খবর শুরু হচ্ছে কার্তিক বর্মনকে দিয়ে। কার্তিকের বয়স ৪৬, পেশা কাগজ কুড়োনো, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন। আই ডি প্রজেক্টে কার্তিকের নাম উঠেছে। এবার তিনি আই ডি কার্ড পাবেন। আর পেলেই কেল্লা ফতে। তারপরই লাইন দিয়ে কার্তিকের এনরেগাতে কাজ হবে, র্যাশন কার্ড হবে ইত্যাদি। অরুণোদয় জানাচ্ছেন "কার্তিকের সমগোত্রীয়রা' - যেমন মুক্তার আহমেদ - এ হোমলেস, প্রচুর আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন যে এবার সুদিন ফিরবে। তার পরেই অরুণোদয় জানাচ্ছেন সন্ত রাম দর্জির মত লোকেদের কথা, যারা এখনও বুঝতে পারছে না এতে কী ভাবে উপকার হবে। সন্ত রাম বলেছেন "এর কি মানে আমি জানি না, কেউ বুঝিয়ে দিলে সুবিধা হবে।' খবরে এর পরের দুটি বাক্য অনবদ্য। অরুণোদয় বলছেন এনরোল করার দু সপ্তাহের মধ্যে ইউ আই ডি নম্বর দেওয়া হচ্ছে। নম্বরটি পেলেই একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে যাবে ও যিনি নম্বর পেলেন তিনি কার্ড-হোল্ডার, সরকারিভাবে ভারতীয় বলে গণ্য হবেন। তাহলে বুঝুন, এই নম্বরটি না থাকার জন্য এতদিন কত অসুবিধা হচ্ছিল! যদিও অরুণোদয় কার্তিককে সরাসরি এই প্রশ্নটি করেন নি, কিন্তু ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট না থাকার জন্য কাগজ কুড়িয়ে সংসার চালানো কার্তিকের এতদিন দুর্দশার শেষ ছিল না, সেটা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হবার কথা নয়। এমনও হতে পারে, এই আই ডি না থাকার জন্য বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না যে কার্তিক সত্যিই পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন, না মালয়েশিয়া বা সুদান বা বুলগেরিয়া থেকে এসে দিল্লীতে কাগজ কুড়োচ্ছেন। এইবার আর সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। আর আপনি নিশ্চয় চাইবেন না আপনার দেশে মালয়েশিয়ান বা বুলগেরিয়ান বা অন্য কোনো দেশের কাগজ-কুড়ানিদের সংখ্যা বাড়ুক। ঠিক এই জায়গায় দক্ষ সাংবাদিক অরুণোদয় প্রশ্ন তুলেছেন - এর ফলে আবার "প্রাইভেসি' বা নিরাপত্তার কোনো সমস্যা হবে না তো? সভ্য নাগরিক হিসাবে আমরা নিশ্চয় চাইবো না যে কয়েকটি সংখ্যার গেরোতে পড়ে মুক্তার আহমেদ - এ হোমলেস-এর প্রাইভেসি বিঘ্নিত হোক বা তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগুন।
চিন্তার কারণ নেই - উত্তর দিচ্ছেন প্রজেক্ট-এর কর্তা নন্দন নিলেকানি। তিনি বলছেন ইন্ডিয়ার কয়েকশ' মিলিয়ন গরিবলোকের উপকার, যাদের কোনো আইডেন্টিটি নেই, যারা কোনো বেনিফিট পান না। তিনি আরও বলছেন ঝুঁকির থেকেও বড় হল এই গরিবলোকেদের আইডেন্টিটি দেওয়া, তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হয়। এর পরই অরুণোদয় মুন্সিয়ানার সাথে আমাদের দেখাচ্ছেন একটি উপকারের উদাহরণ। দিনমজুর রাম বাবুর নম্বর না থাকার জন্য এতদিন সেল ফোন হচ্ছিল না, এখন আইডেন্টিফিকেশন হবার সাথে সাথে সেলফোন হল - আই ডি কে ধন্যবাদ। তার পর আবার অরুণোদয়ের তথ্য সম্বৃদ্ধ রিপোর্টিং - ৩০০০কোটি টাকার প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে "পুওরেস্ট অফ দ্য পুওর'-দের দিয়ে। ২০১৪ সালের মধ্যে ৬০০ মিলিয়ন ভারতবাসী এই কার্ড পাবেন। একজন আদর্শ সাংবাদিকের মত অরুণোদয় লেখার শেষদিকে ইন্ডিয়ানদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। বলছেন, হরি সিং-এর মত ভিখারীরাও, যারা দিল্লীর ওখলা ফ্লাই-ওভারের তলায় থাকেন, আশা করছেন লাইফ বেটার হবে, - "থ্যাংক্স্ টু এ ফিউ ডিজিট্স্।' আই ডি ছাড়া ফ্লাই-ওভারের তলায় থাকা আর আই ডি নিয়ে ফ্লাই-ওভারের তলায় থাকার যে তফাত, তা বুঝে নিতে কোনো অসুবিধেই হল না এইবার।
উপসংহারে নিজের চিন্তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রেখেছেন লেখার মধ্যে। বলছেন - যদিও প্রজেক্ট এই মুহূর্তে গরিবগুর্বোকে নিয়ে হলেও, মনে হচ্ছে এটা রাইট ডিরেকশনেই যাচ্ছে। শেষ লাইনে ওস্তাদের মার - তাঁর একমাত্র আশা এই প্রজেক্ট যেন ইন্ডিয়ান পুওরদের কাছে ফাঁকা আওয়াজে পরিণত না হয়। অরুণোদয়, ছোট অথচ তথ্যসম্বৃদ্ধ বিশ্লেষণী খবরটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
http://ibnlive.in.com/news/uid-gives-identity-to-indias-poor/138947-3.html?from=tn