড়াই করেছিল, আর কারা এখনো লড়াই করছে?(প্রতি প্রশ্নেই জনতা চেঁচায় ‘চাষি’ বলে। দারিওর দিকে ফিরে) এবার বুঝছ তো চোদনা? কৃষকরা আজ এখানে হিসেব বুঝে নেবে কড়ায় গন্ডায়। তোমরা তো শপথ নিয়েছিলে ল্যান্ড সিলিং করবে। কেন করোনি? কেন পুলিশ দিয়ে চাষিদের পিটিয়েছিলে? (জনতা হিস হিস শব্দ করে রাগে) কুকুরটাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।
    ফ্রাঁসোয়া (হাত তুলে)- চুপ চুপ। তাহলে আমাদের মুলত দুখানা অভিযোগ। নায্য স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও লা-লুমিয়ের কাগজের সম্পাদক লুঁসিয়ে দেলিত্রিচকে হত্যা করা, আর কৃষিজমি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিয়ে বিদ্রোহী কৃষকদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণ। দারিও, তুমি সাক্ষ্য দেবে, তুমি ওর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলে, কেমনভাবে ও কৃষিজমির সর্বনাশ করে ছেড়েছিল।
    দারিও (জাঁ-এর দিকে তাকিয়ে)- ক্ষমা করো জাঁ, আমি তোমায় ভালবাসি, কিন্তু সত্যিগুলো বলতেই হবে। (জাঁ চোখ বন্ধ করে সম্মতিসুচক মাথা নাড়ে। দারিও উঠে দাঁড়ায়। সকলে অডিয়েন্সের দিকে তাকায়। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়)



    দৃশ্য \\০৪

    (রাজভবনে জাঁ-র অফিস। জাঁ, ফ্রাঁসোয়া এবং দারিও দাঁড়িয়ে)

    দারিও(উত্তেজিতভাবে)- তোমার সহকর্মী হিসেবে আমি কৈফিয়ত দাবি করছি জাঁ, কোন আদেশবলে মিলিটারি পাঠানো হল গ্রামে?
    জাঁ- আমার আদেশে।
    ফ্রাঁসোয়া- আর মন্ত্রীসভায় সেটা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনটাও বোধ করোনি তুমি? দেশটা চালাচ্ছে কে? আমরা, তোমার কমরেডরা, যারা বিপ্লবে একসাথে লড়লাম আর মরলাম, নাকি পুলিশ মিলিটারি আর আমলাতন্ত্র?
    জাঁ(উত্তেজিত)- এটা ছাড়া আমার কিছু করার ছিল না। এটা দেশের আইন। আমি পাল্টাতে পারি না। বেআইনিভাবে কারখানা ভাঙচুর হলে আমায় ব্যবস্থা নিতেই হবে।
    দারিও- বেআইনিভাবে? আমরা ক্ষমতায় আসার আগে ঠিক এক-ই জিনিস করিনি? কৃষিজমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিক্রিয়ায় বড় শিল্পগুলোকে দখলে আনি নি আমরা?
    জাঁ- সেটা দশ বছর আগের ঘটনা দারিও। তুমি ভুলে যাচ্ছ এখন আমরা পলাতক বিপ্লবী নই।
    দারিও(হতাশভাবে মাথার চুল খামচে)- বড্ড তাড়াতাড়ি পালটে যাচ্ছ জাঁ। এই জাঁ-কে আমি চিনি না। আমি আমার কমরেড জাঁ-কে চিনি।
    জাঁ- তোমরা কিছুতেই বুঝবে না। (মদ খায়) তোমরা বুঝবে না, আমার কিছু করার ছিল না। বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আমি যুদ্ধে যেতে পারব না। আমায় পুঁজিবাদ আনতেই হবে।
    ফ্রাঁসোয়া- সেটা আনবে পুঁজিবাদীরা। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরা ক্ষমতা দখল করেছিলাম? আমাদের পুলিশ গ্রামের চাষিদের গুলি করছে, আর আমরা এখানে বিপ্লব বাঁচানোর কথা বলে যাচ্ছি। আর তুমি, যে কিনা আমাদের নেতা ছিলে, সে এখন একটা দালাল (ঘেন্নায় মুখ কোঁচকায়। একটুক্ষণ সকলে চুপ। জাঁ-র হাত ধরে) জাঁ, আমাদের কথা শোনো, তুমি আমাদের নেতা। এখনো নেতা। এখনো সময় পেরিয়ে যায়নি। ক্যাপিটালিস্ট গিল্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াও জাঁ। তোমার পলিসি পাল্টাও।
    জাঁ- এটা হতে পারেনা। এই রাস্তাতেই আমায় হাঁটতে হবে। (হঠাৎ রেগে উঠে) তোমরা কি করছ? মুখে এত বড় বড় কথা বলে মন্ত্রীসভায় আছ কেন তাহলে?
    ফ্রাঁসোয়া(পিস্তল বার করে)- বেশ, তাহলে শেষ হয়ে যাক সবকিছু। বিপ্লবের নামে শুরু হয়েছিল, বিপ্লবের অধিকারেই নিকেশ হোক আজকে।
    দারিও- ফ্রাঁসোয়া পাগল হয়ে গেলে তুমি?
    জাঁ- পিস্তলটা নামাও।
    ফ্রাঁসোয়া(জাঁ-র দিকে পিস্তল তাগ করে) - বিপ্লবের স্বার্থে, দুঃখিত কমরেড।
    দারিও- ফ্রাঁসোয়া পাগলামি করো না।

    (দারিও ফ্রাঁসোয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধস্তাধস্তি। একটা গুলি বেরিয়ে যায়। রক্ষীরা ছুটে আসে। দারিও পিস্তল কেড়ে নেয়।)

    দারিও- উন্মাদ হয়ে গেলে নাকি? কি করতে যাচ্ছিলে তুমি?
    ফ্রাঁসোয়া(চিৎকার করে)- এর ফল আমরা একদিন আমরা সকলে ভুগব। ওই স্বৈরাচারীকে আমরা গদিতে বসিয়েছি, এই পাপ আমাদের সবার দারিও। (রক্ষীরা এসে ফ্রাঁসোয়াকে ঘিরে ধরে) আমায় জেলে পুরে এত এত লোকের গলা টেপা যাবে না। (রক্ষীরা ফ্রাঁসোয়াকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। চিৎকার করে) বিশ্বাসঘাতকেরা টিকবে না। পরিবর্তন হবে। হবেই। (রক্ষীরা ফ্রাঁসোয়াকে প্রায় পাঁজাকোলা করে বেরিয়ে যায়)
    জাঁ(দারিওকে)- ধন্যবাদ। (একটু চুপ থেকে) তবে নিকেশ করে দিলেই ভাল হত মনে হয়।

    (দারিও জাঁ-এর দিকে ক্রুদ্ধ-দৃষ্টিতে তাকায়। পিস্তলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে যায় বাইরে)



    দৃশ্য \\০৫

    (বিচারসভা। দারিও সাক্ষ্য দিচ্ছে)

    দারিও- এটা সত্যি যে জমি হস্তান্তরের ব্যাপারে সরকারের কিছু করার ছিল না কারণ এটা ছিল আগের সরকারের ব্যাপার। কিন্তু অগুয়েরা সেই নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানায়নি। ও ক্ষমতালোভী শাসকে পরিণত হয়েছে আর প্রতিক্রিয়ায় চাষিদের জাগরণ ঘটছে সব জায়গায়। তারা কারখানাগুলোর দেওয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে, নষ্ট করছে যন্ত্রপাতি। প্রথমে পুলিশ গিয়েছিল, তারপর গেল আর্মি। অত্যাচার করা হল ভয়ঙ্কর। ন’খানা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হল, ১৫,০০০ মানুষকে এলাকাছাড়া করা হল, মারা গেল কয়েকশ।
    সুজান (লাফিয়ে উঠে)-সবাই শুধু জমির কথা বলছে কেন? তোমাদের কোনো ধারণা আছে ও কি প্রকৃতির? আপনারা সব সমান, ওর অধীনতা স্বীকার করতে ভালবাসেন। ক্ষমতা পাবার পর থেকে ওর বাঁ হাত অসাড় হয়ে যেতে শুরু করে, আর ততই ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে থাকে সারা পৃথিবীর ওপর। সকলকে ও ঘেন্না করত, খুন করতে চাইত। দশ বছর ধরে আমি ওর সাথে ছিলাম। আমার দাবি ওর কাজ নয়, মানুষটাকে বিচার করা হোক। যেহেতু ওর একহাত নেই তাই ও ক্ষমতা চেয়েছিল, যেহেতু ওর একহাত নেই তাই ও মেয়েছেলে চেয়েছিল, আর যেহেতু ওর একহাত নেই তাই ও চেয়েছিল মানুষকে ঘেন্না করতে আর খুন করতে।
    দারিও -সুজান তুমি এটা বলতে পারো না।
    সুজান -তুমি ওর পক্ষ নিচ্ছ?
    দারিও -না, কিন্তু তুমি যেসব কথা বলছ তাতে তুমিই হাস্যস্পদ হবে, আর তোমার কথা শুনলে এটা বিচার থাকবে না, একে বলবে খুন।
    ফ্রাঁসোয়া -বিচার ব্যবস্থার পবিত্রতার ওপর ভরসা রাখো দারিও। তুমি এমন একজন মানুষকে বিচার করছ যাকে আমরা ভালবেসে ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম। সে আমাদের মিথ্যে কথা বলেছে, প্রতারিত করেছে।
    দারিও- এটা অসহ্য। এই বিচার জঘন্য। তোমরা ওকে খুন করছ।
    ফ্রাঁসোয়া -দারিও তুমি তোমার সীমা লঙ্ঘন করছ।
    দারিও- না, আমি চাইছি বিচারের সীমাটাকে বেঁধে দিতে। আমরা এখানে সুজানের খোশগল্প শুনতে আসেনি ফ্রাঁসোয়া। আমাদের উচিত ছিল আলোচনা করা, এই মুহূর্তে ও যা করেছে, জমি কেড়ে নেওয়া বা ক্যাপিটালিস্ট গিল্ডের কাছে আত্মসমর্পণ, সেগুলো কতটা দরকার ছিল। সেসব না করে আমরা একটা অকেজো হাত আর আমাদের হীনতা নিয়ে শুধু মিথ্যে বাগাড়ম্বর করে যাচ্ছি। আর ও, যে কি না নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারত, চুপ করে আছে। (জাঁ-এর কাছে যায়) জাঁ, আমি মিনতি করছি, তোমার নিজের স্বার্থে, তোমার স্মৃতির প্রয়োজনে নিজেকে ডিফেন্ড করো। জাঁ, তোমার প্রতি আমার কোনো ঘৃণা নেই। আমি এখনো তোমায় শ্রদ্ধা করি। আমার বিদ্রোহ তোমার কাজ, তোমার রাজনীতির জন্য। ওদের সঙ্গে কথা বল, কিছু বল। আমি ওদের জন্য লজ্জিত, আমার নিজের জন্য লজ্জিত।
    জাঁ- তুমি খুব নৈতিকভাবে ভাল থাকতে চাও, দারিও। (ফ্রাঁসোয়া হেসে ওঠে)
    দারিও(ফ্রাঁসোয়ার দিকে ফিরে)- তোমরা বিচারপর্বকে সাবোতাজ করছ। আমি বিচার করতে চাই অগুয়েরার নীতিকে, আর তোমরা সকলে নিজেদের গায়ের ঝাল মেটাচ্ছ এখন। এর মধ্যে আমি নেই। একটা মানুষকে কারণহীনভাবে খুন করতে আমি পারব না(বেরিয়ে যায়)
    ফ্রাঁসোয়া- কমরেডস, কোনো অবস্থাতেই বিচারপ্রক্রিয়াকে ব্যহত হতে দেওয়া চলবে না। আমরা বিচার করব মানুষটার কাজ, এবং মানুষটা, এই দুখানা জিনিসই।
    সুজান- হ্যাঁ ঠিক। আমরা বিচার করতে চাইছি একজন মানুষের সারা জীবনটাই। আমাদের জানা দরকার আমরা কাদের নিয়ে চলেছি। আমাদের জানা দরকার যে লোকটা সপ্তাহে পাঁচখানা মেয়ের সাথে শুত (শ্রোতাদের মধ্যে হাস্যধ্বনি) সে নেতা হবার কতখানি যোগ্য। আর আমাদের এটাও জানা দরকার যে যখন সৈন্যরা গ্রামের পর গ্রাম আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছিল তখন ও কী করছিল।(শ্রোতাদের দিকে তাকায়) কেউ জানেন কী করছিল? আমি জানি। ও তখন হাসছিল, আর খাচ্ছিল। বিগত দশ বছর ধরে আমি ছিলাম ওর রক্ষিতা এবং নার্স। এর থেকে বেশি সম্মান আমায় ও কখনো দেয়নি।

    (স্টেজ অন্ধকার হয়ে যায়)



    দৃশ্য //০৬

    (জাঁ-র ডাইনিং রুম। সুজান জাঁ-কে একটা কোট পরিয়ে দিচ্ছে। তারপর তাকে চুমু খেতে এগিয়ে আসে। জাঁ ভাল হাতখানা দিয়ে তাকে সরিয়ে দেয়)

    জাঁ - ঠিক আছে। (সুজান আহতভাবে তাকায়) এবার যেতে পারো। অতিথিরা আসবেন। ও হ্যাঁ, আমায় এক গ্লাস হুইস্কি দাও। (সুজান নীরবে গ্লাস এগিয়ে দেয়)ধন্যবাদ।
    সুজান - আমি থাকতে পারি না?
    জাঁ - না, তার কোনো দরকার নেই।
    সুজান - কেন, এলেন আসবে তাই?
    জাঁ(রুক্ষ ভাবে)- তোমায় যা বলা হচ্ছে সেটাই করো।
    সুজান (আবেগভরে জাঁ কে জড়িয়ে ধরে)- তাকাও আমার দিকে। কোন অংশে আমায় ওই ছেনালটার থেকে খারাপ লাগে?
    জাঁ(ঠেলে সরিয়ে)- আহ, বিরক্ত কোরো না।

    (সুজান কান্না চাপতে চাপতে বেরিয়ে যায়। অতিথিরা প্রবেশ করে। সকলেই দামী পোশাক পরা, অভিজাত ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে দারিও এবং এলেনও আছে। সকলে অভিবাদন জানায়, টেবিল ঘিরে বসে। খাদ্য পানীয় চলতে থাকে। ঘর একটুক্ষণ অন্ধকার হয়ে আবার আলো ফোটে। যেন মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে। সকলে উল্লাস করছে। হঠাৎ দুখানা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। সকলে থেমে এ ওর মুখের দিকে তাকায়। একজন সেনা অফিসার প্রবেশ করে। জাঁকে স্যালুট করে)

    অফিসার-আপনি যেরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন তা পালন হয়েছে।
    জাঁ- আচ্ছা? সাম্প্রতিক খবর কি?
    অফিসার- সাতখানা গ্রাম ভস্মীভূত। দশ হাজারের ওপর লোক পালিয়েছে। পুরো অঞ্চলটা আমাদের দখলে এখন।
    জাঁ (হাত তুলে)- ধন্যবাদ। (অফিসার বেরিয়ে যায়। অতিথিদের দিকে ফিরে গ্লাস তুলে ধরে)চিয়ার্স। শেষ বাধা এখন অপসারিত। (হাসতে থাকে জোরে জোরে। সকলে চিয়ার্স জানায়, কোয়েলার, ক্যাপিটালিস্ট গিল্ডের সভাপতি এগিয়ে আসে)
    কোয়েলার- মহামান্য অগুয়েরা, ক্যাপিটালিস্ট গিল্ডের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষ থেকেও, আপনার দীর্ঘ জীবন এবং অটুট সাম্রাজ্য কামনায় (গ্লাস তুলে ধরে। সকলের উচ্ছ্বাস। ঘর আবার অন্ধকার হয়ে যায়। জাঁ আর এলেন বাদে সকলে বেরিয়ে যায়। আলো ফুটলে দেখা যায় দুজনে দুজনের দিকে কামনামদির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সুজান প্রবেশ করে। থমকে দাঁড়ায়)
    সুজান -জাঁ!
    জাঁ(পেছন ফিরে)- আহ, আবার কী চাই?
    সুজান(চেঁচিয়ে)- এটা কি হচ্ছেটা কী?
    জাঁ-তুমি এখানে কেন? বেরিয়ে যাও এক্ষুনি। আর শোনো, দুখানা গ্লাস নিয়ে এসো।
    সুজান -জাঁ তোমার অফিসে গোয়েন্দাপ্রধান বসে আছে। নোটস নেবে।
    জাঁ- সে আমি বুঝব। যা বলা হল সেটা করো।
    সুজান- আমি যাব না।
    এলেন(বিরক্তিভরে)- সন্ধেটা মাটি না করলেই চলছিল না? তোমার এতই শুভাকাঙ্খী যদি চারধারে, আমায় না ডাকলেই পারতে। চলি। (যেতে যেতে সুজানের দিকে তাকায়। দুজনের চোখেই বিদ্বেষ) তোমার সুখী জীবনের কামনায় বাড়ি গিয়ে একগ্লাস ভদকা পান করব ডিয়ার (উচ্ছ্বল হাসি হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়)।
    জাঁ(রূঢ় ভাবে)- গোয়েন্দাপ্রধান ডাকো।
    সুজান- তুমি রাক্ষস হয়ে গেছ জাঁ।
    জাঁ(আঙ্গুল তুলে)- বেরিয়ে যাও, এক্ষুনি। (সুজান বেরিয়ে যায়। জাঁ হুইস্কি খায়।গোয়েন্দাপ্রধান ঢোকে)আসুন। কতগুলো পেলেন?
    গোয়েন্দাপ্রধান- ঝাড়াই বাছাই করে প্রাথমিকভাবে বারোজন। এরপর সকলের পূর্ব ইতিহাস চেক করতে হবে।
    জাঁ- খোঁজ নিন কারোর স্বামী বাবা বা ভাই বিদ্রোহীদের দলে ছিল কি না।
    গোয়েন্দাপ্রধান- ছিল না। আমরা খোঁজ নিয়েছি। এই মেয়েরা সকলেই আপনাকে প্রেমপত্র দিয়েছে, আর সকলেই আপনার গুণমুগ্ধ।
    জাঁ- আজ রাতের জন্য আমার চাই, যে কোনো একজনকে। খুব তাড়াতাড়ি (মদ খায়)আর হ্যাঁ, যে সব লোকগুলো এলাকাছাড়া হয়েছে, তাদের হুলিয়া পাত্তা লাগান। যে কোনো শিল্পস্থাপনের সম্ভাবনাকে গেরিলা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার জন্য এদের জুড়ি মেলা ভার। দেখুন এরা যেন এলাকায় ফিরতে না পারে। (কোয়েলার প্রবেশ করে) আসুন, কী ব্যাপার?
    কোয়েলার- গোপন রিপোর্ট পেলাম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কারখানায় আক্রমণ হবে। প্রথমে পাঁচিল ভাঙ্গা, তারপরে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর। ওদের দাবি ওদের জমি ফিরিয়ে নেওয়া হোক। এটা কেবলমাত্র একটা অজুহাত। ওরা চায় যে কোনো প্রকারে একটা অশান্তির বাতাবরণ তৈরী করা, শিল্পায়নের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেওয়া। (জাঁ চুপচাপ মদ খেয়ে যায়) গিল্ড সভাপতি হিসেবে আমি অবশ্যই চাইব আপনার প্রতিশ্রুতি আপনি পালন করবেন যে আপনি কিছুই করবেন না। যাই ঘটুক না কেন, চেষ্টা করবেন আমাদের অধিকার কেড়ে না নিতে।
    জাঁ- আমি কোনও চেষ্টা চালাব না। আপনাকে আমার কথা দিচ্ছি।
    কোয়েলার- যদি অবস্থা খুব, খুব তিক্ততায় পৌঁছয় আমি কি আশা করতে পারি আপনার সেনাবাহিনীর সাহায্য?
    জাঁ- অবশ্যই পারেন।
    কোয়েলার(হেসে)- আপনি মহানুভব। আশা করব এই বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে। (হাত বাড়িয়ে দেয়)



    দৃশ্য //০৭

    (আবার বিচারকক্ষ। সুজান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে)

    সুজান- আমি ওকে ঘৃণা করি। আমার প্রেমের গল্প ফাঁদতে এখানে আসিনি। কিন্তু বছরের পর বছর ওর সাথে আমি থেকেছি। একটার পর একটা অসৎ কাজের কথা জেনেছি যা আর কেউ জানে না। ওর সবথেকে কাছের কমরেড লা লুমিয়ের পত্রিকার সম্পাদক লুঁসিয়ে দেলিত্রিচকে ও হত্যা করেছিল স্রেফ ঈর্ষার বশে। কিন্তু এটাই প্রথম না। বিপ্লবের আগে কৃষক নেতা বেঁগা-কেও ও হত্যা করেছিল, যাতে ওর নেতৃত্বের পথ সুগম হয়।
    নারীকন্ঠ(চেঁচিয়ে)- মিথ্যে কথা! (সকলে পেছন ফিরে তাকায়। এলেন আর দারিও প্রবেশ করে। এলেনের কালো পোষাক। জাঁ চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। এলেন জাঁ-এর দিকে চোখ রেখে এগিয়ে যায়। তারপর ফ্রাঁসোয়ার দিকে ফেরে)
    এলেন(শ্রোতাদের দিকে ফিরে)- আমি এলেন দেলিত্রিচ। প্রধান অভিযুক্ত জাঁ অগুয়েরার একসময়ের কমরেড এবং লা লুমিয়ের কাগজের সম্পাদক লুসিয়ে দেলিত্রিচের স্ত্রী।
    ফ্রাঁসোয়া (শুকনো কন্ঠে)- বিচার ব্যবস্থায় বাধাদান না করলেই পারতে এলেন।
    দারিও- না ফ্রাঁসোয়া, এলেন আসতে চায়নি। আমিই জোর করে ওকে নিয়ে এসেছি। কারণ সত্যিটা সকলে জানুক।
    ফ্রাঁসোয়া- তুমি কোন পক্ষে?
    দারিও- তোমাদের পক্ষে, কিন্তু সবার আগে দেশের জনগণের পক্ষে। এই বিচার একটা প্রহসন হচ্ছে। তোমরা ওর মুখে কালি লেপার চেষ্টা করছ, আর বিপ্লবের স্বার্থে আমি চাইছি একটা বিতর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। যে নীতি নিয়ে জাঁ চলেছে তার একটা পর্যালোচনা হোক। সেই মত শাস্তি দেওয়া হোক ওকে। আমি চাই জাঁ নিজেকে ডিফেন্ড করুক, ব্যাখ্যা দিক নিজের নীতির।
    এলেন- আজকের লড়াইতে জাঁ মরে গেলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। কারণ ও লুসিয়েকে মেরেছে। কিন্তু যখন শুনলাম সুজান সাক্ষ্য দিচ্ছে...(সুজানের দিকে ফিরে)তুমি মিথ্যুক, সুজান। তুমি জান, তুমি মিথ্যে বলছ। ও ঈর্ষায় লুসিয়েকে খুন করেনি।
    ফ্রাঁসোয়া- তুমি তোমার স্বামীর খুনীকে ডিফেন্ড করছ?
    এলেন- না, কারণ ওকে আমি ঘৃণা করি। কিন্তু গত দশ বছর ধরে ও লুসিয়ে-র ছোট ভাই-এর মত, আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল ও। সেই স্মৃতির সম্মানে এসেছি আমি, সত্যিগুলো বলতে।
    সুজান (হিসহিসিয়ে)- ছেনাল একটা।
    জাঁ- এলেন কোন লাভ নেই। এরা কেউ শুনবে না।
    এলেন- আমি তোমায় ডিফেন্ড করতে এখানে আসিনি। তোমায়, তোমার সব কাজকে আমি ঘৃণা করি। আমি এসেছি সত্যিটা বলতে। যেগুলো আর কেউ জানবে না। (শ্রোতাদের দিকে ফিরে) জাঁ ছিল লুসিয়ের বন্ধু, বিপ্লবের অনেক আগে থেকেই। আর লুসিয়ে ছিল কবি। আমার রাজনীতিতে উৎসাহ ছিল না, কিন্তু লুসিয়ের জন্য পার্টি মিটিং অ্যাটেন্ড করতাম।



    দৃশ্য //০৮

    (রাত। লুসিয়ে আর এলেন পাশাপাশি হাঁটছে।)

    এলেন- আর কতক্ষণে আসবে ও?
    লুসিয়ে- আর মিনিট পাঁচেক।
    এলেন(বিরক্তিভরে)- রাজনীতিতে জড়ানোর কি দরকার?
    লুসিয়ে -তুমি জাঁ-কে দেখনি, তাই এ কথা বলছ। ও খুব শক্তিমান, বুদ্ধিমান। ও-ই ইউনিয়নটাকে সংগঠিত করেছে, যা কিছু করার ও-ই সব করছে।
    এলেন- এটা কি ঠিক হচ্ছে লুসিয়ে? তুমি একা একটা গ্রামপথে, সাথে একজন মহিলা, আর সেই মুহূর্তটা তুমি বেছে নিলে অগুয়েরা প্রসঙ্গ?
    লুসিয়ে(অপ্রতিভভাবে)- এলেন, এটা কিন্তু...(জাঁ প্রবেশ করে। উতফুল্লভাবে) এই তো জাঁ। জাঁ, আমার বান্ধবী এলেন। (দুজনে করমর্দন করে)
    এলেন(নীরস স্বরে)- আপনার কথা এত শুনেছি যে মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের দুজনের মধ্যে আপনি সবসময় হাঁটছেন।
    জাঁ- লুসিয়ে আমার প্রিয়তম বন্ধু। তবে তার মুখে আমিও আপনার কথা এত শুনেছি যে কল্পনা করে নিয়েছিলাম আপনি কেমন হবেন।
    এলেন- আর বাস্তবে সেটা মিলল না, তাই তো?
    জাঁ- ভেবেছিলাম আপনি খুব ব্যক্তিত্বসম্পন্না বুদ্ধিমতী একজন মহিলা। এখন দেখছি নেহাতই একটা বাচ্চা মেয়ে। (লুসিয়ে শব্দ করে হেসে ওঠে)
    এলেন(অপমানিত মুখে)- বাচ্চা মেয়েকে রাজনীতিতে জড়ানোর কি দরকার?(চলে যেতে চায়, জাঁ হাত দিয়ে এলেনকে ধরে। এলেন থমকে গিয়ে জাঁ-এর হাত দেখে)আপনি সবসময় জোর খাটাতে ভালবাসেন, না?
    লুসিয়ে- আরে তোমরা কি ঝগড়া করবে নাকি এখানে এখন? (জাঁ আর এলেন দুজনে দুজনকে দেখে যায়)। জাঁ, খবর কি?
    জাঁ(এলেনের হাত ছাড়িয়ে)- ভাল নয়। তুমি কি জান কাল ভোরে মিটিং ডাকার কি কারণ?
    লুসিয়ে- না। (এলেন উদাসিনভাবে গাছপালা দেখে, যেন এই আলোচনা তার কাছে একঘেয়ে লাগছে।)
    জাঁ- কোয়েলার গভমেন্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পাঁচ হাজার সৈন্য নামাতে চলেছে। ধর্মঘট ভাঙবে ওরা।
    লুসিয়ে- হায় ভগবান! কি করবে এখন?
    জাঁ- তোমরা আছো, এখন আমাদের মনস্থির করতে হবে। আগে নদীটা পেরোব। পেছনে টিকটিকি লেগেছে। এই পারটা নিরাপদ নয়।
    লুসিয়ে- কিন্তু এলেন? ওকে কি রেখে যাব? মানে, ওকে নিয়ে নদী পেরনো-
    জাঁ -না না, এই পারে বিপদ হতে পারে।
    এলেন(মুখ ফিরিয়ে)- আমি সাঁতার জানি না।
    জাঁ- বেশ। লুসিয়ে রোগা মানুষ। আপনার ভার বইতে পারবে না। আমি আপনাকে নিয়ে যেতে পারি।
    লুসিয়ে(হেসে)- সেই ভাল। (নদীর ধারে যায়। নামে। সাঁতার কাটার ভঙ্গি করে। এই জায়গায় অভিনয় দিয়ে নদী পেরনোর দৃশ্যটা বোঝানো যেতে পারে)
    এলেন(অবাধ্যের মত কাঁধ ঝাঁকিয়ে)- আমার দরকার নেই। আমি এই পারেই থাকব।
    জাঁ- আপনার কি কথা বুঝতে অসুবিধে হয়? শুনলেন না, এই পারে পুলিশের লোক?
    এলেন- হোক গে। আপনারা যান। (জাঁ কথা না বাড়িয়ে এলেনকে পাঁজাকোলা করে তোলে। এলেন চিত্কার করে। জাঁ নদীর দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। এলেনের দিকে তাকায়। এলেন চিত্কার থামিয়ে জাঁ-কে দেখে। জাঁ মুখটা নিচু করে এলেনের ঠোঁটের কাছে আনে। এলেনের চোখ বুজে আসে। তারপর হঠাৎ আত্মসচেতন হয়ে বোঝে কি করতে যাচ্ছে। ঠাস করে চড় মারে জাঁ-র গালে। রেগে উঠে) নামিয়ে দিন আমায়।
    জাঁ(অভিভুত ভাবে এলেনের দিকে তাকিয়ে)- ক্ষমা করবেন। এরকম আর হবে না।
    এলেন(কেঁদে ফেলে)- আপনি বর্বর একটা। (জাঁ-র গলা জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর জাঁ পাঁজাকোলা এলেনকে নিয়ে নদী পেরোয়।)



    দৃশ্য \\০৯

    (সকাল। জাঁ, লুসিয়ে, এলেন, দারিও, বেগাঁ, ফ্রাঁসোয়া প্রবেশ করে। জাঁ অডিয়েন্সের দিকে ফেরে)

    জাঁ- পাঁচ হাজার সৈন্য। ওরা থাকবে ততদিন যতদিন কোয়েলার চাইবে। কমরেডস, আমি অবশ্যই সাবোতাজ বা অবস্থানের বিরোধীতা করি। কারণ ওটা করলে আমাদের পিটিয়ে উঠিয়ে দেবে ওরা, আর তাতে অকারণ শক্তিক্ষয় হবে।
    বেঁগা- কমরেডস, আমরা একমাস ধরে লড়াই আর স্বার্থত্যাগের পথ ছেড়ে দেব না।পাঁচ হাজার সৈন্যর উপস্থিতিতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না।
    জাঁ(চিৎকার করে)- সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। এর ফলে আমাদের প্রচুর কমরেড গ্রেপ্তার হবেন, আর আন্দোলনের কোনো দিশা থাকবে না।
    বেঁগা- আমরা বাধা দেব।
    জাঁ- কেমন করে? (বেঁগা নীরব থাকে) আবার বলছি, পাঁচ হাজার সৈনিককে নিরস্ত্র কৃষকরা কেমনভাবে বাধা দেবে? আপনারা কি শুনতে পাচ্ছেন কমরেডস, আপনাদের বিক্ষোভের উপদেশ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কেমনভাবে এটা চালানো হবে তা বলা হচ্ছে না।
    এলেন -জমিতে যে কারখানাগুলো উঠেছে আমরা সেগুলো দখল কেন করছি না?
    জাঁ- অ্যাঁ?
    এলেন- কারখানাগুলো গায়ের জোরে দখল করছি না কেন?
    লুসিয়ে- এলেন ক্ষেপে গেছ তুমি।
    জাঁ- এ পরামর্শ আলোচনার অযোগ্য। কারখানা দখল করলে সম্পত্তি রক্ষার আইন না মানার অভিযোগে আমরা অভিযুক্ত হব-সেক্ষেত্রে ওরা যা খুশি তাই করার একটা অজুহাত পেয়ে যাবে।
    এলেন(ক্ষিপ্ত হয়ে)- তাহলে আমরা সবসময়েই বশ্যতা স্বীকার করি? তাহলে আমরা মাথা নিচু করে ফিরে যাই? কমরেডগন, এটাই কি চান যে প্রতিরোধের প্রথম দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা লড়াই থেকে সরে আসব?
    জাঁ- বাচ্চা মেয়েদের জ্ঞান শোনার জন্য আমরা এই মিটিং ডাকিনি।
    এলেন(ক্ষেপে গিয়ে)- ও আচ্ছা! তাহলে আপোষের পলিসি-ই নেওয়া হোক বারবার? জ্ঞানবৃদ্ধরা এটাই চান কি?
    বেঁগা- উনি ঠিক বলেছেন কমরেডস। ওরা যখন আমাদের ওপর গায়ের জোর ফলাবে, তখন আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই না কেন?সমগ্র দেশ আমাদের প্রতি সহানুভুতিসম্পন্ন, আমাদের সমর্থন করছে। আমি এই প্রস্তাব ভোটে ফেলছি। কারখানা দখলের পক্ষে কারা?
    জাঁ-পাগলামো হচ্ছে এটা।
    বেঁগা(চিৎকার করে)- ভোট ফেলা হোক। লুসিয়ে আর জাঁ বাদে সকলেই হাত তোলে।(অডিয়েন্সের দিকে তাকিয়ে)সিদ্ধান্ত মানতে তুমি বাধ্য, জাঁ। সংখ্যাগরিষ্ঠ কমরেডস পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাহলে সিদ্ধান্ত হল তো? আগামিকাল যে যার অবস্থান থেকে কারখানা দখল অভিযান সংগঠিত করব।

    (জাঁ হতাশার ভঙ্গিতে হাত নাড়ে। সকলে বেরিয়ে যায় একে একে। এলেন জাঁ-এর মুখোমুখি হয়। দুজনে স্থির চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে)

    এলেন- বাচ্চা মেয়ের পক্ষে ব্যাপারটা মন্দ হল না, তাই না?
    জাঁ(ক্ষিপ্তভাবে)- ক্ষমার অযোগ্য। (বেরিয়ে যায়)
    এলেন(লুসিয়ের কাছে গিয়ে)- তাহলে অগুয়েরার পক্ষেই ভোট দিলে?
    লুসিয়ে(মাথা নামিয়ে)-নিঃসন্দেহে হিংসাত্মক গোলমাল হবেই। আর কোনমতেই ওই হিংসার সাথে আমি নিজেকে জড়াতে পারব না। একজন মানুষের জীবন নষ্ট হয় যদি তবে সে বিজয় সফল নয়।

    (মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়। নেপথ্যে এলেনের কন্ঠস্বর বাজে)

    এলেন(নেপথ্যকন্ঠ)- লুসিয়ের মৃত্যু হয়েছে কারণ শেষপর্যন্ত ও ওর হাতকে কলঙ্কিত করতে চায়নি। কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম। কারখানা দখলের তৃতীয় দিনে সেনাবাহিনী নামে, নির্বিচারে গুলি চলে। প্রচুর কমরেড নিহত হয়। সংগঠন ছারখার হয়ে যায়। পালাতে বাধ্য হই আমরা। আমার বন্ধু সুজানের ফ্ল্যাটে আত্মগোপন করি।

    (আলো ফোটে। সুজান আর লুসিয়ে পাশাপাশি বসে গল্প করছে। এলেন আর জাঁ মুখোমুখি)

    এলেন(শ্বাসরুদ্ধ গলায়)- আপনি জিতেছেন।
    জাঁ(খানিকক্ষণ নীরবে তাকিয়ে)- না, আমি জিতিনি।(দুজনে মুগ্ধভাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে)
    এলেন(কান্নাচাপা স্বরে)- আপনাকে ঘৃণা করি আমি। আর কখনো আপনার মুখ দেখব না।
    জাঁ(মৃদুস্বরে)- প্রথম দিন থেকেই তুমি কেন আমার কাজে বাধা হয়ে উঠছ বলতে পারো?
    এলেন- আমি জানি না। লুসিয়ে দুর্বল, কবিতা ভালবাসে, আমায় ভালবাসে। আপনি তো তা নন।(জাঁ উত্তর দেয় না)আপনি সব সময় জিততে ভালবাসেন, তাই না?
    জাঁ- আমি জিতিনি। তুমি লুসিয়ের বাগদত্তা।(এলেন জাঁ-এর দিকে তাকিয়ে থাকে)আর ও আমার ভাইয়ের মত।
    এলেন- আপনাকে মিটিং-এ ওরকমভাবে বশ্যতার নীতি নিতে দেখে আমার ভালো লাগেনি। তাই জেদের বশে বিরোধীতা করেছিলাম।
    জাঁ- আমি বশ্যতার নীতি সমর্থন করি না।
    এলেন- আপনিই তো দখলের বিরোধীতা করেছিলেন।
    জাঁ- হ্যাঁ সাময়িক, তাছাড়া অন্তর্ঘাতেরও বিরুদ্ধে। তার পরিণাম তো নিজেই দেখলে। ওরা অনেক শক্তিশালী কারণ ওদের পেছনে আছে গোটা দেশের পুলিশ আর সরকার। ওরা আমাদের জমি থেকে হটিয়ে আমাদের ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

    (লুসিয়ে এগিয়ে আসে। সাথে সুজান। সুজান এসে জাঁ-এর গা ঘেঁসে দাঁড়ায়। একটু ঢলে পড়ার ভঙ্গি করে। জাঁ অনিচ্ছার ভঙ্গি করে)

    লুসিয়ে(খুশি মুখে)-আরে জাঁ তোমায় এলেন বলেনি কারন আমি নিজে মুখে বলতে চেয়েছিলাম। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বেরিয়েই আমরা বিয়ে করছি। তোমায় কিন্তু সাক্ষী হতে হবে।

    (জাঁ আর এলেন দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ কোন কথা বলে না।)

    সুজান(হেসে জাঁ-এর একটা হাত ধরে)- এত আনন্দের খবরে আমরা সেলিব্রেট করব না?(জাঁ হাতটা ছাড়িয়ে নেয়)
    জাঁ(নিরস স্বরে)- অভিনন্দন দুজনকেই।
    সুজান- আমি মদ নিয়ে আসছি(বেরিয়ে যায়)
    লুসিয়ে- কি ব্যাপার, তুমি খুশি নও?
    জাঁ- অবশ্যই খুশি, কিন্তু তোমার সাথে এর থেকেও জরুরী কিছু কথা আছে।
    এলেন(অসন্তুষ্ট ভাবে)- আমি কি এই আলোচনার প্রতিবন্ধক?
    জাঁ(এলেনকে পাত্তা না দিয়ে উদাসিনভাবে)- না, তুমিও থাকতে পারো। লুসিয়ে, আমাদের লড়াইয়ের কৌশল বদলাবার সময় এসেছে। বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত। পাঁচ কি দশ বছরের মধ্যে আমাদের আবার সুযোগ আসবে। তখন আমাদের কোয়েলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটা গ্রামে গোপন রাজনৈতিক পার্টি আর ক্যাডারদের দিয়ে সংগঠন করার জন্য কেন্দ্রিয় কমিটির প্রয়োজন হবে। সময় আসবে সশস্ত্র বিপ্লবের, আর তার জন্য দরকার একটা চালিকাশক্তি। রাজি?(লুসিয়ে উত্তর দেয় না) রাজি? (লুসিয়ে চুপ)সমস্যাটা কি?
    লুসিয়ে(বিমর্ষ ভাবে)- জাঁ, এই পথ আমার না।
    জাঁ- কিন্তু কেন?
    লুসিয়ে- তুমি জান, পরিণতি কি দাঁড়াবে? দুপক্ষেই হাজার হাজার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেকে দায়ী করতে পারব না।
    জাঁ- হাজার হাজার কৃষক, যারা না খেয়ে মরছে, তারা হিংসা আর দারিদ্রের শিকার না? ওই হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই না করার মানে কি এই নয় যে তুমি ওদের সমর্থন করো?
    লুসিয়ে- আমি এর বিরুদ্ধে, লড়াই করতে চাই ঠিকই, কিন্তু আমার মত করে। আমি লেখক মানুষ। তুমি কাজের মানুষ।
    জাঁ -তুমি হাত নোংরা করতে চাও না, না?(লুসিয়ে উত্তর দেয় না। হতাশায় এলেনের দিকে ফিরে)বোঝাও ওকে।
    এলেন(লুসিয়েকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। মাথা নিচু করে)- আমি জানি না।
    জাঁ(রাগে লাফিয়ে)- তোমরা সকলে ইডিয়ট।(বেরিয়ে যায়)
    এলেন (আস্তে আস্তে, লুসিয়েকে)- তুমি এত দুর্বল, এত পলকা!
    লুসিয়ে- আমি তো ন্যায়ের পক্ষে। কিন্তু আমি নিজেকে পবিত্র রাখতে চাই। সমস্ত রক্তপাতের বিপক্ষেই আমি।
    এলেন(লুসিয়েকে জড়িয়ে ধরে)- আর ন্যায়ের জন্য যদি হিংসার দরকার হয়?
    লুসিয়ে- আমি জানি না এলেন। আমার হাতে কোনো মানুষের রক্ত লেগে থাক, এ আমি দেখতে পারব না। ন্যায়যুদ্ধ কি শুধু অস্ত্র দিয়ে হয়? আমার পথ আলাদা। আমি আমার মত করে লড়াই চালাব!
    জাঁ(আবার ফিরে এসে, এখন অনেকটা শান্ত)- লুসিয়ে। এসব কাজে কারোর না কারোর হাত নোংরা হয়। তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু কোথাও না কোথাও তো এসবের একটা সীমা থাকা উচিত? (মিনতির সুরে)লুসিয়ে, আমাদের সাথে থাকো। আমি তোমাকে শুধু একটা কথাই বলব। যেই মুহূর্তে অন্যায়ের পথে বা রক্তাক্ত প্রক্রিয়ায় আমরা হাত দেব, তুমি বলবে ‘বন্ধ করো’। প্লিজ! তুমিই এটা বলতে পারবে কারণ তুমি হচ্ছ প্রকৃত একজন সন্ন্যাসী মানুষ।
    এলেন- তার মানে ও হবে তোমার বিবেক।
    জাঁ- সে তুমি যা ভাবতে চাও ভাবো। লুসিয়ে, তুমি কি রাজি?
    লুসিয়ে(স্বস্তির সাথে)- রাজি।
    জাঁ(এলেনের হাঁটুর উপর আড়াআড়িভাবে লুসিয়ের হাত চেপে ধরে)- হাত মেলালাম। তোমার হাতটাও দাও, এলেন।

    (এলেন জাঁ-র দিকে তার হাত বাড়ায়, তারপর হঠাৎ সরিয়ে নিয়ে লুসিয়ের হাতটা চেপে ধরে)
     



    দৃশ্য //১০

    (জাঁ আর সুজান বসে আছে। এলেন আর লুসিয়ে প্রবেশ করে। জাঁ ওদের দিকে ফিরে তাকায় না। বিমর্ষভাবে খেয়ে চলে)

    সুজান- কেমন কাটল বিয়ের প্রথম রাত?
    লুসিয়ে(সলজ্জভাবে)- আমাদের খুব দেরি হয়ে গেল না, উঠতে?
    সুজান(হেসে)- ভাল ঘুম হয়েছে তো?
    লুসিয়ে -হ্যাঁ, খুব ভাল। তোমার?
    সুজান- আমি আর জাঁ কাল একসাথে শুয়েছি।
    লুসিয়ে(খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে)- দারুন ব্যাপার হল কিন্তু এটা। (জাঁ কে) ইয়ার্কি করছ না তো? যাক, আমি আর এলেন তাহলে আর রাতে ঘুমোতে অস্বস্তি পাব না, কি বলো?

    (জাঁ উত্তর দেয় না। এলেনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এলেন তাকিয়ে থাকে এমনভাবে, যেন পাথরে পরিণত হয়েছে। তারপর দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়)
     



    দৃশ্য //১১

    (মিটিং চলছে। জাঁ, ফ্রাসোঁয়া, দারিও বসে। ঝড়ের বেগে লুসিয়ে আর এলেন প্রবেশ করে)

    দারিও- বেঁগা এল না?
    লুসিয়ে- আমাদের পেছনে টিকটিকি লেগেছে। অনুসরণ করেছে সারা রাস্তা।
    ফ্রাসোঁয়া- জানি, আমাদের সবার পেছনেই। প্রশ্নটা হল, গোপন ঘাঁটি চেনাল কে?মিটিং-এ সে কি অনুপস্থিত?
    জাঁ- আমার কাছে এখন সব জলের মত পরিষ্কার। কারখানা দখলের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন সাবোতাজ করার পরেও বেগাঁ গ্রেপ্তার হয়নি। আগের মাসে আমার লুকিয়ে থাকার জায়গায় বেঁগা এসে দেখা করার দুদিনের মাথায় পুলিশ সার্চ করে। সবচেয়ে বড় কথা, গত দুমাসে আমাদের তিনজন কমরেড ধরা পড়েছে, যাদের সাথে বেগাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
    ফ্রাসোঁয়া- আপনাদের কি বক্তব্য, দোষী তো? (সকলের দিকে তাকায়। সকলেই সম্মতির মাথা নাড়ে, লুসিয়ে আর এলেন বাদে)
    এলেন- আমি জানি না।
    লুসিয়ে(ফেটে পড়ে)- তোমরা এটা করতে পার না। অন্তত তাকে ডিফেন্ড করার সুযোগটুকু দাও।
    জাঁ- অসম্ভব। এতে আমাদের সকলের জীবন সংশয় এবং পার্টির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
    লুসিয়ে- প্লিজ একটু থামো। যদি সে নির্দোষ হয়?
    জাঁ(কাঁধ ঝাঁকায়। একটু নীরবতা)- আমার খুব দুঃখ হচ্ছে, কিন্তু আমাদের মধ্যে কাউকে না কাউকে নোংরা কাজটা করতেই হবে। কে দায়িত্ব নেবেন?(নীরবতা)
    দারিও- লটারি করা হোক তাহলে। অবশ্য লুসিয়ের স্বার্থে এলেন বাদ থাকতে পারে...
    এলেন(বিরক্তির সাথে)- ও লটারিতে অংশ নিক। আমাদের ওপর সম্পুর্ন আস্থা রাখতে না পারলে আমরা একসাথে কাজ চালাতে পারি না।
    ফ্রাসোঁয়া- কিন্তু ও তো হত্যার বিরুদ্ধে।
    এলেন- পার্টির সিদ্ধান্ত তো ওকেও নতমস্তকে মেনে নিতে হবে।
    জাঁ- তবে তাই হোক। (একটা কাগজকে ছিঁড়ে পাঁচ টুকরো করল। একটা টুকরোকে পেন্সিল দিয়ে ঢ্যাঁড়া কেটে একটা কাপের মধ্যে রাখল।)একটাতে ঢ্যাঁড়া। বাকি চারখানা ফাঁকা।(সকলে কাগজ তোলে) লুসিয়ে(কাগজ খুলে দেখে, নিরাসক্তভাবে বলে)- তোমাদের কারোর আর কাগজ খোলার দরকার নেই। (নিজের কাগজ খুলে সকলকে ঢ্যাঁড়া দেখায়। সকলে ওর দিকে তাকায়। তারপর এক এক করে বেরিয়ে যায়। লুসিয়ে ড্রয়ার খুলে পিস্তল বার করে। তারপর হঠাৎ করে ভেঙ্গে পড়ে। মাথা নামিয়ে দুহাতে চেপে ধরে কাঁপতে থাকে থরথর করে। এলেন লুসিয়ের পিঠে হাত রাখে)আমি পারব না।
    এলেন- এটা ঠিক হচ্ছে না।
    লুসিয়ে- আমি কাপুরুষ নই, এলেন। আমি তোমায় ভাবতে দিতে চাই না যে আমি কাপুরুষ।
    এলেন- আমি জানি, তুমি নও।
    লুসিয়ে- আমি পদত্যাগপত্র পাঠাচ্ছি।
    এলেন(হতবুদ্ধিকর ভাবে)- কিন্তু তুমি তো রাজী হয়েছিলে।
    লুসিয়ে- আমি পারব না। আমি চাই না-একটা ছেলেকে গুলি করে মারতে পারি না যে নির্দোষ হতে পারে।
    এলেন- সমস্ত সংগঠনটার বারোটা বাজুক, তুমি কি তাই চাও?
    লুসিয়ে(পায়চারি করতে করতে)- আমি জানি না। আমি যা জানি আমি বেগাঁকে খুন করতে যেতে পারছি না। (এলেন কিছু বলতে যায়। থামিয়ে দিয়ে)তুমি কি করে ভাবলে একটা লোককে খুন করব, আর যদি দেখা যায় সে নির্দোষ তখন নিজের দিকে তাকাব কি করে?(এলেন উত্তর দেয় না। লুসিয়ে বেরিয়ে যায়। এলেন পিস্তল নেয়। ব্যাগে ঢোকায়। জাঁ প্রবেশ করে)
    জাঁ- চলে গেছে?
    এলেন- বেঁগাকে কোথায় পাওয়া যাবে?
    জাঁ- মানে?
    এলেন- বেঁগা কোথায়?(জাঁ ঘাবড়ে গিয়ে এলেনের হাতের ব্যাগ দেখে। এলেন ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে। হঠাৎ জাঁ ঘুরে গিয়ে বাইরের দরজা খোলে। সুজান কান পেতে শুনছিল। ধরা পড়ে চমকে ওঠে। অপ্রস্তুতভাবে দাঁড়িয়ে থাকে)
    জাঁ(রুক্ষভাবে)- এখান থেকে যাও সুজান। গোপন আলোচনা হচ্ছে। (সুজান বিদ্বেষের দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকায়। তারপর বেরিয়ে যায়)
    জাঁ(এলেনকে)- ব্যাগটা আমায় দাও।
    এলেন- না।

    (জাঁ এলেনকে জাপটে ধরে। এলেন চিৎকার করে। জাঁ গায়ের জোরে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে পিস্তল বার করে)

    জাঁ- ওহ, লুসিয়ে নিজের হাত নোংরা করতে চায়না! তাই তুমি...তুমি চাও...
    এলেন(মাথা নিচু করে)- হ্যাঁ। আমরা এক এবং অভিন্ন।
    জাঁ(শুকনো হেসে)- একটা মানুষকে মারা এতই সহজ, না?আর তারপর? তুমি কি মনে করো তারপরেও যে কেউ একইরকম থাকে?(এলেন মাথা নিচু করে থাকে। জাঁ হাতের পিস্তলটা দেখে। হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ে চিৎকার করে ওঠে)আমাকে কেন?আমাকেই কেন এসব করতে হবে? আমার হাত সাফ রাখার কোন অধিকার কেন থাকবে না এলেন? কারন লুসিয়ে বুদ্ধিজীবী আর তোমার প্রেমিক? আমি চাইনি, আমি খুন করতে চাইনি!(দু হাত দিয়ে মুখ ঢাকে। একটু পরে স্বাভাবিক হয়। এলেনের কাঁধে হাত রাখে)বাড়ি যাও।
    এলেন(শ্বাসরুদ্ধ কন্ঠে)- তুমিই যাচ্ছ?
    জাঁ(মৃদু হেসে হাত দেখিয়ে)- আমার হাত ইতিমধ্যেই নোংরা হয়ে আছে। কম কি বেশি তাতে কিছু যায় আসে না।
    এলেন(কান্নাচাপা কন্ঠে)- আমার জন্য তুমি ওকে খুন করতে যাচ্ছ, শুধু আমারই জন্য। (জাঁ কে জড়িয়ে ধরে, চুমু খেতে যায়। জাঁ-ও বেসামাল হয়ে পড়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জোর করে জাঁ নিজেকে সরিয়ে নেয়)
    জাঁ- ওটা লুসিয়ের জন্যই তোলা থাক।
     



    দৃশ্য //১২

    (নির্জন রাস্তা। জাঁ একটা গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে শিসের আওয়াজ শোনা যায়। জাঁ চঞ্চল হয়ে ওঠে। বেঁগা প্রবেশ করে। জাঁ এগিয়ে আসে)

    বেঁগা- কে? ও তুমি! ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। ভেবেছিলাম পুলিশ। (পাশাপাশি হাঁটতে থাকে)তুমি কি শহরে ফিরে যাচ্ছ?(জাঁ নীরব)তোমার কি কিছু হয়েছে?
    জাঁ- বেঁগা, পুলিশ তোমায় কিনে নিয়েছে।
    বেঁগা(থমকে দাঁড়িয়ে জাঁ কে দেখে। জাঁ পিস্তল বার করে।)- ওহ, তাহলে তুমি আমায় খুন করতে যাচ্ছ?এখন বুঝছি, গত কয়েকদিন ধরে কেন আমায় নজরে রাখা হচ্ছে। জাঁ, আমার বৌ বাচ্চার নামে দিব্যি গেলে বলতে পারি আমি গুপ্তচর নই। (জাঁ-এর হাত কাঁপে)
    জাঁ- তাহলে প্রমাণ করো।
    বেঁগা- আমি কেমন করে তা প্রমাণ করব?(জাঁ পিস্তল তোলে)আমি পার্টির স্বার্থে বেঁচে আছি। আর এখন তুমি আমার জবানবন্দী না শুনেই আমায় খুন করতে যাচ্ছ?(হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে) জাঁ, আমি গুপ্তচর নই। দিব্যি গেলে বলছি। আমার কথাটা শোনো আগে। (জাঁ পর পর দুবার গুলি করে। মাটিতে পড়ে গিয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে)খুনী...এই রক্তপাতের ফল তুমি পাবে।(স্থির হয়ে যায়। বেঁগা শেষ হয়ে গেছে ভেবে জাঁ ঝুঁকে পড়ে দেখতে যায়। হঠাৎ বেঁগা ঘুরে গিয়ে নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছোঁড়ে। জাঁ-এর বাঁ-হাতে গুলি লাগে। অষ্ফুট চিৎকার করে জাঁ আবার গুলি চালায়। বেঁগা এবার নিথর হয়ে যায়। এলেন, লুসিয়ে আর দারিও প্রবেশ করে।)
    দারিও(ভূত দেখার মত করে)- শেষ হয়ে গেছে?
    জাঁ(বাঁ হাত চেপে ধরে। কাঁপা গলায়)- হ্যাঁ। (সকলে ওর দিকে স্থির চোখে তাকায়)হলোটা কি তোমাদের?
    লুসিয়ে(চিৎকার করে ওঠে হঠাৎ)- জাঁ আমি বলেছিলাম, তুমি শোনো নি।
    জাঁ(ঘাবড়ে গিয়ে)- মানে?
    দারিও- আজ দুপুরে ১১ নং ইউনিট থেকে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জেরার মুখে লোকটি জানিয়েছে সে গুপ্তচর ছিল।
    জাঁ- তার মানে...
    এলেন- বেঁগা নির্দোষ।
    (জাঁ স্থির হয়ে বেঁগার মৃতদেহের দিকে তাকায়। তারপর অক্ষত হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে লুসিয়ের কাছে যায়। লুসিয়ের কাঁধে হাত রাখে, লুসিয়ে সরিয়ে দেয়)
    জাঁ- লুসিয়ে...
    লুসিয়ে- তোমার হাতে রক্ত লেগে আছে।
    জাঁ(হঠাৎ রেগে)- হ্যাঁ আমার হাতে রক্ত লেগে আছে। কিন্তু ব্যাপারটা ছিল তোমার, আর আমি তোমায় অব্যাহতি দিয়েছি। আমি সব কিছু নিজের কাঁধে নিয়েছি। তোমার কি মনে হয় না নিজের হাতও আমি নিষ্কলঙ্ক রাখতে পারতাম?
    লুসিয়ে- আমি তোমায় জিজ্ঞাসা করিনি কিছু।
    জাঁ(অন্যদের)- আমরা যা করেছি তার জন্য অনুশোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। যে সব তথ্য আমাদের দেওয়া হয়েছে আর তা থেকে আমরা যা জেনেছি এবং যে বিপদ আমাদের মাথার ওপর ঝুলে রয়েছে, অন্য কিছু এর থেকে করার ছিল না। বেঁগা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মারা গেছে। সবাই একমত তো? আমরা আপাতত এই ঘটনায় ইতি টানতে পারি কি না?

    (জাঁ সকলের দিকে তাকায়। লুসিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। দারিও মাথা নিচু করে। এলেন অনেকক্ষণ ইতস্তত করে, তারপর লুসিয়ের রাস্তায় হেঁটে যায়। জাঁ চোখের সামনে নিজের ডানহাত ধীরে ধীরে তোলে, দেখতে থাকে)
     



    দৃশ্য //১৩

    (জনতার আদালত। এলেন সাক্ষ্য দিচ্ছে)

    এলেন- তারপর এল বিপ্লব। জাঁ দারিওকে তার পরামর্শদাতা করল। লুসিয়েকে সে সম্পাদকের দায়িত্বভার দিল লুমিয়ের কাগজের। আমি, ফ্রাঁসোয়া, পার্টির মধ্যেই ছিলাম। শুরুতে সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু কয়েক মাস পরে...

    (হঠাৎ বাইরে একটা গোলমাল শোনা যায়। ক্রমশ বাড়ে, আর সব কিছু ছাপিয়ে একটা আওয়াজ ভেসে ওঠে। ‘মৃত্যু চাই’।কয়েকজন সশস্ত্র বিদ্রোহী প্রবেশ করে। তাদের নেতা গর্জন করে ওঠে)

    নেতা- অগুয়েরার মৃত্যু চাই।
    ফ্রাঁসোয়া -আমরা ওর বিচার করছি এখন। হয় তোমরা চুপ করো, নাহলে এখান থেকে চলে যাও।
    নেতা- বিচারের আর প্রয়োজন নেই। ওর এসব সাজে না। ওকে এখনই গুলি করে মারা হোক।
    ফ্রাঁসোয়া(চিৎকার করে)- সেক্ষেত্রে আমার মৃতদেহের ওপর। আমি এই বিচার ব্যাহত হতে দেব না।

    (গোলমাল আরো বাড়ে। দুপক্ষেই উত্তেজনা চরমে ওঠে)

    নেতা- আপনার আদেশে আমরা চলছি না কমরেড। (বন্দুক তুলে ধরে)আমাদের হাতে ঐ অত্যাচারীকে তুলে দিন।

    (সুজানকে বিজয়িনীর মত দেখায়। এলেন প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মুখে। বিদ্রোহীরা এগিয়ে যায়। হঠাৎ জাঁ এগিয়ে আসে)

    জাঁ- তোমরা কি আমায় মেরে শহীদ বানাতে চাও?
    চারদিকে গর্জন- চোপরাও বিশ্বাসঘাতক।
    জাঁ(বিদ্রোহীদের মুখোমুখি হয়ে)- তোমরা কি মনে করো আমি মরতে ভয় পাই? ওদের জিজ্ঞাসা করো আমি নিজেকে ডিফেন্ড করেছি কি না। (বিদ্রোহীরা সকলে বন্দুক তুলে ধরে। জাঁ নড়ে না)এসো, গুলি করো। সারা বিশ্বের চোখের সামনে তুমি আমায় গুলি করবে। আর আমি তখন সুখে মরতে পারব।

    (বিদ্রোহীরা ইতস্তত করে। ফ্রাঁসোয়া সেই সুযোগে নেতার বন্দুক কেড়ে নেয়)

    ফ্রাঁসোয়া- ও ঠিক বলেছে। কমরেডস, তোমরা জানো না কতটা ক্ষতি তোমরা করছ। আমরা ওকে ছেড়ে দিতে চাইছি না, সঠিকভাবে বিচার করতে চাইছি।

    (দারিও আর সাথে কয়েকজন এসে জাঁ আর বিদ্রোহীদের মধ্যে দাঁড়ায়। বিদ্রোহীরা চুপ করে যায়। তারপর হলের পেছনদিকে ফিরে যেতে শুরু করে।)

    নেতা(রাগে গরগর করতে করতে, ফ্রাঁসোয়াকে)- আমার বন্দুকটা ফেরত দাও। (ফ্রাঁসোয়া ফেরত দেয়। বন্দুক তুলে)ওকে খালাস করে দেবার চেষ্টা কোরো না। আমরা নজর রাখছি কিন্তু।(বেরিয়ে যায়)
    ফ্রাঁসোয়া(জাঁ কে)- ধন্যবাদ। (একটু চুপ করে থেকে)ভেবেছিলাম, তুমি নিজেকেই হত্যা করতে চেয়েছিলে।
    এলেন- এখানে আমার সাক্ষ্য দেবার কোনো দরকার আর নেই। এত লোকের ঘৃণার পাত্র হয়ে ওর বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না। দারিও, তুমি শুধু শুধুই আমায় ডেকে এনেছ। আমি চলে যাচ্ছি। (চলে যেতে চায়)
    জাঁ- এলেন (এলেন থেমে ঘুরে দাঁড়ায়)। চলে যেও না। (এলেন ইতস্তত করে) আমি আমার মত পাল্টেছি। (ফ্রাঁসোয়াকে)আমি নিজেকে ডিফেন্ড করব। বাঁচার জন্য নয়। (জনগনণের দিকে তাকিয়ে)তোমরা জিতেছ। তোমাদের ভালর জন্যই হল। তোমাদের দেবার মত কোনো তথ্যই আমার হাতে নেই। আমি কিছু করনি যার জন্য আমায় ত্রুটি স্বীকার করতে হবে। (এলেনকে)তোমাকেই শুধু, এলেন, অনেক কিছু জানানোর ইচ্ছে আমার আছে। আমি লুসিয়েকে ভালবাসতুম। তুমি জানতেও পারবে না আমি লুসিয়েকে কতটা ভালবাসতুম।
    এলেন- তুমি ভালবাসতে, আর তবুও তুমিই তার মৃত্যুর কারণ হলে?
    জাঁ- হ্যাঁ আমিই তার মৃত্যুর কারণ যেমন আরো অনেকের মৃত্যুর কারণ আমিই। তুমি কি বুঝতে না আমি নিজেই নিজেকে ঘৃণা করতুম? শোনো এলেন, এটা একটা হিংসা হানাহানির কাহিনী। সর্বত্র ছিল এই হানাহানি। আমার ভেতরে আমার বাইরে। আমি জন্মেছিলাম চাষি হয়ে, ওদের মতই হিংস্র। বিপ্লব এসেছিল, বড় তাড়াতাড়ি। আমি জানতাম এই হিংসার হাত থেকে বিপ্লবকে বাঁচাতে গেলে হিংসা দিয়েই বাঁচাতে হবে। আমরা বিপ্লবে জয়লাভ করেছিলাম, নতুন সরকার গঠন করেছিলাম...
     



    দৃশ্য //১৪

    (জাঁ,ফ্রাঁসোয়া এবং দারিও দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাচ্ছে। বাইরে জনতার উত্তেজিত গর্জন শোনা যায়। ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।‘ ‘অগুয়েরা দীর্ঘজীবী হোক।‘)

    ফ্রাঁসোয়া (জাঁ-এর কাঁধে হাত রেখে)- চলো। বাইরে জনতা জমা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে তুমি কিছু বলবে।
    জাঁ(বিষণ্ণভাবে)- পরে।
    দারিও(অবাকভাবে)- তুমি কি খুশি নও?
    জাঁ- বড় তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেল। সবচেয়ে কঠিনতম অংশ এখনো আসতে বাকি। বিপ্লবকে বাঁচাতে হবে।
    দারিও- তুমি ওদের সাথে কথা বলো। (জাঁ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে)বেশ, আমিই যাচ্ছি (বেরিয়ে যায়)।
    ফ্রাঁসোয়া- তোমার সাথে একটা কথা ছিল, জাঁ। (জাঁ ওর দিকে তাকায়) রাজভবনের পার্শ্বকক্ষে কোয়েলার বসে আছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য। আমায় বলতে বলা হয়েছে যেন তুমি সবার আগে ওর সাথে দেখা করো।
    জাঁ- কে বলেছে?
    ফ্রাঁসোয়া(ইতস্তত করে)- ক্যাপিটালিস্ট গিল্ড।
    জাঁ- তুমি কি ওদের সাথে কথা বলেছ?
    ফ্রাঁসোয়া- ওরাই চালিয়েছে সৌজন্য সাক্ষাৎ। আমায় কথা বলতেই হোত।
    জাঁ- বেশ, ওকে আসতে বলো। (ফ্রাঁসোয়া বেরিয়ে যায়। কোয়েলার ঢোকে)
    কোয়েলার(মাথা ঝুঁকিয়ে)- আমি কোয়েলার, ক্যাপিটালিস্ট গিল্ডের সভাপতি।
    জাঁ- বসুন।
    কোয়েলার(বসে)- আমার গিল্ড আপনাকে জানাবার নির্দেশ দিয়েছে যে আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলাতে। কার্যত, আপনার কর্তৃত্বই স্বিকার করে নেওয়া হলো।
    জাঁ- চমৎকার।
    কোয়েলার- আর একটা ব্যাপারে কিন্তু আপনার কাছে আমরা জিদ ধরেই থাকব কারণ এর সাথে জাতির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। আমরা আশা করব আপনারা শিল্পায়ন ব্যাপারে যে যার আগের অবস্থান মেনে নেবেন।
    জাঁ- আমরা যখন এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে যদি মনে করি সঙ্গত তখন আপনাকে জানাব।
    কোয়েলার- আমাদের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় বাধাদানের চেষ্টাকে গিল্ড আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া মনে করবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে সমস্ত পুঁজি দেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। খুবই পরিতাপের বিষয় যে সেক্ষেত্রে দেশ একটা দুর্ভিক্ষ অথবা গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়তে পাড়ে। এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের সদিচ্ছা দেখানোর জন্য প্রতিবেশী দেশগুলির কাছে আমরা প্রার্থনা করেছি সীমান্তে ৩৫ ডিভিশন সৈন্য মজুত রাখার।
    জাঁ(শীতলভাবে)- গিল্ড আমাদের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি জানানোয় আমি আনন্দিত। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনাদের সাথে আমি বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে চলব।(কোয়েলার মাথা ঝোঁকায়, উঠে করমর্দন করে বেরিয়ে যায়। দারিও ঢোকে)
    দারিও- জাঁ, আমার অনুরোধ রাখো, ব্যালকনি থেকে একবার নিজেকে দেখাও। বাইরে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে তোমায় দেখার জন্য।
    জাঁ(বিষণ্ণ)- আমার কিছুই দেখাবার নেই ওদের কাছে।
    (ঘর একটু অন্ধকার হয়ে গিয়ে আবার আলো ফুটে ওঠে। মাঝখানে কয়েক বছর কেটে গেছে। জাঁ আর দারিও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। ফ্রাঁসোয়া আর লুসিয়ে প্রবেশ করে)
    জাঁ- তাহলে?
    লুসিয়ে- অসম্ভব। চাষীরা প্রস্তুত নয় আবার এক-ই জিনিস দেখার জন্য।
    দারিও- আমরা ৬০০ মাইল ঘুরেছি। কমপক্ষে সাতশো গ্রামের লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জাঁ, আমাদের গ্রামের চাষিরা সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া।
    জাঁ- বলে যাও।
    দারিও- তাদের জমি কেড়ে নিয়ে কারখানা বানালে তারা কারখানা ভাঙবে আর সব কিছু ছুঁড়ে ফেলে দেবে। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব যদি না তারা আমাদের ফাঁসিতে লটকায়। ওদের এখন দরকার বছর দশেক ধরে প্রচার। জাঁ, বিপ্লব অত সোজা নয়। তুমি চাইলেই লাফিয়ে উঠে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলতে পারো না।
    জাঁ(ক্লান্ত ভাবে)- তোমার ফাইলটা দাও।
    লুসিয়ে(মিনতির সুরে)- জাঁ তুমি পারবে না। ওরা প্রস্তুত নয়। তুমি করতে পারো না এটা।
    জাঁ- লুসিয়ে তোমার চেয়ে আমি ওদের ভালো চিনি। আমি ওদের মধ্যেই জন্মেছি।
    (ফ্রাঁসোয়া এতক্ষন চুপচাপ ছিল। এবার এগিয়ে আসে)
    ফ্রাঁসোয়া- কিন্তু জাঁ...
    জাঁ(হাত তুলে)- ধন্যবাদ।
    দারিও (ফেটে পড়ে)- চলে এসো ফ্রাঁসোয়া। ও একটা ক্ষমতালোভী শাসক। ও কোনো কথাই শুনতে চায় না। (দারিও আর ফ্রাঁসোয়া বেরিয়ে যায়)
    লুসিয়ে- আমি তোমায় মিনতি করছি জাঁ, এই জিনিস তুমি চাপিয়ে দিতে পারো না আমাদের চাষিদের ওপর।
    জাঁ- লুসিয়ে, বিপ্লবকে বাঁচাতে হবে। যদি গায়ের জোরেও হয়, পুঁজিবাদ আসবেই। চাইলেও ঠেকাতে পারব না। আর আমি যদি এর বিরুদ্ধে দাঁড়াই, আমায় গুঁড়িয়ে দেবে কোয়েলার।
    লুসিয়ে- কিন্তু চাষিরা প্রস্তুত নয়। এর জন্যে দরকার অন্তত দশ বছর ধরে শিক্ষা আর প্রচার...
    জাঁ- তাহলে তো ছ মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ।
    লুসিয়ে- শিল্প জাতীয়করণ করো। জাঁ, এখনো সময় আছে, তোমার নীতি বদলাও।
    জাঁ- আমি তা পারি না। (শুন্য চোখে তাকিয়ে) আমি পারি না, পারি না আমি।
    লুসিয়ে(রেগে)- সেক্ষেত্রে আমার সমর্থনের আশা কোরো না। (বেরিয়ে যায়। জাঁ পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে যায়। সুজান ঢুকে টেবিলে খাবার সাজাতে থাকে। হঠাৎ ঝড়ের বেগে এলেন ঢোকে)
    এলেন- জাঁ কোথায়?
    সুজান- কাজ করছে, কেন?
    এলেন- আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই।
    সুজান- ও একা নেই। মিটিং-এ আছে।
    এলেন- সুজান তোমার পায়ে পড়ছি। এই মুহূর্তে ওর সাথে দেখা হওয়াটা আমার ভীষণ দরকার।
    সুজান(উত্তেজিতভাবে)- আমি তো বলছি ও একা নেই।

    (হঠাৎ দরজা খুলে যায়। জাঁ বেরিয়ে আসে)

    জাঁ(রাগতকন্ঠে)- কি ব্যাপার সুজান? তুমি তো জানতে আমি একা আছি।

    (সুজান বিদ্বেষভরা চোখে দুজনকে দেখে, তারপর বেরিয়ে যায়)

    এলেন- আগামীকাল লুসিয়ে ওর সম্পাদকীয় প্রবন্ধটা ছাপতে চলেছে।
    জাঁ- মানে?
    এলেন- ও লিখেছে কেমনভাবে তুমি আগের সরকারের মতই গায়ের জোরে জমি কেড়ে শিল্পায়ন করছ। তুমি স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছ।
    জাঁ(ক্ষিপ্তের মত)- ও এটা করতে পারে না। (অস্থিরভাবে পায়চারি করে)এতে বিদ্রোহ দেখা দেবে।(মদ খায়)
    এলেন- আমি ওকে বোঝাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না।
    জাঁ- আমি জানি এই প্রবন্ধটা বেরোলে চাষিরা কি করবে। ওরা কারখানা ভাঙবে, নৈরাজ্য আনবে। আমায় গ্রাম-কে গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে হবে, ওদের বিপ্লবকে গুঁড়িয়ে দিতে হলে হাজার লোককে জেলে ভরতে হবে। উফফ(নিজের মাথার চুল খামচে ধরে) আবার সেই গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে পড়া!
    এলেন(ভয়ার্ত কন্ঠে)- জাঁ!
    জাঁ(হুইস্কি খায়)- আমি কি এমন করেছি যে সারা জীবন আমাকেই শুধু হিংসার জন্য অভিযুক্ত হয়ে থাকতে হবে?আমি কি করতে পারি?
    এলেন- তুমি এত মদ খাও কেন?
    জাঁ- তুমি খাও না কেন? (এলেন নীরব থাকে। তিক্ত হেসে)কেন খাই, বোঝো না? ওরা আমায় ঘেন্না করে। ওরা সবাই। শ্রমিক, কৃষক, আমার কমরেড-এমনকি লুসিয়ে! তাকাও এলেন, ওদের চোখের দিকে তাকাও। সমস্ত বোঝাটা আমি নিজের কাঁধে নিচ্ছি। আমাকে নিতে হচ্ছে। আমাকে সহ্য করতে হচ্ছে। এরপরেও জানতে চাও, কেন মদ খাবো না? যাও যাও তুমি যাও এখন। আমায় একা থাকতে দাও!
    এলেন- জাঁ আমি কি করব? লুসিয়ে বদ্ধপরিকর প্রবন্ধটা ছাপানোর জন্য।
    জাঁ(চিৎকার করে)- যদি তোমার স্বামী সত্যিই ওই কাজটা করে, আমি তাকে লক-আপে পুরব। বুঝতে পারছ? (এলেন ভয়ার্ত চোখে তাকায়, তারপর কান্না চাপে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। কোয়েলার এবং অন্যান্য কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রবেশ করে। সকলে করমর্দন করে। খেতে বসে সকলে। খুব গম্ভীর পরিবেশ। দেওয়ালে একটা বন্দুক টাঙ্গানো। হঠাৎ দুখানা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। সকলে থেমে এ ওর মুখের দিকে তাকায়। একজন সেনা অফিসার প্রবেশ করে। জাঁকে স্যালুট করে)
    অফিসার-আপনি যেরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন তা পালন হয়েছে।
    জাঁ- আচ্ছা? সাম্প্রতিক খবর কি?
    অফিসার- সাতখানা গ্রাম ভস্মীভূত। দশ হাজারের ওপর লোক পালিয়েছে। পুরো অঞ্চলটা আমাদের দখলে এখন।
    জাঁ (হাত তুলে)- ধন্যবাদ। (আবার সকলে নীরবে খায়)
    একজন ব্যবসায়ী- খুব কি কঠিন ছিল?
    জাঁ- ওরা প্রতিরোধ করেছিল, আমাদেরও বাধা দিতে হয়েছিল।(খাওয়া বন্ধ করে শুন্য দৃষ্টিতে দেওয়ালের বন্দুকটার দিকে তাকিয়ে থাকে)
    কোয়েলার- আপনি বুঝি বন্দুক খুব পছন্দ করেন? আমার পুর্বপুরুষদের কয়েকটা খুব দুষ্প্রাপ্য বন্দুক আছে আমার কাছে। (টেবিল ছেড়ে ওঠে। বন্দুকটা অতিকষ্টে দুহাতে নামায়। হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে আসে টেবিলের কাছে)কি ভারী দেখেছেন? বাঁটটাও হাতির দাঁতের তৈরী। (ধরুন। জাঁ, যেহেতু বাঁ হাত অসাড়, ডান হাত বাড়ায়)ওটা কিন্তু দুহাতে ধরতে হবে স্যার, ভীষণ ভারী। (জাঁ থমকে যায়। কোয়েলার এমন ভাব করে যেন তার খুব ভুল হয়ে গেছে। মুখে একটা ব্যাঙ্গের হাসি ফুটিয়ে)ওহ ছিঃ ছিঃ আমি দুঃখিত। না আপনাকে ধরতে হবে না।
    জাঁ(রাগে উদ্ধত হয়ে)- দিন আমায়।(বন্দুকটা নেয়, এক হাতে ধরে দেখে)আপনি ঠিকই বলেছিলেন। এটা খুবই অসাধারণ। (বন্দুকটা কোয়েলারের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দিয়ে)আপনি যতটা ভারী বলেছিলেন ততটা নয়। এক হাতই যথেষ্ট কোয়েলার। নিন ধরুন, এক হাতে, এক হাতে।

    (কোয়েলার এক হাত বাড়ায়। বন্দুক ধরে কিন্তু টাল সামলাতে পারে না। হাত ফস্কে টেবিলের ওপর বন্দুকটা পড়ে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ। কয়েক মুহূর্ত হতবুদ্ধিকর পরিস্থিতি। তারপর জাঁ হাসতে শুরু করে। চেয়ারে গা এলিয়ে হাসতে থাকে জোরে জোরে। হাসি আস্তে আস্তে বাড়ে। দূরে মেশিনগানের আওয়াজ পাওয়া যায়। একটা চিৎকার ওঠে ‘বিশ্বাসঘাতক অগুয়েরা নিপাত যাক’। কিন্তু সব ছাপিয়েও জাঁ-এর হাসির আওয়াজ পাওয়া যেতে থাকে। স্টেজ অন্ধকার হয়ে যায়)



    দৃশ্য //১৫

    (জাঁ কাজ করছে টেবিলে বসে। এলেন এক ধারে বসা। লুসিয়ে ঢোকে। জাঁ মাথা তুলে তাকায় না)

    জাঁ- নিশ্চয় জানো কেন তোমায় ডেকে পাঠিয়েছি?
    লুসিয়ে- হ্যাঁ।
    জাঁ- তুমি এই লেখাটা লিখতে পারবে না। আমি যে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি, তুমি তাকে পাবলিকলি বিরোধিতা করতে পারো না। একমাত্র তোমার কাগজটাই আমি সেন্সর করিনি। কিন্তু এরকম সঙ্কটে তুমি এরকম লেখা লিখতে পারো না। আমি জানি না এই লড়াই আমি হারব না জিতব। কিন্তু এটা জানি এ লেখা তুমি লিখলে আমি হারব।(লুসিয়ে উত্তর দেয় না)তুমি কি আর আমাদের বন্ধুত্ব রাখতে চাও না?
    লুসিয়ে- আমি এখনো তোমার বন্ধু। তুমি কি মনে করো, কেন আমি পার্টিতে আছি? অনাবশ্যক হিংসাত্মক কাজ তুমি যখন করতে যাচ্ছ, তখন সেটা থামাতে।
    জাঁ- বেশ, তা ব্যক্তিগতভাবে আমায় বল। চেষ্টা করো এবং আমায় থামাও। কিন্তু লিখো না।
    লুসিয়ে- আমি তোমায় বহুবার মিনতি করেছি, কিন্তু আমার কথা তুমি শোনো নি।
    জাঁ(পায়চারি করতে করতে)- এলেন। (এলেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়) এলেন, ওকে বোঝাও। ওকে বলো আমাদের বন্ধুত্বকে যেন হত্যা না করে। (এলেন নার্ভাসভাবে হাতের আঙ্গুল পাকায়)আমার কথার উত্তর দাও এলেন।
    এলেন-আমি তাকে কিছুই বলতে পারব না জাঁ। সে যেটা ঠিক মনে করবে সেটাই করবে।
    (একটুক্ষন নীরবতা। জাঁ লুসিয়ের হাতের কাছে হাত রাখে)
    জাঁ- তুমি বাড়ি যেতে পারো লুসিয়ে। কাল তোমার কাগজ বেরবে না।
    লুসিয়ে- সে তুমি যা খুশি করতে পারো। আমি গুপ্তভাবে কাজে অভ্যস্ত। কাগজ আগের মতই বের হবে।
    জাঁ- লুসিয়ে তুমি যদি তা করো...
    লুসিয়ে- লেখাটা আগামীকাল ছেপে বার হবেই।
    এলেন(চেঁচিয়ে)- লুসিয়ে, জাঁ, তোমরা পাগল হয়ে গেছ!(দুজনের হাতের দিকে তাকায়। ডেস্ক আঁকড়ে)তোমরা পারো না...পারো না।
    জাঁ- ও কি আগামীকাল লেখাটা ছাপাবে? (কেউ কোনো উত্তর দেয় না। হিংস্রভাবে)বেশ। তুমি জানো তুমি কি প্রত্যাশা করো। (টেবিলের বেল টেপে। দুজন পুলিশ ঢোকে) আমি দুঃখিত, এলেন। কিন্তু এই লড়াইটায় আমি হারতে চাই না। (মদ খায়)
    (হতভম্ব এলেনের সামনে দিয়ে লুসিয়েকে নিয়ে দুজন পুলিশ বেরিয়ে যায়)
    লুসিয়ে- জাঁ, তবুও লেখাটা কাল বেরবেই। আমায় মেরে আমার কন্ঠরোধ করতে পারবে না।
    জাঁ- সেক্ষেত্রে চরম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থেকো।
    এলেন(পাগলের মত)- তুমি লুসিয়ের ব্যাপারে কি করতে চলেছ? তুমি যদি ওকে জেলে পোরো তাহলে আর সামলাতে পারবে না। কিন্তু তুমি কথা বলছ না কেন? (জাঁ নীরব) উত্তর দাও, উত্তর দাও আমায়। (জাঁ তবুও নীরব। তীক্ষ্ণ চিৎকার করে) অত্যাচারী, অত্যাচারী! খুনী...আমি তোমায় ঘেন্না করি! (ছুটে বেরিয়ে যায়)
    জাঁ(চেঁচিয়ে)- হুইস্কি (সুজান ঢোকে, হাতে বোতল আর গ্লাস। হুইস্কি ঢেলে জাঁ কে দেয়। তারপর আদরের ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরে। জাঁ জোরে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় ওকে। সুজান বিদ্বেষের দৃষ্টিতে ওকে দেখে)
    সুজান- অমানুষ...রাক্ষস তুমি একটা।

    (জাঁ সুজানের দিকে না ফিরে নীরবে হুইস্কি খেতে থাকে। সুজান বেরিয়ে যায়। আলো কমে গিয়ে স্টেজ আবছা অন্ধকার হয়ে যায়। জাঁ পায়চারি করে আর মদ খায়)

    জাঁ- হত্যা! (বাইরে গুলি, মিলিটারি ট্যাঙ্ক, ভারী বুটের আওয়াজ। ব্যাকগ্রাউন্ডে আগুনের ঝলক। নারী-পুরুষের চিৎকার, কান্না। জাঁ মদ খায়) হত্যা! (চিৎকার বাড়তে থাকে। বোমার আওয়াজ) রক্ত! (জাঁ নিজের হাত চোখের সামনে তুলে ধরে। সারা মুখে বোলায়। গুলির আওয়াজ বেড়ে যায়। জাঁ চিৎকার করে ওঠে) রক্ত! রক্ত! রক্ত! (বাইরে বোমার আওয়াজে সে চিত্কার ঢাকা পড়ে যায়)
     



    দৃশ্য \\১৬

    (জাঁ বসে মদ খাচ্ছে। বাইরে উত্তেজিত কোলাহল, একটা কথাই বারবার শোনা যাচ্ছে, ‘বিশ্বাসঘাতক অগুয়েরা’। দুজন সৈন্য লুসিয়েকে নিয়ে ঢোকে। টেবিলে বসায়)

    জাঁ(ভাঙ্গা গলায়)- দু মাস, লুসিয়ে! দু মাস তোমার সাথে আমার দেখা হয়নি।
    লুসিয়ে- আমি ভেবেছিলাম তুমি আসবে।
    জাঁ- আমি পারতাম না। তুমি জানো, তোমার বিচারের রায় কি হয়েছে?
    লুসিয়ে- জানি, রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে মৃত্যুদন্ড।
    জাঁ- আমি চাইনি এটা। লুসিয়ে, (হাত ধরে) তুমি কি ঘৃণা করো আমায়?
    লুসিয়ে- না, তোমার প্রতি আমার মায়া হয়। আমি শেষ পর্যন্ত আমার হাতটাকে কলঙ্কিত করিনি। (কঠোর চোখে তাকিয়ে) তোমার হাত রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে।
    জাঁ- আমি জানি। তুমি কি জানতে না, আমিও আমার হাত নিষ্কলঙ্ক রাখতে চেয়েছিলাম? কিন্তু আমি যদি তোমার মত চাইতাম, তাহলে আগের সরকারই এখনো গদিতে থাকত। বিপ্লবের পক্ষে পবিত্রতা একটা বিলাস, লুসিয়ে!
    লুসিয়ে- হয়তো তাই। কিন্তু আমি যদি কাল ছাড়াও পেয়ে যেতাম, তাহলেও কাল থেকেই আমি তোমার বিরুদ্ধেই লিখতাম আবার।
    জাঁ- তুমি কিচ্ছু বোঝোনি, লুসিয়ে। আমার কোনো দুঃখ নেই যা করেছি তার জন্য। আমাদের বিপ্লবকে বাঁচাতে হত। আমি যদি গিল্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াতাম তার মানে দাঁড়াত যুদ্ধ। কোয়েলার আমায় হুমকি দিয়েছিল। আমি জানতাম ও এটা করতে পারে।
    লুসিয়ে(বিস্ময়ে)- এ কথা আগে বলোনি কেন?
    জাঁ- আমি পারিনি।
    লুসিয়ে- বিপ্লবকে বাঁচাতে এত লোককে তাড়াতে হল তোমায়?
    জাঁ- গিল্ড যদি আগের সরকারকে আবার গদিতে বসাত, তোমার কি মনে হয় না শয়ে শয়ে লোককে জেলে পুরত? আমায় বেছে নিতে হয়েছে। (পায়চারি করে)লুসিয়ে, সারা দেশ আমার বিরুদ্ধে। একবছর কি দু’বছরের মধ্যে আমার গদি কেড়ে নিয়ে আমায় গুলি করা হবে।
    লুসিয়ে- তারপর?
    জাঁ- পাঁচ বছর ধরে সহ্য করছি। কিন্তু বিপ্লব রক্ষা পেয়ে যাবে। নির্বাসিতরা দেশে ফিরে আসতে সমর্থ হবে কয়েক বছরের মধ্যেই। আমি আজ যা করলাম, তার পরিণাম পাওয়া যাবে তখন। তারা ল্যান্ড সিলিং করবে, শিল্প জাতিয়করণ করবে। আমায় ধন্যবাদ দাও-আমাকে, অত্যাচারীকে, যাকে ওরা এখনো অভিশাপ দিচ্ছে। আর তোমরা কি করেছ? ন্যায় বিচারের জন্য এত গলা ফাটানোর কি দরকার ছিল যদি তোমরা ন্যায় বিচার ফিরিয়ে আনতে না পারো?
    লুসিয়ে- আমায় ওসব কথা বলছ কেন? তুমি কি আমায় যা যা বিশ্বাস করি তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মরতে দেখতে চাও?
    জাঁ- না, না লুসিয়ে(লুসিয়ের মাথা টেনে নিজের বুকের কাছে নেয়)। তুমি কি মনে করো না আমি নিজেই হতাশাগ্রস্ত? আমি সব কিছু নিজের কাঁধে নিয়েছি। এমনকি তোমার হত্যাও। আমি তো নিজেকেই ঘৃণা করি।
    লুসিয়ে(জাঁ-এর হাত ধরে)- জাঁ, আমার মনে হয় আমি তোমায় বুঝেছি। (জাঁ মাথা তোলে) তুমি কি মনে করো নিজেকে নিষ্কলঙ্ক রাখতে চাওয়া একটা অপরাধ?
    জাঁ- আমি...আমি তা মনে করি না। আমার মনে হয় তোমার মত লোকের যেমন দরকার আমার মত লোকেরও তেমনি দরকার। আমরা যতটুকু পেরেছি তাই করেছি লুসিয়ে। শোনো, ওরা একদিন রাজভবন আক্রমণ করবে আর আমায় মৃত্যুদন্ড দেবে। আমার তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু একটা জিনিস আমি হিসেবে রাখতে চাই। তুমি কি আমায় দোষী মনে কর?
    লুসিয়ে(ভীষণ জোরে জাঁ-এর হাত ধরে)- তুমি যা পারতে তাই করেছ। আমিও তাই। তুমি যেমন নিজের রাস্তায় এগোবে, আমিও হয়ত কাল ছাড়া পেয়ে তোমার বিরুদ্ধে লিখব আবার। তবুও, আমি তোমায় বুঝতে পেরেছি জাঁ, আমার ছোট ভাই! হয়ত তুমিই ঠিক, তোমার জায়গা থেকে।(জাঁ কে জড়িয়ে ধরে। একজন অফিসার ঢোকে। ম্লান হেসে)আমার সময় শেষ।
    জাঁ- তুমি কি চাও আমি শাস্তি রদ করে দিই?
    লুসিয়ে- না। আমি তা চাই না।
    জাঁ- জানতাম আমি। খেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে লুসিয়ে। বেগাঁ-র খুনে যার শুরু, আশা করছি আমার খুনে সেটা শেষ হবে। (দুজনে দুজনের দিকে নির্মিশেষে তাকায়। তারপর লুসিয়ে বেরিয়ে যায়। জাঁ টেবিলে বসে। মদ খায়। বাইরে থেকে হুকুম ভেসে আসে ‘ফায়ার’। একসাথে অনেকগুলো বন্দুকের শব্দ পাওয়া যায়। জাঁ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)লুসিয়ে! লুসিয়ে!
     



    দৃশ্য //১৭

    (জনতার আদালত। জাঁ দুহাতে মাথা ঢেকে বসে আছে। এলেনের দু চোখ ছাপিয়ে জল)

    জাঁ(মুখ তুলে)- ও ছিল আমার ছোট ভাই। আমার প্রিয়তম বন্ধু। আমি কি করতে পারতাম এলেন? যদি তুমি আমায় সাহায্য করতে পারতে...যদি সাহায্য করতে! তুমি কি বুঝতে পারোনি আমি তোমার সাহায্য চাইছিলাম?
    এলেন- তুমি কখনো কোনো কথা বলনি কেন?
    জাঁ- বলতে পারিনি। কারণ আমি আর এক মানুষ ছিলাম না। আমি ভেবেছিলাম হিংসা দিয়ে লড়াই চালাব, কিন্তু সে হিংসা প্রয়োগ হবে শুধুমাত্র আমার শত্রুর বিরুদ্ধে। আর তারপর, আমি বুঝেছিলাম আমি একটা গোলকধাঁধায় আটকে পড়েছি। এমনকি আমি তোমার ভালবাসাও পাইনি। লুসিয়ের বন্ধুত্ব হারিয়েছি। সুজান আমায় ঘৃণা করতে আরম্ভ করেছে। একমাত্র তুমি যদি আমায় সাহায্য করতে পারতে...
    এলেন(ভেঙ্গে পড়ে)- আমি জানতাম না জাঁ, আমি জানতাম না।
    জাঁ- সুজান, তুমি আমার প্রেমে পড়েছিলে, কিন্তু আমায় ভালবাসা দাওনি। আমায় নার্সের মত দেখভাল করতে (সুজান দু’হাতে মুখ ঢাকে)। কিন্তু এলেন, তুমি কি আমায় বিশ্বাস করেছ?
    এলেন- আমি তোমায় বিশ্বাস করি, জাঁ। তুমি যা যা বললে, সব বিশ্বাস করি আমি। কিন্তু তুমি আমায় কেন কখনো বললে না যে তুমি আমায় ভালবাসতে?
    জাঁ- এলেন, আমি তোমায় এত বেশি ভালবাসতাম প্রথম দিন থেকেই, তুমি কি বোঝোনি?
    এলেন- আমি তোমায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কারণ লুসিয়েকে আমি ভালবাসতাম, আর ও ছিল আমার সমপর্যায়ের। মনে হয়েছিল, তোমার আমায় দরকার নেই। তুমি কি আমায় ক্ষমা করেছ, জাঁ?
    জাঁ- এলেন!
    ফ্রাঁসোয়া(এগিয়ে এসে)- এমন কেউ কি আছে যে প্রমাণ করবে তুমি সত্যি বলেছ? আমাদের হাতে কি প্রমাণ আছে?
    জাঁ- কেউ নেই। তুমি যা খুশি তাই ভাবতে পারো। আর (জনগণের দিকে আঙ্গুল তুলে) ওই যে ওখানে যারা বিপ্লব করেছে ওরা এখন আমায় হত্যা করতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি কোনভাবেই ক্রুটিস্বীকার করব না, ফ্রাঁসোয়া। বেগাঁর জন্য না, লুসিয়ের জন্য না, এমনকি পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলোর জন্যেও নয়। আর, আবার যদি এসব কাজ করার দরকার হয়, আমি আবার করব। তোমরা পরিবর্তনকামীদের দল...তোমরা পরিবর্তন চাও! আমার নীতিই তোমাদের নিতে হবে! যা তোমরা পাবে তা হল কিছু কর্মী পরিবর্তন।

    (জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। ফ্রাঁসোয়া হাত তুলে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। জনতা শান্ত হয়। নেপথ্য থেকে ঘোষণা আসে)

    নেপথ্যে- জুরীগণ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে তাকে দোষী সাব্যস্ত করছে।
    ফ্রাঁসোয়া- মৃত্যুদন্ড!

    (জনতার মধ্যে উল্লাস শুরু হয়। ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’, ‘অগুয়েরা নিপাত যাক’। জাঁ উঠে দাঁড়ায়। দুজন রক্ষী তাকে বাইরে নিয়ে যায়। এলেন জাঁ-এর সামনে আসে)

    এলেন- আমি ভালবাসি তোমায়, জাঁ।

    (জাঁ কিছু বলতে যায়, তারপর চুপ করে এলেনকে দেখে। এলেন হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যায়। তার আগেই জাঁ দুজন রক্ষীর মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে যায়)



    দৃশ্য //১৮

    (রাজভবনের ঘর। টেবিলে ফ্রাঁসোয়া বসে। সামনে কোয়েলার এবং আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী)

    ফ্রাঁসোয়া- আমি আবার বলছি, আপনাদের দাবিগুলো আমি গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করব। সকলের আগে রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। পুলিশী অত্যাচার থামাতে হবে। রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্ত করতে হবে, আর দলতন্ত্র দূর করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
    কোয়েলার(বিনয়ের সাথে মাথা ঝুঁকিয়ে)-আমরাও আপনাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কের বাইরে আর কিচ্ছু চাই না। যাই হোক, গিল্ড আমায় নির্দেশ দিয়েছে আপনাকে বলতে যে কৃষিজমিতে শিল্পায়নের ব্যাপারে আমাদের অধিকার যদি আপনারা কেড়ে নেন তাহলে আমরা সেটাকে অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থার কারণ হিসেবে দেখব।
    ফ্রাঁসোয়া- সে বিষয়ে আমরা এখনো কোনো মতামত নিইনি।
    কোয়েলার- সে আপনারা যা মনে করেন! তবে আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, স্যার, গিল্ড ছাড়া আমাদের দেশের অর্থনীতি তাসের ঘরের মতই ভেঙ্গে পড়বে। তার পরিণাম, দুর্ভিক্ষ এবং গৃহযুদ্ধ। (একটু নীরবতা। বিনয়ের সাথে) গিল্ড একটা নির্দিষ্ট উত্তর আশা করে।
    ফ্রাঁসোয়া- আমরা আপনাদের কাজে বাধা দেব না।
    কোয়েলার(মাথা ঝুঁকিয়ে)- আপনার বিচক্ষণতার বেশি আর কিছুই আমাদের প্রত্যাশা ছিল না, (ব্যাঙ্গের সাথে)ইওর হাইনেস!(বেরিয়ে যায় দলবল নিয়ে। দরজার কাছে ফ্রাঁসোয়া-র সেক্রেটারি মাথা বাড়ায়)
    সেক্রেটারি- কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা দেখা করতে এসেছেন।
    ফ্রাঁসোয়া (একটু চুপ থেকে)- হুইস্কি দাও।
    সেক্রেটারি- আর কৃষক...
    ফ্রাঁসোয়া- আগামী এক সপ্তাহ আমার সিডিউল ওদের জন্য ব্লক করে দাও।

    (সেক্রেটারি হুইস্কির গ্লাস আর বোতল রেখে বেরিয়ে যায়। ফ্রাঁসোয়া নিঝুম হয়ে বসে বসে মদ খেতে থাকে)

    ছবিঃ শ্রীপর্ণা দে


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ মে ২০১২ | ২৬৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kaushik | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০২:৫৮89484
  • এমন লেখাটা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    History repeats itself!!
  • শ্রমণ | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০৯:০২89485
  • চাড্ডি কথা। সার্ত্রের চিত্রনাট্যটা নাটক হিসেবে সুইজারল্যান্ডে প্রথম মঞ্চে এসেছে। প্যারিসে এসেছিল ১৯৬৯ সালে।

    ইস্ট-ইউরোপের কোনো একটি দেশ এর ঘটনাস্থল ছিল। সেখানে তেল আছে। সেটা ন্যাশনালাইজ করতে হবে, বিপ্লবের আগে এই ছিল ভাবনা। কিন্তু জঁ অ্যাগুয়েরা সেটা করতে পারে না গিল্ডের চাপে। এই গিল্ডের একটা বড় অংশই বিদেশী পুঁজি। এই সেটিংটা সার্ত্রের নাটকে কেন? সেটার জন্য দু কথা।

    এক, বলশেভিক বিপ্লবের সময় বলশেভিকদের সহায়তায় এসেছিল মনোপলি আমেরিকান ক্যাপিটালিস্টদের একটা অংশ। রকফেলার থেকে শুরু করে মর্গ্যান অনেকেই। জ্যাকোব স্কিফ, ইহুদি ফিলানথ্রপিস্ট ও ব্যাঙ্কার, জারের ঘোর বিদ্বেষী ইহুদিদের উপর জারের অত্যাচারের জন্য, এমনকি জাপান-রাশিয়া যুদ্ধে জাপানকে ফিনান্স করেছিল, আবার উড্রো উইলসনের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেনের টাকাও এসেছিল এর কাছ থেকে। একে দিয়ে লিস্টটা শুরু। রক্লফেলার ইত্যাদি অব্দিও গড়িয়েছে। ট্রটস্কিকে যেমন নোভা স্কটিয়ার বন্দী দশা থেকে মুক্ত করেছিল ১৯১৭ র আগে, ম্যাকেঞ্জি কিং, রকফেলার জুনিয়ার-এর হাতের ঘুঁটি। লেনিনকে আধুনিক জর্জ ওয়াশিংটন বলেছিল ফ্র্যাঙ্ক ভ্যান্ডারলিপ। ট্রটস্কি তখন লেনিনের সঙ্গে রাশিয়ায় দেখা করতে আর কাজ করতে যাচ্ছিল। তারা সেখানে যে যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নেবে এটা জানা ছিল বলেই কানাডায় তাকে বন্দী করা। উড্রো উইলসনের সরকারের তখন যুদ্ধে যেতেই হবে। আর রাশিয়ানরা সরে গেলে অনেকগুলো জার্মান ডিভিসন খালি হয়ে যাবে পশ্চিমের রণাঙ্গনের জন্য। এই অবস্থাতে ট্রটস্কিকে বন্দী করা। তা সত্ত্বেও ম্যাকেঞ্জি তাকে ছাড়াতে সমর্থ হয়।এবং পাঠাতে পারে রাশিয়াতে। রাশিয়া যুদ্ধ থেকে সরে যায়। ককেশাসে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়ার তিনটে রিপাবলিক হয় নতুন। রাশিয়ার বাহিনী সরতেই এরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আজারবাইজান এবং জর্জিয়া ক্রমে ক্রমে তুরস্ক আর জার্মানির সঙ্গে চুক্তিতে যায়। আরো দুটো ছোটো ছোটো ডিকটেটরশিপ আর রিপাবলিক হয়েছিল। প্রথমটা যায় আজারবাইজানের গভভে, পরেরটা ইংলিশ-আমেরিকান বাহিনীর হাতে। আর তিনটে রিপাবলিকই একসময়ে রাশিয়া ও কামাল পাশার তুরস্কের হাতে চলে যায়। বাকুতে তেল রাশিয়ার এবং লেনিনের লক্ষ ছিল। আবার ককেশাসেই হোয়াইট আর্মি মাথা চাড়া দিয়েছিল বলশেভিকদের বিরুদ্ধে, কাজেই তাদের দমন করাটাও কাজ ছিল। এই ককেশাসই আবার রকফেলারদের কাজে আসবে পরে। সে হল তেল ব্যবসার কথা। সে কথায় এবারে আসছি।

    রকফেলারদের রাশিয়ার তেল-পর্ব? নিউজার্সির স্ট্যান্ডার্ড অয়েল, ১৯২৭-এ রাশিয়ার সঙ্গে তেল চুক্তি করে। ককেশাসের তেল প্রোডাকশনের ৫০% পাবে বলে স্থির হবার পরে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল-এর (আদতে একটা বিরাট ব্যাঙ্ক কিন্তু এটা) মূল ব্যাঙ্কিং পরিচালক রথসচাইল্ডরা (রকফেলার নিজে ব্যাঙ্কার নয় বলে এর পরিচালনা নিজে করতো না), ভ্যাকাম অয়েল বলে নিজেদের কোম্পানির মাধ্যমে সোভিয়েত ন্যাপথা সিন্ডিকেটের সঙ্গে সোভিয়েত তেল ইউরোপে বেচার চুক্তি করে। রাশিয়াকে ৭৫ মিলিয়ন ডলার লোন দেয়। ১৯৩৫ এ স্ট্যালিন যখন বহু রাশিয়ায় বহু বিদেশী কোম্পানির সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে তখনও স্ট্যান্ডার্ড অয়েল-এর গায়ে হাত পড়েনি। পঞ্চ বার্ষিকীগুলো ফান্ড করেছে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্কাররা। ১৯২০ র দিকে রাশিয়াতে ব্যবসা করা বড় বড় ফার্মগুলোর বেশীটাই হল ভ্যাকম অয়েল, ইন্টারন্যাশনাল হার্র্ভেস্টার, গ্যারান্টি ট্রাস্ট, নিউইয়র্ক লাইফ- সবকটা মর্গ্যান-রকফেলার ইন্টারেস্ট আসলে। ট্রটস্কি-স্ট্যালিন বিরোধে রকফেলাররা স্ট্যালিনের পক্ষ নেয়। ক্রুশ্চেভকেও বাতিল করার পক্ষে ছিল রকফেলাররা।
  • শ্রমন | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০৯:০৩89486
  • এখন এ তালিকা বা কাহিনী বিপুল আকারে লেখা যায়। দরকার নেই। যেটা দরকার সেটা হল কেন এই কাহিনী তা বলা! সার্ত্র এগুলো জানতেন। হাওয়ায় হাওয়ায় অভিযোগ অনেকদিন ছিল যে স্ট্যালিনের প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টি-ন্যাশনালাইজেশন স্ট্যান্ডের পিছনে বুখারিনের দর্শনের চেয়েও অনেক বেশী ছিল মার্কিন-ইংরেজ পুঁজির পরামর্শ। লোভ না থাকলে কৃষির মত ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়বে না। চাষী মূলত স্থিতাবস্থার সহায়ক, আর সে নিজের স্বার্থ বেশী পছন্দ করে। জমির সঙ্গে, জমির দখলের প্রশ্নে হাজার হাজার বছর অতিবাহিত হওয়ায় এই তার মনোভাব। কাজেই তাকে জোর করলে ফল ভাল হবে না। শ্রমিক অনেক বেশী রেজিমেন্টেড এবং তার কিছু নেই বলে তার পক্ষে সারাদিন কাজ করে মজুরী মেনে নেওয়াটা সহজ। চাষার পক্ষে না। ট্রটস্কিরা কিন্তু জাতীয়করণের পক্ষে ছিল। এ নানা কান্ড-কারখানা সার্ত্রের জানা। তার সঙ্গে জানা ফরাসী বিপ্লব, দিদেরো-রুশ্যো ব্যাপার-স্যাপার। কাজেই দুটো চরিত্র তৈরী হতে পেরেছে। একজন অহিংস বিপ্লবী, অন্যজন বিপ্লবের প্রয়োজনে হিংসাকে ব্যবহার করতে পিছ পা নয়। কিন্তু যে পিছ পা নয় সে জ্যঁ কে বিপ্লব রক্ষা করার জন্য প্রথমে গিল্ডের কথা মানতেই হয়। টাকা চাই, নইলে দেশ চলবে না। স্ট্যালিন একসময়ে যেমন জাতীয়করণ করেছে, কসাকদের সমস্ত ক্ষমতা নিকেশ করতে অল-আউট গেছিলো, তেমনি জ্যঁ-ও সময়ের অপেক্ষায় ছিল। থাকতে থাকতে এবং আদর্শের ধবধবে পাতার সঙ্গে ক্রমাগত কম্প্রোমাইজ করতে করতে, কেননা রিয়াল পলিটিকে তাই হয় বলেই সার্ত্র মনে করেন বা তেমন দেখা যাচ্ছে ইতিহাসে, সে একসময় নিজেকেই ঘৃণা করতে শুরু করে। এখানেই সার্ত্র তাঁর মধ্যবিত্ত লিবারাল অবস্থানকে দেখছেন। বিপ্লব চাই। কিন্তু শর্ত কি? হিংসা, অস্ত্র? বাকি চিত্ত পরিবর্তন? তলস্তয়ের রাস্তা যা পরে গান্ধী খেয়ে নেবে সেই অহিংসা গাথা? সার্ত্র এই সমস্যায় ভুগেই চলেছেন বহুকাল। তাই সিনেমা ও নাটকও ভুগেছে। কিন্তু সত্যি সত্যি কি সম্ভব অস্ত্র ছাড়া, হিংসা ছাড়া কোনো অবস্থার বদল? রকফেলারদের খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই যে তারা চিত্ত পরিবর্তিত হয়ে লাভের গুড় সব জনগণকে দিয়ে দেবে? বাকুর যে তেলশ্রমিকরা বলশেভিকদের সমর্থন করেছিল জারাবাইজান পুনর্দখলের সময় তারা কি রকফেলার বা ভ্যাকাম অয়েল-এর জন্য করেছিল? বাকুর এই তেল নিয়ে এক বিস্তির্ণ ইতিহাস আছে লয়েড জর্জ বনাম ওয়াশিংটন বনাম ডাচ-শেল তেল কোম্পানির। যতক্ষণ না রকফেলাররা ট্রটস্কি ছেড়েছে ততক্ষণ কিন্তু সিনক্লেয়ার খেয়ে গ্যাছে তেলের মূল ভাগ। ডাচ-শেল বিদেশী স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে ওই ১৯১৭-র দিকে শেয়ার কিনছিল, আর রকফেলাররা রাশিয়ান অভিজাতদের থেকে। কাজেই রকফেলাররা একটু পিছিয়েই ছিল। নতুন রাশিয়ান সরকার অভিজাতদের অধিকার কেনই বা স্বীকার করবে তেলের উপর? অন্যদিকে ডাচ-শেল যেহেতু বিদেশীদের কাছ থেকে কিনেছে তাই তাদের অধিকার আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সংরক্ষিত। নতুন সরকারকে বিদেশী সাহায্য বা ঋণ পেতে গেলে সে মানতেই হবে। রকফেলার-ডাচ লড়াই-এর মধ্যে সিনক্লেয়ার ঢুকে পড়ে ক্ষীর খেয়ে যায়। যখন এরা সকলে মিলে একবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্যাক্ট বানিয়ে তেল না কেনার হুমকি দিয়েছিল তখন রাশিয়া খুব সহজেই সেটাকে ভেঙেছিল আলাদা আলাদা করে সকলের সঙ্গে তেল নিয়ে খেলে। কখনো নিজের তেল বিক্রি, কখনো পার্শিয়ার তেল বিক্রি, কখনো ইরানে ব্রিটিশ ইন্টারেস্ট কমানোকে সাপোর্ট করা নানা পন্থায়। ডাচ শেলের স্যার হেনরী এবং লয়েড জর্জরা অনেক করেও কিছু করতে পারেননি। এবং ট্রটস্কিকে ছেড়ে স্ট্যান্ডার্ড ওয়াশিংটনের মদতেই রাশিয়ান তেল কিনতে থাকে সস্তায়। ডাচ শেল রোমানিয়ার তেল নিত। ব্রিটিশের ছিল বার্মা অয়েল আর অ্যাংলো পার্সিয়ান অয়েলের তেল ব্যবসার জন্য। দুজনেই মার খেতে থাকলো। একটা ডিক্লারেশন দিয়েই এ প্রসঙ্গ শেষ করবো। এর ডেট হচ্ছে, January 15, 1928।

    “Standard Oil Company of New York has until now refrained from making any public comment upon the attacks directed against it by Sir Henri Deterding, chairman of the Royal Dutch-Shell Company, on account of the purchases of Russian oil. These attacks have now assumed such a character, however, that it is considered by Standard Oil Company of New York that the public should have the facts.

    “Standard Oil Company of New York had made purchases of Russian oil in conjunction with several other companies, including the Royal Dutch-Shell interests, for several years prior to 1926. In that year Sir Henri Deterding came to the conclusion that his companies would buy no more Russian oil. Standard Oil Company of New York was asked to refrain from further purchases, but saw no sound reason to comply with this suggestion.
  • শ্রমণ | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০৯:০৩89487
  • “The long distance between the United States and India makes the cost of transport of oil from this country to the Indian markets a substantial item. If, therefore, Russian oil could be supplied to the Indian markets at a fair price, there was an obvious economy in shipping such oil from Black Sea ports by saving at least 5,000 miles of distance. As the Royal-Dutch had large production in Roumania, it was in position to be fairly independent of supplies of Russian oil, whereas, unless Standard Oil Company of New York was assured of products on a favourable basis in its south-eastern European markets and Asia Minor it would be involved in heavy losses."...

    "In July 7, 1920, Secretary of State Hughes had announced that it would be proper for American business men, at their own risk, to trade with Russia. The formal announcement of the State Department read: ‘The restrictions which have heretofore stood in the way of trade and communication with Soviet Russia were today removed by action of the Department of State. Such of these restrictions, however, as pertained to the shipment of materials susceptible of immediate use for war purpose will, for the present at least, be maintained.’

    “There were no other reservations in the statement, other than the statement that trading with Russia would be at the trader’s risk. There was no suggestion by the State Department that trading with Russia was in any respect improper, and no subsequent modification has been made in State Department policy."....
    “It would appear that the views of Standard Oil Company of New York—i.e., that the problem of buying and selling Russian oil is a purely business proposition—are not only in accord with American policy but are also supported by the policy of the British Government, whose political relations with the Soviet are the same as those of the United States.

    "The marketing of Russia petroleum in England is done by the Russian Oil Products Co., Ltd., known to be a Soviet-owned institution. On August 26, 1927, after the break between England and Russia, the British Government (through the Home Office) issued a statement, the main part of which was as follows: ‘In view of certain inaccurate and misleading statements which have appeared in the press with reference to his decision requiring two of the directors of Messrs. The Russian Oil Products to leave the country, the Home Secretary wishes to make it plain that his decision involves no new departure in the policy of H.M. Government. As has been stated frequently, the Government desires to place no obstacle in the way of trade between this country and Russia so long as those conducting the trade do not indulge in propaganda or conduct contrary to the interests of this country. It is not the policy of the Government to terminate the activities of any Soviet trading organization which is engaged in trade to the benefit of this country and is not otherwise harmful."....

    অনেক লিখে ফেললাম এটা বোঝাতে এই ছিল পরিস্থিত এবং সার্ত্রে এগুলো জানতেন। এখন সেই চিত্রনাট্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা কতটা প্রাসঙ্গিক?
  • শ্রমণ | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০৯:০৪89488
  • নাটকটা যেমন লেখা হয় তেমনই হয়েছে। অনেকটা উৎপল দত্ত ধাঁচে। তবে আমার পড়তে পড়তে অনেক বেশী হেইনে ম্যুলারের কথা মনে হচ্ছিল। তার নাটকেও সার্ত্র জাতীয় বিষয় আসয় থাকে। আর এই হিংসা অহিংসা নিয়ে তার ভাবনাও আছে এমন কিছু। বিপ্লবী পিস্তল চালাতে চালাতে একদিন পিস্তল বিপ্লবীকে চালায় জাতীয় ভাবনা। কিন্তু একে পশ্চিমবঙ্গের কন্টেক্সটে আনলে অনেকটাই পানসে হয়ে যাবে। বাম-সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-মমতা, আর ১৯১৭-রাশিয়া-তেল-রকফেলার নিয়ে আমি আগে যা লিখছিলাম তার গ্র্যান্ড স্কেলের সঙ্গে তুল্য বলে মনে হয় না। একটা ছোট্ট অঙ্গরাজ্যে, বিপ্লব-বিপ্লব ভাব করে খেলা আর একটা বিপুল দেশের ব্যাপার যা গোটা বিশ্বের রাজনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করবে, দুটো এক স্কেলে যায় কি? সার্ত্রের একটা সমস্যা আছে নাট্যকার হিসেবে।, সেটা হল ঘটনাকে (action) বড় বেশী গুরুত্ব দেওয়া এবং ভায়োলেন্সকে বিশদ বিষয় করে তোলা। তার ফলে নাটকে একটি একরৈখিক গতি আসে যা দার্শনিক আলোচনাকে বিঘ্নিত করে। ব্রেখটের মতন একসঙ্গে অ্যাকশনকে এবং দর্শনকে আলোচ্য করতে তিনি সিদ্ধ নন। আবার বার্নার্ড শ-এর মতন দর্শনকেই বিষয় করতেও না। কিম্বা পিরানদেল্লোর মত বা বেকেট-এর মতন মনস্তত্ত্বকেই ধরেন না। কাজেই দুটোকে একসঙ্গে ধরতে গিয়ে অনেক সময়েই শেক্সপিরীয়ান হয়ে যান। কিন্তু শেক্সপীয়ারের নাটকের ওয়ান লাইনার দর্শন ওনার নাটকে গভীর হতে পারে না। কারণ সার্ত্র নিজে নিশ্চিত নন কোনো কিছু বিষয়েই। আসলে নাটক রচনা কোথাও তাঁর আইডিয়ার সঙ্গে সংলাপ মাত্র। তাই কাঁচা থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। এখানে যেমন। জ্যঁ-এর নিজেকে ডিফেন্ড করা আর না করা দুই-ই কাঁচা থেকে গ্যাছে। লুসিয়ের আদর্শবাদ একটা জব্বর রসিকতা। ন্যূনতম পড়াশোনা থাকলে কম্যুনিষ্ট পার্টিতে থেকে অহিংস বিপ্লবের কথা ভাবাই যায় না। পার্টিটা নামে কম্যুনিষ্ট হলে আলাদা কথা। আর বিপ্লব পৃথিবীর কোথাও কখনোই কি আর অহিংস হয়েছে? বা কোনো সত্যিকারের পরিবর্তন? তার উল্টোদিকে জ্যঁ-র নিজেকে নিয়ে অত দুঃখ। কোনো মানে হয়? জাঁ-র বেগাকে হত্যা দৃশ্য বা হত্যার সিদ্ধান্ত যেমন বেশ কাঁচা। বড় একজন কৃষক নেতা হলে তাকে এমন ভাবে খুন করা যায় না। এত কম প্রমাণে হয়নি কি কখনো? হয়েছে। নিহিলিস্টিদের থেকে গড়ে ওঠা কম্যুনিষ্ট পার্টিতে হয়েছে। কিন্তু তারা কখনো ক্ষমতায় আসেনি কোথাও। এমনকি এ দেশেও হয়েছে একসময়ে। কিন্তু যে কোনো একদিন কম্যুনিষ্ট পার্টির মাথায় বসবে সে নিজের হাতে হত্যা করছে এমনটা কিন্তু বোধহয় খুব কম। বড়-সড় কেস আমার তো মনে পড়ে না। হ্যাঁ, পঞ্চায়েত প্রধান বা লোকাল কমিটির নেতা আছে-টাছে এমন। ছিলও। কিন্তু কাকা বা খোকন সেনেরা বা প্রমোদ দাশগুপ্তরা (হ্যাঁ, অনুশীলন সমিতির নিহিলিস্ট পাস্ট নিয়েও) নিজে নিজে মারছে এটা কেমন যেন! হুকুম দিচ্ছে অব্দি ঠিক ছিল। এই সব নানা কাঁচা ব্যাপার আছে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে তারপরেও একটা কথা আছে, যেটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল ক্ষমতাদখলের পর পরিবর্তন হয় কি করে? বা আদৌ হয় কিনা! সে প্রশ্নটা তো চিরকাল ছিল, আছেও। কিছু বদলায়, আর সেই কিছু বদলাতে গিয়ে রেজিম নিজেকে পাল্টে ফ্যালে। পুঁজির বিশ্বে পুঁজির চলাচলকে ধরতে হলে অনেক সিদ্ধান্ত যা এমনিতে অপ্রিয় তা নিতে হয়। আবার নিতে নিতেই জেগে ওঠে দুর্নীতি, জেগে ওঠে দমনমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু কিছুই হয় না এমন না।
    ওই যে জাঁ বলছে যে "আমার নীতিই নিতে হবে তোমাদের", এটা কিন্তু অতিকথন। কেন না এমন হয়ে এসেছে এবং তাই হবে এমন একটা ভাবনা আছে এর পেছনে। সত্যি কি তাই?

    সোভিয়েতে অনেক অপ্রাপ্তি আছে, অনেক দুর্গন্ধ আছে, কিন্তু যা প্রাপ্তি আছে তা মানব ইতিহাসের কোন স্তরে পাওয়া গ্যাছে এর আগে? চীনে যা হচ্ছে এখন তাকে বাদ দিয়েই বলছি, মাও-এর সময়ে যা হয়েছে তা কোন এশিয়ার দেশে হয়েছে? জবাহরলাল নেহরুর ধোঁকার টাটির চেয়ে মাও-এর কাজ অনেক বেশী দৃঢ়, অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সব হয়েছিল? না হয় নি। হতে পারেও না। এই সাইকেলটা তো চলবেই। একটা বা কয়েকটা দেশে বিপ্লব হয়ে উৎপাদনে ব্যবস্থা বদল হলেই বিশ্ব বদলে যায় না। বদলায় একমাত্র সংঘাতে, একমাত্র দীর্ঘ্য লড়াই দিয়েই। সোভিয়েতের পতন বা চীনের নতুন সাম্রাজ্য যে কম্যুনিষ্টদের কম্যুনিজম বাতিল বলতে উদবুদ্ধ করেছে তারা নেহাতই লিবারাল, লুসিয়ের মতন। মূর্খের স্বর্গে বাস করে। যারা করে খাচ্ছে, যারা লুটে খাচ্ছে তারা এমনি এমনি সব ছেড়ে দেবে? মামদোবাজি নাকি? প্রতিটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশ আজকে এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে সেখানে গণতন্ত্রটাই একটা তামাশা হয়ে গ্যাছে। অধিকার কেড়ে নিতে নিতে আজকে এই সমস্ত দেশের জনগণও অধিকারহীন। এই অবস্থা মেনে না নি্যে মানুষের এমনিতে উপায় নেই। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঘোড়ার ডিমের চাষ চলছে সর্বত্র। প্রতিটি দেশ তার তার মত করে ড্রাকোনিয়ান আইন করে রেখেছে ফ্রী স্পীচকে দমন করার জন্য। কথা বললেই সন্ত্রাসবাদী অমুকবাদী তমুকবাদী তকমা লাগিয়ে নাগরিককে চেপে চোদ্দ করে দিচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে একই নীতি যারা পরিবর্তন আনবে তাদের নিতেই হবে বলাটা নিতান্তই মেনে নেওয়া যে এর বাইরে কোনো রাস্তা নেই। অন্য সব ছাড়ুন, স্রেফ ইউরোপের রাজারা যদি মেনে নিত চার্চের বাইরে আর কিছু নেই তাহলে আধুনিক ইউরোপটাই জন্মাতো না। পুঁজিবাদ তো কালকের শিশু মাত্র। মানে নি বলেই পাল্টেছে। চার্চের পুতিগন্ধময় দখল থেকে বেরিয়েছে। কিছুকাল হাওয়া-বাতাস পেয়েছে। তারপরে আবার সামন্ত অত্যাচার, তারপরে আবার বুর্জোয়া বিপ্লবের খোলা হাওয়া কদিন, আবার এখন নয়া চার্চ ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন। কিন্তু প্রতিটি স্তরেই নাগরিকের কথা বলার বিষয় বেড়েছে, সাহস বেড়েছে। জেদ বেড়েছে। না হলে কি আর গুরুর পাতাটাই হত? হত না। সার্ত্রের নাটক ধরে আপনিও যদি বলেন যে এই হল পরিবর্তন যে কর্মী বদলে যাবে মাত্র (আমি এ বঙ্গের পরিবর্তিত রঙ্গের কথা বলছিনে) তাহলে আমার মনে হয় ইতিহাসকে কিছুটা ভুল পাঠ হচ্ছে। দুঃসহ পরিস্থিতিতেই চরিত্রের পরীক্ষা হয়। অন্ধকারেই আলোর দরকার থাকে। আলোটা কই?
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ৩১ মে ২০১২ ০৩:০৪89490
  • এ প্রসংগে কিছু কথা বলার আছে। আমার নিজের যা মনে হচ্ছে। আজ রাতে আশা করি উত্তর দিতে পারব।

    যা^রা পড়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ ।
  • Debajyoti Mukherjee | ***:*** | ৩১ মে ২০১২ ০৩:৪৬89491
  • Darun legechhe natok ta. Shamik Bandopadhyayer " Theatre er jolhawa " boitay porlam kobi Arun Mitra naki etar bonganubaad korechhilen Sombhu Mitrer onurodhe. Kintu sei project ta sesh obdhi materialise koreni. Ei natok ta ajker dine dnariye banglar rongomonche jodi namano jay tahole ekta tulkalam byapar hobe. Ei forum e jesob natyokormi achhen , tader proti etar drishti akorshon kora dorkar.
  • কল্লোল | ***:*** | ৩১ মে ২০১২ ১২:২২89489
  • শ্রমণের মতের পর খুব বেশী কিছু বলার নেই।
    সার্ত্র ক্ষমতার যে পাঠ রেখেছেন, তা আজ আর নতুন কিছু নয়। সেদিন, ১৯৪৬এ এভাবে ভাবতে পারাটাই বিরাট ব্যাপার ছিলো। সেই জন্যই সার্ত্র সার্ত্র। এই মানুষটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পক্ষে দাঁড়িয়ে, তিনি যে মত বিশ্বাস করেন না, সেই মতের মুখপাত্র পত্রিকা রাস্তায় নেমে বেচেছেন, কারন সরকার সেই পত্রিকাটি বেআইনী করার কথা বলেছিলো।
    কিন্তু এই খোঁজটা জরুরী। ক্ষমতার উল্টোদিকে কি?
    আসলে, সোভিয়েৎ/চীন নিয়ে কথা আছে। কিসের মূল্যে কি পাচ্ছি সেটাও তো দেখতে হয়। সেখানেই তো আজকের "উন্নয়ন" বিতর্কও মাথা খুঁড়ছে। কিসের মূল্যে কি পাচ্ছি।
    এমনিতে আমার মত, সমাজতন্ত্র কোন নতুন উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার সন্ধান দিতে পারে নি। তাই তাকে ধণতন্ত্রের চোরাবালিতে হাবুডুবু খেতেই হয়েছে। তার সাথে গণতন্ত্রের সমস্যাও জড়িত।
    এই নাটকটা সমস্যার একটা দিক নিয়ে কথা বলছে (অবশ্য, একটা নাটকে তো আর দার্শনিক ও অর্থনৈতিক প্রবন্ধ লেখা যায় না) বেশ সরলীকৃত কায়্দায়। জানি না মূল নাটকে জটিলতাগুলো ধরার ব্যাপার আছে কি না।
    আপাততঃ এই মনে হলো।
  • ranjan roy | ***:*** | ০৪ জুন ২০১২ ০৬:২৯89492
  • লেখক সিদ্ধার্থ সেন কিছু বলবেন সেই আশায় ্ছিলাম। অপেক্ষা করতে করতে বার কয়েক পড়ে ফেললাম। শুরুতে বলে ফেলি যে নাটকটি আমার ভাল লেগেছে। তার একটা কারণ হয়ত বহুদিন কোন রাজনৈতিক নাটক হাতে পাইনি। আর শ্রমণের আমেরিকান তেল ও শিশু সোভিয়েতের স্বার্থে স্তালিনের স্ট্যান্ড নিয়ে বক্তব্য ও দস্তাবেজ আমার প্রাপ্তি। এ নিয়ে কিস্যু জানতাম না।
    দ্বিতীয় কারণ, নাটকটি --সার্ত্র এবং সিদ্ধার্থের ভাবানুবাদ-- বিপ্লব নিয়ে চিন্তার একটি বেসিক প্রশ্নকে অ্যাড্রেস করতে চেষ্টা করেছে।
    দেখাই যাচ্ছে, প্রশ্নটি সার্ত্রের সময় , আজকে সিদ্ধার্থের এবং আমাদের সময় জুড়ে প্রাসংগিক হয়ে রয়েছে। বেসিক প্রশ্নটি হল সমাজ বদলানোর জন্যে হিংসা অপরিহার্য কি না? আর সেই হিংসা ব্যক্তি বিপ্লবীটির মানসে কি ধরণের অভিঘাতের ( নৈতিক) সৃষ্টি করে?
    শ্রমণ মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে কোন দ্বিধায় ভোগেন না। লুসিয়ে চরিত্রটি নিয়ে উনি বলেছেন যে সামান্য মার্কসবাদ পড়া থাকলে কোন পার্টিতে আসা লোক এমনি করে ভাবে না। মার্ক্স কথিত সমাজবিপ্লবের ধাত্রী হিসেবে হিংসার ভূমিকা ওনার কাছে অপরিবর্তনীয়। শ্রমণের বক্তব্যে মাওয়ের কথার প্রতিধ্বনি দেখছি যেখানে উনি বলেছিলেন যে সাম্রজ্যবাদীরা নিজে থেকে অস্ত্র ফেলে দিয়ে ভগবান বুদ্ধ হয়ে যাবে এ আশা করা বাতুলতা!
    কাজেই শ্রমণ সংশয়হীন যে অহিংস বিপ্লব মানে সোনার পাথরবাটি। ওতে বিশ্বাস করে শুধু লিব্যারাল মুর্খেরা।
    আমি কিন্তু এ বয়সে এসে এতটা সংশয়হীন হতে পারছি না। একটা সময়ে রবীন্দ্রনাথের "চার অধ্যায়" নিয়ে ব্যঙ্গ করেছি। শরৎচন্দ্র যখন "পথের দাবী" তে ডাক্তারের মুখ দিয়ে( সম্ভবতঃ শশীর বাড়িতে বসে অপূর্ব ও ভারতীকে বোঝাতে বোঝাতে) বলান যে আগামীদিনে নিস্বঃ মানুষের হাতে ক্ষমতা আসবে কালের চাকা ঘুরে, কিন্তু তাদের শাসন আরও নিষ্ঠুর হবে, ( বা এ'জাতীয় কিছু) তখন ওনাকে পেটিবুর্জোয়া ইয়ে বলে গাল দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ মনে হয় বিপ্লব-বিপ্লবী-হিংসার আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে অন্তিম ফয়সালা হওয়া এখনো বাকি।
    আগে বিশ্বাস করতাম যে লক্ষ্য আসল কথা , পদ্ধতির ভালো-মন্দ বলে কিছু হয় না। লক্ষ্য ভাল হলে পদ্ধতিও ভাল। মানে যে পদ্ধতিতে লক্ষ্যপ্রাপ্তি হবে তাই ভাল। উদাহরণ দিতাম প্রাতঃকৃত্যের পর নিজেকে পরিস্কার করতে পশ্চাদদেশে হাত লাগানো আবশ্যক, এর আলাদা করে ভালোমন্দ হয় না। এর কোন ব্যতিক্রম নেই।
    কিন্তু সময়ের সঙ্গে দেখতে পেলাম যে পরিবর্তন হয়, --প্রথমে টিস্যু পেপার, পরে হ্যান্ডস্প্রেয়ার।
    আসলে মার্ক্সীয় দর্শনে অমোঘ অপরিবর্তনীয় বলে কিছু নেই। অবজেক্টিভ ট্রুথ আছে, অ্যাবসল্যুট ট্রুথ নেই।
    তাই মার্ক্সের সময়ে হিংসা ছাড়া ক্ষমতা দখল প্রায় অসম্ভব হলেও মার্ক্সই তিনটে বিশেষ কন্ডিশনে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়াও ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দেখিয়েছেন( কোন লিংক মনে নেই।)
    যদ্দূর মনে পড়ছে তাতে সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীর সামনে অসংগঠিত ক্ষয়িষ্ণু বুর্জোয়া গোছের কিছু( আসলে দুপক্ষের শক্তির ভারসাম্যের প্রশ্ন।)
    আর লুসিয়ে তো মধ্যবিত্ত হ্যামলেট। হ্যামলেট ও জানতো কাকাই বাবার হত্যাকারী ও মায়ের বিছানা নোংরা করা লোক। ওকে মারতেই হবে, বাবার প্রেতাত্মাও তাই বলেছে। কিন্তু হ্যামলেটের যে রক্তপাতে অনীহা। তাই সে অজুহাত খোঁজে। আমার চরিত্রটি বেমানান মনে হয় নি, অনেক লুসিওকে দেখেছি যে!
    আর নিজের হাতে হত্যা করা? অগুয়েরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রনায়ক হয়, কিন্তু বেগাঁকে হত্যার সময় তো সে একটি নবীন সংগঠিত চোট খাওয়া দলের সংগঠক মাত্র। ভাবুন তো, কেরালায় পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া খ্যাতিমান কমরেড চন্দ্রশেখরনকে হত্যার দায়ে জেলা কমিটির সেক্রেটারি অভিযুক্ত। এবং জেলার নেতা কমরেড মণি বলছেন এটা আমাদের পার্টিতে বরাবর হয়ে আসছে।
    নাটকটির স্ট্রাকচার ও শৈলীতে উৎপল দত্তের প্রভাব? হ্যাঁ, আমারও তা মনে হয়েছে। তবে মূল নাটকটি পড়া নেই। হয়তো উৎপল নিজে সার্ত্র এর শৈলীতে প্রভাবিত।
    কিন্তু আসল কথা হল হিংসার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা গ্রুপটির হিংসার মাধ্যমেই ক্ষমতায় টিকে থাকর আপ্রাণ চেষ্টা! রাজনীতি বন্দুককে নিয়ন্ত্রিত করবে এটাই কাম্য। কিন্তু একটা সময়ের পর বন্দুক রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। এই কূট থেকে বেরনো কঠিন, যায় কি না জানিনা। লেনিনের রাশিয়া ও চীনের মাওয়ের উপলব্দ্ধি নিয়ে কোন কথা হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি ক্ষমতা দখলেই থে,মে থাকব? না তার আগে ভাবব?
    মার্কসবাদ অনুজায়ী ক্ষমতা দল্খল তো লক্ষ্য নয়, ওটা মাধ্যম মাত্র। কিন্তু যুগে যুগে ক্ষমতায় থাকাটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময়ের শোষিত আর এক সময়ের শোষক হয়ে যাচ্ছে, এর ব্যত্যয় দেখতে পাইনি।
    দুই দশক আগে মালে পার্টির একজন নেতা একটি ডকুমেন্ট দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন যে কেন শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কতন্ত্র বহুজনের গণতন্ত্র তথা মুষ্টিমেয়ের বিরুদ্ধে দমন হবার শপথ নিয়ে শুরু হয়েও শেষমেশ একটি ছোট গোষ্ঠীর ক্ষমতার মাধ্যম হয়ে যায় ও জনতার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়?
    এই সমস্যা রয়েই গিয়েছে।
    আর আজকের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ও তখনকার সমস্যা? আদৌ খাপে খাপ, পঞ্চার বাপ মাত্রায় তুলনীয় নয়। কিন্তু ভাবনায়? ক্ষমতার দর্শনে? চরিত্রের যন্ত্রণায়? সাহিত্য-শিল্পের কাজই তো বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন করানো।
    এখানেই ইতি টানলাম,
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ০৫ জুন ২০১২ ০৯:১৩89493
  • আমি লিখব। কিন্তু এই মুহূর্তে আমায় দুখানা মহাদেশ আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। এত-ই ক্লান্ত, অবসর সময়টা খালি ঘুমিয়ে কাটাচ্ছি। ২/১ দিনের মধ্যেই লিখব।

    দেরীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ...
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ০৯ জুন ২০১২ ০৩:৩৯89494
  • প্রথমেই মনে করিয়ে দি-ই আরেকবার যে মুল রচনাটা নাটক ছিল না। ছিল চিত্রনাট্য। সেটাকে নাটকে আনার জন্য বেশ কিছু স্ট্রাকচারাল চেঞ্জ করতে হয়েছে। যেমন চিত্রনাট্যে যখন প্রথম এলেন কোর্টরুমে ঢুকবে, জাঁ তার দিকে তাকাবে। এবং এক মুহূর্তের জন্য গোটা কোর্টরুম ফাঁকা হয়ে যাবে। শুধু জাঁ আর এলেন, দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে। এই টেকনিক নাটকে সম্ভব না। আবার চিত্রনাট্যের রশোমনীয় স্ট্রাকচার, যেখানে এক একটা ঘটনা এক একটা চরিত্রের চোখ দিয়ে এক এক রকম ভাবে দেখানো হচ্ছে, সেটাও নাটকে আনা কঠিন। নাটকের নিজস্ব গতি তাতে ব্যাহত হবার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে রচনা লিনিয়ার হয়েছে, এবং কয়েকটা জায়গায় স্ট্রাকচারাল অসামঞ্জস্য এসেছে। যদি কোনো দল এটা নাটক করতে চায় তাহলে এই ড্রাফটটাকে আরেকটু ঘসামাজা করার ইচ্ছে আছে।

    দ্বিতীয়ত, শ্রমণ অভিযোগ করেছেন যে জাঁ-এর মত উচ্চপদের নেতা কি করে কাউকে নিজের হাতে হত্যা করে? বাস্তব জীবনে হয়না, ঠিক। কিন্তু পোয়েটিক লাইসেন্সের একটা ব্যাপার থাকে। পুরো ঘটনাটাই সিম্বলিক। বিপ্লবের স্বার্থে সমস্ত নোংরা কাজগুলোর দায় নিতে হচ্ছে ক্লাসিকাল অর্থে রাজনৈতিক যে সংগঠন, তাকে, আর সিভিল সোসাইটি হাত ধুয়ে বসে আছে। প্রশ্নটা হল, ইতিহাসের দায়ভার কি সিভিল সোসাইটির ঘাড়ে বর্তায় না বর্তায় না? নিজেকে নিষ্কলঙ্ক রাখতে চাওয়া যেমন অপরাধ নয়, কারণ প্রত্যেককে তার নিজের কাজ যেমন ভাবে পারে করে যেতে হয়, যেটা জাঁ নিজেও স্বীকার করে শেষে গিয়ে, ঠিক তেমনি ইতিহাসের কোনো সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নিজের অহিংস সত্বার দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যায় না। ইতিহাসের দায়ভার সবাইকে নিতে হয়। লুসিয়ে তাই বেঁগার খুনের দায় জাঁ-এর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে, পার্টির মধ্যেই থাকে, কিন্তু একটা সময় তাকেও প্রতিরোধে নামতে হয়। নিজের জীবনের মুল্যে জাঁ এবং লুসিয়ে বুঝেছিল যে দন্ড সকলকে সমান ভাগ করে নিতে হবে। এর কোনো আংশিক সত্বা হয় না। আর এটা ভাবাও অলীক যে নীতিগত প্রশ্নে সমাজ-পরিবর্তনের কাঁধে কাঁধ মেলানোর পরে হত্যা/রক্তের দায়ভার পার্টির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়া যাবে। তাই খুনের ভার লুসিয়ের ওপর থাকলেও জাঁ-কেই সে কাজ সমাধান করতে হয়, নাটকের স্বার্থে। ঠিক যে কারণে স্কট্ল্যান্ডের রাজার পক্ষে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিজের হাতে গুপ্তহত্যা করা বেমানান, তার জন্য লোক নিয়োগ করলেই হত, আর তা সত্বেও সে কাজ ম্যাকবেথকেই করতেই হয়। শিল্পের সত্যি জীবনের সত্যির সাথে সব সময় এক সাথে যায় না। সিম্বলিক মীনিং-এর স্বার্থে শিল্পকে আশ্রয় নিতে হয় অতিকথনের, নাহলে তা শিল্প নয়।
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ০৯ জুন ২০১২ ০৩:৩৯89495
  • লুসিয়ের বিবেক দংশন কি সত্যি-ই রসিকতা? বাস্তব কি বলে? সোভিয়েত জমানায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে যতজন শিল্পী সাহিত্যিক পার্টি ছেড়েছিলেন নানা দেশে, তাঁদের অভিজ্ঞতা কি বলে? আর্থার কোয়েসলার-দের গড দ্যাট ফেইলড বইটায় কমিউনিস্ট পার্টির সম্বন্ধে মুল অভিযোগ গুলোর মধ্যে কি এটাও ছিল না যে বিপ্লবের নামাবলীর আড়ালে এ আসলে হিংসার মহোত্সব? শুধু দক্ষীণপন্থীরা কেন, নানা রংগের বামপন্থীরাও তো এক-ই অভিযোগ করেছেন যুগে যুগে। লুসিয়ে বরং সার্বিকভাবে এই দ্বীধাক্রান্ত ইন্টেলিজেন্সিয়ার প্রতিনিধি। সে জানে সমাজ পাল্টাতে হবে, বিপ্লব দরকার, কিন্তু নিজের মধ্য্বিত্ত শ্রেণী-অবস্থান থেকে দায়ভার নিজের হাতে নিতে চায় না। নিজের বিবেককে চোখ ঠারে, যে যতক্ষণ সে শ্রেনীশত্রুর রক্তে হার না ডোবাচ্ছে, তার কমরেডরা অন্যায় করলেও সে নিষ্কলঙ্ক। যদিও নিজের জীবন দিয়ে তাকে এর দাম মেটাতে হয়েছে। ভেবে দেখুন বিশের দশকে রেড টেরর নিয়ে তালিনের সাথে কামেনেভ জিনোভিয়েভ গোষ্ঠীর বিতর্ক। আমার তো হুবহু এক-ই জিনিস লেগেছিল। ঝকঝকে শহুরে বুদ্ধিজীবী কামেনেভ বনাম জংগী অসংস্কৃত পার্টি কর্মী কোবা।

    আমার কাছে রাশিয়া, বা ইস্ট ইউরোপ, বা সিংগুর নন্দীগ্রাম আলাদা কিছু নয়। আমি এগুলোকে একটা ইউনিফায়েড হোল হিসেবেই দেখি। কোয়ান্টিটেটিভ অভিঘাতে তফাত থাকে, কিন্তু বেসিক প্রশ্নগুলো তাতে মিথ্যে হয়ে যায় না। বিপ্লবী পিস্তল চালনা করবে না কি উল্টোটা, তার থেকেও আমার কাছে বড় প্রশ্ন, ইতিহাসের দায়ভার আল্টিমেটলি কার ওপর বর্তাবে! সমস্ত দায় কি একা পার্টিকেই নিতে হবে? যে হেজিমনি শ্রেণীচেতনার কথা বলে এবং বিপ্লবে সহমর্মীতা জানায়, যখন পরীক্ষিত হবার সময় আসবে, সেই ইন্টেলিজেন্সিয়া তথা সমগ্র সিভিল সোসাইটির ভুমিকা তখন কি হবে? সকলেই এই নাটকে জাঁ-কে কোনো না কোনো ভাবে ব্যবহার করে, এবং তারপর সরে দাঁড়ায়। তার কমরেড, তার প্রেমিকা, তার বন্ধু, তার রক্ষিতা, সকলেই। আঁ তো একটা গোটা সমস্যাদীর্ণ ক্ষতবিক্ষত পার্টির মুখ। সে ভেবেছিল সময় নিয়ে অল আউটে যাবে, কিন্তু হিংসা এবং ক্রমাগত হিংসার ব্যবহারে ব্যবহারে বিপর্যস্ত সে নিজেকেই ঘেন্না করতে আরম্ভ করে। সে এটাও বলে যে `আমায় পুরোটা নিজের ঘাড়ে নিতে হচ্ছে। আমায় সহ্য করতে হচ্ছে।` কিন্তু তা সত্বেও ছেড়ে পালাতে পারে না, অন্যদের মত। খারাপ হোক, ভাল হোক, কমিউনিস্ট পার্টিকে পুরোটাই নিতে হয়। তার পালাবার পথ থাকে না।

    প্রশ্নটা হল, জাঁ-র কিছুই কি করার ছিল না? ঠিক এই জায়গাটায় এসেই সাঁর্ত্র ধোঁয়াশা রেখে দেন। কারণ এর উত্তর আমরা কেউ জানি না। আর জানি না বলেই গোটা নাটক জুড়ে কোনো পক্ষ অবলবন করা যায় না। একটা ডায়ালজি চলতে থাকে। জাঁ, ফ্রাঁসোয়া বা লুসিয়ে, প্রত্যেক পক্ষ-ই প্রবলভাবে নিজের যুক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, এর উত্তর ১৯৪৬ এ দাঁড়িয়ে যেমন জানা সম্ভব ছিল না, আজকের ২০১২ তে দাঁড়িয়েও জানা সম্ভব নয়। লুসিয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জাঁ-এর পথ অন্যায় এবং ভুল, জাঁ-এর চোখ দিয়ে দেখলে বিপ্লবের পক্ষে পবিত্রতা সত্যি-ই একটা বিলাস, কারণ টুনটুনি মার্কা গণতন্ত্রপ্রেমীরা মুখে হাজার চেঁচালেও এক চুল-ও সমাজ পরিবর্তন করতে পারেন নি। পেরেছে তারাই, যাদের নোংরা সাফাই-য়ে হাত দিতে হয়েছে। আবার ফ্রাঁসোয়ার চোখ দিয়ে দেখলে, আল্টিমেটলি বিপ্লব নিজেকে সারেন্ডার করেছে নির্ণায়ক শক্তি পুঁজীবাদের হাতে। যেমন ঘটেছে রাশিয়ায়, চীনে। তাহলে সত্যিটা কি? বা অল্টারনেটিভ কি? পুঁজীবাদ যদি নির্ণায়ক শক্তি হয়, তার কাছে আত্মসমর্পণ-ই কি নিয়তি? বারে বারেই কি অপারেশন বর্গার বামফ্রন্ট পরিণতি পাবে সিংগুরে এসে? আবার তার বিরুদ্ধে উঠে আসা শক্তিও কি এক-ই রকমভাবে সারেন্ডার করতে বাধ্য হবে, ফ্রাঁসোয়ার মত?
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ০৯ জুন ২০১২ ০৩:৪০89496
  • এই প্রশ্নগুলো আজকের দিনে জরুরী হয়ে উঠেছে। উত্তর খোঁজাটাও। নাটকটা কোনো সলিউশন দেয়না। কারণ সমাধান দেওয়া শিল্পের কাজ না। প্রশ্ন করা কাজ। ব্যাক্তিগত্ভাবে, আমি শ্রমণের মতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। আমি বিশ্বাস করি, রাশিয়ায় অনেক দুর্গন্ধ থাকলেও, মানব সভ্যতাকে যা দিয়েছে তার তুল্য-মুল্য কিছু আর আসেনি। স্তালিন বনাম কামেনেভ দ্বন্দ্বেও স্তালিনের পক্ষ নেওয়াই শ্রেয় মনে করেছি বারবার। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, সাঁত্র-র বেসিক প্রেমিসটা আমি পার্সোনালি ভুল মনে করি। কোনো কিছুই পরিবর্তন হবে না, এটা আমিও মানি না। কিন্তু সেই সাথে এটাও ঠিক, যে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন আমরা এই সুত্রে ধামাচাপা দিয়ে এসেছি। বিপ্লবের ডাক দিয়ে যুক্তির বদলে মনকে বিশ্বাস করিয়েছি যে পরিবর্তন হবে। এবং তার জন্য নোংরা কাজ অপরিহার্য। কিন্তু তার সাথে যে অ্যাডেড বিপজ্জনক টেন্ডেন্সিগুলো, হিংসার প্রশ্নে আত্মসমর্পণ, কাতিনের জংগলে পরে থাকা লাশ, হাংগারীতে ট্যাঙ্ক, এগুলোতে চোখ বুজে থেকেছি নেসেসারি ইভিল বলে। সেগুলোকেও তুল্য্মুল্য বিচার করা প্রয়োজন। হয়ত স্তালিন-ই ঠিক (আবার বলি, আমার বিশ্বাস সেটাই, কিন্তু আমার ব্য্ক্তিগত বিশ্বাস এখানে আলোচ্য নয়, আর তাই সাঁত্রের বেসিক প্রেমিসের পার্সোনালি বিরোধী হয়েও এই নাটকটা লিখেছি), কিন্তু সেগুলোকে এবার নির্মোহ বিশ্লেষণ করাটাও জরুরী, কোনো ব্যাক্তিগত বিশ্বাস বা মায়াবাদের প্রলেপ না রেখেই।

    নাটকে উত্পল দত্ত-র প্রভাব ইচ্ছাকৃত। কারণ আমার মনে হয়েছিল এই থীমে সব্থেকে ভাল যাবে উত্পল দত্তের স্ট্রাকচার। উত্পল নিজে সাঁর্ত্র দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন না। বরং অযাচিত বেশ কিছু রূঢ় মন্তব্য করেছিলেন এই নিউ লেফ্টদের সম্বন্ধে।
  • ranjan roy | ***:*** | ১০ জুন ২০১২ ০৩:৫৬89497
  • সিদ্ধার্থের লেখায় প্রতীক্ষিত ভাবেই উঠে এসেছে তিনটি দিক।
    ১)নাটকের নান্দনিক দিক----চিত্রনাট্যের থেকে নাটক লেখার স্ট্রাকচারাল সমস্যা, সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের নায়ককে দিয়ে হত্যা, উৎপল দত্তীয় স্ট্রাকচার ইত্যাদি।
    ২)বিপ্লবের স্বার্থে হিংসার নৈতিক দায়িত্ব।
    ৩) পরিবর্তন, হিংসার পৌনঃপুনিকতার ভিশিয়াস সাইকলের সার্বজনীনতা।

    এই বিতর্কে সবার সব বিন্দুতে সিদ্ধার্থের সঙ্গে সহমত হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু আজকের দিনে যাঁরা মার্কসবাদ ও সমাজপরিবর্তন নিয়ে উদ্বেলিত তাঁদের কাছে এই প্রশ্নগুলোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নয়। তাই এই নাটকটিও গুরুত্বপূর্ণ।

    প্রথম জীবনে এই বিতর্কে সিদ্ধার্থের মত স্তালিনের পক্ষ ঠিক মনে হয়েছে, "মস্কো-ট্রায়াল" , কোয়েসলার, রিচার্ড রাইট পড়ে। তখন কামেনেভ-জিনোভিয়েভ দের বক্তব্য পাওয়া সহজ ছিল না।
    আজকে বুখারিন, কামেনেভ-জিনোভিয়েভ এবং ট্রটস্কি'র বক্তব্য সহজলভ্য। তার সঙ্গে লেনিন-স্তালিনের রাশিয়া, মাওয়ের চীন, আজকের ভিয়েতনাম-কাম্বোডিয়া এবং ভারতের মাওবাদী ও মুখ্যধারার কমিউনিস্ট আন্দোলন দেখে এই বয়সে আমি সন্দিহান।
    রাশিয়া-চীনের আগের পরিবর্তন দেখেও আজকের রাশিয়া-চীনের বীজ আগের ব্যব্স্থায় সুপ্ত ছিল সেটাকে অস্বীকার করা কি ডায়লেক্টিক্স সম্মত?
    কাজেই প্রশ্ন জাগে।
    বিশবছর আগে একটি দস্তাবেজ হাতে এসেছিল , তাতে জনৈক প্রশ্ন তুলেছিলেন --- এটা কেমন করে হয় যে বহুর স্বার্থে যে একনায়কতন্ত্র তা কি করে ক্ষমতাকে ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় বহুর বিরুদ্ধে ছোট গোষ্ঠীর হাতে আসা ক্ষমতায় পর্যবসিত হয়ে যায়? এই ডি-জেনারেশন কে আটকানোর কোন সেফটি সিস্টেম পাওয়া যায় নি। আজও।
    তাই যতই আমরা বলি যে কথিত অণতান্ত্রিক দেশে জন্তার আওয়াজ দমন করা হচ্ছে , প্রশ্ন ওঠে কথিত সমাজবাদী দেশগুলো , উত্তর কোরিয়া, কিউবা কোন ব্যতিক্রম?
  • tapas ghosh | ***:*** | ১৮ জুন ২০১২ ০৫:৩৮89498
  • আমি সার্ত্র-র অন্য একটি নাটকম্পর্কে জানতে চাই । একদা নান্দীকার-এর, এখন 'নব নাটুয়া'-র গৌতম হালদার সার্ত্র-র একটি নাটক অবলম্বনে 'ওসামা' নামের একটি নাটক করছেন।আমি সার্ত্র-র ওরিজিনাল নাটক-টার নাম জানতে চাই। সিদ্ধার্থের বা অন্য কারোর সাহায্য চাই। আমার বয়স ৫৪ - এবং ধারণা যার হাতে রক্ত লেগে, সে ম্যাকবেথ হলেও - খুনী। স্বয়ং কৃষ্ণ ভগবান বা কিষেন-জী যেই হোন না কেন, ঠান্ডা মাথায় আদর্শ বা অন্যকিছুর দোহাই দিয়ে যে অন্য মানুষ-কে খুন করে সে খুনী ছাড়া আর কিছু নয়।
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ১৮ জুন ২০১২ ০৭:১৯89499
  • তাপসবাবু, আমি এই মুহুর্তে দেশের বাইরে থাকার কারণে জানি না ওসামা নাটকটির বিষয়বস্তু ঠিক কি। আপনি থীমটা একটু বললে বুঝতে সুবিধে হবে সার্ত্রের কোন নাটক থেকে ইন্স্পায়ার্ড। ..
  • শ্রমণ | ***:*** | ১৯ জুন ২০১২ ০১:২৫89501
  • @সিদ্ধার্থ সেন,
    আমি কিছুতেই আবেগ ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরকে এর সঙ্গে মেলাতে পারি না। এখানে যে পার্টিটা এ কাজ করছিল, যে নেতৃত্ব- তারা অনেক আগেই নিজেদের কম্যুনিষ্ট ভাবে না। এমনকি ক্ষমতায় আসারও অনেক আগে। সেই পিসিযোশী লিখেছিল যবে নেহরুকে যে স্যার আমরা ব্যাক্তিগত সম্পত্তি বেশ মানি-টানি। আমাদের ব্যান না করা হোক। তার মানে ডাঙ্গে-টাঙ্গে এর চেয়ে উন্নত ছিল এমন না। কাজে কাজেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে এক সরকার, যা মুখ্যত রিলিফ দেওয়ার টার্গেট নিয়ে আসা লিব্যরাল ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা চালিত তা কাজ করছিল চাষা-মজুরের স্বার্থের বিরুদ্ধে। সে তো করতেই হত! স্রেফ তথ্যের খাতিরে বলি ভূমিসংস্কারের ঢাক বন্ধ করলে দেখা যায় কংগ্রেস আমলে এদের চেয়ে বেশী ভূমিসংস্কার হয়েছে। ১০ দশমিক ৫২ লক্ষ একর ভূমিসংস্কৃত জমির মধ্যে ৪ দশমিক ২৬ লক্ষ একর মাত্র হয়েছে ১৯৭৭-এর পর থেকে। আর সবুজ বিপ্লবের পিন্ডির কথা বাদই দিচ্ছি। এ সব নিয়ে অনেক লিখতে হবে। আপাতত থাক।
    জমি থেকেছে কিনা চাষীর হাতে এ প্রশ্নে লাভ নেই। দু আমলের কোনো আমলেই থাকেনি। এইটুকু পুচকে অঙ্গরাজ্যে এই তথাকথিত ফেডারেল কাঠামোতে ডেমোক্র্যাটরা কি করবে? কিন্তু রাশিয়া বা চীন এক প্রশ্ন না। সেখানে এর চেয়ে বেশী ক্ষেত্র ছিল কম্যুনিষ্টদের হাতে। সেই ক্ষেত্রটায় তাদের ফেলিওর অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেমন ইঙ্গিত করছেন তেমনি পুঁজির কাছে এদের সারেন্ডার করা, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হওয়াটা একটা ভয়ঙ্কর অপরাধ। কিন্তু এ সম্ভাবনা ছিলই। রঞ্জনবাবু যে কথা বারবার বলছেন যে একটি গোষ্ঠী যখন জনগণের নামে ক্ষমতা দখল করে তখন যা হয় তা অন্য খারাপ শাসন থেকে কম কিসে? কিচ্ছুতে না। কেন হল সেই সারেন্ডার? বা কেন হয়? হয় ফিনান্স ক্যাপিটালের খেলায়। ক্যাসিনো ক্যাপিটালও বলতে পারেন একে। এই যে এখন গ্রীসের নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করছে এরা। সেই একই রাস্তা। বামেরা জিতবে না ওখানে। সেটা সিওর করা হয়েছে। জিতলে যদি দেউলে বলে দ্যায় দেশকে তাহলে সবার টাকা মারা গেল। মার্কেট পড়বে। মানে ব্যাঙ্ক থেকে সরকার সবার টাকার দ্বিগুণ-ত্রিগুণ সর্বনাশ। হতে দেবে না এরা। এটা ঠেকানো যেত কি তখন? খুব মুসকিল। সামরিক শক্তি চাই, নইলে হত না। সেই শক্তির জন্য টাকা চাই। দেশের মধ্যের অর্থনীতিই তো শেষ কথা না। বাইরেটা বাদ দিয়ে চলা যায় না। তাহলে আজ কি হবে? আজ যদি নতুন কোন রাশিয়া বা চীন হয় তাহলে তারা কি করবে? লাখ না, কোটি কোটি টাকার প্রশ্ন।
    সার্ত্র যখন নাটকটা/ চিত্রনাট্যটা লিখছেন তখন কিন্তু পক্ষ নিয়েছেন। জাঁ কে জয়ী করেছেন দার্শনিকভাবে। স্ট্যালিনের সমালোচনা করা যায় এটা সার্ত্র মেনেছেন অনেক পরে। এ নিয়ে ক্রুশ্চেভের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়েছিল। ক্রুশ্চেভ পছন্দ করতেন না তাঁকে। সেও অনেক পরের সময়ের কথা। এ লেখার সময়ের অনেক পরে সে সব। তাই জাঁ একরকম বিজয়ী। ইতিহাসের বিচারে। কেন না জাঁ শ্রমিকের উপরে গুলি চালায় না। শ্রমিক দেশের সম্পদ বলে জানে সে। তার প্রতি সে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। ফ্রাঁসোয়া করবে। করবেই। কেন না সমস্যা আরো গভীর হয়েছে মাত্র। সমাধান হাতে নেই।
    এখন কথা হচ্ছে তাহলে কি? আমরা কোথায় দাঁড়ালাম? এমনিতে কোথাও না। কিন্তু এ এমন এক প্রক্রিয়া যে এর মধ্য দিয়েই চলে যেতে হবে। বারবার এমন ঘটবে। বারবার। একদিনে মানুষের না চিত্তের না বিত্তের কিছুরই পরিবর্তন হবে না। বারবার এই ভুল আসবে। হাত বদল হবে ক্ষমতা। তারপরে একদিন এগুলো সংশোধন হবে। কাব্য না, লজিক।
  • শ্রমণ | ***:*** | ১৯ জুন ২০১২ ০১:২৮89502
  • @ তাপস ঘোষ

    খুন তো সত্যিই খুন। কিন্তু সেটা শুধু মানুষে আবদ্ধ থাকে কেন? মানবকেন্দ্রিক? দুনিয়ার ক্ষমতা মানবের হাতে বলে মানুষের খাবার জন্য নিত্য নিত্য প্রাণ হত্যার কি হবে? বিকল্প? নাকি তার বিকল্প আমাদের চাই নে?
  • শ্রমণ | ***:*** | ১৯ জুন ২০১২ ০২:০০89503
  • @ সকল জনা
    কিছু এদিক ওদিক লেখার পরে এখান থেকে শুরু করার কথা ভাবছিলাম। এই যে বুদ্ধিজীবি টানাপোড়েন, এই যে লুসিয়ের কষ্ট, এই যে লুসিয়ের অন্যের হাতে রক্ত দিয়ে নিজের পাশ কেটে যাওয়া- এসব তো এম্নি এম্নি না! সত্যিই খুন তো খুনই। কিন্তু সেই খুনের কথা আমাদের সভ্যতার বুনিয়াদ। আজকে কয়েকলক্ষ বছর খুনোখুনির পরে যদি আচমকাই বলি না খুন দিয়ে হবে না তাহলে কিছুটা অবাক ঠেকবে তো বটেই। ব্যাক্তিগত বিবেককে খুনের পক্ষে নই বলে শান্ত করা যায়, কিন্তু খুন তো বন্ধ করা যায় না। সকল পক্ষই খুন করে চলেছেন। নানা কায়দায়। এমনকি আমি যার হাত রক্তে চোবানো নয় সেও লুসিয়ের মতই খুনের দায় অন্যকে দিয়ে বসে আছি। যখন রাষ্ট্রে মাওবাদী খুন করে আমি পক্ষে থাকি তখন, যখন মাওবাদী পুলিশ কি খোচড় নামে খুন করে তখন, যখন অস্ত্র ছাড়াই স্রেফ খেতে-পড়তে-শিক্ষা না দিয়ে, স্বাস্থ্য না দিয়ে খুন করা হয় হাজারে হাজারে মানুষকে বিশ্বজুড়ে, তখনও। আমি নিরাপদ থাকতে চাইলে পারবো না। ইতিহাসের দায় আমার ঘাড় জুড়ে। আমার বিবেককে চোখ ঠাড়া দিয়ে লাভ নেই। সভ্যতা এক ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্র। মানুষ সামগ্রিকভাবে, শ্রেণীগতভাবে ক্ষমতা দখলের লড়াইতে আছে। বাড়ির কাছের আগাছা না কাটলে জঙ্গল হবে। সেখানে কালে কালে বাঘ-হাতি আমাকে উচ্ছেদ করতে পারে। শুধু বললে হবে না যে আমি খুন চাই না। না হলে আমার অস্তিত্ব সঙ্কট।
    এবারে? ম্যালথাসের জনসংখ্যাবৃদ্ধির তত্বের কথা মনে আসে আজকাল। গোডুইনের সঙ্গে ডিবেট মনে পড়ে। ম্যালথাস ব্যাঙ্গ করে বলেছিলেন যে সাম্য এসে গেলে মানুষ অনেক সময় পাবে, ভাল খাবে, পড়বে, বেশী বেশী পয়দা করবে। তা হয়নি। গোডুইন বিরোধ করেছিলেন। ম্যালথাসের মতে জনসংখ্যার বাড়বৃদ্ধি রোধে প্রাকৃতিক কারণগুলো সাহায্যকারী। এমন নানা বিষয়। মজা হচ্ছে যেখানে ধন বেড়েছে সেখানে সন্তান কমেছে। যেখানে রোগ-ব্যাধি, কি মড়কের সম্ভাবনা কমেছে সেখানেও জনসংখ্যা ম্যালথাসের কথামত বাড়েনি। এর পিছনে একটা বড় কারণ শিক্ষা বলে অমর্ত্য সেনরা বলছেন। কথাটার সঙ্গে যোগ করা যায় সময়ের হ্রাস, প্রযুক্তির উন্নতিতে আরো নানা কাজের ক্ষেত্রে উপযোগ, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের ফলে যৌনতা ও প্রজননকে আলাদা করতে শেখা এই সব-ও। সেই শিক্ষার বিস্তার এবং তারও আগে খাদ্য-স্বাস্থ্যের বিস্তার হতে থাকলে বুদ্ধিবৃতির বিকাশ হবে আরো। আজ যে প্রশ্ন ধোঁয়াশা বানাচ্ছে কাল সে প্রশ আরো স্পষ্ট হবে। মানুষের মগজ কাজ করছে এখনো। হিংসা-অহিংসার ফয়সালা আমাদের জীবদ্দশার কাজ না। আমাদেরও মৃত্যুর বেশ কিছু পরে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। মানুষ পাবে উত্তর। আশাবাদের মতন শোনায় যেন আজকের এই সংক্ষুব্ধ দিনে? না। বিজ্ঞানের প্রশ্নগুলোকে তাড়া করতে করতেই তো সমাধান এসেছে। এখানেও সেই তাড়া করা তো চলবেই। নইলে যে মারের চোটে মরে যাচ্ছে সে যখন পাল্টা মারে তখন তাকে যদি বলতে যাই যে মারাই একমাত্র পথ না, তখন নিজের কানেই কেমন হাস্যকর শোনায়। মরে গেলে আর পথ? মুন্ডু গেলে খাবোটা কি? ছোট পরিসর। এর মধ্যে ধনতন্ত্র, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আগামী পরিবর্তন, প্রকৌশলের আরো উন্নতির ফলে পরিবর্তন এ সব কিছু ধরা গেল না। জানি। কিন্তু সব ধরে ফেললে তো আমিও হনু হতুম, তাই না? আমি রাস্তায় আছি। দেখছি, শিখছি। তার থেকে চাড্ডি কথা কচ্ছি।
  • ranjan roy | ***:*** | ১৯ জুন ২০১২ ০৩:০০89504
  • সরি!
    তাড়াহুড়োয় ভুল করে শ্রমণের জায়গায় সিদ্ধার্থ লিখেছি স্তালিন-হিংসা ইত্যাদি প্রশ্নে। মনে হয় শ্রমণ আমার ভুল বুঝতে পেরে আলোচনা সঠিক ভাবে চালিয়ে গেছেন।
  • ranjan roy | ***:*** | ১৯ জুন ২০১২ ০৩:১৪89505
  • ডিঃ আগের পোস্টটিই ভুল। সরি।
  • শ্রমণ | ***:*** | ১৯ জুন ২০১২ ১২:৩৯89500
  • @রঞ্জন রায়,
    আমার বিশ্বাস বলে কোনো বস্তু নেই। যা পাই, তাই দেখি। কম্যুনিজমের ধারার মধ্যে হিংসা-অহিংসার প্রশ্নটা তো জুড়ে আছে আদিকাল থেকে। চার্চ যখন ইতালিতে ফ্রা ডোলসিনোদের মত অ্যানা-ব্যাপটিস্টদের কুপিয়ে দ্যায়, কিম্বা বৌদ্ধরা যখন ব্রাহ্মণ হত্যা করে তখন হিংসা নিয়ে খুব সমস্যা হয়েছে কি? এমনকি অশোকও অত অহিংসা বলে-টলে শেষে ব্রাহ্মণ্য বিদ্রোহ হিংসা দিয়েই দমন করছে। একটু আলাদা করে দিই। আধুনিক যুগের শুরুর থেকে আদতে হিংসা নিয়ে ভাবনা বিস্তৃত হয়েছে। খ্রীষ্ট হিংসা চাইতে বাধ্য হয়েছে। তরবারির কথা তার প্রমাণ। বুদ্ধ বা মহাবীর চুপ থেকেছে যখন তাদের সমর্থক শাসকরা দমন করেছে কি প্রজা-শাসন করেছে। তলস্তয় অহিংসার কথা বলেছেন যে খ্রীষ্টকে ধরে সেই খ্রীষ্টের তরোবারির কথা নিয়েই তো পাশের দেশ-এ একদিন ধান্দাবাজ লুথারের সঙ্গে কৃষকনেতা মুনজেরের সমস্যা হয়। লুথার ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যায়। প্রোট্রেস্টান্ট বাবা হয়। চাষার নেতা মুনজের মরে। এঙ্গেলস-মার্ক্স জানতেন তো! সামন্তযুগীয় আবর্তের থেকে বেরোনো বুর্জোয়া ইউরোপ কি খুব মাথা ঘামিয়েছে হিংসা নিয়ে? মাথা ঘামালো যখন দেখলো গিলোটিনে শাসকের মাথা যায়। অবশিষ্ট সামন্ত আর নব্য বুর্জোয়া (আজকের পরিভাষায় মধ্যবিত্ত) মাথা ঘামালো তখন। সেই শুরু প্রশ্নটার লাইমলাইটে ঠিকঠাক আসার। ব্রিটেনের যুদ্ধ নাকি গোলাপের যুদ্ধ! হাস্যকর! ইতিহাস একটু পড়লেই দেখা যায় কি যুদ্ধ, কারা লড়েছিল, কারা ঠকেছিল! তো কম্যুনিষ্টদের এ নিয়ে সে সময়ে সংশয় থাকবে কেন? তারা কি এর অন্যথা দেখেছে?
    আপনার সংশয় হচ্ছে। অনেকের হয়। স্বাভাবিক। কিন্তু সে তো ট্রান্সফার অব পাওয়ার-এর পরে বিপ্লববাদীদের প্রভাব চেপে দেওয়ার মত সংশয়। মানবিকতার সংশয় যদি বলেন তাহলে আমার প্রশ্ন আছে। ক্ষমতা যখন দখলের বিষয় তখন কোন পন্থায় এর বাইরে কিছু ঘটেছে একটু বলবেন দয়া করে? গণতন্ত্রের বুর্জোয়া সম্মত রূপেও ঘটেছে? এখন এই ভারতে ঘটে? নির্বাচনে পেশী শক্তি ছাড়া চলে? না চললে ভাল হত। আমিও মনে করি। কিন্তু বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বে ভুগিনা। কেন না আমার সামনে এখনো এমন কোনো দর্শনীয় উদাহরণ পাইনি। এম্পিরিক্যাল লজিকও আমাকে সমর্থন করছে না অন্য কিছু ভাবায়। এই হচ্ছে সমস্যা। বাকী নিয়ে পরে বলছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন